সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনার ধৈর্যের সঙ্গে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি যুক্ত করুন

আপনার ধৈর্যের সঙ্গে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি যুক্ত করুন

আপনার ধৈর্যের সঙ্গে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি যুক্ত করুন

“আপনাদের বিশ্বাসে . . . ধৈর্য্য, ও ধৈর্য্যে ভক্তি [“ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি,” NW] . . . যোগাও।”২ পিতর ১:৫-৭.

১, ২. (ক) একজন সন্তানের ক্ষেত্রে কীধরনের বৃদ্ধি আশা করা হয়? (খ) আধ্যাত্মিক বৃদ্ধি কতটা জরুরি?

 একজন সন্তানের বেড়ে ওঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু শুধু শারীরিক বৃদ্ধিই যথেষ্ট নয়। মানসিক এবং আবেগগত দিক দিয়েও বৃদ্ধি আশা করা হয়। এক সময়ে, সেই সন্তান তার অপরিপক্ব অবস্থা পেরিয়ে আসবে এবং এক পূর্ণবয়স্ক ছেলে অথবা মেয়ে হিসেবে গড়ে উঠবে। প্রেরিত পৌল এই বিষয়টা উল্লেখ করেছিলেন, যখন তিনি লিখেছিলেন: “আমি যখন শিশু ছিলাম, তখন শিশুর ন্যায় কথা কহিতাম, শিশুর ন্যায় চিন্তা করিতাম, শিশুর ন্যায় বিচার করিতাম; এখন মানুষ হইয়াছি বলিয়া শিশুভাবগুলি ত্যাগ করিয়াছি।”—১ করিন্থীয় ১৩:১১.

পৌলের কথাগুলো আধ্যাত্মিক বৃদ্ধির ব্যাপারে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরে। আধ্যাত্মিক শিশু থেকে “বুদ্ধিতে পরিপক্ব” হওয়ার জন্য খ্রীষ্টানদের উন্নতি করার প্রয়োজন। (১ করিন্থীয় ১৪:২০) “খ্রীষ্টের পূর্ণতার আকারের পরিমাণ” অর্জন করার জন্য তাদের প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে। তা হলে তারা ‘আর বালক থাকিবে না এবং যে সে শিক্ষাবায়ুতে ইতস্ততঃ পরিচালিত’ হবে না।—ইফিষীয় ৪:১৩, ১৪.

৩, ৪. (ক) আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে পূর্ণবয়স্ক হওয়ার জন্য আমাদের কী করতে হবে? (খ) আমাদের কোন্‌ ঈশ্বরীয় গুণগুলো দেখাতে হবে এবং সেগুলো কতখানি জরুরি?

আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে কীভাবে আমরা পূর্ণবয়স্ক হতে পারি? স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আমাদের শারীরিক বৃদ্ধি যদিও এমনি এমনিই হয় কিন্তু আধ্যাত্মিক বৃদ্ধির জন্য বিশেষ চেষ্টার প্রয়োজন আছে। ঈশ্বরের বাক্যের সঠিক জ্ঞান নেওয়া এবং আমরা যা শিখি, তার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করার মাধ্যমে এই চেষ্টার শুরু হয়। (ইব্রীয় ৫:১৪; ২ পিতর ১:৩) ফলে এটা আমাদের ঈশ্বরীয় গুণগুলো দেখাতে সাহায্য করে। শারীরিক বৃদ্ধি এবং এর সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলোর মতোই ঈশ্বরীয় বিভিন্ন গুণ সাধারণত একই সময়ে গড়ে ওঠে। প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “তোমরা সম্পূর্ণ যত্ন প্রয়োগ করিয়া আপনাদের বিশ্বাসে সদ্‌গুণ, ও সদ্‌গুণে জ্ঞান, ও জ্ঞানে জিতেন্দ্রিয়তা, ও জিতেন্দ্রিয়তায় ধৈর্য্য, ও ধৈর্য্যে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি, ও ভক্তিতে [“ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিতে,” NW] ভ্রাতৃস্নেহ, ও ভ্রাতৃস্নেহে প্রেম যোগাও।”—২ পিতর ১:৫-৭.

