সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“এ ব্যক্তি যেরূপ কথা বলেন, কোন মানুষে কখনও এরূপ কথা কহে নাই”

“এ ব্যক্তি যেরূপ কথা বলেন, কোন মানুষে কখনও এরূপ কথা কহে নাই”

“এ ব্যক্তি যেরূপ কথা বলেন, কোন মানুষে কখনও এরূপ কথা কহে নাই”

“সকলে তাঁহার বিষয়ে সাক্ষ্য দিল, ও তাঁহার মুখনির্গত মধুর বাক্যে আশ্চর্য্য বোধ করিল।”লূক ৪:২২.

১, ২. (ক) যীশুকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসার জন্য যে-পদাতিকদের পাঠানো হয়েছিল, তারা কেন খালি হাতে ফিরে এসেছিল? (খ) কোন্‌ বিষয়টা দেখায় যে, শুধুমাত্র পদাতিকেরাই যে যীশুর শিক্ষার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল, তা নয়?

 পদাতিকেরা তাদের কাজে সফল হতে পারেনি। যীশুকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসার জন্য তাদের পাঠানো হয়েছিল কিন্তু তারা খালি হাতে ফিরে আসে। প্রধান যাজকরা ও ফরীশীরা এর কারণ জানতে চেয়ে বলে: “তাহাকে আন নাই কেন?” আসলে, যে-ব্যক্তি কোন প্রতিরোধ করেননি, তাঁকে পদাতিকেরা গ্রেপ্তার করেনি কেন? পদাতিকেরা ব্যাখ্যা করে: “এ ব্যক্তি যেরূপ কথা বলেন, কোন মানুষে কখনও এরূপ কথা কহে নাই।” যীশুর শিক্ষার দ্বারা তারা এতই প্রভাবিত হয়েছিল যে, এই শান্তিপ্রিয় ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে আসার পিছনে কোন যুক্তিই তারা খুঁজে পায়নি। *যোহন ৭:৩২, ৪৫, ৪৬.

তবে, শুধুমাত্র এই পদাতিকেরাই যে যীশুর শিক্ষার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল, তা নয়। বাইবেল আমাদের বলে যে, শুধু তাঁর কথা শোনার জন্য অসংখ্য লোক তাঁর কাছে আসত। তাঁর নিজ নগরের লোকেরা “তাঁহার মুখনির্গত মধুর বাক্যে” আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিল। (লূক ৪:২২) একাধিকবার তিনি গালীল সমুদ্রের তীরে জড়ো হওয়া বিরাট জনতার সামনে নৌকায় বসে কথা বলেছিলেন। (মার্ক ৩:৯; ৪:১; লূক ৫:১-৩) একবার “লোকের ভিড়” এমনকি অভুক্ত অবস্থায় কয়েকদিন তাঁর সঙ্গে ছিল।—মার্ক ৮:১, ২.

৩. যীশুর এইরকম এক অসাধারণ শিক্ষক হওয়ার পিছনে মূল কারণটা কী ছিল?

কোন্‌ বিষয়টা যীশুকে একজন অসাধারণ শিক্ষক করে তুলেছিল? এর মূল কারণটা ছিল প্রেম। * যীশু যে-সত্যগুলো জানিয়েছিলেন, সেগুলোকে এবং যাদের তিনি শিক্ষা দিতেন, সেই লোকেদের ভালবাসতেন। এ ছাড়া, শিক্ষাপদ্ধতির ব্যাপারে যীশুর এক অসাধারণ ক্ষমতা ছিল। এই সংখ্যায় দেওয়া অধ্যয়ন প্রবন্ধগুলোতে আমরা তাঁর ব্যবহৃত কিছু কার্যকারী পদ্ধতি ও কীভাবে আমরা সেগুলো অনুকরণ করতে পারি, সেই বিষয়ে আলোচনা করব।

সরলতা এবং স্পষ্টতা

৪, ৫. (ক) যীশু কেন তাঁর শিক্ষায় সহজ ভাষা ব্যবহার করেছিলেন এবং তিনি যে তা করেছিলেন, সেটা কেন উল্লেখযোগ্য বিষয়? (খ) কীভাবে পাহাড়ে দেওয়া উপদেশ সরলতার একটা উদাহরণ, যার মাধ্যমে যীশু শিক্ষা দিতেন?

