সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

নরক আসলে কী?

নরক আসলে কী?

নরক আসলে কী?

 “নরক” শব্দটা শুনে আপনার মনে যে-ছবিই ভেসে উঠুক না কেন, নরককে সাধারণত পাপের শাস্তির এক জায়গা হিসেবে চিন্তা করা হয়। পাপ ও এর পরিণাম সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “এক মনুষ্য দ্বারা পাপ, পাপ দ্বারা মৃত্যু জগতে প্রবেশ করিল; আর এই প্রকারে মৃত্যু সমুদয় মনুষ্যের কাছে উপস্থিত হইল, কেননা সকলেই পাপ করিল।” (রোমীয় ৫:১২) শাস্ত্র আরও বলে: “পাপের বেতন মৃত্যু।” (রোমীয় ৬:২৩) যেহেতু পাপের শাস্তি হল মত্যু, তাই নরকের প্রকৃত অর্থ সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে মূল প্রশ্নটা হল: আমরা মারা গেলে আমাদের কী হয়?

মৃত্যুর পরে কি কোন ধরনের, কোন আকারে জীবন বেঁচে থাকে? নরক কী এবং কী ধরনের লোকেরা সেখানে যায়? নরকে যারা আছেন তাদের কি কোন আশা রয়েছে? বাইবেল এই প্রশ্নগুলোর সঠিক ও সন্তোষজনক উত্তর দেয়।

মৃত্যুর পরে কি জীবন রয়েছে?

আমাদের মধ্যে আত্মা বলে কি কিছু আছে, যা মৃত্যুর পরে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়? প্রথম মানুষ আদম কীভাবে জীবন পেয়েছিলেন, তা বিবেচনা করুন। বাইবেল জানায়: “সদাপ্রভু ঈশ্বর মৃত্তিকার ধূলিতে আদমকে [অর্থাৎ মনুষ্যকে] নির্ম্মাণ করিলেন, এবং তাহার নাসিকায় ফুঁ দিয়া প্রাণবায়ু প্রবেশ করাইলেন।” (আদিপুস্তক ২:৭) লক্ষ করুন যে, মানুষকে কোন আত্মা দেওয়া হয়নি; তাই সচেতন ব্যক্তি হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য মানুষের মধ্যে কোন আত্মা থাকার প্রয়োজন নেই। যদিও শ্বাসপ্রশ্বাস তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল কিন্তু তার নাসিকায় “প্রাণবায়ু” দেওয়ার সঙ্গে শুধু ফুসফুসে ফুঁ দিয়ে হাওয়া ভরার চেয়েও আরও অনেক কিছু জড়িত ছিল। এটার অর্থ ছিল যে, ঈশ্বর আদমের নির্জীব দেহে জীবনের স্ফুলিঙ্গ অর্থাৎ ‘প্রাণবায়ু (জীবনীশক্তি, NW)’ প্রবেশ করিয়েছিলেন, যা পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর মধ্যে সক্রিয় আছে। (আদিপুস্তক ৭:২২) সেই জীবনীশক্তিকে বৈদ্যুতিক প্রবাহের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, যা কোন মেশিন অথবা যন্ত্রপাতিকে চালু করে এবং সেগুলোকে কাজ করতে সাহায্য করে। ঠিক যেমন সেই প্রবাহ যে-যন্ত্রপাতিকে সচল করছে সেগুলোর কোন বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করে না তেমনই জীবনীশক্তিও যেসব সৃষ্ট বস্তুকে সজীব করে, সেগুলোর কোন বৈশিষ্ট্যকে গ্রহণ করে না। এর কোন ব্যক্তিত্ব ও চিন্তা করার ক্ষমতা নেই।

