সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবা তাঁর লোকেদের জ্যোতি দিয়ে বিভূষিত করেন

যিহোবা তাঁর লোকেদের জ্যোতি দিয়ে বিভূষিত করেন

যিহোবা তাঁর লোকেদের জ্যোতি দিয়ে বিভূষিত করেন

“উঠ, [“হে, স্ত্রীলোক,” NW] দীপ্তিমতী হও, কেননা তোমার দীপ্তি উপস্থিত, সদাপ্রভুর প্রতাপ তোমার উপরে উদিত হইল।”যিশাইয় ৬০:১.

১, ২. (ক) মানবজাতির পরিস্থিতি কীরকম? (খ) মানবজাতির অন্ধকারের পিছনে কে রয়েছে?

 “আমাদের যিশাইয় বা সাধু পৌলের মতো নীতিবান একজন লোক দরকার!” ১৯৪০ এর দশকে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান দুঃখ করে এই কথা বলেছিলেন। কেন তিনি তা বলেছিলেন? কারণ তার সময়ের জগতে তিনি উত্তম নীতিবান নেতাদের প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন। মানবজাতি তখন বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে অন্ধকারময় সময় অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সবে পেরিয়ে এসেছিল। যদিও যুদ্ধ শেষ হয়ে গিয়েছিল কিন্তু বিশ্বে শান্তি ছিল না। অন্ধকার রয়েই গিয়েছিল। সত্যি বলতে কী, সেই যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার ৫৭ বছর পর, বিশ্ব এখনও অন্ধকারের মধ্যে রয়েছে। রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান যদি আজকে বেঁচে থাকতেন, তা হলে কোন সন্দেহ নেই যে, এখনও তিনি যিশাইয় বা প্রেরিত পৌলের মতো উত্তম নীতিবান নেতাদের প্রয়োজন অনুভব করতেন।

রাষ্ট্রপতি ট্রুম্যান জানুন আর না-ই জানুন, পৌল সেই অন্ধকার সম্বন্ধে বলেছিলেন, যা মানবজাতিকে কষ্ট দিচ্ছে এবং তার লেখাতে তিনি এই বিষয়ে সাবধান করে দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি সহ বিশ্বাসীদের সাবধান করে দিয়েছিলেন: “রক্তমাংসের সহিত নয়, কিন্তু আধিপত্য সকলের সহিত, কর্ত্তৃত্ব সকলের সহিত, এই অন্ধকারের জগৎপতিদের সহিত, স্বর্গীয় স্থানে দুষ্টতার আত্মাগণের সহিত আমাদের মল্লযুদ্ধ হইতেছে।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (ইফিষীয় ৬:১২) এই কথাগুলোর মাধ্যমে পৌল দেখিয়েছেন যে, শুধু জগতে ছেয়ে থাকা আধ্যাত্মিক অন্ধকার সম্বন্ধেই নয় কিন্তু এর প্রকৃত উৎস সম্বন্ধেও তিনি জানতেন, যে-উৎস হল শক্তিশালী দুষ্ট আত্মারা, যাদের ‘অন্ধকারের জগৎপতি’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। যেহেতু, এই বিশ্বের অন্ধকারের পিছনে শক্তিশালী দুষ্ট আত্মারা রয়েছে, তাই তা দূর করার জন্য সাধারণ মানুষরা কী করতে পারে?

৩. মানবজাতির অন্ধকারময় পরিস্থিতি সত্ত্বেও, বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের জন্য যিশাইয় কী ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন?

যিশাইয়ও অন্ধকার সম্বন্ধে বলেছেন, যা মানবজাতিকে কষ্ট দিচ্ছে। (যিশাইয় ৮:২২; ৫৯:৯) কিন্তু, আমাদের দিনের প্রতি অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, এমনকি এই অন্ধকার সময়েও যারা জ্যোতি ভালবাসেন তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে যিহোবা উজ্জ্বল করবেন। হ্যাঁ, যদিও আজকে আমাদের মাঝে পৌল ও যিশাইয় নেই কিন্তু আমাদের কাছে তাদের অনুপ্রাণিত লেখাগুলো আছে, যা আমাদের পথ দেখাতে পারে। যারা যিহোবাকে ভালবাসেন, তাদের জন্য এটা কত বড় এক আশীর্বাদ, তা দেখার জন্য আসুন আমরা যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক কথাগুলো বিবেচনা করি, যা তার বইয়ের ৬০ অধ্যায়ে পাওয়া যায়।

