সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“দৃষ্টান্ত ব্যতিরেকে তাহাদিগকে কিছুই কহিলেন না”

“দৃষ্টান্ত ব্যতিরেকে তাহাদিগকে কিছুই কহিলেন না”

“দৃষ্টান্ত ব্যতিরেকে তাহাদিগকে কিছুই কহিলেন না”

“যীশু দৃষ্টান্ত দ্বারা লোকসমূহকে কহিলেন, দৃষ্টান্ত ব্যতিরেকে তাহাদিগকে কিছুই কহিলেন না।”মথি ১৩:৩৪.

১, ২. (ক) কেন কার্যকারী দৃষ্টান্তগুলো সহজে ভোলা যায় না? (খ) যীশু কোন্‌ ধরনের দৃষ্টান্ত ব্যবহার করতেন এবং তাঁর দৃষ্টান্ত ব্যবহার করার বিষয়ে কোন্‌ প্রশ্নগুলো ওঠে? (এ ছাড়া, পাদটীকা দেখুন।)

 আপনি কি কোন একটা দৃষ্টান্তের কথা মনে করতে পারেন, যা হয়তো আপনি অনেক বছর আগে কোন জনসাধারণের বক্তৃতায় শুনেছেন? কার্যকারী দৃষ্টান্তগুলো সহজে ভোলা যায় না। একজন গ্রন্থাকার বলেন যে, দৃষ্টান্ত “শোনাকে দেখায় পরিণত করে এবং শ্রোতারা স্বচ্ছন্দে মনের মধ্যে ছবির সাহায্যে চিন্তা করতে পারে।” যেহেতু আমরা প্রায়ই ছবির মাধ্যমে সবচাইতে ভালভাবে চিন্তা করতে পারি, তাই দৃষ্টান্ত ধারণাগুলোকে বোঝা সহজ করে দেয়। দৃষ্টান্ত শব্দগুলোকে জীবন্ত করে তুলতে পারে আর এর থেকে আমরা যে-শিক্ষা পাই, তা আমাদের মনে গেঁথে যায়।

এই পৃথিবীর কোন শিক্ষক কখনোই যীশু খ্রীষ্টের মতো দৃষ্টান্ত ব্যবহার করার ক্ষেত্রে দক্ষ ছিলেন না। প্রায় দুহাজার বছর আগে বলা যীশুর অনেক নীতিগল্প খুব সহজেই মনে করা যায়। * কেন যীশু এই নির্দিষ্ট শিক্ষাপদ্ধতির ওপর এতটা নির্ভর করতেন? আর কী তাঁর দৃষ্টান্তগুলোকে এত কার্যকারী করে তুলেছিল?

যেকারণে যীশু দৃষ্টান্তের মাধ্যমে শিক্ষা দিতেন

৩. (ক) মথি ১৩:৩৪, ৩৫ পদ অনুসারে একটা কারণ কী, যার জন্য যীশু দৃষ্টান্ত ব্যবহার করতেন? (খ) কোন্‌ বিষয়টা ইঙ্গিত দেয় যে, যিহোবা নিশ্চিতভাবে শিক্ষা দেওয়ার এই পদ্ধতিকে মূল্য দেন?

কেন যীশু দৃষ্টান্ত ব্যবহার করতেন, সেই বিষয়ে বাইবেল দুটো উল্লেখযোগ্য কারণ সম্বন্ধে বলে। প্রথমত, তাঁর এই দৃষ্টান্তের ব্যবহার ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ করেছিল। প্রেরিত মথি লিখেছিলেন: “যীশু দৃষ্টান্ত দ্বারা লোকসমূহকে কহিলেন, দৃষ্টান্ত ব্যতিরেকে তাহাদিগকে কিছুই কহিলেন না; যেন ভাববাদীর দ্বারা কথিত এই বচন পূর্ণ হয়, ‘আমি দৃষ্টান্ত কথায় আপন মুখ খুলিব।’” (মথি ১৩:৩৪, ৩৫) মথি যে-“ভাববাদীর” কথা উদ্ধৃত করেছিলেন, তিনি হলেন গীতসংহিতা ৭৮:২ পদের রচয়িতা। ওই গীতরচক যীশুর জন্মের বহু শতাব্দী আগে ঈশ্বরের আত্মার অনুপ্রেরণায় লিখেছিলেন। এটা কি উল্লেখযোগ্য নয় যে, শত শত বছর আগে যিহোবা স্থির করে রেখেছিলেন যে, তাঁর পুত্র দৃষ্টান্তের মাধ্যমে শিক্ষা দেবেন? যিহোবা নিশ্চিতভাবে শিক্ষা দেওয়ার এই পদ্ধতিকে মূল্য দেন!

