সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

মিশরের সমস্ত ধন অপেক্ষা মহাধন

মিশরের সমস্ত ধন অপেক্ষা মহাধন

মিশরের সমস্ত ধন অপেক্ষা মহাধন

 ঐতিহাসিক সমস্ত মহান চরিত্রের মধ্যে মোশি হলেন একজন। যাত্রাপুস্তক থেকে দ্বিতীয় বিবরণ পর্যন্ত বাইবেলের এই চারটে বই, মোশির নেতৃত্বে ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে ঈশ্বরের আচরণ সম্বন্ধে প্রায় পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বর্ণনা করে। তিনি মিশর থেকে তাদের যাত্রায় নির্দেশনা দেন, নিয়ম চুক্তিতে মধ্যস্ততা করেন এবং প্রতিজ্ঞাত দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইস্রায়েলীয়দের পরিচালনা দেন। মোশি, ফরৌণের বাড়িতে বড় হন কিন্তু পরে তিনি ঈশ্বরের লোকেদের ওপর নিযুক্ত নেতা ও সেইসঙ্গে একজন ভাববাদী, বিচারক এবং ঈশ্বর অনুপ্রাণিত লেখক হয়ে ওঠেন। তবুও, তিনি “মনুষ্যেদের মধ্যে সকল অপেক্ষা . . . অতিশয় মৃদুশীল ছিলেন।”—গণনাপুস্তক ১২:৩.

মোশির সম্বন্ধে বাইবেলে যা কিছু বলা আছে, সেটার বেশির ভাগই তার জীবনের শেষ ৪০ বছরের সঙ্গে জড়িত অর্থাৎ দাসত্ব থেকে ইস্রায়েলের মুক্তির সময় থেকে ১২০ বছর বয়সে মোশির মৃত্যুর সময় পর্যন্ত। ৪০ থেকে ৮০ বছর বয়সে তিনি মিদিয়নে মেষপালক ছিলেন। কিন্তু একটা বই বলে যে, “সম্ভবত তার জীবনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ ও সেইসঙ্গে সবচেয়ে অস্পষ্ট দিক” হল, তার প্রথম ৪০ বছর অর্থাৎ তার জন্ম থেকে মিশর হতে পালিয়ে যাওয়ার সময় পর্যন্ত। এই সময় সম্বন্ধে আমরা কী বুঝতে পারি? মোশির বেড়ে ওঠার সময়ে যে-পরিস্থিতি ছিল, তা কীভাবে তিনি যে-ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন তার ওপর প্রভাব ফেলেছিল? কোন্‌ প্রভাবের প্রতি তিনি বশীভূত হয়েছিলেন? তাকে কোন্‌ সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করতে হয়েছিল? আর এই সমস্ত কিছু আমাদের কী শিক্ষা দিতে পারে?

মিশরে দাসত্ব

যাত্রাপুস্তক বলে যে, মিশরে বসবাসকারী ইস্রায়েলীয়দের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছিল দেখে ফরৌণ ভয় পেতে শুরু করেন। “বিবেচনাপূর্ব্বক” কাজ করছেন বলে মনে করে, তিনি কার্যশাসকদের চাবুকের অধীনে তাদের দিয়ে নির্মম কাজ অর্থাৎ ভারি বোঝা বহন, কাদার মিশ্রণ এবং রোজ নির্দিষ্ট পরিমাণ ইট সরবরাহ করানোর মাধ্যমে তাদের সংখ্যা কমানোর চেষ্টা চালান।—যাত্রাপুস্তক ১:৮-১৪; ৫:৬-১৮.