শিক্ষিত ব্যক্তিদের পক্ষে এমন সব ভাষা ব্যবহার করা কোন অস্বাভাবিক বিষয় নয়, যা তাদের শ্রোতাদের বোধগম্যের বাইরে। কিন্তু, আমাদের কথা যদি অন্যরা না-ই বুঝতে পারে, তা হলে আমাদের জ্ঞান থেকে তারা কীভাবে উপকার পাবে? একজন শিক্ষক হিসেবে যীশু কখনও এমনভাবে কথা বলতেন না, যা অন্যদের পক্ষে বোধাতীত ছিল। ভেবে দেখুন যে, কী বিশাল শব্দভাণ্ডার তাঁর আয়ত্তের মধ্যে ছিল। কিন্তু, তাঁর এই অসীম জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও তিনি তাঁর শ্রোতাদের বিষয়ে চিন্তা করতেন, নিজের বিষয়ে নয়। তিনি জানতেন যে, তাদের মধ্যে অনেকে “অশিক্ষিত সামান্য” ছিল। (প্রেরিত ৪:১৩) তাদের হৃদয়ে পৌঁছানোর জন্য তিনি এমন ভাষা ব্যবহার করতেন, যাতে এই লোকেরা তা বুঝতে পারে। শব্দগুলো হয়তো সরল ছিল কিন্তু সেগুলো যে-সত্য প্রকাশ করত, তা অনেক গভীর জ্ঞানপূর্ণ ছিল।

উদাহরণ হিসেবে, মথি ৫:৩–৭:২৭ পদে বর্ণিত পাহাড়ে দেওয়া উপদেশের কথা বিবেচনা করুন। সেই উপদেশ দিতে যীশুর হয়তো মাত্র ২০ মিনিট লেগেছিল। কিন্তু, এর শিক্ষাগুলো গভীর ছিল এবং ব্যভিচার, বিবাহবিচ্ছেদ ও বস্তুবাদিতার মতো বিষয়গুলোর একেবারে মূলে গিয়ে পৌঁছেছিল। (মথি ৫:২৭-৩২; মথি ৬:১৯-৩৪) কিন্তু, সেখানে কোন জটিল বা বাগাড়ম্বরপূর্ণ অভিব্যক্তি ছিল না। বস্তুত, সেখানে এমন কোন শব্দ ছিল না, যা কিনা একটা ছোট শিশুর পক্ষে বোঝা কঠিন হবে! তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, তিনি যখন তাঁর কথা শেষ করেছিলেন, তখন জনতা—সম্ভবত এর মধ্যে অনেক কৃষক, মেষপালক এবং জেলেও ছিল—“তাঁহার উপদেশে চমৎকার জ্ঞান করিল”!—মথি ৭:২৮.

৬. যীশু যে-কথাগুলো বলতেন, সেগুলো কীভাবে সরল অথচ অনেক অর্থপূর্ণ ছিল, তার একটা উদাহরণ দিন।

প্রায়ই স্পষ্ট এবং সংক্ষিপ্ত অভিব্যক্তি ব্যবহার করে যীশু যে-কথাগুলো বলতেন, সেগুলো সরল কিন্তু অনেক অর্থপূর্ণ ছিল। সেই যুগে যখন ছাপানো বই বেরও হয়নি, তখনও তিনি এইভাবে তাঁর বার্তা শ্রোতাদের মনে ও হৃদয়ে গভীরভাবে ছেপে দিতেন। কিছু উদাহরণ লক্ষ করুন: “কেহই দুই কর্ত্তার দাসত্ব করিতে পারে না; . . . তোমরা ঈশ্বর এবং ধন উভয়ের দাসত্ব করিতে পার না।” “তোমরা বিচার করিও না, যেন বিচারিত না হও।” “তোমরা উহাদের ফল দ্বারাই উহাদিগকে চিনিতে পারিবে।” “সুস্থ লোকদের চিকিৎসকে প্রয়োজন নাই, বরং পীড়িতদেরই প্রয়োজন আছে।” “যে সকল লোক খড়্গ ধারণ করে, তাহারা খড়্গ দ্বারা বিনষ্ট হইবে।” “কৈসরের যাহা যাহা, কৈসরকে দেও, আর ঈশ্বরের যাহা যাহা, ঈশ্বরকে দেও।” “গ্রহণ করা অপেক্ষা বরং দান করা ধন্য হইবার বিষয়।” * (মথি ৬:২৪; ৭:১, ২০; ৯:১২; ২৬:৫২; মার্ক ১২:১৭; প্রেরিত ২০:৩৫) যীশু এই কথাগুলো বলার প্রায় ২,০০০ বছর পর, আজও এই প্রভাবশালী অভিব্যক্তিগুলো সহজেই মনে করা যায়।

প্রশ্নের ব্যবহার

৭. কেন যীশু প্রশ্ন করতেন?