৪. যীশু কেন দৃষ্টান্ত ব্যবহার করতেন, সেটার ব্যাখ্যা তিনি কীভাবে দিয়েছিলেন?

দ্বিতীয়ত, যীশু নিজে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, যাদের হৃদয় অসংবেদনশীল তাদের আলাদা করার জন্য তিনি দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেছিলেন। ‘বিস্তর লোকের’ কাছে বীজবাপকের নীতিগল্প বলার পর তাঁর শিষ্যরা জিজ্ঞেস করে: “আপনি কি জন্য দৃষ্টান্ত দ্বারা উহাদের নিকটে কথা কহিতেছেন?” যীশু উত্তর দিয়েছিলেন: “স্বর্গরাজ্যের নিগূঢ় তত্ত্ব সকল তোমাদিগকে জানিতে দেওয়া হইয়াছে, কিন্তু তাহাদিগকে দেওয়া হয় নাই। এই জন্য আমি তাহাদিগকে দৃষ্টান্ত দ্বারা কথা বলিতেছি, কারণ তাহারা দেখিয়াও দেখে না, শুনিয়াও শুনে না, এবং বুঝেও না। আর তাহাদের সম্বন্ধে যিশাইয়ের এই ভাববাণী পূর্ণ হইতেছে, ‘তোমরা শ্রবণে শুনিবে, কিন্তু কোন মতে বুঝিবে না; আর দৃষ্টিতে দেখিবে, কিন্তু কোন মতে জানিবে না; কেননা এই লোকদের হৃদয় অসাড় হইয়াছে।’”—মথি ১৩:২, ১০, ১১, ১৩-১৫; যিশাইয় ৬:৯, ১০.

৫. যীশুর দৃষ্টান্তগুলো কীভাবে গর্বিতমনা ব্যক্তিদের থেকে নম্র ব্যক্তিদের আলাদা করেছিল?।

যীশুর দৃষ্টান্তের মধ্যে কী ছিল, যা লোকেদের আলাদা করেছিল? কোন কোন ক্ষেত্রে, তাঁর শ্রোতাদের তাঁর বাক্যের অর্থ পুরোপুরি বোঝার জন্য অনুসন্ধান করতে হতো। নম্র ব্যক্তিবিশেষেরা আরও তথ্য জানার জন্য প্রশ্ন করতে উদ্ভুত হতো। (মথি ১৩:৩৬; মার্ক ৪:৩৪) তখন, যীশুর দৃষ্টান্তগুলো আকুল আকাঙ্ক্ষী ব্যক্তিদের কাছে সত্য প্রকাশ করত; আর সেইসঙ্গে গর্বিতমনা ব্যক্তিদের কাছে তাঁর উদাহরণগুলো সত্যকে গুপ্ত রাখত। যীশু কতই না এক উল্লেখযোগ্য শিক্ষক ছিলেন! আসুন এখন আমরা কয়েকটা বিষয় পরীক্ষা করি, যেগুলো তাঁর দৃষ্টান্তগুলোকে এত কার্যকারী করে তুলেছিল।

বাছাই করা বর্ণনার ব্যবহার

৬-৮. (ক) যীশুর প্রথম শতাব্দীর শিষ্যদের কোন্‌ সুযোগ তখনও ছিল না? (খ) কোন্‌ উদাহরণগুলো দেখায় যে, যীশু বাছাই করে বর্ণনার ব্যবহার করতেন?

আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন যে, প্রথম শতাব্দীর শিষ্যদের কেমন লেগেছিল, যারা সরাসরি যীশুর কথা শুনেছিল? যদিও যীশুর কথা শোনার সুযোগ তাদের হয়েছিল কিন্তু তিনি যে-বিষয়গুলো বলেছিলেন, সেগুলো মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য লিখিত তথ্য থেকে পরামর্শ নেওয়ার সুবিধা তাদের ছিল না। বরং, যীশুর কথাগুলো তাদের মনে ও হৃদয়ে রাখতে হতো। দক্ষতার সঙ্গে দৃষ্টান্ত ব্যবহারের মাধ্যমে যীশু যে-শিক্ষা দিয়েছিলেন, সেগুলো তাদের জন্য মনে রাখা সহজ করে তুলেছিল। কীভাবে?

যীশু বাছাই করে বর্ণনার ব্যবহার করতেন। যখন কোন নির্দিষ্ট বর্ণনা একটা গল্পের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক হতো অথবা কোন বিষয়ের ওপর জোর দেওয়ার জন্য এর প্রয়োজন পড়ত, তখন তিনি খুব চিন্তা সহকারে নির্দিষ্ট বিষয়গুলো তুলে ধরতেন। তাই, তিনি নির্দিষ্টভাবে বলেছিলেন যে, একজন মালিক কতগুলো মেষ রেখে হারানো মেষ খুঁজছিলেন, মজুরেরা দ্রাক্ষাক্ষেত্রে কত ঘন্টা কাজ করেছিল এবং আস্থার সঙ্গে কতগুলো তালন্ত দেওয়া হয়েছিল।—মথি ১৮:১২-১৪; ২০:১-১৬; ২৫:১৪-৩০.

একইসঙ্গে যীশু অপ্রয়োজনীয় বর্ণনাগুলো বাদ দিতেন, যা হয়তো দৃষ্টান্তের অর্থ বোঝার ক্ষেত্রে আমাদের বাধার সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, নির্দয় দাস সম্বন্ধীয় নীতিগল্পে, কীভাবে সেই দাস ৬০,০০০,০০০ দিনার ঋণের দায়ে জড়িয়ে পড়েছিল, সেই বিষয়ে কোন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। যীশু ক্ষমা করার বিষয়ের ওপর জোর দিচ্ছিলেন। কীভাবে দাস ঋণের দায়ে পড়েছিল, সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল না বরং কীভাবে তার ঋণ ক্ষমা করা হয়েছিল এবং এরপর যে-সহদাসের কাছ থেকে সে তুলনামূলকভাবে সামান্য টাকা পেত, তার সঙ্গে সে কেমন ব্যবহার করেছিল সেটাই ছিল জরুরি বিষয়। (মথি ১৮:২৩-৩৫) একইভাবে, অপব্যয়ী পুত্রের দৃষ্টান্তে ছোট ছেলে হঠাৎ করে কেন তার উত্তরাধিকার চেয়েছিল এবং কেনই-বা সে সেগুলোর অপব্যয় করেছিল, সেই সম্বন্ধে যীশু কোন ব্যাখ্যা দেননি। কিন্তু, বাবার এতে কেমন লেগেছিল এবং তার ছেলে যখন মন পরিবর্তন করে বাড়ি ফিরে আসে, তখন তিনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, সেই বিষয়ে যীশু বিস্তারিতভাবে বলেছিলেন। যীশু যে-বিষয়বস্তুটা তুলে ধরতে চেয়েছিলেন অর্থাৎ যিহোবা “প্রচুররূপে” ক্ষমা করেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে বাবার প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে এইরকম বিস্তারিত বর্ণনার প্রয়োজন ছিল।—যিশাইয় ৫৫:৭; লূক ১৫:১১-৩২.

৯, ১০. (ক) যীশু তাঁর দৃষ্টান্তগুলোতে চরিত্র বর্ণনা করার সময় কোন্‌ বিষয়টার ওপর আলোকপাত করতেন? (খ) কীভাবে যীশু তাঁর শ্রোতাদের এবং অন্যদের তাঁর দৃষ্টান্তগুলো মনে করতে সহজ করে দিয়েছিলেন?