মোশি যেখানে জন্মগ্রহণ করেন, সেই মিশরের এই বর্ণনা ঐতিহাসিক সাক্ষ্যপ্রমাণের সঙ্গে মিলে যায়। প্রাচীন পাপাইরা এবং অন্তত একটা কবরের চিত্রাঙ্কন সা.কা. দ্বিতীয় শতাব্দী বা এরও আগে দাসদের তৈরি মাটির ইট বানানো সম্বন্ধে বর্ণনা করে। যে-কর্মকর্তাদের ইট সরবরাহ করার দায়িত্ব ছিল, তাদের অধীনে ৬ থেকে ১৮ জন নিয়ে গঠিত দাসদের শত শত দল কাজ করত আর সেই দলগুলোর একজন শ্রমিক নেতা বা দলনেতা ছিল। ইটের জন্য মাটি কেটে ইটখোলায় নিয়ে আসতে হতো। বিভিন্ন জাতির কর্মীরা জল নিয়ে আসত এবং সেই জল নিড়ান যন্ত্র দিয়ে মাটি ও খড়কুটোর সঙ্গে মেশাতো। সারি সারি ইটগুলোকে আয়তাকার করতে হতো। এরপর রোদে শুকানো ইটগুলো জোয়ালিতে করে শ্রমিকদের নির্মাণের জায়গায় নিয়ে যেতে হতো আর এর জন্য কখনও কখনও তাদের ঢালু পথ ব্যবহার করতে হতো। কাজের দেখাশোনা করার সময় মিশরীয় অধ্যক্ষরা লাঠি হাতে বসে থাকত বা হাঁটতে থাকত।

এক প্রাচীন নথি বলে যে, ৬০২ জন শ্রমিক ৩৯,১১৮টা ইট তৈরি করত, যা প্রতি শিফ্‌টে জনপ্রতি ৬৫টা করে ইট ভাগে পড়ে। সা.কা.পূ. ১৩ শতাব্দীর একটা সাক্ষ্যপ্রমাণ বলে: “লোকেরা . . . নির্ধারিত পরিমাণ অনুযায়ী রোজ ইট তৈরি করত।” এই সমস্ত কিছু যাত্রাপুস্তকে বলা শ্রমিকদের কাছে যে-কাজের দাবি করা হতো, সেটার সঙ্গে অনেকটা মিলে যায়।

কিন্তু, এই অত্যাচার ইব্রীয় লোকেদের জনসংখ্যা কমাতে পারেনি। বদলে, “[মিশরীয়রা] তাহাদের দ্বারা যত দুঃখ পাইল, ততই বৃদ্ধি পাইতে . . . লাগিল; তাই ইস্রায়েল-সন্তানদের বিষয়ে তাহারা অতিশয় উদ্বিগ্ন হইল।” (যাত্রাপুস্তক ১:১০, ১২) তাই, ফরৌণ সমস্ত নবজাত ইস্রায়েলীয় শিশুকে হত্যা করার জন্য প্রথমে ইব্রীয় ধাত্রীদের এবং পরে তাঁর লোকেদের নির্দেশ দেন। এই ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যে যোকেবদ ও অম্রমের ঘরে এক ফুটফুটে ছেলে জন্মগ্রহণ করে, যার নাম মোশি।—যাত্রাপুস্তক ১:১৫-২২; ৬:২০; প্রেরিত ৭:২০.

লুকিয়ে রাখা, খুঁজে পাওয়া এবং দত্তক নেওয়া

মোশির বাবামা ফরৌণের নিষ্ঠুর আদেশ অমান্য করে তাদের ছোট্ট ছেলেকে লুকিয়ে রাখেন। গুপ্তচর এবং অনুসন্ধানকারীরা শিশুদের খুঁজে বের করার জন্য যে-টহল দিয়েছিল, তার মধ্যেই কি তারা তা করেছিলেন? এই বিষয়ে আমরা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারি না। যাই হোক না কেন, তিন মাস পর মোশির বাবামা তাকে আর লুকিয়ে রাখতে পারেননি। তাই, তার হতাশাগ্রস্ত মা নলখাগড়ার পাতা দিয়ে একটা ঝুড়ি তৈরি করেন এবং সেটাতে যাতে জল না ঢোকে, সেই জন্য আলকাতরা মাখিয়ে দেন আর এরপর তার সন্তানকে সেটার মধ্যে শুইয়ে দেন। যদিও প্রকৃত অর্থে নয়, কিন্তু এক অর্থে যোকেবদ প্রত্যেক নবজাত ইব্রীয় ছেলেকে নীল নদীতে নিক্ষেপ করার বিষয়ে ফরৌণের আদেশ মান্য করেছিলেন। মোশির বড় বোন মরিয়ম তার দেখাশোনার জন্য কাছেই ছিল।—যাত্রাপুস্তক ১:২২–২:৪.