যীশু অসাধারণভাবে প্রশ্নের ব্যবহার করেছিলেন। তিনি প্রায়ই তা করতেন, এমনকি যদিও তাঁর শ্রোতাদের সরাসরি উত্তর বলে দিলে এতে কম সময় লাগত। তা হলে, কেন তিনি প্রশ্ন করতেন? কখনও কখনও তিনি তাঁর বিরোধীদের মনোভাব প্রকাশ করে দেওয়ার জন্য মর্মভেদী প্রশ্ন করতেন এবং এভাবে তাদের মুখ বন্ধ করে দিতেন। (মথি ১২:২৪-৩০; ২১:২৩-২৭; ২২:৪১-৪৬) কিন্তু, বহু ক্ষেত্রে যীশু সত্য জানানোর জন্য, তাঁর শ্রোতারা যেন তাদের হৃদয়ের কথা প্রকাশ করতে পারে তার জন্য এবং তাঁর শিষ্যদের চিন্তাধারাকে জাগ্রত ও গঠিত করার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করার জন্য সময় করে নিতেন। আসুন আমরা দুটো উদাহরণ পরীক্ষা করি আর এই দুটো উদাহরণই প্রেরিত পিতরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।

৮, ৯. মন্দিরে কর দেওয়ার বিষয়ে সঠিক উপসংহারে আসতে পিতরকে সাহায্য করার জন্য যীশু কীভাবে প্রশ্নের ব্যবহার করেছিলেন?

প্রথমে, সেই ঘটনাটা মনে করে দেখুন যখন যীশু মন্দিরের কর দেন কি না, সেই বিষয়ে করগ্রাহীরা পিতরকে প্রশ্ন করেছিল। * পিতর, যিনি কখনও কখনও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তেন, তিনি উত্তরে “হ্যাঁ” (NW) বলেছিলেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর, যীশু তাকে যুক্তি দেখান: “শিমোন, তোমার কেমন বোধ হয়? পৃথিবীর রাজারা কাহাদের হইতে কর বা রাজস্ব গ্রহণ করিয়া থাকেন? কি আপন সন্তানদের হইতে না অন্য লোক হইতে? পিতর কহিলেন, অন্য লোক হইতে। তখন যীশু তাঁহাকে কহিলেন, তবে সন্তানেরা স্বাধীন।” (মথি ১৭:২৪-২৭) যীশুর প্রশ্নের মুখ্য বিষয়টা পিতরের স্পষ্ট বোঝা উচিত ছিল। কেন?

যীশুর দিনে রাজপরিবারের সদস্যদের কর দেওয়া থেকে অব্যাহতি দেওয়া হতো। তাই, মন্দিরে যাঁর উপাসনা হতো, সেই স্বর্গীয় রাজার একজাত পুত্র হিসেবে যীশু কর দিতে বাধ্য ছিলেন না। লক্ষ করুন যে, পিতরকে সঠিক উত্তরটা বলে দেওয়ার বদলে যীশু কার্যকারী উপায়ে কিন্তু নম্রভাবে প্রশ্ন ব্যবহার করে তাকে সঠিক উপসংহারে আসতে সাহায্য করেছিলেন—আর সম্ভবত কোন কিছু বলার আগে আরও ভালভাবে চিন্তা করার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে বুঝতে সাহায্য করেছিলেন।

১০, ১১. সাধারণ কাল ৩৩ সালে নিস্তারপর্বের রাতে পিতর যখন একজন লোকের কান কেটে ফেলেছিলেন, তখন যীশু কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন এবং কীভাবে এটা দেখায় যে, যীশু প্রশ্নের গুরুত্ব উপলব্ধি করতেন?

