সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

খ্রীষ্টানরা আত্মায় ও সত্যে উপাসনা করেন

খ্রীষ্টানরা আত্মায় ও সত্যে উপাসনা করেন

খ্রীষ্টানরা আত্মায় ও সত্যে উপাসনা করেন

“ঈশ্বর আত্মা; আর যাহারা তাঁহার ভজনা করে, তাহাদিগকে আত্মায় ও সত্যে ভজনা করিতে হইবে।”যোহন ৪:২৪.

১. কোন্‌ ধরনের উপাসনা ঈশ্বরকে খুশি করে?

 যিহোবার একজাত পুত্র যীশু খ্রীষ্ট, এই বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশই রাখেননি যে, কোন্‌ উপাসনা তাঁর স্বর্গীয় পিতাকে খুশি করে। শুখর নগরের কাছে একটা কুয়োর ধারে একজন শমরীয় স্ত্রীলোকের কাছে হৃদয়গ্রাহী সাক্ষ্য দেওয়ার সময় যীশু বলেছিলেন: “তোমরা যাহা জান না, তাহার ভজনা করিতেছ; আমরা যাহা জানি, তাহার ভজনা করিতেছি, কারণ যিহূদীদের মধ্য হইতেই পরিত্রাণ। কিন্তু এমন সময় আসিতেছে, বরং এখনই উপস্থিত, যখন প্রকৃত ভজনাকারীরা আত্মায় ও সত্যে পিতার ভজনা করিবে; কারণ বাস্তবিক পিতা এইরূপ ভজনাকারীদেরই অন্বেষণ করেন। ঈশ্বর আত্মা; আর যাহারা তাঁহার ভজনা করে, তাহাদিগকে আত্মায় ও সত্যে ভজনা করিতে হইবে।” (যোহন ৪:২২-২৪) এই কথাগুলো থেকে আমরা কী বুঝতে পারি?

২. কীসের ওপর ভিত্তি করে শমরীয়রা উপাসনা করত?

শমরীয়দের বিভিন্ন মিথ্যা ধর্মীয় মতবাদ ছিল। তারা শুধু পবিত্র শাস্ত্রের প্রথম পাঁচটা বই ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বলে মেনে নিয়েছিল আর এগুলো একমাত্র তাদের অনুবাদ অনুযায়ী ছিল, যা শমরীয় পেন্টাটিউক নামে পরিচিত। যদিও শমরীয়রা ঈশ্বরকে জানত না কিন্তু যিহুদিদের কাছে শাস্ত্রীয় জ্ঞান গচ্ছিত ছিল। (রোমীয় ৩:১, ২) তাই, বিশ্বস্ত যিহুদি এবং অন্যেরা যিহোবার অনুগ্রহ পেতে পারত। কিন্তু, এর জন্য তাদের কীসের প্রয়োজন ছিল?

৩. ঈশ্বরকে “আত্মায় ও সত্যে” উপাসনা করার জন্য কীসের প্রয়োজন?

যিহোবাকে খুশি করার জন্য যিহুদি, শমরীয় এবং অতীতের অন্যান্য লোকেদের কী করতে হতো? তাদের “আত্মায় ও সত্যে” তাঁকে উপাসনা করতে হতো। আমাদেরও তা-ই করতে হবে। যদিও ঈশ্বরকে আত্মায় বা উদ্যোগের সঙ্গে এবং বিশ্বাস ও প্রেমপূর্ণ হৃদয়ে সেবা করতে হবে কিন্তু ঈশ্বরকে আত্মায় উপাসনা করার জন্য তাঁর পবিত্র আত্মাকে আমাদের ওপর থাকতে দিতে হবে এবং এর দ্বারা আমাদের পরিচালিত হতে হবে। ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করে এবং সেগুলো কাজে লাগিয়ে আমাদের আত্মা বা মনোভাবকে তাঁর সঙ্গে মিল রাখতে হবে। (১ করিন্থীয় ২:৮-১২) এ ছাড়া, আমাদের উপাসনা যাতে যিহোবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, তাই তাঁকে সত্যে উপাসনা করতে হবে। আর এটা ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলের সঙ্গে মিল রেখে করতে হবে, যা তাঁর সম্বন্ধে ও তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে প্রকাশ করে।

সত্য পাওয়া যেতে পারে

৪. কেউ কেউ সত্যকে কীভাবে দেখে?