কিন্তু, গীতসংহিতা ১৪৬:৪ পদে উল্লেখিত “শ্বাস” আসলে কী এবং একজন ব্যক্তি যখন মারা যায়, তখন এর কী হয়? এই পদ বলে: “তাহার শ্বাস নির্গত হয়, সে নিজ মৃত্তিকায় প্রতিগমন করে; সেই দিনেই তাহার সঙ্কল্প সকল নষ্ট হয়।” বাইবেলের লেখকরা যখন “শ্বাস” শব্দটাকে এভাবে ব্যবহার করেছিলেন, তখন তাদের মনে কোন আত্মার ধারণা ছিল না, যেটা মৃত্যুর পরও জীবিত থাকে বরং তারা জীবনীশক্তিকেই বুঝিয়েছিলেন, যেটা আমাদের সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে এসেছে। একজন ব্যক্তি যখন মারা যায়, তখন তার “নিঃশ্বাস” (জীবনীশক্তি) এক মানব দেহকে জীবিত রাখা বন্ধ করে দেয়, সম্পূর্ণ ব্যক্তিই মারা যায়। (গীতসংহিতা ১০৪:২৯) তা হলে উপদেশক ১২:৭ পদের অর্থই বা কী, যেখানে বলা হয়েছে: “আত্মা যাঁহার দান, সেই ঈশ্বরের কাছে প্রতিগমন করিবে।” যে-ইব্রীয় শব্দকে এখানে “আত্মা” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, তা জীবনীশক্তিকে বোঝায়। মৃত্যুতে এটা ‘ঈশ্বরের কাছে প্রতিগমন করে,’ অর্থাৎ সেই ব্যক্তির ভবিষ্যৎ জীবনের আশা এখন পুরোপুরিভাবে ঈশ্বরের হাতে।

তা হলে, মৃতদের অবস্থা কী? আদমকে শাস্তি দেওয়ার সময় যিহোবা বলেছিলেন: “তুমি ধূলি, এবং ধূলিতে প্রতিগমন করিবে।” (আদিপুস্তক ৩:১৯) ঈশ্বর ধূলি দিয়ে আদমকে সৃষ্টি করার এবং তাকে জীবন দেওয়ার আগে সে কোথায় ছিল? তার তো কোন অস্তিত্বই ছিল না! আদম যখন মারা যায়, তখন সে একেবারে অস্তিত্বহীন অবস্থায় ফিরে যায়। উপদেশক ৯:৫, ১০ পদে মৃতদের অবস্থা সম্বন্ধে স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে, যেখানে আমরা পড়ি: “মৃতেরা কিছুই জানে না . . . তুমি যে স্থানে যাইতেছ, সেই পাতালে কোন কার্য্য কি সঙ্কল্প, কি বিদ্যা কি প্রজ্ঞা, কিছুই নাই।” শাস্ত্র অনুসারে, মৃত্যু হল অস্তিত্বহীন এক অবস্থা। মৃতদের কোন চেতনা, অনুভূতি, চিন্তা কিছুই নেই।

চিরকালীন যন্ত্রণা অথবা সাধারণ কবর?

মৃত ব্যক্তিদের যেহেতু কোন চেতনা নেই, তাই নরক বলে অগ্নিময় যন্ত্রণার কোন জায়গা থাকতে পারে না, যেখানে দুষ্ট লোকেরা মারা যাওয়ার পরে কষ্ট পায়। এই বিভ্রান্তিটা ঘটেছে কারণ বাইবেল লেখকরা গ্রিক শব্দ হেডিজ ব্যবহার করেছেন, যে-শব্দটাকে প্রাচীন গ্রিক লোকেরা প্রায়ই মৃতদের নরকতুল্য জগৎ বোঝাতে ব্যবহার করতেন, যেখানে মৃতদের আত্মারা শাস্তি পায় বলে কথিত ছিল। কিছু জায়গায় আবার এই শব্দটাকে এমনকি নরক হিসেবেও অনুবাদ করা হয়েছে। কিন্তু বাইবেলের লেখকরা যখন হেডিজ শব্দটা ব্যবহার করেছিলেন, তখন তারা আসলে কী বোঝাতে চেয়েছিলেন? আমাদের [মাতৃভাষার] বাইবেলে এই শব্দটাকে যেভাবে অনুবাদ করা হয়েছে, তা পরীক্ষা করা এই প্রশ্নের উত্তর পেতে সাহায্য করে। বাইবেল লেখক লূক, যীশুর মৃত্যুর পর তাঁর কী হয়েছিল, তা বর্ণনা করেন: “[যীশুকে] পাতালে [গ্রিক “হেডিজে”] পরিত্যাগও করা হয় নাই, তাঁহার মাংস ক্ষয়ও দেখে নাই।” * (প্রেরিত ২:৩১) এই পাতাল বা হেডিজ কোথায় ছিল, যেখানে যীশু গিয়েছিলেন? প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “তোমাদের কাছে . . . সমর্পণ করিয়াছি . . . যে, শাস্ত্রানুসারে খ্রীষ্ট আমাদের পাপের জন্য মরিলেন, ও কবর প্রাপ্ত হইলেন, আর শাস্ত্রানুসারে তিনি তৃতীয় দিবসে উত্থাপিত হইয়াছেন।” (১ করিন্থীয় ১৫:৩, ৪) তাই যীশু পাতালে বা হেডিজে অর্থাৎ কবরে ছিলেন কিন্তু সেখানে তাঁকে পরিত্যাগ করা হয়নি কারণ তাঁকে উত্থাপিত অথবা পুনরুত্থিত করা হয়েছিল।