পিতর যে-গুণগুলোর তালিকা দিয়েছেন, সেটার সবগুলোই জরুরি এবং এগুলোর কোনটাই বাদ দেওয়া যায় না। তিনি আরও বলেন: “এই সমস্ত যদি তোমাদিগেতে থাকে ও উপচিয়া পড়ে, তবে আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের তত্ত্বজ্ঞান সম্বন্ধে তোমাদিগকে অলস কি ফলহীন থাকিতে দিবে না।” (২ পিতর ১:৮) আসুন আমরা আমাদের ধৈর্যে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি জোগানোর প্রয়োজনীয়তার প্রতি মনোযোগ দিই।

যে-কারণে ধৈর্য প্রয়োজন

৫. কেন আমাদের ধৈর্যের প্রয়োজন?

পিতর এবং পৌল উভয়েই ধৈর্যের সঙ্গে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি যুক্ত করেছেন। (১ তীমথিয় ৬:১১, NW) ধৈর্য থাকার মানে শুধু কষ্টের মধ্যে নিজেকে শক্ত রাখার এবং দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ থাকার চেয়ে আরও বেশি কিছুকে বোঝায়। এর মধ্যে রয়েছে পরীক্ষা, বাধা, প্রলোভন বা তাড়নার মধ্যেও আশা না হারিয়ে সহিষ্ণু, সাহস, এবং দৃঢ়তা বজায় রাখা। যেহেতু আমরা “ভক্তিভাবে [“ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি সহকারে,” NW] খ্রীষ্ট যীশুতে” জীবনযাপন করি, তাই আমরা তাড়িত হব বলে আশা করি। (২ তীমথিয় ৩:১২) আমরা যদি যিহোবার প্রতি আমাদের ভালবাসা প্রমাণ করতে চাই এবং পরিত্রাণের জন্য যে-গুণগুলো দরকার সেগুলো গড়ে তুলতে চাই, তা হলে আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। (রোমীয় ৫:৩-৫; ২ তীমথিয় ৪:৭, ৮; যাকোব ১:৩, ৪, ১২) ধৈর্য না ধরলে আমরা অনন্ত জীবন পাব না।—রোমীয় ২:৬, ৭; ইব্রীয় ১০:৩৬.

৬. শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরা বলতে কী বোঝায়?

আমরা কতটা ভালভাবে জীবন শুরু করি, সেটা বড় বিষয় নয় কিন্তু জরুরি বিষয় হল আমাদের ধৈর্য। যীশু বলেছিলেন: “যে কেহ শেষ পর্য্যন্ত স্থির থাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে।” (মথি ২৪:১৩) হ্যাঁ, আমাদেরকে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরতে হবে, তা সে আমাদের বর্তমান জীবনের বা এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ পর্যন্তই হোক না কেন। উভয় ক্ষেত্রেই, ঈশ্বরের প্রতি আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে হবে। আমাদের ধৈর্যের সঙ্গে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি যুক্ত না করলে আমরা ঈশ্বরকে খুশি করতে পারব না এবং অনন্ত জীবন পাব না। কিন্তু, ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি কী?

ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি বলতে যা বোঝায়

৭. ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি কী এবং এটা আমাদের কী করতে প্রেরণা দেয়?

ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি হল, যিহোবা ঈশ্বরের সার্বিক সার্বভৌমত্বের প্রতি আনুগত্য বজায় রেখে তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা দেখানো এবং তাঁর উপাসনা ও সেবা করা। যিহোবার প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রেখে এই ভক্তি অভ্যাস করার জন্য তাঁর সম্বন্ধে ও তাঁর পথগুলোর বিষয়ে আমাদের সঠিক জ্ঞান নেওয়া প্রয়োজন। ঈশ্বরকে ব্যক্তিগতভাবে এবং ঘনিষ্ঠভাবে জানতে চাইতে হবে। এটা আমাদেরকে তাঁর প্রতি এক আন্তরিক আসক্তি গড়ে তুলতে প্রেরণা দেবে, যা আমাদের কাজ ও জীবনযাপনের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। আমরা যতটা সম্ভব যিহোবার মতো হতে চাই অর্থাৎ তাঁর পথ অনুকরণ এবং তাঁর গুণগুলো ও ব্যক্তিত্বকে প্রতিফলিত করতে চাই। (ইফিষীয় ৫:১) আসলে, ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি আমাদের সমস্ত কাজে ঈশ্বরকে খুশি করতে চাওয়ার প্রেরণা দেয়।—১ করিন্থীয় ১০:৩১.