দর্শনবিদ্যার কিছু ছাত্র মনে করে যে, প্রকৃত সত্য মানুষের নাগালের বাইরে। আসলে সুইডিশ গ্রন্থাকার আল্ফ আলবার্গ লেখেন: “দর্শনবিদ্যায় এমন অনেক প্রশ্ন রয়েছে যে, সেগুলোর নির্দিষ্ট উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়।” যদিও কেউ কেউ বলে যে, শুধু আপেক্ষিক সত্য রয়েছে কিন্তু আসলেই কি তাই? যীশু খ্রীষ্টের মতানুযায়ী তা ঠিক নয়।

৫. যীশু কেন পৃথিবীতে এসেছিলেন?

আসুন আমরা নিজেদের এই দৃশ্যের দর্শক হিসেবে কল্পনা করি: এটা হল সা.কা. ৩৩ সালের প্রথমদিকের ঘটনা এবং রোমীয় রাজ্যপাল পন্তীয় পীলাতের সামনে যীশু দাঁড়িয়ে আছেন। পীলাতকে যীশু বলেন: “আমি . . . এই জন্য জগতে আসিয়াছি, যেন সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিই।” পীলাত জিজ্ঞেস করেন: “সত্য কি?” কিন্তু, যীশুর পরবর্তী মন্তব্য শোনার জন্য তিনি আর অপেক্ষা করেন না।—যোহন ১৮:৩৬-৩৮.

৬. (ক) “সত্য”-কে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে? (খ) যীশু তাঁর অনুসারীদের কোন্‌ আদেশ দিয়েছিলেন?

“সত্য”-কে “প্রকৃত বিষয়, ঘটনা ও বাস্তব তথ্যের সমষ্টি” হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। (ওয়েবস্টারস নাইন্থ নিউ কলিজিয়েট ডিকশনারি) কিন্তু, যীশু কি সাধারণ সত্যের বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন? না। তিনি নির্দিষ্ট সত্যের বিষয়ে বলেছিলেন। তিনি তাঁর অনুসারীদের এই সত্যের বিষয়ে ঘোষণা করার আদেশ দিয়েছিলেন কারণ তিনি তাদের বলেছিলেন: “সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর; আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও।” (মথি ২৮:১৯, ২০) যুগান্তের আগে যীশুর প্রকৃত অনুসারীরা “সুসমাচারের সত্য” সারা পৃথিবীতে ঘোষণা করবেন। (মথি ২৪:৩; গালাতীয় ২:১৪) এটা যীশুর এই কথার পরিপূর্ণতাস্বরূপ করা হবে: “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।” (মথি ২৪:১৪) তাই, যারা রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার মাধ্যমে সমস্ত জাতিকে সত্য শেখাচ্ছেন, তাদের শনাক্ত করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা যেভাবে সত্য শিখতে পারি

৭. আপনি কীভাবে প্রমাণ করবেন যে, যিহোবাই হলেন সত্যের উৎস?

যিহোবা হলেন আধ্যাত্মিক সত্যের উৎস। বস্তুতপক্ষে, গীতরচক দায়ূদ যিহোবাকে “সত্যের ঈশ্বর” বলেছিলেন। (গীতসংহিতা ৩১:৫; ৪৩:৩) যীশু স্বীকার করেছিলেন যে, তাঁর পিতার বাক্য সত্যস্বরূপ আর তিনি এও ঘোষণা করেছিলেন: “ভাববাদিগণের গ্রন্থে লেখা আছে, ‘তাহারা সকলে ঈশ্বরের কাছে শিক্ষা পাইবে।’ যে কেহ পিতার নিকটে শুনিয়া শিক্ষা পাইয়াছে, সেই আমার কাছে আইসে।” (যোহন ৬:৪৫; ১৭:১৭; যিশাইয় ৫৪:১৩) তা হলে এটা পরিষ্কার যে, যারা সত্য খুঁজছেন, তাদের অবশ্যই সর্বমহান শিক্ষক যিহোবার কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হবে। (যিশাইয় ৩০:২০, ২১) যারা সত্য খোঁজেন তাদের “ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান” অর্জন করতে হবে। (হিতোপদেশ ২:৫) আর যিহোবা প্রেমের সঙ্গে বিভিন্ন উপায়ে সত্য শিখিয়েছেন বা জানিয়েছেন।

৮. কোন্‌ কোন্‌ উপায়ে ঈশ্বর সত্য শিখিয়েছেন বা জানিয়েছেন?