ফরৌণের মেয়ে নদীতে স্নান করতে এসে মোশিকে খুঁজে পাবেন বলে মনে করে যোকেবদ এইরকম করেছিলেন কি না, তা আমরা জানি না কিন্তু তা-ই ঘটেছিল। রাজকন্যা বুঝতে পেরেছিলেন যে, সে ইব্রীয়দের শিশু। তিনি কী করবেন? তার বাবার বাধ্য হয়ে তিনি কি তাকে মেরে ফেলার নির্দেশ দেবেন? না, স্ত্রীলোকেরা সাধারণত যেরকম প্রতিক্রিয়া দেখায় তিনিও তাই দেখিয়েছিলেন। তিনি করুণার সঙ্গে ব্যবহার করেছিলেন।

মরিয়ম সঙ্গে সঙ্গে তার কাছে আসে। সে জিজ্ঞেস করে, ‘আমি গিয়া কি আপনার নিমিত্ত এই ছেলেকে দুদ দিবার জন্য একটী ইব্রীয় স্ত্রীলোককে ডাকিয়া আনিব?’ অনেকে এই অংশ নিয়ে উপহাস করে। এখানে মোশির বোনকে ফরৌণের বিপরীতে তুলে ধরা হয়েছে, যে কিনা ইব্রীয়দের সঙ্গে “বিবেচনাপূর্ব্বক” ব্যবহার করার জন্য তার উপদেষ্টাদের সঙ্গে পরামর্শ করেছিলেন। অবশ্য, মোশির মঙ্গল একমাত্র তখনই নিশ্চিত হয়েছিল যখন রাজকন্যা তার বোনের পরিকল্পনার সঙ্গে একমত হয়েছিলেন। ফরৌণের মেয়ে বলেছিলেন, “যাও” এবং মরিয়ম সঙ্গে সঙ্গে তার মাকে ডেকে এনেছিল। উল্লেখযোগ্য কিছু কথাবার্তা বলার পর যোকেবদকে তার নিজের ছেলেকে রাজকীয় সুরক্ষার মধ্যে পালন করার জন্য ভাড়া করা হয়।—যাত্রাপুস্তক ২:৫-৯.

রাজকন্যা যে-করুণা দেখিয়েছিলেন, তা নিঃসন্দেহে তার বাবার নিষ্ঠুরতার বিপরীত ছিল। শিশুটার বিষয়ে তিনি অজ্ঞাতও ছিলেন না বা প্রবঞ্চিতাও হননি। সেই সন্তানকে দত্তক নেওয়ার জন্য তাকে উষ্ণ হৃদয়ের করুণাই প্রেরণা দিয়েছিল এবং স্তন্যদান ও লালনপালন করার জন্য একজন ইব্রীয় ধাত্রী রাখার ব্যাপারে তার একমত হওয়া দেখায় যে, তিনি তার বাবার কুসংস্কারগুলোর সঙ্গে একমত ছিলেন না।

লালনপালন করা এবং পড়াশোনা

যোকেবদ “ছেলেটীকে লইয়া দুগ্ধ পান করাইতে লাগিলেন। পরে ছেলেটী বড় হইলে তিনি তাহাকে লইয়া ফরৌণের কন্যাকে দিলেন; তাহাতে সে তাঁহারই পুত্ত্র হইল।” (যাত্রাপুস্তক ২:৯, ১০) বাইবেল বলে না যে, মোশি কতদিন পর্যন্ত তার আসল বাবামার সঙ্গে ছিলেন। কেউ কেউ মনে করেন যে, কমপক্ষে দুধ ছাড়ার আগে পর্যন্ত অর্থাৎ দুই বা তিন বছর পর্যন্ত তিনি সেখানে ছিলেন কিন্তু এটা আরও বেশি সময়ও হতে পারে। যাত্রাপুস্তক শুধু বলে যে, তিনি তারা বাবামার কাছে ‘বড় হইয়াছিলেন,’ যা যেকোন বয়সকেই বোঝাতে পারে। যাই হোক, কোন সন্দেহ নেই যে, অম্রম এবং যোকেবদ তাদের ছেলেকে ইব্রীয় ইতিহাস সম্বন্ধে জানানোর ও যিহোবা সম্বন্ধে শেখানোর জন্য সময় করে নিয়েছিলেন। মোশির হৃদয়ে বিশ্বাস ও ধার্মিকতার জন্য ভালবাসা গড়ে তুলতে তারা কতটা সফল হয়েছিলেন, তা একমাত্র সময়ই বলে দেবে।