৮. কীভাবে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি এবং একাগ্র ভক্তি ওতপ্রোতভাবে জড়িত?

ঈশ্বরের প্রতি প্রকৃত ভক্তি অভ্যাস করার জন্য আমাদের একমাত্র যিহোবাকেই একাগ্র উপাসনা করতে হবে এবং আমাদের হৃদয়ে তাঁর যে-স্থান আছে, সেটা যেন কোন কিছুই দখল করতে না পারে। আমাদের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে, তাঁর একাগ্র ভক্তি পাওয়ার অধিকার আছে। (দ্বিতীয় বিবরণ ৪:২৪, NW; যিশাইয় ৪২:৮) তবুও, যিহোবাকে উপাসনা করার জন্য তিনি আমাদের জোর করেন না। তিনি চান আমরা যেন নিজে থেকে তাঁর প্রতি ভক্তি দেখাই। ঈশ্বর সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে তাঁর প্রতি ভালবাসাই আমাদের জীবনকে শুদ্ধ করতে এবং তাঁর কাছে নিঃশর্তভাবে নিজেকে উৎসর্গ করতে এবং সেই অনুসারে জীবনযাপন করতে আমাদের প্রেরণা দেয়।

ঈশ্বরের সঙ্গে এক সম্পর্ক গড়ে তুলুন

৯, ১০. কীভাবে আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং তা বজায় রাখতে পারি?

বাপ্তিস্মের মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রতি আমাদের উৎসর্গীকরণের চিহ্ন প্রকাশ করার পরও তাঁর সঙ্গে আমাদের আরও বেশি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন। আর তা করার এবং যিহোবাকে বিশ্বস্তভাবে সেবা করার ব্যাপারে আমাদের ইচ্ছা আমাদেরকে নিয়মিত ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন এবং তা নিয়ে ধ্যান করতে প্রেরণা দেয়। ঈশ্বরের আত্মাকে আমরা যদি আমাদের মনে ও হৃদয়ে কাজ করতে দিই, তা হলে যিহোবার প্রতি আমাদের ভালবাসা আরও গভীর হয়। তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আমাদের জীবনে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হয়ে থাকবে। যিহোবাকে আমরা আমাদের প্রিয় বন্ধুর মতো দেখি এবং সবসময় তাঁকে খুশি করতে চাই। (১ যোহন ৫:৩) ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের মধুর সম্পর্ক থাকায় আমাদের আনন্দ বৃদ্ধি পায় এবং আমরা কৃতজ্ঞ যে, তিনি প্রেমের সঙ্গে আমাদের নির্দেশনা দেন এবং যখন দরকার তখন আমাদের সংশোধন করেন।—দ্বিতীয় বিবরণ ৮:৫.

১০ আমরা যদি যিহোবার সঙ্গে আমাদের মূল্যবান সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য সবসময় চেষ্টা করে না চলি, তা হলে তা দুর্বল হয়ে যেতে পারে। আর যদি এইরকম হয়ে থাকে, তা হলে এতে ঈশ্বরের দোষ হবে না, কারণ “তিনি আমাদের কাহারও হইতে দূরে নহেন।” (প্রেরিত ১৭:২৭) আমরা কত সুখী যে, যিহোবা তাঁর কাছে আসার পথকে দুর্বোধ্য করে তোলেন না। (১ যোহন ৫:১৪, ১৫) এটা ঠিক যে, যিহোবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু, ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি গড়ে তোলার এবং তা বজায় রাখার জন্য যা যা দরকার, সেগুলোর সমস্ত কিছু জুগিয়ে তিনি তাঁর কাছে আসতে আমাদের সাহায্য করেন। (যাকোব ৪:৮) কীভাবে আমরা এই প্রেমময় ব্যবস্থাগুলো পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারি?

আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শক্তিশালী থাকুন

১১. ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ভক্তির কিছু প্রকাশ কী?