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দূতেদের মাধ্যমে ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতিকে ব্যবস্থা দিয়েছিলেন। (গালাতীয় ৩:১৯) কুলপতি অব্রাহাম ও যাকোবকে আশীর্বাদ করবেন বলে তিনি স্বপ্নের মাধ্যমে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। (আদিপুস্তক ১৫:১২-১৬; ২৮:১০-১৯) এমনকি ঈশ্বর স্বর্গ থেকে কথা বলেছিলেন যেমন, যীশুর বাপ্তিস্মের সময় পৃথিবীতে এই রোমাঞ্চকর কথাগুলো শোনা গিয়েছিল: “ইনিই আমার প্রিয় পুত্ত্র, ইঁহাতেই আমি প্রীত।” (মথি ৩:১৭) এ ছাড়া, আমরা কৃতজ্ঞ হতে পারি যে, ঈশ্বর বাইবেল লেখকদের অনুপ্রাণিত করে আমাদের সত্য জানিয়েছেন। (২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭) তা হলে, ঈশ্বরের বাক্য থেকে শিখে আমরা ‘সত্যে বিশ্বাস’ করতে পারি।—২ থিষলনীকীয় ২:১৩.

সত্য এবং ঈশ্বরের পুত্র

৯. সত্য প্রকাশ করার জন্য ঈশ্বর কীভাবে তাঁর পুত্রকে ব্যবহার করেছেন?

মানবজাতির কাছে সত্য প্রকাশ করার জন্য ঈশ্বর বিশেষ করে তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্টকে ব্যবহার করেছেন। (ইব্রীয় ১:১-৩) আসলে, যীশু সত্য সম্বন্ধে এমনভাবে কথা বলেছিলেন, যেভাবে আগে কেউ কখনও বলেননি। (যোহন ৭:৪৬) এমনকি স্বর্গে যাওয়ার পরও তিনি তাঁর পিতার কাছ থেকে সত্য প্রকাশ করেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রেরিত যোহন “যীশু খ্রীষ্টের প্রকাশিত বাক্য, ঈশ্বর যাহা তাঁহাকে দান করিলেন, যেন তিনি, যাহা যাহা শীঘ্র ঘটিবে, সেই সকল আপন দাসগণকে দেখাইয়া দেন,” তা পেয়েছিলেন।—প্রকাশিত বাক্য ১:১-৩.

১০, ১১. (ক) যীশু যে-সত্য সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, তা কীসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত? (খ) যীশু কীভাবে সত্যকে বাস্তব রূপ দিয়েছিলেন?

১০ পন্তীয় পীলাতকে যীশু বলেছিলেন যে, সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য তিনি পৃথিবীতে এসেছেন। তাঁর পরিচর্যার সময়ে যীশু প্রকাশ করেছিলেন যে, এই সত্য ঈশ্বরের রাজ্যের মাধ্যমে যিহোবার সার্বভৌমত্ব প্রতিপাদন করার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আর এই রাজ্যের রাজা হলেন খ্রীষ্ট। কিন্তু, সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য যীশুকে শুধু প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার চেয়ে আরও বেশি কিছু করতে হয়েছিল। আর তা পরিপূর্ণ করে যীশু সেই সত্যকে বাস্তব করে তুলেছিলেন। তাই প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “ভোজন কি পান, কি উৎসব, কি অমাবস্যা, কি বিশ্রামবার, এই সকলের সম্বন্ধে কেহ তোমাদের বিচার না করুক; এ সকল ত আগামী বিষয়ের ছায়ামাত্র, কিন্তু দেহ খ্রীষ্টের [“বাস্তব হল খ্রীষ্ট,” NW]।”—কলসীয় ২:১৬, ১৭.

