সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ঈশ্বরের কর্তৃত্বের প্রতি আনুগত্যের সঙ্গে বশীভূত হোন

ঈশ্বরের কর্তৃত্বের প্রতি আনুগত্যের সঙ্গে বশীভূত হোন

ঈশ্বরের কর্তৃত্বের প্রতি আনুগত্যের সঙ্গে বশীভূত হোন

“সদাপ্রভু আমাদের বিচারকর্ত্তা, সদাপ্রভু আমাদের ব্যবস্থাপক, সদাপ্রভু আমাদের রাজা।”যিশাইয় ৩৩:২২.

১. কোন্‌ বিষয়গুলো প্রাচীন ইস্রায়েলকে অন্যান্য জাতিগুলোর মাঝে অদ্বিতীয় করে তুলেছিল?

 সাধারণ কাল পূর্ব ১৫১৩ সালে, ইস্রায়েল জাতি অস্তিত্বে এসেছিল। সেই সময়ে এর কোন রাজধানী ছিল না, নিজস্ব দেশ ছিল না এবং কোন দৃশ্যত রাজা ছিল না। এর প্রজারা আগে দাস ছিল। কিন্তু, সেই নতুন জাতি আরেক দিক দিয়ে অদ্বিতীয় ছিল। যিহোবা ঈশ্বর ছিলেন তাদের অদৃশ্য বিচারকর্তা, ব্যবস্থাপক এবং রাজা। (যাত্রাপুস্তক ১৯:৫, ৬; যিশাইয় ৩৩:২২) অন্য আর কোন জাতি সেই দাবি করতে পারত না!

২. ইস্রায়েল যেভাবে সংগঠিত হয়েছিল তার থেকে কোন্‌ প্রশ্ন ওঠে এবং এর উত্তর কেন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?

যেহেতু যিহোবা শৃঙ্খলা ও শান্তির ঈশ্বর তাই আমরা আশা করতে পারি যে, যেকোন জাতিকেই তিনি শাসন করুন না কেন, তা অবশ্যই সুসংগঠিত হবে। (১ করিন্থীয় ১৪:৩৩) ইস্রায়েলের বেলায় ঠিক তা-ই হয়েছিল। কিন্তু এক পার্থিব, দৃশ্যত সংগঠন কীভাবে এক অদৃশ্য ঈশ্বরের দ্বারা পরিচালিত হতে পারে? ওই প্রাচীন জাতিকে যিহোবা যেভাবে শাসন করেছিলেন তা বিবেচনা করা আমাদের জন্য উপকারজনক, বিশেষ করে লক্ষ করা দরকার যে ইস্রায়েলের সঙ্গে তাঁর আচরণ কীভাবে ঈশ্বরের কর্তৃত্বের প্রতি আনুগত্যের সঙ্গে বশীভূত হওয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে।

প্রাচীন ইস্রায়েলকে যেভাবে শাসন করা হয়েছিল

৩. যিহোবা তাঁর লোকেদের পরিচালনা দেওয়ার জন্য কোন্‌ ব্যবহারিক ব্যবস্থা করেছিলেন?

যদিও যিহোবা ইস্রায়েলের অদৃশ্য রাজা ছিলেন কিন্তু তিনি তাঁর দৃশ্যত প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বস্ত পুরুষদের নিযুক্ত করেছিলেন। তাদের মধ্যে অধ্যক্ষ, পিতৃকুল প্রধান এবং প্রাচীন ব্যক্তিদেরকে লোকেদের মাঝে পরামর্শদাতা এবং বিচারক হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। (যাত্রাপুস্তক ১৮:২৫, ২৬; দ্বিতীয় বিবরণ ১:১৫) কিন্তু, তাই বলে আমাদের এই সিদ্ধান্তে আসা উচিত নয় যে, ঈশ্বরের পরিচালনা ছাড়া এই দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নিখুঁত বিচক্ষণতা ও বোধগম্যতার সঙ্গে বিষয়গুলোর বিচার করতে পারতেন। তারা সিদ্ধ ছিলেন না আর তারা তাদের সহ উপাসকদের হৃদয়ও পড়তে পারতেন না। তা সত্ত্বেও, ঈশ্বর-ভয়শীল বিচারকরা তাদের সহ বিশ্বাসীদের সাহায্যকারী পরামর্শ দিতে পারতেন কারণ এর ভিত্তি ছিল, যিহোবার ব্যবস্থা।—দ্বিতীয় বিবরণ ১৯:১৫; গীতসংহিতা ১১৯:৯৭-১০০.