১১ ঈশ্বরের প্রতি আমাদের গভীর ভালবাসা তাঁর প্রতি আমাদের কতটা ভক্তি রয়েছে, তা পৌলের এই পরামর্শের সঙ্গে মিল রেখে প্রকাশ করতে প্রেরণা দেবে: “তুমি আপনাকে ঈশ্বরের কাছে পরীক্ষাসিদ্ধ লোক দেখাইতে যত্ন কর; এমন কার্য্যকারী হও, যাহার লজ্জা করিবার প্রয়োজন নাই, যে সত্যের বাক্য যথার্থরূপে ব্যবহার করিতে জানে।” (২ তীমথিয় ২:১৫) এর জন্য আমাদের নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়ন করার, সভায় উপস্থিত হওয়ার এবং ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করার উত্তম তালিকা বজায় রাখা প্রয়োজন। এ ছাড়া, ‘অবিরত প্রার্থনা করিয়া’ আমরা যিহোবার আরও কাছে আসতে পারি। (১ থিষলনীকীয় ৫:১৭) এগুলো হল ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ভক্তির অর্থপূর্ণ প্রকাশ। এগুলোর যেকোন একটাকে অবহেলা করলে, তা আমাদের আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে অসুস্থ এবং শয়তানের কলাকৌশলের কাছে দুর্বল করে দিতে পারে।—১ পিতর ৫:৮.

১২. কীভাবে আমরা পরীক্ষাগুলো সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি?

১২ এ ছাড়া, আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শক্তিশালী এবং সক্রিয় থাকা আমাদের সামনে যে-পরীক্ষাগুলো আসে, সেগুলো মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। এমন উৎস থেকে পরীক্ষা আসতে পারে, যা আমাদেরকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলতে পারে। উদাসীনতা, বিরোধিতা এবং তাড়না সহ্য করা অনেক কঠিন হতে পারে যখন সেগুলো পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্য, আত্মীয়স্বজন বা প্রতিবেশীদের কাছ থেকে আসে। খ্রীষ্টীয় নীতিগুলোর বিষয়ে আপোশ করতে আমাদের কাজের জায়গা বা স্কুল থেকে ক্ষতিকারক চাপ আসতে পারে। নিরুৎসাহ, অসুস্থতা এবং হতাশা আমাদেরকে শারীরিক দিক দিয়ে দুর্বল করে দিতে পারে আর এটা বিশ্বাসের পরীক্ষার সঙ্গে মোকাবিলা করা আরও কঠিন করে তোলে। কিন্তু, আমরা সমস্ত পরীক্ষা সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি, যদি আমরা ‘পবিত্র আচার ব্যবহার ও ভক্তিতে [“ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিতে,” NW] . . . ঈশ্বরের সেই দিনের আগমনের অপেক্ষা ও আকাঙ্ক্ষা করিতে করিতে সেইরূপ হই।’ (২ পিতর ৩:১১, ১২) আর তা করে আমরা আমাদের আনন্দ এবং ঈশ্বরের আশীর্বাদের প্রতি আস্থা বজায় রাখতে পারি।—হিতোপদেশ ১০:২২.

১৩. আমরা যদি ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি অভ্যাস করে চলতে চাই, তা হলে আমাদের কী করতে হবে?

১৩ যদিও যারা ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি অভ্যাস করেন, তারা শয়তানের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন কিন্তু আমাদের ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। কেন? কারণ “প্রভু ভক্তদিগকে [“যিহোবা, ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি আছে এমন লোকেদের,” NW] পরীক্ষা হইতে উদ্ধার করিতে . . . জানেন।” (২ পিতর ২:৯) পরীক্ষা সহ্য করতে এবং এইধরনের উদ্ধার পেতে চাইলে আমাদের “ভক্তিহীনতা ও সাংসারিক অভিলাষ সকল অস্বীকার করিয়া সংযত, ধার্ম্মিক ও ভক্তিভাবে [“ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি অনুসারে,” NW] এই বর্ত্তমান যুগে জীবন যাপন” করতে হবে। (তীত ২:১২) খ্রীষ্টান হিসেবে, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে মাংসিক আকাঙ্ক্ষা এবং কাজগুলোর সঙ্গে জড়িত কোন দুর্বলতা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ভক্তি ছিনিয়ে না নেয় এবং এটাকে নষ্ট করে না দেয়। আসুন এখন আমরা এইরকম কিছু হুমকি সম্বন্ধে বিবেচনা করি।

ঈশ্বরের প্রতি ভক্তির ক্ষেত্রে হুমকিস্বরূপ, এমন বিষয়গুলো থেকে সাবধান হোন

১৪. আমরা যদি বস্তুবাদিতার ফাঁদে পড়ি, তা হলে আমাদের কোন্‌ বিষয়টা মনে রাখা উচিত?