১১ একটা উপায়ে সত্য যে-বাস্তব রূপ নিয়েছিল, তা হল ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে বৈৎলেহমে যীশুর জন্মগ্রহণ। (মীখা ৫:২; লূক ২:৪-১১) এ ছাড়া, ৬৯ ‘সপ্তাহের বছরের’ শেষে মশীহের আবির্ভাবের বিষয়ে দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণতার মাধ্যমেও সত্য বাস্তব হয়েছিল। আর এটা ঘটেছিল একেবারে সঠিক সময়ে সা.কা. ২৯ সালে, যখন বাপ্তিস্মের মাধ্যমে যীশু নিজেকে ঈশ্বরের কাছে তুলে ধরেছিলেন এবং পবিত্র আত্মার মাধ্যমে অভিষিক্ত হয়েছিলেন। (দানিয়েল ৯:২৫; লূক ৩:১, ২১, ২২) রাজ্য ঘোষণাকারী হিসেবে রাজ্যের পক্ষে যীশুর জ্ঞানালোকিত পরিচর্যার মাধ্যমে সত্য আরও বাস্তব হয়ে উঠেছিল। (যিশাইয় ৯:১, ২, ৬, ৭; ৬১:১, ২; মথি ৪:১৩-১৭; লূক ৪:১৮-২১) এ ছাড়া, তাঁর মৃত্যু এবং পুনরুত্থানের মাধ্যমেও তা বাস্তবে পরিণত হয়।—গীতসংহিতা ১৬:৮-১১; যিশাইয় ৫৩:৫, ৮, ১১, ১২; মথি ২০:২৮; যোহন ১:২৯; প্রেরিত ২:২৫-৩১.

১২. যীশু কেন বলতে পেরেছিলেন, ‘আমিই সত্য’?

১২ যেহেতু সত্য যীশু খ্রীষ্টকে কেন্দ্র করে ছিল, তাই তিনি বলতে পেরেছিলেন: “আমিই পথ ও সত্য ও জীবন; আমা দিয়া না আসিলে কেহ পিতার নিকটে আইসে না।” (যোহন ১৪:৬) লোকেরা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে “স্বাধীন” হয় যখন তারা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে যীশুর যে-ভূমিকা রয়েছে, তা মেনে নিয়ে “সত্যের” পক্ষে থাকে। (যোহন ৮:৩২-৩৬; ১৮:৩৭) মেষতুল্য ব্যক্তিরা যেহেতু সত্য মেনে নেয় এবং বিশ্বাসের সঙ্গে খ্রীষ্টকে অনুসরণ করে, তাই তারা অনন্ত জীবন পাবে।—যোহন ১০:২৪-২৮.

১৩. কোন্‌ তিনটে ক্ষেত্রে আমরা শাস্ত্রীয় সত্য নিয়ে পরীক্ষা করব?

১৩ যীশু ও তাঁর অনুপ্রাণিত শিষ্যরা যে-সত্যগুলো প্রকাশ করেছিলেন, তা প্রকৃত খ্রীষ্টীয় বিশ্বাস গঠন করেছিল। যারা “বিশ্বাসের বশবর্ত্তী” তারা “সত্যে চলে।” (প্রেরিত ৬:৭; ৩ যোহন ৩, ৪) তা হলে, কারা আজকে সত্যে চলেন? প্রকৃতপক্ষে, কারা সমস্ত জাতিকে সত্য শেখাচ্ছেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরে আমরা প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের দিকে মনোযোগ দেব এবং সেই শাস্ত্রীয় সত্য পরীক্ষা করব যা, (১) বিশ্বাস, (২) উপাসনার পদ্ধতি এবং (৩) ব্যক্তিগত আচরণের সঙ্গে জড়িত।

সত্য এবং বিশ্বাস

১৪, ১৫. শাস্ত্রের প্রতি প্রাথমিক খ্রীষ্টান এবং যিহোবার সাক্ষিদের মনোভাব সম্বন্ধে আপনি কী বলবেন?

