সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

চিন্তা করার ক্ষমতা কীভাবে আপনাকে রক্ষা করতে পারে?

চিন্তা করার ক্ষমতা কীভাবে আপনাকে রক্ষা করতে পারে?

চিন্তা করার ক্ষমতা কীভাবে আপনাকে রক্ষা করতে পারে?

 উত্তাল ঢেউ উছলে পড়ার দৃশ্য সত্যিই চমৎকার কিন্তু নাবিকদের কাছে সেগুলোর মানে বিপদ। সেই উত্তাল তরঙ্গ হয়তো তাদের জীবন কেড়ে নিতে পারে।

একইভাবে, ঈশ্বরের দাসেরা হয়তো বড় বড় চাপের মুখোমুখি হতে পারেন, যা তাদের ভারগ্রস্ত করে ফেলে। আপনি হয়তো বুঝতে পেরেছেন যে, একটার পর একটা পরীক্ষা ও প্রলোভনের ঢেউ খ্রীষ্টানদের ওপর বোঝা হয়ে উঠতে পারে। আধ্যাত্মিক জাহাজডুবি এড়ানোর জন্য সংকল্প নিয়ে আপনি নিশ্চয়ই সেগুলোকে চূড়ান্তভাবে প্রতিরোধ করতে চান। (১ তীমথিয় ১:১৯) চিন্তা করার ক্ষমতা আপনার প্রতিরোধের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটা কী এবং কীভাবে এটা অর্জন করা যায়?

যে-ইব্রীয় শব্দকে “চিন্তা করার ক্ষমতা” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, তা হল মেজিমা আর এটা যে-মূল শব্দ থেকে এসেছে, তার মানে হল, “পরিকল্পনা অথবা ফন্দি করা।” (হিতোপদেশ ১:৪, NW) তাই, কিছু বাইবেল সংস্করণ মেজিমা-কে “বিচক্ষণতা” অথবা “দূরদর্শিতা” হিসেবে অনুবাদ করে। বাইবেল পণ্ডিত জেমিসন, ফোসেট এবং ব্রাউন মেজিমা-কে এভাবে বর্ণনা করেন যে, “মন্দ কিছুকে এড়িয়ে ভাল কিছু খুঁজে পাওয়ার জন্য সতর্ক।” এর মানে আমাদের কাজের দীর্ঘস্থায়ী ও সেইসঙ্গে তাৎক্ষণিক ফলাফলগুলোকে বিবেচনা করা। চিন্তা করার ক্ষমতা থাকলে, কোন পদক্ষেপ নেওয়ার আগে আমরা খুব মন দিয়ে আমাদের বিষয়গুলো ভেবে দেখব, বিশেষ করে যখন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিতে হয়।

চিন্তা করার ক্ষমতা নিয়ে একজন ব্যক্তি যখন ভবিষ্যৎ অথবা তার বর্তমান পরিস্থিতি সম্বন্ধে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেন, তখন তিনি প্রথমে সম্ভাব্য ঝুঁকি অথবা ফাঁদগুলো বিশ্লেষণ করেন। সম্ভাব্য বিপদগুলোকে একবার শনাক্ত করা হয়ে গেলে, সেগুলোকে তিনি কীভাবে এড়াতে পারেন সেই সংকল্প নেন এবং তার পরিবেশ ও বন্ধুবান্ধবদের ওপর তা কেমন প্রভাব ফেলবে সেটা বিবেচনা করেন। এইভাবে, তিনি এমন একটা উপায়ের পরিকল্পনা করতে পারেন, যা ভাল ফলাফল, এমনকি ঈশ্বরের অনেক আশীর্বাদ নিয়ে আসবে। আসুন আমরা কয়েকটা ব্যবহারিক উদাহরণ বিবেচনা করে দেখি, যা এই পদ্ধতিকে স্পষ্ট করে তোলে।

যৌন অনৈতিকতার ফাঁদ এড়িয়ে চলুন

প্রবল বাতাস যখন উত্তাল ঢেউগুলোকে নৌকার সামনের দিকে ঠেলে দেয়, তখন সেই পরিস্থিতিকে হেড সি হিসেবে বর্ণনা করা হয়। নৌকা উলটে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়ে নাবিকরা দক্ষতার সঙ্গে সামনের দিক থেকে আসা ঢেউগুলো মোকাবিলা করে।