১০ দ্বিতীয় উদাহরণটা সা.কা. ৩৩ সালে নিস্তারপর্বের রাতে ঘটা ঘটনাটার সঙ্গে জড়িত, যখন জনতা যীশুকে ধরতে এসেছিল। শিষ্যরা যীশুকে জিজ্ঞেস করেছিল যে, তাঁকে রক্ষা করার জন্য তারা লড়াই করবে কি না। (লূক ২২:৪৯) উত্তরের অপেক্ষা না করে, পিতর একটা তরবারি দিয়ে একজন লোকের কান কেটে ফেলেছিলেন (যদিও পিতরের হয়তো আরও গুরুতর ক্ষতি করার উদ্দেশ্য ছিল)। পিতর তাঁর প্রভুর ইচ্ছার বিপরীতে কাজ করেছিলেন কারণ যীশু নিজেকে ধরা দেওয়ার জন্য পুরোপুরি তৈরি ছিলেন। যীশু কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? চিরাচরিত স্বভাব অনুযায়ী ধৈর্য দেখিয়ে তিনি পিতরকে তিনটে প্রশ্ন করেছিলেন: “পিতা আমাকে যে পানপাত্র দিয়াছেন তাহাতে আমি কি পান করিব না?” “তুমি কি মনে কর যে, আমি আমার পিতার কাছে বিনতি করিলে তিনি এখনই আমার জন্য দ্বাদশ বাহিনী অপেক্ষা অধিক দূত পাঠাইয়া দিবেন না? কিন্তু তাহা করিলে কেমন করিয়া শাস্ত্রীয় এই বচন সকল পূর্ণ হইবে যে, এরূপ হওয়া আবশ্যক?”—যোহন ১৮:১১; মথি ২৬:৫২-৫৪.

১১ এক মুহূর্তের জন্য সেই ঘটনার কথা বিবেচনা করুন। যীশুর চারদিকে উত্তেজিত জনতা ঘিরে রয়েছে, তিনি জানতেন যে তাঁর মৃত্যু সন্নিকট এবং তাঁর পিতার নাম দোষমুক্ত হওয়া এবং মানব পরিবারের পরিত্রাণ তাঁর ওপর নির্ভর করছে। তবুও, সেই মুহূর্তে প্রশ্ন ব্যবহার করে পিতরের মনে গুরুত্বপূর্ণ সত্য গেঁথে দেওয়ার জন্য তিনি সময় করে নিয়েছিলেন। এটা কি স্পষ্ট নয় যে, যীশু প্রশ্নের গুরুত্ব উপলব্ধি করতেন?

স্পষ্ট অতিরঞ্জন

১২, ১৩. (ক) অতিরঞ্জন কী? (খ) আমাদের ভাইদের ছোটখাটো ভুলগুলোর সমালোচনা করা যে কতটা বোকামি, এই বিষয়টাকে জোর দেওয়ার জন্য যীশু কীভাবে অতিরঞ্জনের ব্যবহার করেছিলেন?

১২ যীশু তাঁর পরিচর্যায় প্রায়ই আরেকটা কার্যকারী শিক্ষাপদ্ধতির ব্যবহার করতেন আর সেটা হল অতিরঞ্জন। এটা হল কোন বিষয়কে জোর দেওয়ার উদ্দেশ্যে ইচ্ছে করে বাড়িয়ে বলা। অতিরঞ্জনের মাধ্যমে যীশু মনের মধ্যে এমন ছবি তুলে ধরতেন, যা সহজে ভোলা যেত না। আসুন আমরা কিছু উদাহরণ বিবেচনা করে দেখি।

১৩ পাহাড়ে দেওয়া উপদেশে অন্যদের “বিচার . . . না” করার ওপর জোর দিতে গিয়ে যীশু বলেছিলেন: “আর তোমার ভ্রাতার চক্ষে যে কুটা আছে, তাহাই কেন দেখিতেছ, কিন্তু তোমার নিজের চক্ষে যে কড়িকাট আছে, তাহা কেন ভাবিয়া দেখিতেছ না?” (মথি ৭:১-৩) আপনি কি দৃশ্যটা মনশ্চক্ষে কল্পনা করতে পারেন? যে-ব্যক্তির দোষ ধরার প্রবণতা রয়েছে, সে চায় যে তার ভাইয়ের “চক্ষে” যে-সামান্য কুটা আছে, তা বের করে দিতে। সমালোচক হয়তো দাবি করবে যে, তার ভাই বিষয়টাকে যথেষ্ট স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছে না আর তাই তার পক্ষে গ্রহণযোগ্য বিচার করা সম্ভবপর নয়। কিন্তু, সেই সমালোচকের বিচার করার নিজস্ব ক্ষমতাটাই “কড়িকাট” অর্থাৎ একটা গাছের গুড়ি বা বিম, যা হয়তো ছাদের ভারকে বহন করার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে, সেটার দ্বারা নষ্ট হয়ে গেছে। নিজেদের বড় বড় ভুল থাকা সত্ত্বেও আমাদের ভাইদের ছোটখাটো ভুলগুলোর সমালোচনা করা যে কতটা বোকামি, এই বিষয়টাকে জোর দেওয়ার কত অবিস্মরণীয় পন্থা!