১৪ প্রাথমিক খ্রীষ্টানরা যিহোবার লিখিত বাক্যকে অনেক সম্মান করতেন। (যোহন ১৭:১৭) বিশ্বাস ও কাজ সম্বন্ধে এটাই ছিল তাদের মান। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতাব্দীর আলেকজান্দ্রিয়ার ক্লেমেন্ট বলেছিলেন: “যারা উত্তম গুণ অর্জন করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেন তারা সেই পর্যন্ত সত্য খুঁজে চলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না শাস্ত্র থেকে তাদের বিশ্বাসের প্রমাণ পান।”

১৫ প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের মতো, যিহোবার সাক্ষিরাও বাইবেলকে অনেক সম্মান করেন। তারা বিশ্বাস করেন যে, “ঈশ্বর-নিশ্বসিত প্রত্যেক শাস্ত্রলিপি আবার শিক্ষার . . . নিমিত্ত উপকারী।” (২ তীমথিয় ৩:১৬) আসুন আমরা প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের কিছু বিশ্বাস বিবেচনা করে সেগুলোকে যিহোবার বর্তমান দিনের দাসেরা যা শিখেছেন, তার সঙ্গে তুলনা করি কারণ তারা বাইবেলকে তাদের প্রধান পাঠ্যবই হিসেবে ব্যবহার করেন।

মৃত্যু সম্বন্ধে সত্য

১৬. মৃত্যু সম্বন্ধে সত্যটা কী?

১৬ প্রাথমিক খ্রীষ্টানরা যেহেতু শাস্ত্রে বলা কথা বিশ্বাস করতেন, তাই তারা মৃত্যু সম্বন্ধে সত্য বিষয়টা শিখিয়েছিলেন। তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে, মানুষ যখন মারা যায়, তখন তাদের শরীর থেকে কোন কিছু বেরিয়ে যায় না এবং সেটা বেঁচে থাকে না। এ ছাড়া, তারা জানতেন যে, “মৃতেরা কিছুই জানে না।”—উপদেশক ৯:৫, ১০.

১৭. মৃতদের আশা সম্বন্ধে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

১৭ কিন্তু, যীশুর প্রাথমিক শিষ্যদের নিশ্চিত আশা ছিল যে, যে-মৃত ব্যক্তিরা ঈশ্বরের স্মরণে রয়েছেন, তারা পুনরুত্থিত হবেন বা তাদের জীবনে ফিরিয়ে আনা হবে। এই বিশ্বাস সম্বন্ধে পৌল স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছিলেন, যিনি বলেছিলেন: “আমি ঈশ্বরে এই প্রত্যাশা করিতেছি যে, ধার্ম্মিক অধার্ম্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান হইবে।” (প্রেরিত ২৪:১৫) এমনকি পরে মিনুকিয়াস ফিলিক্স, যিনি নিজেকে খ্রীষ্টান বলে দাবি করতেন, তিনি লিখেছিলেন: “কে এতটা বোকা বা মূর্খ হতে পারে যে, ঈশ্বর যে মানুষকে বানিয়েছিলেন তাকে তিনি আবারও বানাতে পারবেন না এমনটা দাবি করার মতো সাহস দেখান?” প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের মতো যিহোবার সাক্ষিরা মৃত্যু এবং পুনরুত্থান সম্বন্ধে শাস্ত্রীয় সত্য দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন। আসুন, এখন আমরা ঈশ্বর ও খ্রীষ্টের পরিচিতি সম্বন্ধে বিবেচনা করি।

সত্য এবং ত্রিত্ব

১৮, ১৯. কেন বলা যেতে পারে যে, ত্রিত্ব শাস্ত্রীয় শিক্ষা নয়?

১৮ প্রাথমিক খ্রীষ্টানরা ঈশ্বর, খ্রীষ্ট ও পবিত্র আত্মাকে ত্রিত্ব বলে মনে করতেন না। দি এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা বলে: “ত্রিত্ব শব্দ বা এইরকম মতবাদ সম্বন্ধে নতুন নিয়মে কিছুই পাওয়া যায় না আর যীশু ও তাঁর অনুসারীদের পুরাতন নিয়মের শেমা [একটা ইব্রীয় প্রার্থনা], ‘হে ইস্রায়েল শুন; আমাদের ঈশ্বর প্রভু একই প্রভু’ সেটা অস্বীকার করার কোন ইচ্ছাই ছিল না (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪)।” খ্রীষ্টানরা রোমীয়দের ত্রিত্ব বা অন্য দেবতাদের উপাসনা করতেন না। তারা যীশুর এই কথা মেনে নিয়েছিলেন যে, একমাত্র যিহোবাকেই উপাসনা করতে হবে। (মথি ৪:১০) এ ছাড়া, তারা খ্রীষ্টের কথাগুলোতে বিশ্বাস করেছিলেন: “পিতা আমা অপেক্ষা মহান্‌।” (যোহন ১৪:২৮) আজকে যিহোবার সাক্ষিরাও একই দৃষ্টিভঙ্গি রাখেন।