ভবিষ্যদ্বাণীর এক স্ত্রীলোক জ্যোতি বর্ষণ করেন

৪, ৫. (ক) যিহোবা একজন স্ত্রীলোককে কী করার জন্য আদেশ দিয়েছিলেন এবং তিনি কোন্‌ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন? (খ) যিশাইয় ৬০ অধ্যায়ে কোন্‌ রোমাঞ্চকর তথ্য রয়েছে?

যিশাইয় ৬০ অধ্যায়ের শুরুর কথাগুলো একজন স্ত্রীলোকের উদ্দেশে বলা হয়েছে, যিনি করুণ অবস্থার মধ্যে রয়েছেন—ঘুটঘুটে অন্ধকারে, মাটিতে উপুড় হয়ে শুয়ে আছেন। হঠাৎ করে, অন্ধকারে জ্যোতি দেখা যায় আর যিহোবা ডেকে বলেন: “উঠ, হে স্ত্রীলোক দীপ্তিমতী হও, কেননা তোমার দীপ্তি উপস্থিত, সদাপ্রভুর প্রতাপ তোমার উপরে উদিত হইল।” (যিশাইয় ৬০:১) ওই স্ত্রীলোকের উঠে দাঁড়িয়ে ঈশ্বরের আলো অর্থাৎ তাঁর প্রতাপ প্রতিফলিত করার সময় এসেছে। কেন? এর উত্তর আমরা পরের পদে পাই: “দেখ, অন্ধকার পৃথিবীকে, ঘোর তিমির জাতিগণকে, আচ্ছন্ন করিতেছে, কিন্তু তোমার উপরে সদাপ্রভু উদিত হইবেন, এবং তাঁহার প্রতাপ তোমার উপরে দৃষ্ট হইবে।” (যিশাইয় ৬০:২) ওই স্ত্রীলোক যখন যিহোবার আদেশ মেনে চলেন, তখন তাকে এক চমৎকার ফলাফলের বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়। যিহোবা বলেন: “জাতিগণ তোমার দীপ্তির কাছে আগমন করিবে, রাজগণ তোমার অরুণোদয়ের আলোর কাছে আসিবে।”—যিশাইয় ৬০:৩.

এই তিনটে পদের রোমাঞ্চকর কথাগুলো থেকে যিশাইয় ৬০ অধ্যায়ের বাকি পদগুলোতে কী বলা আছে, তার ভূমিকা এবং সারাংশ পাওয়া যায়। এটা ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা স্ত্রীলোকের অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে জানায় ও সেইসঙ্গে বর্ণনা করে যে, মানবজাতির মধ্যে অন্ধকার থাকা সত্ত্বেও আমরা কীভাবে যিহোবার জ্যোতিতে থাকতে পারি। কিন্তু, শুরুর এই তিনটে পদে যে-প্রতীকগুলো রয়েছে, তার মানে আসলে কী?

৬. যিশাইয় ৬০ অধ্যায়ে বলা ওই স্ত্রীলোক কে এবং পৃথিবীতে কারা তার প্রতিনিধিত্ব করেন?

যিশাইয় ৬০:১-৩ পদে বলা স্ত্রীলোক হল সিয়োন অর্থাৎ আত্মিক প্রাণীদের নিয়ে গঠিত যিহোবার স্বর্গীয় সংগঠন। আজকে, পৃথিবীতে ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েল’ অর্থাৎ আত্মায় অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের আন্তর্জাতিক মণ্ডলীর অবশিষ্ট ব্যক্তিরা, যাদের স্বর্গে খ্রীষ্টের সঙ্গে রাজত্ব করার আশা আছে, তারা সিয়োনকে প্রতিনিধিত্ব করেন। (গালাতীয় ৬:১৬) এই আত্মিক জাতির সদস্য সংখ্যা ১,৪৪,০০০ এবং এদের মধ্যে আজকে পৃথিবীতে এই “শেষ কালে” যারা বেঁচে আছেন তাদের ঘিরেই যিশাইয় ৬০ অধ্যায়ের ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ হচ্ছে। (২ তীমথিয় ৩:১; প্রকাশিত বাক্য ১৪:১) শুধু তাই নয়, এই ভবিষ্যদ্বাণীতে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের সঙ্গী, ‘অপর মেষদের’ “বিস্তর লোক” সম্বন্ধে অনেক কিছু বলার আছে।—যোহন ১০:১৬ক, NW; প্রকাশিত বাক্য ৭:৯.