এ ছাড়া, যীশু তাঁর দৃষ্টান্তে চরিত্র বর্ণনা করার ক্ষেত্রে বিচক্ষণ ছিলেন। চরিত্রগুলোর বাহ্যিক রূপের বিশদ বর্ণনা দেওয়ার বদলে যীশু প্রায়ই তারা যা করত এবং তিনি যে-বিষয়গুলোর বর্ণনা দিতেন, সেগুলোর প্রতি তারা কীভাবে সাড়া দিত সেটার ওপর আলোকপাত করতেন। তাই, প্রতিবেশীপরায়ণ শমরীয় ব্যক্তি দেখতে কেমন ছিলেন, সেটার বর্ণনা না দিয়ে যীশু সেটার চেয়ে আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়ের বর্ণনা দেন—কীভাবে শমরীয় ব্যক্তি করুণা দেখিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা আহত যিহুদিকে সাহায্য করেছিলেন। যীশু যে-বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছিলেন, তা এই বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রয়োজন ছিল যে, প্রতিবেশীদের প্রতি প্রেম নিজেদের জাতি বা উপজাতির লোকেদের মধ্যে ছাড়াও অন্যদের প্রতিও বিস্তৃত হওয়া উচিত।—লূক ১০:২৯, ৩৩-৩৭.

১০ বিস্তারিত বর্ণনার সতর্ক ব্যবহার, যীশুর দৃষ্টান্তগুলোকে সংক্ষিপ্ত ও সরল রেখেছিল। এভাবে তিনি প্রথম শতাব্দীর শ্রোতাদের এবং অসংখ্য ব্যক্তিরা, যারা পরে অনুপ্রাণিত সুসমাচার পড়বে, তাদের জন্য বিষয়গুলোকে স্মরণে আনতে এবং এর থেকে পাওয়া মূল্যবান শিক্ষাগুলো বুঝতে সহজ করে দিয়েছিলেন।

রোজকার জীবন থেকে নেওয়া

১১. উদাহরণ দিন যে, যীশুর নীতিগল্পগুলো কীভাবে দেখায় যে গালীলে বড় হওয়ার সময় নিঃসন্দেহে তিনি সবকিছু লক্ষ করতেন।

১১ লোকেদের জীবনের সঙ্গে জড়িত দৃষ্টান্তগুলো ব্যবহার করার ক্ষেত্রে যীশু অনেক দক্ষ ছিলেন। তাঁর অনেক নীতিগল্প যে-বিষয়গুলো তুলে ধরত, তা দেখায় যে গালীলে বড় হওয়ার সময় নিঃসন্দেহে তিনি সেইসব বিষয়গুলো লক্ষ করেছিলেন। এক মুহূর্তের জন্য তাঁর প্রাথমিক জীবনের বিষয়ে চিন্তা করুন। কতবার তিনি তাঁর মাকে পূর্বে সেঁকা তাড়িপূর্ণ ময়দার বেচে যাওয়া কিছু অংশ নিয়ে সেটাকে তাড়িযুক্ত রুটি প্রস্তুত করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে দেখেছিলেন? (মথি ১৩:৩৩) কতবার তিনি গালীল সমুদ্রের স্বচ্ছ নীল জলের মধ্যে জেলেদের জাল ফেলতে দেখেছিলেন? (মথি ১৩:৪৭) কতবার তিনি ছেলেমেয়েদের বাজারে খেলা করতে দেখেছিলেন? (মথি ১১:১৬) যীশু সম্ভবত আরও অন্যান্য সাধারণ বিষয়গুলো লক্ষ করতেন, যা তাঁর দৃষ্টান্তে স্থান পেয়েছিল—বীজ বপন করা, আনন্দপূর্ণ বিবাহভোজ এবং সূর্যের তাপে পেকে যাওয়া শস্যক্ষেত্র।—মথি ১৩:৩-৮; ২৫:১-১২; মার্ক ৪:২৬-২৯.

১২, ১৩. যীশুর দেওয়া গম এবং শ্যামাঘাসের দৃষ্টান্ত কীভাবে স্থানীয় পরিস্থিতির সঙ্গে তাঁর পরিচিতিকে তুলে ধরে?