১৪ বস্তুবাদিতা অনেকের কাছে এক ফাঁদস্বরূপ। এমনকি আমরা “ভক্তিকে [“ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিকে” NW] [বস্তুগত] লাভের উপায় জ্ঞান করে” নিজেদের প্রতারিত করতে পারি। এভাবে, সহ বিশ্বাসীদের দেখানো আস্থার অনুপযুক্ত সুযোগ নেওয়ার জন্য আমরা সাহসী হয়ে উঠতে পারি। (১ তীমথিয় ৬:৫) আমরা হয়তো ভুলভাবে এই উপসংহারে আসতে পারি যে, একজন ব্যক্তির পরিশোধ করার সামর্থ্য না থাকা সত্ত্বেও, কোন ধনী খ্রীষ্টানের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য তাকে চাপ দেওয়া ভুল নয়। (গীতসংহিতা ৩৭:২১) কিন্তু, বস্তুগত বিষয় অর্জন করা নয় বরং ঈশ্বরের প্রতি ভক্তির সঙ্গে “বর্ত্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনের প্রতিজ্ঞাযুক্ত” রয়েছে। (১ তীমথিয় ৪:৮) যেহেতু “আমরা জগতে কিছুই সঙ্গে আনি নাই, কিছুই সঙ্গে করিয়া লইয়া যাইতেও পারি না,” তাই আসুন আমরা “সন্তুষ্ট মন নিয়ে” আরও বেশি করে “ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি” গড়ে তোলার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই এবং ‘গ্রাসাচ্ছাদন পাইলে তাহাতেই সন্তুষ্ট’ থাকি।—১ তীমথিয় ৬:৬-১১, NW.

১৫. আমোদপ্রমোদের ভিড়ে যদি ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি চাপা পড়ার হুমকি থাকে, তা হলে আমরা কী করতে পারি?

১৫ আমোদপ্রমোদের ভিড়ে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি চাপা পড়ে যেতে পারে। এই বিষয়ে কি আমাদের এখনই রদবদল করার প্রয়োজন রয়েছে? এটা ঠিক যে, শারীরিক প্রশিক্ষণ এবং বিনোদন থেকে কিছু উপকার পাওয়া যায়। কিন্তু, অনন্ত জীবনের সঙ্গে তুলনা করলে এইধরনের পুরস্কারগুলো খুবই ক্ষুদ্র। (১ যোহন ২:২৫) আজকে অনেকে “ঈশ্বরপ্রিয় নয়, বরং বিলাসপ্রিয় . . . লোকে ভক্তির অবয়বধারী, কিন্তু তাহার শক্তি অস্বীকারকারী” এবং এইধরনের লোকেদের কাছ থেকে আমাদের সরে পড়া দরকার। (২ তীমথিয় ৩:৪, ৫) যারা ঈশ্বরের প্রতি ভক্তির ওপর জোর দেন, ‘তাহারা আপনাদের নিমিত্ত ভাবীকালের জন্য উত্তম ভিত্তিমূলস্বরূপ নিধি প্রস্তুত করে, যেন, যাহা প্রকৃতরূপে জীবন, তাহাই ধরিয়া রাখিতে পারে।’—১ তীমথিয় ৬:১৯.

১৬. কোন্‌ পাপপূর্ণ আকাঙ্ক্ষাগুলো ঈশ্বরের ধার্মিক চাহিদা অনুযায়ী জীবনযাপন করতে বাধা দেয় এবং আকাঙ্ক্ষাগুলোকে আমরা কীভাবে জয় করতে পারি?