ফরৌণের মেয়ের কাছে ফিরে গিয়ে মোশি “মিস্রীয়দের সমস্ত বিদ্যায়” শিক্ষিত হয়েছিলেন। (প্রেরিত ৭:২২) এটা সেই প্রশিক্ষণকে বুঝিয়েছিল, যা মোশিকে সরকারি কাজের জন্য যোগ্য করে তুলবে। এর মধ্যে ছিল গণিত, জ্যামিতি, স্থাপত্যবিদ্যা, নির্মাণকৌশল এবং অন্যান্য কলা ও বিজ্ঞান সহ মিশরের ব্যাপক শিক্ষা। সম্ভবত রাজপরিবার চেয়েছিল যেন তিনি মিশরীয়দের ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করেন।

মোশি হয়তো রাজপরিবারে অন্যান্য ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বিশেষ শিক্ষা লাভ করার সুযোগ পেয়েছিলেন। এইধরনের অভিজাত শিক্ষা থেকে যারা উপকার পেত তাদের মধ্যে “বিদেশি শাসকদের ছেলেমেয়েরাও ছিল, যাদেরকে ‘শিক্ষিত’ হওয়ার জন্য প্রবাসী হিসেবে মিশরে পাঠানো হতো বা নেওয়া হতো এবং এরপর অধীনস্ত শাসক হিসেবে ফিরে যেত” ও ফরৌণের প্রতি বিশ্বস্ত থাকত। (বেটসি এম. ব্রায়েনের থুতমোসি ৪র্থ এর শাসনামল, ইংরেজি) নার্সারিগুলো রাজদরবারের কাছাকাছি ছিল আর তা মনে হয় ছেলেমেয়েদের রাজকর্মচারী হিসেবে তৈরি করার জন্য ছিল। * মিশরীয় মধ্য ও নতুন রাজ্যের সময়কার খোদিত ফলকগুলো দেখায় যে, ফরৌণের ব্যক্তিগত পরিচারক এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে অনেকে বয়স্ক ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও তাদের “নার্সারির সন্তান,” এই সম্মানযোগ্য উপাধি ছিল।

রাজপ্রাসাদের জীবন মোশির জন্য পরীক্ষামূলক ছিল। এই জীবন ধনসম্পদ, বিলাসিতা এবং ক্ষমতা দিয়েছিল। সেইসঙ্গে এটা বিভিন্ন নৈতিক বিপদও নিয়ে এসেছিল। মোশি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন? তার আনুগত্য কোথায় থাকবে? হৃদয়ে কি তিনি আসলে যিহোবার একজন উপাসক ও হতাশাগ্রস্ত ইব্রীয়দের ভাই ছিলেন নাকি পৌত্তলিকতায় ভরা মিশর যে-বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছিল, তা বেছে নিয়েছিলেন?

এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত

৪০ বছর বয়সে মোশি যখন পুরোপুরি একজন মিশরীয় ব্যক্তিতে পরিণত হতে পারতেন, তখন তিনি “আপন ভ্রাতৃগণের নিকটে গিয়া তাহাদিগের ভার বহন দেখিতে লাগিলেন।” তার পরবর্তী কাজ দেখায় যে, এটা শুধু কৌতূহলবশত ছিল না; তিনি মন থেকে তাদের সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। তিনি যখন দেখেন যে, একজন মিশরীয় এক ইব্রীয়কে ধরে মারছে, তখন তিনি সেই পীড়নকারীকে হত্যা করেন। এই বিষয়টা দেখায় যে, মোশির হৃদয় তার ভাইদের পক্ষে ছিল। সেই মৃত ব্যক্তি হয়তো একজন কর্মকর্তা ছিলেন এবং যখন তিনি তার দায়িত্বে ছিলেন, তখন তাকে হত্যা করা হয়েছিল। মিশরীয়দের দৃষ্টিতে ফরৌণের প্রতি অনুগত থাকার সমস্ত কারণ মোশির ছিল। কিন্তু, আরেকটা যে-বিষয় মোশিকে প্রেরণা দিয়েছিল তা হল ন্যায়বিচারের প্রতি প্রেম, যে-গুণ পরের দিন তিনি একজন ইব্রীয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সময় দেখিয়েছিলেন, যে কিনা তার সঙ্গীকে অন্যায়ভাবে মারছিল। মোশি কঠোর দাসত্ব থেকে ইব্রীয়দের মুক্ত করতে চেয়েছিলেন কিন্তু ফরৌণ যখন তার বিদ্রোহের কথা জেনে তাকে মারার চেষ্টা করেন, তখন মোশি বাধ্য হয়ে মিদিয়নে পালিয়ে যান।—যাত্রাপুস্তক ২:১১-১৫; প্রেরিত ৭:২৩-২৯. *

ঈশ্বরের লোকেদের মুক্ত করার জন্য মোশির সময় নির্বাচন যিহোবার সঙ্গে মেলেনি। তবুও, তার কাজগুলো বিশ্বাস সম্বন্ধে প্রকাশ করেছিল। ইব্রীয় ১১:২৪-২৬ পদ বলে, “বিশ্বাসে মোশি বয়ঃপ্রাপ্ত হইলে পর ফরৌণের কন্যার পুত্ত্র বলিয়া আখ্যাত হইতে অস্বীকার করিলেন; তিনি পাপজাত ক্ষণিক সুখভোগ অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের প্রজাবৃন্দের সঙ্গে দুঃখভোগ মনোনীত করিলেন।” কেন? “তিনি মিসরের সমস্ত ধন অপেক্ষা খ্রীষ্টের দুর্নাম মহাধন জ্ঞান করিলেন, কেননা তিনি পুরস্কারদানের প্রতি দৃষ্টি রাখিতেন।” ‘খ্রীষ্ট,’ এই ব্যতিক্রমী অভিব্যক্তি ব্যবহার করার মানে হল “অভিষিক্ত ব্যক্তি” আর এটা মোশির ক্ষেত্রে এই অর্থে উপযুক্ত ছিল যে, তিনি পরে সরাসরি যিহোবার কাছ থেকে এক বিশেষ দায়িত্ব পেয়েছিলেন।

একবার কল্পনা করুন! মোশি ছেলেবেলায় এমন প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন, যা কেবলমাত্র অভিজাত মিশরীয় ব্যক্তিই লাভ করতে পারত। তার পদ তাকে এক চমৎকার বৃত্তি ও সেইসঙ্গে অকল্পনীয় আমোদপ্রমোদ গ্রহণ করার সুযোগ দিয়েছিল কিন্তু তিনি সমস্ত কিছুই অস্বীকার করেছিলেন। যিহোবা এবং ন্যায়বিচারের প্রতি ভালবাসা থাকায়, তিনি বিরোধী ফরৌণের রাজদরবারের জীবনে আবার ফিরে যেতে পারেননি। তার পূর্বপুরুষ অব্রাহাম, ইস্‌হাক এবং যাকোবের কাছে করা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলো সম্বন্ধে জ্ঞান নেওয়া এবং সেগুলো নিয়ে ধ্যান করাই মোশিকে ঈশ্বরের অনুগ্রহ বেছে নিতে পরিচালিত করেছিল। এর ফলে যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য পূরণ করার জন্য মোশিকে বিশেষ সুযোগ দিতে পেরেছিলেন।