১৪. মশা ছেঁকে উট গিলে ফেলা সম্বন্ধে যীশুর কথাগুলো বিশেষ করে কেন জোরালো অতিরঞ্জন ছিল?

১৪ আরেকটা পরিস্থিতিতে, যীশু ফরীশীদের এই বলে ভর্ৎসনা করেন, “অন্ধ পথ-দর্শকেরা, তোমরা মশা ছাঁকিয়া ফেল, কিন্তু উট গিলিয়া থাক।” (মথি ২৩:২৪) বিশেষ করে এটা ছিল একটা জোরালো অতিরঞ্জনের ব্যবহার। কেন? কারণ একটা ছোট্ট মশা আর একটা উট, যেটা যীশুর শ্রোতাদের কাছে সবচাইতে বড় পশু হিসেবে পরিচিত ছিল, এই দুয়ের মধ্যে যে বৈসাদৃশ্য, তা ছিল অত্যন্ত প্রকট। হিসেব করে দেখা গেছে, একটা উটের গড় ওজনের সমান হওয়ার জন্য ৭ কোটি মশার প্রয়োজন। এ ছাড়া, যীশু জানতেন যে, ফরীশীরা একটা ছাঁকনি দিয়ে তাদের দ্রাক্ষারস ছেঁকে নিত। নিয়মের প্রতি অটল, এই ব্যক্তিরা এটা করত যাতে করে তারা মশা গিলে ফেলার দ্বারা রীতিগতভাবে অশুচি হয়ে পড়া এড়াতে পারে। তবুও, তারা রূপক অর্থে উট গিলে ফেলত, যেটাও অশুচি ছিল। (লেবীয় পুস্তক ১১:৪, ২১-২৪) যীশুর বিষয়বস্তুটি ছিল স্পষ্ট। ফরীশীরা ব্যবস্থার খুঁটিনাটি বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে মেনে চলত কিন্তু বড় বড় বিষয়গুলো উপেক্ষা করত যেমন, “ন্যায়বিচার, দয়া ও বিশ্বাস।” (মথি ২৩:২৩) যীশু তাদের আসল ব্যক্তিত্ব কত স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে দিয়েছিলেন!

১৫. কয়েকটা শিক্ষামূলক উদাহরণ কী, যা যীশু অতিরঞ্জনের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছিলেন?

১৫ যীশু তাঁর সমগ্র পরিচর্যাকালে, প্রায়ই অতিরঞ্জন ব্যবহার করতেন। কিছু উদাহরণ বিবেচনা করুন। “একটী [ছোট] সরিষা-দানার ন্যায় বিশ্বাস” একটা পাহাড় সরিয়ে ফেলতে পারে—এমনকি সামান্য বিশ্বাসও যে অনেক বড় কিছু সম্পাদন করতে পারে, সেটার ওপর জোর দেওয়ার জন্য যীশু হয়তো এর চেয়ে আর ভাল কার্যকারী উপায় পেতে পারতেন না। (মথি ১৭:২০) একটা বড় উট একটা সূচের ছিদ্র দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করে—এই উদাহরণটা কত ভালভাবে দেখায় যে, বস্তুবাদী জীবনযাপন করার পাশাপাশি ঈশ্বরের সেবা করার চেষ্টা করা একজন ধনী ব্যক্তির পক্ষে কতটা কষ্টকর! (মথি ১৯:২৪) আপনি কি যীশুর এই স্পষ্ট বাক্যালঙ্কার ও অল্প কথায় বিরাট প্রভাব ফেলার ক্ষমতা দেখে আশ্চর্য হন না?

অখণ্ডনীয় যুক্তি

১৬. যীশুর সবসময় তাঁর সূক্ষ্ম মেধাশক্তিকে কোন্‌ উপায়ে ব্যবহার করতেন?