৪. ইস্রায়েলের বিশ্বস্ত বিচারকরা কোন্‌ প্রবণতাগুলো এড়িয়ে চলার জন্য উৎসুক ছিলেন এবং কেন?

কিন্তু একজন বিচারক হওয়ার জন্য কেবল ব্যবস্থা জানা ছাড়াও আরও বেশি কিছুর দরকার ছিল। অসিদ্ধ হওয়ায় এই প্রাচীনদের যেকোন স্বেচ্ছাচারী প্রবণতা, যেমন স্বার্থপরতা, পক্ষপাত এবং লোভকে দমন করতে হতো, যা কিনা তাদের বিচারকে বিকৃত করে দিতে পারত। মোশি তাদের বলেছিলেন: “তোমরা বিচারে কাহারও মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাতিত্ব,” NW] করিবে না; সমভাবে ক্ষুদ্র ও মহান্‌ উভয়ের কথা শুনিবে; মনুষ্যের মুখ দেখিয়া ভয় করিবে না, কেননা বিচার ঈশ্বরের।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) হ্যাঁ, ইস্রায়েলের বিচারকরা ঈশ্বরের পক্ষে বিচার করছিলেন। কত সম্মানীয় ও অসাধারণ সুযোগই না তা ছিল!—দ্বিতীয় বিবরণ ১:১৬, ১৭.

৫. বিচারকদের নিযুক্ত করা ছাড়াও যিহোবা তাঁর লোকেদের যত্ন নেওয়ার জন্য আর কোন্‌ কোন্‌ ব্যবস্থা করেছিলেন?

যিহোবা তাঁর লোকেদের আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলো মেটানোর জন্য আরও অন্যান্য ব্যবস্থা করেছিলেন। এমনকি তারা প্রতিজ্ঞাত দেশে আসার আগেই তিনি তাদের সত্য উপাসনার কেন্দ্র, সমাগম তাঁবু বানানোর আদেশ দিয়েছিলেন। এ ছাড়াও, ব্যবস্থা শেখানোর, পশুবলি উৎসর্গ করার এবং সকালে ও সন্ধ্যায় ধূপ জ্বালানোর জন্য তিনি যাজকশ্রেণীর ব্যবস্থা করেছিলেন। মোশির বড় ভাই হারোণকে ঈশ্বর ইস্রায়েলের প্রথম মহাযাজক হিসেবে এবং হারোণের ছেলেদের তাদের বাবার কাজে সাহায্য করার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন।—যাত্রাপুস্তক ২৮:১; গণনাপুস্তক ৩:১০; ২ বংশাবলি ১৩:১০, ১১.

৬, ৭. (ক) যাজক এবং অযাজকীয় লেবীয়দের মধ্যে কী সম্পর্ক ছিল? (খ) লেবীয়রা যে-বিভিন্ন ধরনের কাজ করতেন, এর থেকে আমরা কোন্‌ শিক্ষা পেতে পারি? (কলসীয় ৩:২৩)

লক্ষ লক্ষ লোকেদের আধ্যাত্মিক চাহিদা মেটানো এক বিরাট কাজ ছিল আর যাজকদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। তাই, তাদের সাহায্য করার জন্য লেবীয় বংশের কয়েকজন সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। মোশিকে যিহোবা বলেছিলেন: “তুমি লেবীয়দিগকে হারোণের ও তাহার পুত্ত্রগণের হস্তে প্রদান করিবে; তাহারা দত্ত, ইস্রায়েল-সন্তানগণের পক্ষে তাহাকে দত্ত।”—গণনাপুস্তক ৩:৯, ৩৯.

লেবীয়রা সুসংগঠিত ছিল। গের্শোনীয়, কহাতীয় এবং মরারীয়, এই তিনটে গোষ্ঠী অনুসারে তাদের ভাগ করা হয়েছিল এবং প্রত্যেকের নির্দিষ্ট কার্যভার ছিল। (গণনাপুস্তক ৩:১৪-১৭, ২৩-৩৭) কিছু কার্যভার হয়তো অন্যগুলোর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছিল কিন্তু সব কাজই অপরিহার্য ছিল। কহাতীয় লেবীয়দের কাজ তাদের পবিত্র নিয়ম-সিন্দুক এবং সমাগম তাঁবুর আসবাবপত্রের আরও কাছাকাছি নিয়ে এসেছিল। কিন্তু প্রত্যেক লেবীয়, তা তিনি একজন কহাতীয় হোন বা নাই হোন, চমৎকার সুযোগগুলো উপভোগ করতেন। (গণনাপুস্তক ১:৫১, ৫৩) দুঃখের বিষয় যে, কেউ কেউ তাদের সুযোগগুলোর প্রতি উপলব্ধি দেখায়নি। ঈশ্বরের কর্তৃত্বের প্রতি আনুগত্যের সঙ্গে বশীভূত না থেকে তারা অসন্তুষ্ট হয়ে পড়ে এবং গর্ব, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও হিংসা করতে শুরু করে। এইরকম একজন লেবীয়ের নাম ছিল কোরহ।