৭. সিয়োনের অবস্থা ১৯১৮ সালে কেমন ছিল এবং কীভাবে এই সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল?

ভবিষ্যদ্বাণীর ওই স্ত্রীলোকের মতো, ‘ঈশ্বরের ইস্রায়েল’ কি কখনও অন্ধকারে শুয়েছিল? হ্যাঁ, এটা ৮০ বছরেরও বেশি আগে হয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে, সাক্ষ্য দেওয়ার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য অভিষিক্ত খ্রীষ্টানরা প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু যুদ্ধের শেষ বছর ১৯১৮ সালে, সংগঠিত প্রচার কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ভাই জোসেফ এফ. রাদারফোর্ড, যিনি পৃথিবীব্যাপী প্রচার কাজের দেখাশোনা করতেন, তার ও অন্যান্য উল্লেখযোগ্য খ্রীষ্টানদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে তাদের দীর্ঘ দিনের জন্য জেলে পাঠানো হয়েছিল। সেই সময়ে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের অবস্থা সম্বন্ধে প্রকাশিত বাক্য বইয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা ছিল যে, তাদের শব “মহানগরের চকে পড়িয়া থাকিবে, যে নগরকে আত্মিকভাবে সদোম ও মিসর বলে।” (প্রকাশিত বাক্য ১১:৮) এটা সিয়োনের জন্য সত্যিই এক অন্ধকারময় সময় ছিল, যাকে পৃথিবীতে তার অভিষিক্ত সন্তানরা প্রতিনিধিত্ব করেন!

৮. কোন্‌ নাটকীয় পরিবর্তন ১৯১৯ সালে ঘটে এবং এর ফল কী হয়?

কিন্তু, ১৯১৯ সালে এক নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে। যিহোবা সিয়োনের ওপর জ্যোতি বর্ষণ করেন! ঈশ্বরের ইস্রায়েলের রক্ষাপ্রাপ্ত লোকেরা ঈশ্বরের জ্যোতি প্রতিফলিত করার জন্য উঠে দাঁড়ান এবং আবারও নির্ভীকভাবে সুসমাচার ঘোষণা করতে শুরু করেন। (মথি ৫:১৪-১৬) এই খ্রীষ্টানদের নবোদ্যগের কারণে অন্যেরা যিহোবার জ্যোতিতে এসেছিলেন। প্রথমে, নবাগতদের ঈশ্বরের ইস্রায়েলের অতিরিক্ত সদস্য হিসেবে অভিষিক্ত করা হয়েছিল। যিশাইয় ৬০:৩ পদে তাদের রাজগণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, কারণ তারা ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্যে খ্রীষ্টের সহ উত্তরাধিকারী হবেন। (প্রকাশিত বাক্য ২০:৬) পরে, অপর মেষদের এক বিরাট জনতা যিহোবার জ্যোতিতে আসতে শুরু করে। এরাই ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা “জাতিগণ।”

স্ত্রীলোকের সন্তানরা ঘরে ফিরে আসেন!

৯, ১০. (ক) সেই স্ত্রীলোক কোন্‌ উল্লেখযোগ্য দৃশ্য দেখেন এবং এটা কোন্‌ বিষয়কে চিত্রিত করে? (খ) আনন্দ করার কোন্‌ কারণ সিয়োনের ছিল?