১২ তা হলে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, রোজকার জীবনের পরিস্থিতি এবং অবস্থা যীশুর অনেক দৃষ্টান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকত। তাই, এই শিক্ষাপদ্ধতি কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতা সম্বন্ধে আরও ভালভাবে বোঝার জন্য তাঁর কথাগুলো যিহুদি শ্রোতাদের কাছে কী অর্থ রেখেছিল, সেটা বিবেচনা করা সাহায্যকারী। আসুন আমরা দুটো উদাহরণ দেখি।

১৩ প্রথমে, গম এবং শ্যামাঘাসের নীতিগল্পে যীশু একজন ব্যক্তির কথা বলেছিলেন, যিনি জমিতে উত্তম বীজ বপন করেছিলেন কিন্তু “কোন শত্রু” জমিতে হানা দিয়ে তাতে শ্যামাঘাসও বুনে দিয়েছিল। কেন যীশু ওই নির্দিষ্ট শত্রুতাপূর্ণ কাজকে বেছে নিয়েছিলেন? মনে রাখবেন যে, তিনি গালীল সমুদ্রের কাছে দৃষ্টান্ত দিচ্ছিলেন এবং স্পষ্টতই গালীলীয়দের প্রধান পেশা ছিল কৃষিকাজ। কোন শত্রু গোপনে একজন কৃষকের জমিতে ক্ষতিকারক শ্যামাঘাস বপন করলে, সেই কৃষকের কাছে এর চেয়ে ক্ষতিকারক আর কী-ই-বা হতে পারে? সেই সময়কার জাগতিক আইনগুলো দেখায় যে, এইরকম আক্রমণ বাস্তবিক ক্ষেত্রে ঘটত। এটা কি স্পষ্ট নয় যে, যীশু এমন একটা পরিস্থিতির ব্যবহার করেছিলেন, যা তাঁর শ্রোতারা বুঝতে পারে?—মথি ১৩:১, ২, ২৪-৩০.

১৪. প্রতিবেশীপরায়ণ শমরীয়ের নীতিগল্পে কেন এটা তাৎপর্যপূর্ণ যে, যীশু তাঁর বিষয়বস্তু তুলে ধরার জন্য “যিরূশালেম হইতে যিরীহোতে” যাওয়ার যে-রাস্তা, সেটার ব্যবহার করেছিলেন?

১৪ দ্বিতীয়, প্রতিবেশীপরায়ণ শমরীয়ের নীতিগল্পের কথা মনে করে দেখুন। যীশু এই বলে শুরু করেন: “এক ব্যক্তি যিরূশালেম হইতে যিরীহোত নামিয়া যাইতেছিল, এমন সময়ে দস্যুদলের হস্তে পড়িল; তাহারা তাহার বস্ত্র খুলিয়া লইল, এবং তাহাকে আঘাত করিয়া আধমরা ফেলিয়া চলিয়া গেল।” (লূক ১০:৩০) তাৎপর্যপূর্ণভাবে, যীশু তাঁর বিষয়বস্তুকে তুলে ধরার জন্য “যিরূশালেম হইতে যিরীহোতে” যাওয়ার যে-রাস্তা, সেটার ব্যবহার করেছিলেন। এই দৃষ্টান্তটি বলার সময় তিনি যিহূদিয়াতে ছিলেন, যা যিরূশালেম থেকে খুব বেশি দূরে নয়; তাই তাঁর শ্রোতারা সম্ভবত দৃষ্টান্তে বলা সেই রাস্তা সম্বন্ধে জানত। সেই নির্দিষ্ট রাস্তাটা খুবই বিপদজনক ছিল, বিশেষ করে তাদের পক্ষে, যারা একা সেই পথ দিয়ে ভ্রমণ করত। নির্জন ভূখণ্ডের মধ্যে এর বাঁকগুলোতে দস্যুদের লুকিয়ে ওত পেতে থাকার অনেক জায়গা ছিল।

১৫. কেন কেউই উপযুক্তভাবে প্রতিবেশীপরায়ণ শমরীয়ের দৃষ্টান্তে বর্ণিত যাজক ও লেবীয়ের উদাসীন আচরণের বিষয়ে যুক্তি দেখাতে পারবে না?