১৬ সিদ্ধ মন থাকায়, লোকেদের সঙ্গে যুক্তি সহকারে কারণ দেখানোর ক্ষেত্রে যীশু দক্ষ ছিলেন। তবুও, তিনি কখনও এই ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি। শিক্ষা দেওয়ার সময়, সত্যকে তুলে ধরতে তিনি সবসময় তাঁর সূক্ষ্ম মেধাশক্তিকে কাজে লাগাতেন। কখনও কখনও তিনি তাঁর ধর্মীয় বিরোধীদের মিথ্যা অভিযোগগুলো খণ্ডন করার জন্য জোরালো যুক্তি ব্যবহার করতেন। অনেক ক্ষেত্রে তাঁর শিষ্যদের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি যুক্তিযুক্ত কারণ ব্যবহার করতেন। আসুন, আমরা যীশুর যুক্তি ব্যবহার করার দক্ষতা সম্বন্ধে দেখি।

১৭, ১৮. ফরীশীদের মিথ্যা অভিযোগকে খণ্ডন করার জন্য যীশু কোন্‌ জোরালো যুক্তি ব্যবহার করেছিলেন?

১৭ সেই ঘটনাটার কথা বিবেচনা করে দেখুন যখন যীশু অন্ধ ও বধির এক ভূতগ্রস্ত ব্যক্তিকে সুস্থ্য করে তুলেছিলেন। এই ঘটনা শোনার পর ফরীশীরা বলেছিল: “এ ব্যক্তি আর কিছুতে নয়, কেবল ভূতগণের অধিপতি বেল্‌সবূলের [শয়তানের] দ্বারাই ভূত ছাড়ায়।” লক্ষ করুন, ফরীশীরা স্বীকার করেছিল যে, শয়তানের মন্দ আত্মাদের দূর করার জন্য অতিমানবীয় শক্তির প্রয়োজন। কিন্তু লোকেরা যাতে যীশুতে বিশ্বাস না করে, সেইজন্য তারা তাঁর ক্ষমতা শয়তানের কাছ থেকে এসেছে বলে জানায়। তারা যে তাদের তর্কের যুক্তিসংগত উপসংহার নিয়ে চিন্তা করেনি, সেটা দেখিয়ে যীশু উত্তর দিয়েছিলেন: “যে কোন রাজ্য আপনার বিপক্ষে ভিন্ন হয়, তাহা উচ্ছিন্ন হয়; এবং যে কোন নগর কিম্বা পরিবার আপনার বিপক্ষে ভিন্ন হয়, তাহা স্থির থাকিবে না। আর শয়তান যদি শয়তানকে ছাড়ায়, সে ত আপনারই বিপক্ষে ভিন্ন হইল; তবে তাহার রাজ্য কি প্রকারে স্থির থাকিবে?” (মথি ১২:২২-২৬) আসলে যীশু এটাই বলেছিলেন: ‘তোমাদের কথা অনুসারে আমি যদি শয়তানের একজন প্রতিনিধি হই এবং শয়তানের বিরুদ্ধে কাজ করি, তা হলে শয়তান তার নিজের বিপক্ষে কাজ করবে এবং শীঘ্রই পতিত হবে।’ খুবই জোরালো যুক্তি, তাই নয় কি?

১৮ এরপর যীশু এই বিষয়ে আরও কারণ দেখান। তিনি জানতেন যে, ফরীশীদের মধ্যে কেউ কেউ ভূত ছাড়িয়েছিল। তাই, তিনি সাধারণ অথচ জোরালো প্রশ্ন করেন। “আমি যদি বেল্‌সবূলের দ্বারা ভূত ছাড়াই, তবে তোমাদের সন্তানেরা [বা শিষ্যরা] কাহার দ্বারা ছাড়ায়?” (মথি ১২:২৭) এক অর্থে যীশুর যুক্তি এই ছিল: ‘আসলে আমি যদি শয়তানের ক্ষমতায় ভূত ছাড়াই, তা হলে তোমাদের শিষ্যরাও নিশ্চয়ই একই ক্ষমতার অধীনে কাজ করে।’ ফরীশীরা কী বলতে পারত? তারা কখনও স্বীকার করবে না যে, তাদের শিষ্যরা শয়তানের ক্ষমতার অধীনে কাজ করেছিল। অখণ্ডনীয় যুক্তির সাহায্যে, যীশু তাঁর বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগকে অযৌক্তিক করে তুলেছিলেন।

১৯, ২০. (ক) কোন্‌ ইতিবাচক উপায়ে যীশু যুক্তি ব্যবহার করেছিলেন? (খ) কীভাবে প্রার্থনা করতে হয়, তা শিখিয়ে দেওয়ার জন্য শিষ্যদের অনুরোধে সাড়া দিতে গিয়ে যীশু কীভাবে ‘কত অধিক নিশ্চয় যে,’ এই শব্দসমষ্টি দিয়ে যুক্তিযুক্ত কারণ ব্যবহার করেছিলেন?