এরপর যিহোবা, যিশাইয় ৬০:১-৩ পদে দেওয়া তথ্য সম্বন্ধে আরও বিষয় জানান। তিনি সেই স্ত্রীলোককে আরেকটা আদেশ দেন। তিনি কী বলেন তা শুনুন: “তুমি চারিদিকে চক্ষু তুলিয়া দেখ।” আদেশ অনুযায়ী ওই স্ত্রীলোক চারিদিকে তাকান এবং এক দারুণ দৃশ্য তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে! তার সন্তানরা ঘরে আসছে। শাস্ত্রপদ বলে চলে: “উহারা সকলে একত্র হইয়া তোমার কাছে আসিতেছে; তোমার পুত্ত্রগণ দূর হইতে আসিবে, তোমার কন্যাগণ কক্ষে করিয়া আনীত হইবে।” (যিশাইয় ৬০:৪) ১৯১৯ সালে সারা পৃথিবীতে যে-রাজ্যের প্রচার কাজ শুরু হয়েছিল, তা হাজার হাজার নতুন ব্যক্তিদের যিহোবার সেবায় নিয়ে এসেছিল। তারাও সিয়োনের “পুত্ত্রগণ” ও “কন্যাগণ” অর্থাৎ ঈশ্বরের ইস্রায়েলের অভিষিক্ত সদস্য হয়ে উঠেছিল। এভাবে ১,৪৪,০০০ জনের শেষ সদস্যদের জ্যোতিতে এনে যিহোবা সিয়োনকে বিভূষিত করেছিলেন।

১০ সিয়োন যখন তার সন্তানদের কাছে পেয়েছিলেন, তখন কতটা খুশি হয়েছিলেন তা কি আপনি কল্পনা করতে পারেন? এরপর সিয়োনের খুশি হওয়ার আরও অন্য কারণ সম্বন্ধে যিহোবা জানান। আমরা পড়ি: “তখন তুমি তাহা দেখিয়া দীপ্যমানা হইবে, তোমার হৃদয় স্পন্দন করিবে ও বিকসিত হইবে; কেননা সমুদ্রের দ্রব্যরাশি তোমার দিকে ফিরান যাইবে, জাতিগণের ঐশ্বর্য্য তোমার কাছে আসিবে।” (যিশাইয় ৬০:৫) ভবিষ্যদ্বাণীর ওই কথাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে, ১৯৩০ এর দশক থেকে লক্ষ লক্ষ খ্রীষ্টানরা, যাদের এই পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা রয়েছে, তারা দলে দলে সিয়োনে জড়ো হয়েছেন। তারা ঈশ্বর থেকে বিচ্ছিন্ন মানবজাতির ‘সমুদ্র’ থেকে বেরিয়ে এসেছেন এবং তারা জাতিগণের ঐশ্বর্যকে প্রতিনিধিত্ব করেন। তারা হলেন “সর্ব্বজাতির মনোরঞ্জন বস্তু সকল।” (হগয় ২:৭; যিশাইয় ৫৭:২০) এ ছাড়া লক্ষ করুন যে, এই “মনোরঞ্জন বস্তু সকল” যিহোবাকে সেবা করার জন্য যার যেখানে খুশি সেখানে যান না। বরং তারা তাদের অভিষিক্ত ভাইদের সঙ্গে উপাসনা করতে এসে তাদের সঙ্গে ‘এক পালকের’ অধীনে “এক পাল” হয়ে সিয়োনের সৌন্দর্য বাড়ান।—যোহন ১০:১৬.