“তোমরা কি যাজকত্বেরও চেষ্টা করিতেছ?”

৮. (ক) কোরহ কে ছিলেন? (খ) কোন্‌ বিষয়টা হয়তো কোরহকে যাজকদের মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পরিচালিত করেছিল?

কোরহ লেবির পিতৃকুলের কিংবা কহাতীয় গোষ্ঠীর মধ্যেও প্রধান ছিলেন না। (গণনাপুস্তক ৩:৩০, ৩২) কিন্তু, তিনি ইস্রায়েলের একজন সম্মানীয় অধ্যক্ষ ছিলেন। কোরহের যে-দায়িত্বগুলো ছিল, সেগুলো তাকে হয়তো হারোণ ও তার ছেলেদের কাছাকাছি নিয়ে এসেছিল। (গণনাপুস্তক ৪:১৮, ১৯) নিজের চোখে এই ব্যক্তিদের অসিদ্ধতা দেখে কোরহ হয়তো যুক্তি দেখিয়েছিলেন: ‘এই যাজকরা অসিদ্ধ অথচ আমাকে কিনা তাদের বশীভূত হতে হবে! মাত্র কিছুদিন আগে হারোণ সোনার বাছুর বানিয়েছিলেন। সেই বাছুরকে উপাসনা করে আমাদের লোকেরা প্রতিমাপূজায় জড়িয়ে পড়েছিল। আর এখন মোশির ভাই, হারোণ মহাযাজক হিসেবে সেবা করছেন! কত বড় পক্ষপাত! আর হারোণের ছেলে নাদব এবং অবীহূর সম্বন্ধে কী বলা যায়? তারা সেবা করার সুযোগের প্রতি চরম অসম্মান দেখিয়েছে আর সেইজন্য যিহোবা তাদের মেরে ফেলেছেন!’ * (যাত্রাপুস্তক ৩২:১-৫; লেবীয় পুস্তক ১০:১, ২) কোরহ যে-যুক্তিই দেখান না কেন, এটা স্পষ্ট যে তিনি যাজকপদকে মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছিলেন। সেটাই তাকে মোশি ও হারোণের বিরুদ্ধে এবং সর্বোপরি যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে পরিচালিত করেছিল।—১ শমূয়েল ১৫:২৩; যাকোব ১:১৪, ১৫.

৯, ১০. কোরহ ও তার সহ বিদ্রোহীরা মোশির বিরুদ্ধে কোন্‌ অভিযোগ তুলেছিলেন এবং কেন তাদের তা করা থেকে বিরত হওয়া উচিত ছিল?

প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় কোরহের জন্য তার পক্ষে দল ভারী করা তেমন কঠিন কাজ ছিল না। তিনি, দাথন এবং অবীরাম সহ মোট ২৫০ জন—মণ্ডলীর সমস্ত অধ্যক্ষ—তার পক্ষে চলে এসেছিল। তারা একত্র হয়ে মোশি ও হারোণের কাছে এসে বলেছিল: “সমস্ত মণ্ডলীর প্রত্যেক জনই পবিত্র, এবং সদাপ্রভু তাহাদের মধ্যবর্ত্তী; তবে তোমরা কেন সদাপ্রভুর সমাজের উপরে আপনাদিগকে উন্নত করিতেছ?”—গণনাপুস্তক ১৬:১-৩.