১৬ মদ ও নেশাকর ওষুধের অপব্যবহার, অনৈতিকতা ও পাপপূর্ণ আকাঙ্ক্ষা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ভক্তিকে নষ্ট করে দিতে পারে। এগুলোর প্রতি ঝুঁকে পড়া আমাদেরকে ঈশ্বরের ধার্মিক চাহিদা অনুযায়ী জীবনযাপন করতে বাধা দেয়। (১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০; ২ করিন্থীয় ৭:১) এমনকি পৌলকেও পাপপূর্ণ মাংসের সঙ্গে সবসময় লড়াই করতে হয়েছিল। (রোমীয় ৭:২১-২৫) মন্দ আকাঙ্ক্ষাগুলো দূর করার জন্য অনেক কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজন। একটা বিষয় হল, নৈতিক দিক দিয়ে শুদ্ধ থাকার জন্য আমাদের সংকল্পবদ্ধ হতে হবে। পৌল আমাদের বলেন: “তোমরা পৃথিবীস্থ আপন আপন অঙ্গ সকল মৃত্যুসাৎ কর, যথা, বেশ্যাগমন, অশুচিতা, মোহ, কুঅভিলাষ, এবং লোভ, এ ত প্রতিমাপূজা।” (কলসীয় ৩:৫) এইধরনের পাপপূর্ণ বিষয়গুলোর ব্যাপারে আমাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে মৃত্যুসাৎ করার জন্য দৃঢ়সংকল্পের প্রয়োজন, যাতে সেগুলো একেবারে দূর করা যায়। ঈশ্বরের সাহায্যের জন্য অন্তর থেকে প্রার্থনা করা আমাদেরকে মন্দ আকাঙ্ক্ষাগুলো পরিত্যাগ করতে এবং এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার মধ্যে ধার্মিকতা ও ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি অনুধাবন করতে সাহায্য করবে।

১৭. শাসনকে আমাদের কোন্‌ দৃষ্টিতে দেখা উচিত?

১৭ নিরুৎসাহ আমাদের ধৈর্যকে দুর্বল করে দিতে পারে এবং ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ভক্তির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। যিহোবার অনেক দাস নিরুৎসাহিত হয়েছিলেন। (গণনাপুস্তক ১১:১১-১৫; ইষ্রা ৪:৪; যোনা ৪:৩) বিশেষ করে আমরা যদি অপমানিত বোধ করি বা আমাদেরকে তীব্র তিরস্কার অথবা শাসন করা হয়েছে বলে আমরা যদি বিরক্ত হয়ে নিরুৎসাহিত হই, তা হলে তা আমাদের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু, তিরস্কার এবং শাসন প্রমাণ দেয় যে, আমাদের প্রতি ঈশ্বরের আগ্রহ আছে এবং তিনি প্রেমের সঙ্গে আমাদের জন্য চিন্তা করেন। (ইব্রীয় ১২:৫-৭, ১০, ১১) শাসনকে শুধু শাস্তি হিসেবে নয় বরং এমন এক উপায় হিসেবে দেখা উচিত, যা ধার্মিকতার পথে আমাদের প্রশিক্ষণ দেয়। আমরা যদি নম্র হই, তা হলে আমরা উপদেশকে উচ্চমূল্য দেব এবং তা মেনে নেব এটা উপলব্ধি করে যে, “শিক্ষাজনক অনুযোগ জীবনের পথ।” (হিতোপদেশ ৬:২৩) এটা আমাদেরকে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি অনুধাবন করার জন্য উত্তম আধ্যাত্মিক উন্নতি করতে সাহায্য করবে।

১৮. ব্যক্তিগত ভুলত্রুটির বিষয়ে আমাদের কোন্‌ দায়িত্ব রয়েছে?