বণিক, মেষপালক ও ব্যবসায়ীরা সিয়োনের কাছে আসে

১১, ১২. সিয়োনের দিকে যে-জনতাদের আসতে দেখা গেছে, তাদের সম্বন্ধে বর্ণনা করুন।

১১ একত্রিত করার ব্যাপারে যে-ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, তার ফলে যিহোবার প্রশংসাকারীদের সংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে বেড়ে গেছে। ভবিষ্যদ্বাণীর পরের কথাগুলোতে এই বিষয়ে বলা হয়েছে। কল্পনা করুন যে, আপনি সেই ভবিষ্যদ্বাণীর স্ত্রীলোকের সঙ্গে সিয়োন পাহাড়ের ওপরে দাঁড়িয়ে আছেন। পূর্ব দিকে তাকিয়ে দেখুন, কী দেখতে পাচ্ছেন? “তোমাকে আবৃত করিবে উষ্ট্রযূথ, মিদিয়নের ও ঐফার দ্রুতগামী উষ্ট্রগণ; শিবা দেশ হইতে সকলেই আসিবে; তাহারা সুবর্ণ ও কুন্দুরু আনিবে, এবং সদাপ্রভুর প্রশংসার সুসমাচার প্রচার করিবে।” (যিশাইয় ৬০:৬) বণিকেরা দলে দলে তাদের উট নিয়ে যিরূশালেমের পথে আসছেন। উটগুলো যেন বন্যার জলের মতো ভূমিকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে! ব্যবসায়ীদের কাছে মূল্যবান উপহারসামগ্রী যেমন, “সুবর্ণ ও কুন্দুরু” রয়েছে। আর এই বণিকেরা সকলের সামনে ‘সদাপ্রভুর প্রশংসা করার জন্য’ ঈশ্বরের জ্যোতিতে আসেন।

১২ কিন্তু বণিকেরাই শুধু এগিয়ে আসছেন না। মেষপালকেরাও দলে দলে সিয়োনে আসেন। ভবিষ্যদ্বাণী বলে চলে: “কেদরের সমস্ত মেষপাল তোমার নিকটে একত্রীকৃত হইবে, নবায়োতের মেষগণ তোমার পরিচর্য্যা করিবে।” (যিশাইয় ৬০:৭ক) মেষপালকের দল তাদের মেষপাল থেকে সবচেয়ে ভাল মেষ উৎসর্গ করার জন্য পবিত্র নগরে ছুটে আসছেন। এমনকি তারা নিজেরাও সিয়োনের পরিচর্যা করেন! যিহোবা এই বিদেশিদের কীভাবে অভ্যর্থনা জানান? ঈশ্বর নিজে উত্তর দেন: “তাহারা আমার যজ্ঞবেদির উপরে উৎসৃষ্ট হইয়া গ্রাহ্য হইবে, আর আমি আপনার ভূষণস্বরূপ গৃহ বিভূষিত করিব।” (যিশাইয় ৬০:৭খ) যিহোবা সদয়ভাবে এই বিদেশিদের বলি ও তাদের সেবা গ্রহণ করেন। তাদের উপস্থিতিতে তাঁর মন্দির বিভূষিত হয়।

১৩, ১৪. পশ্চিম প্রান্ত থেকে কী আসতে দেখা যায়?

১৩ এবার চোখ ঘুরিয়ে পশ্চিম দিকে ভালভাবে দেখুন। কী দেখতে পাচ্ছেন? দূরে সমুদ্রের ওপর সাদা মেঘ ছড়িয়ে আছে বলে মনে হয়। আপনার মনে যে-প্রশ্নটা রয়েছে, যিহোবা সেটা জিজ্ঞেস করেন: “এ কাহারা উড়িয়া আসিতেছে, মেঘের ন্যায়, আপন আপন খোপের দিকে কপোতের ন্যায়?” (যিশাইয় ৬০:৮) যিহোবা নিজেই তাঁর প্রশ্নের উত্তর দেন: “সত্যই উপকূল সকল আমার অপেক্ষা করিবে, তর্শীশের জাহাজ সকল অগ্রগামী হইবে, দূর হইতে তোমার সন্তানদিগকে আনিবে, তাহাদের রৌপ্য ও সুবর্ণের সহিত আনিবে, তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর নামের জন্য, ইস্রায়েলের পবিত্রতমের জন্য, কেননা তিনি তোমাকে বিভূষিত করিয়াছেন।”—যিশাইয় ৬০:৯.