১০ বিদ্রোহীরা যা কিছু জানত তার পরিপ্রেক্ষিতে মোশির কর্তৃত্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে তাদের বিরত হওয়া উচিত ছিল। কিছুদিন আগে, হারোণ ও মরিয়ম ঠিক সেই কাজই করেছিলেন। আসলে তারাও ঠিক কোরহের মতোই যুক্তি দেখিয়েছিলেন! গণনাপুস্তক ১২:১, ২ পদ অনুসারে, তারা জিজ্ঞেস করেছিলেন: “সদাপ্রভু কি কেবল মোশির সহিত কথা কহিয়াছেন? আমাদের সহিত কি কহেন নাই?” যিহোবা তাদের কথা শুনছিলেন। তিনি মোশি, হারোণ ও মরিয়মকে সমাগম-তাঁবুর প্রবেশ দ্বারে একত্র হতে আদেশ দিয়েছিলেন, যাতে তিনি কাকে নেতা হিসেবে মনোনীত করেছেন, তা দেখাতে পারেন। এরপর স্পষ্টভাবে যিহোবা বলেছিলেন: “তোমাদের মধ্যে যদি কেহ ভাববাদী হয়, তবে আমি সদাপ্রভু তাহার নিকটে কোন দর্শন দ্বারা আপনার পরিচয় দিব, স্বপ্নে তাহার সহিত কথা কহিব। আমার দাস মোশি তদ্রূপ নয়, সে আমার সমস্ত বাটীর মধ্যে বিশ্বাসের পাত্র।” এরপর যিহোবা কিছু সময়ের জন্য মরিয়মকে কুষ্ঠ দিয়ে আঘাত করেছিলেন।—গণনাপুস্তক ১২:৪-৭, ১০.

১১. কীভাবে মোশি কোরহের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছিলেন?

১১ কোরহ এবং যারা তার পক্ষে গিয়েছিল তারা নিশ্চয়ই এই ঘটনাটা জানত। তাদের এই বিদ্রোহের পিছনে কোন অজুহাতই ছিল না। তা সত্ত্বেও, মোশি ধৈর্যের সঙ্গে তাদের যুক্তি দেখিয়েছিলেন। তিনি তাদেরকে তাদের সুযোগের প্রতি আরও বেশি কৃতজ্ঞ হতে পরামর্শ দিয়েছিলেন, এই বলে: “ইহা কি তোমাদের কাছে ক্ষুদ্র বিষয় যে, ইস্রায়েলের ঈশ্বর তোমাদিগকে ইস্রায়েল-মণ্ডলী হইতে পৃথক্‌ করিয়া সদাপ্রভুর আবাসের সেবাকর্ম্ম করণার্থে ও মণ্ডলীর সম্মুখে দাঁড়াইয়া তাহার পরিচর্য্যা করণার্থে আপনার নিকটবর্ত্তী করিয়াছেন?” না, এটা “ক্ষুদ্র বিষয়” ছিল না! লেবীয়দের ইতিমধ্যেই অনেক সুযোগ ছিল। তারা আর কী-ই-বা আশা করতে পারত? মোশির পরের কথাগুলো তাদের হৃদয়ের অবস্থাকে প্রকাশ করে দিয়েছিল: “তোমরা কি যাজকত্বেরও চেষ্টা করিতেছ?” * (গণনাপুস্তক ১২:৩; গণনাপুস্তক ১৬:৯, ১০) কিন্তু, ঈশ্বরের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহের প্রতি যিহোবা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?

ইস্রায়েলের বিচারকর্তা হস্তক্ষেপ করেন

১২. ঈশ্বরের সঙ্গে ইস্রায়েলের সবসময় ভাল সম্পর্ক কীসের ওপর নির্ভর করেছিল?

১২ যিহোবা যখন ইস্রায়েলীয়দের ব্যবস্থা দিয়েছিলেন, তখন তিনি লোকেদের বলেছিলেন যে তারা যদি তাঁর বাধ্য হয়, তা হলে তারা “পবিত্র এক জাতি” হবে এবং যত দিন সেই জাতি যিহোবার ব্যবস্থাকে মেনে চলবে, তত দিন পবিত্র থাকবে। (যাত্রাপুস্তক ১৯:৫, ৬) এখন প্রকাশ্য বিদ্রোহের কারণে ইস্রায়েলের বিচারকর্তা ও ব্যবস্থাপকের হতক্ষেপ করার সময় আসে! কোরহকে মোশি বলেছিলেন: “তুমি ও তোমার দলস্থ সকলে, তোমরা কল্য হারোণের সহিত সদাপ্রভুর সম্মুখে উপস্থিত হইবে; প্রত্যেক জন অঙ্গারধানী লইয়া তাহার উপরে ধূপ দিয়া সদাপ্রভুর সম্মুখে আপন আপন অঙ্গারধানী উপস্থিত করিবে; দুই শত পঞ্চাশটী অঙ্গারধানী উপস্থিত করিবে; এবং তুমি ও হারোণ আপন আপন অঙ্গারধানী লইবে।”—গণনাপুস্তক ১৬:১৬, ১৭.