এ ছাড়া, ধার্মিক ব্যক্তি ইয়োবের বিষয়ও বিবেচনা করুন, যিনি খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। তার কষ্টকর অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করে তিনি অনুরোধ জানিয়েছিলেন: “হায়, তুমি আমাকে পাতালে [ইব্রীয় “শিওলে,” গ্রিক “হেডিজে”] লুকাইয়া রাখিও, গুপ্ত রাখিও, যাবৎ তোমার ক্রোধ গত না হয়।” (ইয়োব ১৪:১৩) * এটা চিন্তা করা কতই না অযৌক্তিক যে, ইয়োব সুরক্ষা পাওয়ার জন্য এক অগ্নিময় জায়গায় যাওয়ার ইচ্ছা করেছিলেন! ইয়োবের জন্য “শিওল” অথবা “হেডিজ” শুধুমাত্র পাতাল অথবা কবর ছিল যেখানে তার কষ্ট শেষ হতো। তাই, বাইবেলের শিওল বা হেডিজ মানবজাতির সাধারণ কবরকে বোঝায়, যেখানে ভাল ও খারাপ উভয় লোকেরাই যায়।

অগ্নিময় নরক—সবকিছুর শেষ?

এটা কি হতে পারে যে, নরকের আগুন রূপক অর্থে সবকিছুর শেষ কিংবা সম্পূর্ণ ধ্বংসকে বোঝায়? প্রকাশিত বাক্য ২০:১৪ পদে আগুনকে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, তা লক্ষ করুন। এখানে বলা আছে: “মৃত্যু ও পাতাল (গ্রিক হেডিজ) অগ্নিহ্রদে নিক্ষিপ্ত হইল।” এখানে ব্যবহৃত ‘হ্রদ’ এর অর্থ রূপক কারণ মৃত্যু ও পাতাল (হেডিজ)-কে এটার মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়েছে, যেগুলোকে আক্ষরিকভাবে পুড়িয়ে ফেলা যায় না। “তাহাই, অর্থাৎ সেই অগ্নিহ্রদ, দ্বিতীয় মৃত্যু”—এমন মৃত্যু যেটা থেকে পুনরুত্থিত হওয়ার কোন আশা নেই।

যীশু যে-“অগ্নিময় নরকের [গ্রিক গিহেন্না]” সম্বন্ধে বলেছিলেন, সেটার ও অগ্নিহ্রদের অর্থ একই। (মথি ৫:২২; মার্ক ৯:৪৭, ৪৮) খ্রীষ্টীয় গ্রিক শাস্ত্রে গিহেন্না শব্দটা ১২ বার পাওয়া যায় এবং এটা হিন্নোম উপত্যকাকে বোঝায়, যেটা যিরূশালেমের প্রাচীরের বাইরে ছিল। যীশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন এই উপত্যকা আবর্জনা ফেলার জন্য ব্যবহৃত হতো, “যেখানে অপরাধী ও জীবজন্তুদের মৃতদেহ এবং সবধরনের নোংরা জিনিস ফেলা হতো।” (স্মিথস্‌ বাইবেলের অভিধান) আবর্জনাকে পুড়িয়ে ফেলার জন্য সেখানে সবসময় গন্ধক দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে রাখা হতো। যীশু অনন্ত ধ্বংসের সঠিক প্রতীক হিসেবে, এই উপত্যকাকে ব্যবহার করেছিলেন।