১৯ যীশুর প্রাথমিক অনুসারীরা ঈশ্বর, খ্রীষ্ট এবং পবিত্র আত্মার মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য তুলে ধরেছিলেন। বস্তুতপক্ষে তারা শিষ্যদের (১) পিতার নামে, (২) পুত্রের নামে এবং (৩) পবিত্র আত্মার নামে বাপ্তিস্ম দিয়েছিলেন, ত্রিত্বের নামে নয়। একইভাবে, যিহোবার সাক্ষিরাও শাস্ত্রীয় সত্য শেখান এবং ঈশ্বর, তাঁর পুত্র ও পবিত্র আত্মার মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরেন।—মথি ২৮:১৯.

সত্য এবং বাপ্তিস্ম

২০. বাপ্তিস্ম প্রার্থীদের জন্য কোন্‌ জ্ঞানের দরকার ছিল?

২০ যীশু তাঁর অনুসারীদের আদেশ দিয়েছিলেন, তারা যেন লোকেদের সত্য শিখিয়ে শিষ্য করেন। বাপ্তিস্মের জন্য যোগ্য হতে হলে তাদের শাস্ত্রের মৌলিক জ্ঞান নিতে হতো। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তাদের পিতার অবস্থান ও ক্ষমতা এবং তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্টকে স্বীকার করতে হতো। (যোহন ৩:১৬) বাপ্তিস্ম প্রার্থীকে এও বুঝতে হতো যে, পবিত্র আত্মা কোন ব্যক্তি নয় কিন্তু ঈশ্বরের কার্যকারী শক্তি।—আদিপুস্তক ১:২, পাদটীকা, NW.

২১, ২২. কেন আপনি বলবেন যে, বাপ্তিস্ম শুধু বিশ্বাসীদের জন্য?

২১ প্রাথমিক খ্রীষ্টানরা শুধু তাদেরকেই বাপ্তিস্ম দিয়েছিলেন, যারা শিক্ষা পেয়ে এবং অনুতপ্ত হয়ে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্য নিজেকে তাঁর কাছে পুরোপুরি উৎসর্গ করেছিলেন। সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে যে-যিহুদি এবং পরজাতীয়রা যিরূশালেমে সমবেত হয়েছিলেন, তাদের ইতিমধ্যেই ইব্রীয় শাস্ত্র সম্বন্ধে জ্ঞান ছিল। পিতরের মুখ থেকে মশীহ যীশুর কথা শোনার পর, প্রায় ৩,০০০ লোক “তাঁহার কথা গ্রাহ্য করিল” এবং “বাপ্তাইজিত হইল।”—প্রেরিত ২:৪১; ৩:১৯-৪:৪; ১০:৩৪-৩৮.

২২ খ্রীষ্টীয় বাপ্তিস্ম বিশ্বাসীদের জন্য। শমরীয়ের লোকেরা সত্য গ্রহণ করেছিলেন এবং “ফিলিপ ঈশ্বরের রাজ্য ও যীশু বিষয়ক সুসমাচার প্রচার করিলে তাহারা যখন তাঁহার কথায় বিশ্বাস করিল, তখন পুরুষ ও স্ত্রীলোকেরাও বাপ্তাইজিত হইতে লাগিল।” (প্রেরিত ৮:১২) যেমন একজন ধার্মিক পরজাতি ইথিওপীয় নপুংসক, যার যিহোবা সম্বন্ধে জ্ঞান ছিল, তিনি প্রথমে মশীহের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ভবিষ্যদ্বাণী সম্বন্ধে ফিলিপের বিবরণ গ্রহণ করেন এবং এরপর বাপ্তিস্ম নেন। (প্রেরিত ৮:৩৪-৩৬) পরে কর্ণীলিয় এবং অন্যান্য পরজাতীয়দের পিতর বলেছিলেন, “যে কেহ [ঈশ্বরকে] ভয় করে ও ধর্ম্মাচরণ করে, সে তাঁহার গ্রাহ্য হয়” এবং যারা যীশুর ওপর বিশ্বাস রাখে তারা পাপের ক্ষমা পায়। (প্রেরিত ১০:৩৫, ৪৩; ১১:১৮) এই সমস্ত কিছু যীশুর এই আদেশের সঙ্গে মিল রাখে যে, ‘শিষ্য কর, এবং তিনি যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছিলেন, সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও।’ (মথি ২৮:১৯, ২০; প্রেরিত ১:৮) যিহোবার সাক্ষিরাও একই মান মেনে চলেন এবং শুধু তাদের বাপ্তিস্ম নিতে দেন, যাদের শাস্ত্র সম্বন্ধে মৌলিক জ্ঞান আছে এবং যারা যিহোবার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।