আমরাও একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হই, কারণ আমরা যৌনতায় ভরা এক জগতে বাস করছি। প্রত্যেক দিন, কামুক ধারণা ও কল্পনার ঢেউ আমাদের সামনে আসে। আমাদের স্বাভাবিক যৌন কামনার ওপর এগুলোর যে-প্রভাব রয়েছে, সেটা আমরা উপেক্ষা করতে পারি না। বিপদজনক পরিস্থিতির মধ্যে ভেসে না গিয়ে আমাদের অবশ্যই চিন্তা করার ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে এবং চূড়ান্তভাবে প্রলোভনের মোকাবিলা করতে হবে।

উদাহরণ হিসেবে খ্রীষ্টান পুরুষরা, প্রায়ই এমন লোকেদের সঙ্গে কাজ করে যারা স্ত্রীলোকদের তেমন একটা সম্মান করে না এবং তাদেরকে কেবল ভোগের সামগ্রী বলে মনে করে। সহকর্মীরা হয়তো তাদের কথাবার্তায় নোংরা কৌতুক ও যৌনতার বিষয়ে আজেবাজে মন্তব্য করতে পারে। এই পরিবেশ শেষ পর্যন্ত একজন খ্রীষ্টানের মনের মধ্যে অনৈতিক ধারণাগুলো গেঁথে দিতে পারে।

এ ছাড়া, একজন খ্রীষ্টান মহিলাকেও হয়তো চাকরি করতে হয় আর তাই তাকেও হয়তো বিভিন্ন সমস্যা ভোগ করতে হয়। তিনি হয়তো এমন পুরুষ ও মহিলাদের সঙ্গে কাজ করেন, যারা তার নৈতিক মানগুলোকে মেনে চলে না। তার একজন পুরুষ সহকর্মী হয়তো তার প্রতি আগ্রহ দেখাতে পারে। প্রথম প্রথম সে হয়তো খ্রীষ্টান মহিলার সঙ্গে বিবেচনা দেখিয়ে ব্যবহার করে, এমনকি তার ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিগুলোর জন্য তাকে সম্মান করে। ওই পুরুষ সহকর্মীর অনবরত মনোযোগ ও ঘনিষ্ঠতা তাকে ওই ব্যক্তির আরও সান্নিধ্যে আসতে পরিচালিত করতে পারে।

খ্রীষ্টান হিসেবে, চিন্তা করার ক্ষমতা কীভাবে আমাদের এরকম পরিস্থিতিগুলোতে সাহায্য করতে পারে? প্রথমত, এটা আমাদের আধ্যাত্মিক বিপদগুলো সম্বন্ধে সাবধান করে দিতে পারে এবং দ্বিতীয়ত, এটা সঠিক পদক্ষেপ নিতে পরিচালিত করতে পারে। (হিতোপদেশ ৩:২১-২৩) এরকম পরিস্থিতিগুলোতে সহকর্মীদেরকে হয়তো স্পষ্টভাবে বলতে হতে পারে যে, শাস্ত্রীয় বিশ্বাসের কারণে আমাদের মানগুলো আলাদা। (১ করিন্থীয় ৬:১৮) আমাদের কথাবার্তা ও আচরণ সেই বার্তাকে শক্তিশালী করতে পারে। এ ছাড়া, কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে ওঠাবসা করা হয়তো কমিয়ে দেওয়ার দরকার হতে পারে।

কিন্তু, অনৈতিক চাপগুলো কেবল কাজের জায়গা থেকেই আসে না। এক বিবাহিত দম্পতি যদি সমস্যাগুলোকে তাদের একতাকে নষ্ট করার সুযোগ দেয়, তা হলেও এইরকম চাপ আসতে পারে। একজন ভ্রমণ পরিচারক লক্ষ করেছিলেন: “হঠাৎ করে কোন বিয়ে ভেঙে যায় না। দম্পতিরা হয়তো আস্তে আস্তে একে অপরের কাছ থেকে আলাদা হতে থাকে, একে অন্যের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কথা বলে বা একসঙ্গে সময় কাটায়। তাদের বিবাহের শূন্যতা মেটানোর জন্য তারা হয়তো ধনসম্পদের পিছনে ছোটে। আর যেহেতু তারা একে অন্যের প্রশংসা তেমন একটা করে না, তাই তারা হয়তো অন্য বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিদের প্রতি আকৃষ্ট হয়।”