আমরা সবাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা বেছে নেওয়ার মুখোমুখি হই। মোশির মতো আপনিও হয়তো কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার মুখোমুখি হন। যেকোন মূল্যই দিতে হোক না কেন, আপনি কি কিছু অভ্যাস বা আপাতঃদৃষ্টিতে সুবিধাজনক বলে মনে হয় এমন বিষয়গুলো ছেড়ে দেবেন? আপনার সামনে যদি এইরকম বাছাই করার বিষয়টা থাকে, তা হলে মনে রাখবেন যে, মোশি যিহোবার বন্ধুত্বকে মিশরের যেকোন সম্পদ থেকে আরও বেশি মূল্য দিয়েছিলেন এবং এর জন্য তাকে কখনও অনুশোচনা করতে হয়নি।

[পাদটীকাগুলো]

^ এই শিক্ষা হয়তো দানিয়েল এবং তার সঙ্গীরা বাবিলে উচ্চপদস্থ কর্মচারী হিসেবে কাজ করার জন্য যে-শিক্ষা পেয়েছিলেন তার সমান ছিল। (দানিয়েল ১:৩-৭) যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীতে মনোযোগ দিন! (ইংরেজি) বইয়ের ৩ অধ্যায়ের সঙ্গে তুলনা করুন।

^ ন্যায়বিচারের জন্য মোশির যে উদ্যোগ ছিল, তা মিদিয়নে অসহায় মেষপালিকাদেরকে অন্যায় আচরণ থেকে রক্ষা করার মাধ্যমে দেখা যায়, যেখানে তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন।—যাত্রাপুস্তক ২:১৬, ১৭.

[১১ পৃষ্ঠার বাক্স]

স্তন্যপান ও লালনপালন করার জন্য ধাত্রীদের চুক্তি

সাধারণত মায়েরা তাদের নিজেদের সন্তানদের স্তন্যপান করান। কিন্তু, জারনাল অফ বিবলিক্যাল লিটারেচার-এ পণ্ডিত ব্রিভার চাইল্ডস বলেন, “কিছু কিছু পরিস্থিতিতে অভিজাত [নিকটপ্রাচ্য] পরিবারগুলোতে স্তন্যপান ও লালনপালন করার জন্য একজন ধাত্রী ভাড়া করা হতো। যেখানে একজন মা তার সন্তানকে লালনপালন করতে পারতেন না বা মা কে, তা জানা যেত না সেখানে এই প্রথা খুবই সাধারণ ছিল। সেই ধাত্রীর দায়িত্ব ছিল সন্তানকে লালনপালন করা ও সেইসঙ্গে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত স্তন্যপান করানো।” পাপাইরাসে করা এইধরনের অনেক চুক্তি নিকটপ্রাচ্য নিদর্শন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সুমেরীয় সময় থেকে মিশরে গ্রিক সভ্যতার শেষের দিক পর্যন্ত প্রচলিত যে-প্রথাগুলো ছিল, সেই সম্বন্ধে এই নথিগুলো সাক্ষ্যপ্রমাণ দেয়। এই নথিগুলোর কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য হল, অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিবিশেষদের মন্তব্য, চুক্তির সময় পরিধি, কাজের শর্ত, পুষ্টি জোগানের বিষয়ে নির্দিষ্ট পরামর্শ, চুক্তি অমান্য করার জরিমানা, মজুরি এবং কীভাবে মজুরি দেওয়া হবে। চাইল্ডস ব্যাখ্যা করেন, এটা লক্ষণীয় যে, ‘লালনপালন করার সময়সীমা ছিল দুতিন বছরেরও বেশি সময় পর্যন্ত। ধাত্রী তার নিজের বাসায় শিশুটাকে লালনপালন করবে কিন্তু মাঝেমধ্যে পরীক্ষানিরীক্ষার জন্য শিশুটাকে তার নিজের মায়ের কাছে নিয়ে যাবে।’

[৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

এক প্রাচীন চিত্রাঙ্কন যেমন দেখায় যে, মোশির দিন থেকে ইট তৈরির কাজটা খুব একটা পরিবর্তন হয়নি

[সৌজন্যে]

ওপরে: Pictorial Archive (Near Eastern History) Est.; নিচে: Erich Lessing/Art Resource, NY