১৯ যীশু তাঁর বিরোধীদের মুখ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য যুক্তি ব্যবহার করা ছাড়াও, যিহোবার বিষয়ে ইতিবাচক ও হৃদয়গ্রাহী সত্য শেখাতে তিনি যুক্তিসংগত এবং প্রত্যয় উৎপাদনকারী তর্কমূলক অভিব্যক্তির ব্যবহার করতেন। তাঁর শ্রোতারা যাতে পরিচিত সত্যের থেকে আরও অধিক প্রত্যয়ের দিকে এগিয়ে যেতে পারে এর জন্য সাহায্য করতে অনেকবার তিনি ‘কত অধিক নিশ্চয় যে,’ এই শব্দসমষ্টি দিয়ে যুক্তিযুক্ত কারণ ব্যবহার করেছিলেন। আসুন আমরা শুধু দুটো উদাহরণ বিবেচনা করি।

২০ কীভাবে প্রার্থনা করতে হয়, তা শিখিয়ে দেওয়ার জন্য শিষ্যদের অনুরোধে সাড়া দিতে গিয়ে যীশু একজন ব্যক্তির দৃষ্টান্ত দিয়েছিলেন, যার ‘আগ্রহের’ কারণে একজন বন্ধু, যে প্রথমে রাজি ছিল না কিন্তু অবশেষে তার অনুরোধ রাখতে বাধ্য হয়েছিল। এ ছাড়া, যীশু সন্তানদের “উত্তম উত্তম দ্রব্য” দেওয়ার বিষয়ে বাবামাদের ইচ্ছা সম্বন্ধেও বর্ণনা করেছিলেন। এরপর তিনি উপসংহারে বলেন: “তোমরা মন্দ হইয়াও যদি তোমাদের সন্তানদিগকে উত্তম উত্তম দ্রব্য দান করিতে জান, তবে ইহা কত অধিক নিশ্চয় যে, স্বর্গস্থ পিতা, যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে পবিত্র আত্মা দান করিবেন।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (লূক ১১:১-১৩) যীশু যে-বিষয়টা তুলে ধরেছিলেন, সেটার ভিত্তি সাদৃশ্যে নয় বরং বৈসাদৃশ্যে ছিল। অনিচ্ছুক এক বন্ধু যদি অবশেষে তার প্রতিবেশীর চাহিদা পূরণ করতে রাজি হয় এবং অসিদ্ধ বাবামা যদি তাদের সন্তানদের চাহিদাগুলোর প্রতি যত্ন নেয়, তা হলে আমাদের প্রেমময় স্বর্গীয় পিতা তাঁর অনুগত দাসদের, যারা নম্রভাবে প্রার্থনায় তাঁর কাছে আসে তাদের আরও কতই না অধিক পবিত্র আত্মা দেবেন!

২১, ২২. (ক) বস্তুগত বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্নতা আসলে, সেগুলোর সঙ্গে কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, সেই বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার সময় যীশু কোন্‌ কারণ ব্যবহার করেছিলেন? (খ) যীশুর কিছু শিক্ষাপদ্ধতি সম্বন্ধে পুনরালোচনা করার পর আমরা কোন্‌ উপসংহারে পৌঁছাই?