এই অভিজ্ঞ পরিচারক আরও বলেন: “বিবাহ সাথিদের নিয়মিত একসঙ্গে বসা এবং কোন কিছু তাদের সম্পর্কের ক্ষতি করছে কি না, তা নিয়ে কথা বলা উচিত। কীভাবে তারা একসঙ্গে অধ্যয়ন, প্রার্থনা ও প্রচার করতে পারেন, সে বিষয়ে তাদের পরিকল্পনা করা উচিত। ঠিক যেমন বাবামা ও ছেলেমেয়েরা করে থাকে তেমনই তারা ‘গৃহে, পথে, শয়ন কিম্বা গাত্রোত্থান কালে’ একে অপরের সঙ্গে কথা বলে অনেক উপকার পাবে।”—দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৭-৯.

অখ্রীষ্টীয় আচরণের সঙ্গে মোকাবিলা করা

নৈতিক প্রলোভনগুলোকে সফলভাবে মোকাবিলা করতে সাহায্য করা ছাড়াও, চিন্তা করার ক্ষমতা আমাদেরকে সহ খ্রীষ্টানদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সমস্যাগুলোকে মোকাবিলা করতে সাহায্য করতে পারে। বাতাস যখন ঢেউগুলোকে নৌকার পিছনের দিকে ঠেলে দেয়, তখন সেই পরিস্থিতি ফলোয়িং সি বলে পরিচিত হয়। ঢেউগুলো নৌকার পশ্চাদ্‌ভাগকে উঁচুতে তুলতে পারে আর তারপর পাশের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এটা নৌকাকে ঢেউগুলোর গতির সঙ্গে সঙ্গে একপাশে ঠেলে নিয়ে যায় আর সেগুলোর দ্বারা এর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আমরাও অপ্রত্যাশিত কোন জায়গা থেকে আসা বিপদকে মোকাবিলা করতে পারব। আমাদের অনেক বিশ্বস্ত খ্রীষ্টান ভাইবোনের সঙ্গে আমরা “একযোগে” যিহোবাকে সেবা করি। (সখনিয় ৩:৯) তাদের মধ্যে একজন যদি অখ্রীষ্টীয় আচরণ দেখায়, তা হলে সে আস্থা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে হতে পারে এবং তা আমাদের গভীর চিন্তায় ফেলতে পারে। চিন্তা করার ক্ষমতা কীভাবে আমাদের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা থেকে এবং অত্যধিক আঘাত পাওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে?

মনে করে দেখুন যে, “পাপ না করে এমন কোন মনুষ্য নাই।” (১ রাজাবলি ৮:৪৬) তাই, একজন খ্রীষ্টান ভাই হয়তো কখনও আমাদের অপমান বা অসন্তুষ্ট করতে পারেন আর এতে আমাদের অবাক হওয়ার কিছু নেই। এটা জেনে, আমরা সেই সম্ভাব্য ঘটনার জন্য তৈরি থাকতে পারি এবং কীভাবে আমাদের প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত সে বিষয়ে চিন্তা করতে পারি। কিছু খ্রীষ্টান ভাই যখন প্রেরিত পৌলকে কষ্ট দিয়ে এবং উদ্ধতভাবে কথা বলেছিলেন, তখন তিনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? আধ্যাত্মিক ভারসাম্য না হারিয়ে, তিনি এই উপসংহারে এসেছিলেন যে, মানুষের চেয়ে বরং যিহোবার অনুমোদন লাভ করাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। (২ করিন্থীয় ১০:১০-১৮) এইরকম মনোভাব থাকা আমাদের অন্যের ব্যবহারে বিরক্ত হয়ে সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখানো এড়াতে সাহায্য করবে।