গিহেন্নার মতো অগ্নিময় নরকও অনন্ত ধ্বংসকে চিত্রিত করে। মৃত্যু ও পাতালকে (হেডিজকে) এখানে “নিক্ষিপ্ত” করা হবে অর্থাৎ সেগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে এবং মানবজাতি পাপ ও মৃত্যুর অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে। ইচ্ছাকৃত, অনুতপ্ত নয় এমন পাপীদেরও সেই হ্রদে “অংশ” থাকবে। (প্রকাশিত বাক্য ২১:৮) তারাও চিরকালের জন্য ধ্বংস হবে। অন্যদিকে পাতালে (হেডিজে)—মানবজাতির সাধারণ কবরে—থাকা ব্যক্তিরা যারা ঈশ্বরের স্মৃতিতে আছেন, তাদের এক চমৎকার ভবিষ্যৎ রয়েছে।

হেডিজ খালি হবে!

প্রকাশিত বাক্য ২০:১৩ পদ বলে: “সমুদ্র আপনার মধ্যবর্ত্তী মৃতগণকে সমর্পণ করিল, এবং মৃত্যু ও পাতাল (হেডিজ) আপনাদের মধ্যবর্ত্তী মৃতগণকে সমর্পণ করিল।” হ্যাঁ, বাইবেলে বলা হেডিজ-কে খালি করা হবে। যীশুর প্রতিজ্ঞা অনুসারে, “এমন সময় আসিতেছে, যখন কবরস্থ সকলে [যীশুর] রব শুনিবে এবং . . . বাহির হইয়া আসিবে।” (যোহন ৫:২৮, ২৯) যদিও তারা এখন অন্য কোন আকারে অস্তিত্বে নেই কিন্তু যিহোবা ঈশ্বরের স্মৃতিতে আছেন এমন লক্ষ লক্ষ মৃত ব্যক্তিরা এক পুনঃস্থাপিত পার্থিব পরমদেশে পুনরুত্থিত হবেন অথবা জীবন ফিরে পাবেন।—লূক ২৩:৪৩; প্রেরিত ২৪:১৫.

ঈশ্বরের নতুন জগতে পুনরুত্থিত মানুষরা, যারা তাঁর ধার্মিক নিয়মগুলো মেনে চলেন, তারা আর কখনও মারা যাবেন না। (যিশাইয় ২৫:৮) যিহোবা “তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না।” আসলে, “প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত [হইবে]।” (প্রকাশিত বাক্য ২১:৪) যারা পাতালে (হেডিজে)—‘কবরে’ আছেন তাদের জন্য কত অপূর্ব আশীর্বাদই না সঞ্চিত রয়েছে! সত্যিই, যিহোবা ঈশ্বর এবং তাঁর পুত্র যীশু খ্রীষ্ট সম্বন্ধে আরও জ্ঞান নেওয়ার জন্য এই আশীর্বাদই হল আমাদের জন্য যথেষ্ট কারণ।—যোহন ১৭:৩.

[পাদটীকাগুলো]

^ [মাতৃভাষার বাইবেলে] গ্রিক শব্দ হেডিজ-কে খ্রীষ্টীয় গ্রিক শাস্ত্রের দশ জায়গার প্রায় বেশির ভাগ অংশেই “পাতাল” বলে অনুবাদ করা হয়েছে। লূক ১৬:১৯-৩১ পদ পাতালে যাতনা সম্বন্ধেও উল্লেখ করে কিন্তু পুরো ঘটনারই এক রূপক অর্থ রয়েছে। যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত সর্বমহান পুরুষ যিনি কখনও জীবিত ছিলেন বইয়ের ৮৮ অধ্যায়টা দেখুন।

^ ইব্রীয় শব্দ শিওল মূল ইব্রীয় শাস্ত্রে মোট ৬৫ বার পাওয়া যায় এবং [মাতৃভাষার] বাইবেলে এটাকে “পাতাল” ও “অধোলোক” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে।

[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

পাতালে সুরক্ষা পাওয়ার জন্য ইয়োব প্রার্থনা করেছিলেন

[৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

অগ্নিময় নরক—অনন্ত ধ্বংসকে চিত্রিত করে

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

‘কবরস্থ সকলে বাহির হইয়া আসিবে’