১৩. (ক) যিহোবার সম্মুখে ধূপ জ্বালানোর ধারণাটা কেন বিদ্রোহীদের অহংকার প্রকাশ করেছিল? (খ) বিদ্রোহীদের সঙ্গে যিহোবা কেমন আচরণ করেছিলেন?

১৩ ঈশ্বরের ব্যবস্থা অনুসারে, একমাত্র যাজকরাই ধূপ জ্বালাতে পারতেন। যাজক নন এমন একজন লেবীয় যিহোবার সম্মুখে ধূপ জ্বালাবেন, এই ধারণাটাই ওই বিদ্রোহীদের বোধশক্তি ফিরিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। (যাত্রাপুস্তক ৩০:৭; গণনাপুস্তক ৪:১৬) কিন্তু, কোরহ এবং তার সমর্থকদের সেই বোধ ছিল না! পরদিন কোরহ “সমাগম-তাম্বুর দ্বারসমীপে [মোশি ও হারোণের] প্রতিকূলে সমস্ত মণ্ডলীকে সমবেত করিল।” ওই বিবরণ আমাদের বলে: “পরে সদাপ্রভু মোশি ও হারোণকে কহিলেন, তোমরা এই মণ্ডলীর মধ্য হইতে পৃথক্‌ হও; আমি এক নিমিষে ইহাদিগকে সংহার করি।” কিন্তু, মোশি ও হারোণ লোকেদের জীবন ভিক্ষা চেয়েছিলেন। যিহোবা তাদের অনুরোধ রেখেছিলেন। কোরহ ও তার দলের ওপর “সদাপ্রভু হইতে অগ্নি নির্গত হইয়া যাহারা ধূপ নিবেদন করিয়াছিল, সেই দুই শত পঞ্চাশ জন লোককে গ্রাস করিল।”—গণনাপুস্তক ১৬:১৯-২২, ৩৫. *

১৪. ইস্রায়েল মণ্ডলীর বিরুদ্ধে যিহোবা কেন কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন?

১৪ অবাক হওয়ার মতো বিষয়টা হল, যে-ইস্রায়েলীয়রা এই বিদ্রোহীদের সঙ্গে যিহোবার আচরণ দেখেছিল, তারা এর পিছনে যে-শিক্ষাটা রয়েছে তা বুঝতে পারেনি। “পর দিনে ইস্রায়েল-সন্তানগণের সমস্ত মণ্ডলী মোশির ও হারোণের প্রতিকূলে বচসা করিয়া কহিল, তোমরাই সদাপ্রভুর প্রজাদিগকে বধ করিলে।” ইস্রায়েলীয়রা চক্রান্তকারীদের পক্ষ নিতে শুরু করেছিল! শেষ পর্যন্ত, যিহোবার সহ্যের সীমা শেষ হয়। কেউই—এমনকি মোশি বা হারোণ পর্যন্ত—লোকেদের পক্ষ হয়ে যিহোবার কাছে অনুরোধ জানাতে সফল হননি। অবাধ্য ব্যক্তিদের ওপর যিহোবা এক মহামারী এনেছিলেন আর “যাহারা কোরহের ব্যাপারে মারা পড়ে, তাহারা ছাড়া আর চৌদ্দ সহস্র সাত শত লোক ঐ মহামারীতে মারা পড়িল।”—গণনাপুস্তক ১৬:৪১-৪৯.

১৫. (ক) কোন্‌ কারণগুলোর জন্য ইস্রায়েলীয়দের নির্দ্বিধায় মোশি ও হারোণের নেতৃত্বকে মেনে নেওয়া উচিত ছিল? (খ) এই ঘটনা আপনাকে যিহোবা সম্বন্ধে কী শিখিয়েছে?