এটা ঠিক যেন হোঁচট খাওয়ার মতো। তা যখন ঘটে, তখন আমরা হয়তো এক অথবা দুমিনিট শান্তভাবে বসে চিন্তা করি না। কিন্তু ব্যথা কিছুটা কমে গেলে, আমরা যুক্তি করতে এবং স্বাভাবিক আচরণ করতে পারি। একইভাবে, রূঢ় মন্তব্য অথবা নির্দয় কাজের প্রতি আমাদের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত নয়। এর বদলে, একটু থামুন এবং মূর্খের মতো প্রতিশোধ নেওয়ার ফলাফলের কথা ভাবুন।

ম্যালকম, যিনি অনেক বছর ধরে একজন মিশনারি হিসেবে সেবা করছেন, তিনি বলেন যে অসন্তুষ্ট হলে তিনি কী করেন। “প্রথমে যে-কাজটা আমি করি, তা হল আগে থেকে তৈরি করা প্রশ্নের এই তালিকাটা পরীক্ষা করা: ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্বের কারণে আমি কি এই ভাইয়ের ওপর রাগ করেছি? তিনি যা বলেছেন, তা কি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ? আমার নার্ভে ম্যালেরিয়ার যে-প্রভাব রয়েছে সেটা কি আমার অনুভূতিগুলোকে তীব্র করছে? কয়েক ঘন্টার মধ্যেই কি বিষয়গুলোকে আমি ভিন্নভাবে দেখব?” ম্যালকম যেমন দেখেছেন, প্রায়ই মতভেদ তেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয় না এবং এটাকে উপেক্ষা করা যেতে পারে। *

ম্যালকম আরও বলেন: “কখনও কখনও, পরিস্থিতির মীমাংসা করার জন্য সবরকম চেষ্টা সত্ত্বেও, অন্য ভাইয়ের মনোভাব খারাপই থেকে যায়। আমি চেষ্টা করি এটা যেন আমাকে মনমরা না করে। আমার সাধ্যমতো করার পর, আমি বিষয়টা অন্যভাবে দেখি। বিষয়টা ব্যক্তিগতভাবে আমাকে সমাধান করতে হবে এমন মনে না করে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেটা আপনা আপনি ঠিক হয়ে যাবে, এই ভেবে ছেড়ে দিই। এই বিষয়টাকে আমি আমার আধ্যাত্মিক অবস্থার ক্ষতি করতে অথবা যিহোবা এবং ভাইদের সঙ্গে আমার সম্পর্ককে নষ্ট করতে সুযোগ দেব না।”

ম্যালকমের মতো, আমাদেরও একজনের অন্যায় ব্যবহারের কারণে নিজেদের অত্যধিক মনমরা হতে দেওয়া উচিত নয়। প্রত্যেকটা মণ্ডলীতে আনন্দিত, বিশ্বস্ত অনেক ভাইবোন রয়েছেন। তাদের সঙ্গে “পাশাপাশি” খ্রীষ্টীয় পথে চলা আনন্দের বিষয়। (ফিলিপীয় ১:২৭, NW) এ ছাড়া, স্বর্গীয় পিতার প্রেমময় সমর্থনের কথা মনে রাখা, বিষয়গুলোকে আমাদের বাস্তব দৃষ্টিতে দেখতে সাহায্য করবে।—গীতসংহিতা ২৩:১-৩; হিতোপদেশ ৫:১, ২; ৮:১২.

জগতের বিষয়গুলোকে প্রেম না করা

চিন্তা করার ক্ষমতা আমাদের আরেকটা সূক্ষ্ম চাপের মোকাবিলা করতে সাহায্য করতে পারে। বাতাস যখন ঢেউগুলোকে জাহাজের নোঙরের দিকে অথবা পাশে ঠেলে দেয়, তখন তা বিম সি নামে পরিচিত হয়। স্বাভাবিক আবহাওয়ায়, এইরকম বিম সি নৌকাকে হয়তো তার নির্ধারিত লক্ষ্যে যাওয়া থেকে আস্তে আস্তে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু, ঝড়ের সময় বিম সি নৌকাকে উলটে দিতে পারে।

একইভাবে, দুষ্ট জগৎ যে-সমস্ত সুখভোগের প্রস্তাব দেয়, সেই চাপের কাছে যদি আমরা হার মানি, তা হলে এই বস্তুবাদী জীবনধারা আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে পথভ্রষ্ট করতে পারে। (২ তীমথিয় ৪:১০) যদি অসংযত হই, তা হলে জগতের প্রতি প্রেম শেষ পর্যন্ত আমাদের খ্রীষ্টীয় পথ পুরোপুরি পরিত্যাগ করার কারণ হতে পারে। (১ যোহন ২:১৫) চিন্তা করার ক্ষমতা কীভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে?