১৫ “যিরূশালেম হইতে যিরীহোতে” যাওয়ার পথের বিষয়ে যীশুর উল্লেখের মধ্যে আরও একটা লক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। গল্প অনুসারে প্রথমে একজন যাজক এবং এরপর একজন লেবীয় সেই রাস্তা দিয়ে যান—যদিও এদের মধ্যে কেউই ওই আহত ব্যক্তিকে সাহায্য করার জন্য থামেনি। (লূক ১০:৩১, ৩২) যাজকরা যিরূশালেমের মন্দিরে সেবা করত এবং লেবীয়রা তাদের সাহায্য করত। অনেক যাজক এবং লেবীয় যখন মন্দিরে কাজ করত না, তখন যিরীহোতে থাকত কারণ যিরূশালেম থেকে যিরীহো মাত্র ২৩ কিলোমিটার দূরে ছিল। তাই, নিঃসন্দেহে তাদের সেই পথ দিয়ে ভ্রমণ করার সুযোগ থাকত। এ ছাড়া লক্ষ করুন যে, যাজক এবং লেবীয় “যিরূশালেম হইতে” রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন অর্থাৎ মন্দির থেকে ফিরে যাচ্ছিলেন। * তাই, উপযুক্তভাবে তাদের উদাসীন আচরণের বিষয়ে এই কথা বলে কেউ যুক্তি দেখাতে পারবে না যে, ‘তারা সেই আহত ব্যক্তিকে এই কারণে এড়িয়ে গিয়েছিল যেহেতু তাকে মৃতবৎ মনে হচ্ছিল এবং একটা মৃতদেহ স্পর্শের কারণে তাদের সাময়িকভাবে মন্দিরে সেবা করার অযোগ্য করে তুলবে।’ (লেবীয় পুস্তক ২১:১; গণনাপুস্তক ১৯:১১, ১৬) এটা কি স্পষ্ট নয় যে, যীশুর দৃষ্টান্তে যে-বিষয়গুলো প্রতিফলিত হয়েছিল, তা তাঁর শ্রোতাদের কাছে পরিচিত ছিল?

সৃষ্টি থেকে নেওয়া

১৬. যীশু যে সৃষ্টির সঙ্গে খুব নিবিড়ভাবে পরিচিত ছিলেন, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই কেন?

১৬ যীশুর অনেক দৃষ্টান্ত এবং নীতিগল্প প্রকাশ করে যে গাছপালা, পশুপাখি এবং আবহাওয়ার সঙ্গে তিনি পরিচিত ছিলেন। (মথি ৬:২৬, ২৮-৩০; ১৬:২, ৩) কোথা থেকে তিনি এই জ্ঞান পেয়েছিলেন? কোন সন্দেহ নেই যে, গালীলে বেড়ে ওঠার সময় যিহোবার সৃষ্টি দেখার প্রচুর সুযোগ তাঁর হয়েছিল। এর চেয়ে বড় কথা হল যে যীশু হলেন, “সমুদয় সৃষ্টির প্রথমজাত” এবং যিহোবা তাঁকে সমস্ত সৃষ্টির “কার্য্যকারী” হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। (কলসীয় ১:১৫, ১৬; হিতোপদেশ ৮:৩০, ৩১) তাই, এতে কি অবাক হওয়ার কিছু আছে যে, যীশু সৃষ্টির সঙ্গে খুব নিবিড়ভাবে পরিচিত ছিলেন? আসুন আমরা দেখি যে, তাঁর শিক্ষায় তিনি কীভাবে দক্ষতার সঙ্গে এই জ্ঞানকে ব্যবহার করেছিলেন।

১৭, ১৮. (ক) যোহন ১০ অধ্যায়ে বলা যীশুর কথাগুলো কীভাবে দেখায় যে, মেষদের আচরণের সঙ্গে তিনি পরিচিত ছিলেন? (খ) বাইবেলের দেশগুলোর পর্যটকরা মেষপালক এবং মেষপালের সম্পর্কের বিষয়ে কী লক্ষ করেছে?