১৫ এই লোকেরা সহজেই তাদের জীবন বাঁচাতে পারত। এই ক্ষেত্রে তারা যদি একটু তাদের যুক্তি করার ক্ষমতাকে কাজে লাগাতো। তারা নিজেদের এইরকম প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারত: ‘নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কে কে ফরৌণের সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন? কারা ইস্রায়েলীয়দের মুক্তির দাবি জানিয়েছিলেন? ইস্রায়েলের মুক্তির পর ঈশ্বরের দূতের সঙ্গে মুখোমুখি হয়ে কথা বলার জন্য একমাত্র কাকে হোরেব পর্বতে ডাকা হয়েছিল?’ সত্যিই, মোশি ও হারোণের উল্লেখযোগ্য বিবরণ, যিহোবার প্রতি তাদের আনুগত্যের ও লোকেদের জন্য তাদের ভালবাসার যথেষ্ট প্রমাণ দিয়েছিল। (যাত্রাপুস্তক ১০:২৮; ১৯:২৪; ২৪:১২-১৫) বিদ্রোহীদের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে যিহোবা একটুও আনন্দিত হননি। কিন্তু, যখন স্পষ্ট হয়ে যায় যে লোকেরা তাদের বিদ্রোহ চালিয়েই যাচ্ছে, তখন তিনি সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। (যিহিষ্কেল ৩৩:১১) আজকে আমাদের জন্য এই সমস্ত কিছুর এক বিরাট তাৎপর্য রয়েছে। কেন?

আজকে সেই মাধ্যমকে চেনা

১৬. (ক) কোন্‌ প্রমাণ দেখে প্রথম শতাব্দীর যিহুদিদের দৃঢ় নিশ্চিত হওয়া উচিত ছিল যে, যীশু ছিলেন যিহোবার প্রতিনিধি? (খ) কেন যিহোবা লেবীয় যাজকপদ পরিবর্তিত করেছিলেন ও এর জায়গায় কী নিয়ে এসেছিলেন?

১৬ আজকে এক নতুন “জাতি” রয়েছে, যার অদৃশ্য বিচারকর্তা, ব্যবস্থাপক এবং রাজা হলেন যিহোবা। (মথি ২১:৪৩) সেই “জাতি” সা.কা. প্রথম শতাব্দীতে অস্তিত্বে এসেছিল। সেই সময়ের মধ্যে মোশির দিনের আবাসের জায়গায় যিরূশালেমের মন্দির তৈরি হয়েছিল, যেখানে লেবীয়রা তখনও কাজ করে যাচ্ছিলেন। (লূক ১:৫, ৮, ৯) কিন্তু, সা.কা. ২৯ সালে, আরেকটা মন্দির অর্থাৎ এক আত্মিক মন্দির অস্তিত্বে আসে, যেটার মহাযাজক হলেন যীশু খ্রীষ্ট। (ইব্রীয় ৯:৯, ১১) ঈশ্বরের কর্তৃত্ব নিয়ে আরেকবার প্রশ্ন ওঠে। এই নতুন ‘জাতিকে’ নেতৃত্ব দিতে যিহোবা কাকে ব্যবহার করবেন? যীশু নিঃশর্তভাবে ঈশ্বরের প্রতি নিজেকে অনুগত প্রমাণ করেছিলেন। তিনি লোকেদের ভালবাসতেন। এ ছাড়া, তিনি অনেক চমৎকার চিহ্নকার্য করেছিলেন। কিন্তু, তাদের শক্তগ্রীব পূর্বপুরুষদের মতো বেশির ভাগ লেবীয় যীশুকে অস্বীকার করেছিল। (মথি ২৬:৬৩-৬৮; প্রেরিত ৪:৫, ৬, ১৮; ৫:১৭) শেষ পর্যন্ত, যিহোবা লেবীয় যাজকবর্গের জায়গায় সম্পূর্ণ ভিন্ন এক যাজকবর্গ নিয়ে এসেছিলেন, যা ছিল রাজকীয় যাজকবর্গ। সেই রাজকীয় যাজকবর্গ আজকে আমাদের দিনেও রয়েছে।

১৭. (ক) রাজকীয় যাজকবর্গ কোন্‌ দল নিয়ে গঠিত? (খ) আজকে যিহোবা কীভাবে রাজকীয় যাজকবর্গকে ব্যবহার করছেন?