প্রথমত, এটা আমাদের ভেবে দেখতে সাহায্য করবে যে, আমরা কোন্‌ বিপদগুলোর মুখোমুখি হতে পারি। আমাদেরকে প্রলোভিত করতে আমাদের কল্পনার মধ্যে রয়েছে, এমন প্রত্যেকটা কৌশলকে জগৎ কাজে লাগায়। সবসময় এটা এমন এক জীবনধারাকে তুলে ধরে যেন মনে হবে প্রত্যেকের তা অনুসরণ করা উচিত—ধনী ব্যক্তিদের জাঁকজমকপূর্ণ, আকর্ষণীয় এবং “সফল” জীবনধারা। (১ যোহন ২:১৬) আমাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে যে, আমরা সকলের বিশেষ করে আমাদের সঙ্গীসাথি ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে প্রশংসা এবং অনুমোদন পাব। যেহেতু যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছেন, ‘তিনি কোন ক্রমে আমাদের ছাড়িবেন না,’ তাই চিন্তা করার ক্ষমতা আমাদের ‘ধনাসক্তিবিহীন হওয়ার’ গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দিয়ে এই অপপ্রচারের মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে।—ইব্রীয় ১৩:৫.

দ্বিতীয়ত, চিন্তা করার ক্ষমতা আমাদের সেই লোকেদের অনুসরণ করা থেকে বিরত করবে যারা “সত্যের সম্বন্ধে লক্ষ্যভ্রষ্ট হইয়াছে।” (২ তীমথিয় ২:১৮) যাদের আমরা পছন্দ করেছি এবং বিশ্বাস করেছি, তাদের অস্বীকার করা খুবই কঠিন। (১ করিন্থীয় ১৫:১২, ৩২-৩৪) যারা খ্রীষ্টীয় পথ পরিত্যাগ করেছে তাদের দ্বারা যদি আমরা সামান্যভাবেও প্রভাবিত হই, তা হলেও এটা আমাদের আধ্যাত্মিক উন্নতিকে ব্যাহত করতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত আমাদের বিপদে ফেলতে পারে। আমরা এমন একটা জাহাজের মতো হতে পারি যেটা এর যথার্থ পথ থেকে সামান্য সরে এসেছে। অনেকখানি পথ যাত্রা করার পর, এইরকম একটা জাহাজ তার গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারে না।—ইব্রীয় ৩:১২.

চিন্তা করার ক্ষমতা আমাদের এটা নির্ধারণ করতে সাহায্য করতে পারে যে, আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে আমরা কোথায় আছি এবং কোথায় যাচ্ছি। আমরা হয়তো খ্রীষ্টীয় কাজগুলোতে পুরোপুরি অংশ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করি। (ইব্রীয় ৬:১১, ১২) আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোকে অনুসরণ করতে সাহায্য করার জন্য একজন অল্পবয়স্ক সাক্ষি কীভাবে চিন্তা করার ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়েছিল, তা লক্ষ করুন: “সাংবাদিকতার বৃত্তি অনুসরণ করার সুযোগ আমার ছিল। এটা আমার কাছে সত্যিই আকর্ষণীয় ছিল কিন্তু আমি বাইবেলের সেই পদটাকে মনে রেখেছিলাম যেটা বলে যে, “জগৎ . . . বহিয়া যাইতেছে” কিন্তু “যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।” (১ যোহন ২:১৭) আমি যুক্তি দেখিয়েছিলাম যে, আমার জীবনযাপনে আমার বিশ্বাস প্রতিফলিত করা উচিত। আমার বাবামা খ্রীষ্টীয় বিশ্বাস পরিত্যাগ করেছিল আর আমি তাদের উদাহরণ অনুসরণ করতে চাইনি। তাই, আমি এক উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবনযাপনের সিদ্ধান্ত নিই এবং একজন নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা শুরু করি। চারটে সন্তোষজনক বছর পার করার পর আমি জানি যে, আমি সঠিক বিষয়টাই বেছে নিয়েছিলাম।”