২৩, ২৪. খ্রীষ্টীয় বাপ্তিস্মের সঠিক পদ্ধতি কী?

২৩ বিশ্বাসীদের জন্য জলে পুরোপুরি নিমজ্জিত হওয়া হল, বাপ্তিস্মের সঠিক পদ্ধতি। যর্দন নদীতে বাপ্তিস্ম নেওয়ার পর যীশু ‘জলের মধ্য হইতে উঠিলেন।’ (মার্ক ১:১০) ইথিওপীয় নপুংসক ‘জলাশয়ে’ বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। তিনি এবং ফিলিপ “জলমধ্যে নামিলেন” এবং এরপর “জলের মধ্য হইতে উঠিলেন।” (প্রেরিত ৮:৩৬-৪০) শাস্ত্রে বাপ্তিস্মের সঙ্গে রূপক সমাধির যে-যোগসূত্র দেখানো হয়েছে, তা-ও জলে পুরোপুরি নিমজ্জিত হওয়াকে ইঙ্গিত করে।—রোমীয় ৬:৪-৬; কলসীয় ২:১২.

২৪ দি অক্সফোর্ড কমপ্যানিয়ন টু দ্যা বাইবেল বলে: “নতুন নিয়মের নির্দিষ্ট বাপ্তিস্মের বর্ণনা দেখায় যে, একজন ব্যক্তি বাপ্তিস্ম নেওয়ার সময় জলে ডুব দিয়েছিলেন। বিখ্যাত ফ্রেঞ্চ বই বিংশ শতাব্দীর লারোস (প্যারিস, ১৯২৮) অনুসারে, “প্রথমদিকের খ্রীষ্টানরা যেখানে জল ছিল সেখানে পুরোপুরি নিমজ্জিত হয়ে বাপ্তিস্ম নিতেন।” আর যীশুর পরে—খ্রীষ্টধর্মের বিজয় (ইংরেজি) বই বলে: “এর [বাপ্তিস্মের] সবচাইতে মূল পদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত হল, প্রার্থীরা তাদের বিশ্বাসকে প্রকাশ করবে এবং এরপর যীশুর নামে পুরোপুরি জলের মধ্যে নিমজ্জিত হবে।”

২৫. পরের প্রবন্ধে কোন্‌ বিষয়ে আলোচনা করা হবে?

২৫ প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের বাইবেল-ভিত্তিক বিশ্বাস এবং কাজের বিষয়ে ওপরের আলোচনা হল উদাহরণ মাত্র। তাদের এবং যিহোবার সাক্ষিদের বিশ্বাসের সঙ্গে আরও মিল তুলে ধরা সম্ভব। লোকেদের যারা সত্য শেখাচ্ছেন তাদের শনাক্ত করার অন্যান্য উপায় সম্বন্ধে আমরা পরের প্রবন্ধে আলোচনা করব।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• ঈশ্বর কোন্‌ ধরনের উপাসনা চান?

• যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে সত্য কীভাবে বাস্তব হয়ে উঠেছে?

• মৃত্যু সম্বন্ধে সত্য কী?

• কীভাবে খ্রীষ্টীয় বাপ্তিস্ম দেওয়া হয় এবং এর জন্য বাপ্তিস্ম প্রার্থীদের কী করতে হয়?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

পীলাতকে যীশু বলেছিলেন: ‘আমি এই জন্যই আসিয়াছি, যেন সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিই’

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন যে, কেন যীশু বলেছিলেন: ‘আমিই সত্য’?

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

খ্রীষ্টীয় বাপ্তিস্ম সম্বন্ধে সত্যটা কী?