১৭ আজকে এই রাজকীয় যাজকবর্গ কাদের নিয়ে গঠিত? প্রেরিত পিতর তার প্রথম অনুপ্রাণিত চিঠিতে এই প্রশ্নের উত্তর দেন। খ্রীষ্টের দেহের অভিষিক্ত সদস্যদের পিতর লিখেছিলেন: “তোমরা ‘মনোনীত বংশ, রাজকীয় যাজকবর্গ, পবিত্র জাতি, [ঈশ্বরের] নিজস্ব প্রজাবৃন্দ, যেন তাঁহারই গুণকীর্ত্তন কর,’ যিনি তোমাদিগকে অন্ধকার হইতে আপনার আশ্চর্য্য জ্যোতির মধ্যে আহ্বান করিয়াছেন।” (১ পিতর ২:৯) এই কথাগুলো থেকে এটা স্পষ্ট যে, একটা দল হিসেবে যীশুর পদচিহ্নের অভিষিক্ত অনুগামীদের নিয়ে এই “রাজকীয় যাজকবর্গ” গঠিত, যাদের পিতরও এক “পবিত্র জাতি” বলেছিলেন। তারা সেই মাধ্যম গঠন করেন, যেটাকে যিহোবা তাঁর লোকেদের শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক নির্দেশনা দেওয়ার কাজে ব্যবহার করেন।—মথি ২৪:৪৫-৪৭.

১৮. নিযুক্ত প্রাচীন ও রাজকীয় যাজকবর্গের মধ্যে কী সম্পর্ক রয়েছে?

১৮ সেই রাজকীয় যাজকবর্গকে প্রতিনিধিত্ব করেন নিযুক্ত প্রাচীনরা, যারা সারা পৃথিবীতে যিহোবার লোকেদের মণ্ডলীগুলোতে দায়িত্বপূর্ণ পদে সেবা করেন। এই লোকেরা অভিষিক্ত হোন বা না-ই হোন, তারা আমাদের সম্মান এবং আন্তরিক সমর্থন পাওয়ার যোগ্য। কেন? কারণ, যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে প্রাচীনদের তাদের পদে নিযুক্ত করেছেন। (ইব্রীয় ১৩:৭, ১৭) সেটা কীভাবে হতে পারে?

১৯. কীভাবে প্রাচীনরা পবিত্র আত্মার দ্বারা নিযুক্ত হন?

১৯ এই প্রাচীনরা ঈশ্বরের বাক্যে বলা চাহিদাগুলো পূরণ করেন আর ঈশ্বরের বাক্য তাঁর আত্মার দ্বারা অনুপ্রাণিত। (১ তীমথিয় ৩:১-৭; তীত ১:৫-৯) তাই, তাদের নিযুক্তিকরণের বিষয়ে বলা যায় যে, তা পবিত্র আত্মার মাধ্যমে হয়েছে। (প্রেরিত ২০:২৮) প্রাচীনদের অবশ্যই ভালভাবে ঈশ্বরের বাক্য জানতে হবে। যিনি তাদের নিয়োগ করেন, সেই সর্বোচ্চ বিচারকর্তার মতো প্রাচীনদের অবশ্যই বিচারের সময় পক্ষপাতিত্ব বলে মনে হয় এমন যেকোন বিষয়কে ঘৃণা করতে হবে।—দ্বিতীয় বিবরণ ১০:১৭, ১৮, NW.

২০. কঠোর পরিশ্রমী প্রাচীনদের কোন্‌ বিষয়কে আপনি উপলব্ধি করেন?

২০ প্রাচীনদের কর্তৃত্বের প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে বরং কঠোর পরিশ্রমী প্রাচীনদের প্রতি আমাদের উপলব্ধি দেখানো উচিত! প্রায়ই বেশ অনেক বছর ধরে তাদের বিশ্বস্ত সেবার বিবরণ আমাদের আস্থাকে উদ্দীপিত করে। তারা বিশ্বস্তভাবে মণ্ডলীর সভাগুলোর জন্য তৈরি হন ও সেগুলো পরিচালনা করেন, আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে “রাজ্যের . . . সুসমাচার” প্রচার করেন এবং দরকার হলে শাস্ত্র থেকে আমাদের পরামর্শ দেন। (মথি ২৪:১৪; ইব্রীয় ১০:২৩, ২৫; ১ পিতর ৫:২) আমরা অসুস্থ হলে তারা আমাদের দেখতে আসেন এবং শোকের সময় আমাদের সান্ত্বনা দেন। তারা অনুগত এবং নিঃস্বার্থভাবে রাজ্যের কাজকে সমর্থন করেন। যিহোবার আত্মা তাদের ওপর রয়েছে; তাদের প্রতি তাঁর অনুমোদন রয়েছে।—গালাতীয় ৫:২২, ২৩.

২১. প্রাচীনদের কোন্‌ বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত এবং কেন?