২১ বস্তুগত বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্নতা আসলে, সেগুলোর সঙ্গে কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, সেই বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার সময়ও যীশু একইধরনের কারণ ব্যবহার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “কাকদের বিষয় আলোচনা কর; তাহারা বুনেও না, কাটেও না; তাহাদের ভাণ্ডারও নাই, গোলাঘরও নাই; আর ঈশ্বর তাহাদিগকে আহার দিয়া থাকেন; পক্ষিগণ হইতে তোমরা কত অধিক শ্রেষ্ঠ! কানুড়পুষ্পের বিষয় বিবেচনা কর, সেগুলি কেমন বাড়ে; সে সকল কোন শ্রম করে না, সূতাও কাটে না, . . . ভাল, ক্ষেত্রের যে তৃণ আজ আছে ও কাল চুলায় ফেলিয়া দেওয়া যাইবে, তাহা যদি ঈশ্বর এরূপ বিভূষিত করেন, তবে হে অল্পবিশ্বাসীরা, তোমাদিগকে কত অধিক নিশ্চয় বিভূষিত করিবেন!” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (লূক ১২:২৪, ২৭, ২৮) হ্যাঁ, যিহোবা যদি পাখি এবং ফুলের যত্ন নেন, তা হলে তাঁর দাসদের তিনি আরও কত বেশি যত্ন নেবেন! এইরকম কোমল কিন্তু জোরালো কারণ নিঃসন্দেহে যীশুর শ্রোতাদের হৃদয়ে গিয়ে পৌঁছেছিল।

২২ যীশুর কিছু শিক্ষাপদ্ধতি সম্বন্ধে পুনরালোচনা করার পর আমরা সহজেই এই উপসংহারে আসতে পারি যে, ওই পদাতিকেরা যারা তাকে গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হয়েছিল, তারা নিশ্চয়ই এটা বাড়িয়ে বলেনি: “এ ব্যক্তি যেরূপ কথা বলেন, কোন মানুষে কখনও এরূপ কথা কহে নাই।” কিন্তু, যে-শিক্ষাপদ্ধতির জন্য যীশু সম্ভবত সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিলেন, সেটা হল দৃষ্টান্ত বা নীতিগল্পের ব্যবহার। কেন তিনি এই পদ্ধতি ব্যবহার করতেন? আর, কোন্‌ বিষয়টা তাঁর দৃষ্টান্তগুলোকে এত কার্যকারী করে তুলেছিল? পরের প্রবন্ধে এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে।

[পাদটীকাগুলো]

^ সম্ভবত এই পদাতিকেরা মহাসভার প্রতিনিধি এবং প্রধান যাজকদের কর্তৃত্বের অধীনে ছিল।

^ ২০০২ সালের ১৫ই আগস্ট প্রহরীদুর্গ-এ “আমি তোমাদিগকে দৃষ্টান্ত দেখাইলাম” এবং ‘আমার পশ্চাদ্গামী হও’ প্রবন্ধগুলো দেখুন।

^ শেষের এই উদ্ধৃতিটি, যা প্রেরিত ২০:৩৫ পদে পাওয়া যায়, তা শুধু প্রেরিত পৌলই উল্লেখ করেছেন, যদিও ওই কথাগুলোর সারমর্ম সুসমাচারের বইগুলোতে পাওয়া যায়। পৌল হয়তো মৌখিকভাবে (হয় কোন শিষ্যর কাছ থেকে, যিনি যীশুকে এটা বলতে শুনেছিলেন নতুবা পুনরুত্থিত যীশুর কাছ থেকে) অথবা ঐশিক প্রকাশের মাধ্যমে সেই কথাগুলো জেনেছিলেন।—প্রেরিত ২২:৬-১৫; ১ করিন্থীয় ১৫:৬, ৮.

^ মন্দিরের জন্য যিহুদিদের ২ ড্রাকমা (প্রায় দুই দিনের বেতন) বার্ষিক কর দিতে হতো। সেই করের অর্থ মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ, সেখানকার কাজকর্ম এবং জাতির জন্য রোজ যে-বলি উৎসর্গ করা হতো, সেটার ব্যয় বহন করতে ব্যবহৃত হতো।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• কোন্‌ উদাহরণগুলো দেখায় যে, যীশু সরলতার সঙ্গে এবং স্পষ্টভাবে শিক্ষা দিতেন?

• যীশু তাঁর শিক্ষায় কেন প্রশ্ন ব্যবহার করতেন?

• অতিরঞ্জন কী এবং কীভাবে যীশু এই শিক্ষাপদ্ধতি ব্যবহার করতেন?

• কীভাবে যীশু তাঁর শিষ্যদের যিহোবা সম্বন্ধে হৃদয়গ্রাহী সত্য জানানোর জন্য যুক্তিযুক্ত কারণ ব্যবহার করতেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

যীশু তাঁর শিক্ষায় সহজ ভাষা ব্যবহার করতেন, যাতে সাধারণ লোকেরা তা বুঝতে পারে

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

ফরীশীরা ‘মশা ছাঁকিয়া ফেলিত, কিন্তু উট গিলিয়া থাকিত’