১৪ আপনি কি এই দৃশ্য কল্পনা করতে পারেন? সেই সাদা মেঘ কাছে আসতে থাকে এবং এখন দেখতে পশ্চিমের দূর প্রান্ত থেকে আসা বিন্দু বিন্দু মেঘের মতো মনে হয়। সেগুলোকে ঢেউয়ের মধ্যে ভেসে আসা এক ঝাঁক পাখির মতো মনে হয়। কিন্তু যখন কাছে এগিয়ে আসে, তখন আপনি দেখতে পাবেন যে, সেগুলো আসলে পাল তোলা জাহাজ আর বাতাসের জন্য পালগুলো তুলে দেওয়া হয়েছে। এত জাহাজ যিরূশালেমের দিকে এগিয়ে আসছে যে, সেগুলোকে কবুতরের পালের মতো দেখায়। দূরদূরান্তের বন্দরগুলো থেকে অনেক জাহাজ বিশ্বাসীদের নিয়ে আসছে, যারা যিহোবাকে উপাসনা করার জন্য যিরূশালেমে ছুটে আসছেন।

যিহোবার সংগঠন বৃদ্ধি পায়

১৫. (ক) যিশাইয় ৬০:৪-৯ পদে কোন্‌ বৃদ্ধি সম্বন্ধে বলা হয়েছে? (খ) প্রকৃত খ্রীষ্টানরা কোন্‌ মনোভাব দেখান?

১৫ সেই ১৯১৯ সাল থেকে পৃথিবীব্যাপী সম্প্রসারণের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক চিত্র ৪ থেকে ৯ পদে কত স্পষ্টভাবেই না তুলে ধরা হয়েছে! কেন যিহোবা সিয়োনকে এইরকম বৃদ্ধি দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন? কারণ ১৯১৯ সাল থেকে ঈশ্বরের ইস্রায়েল বাধ্যভাবে এবং অবিরত যিহোবার জ্যোতি বর্ষণ করেন। কিন্তু, আপনি কি লক্ষ্য করেছেন যে, ৭ পদ অনুসারে নবাগতরা “[ঈশ্বরের] যজ্ঞবেদির উপরে” আসেন? যজ্ঞবেদিতে বলি উৎসর্গ করা হয় আর ভবিষ্যদ্বাণীর এই দিকটা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, যিহোবার পরিচর্যায়ও বলি উৎসর্গ করতে হয়। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে বিনতি করিতেছি, তোমরা আপন আপন দেহকে জীবিত, পবিত্র, ঈশ্বরের প্রীতিজনক বলিরূপে উৎসর্গ কর, ইহাই তোমাদের চিত্ত-সঙ্গত আরাধনা।” (রোমীয় ১২:১) পৌলের কথার সঙ্গে মিল রেখে প্রকৃত খ্রীষ্টানরা শুধু সপ্তাহে একবার ধর্মীয় সভাতে যোগ দিয়েই সন্তুষ্ট থাকেন না। তারা বিশুদ্ধ উপাসনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের সময়, শক্তি ও সম্পদ দেন। এই উৎসর্গীকৃত উপাসকদের উপস্থিতি কি যিহোবার গৃহকে বিভূষিত করে না? যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণী বলে যে, এটা তা করবে। আর আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, এইধরনের উদ্যোগী উপাসকরা যিহোবার চোখেও সুন্দর।

১৬. প্রাচীনকালে কারা পুনর্নিমাণ কাজে সাহায্য করেছিলেন এবং আজকে কারা সেগুলো করেছেন?

১৬ নবাগতরা কাজ করতে চান। ভবিষ্যদ্বাণী বলে চলে: “বিজাতি-সন্তানেরা তোমরা প্রাচীর গাঁথিবে, তাহাদের রাজগণ তোমার পরিচর্য্যা করিবে।” (যিশায়ই ৬০:১০) এই কথাগুলোর প্রথম পরিপূর্ণতা হয় যখন বাবিলনীয় বন্দিত্ব থেকে ফিরে আসার পর রাজারা এবং অন্যান্য জাতির লোকেরা প্রকৃতপক্ষে যিরূশালেমের মন্দির ও শহর পুনর্নিমাণ করতে সাহায্য করেছিলেন। (ইষ্রা ৩:৭; নহিমিয় ৩:২৬) আধুনিক পরিপূর্ণতায়, বিরাট জনতা সত্য উপাসনাকে গেঁথে তোলার জন্য অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশদের সাহায্য করেন। তারা খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীগুলো গড়ে তুলতে সাহায্য করেছেন আর এভাবে যিহোবার নগরতুল্য সংগঠনের ‘প্রাচীরকে’ শক্তিশালী করেন। এ ছাড়াও, তারা আক্ষরিকভাবে নির্মাণকাজে অর্থাৎ কিংডম হল, সম্মেলন হল এবং বেথেল গৃহ নির্মাণে সাহায্য করেন। এভাবে তারা যিহোবার সম্প্রসারিত সংগঠনের প্রয়োজনগুলো মেটাতে তাদের অভিষিক্ত ভাইদের সাহায্য করেন!