২১ অবশ্যই, প্রাচীনরা সিদ্ধ নন। তাদের সীমাবদ্ধতাগুলোর কথা মনে রেখে তারা পালের অর্থাৎ “নিরূপিত [“ঈশ্বরের,” NW] অধিকারের” ওপর প্রভুত্ব করেন না। এর বদলে তারা নিজদের ‘তাহাদের ভাইদের আনন্দের সহকারী’ বলে মনে করেন। (১ পিতর ৫:৩; ২ করিন্থীয় ১:২৪) নম্র, কঠোর পরিশ্রমী প্রাচীনরা যিহোবাকে ভালবাসেন এবং তারা জানেন যে, যত বেশি তারা যিহোবাকে অনুকরণ করবেন, মণ্ডলীর জন্য তারা তত বেশি ভাল কাজ করতে পারবেন। এই কথা মনে রেখে তারা সবসময় ঈশ্বরের মতো গুণাবলি যেমন প্রেম, করুণা ও ধৈর্য গড়ে তোলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেন।

২২. কোরহের বিবরণ পুনরালোচনা করে কীভাবে যিহোবার দৃশ্যত সংগঠনের প্রতি আপনার বিশ্বাস শক্তিশালী হয়েছে?

২২ যিহোবাকে আমাদের অদৃশ্য শাসক, যীশু খ্রীষ্টকে আমাদের মহাযাজক, অভিষিক্ত রাজকীয় যাজকবর্গের সদস্যদের আমাদের শিক্ষক এবং বিশ্বস্ত খ্রীষ্টান প্রাচীনদের পরামর্শদাতা হিসেবে পেয়ে আমরা কতই না সুখী! যদিও মানুষের দ্বারা পরিচালিত কোন সংগঠনই নিখুঁত হতে পারে না কিন্তু খুশিমনে ঈশ্বরের কর্তৃত্বের প্রতি বশীভূত হন এমন বিশ্বস্ত সহ বিশ্বাসীদের সঙ্গে একত্রে সেবা করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত!

[পাদটীকাগুলো]

^ হারোণের অন্য দুই ছেলে ইলীয়াসর ও ঈথামর যিহোবার প্রতি তাদের সেবায় উদাহরণযোগ্য ছিলেন।—লেবীয় পুস্তক ১০:৬.

^ কোরহের সহ ষড়যন্ত্রকারী দাথন এবং অবীরাম রূবেণীয় গোষ্ঠীর ছিল। তারা হয়তো আপাতদৃষ্টিতে যাজকপদের লোভ করেনি। তারা মোশির নেতৃত্বে এবং তাদের সময় পর্যন্ত তখনও প্রতিজ্ঞাত দেশে ঢুকতে পারেনি বলে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল।—গণনাপুস্তক ১৬:১২-১৪.

^ কুলপতিদের সময়ে, প্রত্যেক গোষ্ঠীর প্রধান ঈশ্বরের সামনে তার স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতিনিধিত্ব করতেন, এমনকি তাদের পক্ষে বলি উৎসর্গ করতেন। (আদিপুস্তক ৮:২০; ৪৬:১; ইয়োব ১:৫) কিন্তু, ব্যবস্থা চালু হয়ে যাওয়ার পর যিহোবা হারোণের গোষ্ঠীর পুরুষ সদস্যদের যাজক হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন, যারা বলি উৎসর্গ করতেন। এটা স্পষ্ট যে, পদ্ধতির এই পরিবর্তনের সঙ্গে ২৫০ জন বিদ্রোহী সহযোগিতা করতে চায়নি।

আপনি কী শিখেছেন?

• ইস্রায়েলীয়দের যত্ন নেওয়ার জন্য যিহোবা কোন্‌ প্রেমপূর্ণ বিষয়গুলো জুগিয়েছিলেন?

• কেন মোশি ও হারোণের বিরুদ্ধে কোরহের বিদ্রোহ করার পিছনে কোন অজুহাতই ছিল না?

• বিদ্রোহীদের সঙ্গে যিহোবার আচরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

• কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, আজকে যিহোবার ব্যবস্থাগুলোর জন্য আমরা কৃতজ্ঞ?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবার সেবায় যেকোন কার্যভারকে কি আপনি একটা সুযোগ বলে মনে করেন?

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

“তবে তোমরা কেন সদাপ্রভুর সমাজের উপরে আপনাদিগকে উন্নত করিতেছ?”

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

নিযুক্ত প্রাচীনরা রাজকীয় যাজকবর্গকে প্রতিনিধিত্ব করেন