আধ্যাত্মিক ঝড়গুলোকে সফলভাবে প্রতিরোধ করা

আজকে আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতাকে ব্যবহার করা কেন জরুরি? বিপদ সংকেতগুলোর প্রতি নাবিকদের সতর্ক থাকতে হবে, বিশেষ করে যখন ঝড় শুরু হয়। তাপমাত্রা যদি শীঘ্রই নেমে যায় এবং বাতাস প্রবল হতে থাকে, তা হলে তারা জাহাজের ডেকের গর্ত করা দরজায় তেরপল আটকানোর জন্য ব্যবহৃত তক্তাকে শক্ত করেন আর তারপর আরও প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য তৈরি হন। একইভাবে, এই দুষ্ট ব্যবস্থা যতই তার শেষের দিকে এগিয়ে আসছে, আমাদেরও বড় বড় চাপের মুখোমুখি হওয়ার জন্য তৈরি থাকতে হবে। সমাজের নৈতিক কাঠামো প্রকাশ হয়ে পড়ছে এবং ‘দুষ্ট লোকেরা উত্তর উত্তর কুপথে অগ্রসর’ হচ্ছে। (২ তীমথিয় ৩:১৩) ঠিক যেমন নাবিকরা নিয়মিত আবহাওয়ার পূর্বাভাস শোনে, তেমনই আমাদেরও ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্যের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক সাবধানবাণী শুনতে হবে।—গীতসংহিতা ১৯:৭-১১.

আমরা যখন চিন্তা করার ক্ষমতাকে কাজে লাগাই, তখন আমরা সেই জ্ঞানকে প্রয়োগ করি, যা অনন্ত জীবনের পথে নিয়ে যায়। (যোহন ১৭:৩) আমরা সমস্যাগুলো আশা করতে পারি এবং কীভাবে সেগুলো কাটিয়ে ওঠা যায়, তা স্থির করতে পারি। এইভাবে আমরা খ্রীষ্টীয় পথ থেকে সরে না যেতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হব আর আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোকে স্থাপন ও অনুসরণ করার দ্বারা আমরা “ভাবীকালের জন্য উত্তম ভিত্তিমূলস্বরূপ নিধি” গেঁথে তুলতে পারি।—১ তীমথিয় ৬:১৯.

আমরা যদি ব্যবহারিক প্রজ্ঞা ও চিন্তা করার ক্ষমতা রক্ষা করি, তা হলে আমাদের ‘আকস্মিক বিপদ হইতে ভীত হইবার’ দরকার নেই। (হিতোপদেশ ৩:২১, ২৫, ২৬) বরং, আমরা ঈশ্বরের এই প্রতিজ্ঞা থেকে সান্ত্বনা পেতে পারি: “কেননা প্রজ্ঞা তোমার হৃদয়ে প্রবেশ করিবে, জ্ঞান তোমার প্রাণের তুষ্টি জন্মাইবে, পরিণামদর্শিতা তোমার প্রহরী হইবে, বুদ্ধি তোমাকে রক্ষা করিবে।”—হিতোপদেশ ২:১০, ১১.

[পাদটীকা]

^ মথি ৫:২৩, ২৪ পদের পরামর্শের সঙ্গে মিল রেখে, খ্রীষ্টানদের শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করা উচিত। বিষয়টা যদি গুরুতর পাপের সঙ্গে জড়িত থাকে, তা হলে মথি ১৮:১৫-১৭ পদে যেমন উল্লেখ করা আছে, ভাইকে লাভ করার জন্য তাদের চেষ্টা করা উচিত। ১৯৯৯ সালের ১৫ই অক্টোবর প্রহরীদুর্গ এর ১৭-২২ পৃষ্ঠা দেখুন।

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

নিয়মিত ভাববিনিময় বিবাহকে মজবুত করে