১৭. একটা উপায় কী, যার মাধ্যমে যিহোবা তাঁর লোকেদের বিভূষিত করেন?

১৭ যিশাইয় ৬০:১০ পদের শেষ কথাগুলো কত উৎসাহজনক! যিহোবা বলেন, “আমি কোপভরে তোমাকে প্রহার করিয়াছি, কিন্তু অনুগ্রহে তোমার প্রতি করুণা করিলাম।” হ্যাঁ, ১৯১৮/১৯ সালে যিহোবা তাঁর লোকেদের শাসন করেছিলেন। কিন্তু, সেটা ছিল অতীতের বিষয়। যিহোবার জন্য এখনই হল অভিষিক্ত দাস এবং তাদের অপর মেষ সহযোগীদের প্রতি করুণা দেখানোর সময়। এটা যে সত্যি তার প্রমাণ হল, তিনি তাদের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দিয়ে আশীর্বাদ করেছেন, ঠিক যেন তিনি ‘তাদের বিভূষিত’ করেছেন।

১৮, ১৯. (ক) নতুন ব্যক্তিরা যারা যিহোবার সংগঠনে আসছেন তাদের বিষয়ে তিনি কোন্‌ প্রতিজ্ঞা করেছেন? (খ) যিশাইয় ৬০ অধ্যায়ের বাকি পদগুলো আমাদের কী জানায়?

১৮ প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ “বিজাতি-সন্তানেরা” যিহোবার সংগঠনে আসেন এবং আরও লোকেদের আসার জন্য পথ খোলা থাকবে। যিহোবা সিয়োনকে বলেন: “তোমার পুরদ্বার সকল সর্ব্বদা খোলা থাকিবে, কি দিন কি রাত্রি কখনও রুদ্ধ হইবে না; জাতিগণের ঐশ্বর্য্য তোমার কাছে আনা যাইবে, আর তাহাদের রাজগণকেও সঙ্গে আনা যাইবে।” (যিশাইয় ৬০:১১) কিছু বিরোধীরা ওই “পুরদ্বার সকল” বন্ধ করার চেষ্টা করে কিন্তু আমরা জানি যে, তারা তা করতে পারবে না। কারণ যিহোবা নিজে বলেছেন যেকোনভাবেই হোক না কেন, দ্বারগুলো খোলা থাকবে। বৃদ্ধি হয়েই চলবে।

১৯ এখনও আরও অনেক উপায় রয়েছে, যার মাধ্যমে এই শেষ সময়ে যিহোবা তাঁর লোকেদের আশীর্বাদ করেন ও বিভূষিত করেন। যিশাইয় ৬০ অধ্যায়ের বাকি পদগুলো ভবিষ্যদ্বাণীর আকারে সেই উপায়গুলো সম্বন্ধে জানায়।

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?

• ঈশ্বরের “স্ত্রীলোক” কে এবং পৃথিবীতে কারা তার প্রতিনিধিত্ব করেন?

• সিয়োনের সন্তানরা কখন উপুড় হয়ে শুয়ে ছিল এবং কখন ও কীভাবে তারা ‘উঠিয়াছে’?

• বিভিন্ন প্রতীক ব্যবহার করে যিহোবা কীভাবে আজকের রাজ্য প্রচারকদের বৃদ্ধি সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন?

• কোন্‌ কোন্‌ উপায়ে যিহোবা তাঁর লোকেদের ওপর জ্যোতি বর্ষিত করেছেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবার ‘স্ত্রীলোককে’ ওঠার জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছে

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

জাহাজের বহরকে দিগন্তে কবুতরের পালের মতো দেখায়