১৮ ভুল বোঝাবুঝি এবং ব্যক্তিগত ভুলত্রুটি ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ভক্তিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি করতে পারে। এগুলো হয়তো উদ্বিগ্ন করতে পারে বা কাউকে কাউকে হয়তো আত্মিক ভাইবোনদের কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখার মতো অবিবেচক পদক্ষেপ নিতে পরিচালিত করতে পারে। (হিতোপদেশ ১৮:১) কিন্তু আমাদের মনে রাখা উচিত যে, সবসময় অন্যদের প্রতি বিরক্তি পুষে রাখা অথবা বিরোধী মনোভাব রাখা যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। (লেবীয় পুস্তক ১৯:১৮) আসলে, “যাহাকে দেখিয়াছে, আপনার সেই ভ্রাতাকে যে প্রেম না করে, সে যাঁহাকে দেখে নাই, সেই ঈশ্বরকে প্রেম করিতে পারে না।” (১ যোহন ৪:২০) পর্বতে দত্ত উপদেশে, যীশু ব্যক্তিগত সমস্যাগুলোকে মিটিয়ে ফেলার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর জোর দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর শ্রোতাদের বলেছিলেন: “অতএব তুমি যখন যজ্ঞবেদির নিকটে আপন নৈবেদ্য উৎসর্গ করিতেছ, তখন সেই স্থানে যদি মনে পড়ে যে, তোমার বিরুদ্ধে তোমার ভ্রাতার কোন কথা আছে, তবে সেই স্থানে বেদির সম্মুখে তোমার নৈবেদ্য রাখ, আর চলিয়া যাও, প্রথমে তোমার ভ্রাতার সহিত সম্মিলিত হও, পরে আসিয়া তোমার নৈবেদ্য উৎসর্গ করিও।” (মথি ৫:২৩, ২৪) ভুল স্বীকার করা হয়তো ক্ষত সারাতে সাহায্য করে, যা নিষ্ঠুর কথাবার্তা বা কাজের জন্য হয়েছিল। ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগানো যেতে পারে এবং শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক আবারও গড়ে তোলা যায়, যদি আমরা ক্ষমা চাই এবং স্বীকার করি যে, বিষয়টা আমরা ঠিকমতো মীমাংসা করিনি। সমস্যা মিটমাট করার বিষয়ে যীশু আরও পরামর্শ দিয়েছিলেন। (মথি ১৮:১৫-১৭) আমাদের সমস্যা সমাধান করার প্রচেষ্টা যখন সফল হয়, তখন আমরা কত সুখীই না হই!—রোমীয় ১২:১৮; ইফিষীয় ৪:২৬, ২৭.

যীশুর উদাহরণ অনুসরণ করুন

১৯. যীশুর উদাহরণ অনুসরণ করা কেন জরুরি?

১৯ আমাদের সামনে পরীক্ষা আসবেই কিন্তু সেগুলো যে আমাদের অনন্ত জীবনের পথ থেকে দূরে সরিয়ে দেবে, তা নয়। মনে রাখবেন যে, পরীক্ষা থেকে যিহোবা আমাদের রক্ষা করতে পারেন। “সমস্ত বোঝা . . . ফেলিয়া দিয়া” ও ‘ধৈর্য্যপূর্ব্বক আমাদের সম্মুখস্থ ধাবনক্ষেত্রে দৌড়াইবার’ সময় আসুন আমরা “বিশ্বাসের আদিকর্ত্তা ও সিদ্ধিকর্ত্তা যীশুর প্রতি দৃষ্টি রাখি।” (ইব্রীয় ১২:১-৩) যীশুর উদাহরণ নিখুঁতভাবে পরীক্ষা করা এবং তাঁর কথা ও কাজ অনুসরণ করার চেষ্টা করা আমাদেরকে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি গড়ে তুলতে এবং সমস্ত ক্ষেত্রে তা দেখাতে সাহায্য করবে।

২০. ধৈর্য এবং ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি অনুধাবন করার ফলে কোন্‌ পুরস্কারগুলো আসে?

২০ আমাদের পরিত্রাণ নিশ্চিত করার জন্য ধৈর্য এবং ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি একসঙ্গে কাজ করে। এই মূল্যবান গুণগুলো দেখিয়ে আমরা বিশ্বস্ততার সঙ্গে ঈশ্বরের প্রতি আমাদের পবিত্র সেবা করে যেতে পারব। এমনকি পরীক্ষার মধ্যেও ঈশ্বরের কোমল যত্ন এবং আশীর্বাদ পেয়ে আমরা সুখী থাকব কারণ আমরা ধৈর্য বজায় রেখেছি এবং ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি অভ্যাস করে চলছি। (যাকোব ৫:১১) এ ছাড়া, যীশু নিজে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন: “তোমরা নিজ নিজ ধৈর্য্যে আপন আপন প্রাণ লাভ করিবে।”—লূক ২১:১৯.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• ধৈর্য কেন জরুরি?

• ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি কী এবং এটা কীভাবে প্রকাশ পায়?

• কীভাবে আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে এক কাছের সম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং তা বজায় রাখতে পারি?

• ঈশ্বরের প্রতি ভক্তির ক্ষেত্রে হুমকিস্বরূপ, এমন কয়েকটা বিষয় কী আর কীভাবে আমরা সেগুলো এড়াতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১২ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

বিভিন্ন উপায়ে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি দেখানো যায়

[১৪ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

ঈশ্বরের প্রতি আপনার ভক্তির ক্ষেত্রে হুমকিস্বরূপ, এমন বিষয়গুলো থেকে সাবধান হোন