১৭ যীশুর দৃষ্টান্তগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কোমল একটা বিষয় যোহন ১০ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ করা আছে, যেখানে তিনি তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পকর্কে একজন মেষপালক ও তার মেষপালের সঙ্গে তুলনা করেছেন। যীশুর কথাগুলো দেখায় যে, গৃহপালিত মেষদের আচরণের সঙ্গে তিনি পরিচিত ছিলেন। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, মেষরা নেতৃত্ব পেতে চায় এবং বিশ্বস্ততার সঙ্গে তাদের মেষপালককে অনুসরণ করে। (যোহন ১০:২-৪) মেষপালক এবং মেষদের মধ্যে এই অনুপম সম্পর্ক বাইবেলের দেশেগুলোর পর্যটকদের দৃষ্টি এড়ায়নি। উনবিংশ শতাব্দীতে প্রকৃতিবিজ্ঞানী এইচ. বি. ট্রিস্টট্রাম বলেছিলেন: “একবার আমি একজন মেষপালককে তার পালের সঙ্গে খেলা করতে দেখি। সে দৌড়ানোর ভান করছিল; মেষগুলো তাকে অনুসরণ করে এবং তার চারপাশ ঘিরে ধরে। . . . অবশেষে সমস্ত মেষ গোল হয়ে তার চারধারে লাফাতে শুরু করে।”

১৮ মেষপাল কেন তাদের মেষপালককে অনুসরণ করে? যীশু বলেছিলেন, “কারণ তাহারা তাহার রব জানে।” (যোহন ১০:৪) মেষপাল কি সত্যিই তাদের মেষপালকের স্বর বুঝতে পারে? ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জর্জ এ. স্মিথ তার পবিত্র ভূমির ঐতিহাসিক ভূগোল (ইংরেজি) বইয়ে লিখেছিলেন: “কখনও কখনও আমরা দুপুরবেলা যিহূদার কোন একটা কুয়োর পাশে বসে বিশ্রাম নিতে ভালবাসতাম, যেখানে তিন বা চারজন মেষপালক তাদের মেষপাল নিয়ে আসত। পালগুলো একটার সঙ্গে আরেকটা মিশে যেত এবং আমরা ভাবতাম যে, কীভাবে প্রত্যেক মেষপালক তাদের নিজেদের পালগুলোকে আবার একত্রিত করবে। কিন্তু, জল খাওয়া এবং খেলাধূলার পর মেষপালকরা পর্বতের বিভিন্ন দিকে চলে যেত এবং প্রত্যেকে তাদের নিজস্ব স্বরে ডাকত; আর প্রত্যেকের মেষপাল সেই ভিড়ের মধ্যে থেকে নিজেদের মেষপালকের কাছে চলে আসত এবং সেই পালগুলো ঠিক যেরকম সংগঠিতভাবে এসেছিল সেভাবে চলে যেত।” যীশু তাঁর বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা করার জন্য এর চেয়ে ভাল পন্থা কি আর পেতে পারতেন? আমরা যদি তাঁর শিক্ষাগুলো বুঝতে পারি এবং সেগুলো পালন করি ও তাঁর নেতৃত্ব অনুসরণ করি, তা হলে আমরা “উত্তম মেষপালকের” কোমল এবং প্রেমময় যত্নে আসতে পারব।—যোহন ১০:১১.

তাঁর শ্রোতাদের পরিচিত ঘটনাগুলো থেকে নেওয়া

১৯. একটা মিথ্যা ধারণা দূর করার জন্য যীশু কীভাবে স্থানীয় একটা দুঃখজনক ঘটনার কার্যকারী ব্যবহার করেছিলেন?

১৯ কার্যকারী দৃষ্টান্তগুলো, অভিজ্ঞতা বা উদাহরণের রূপও নিতে পারে, যার থেকে শিক্ষা লাভ করা যায়। শুধু প্রাপ্য ব্যক্তিদের ওপরেই দুর্যোগ নেমে আসে, এইধরনের একটা মিথ্যা ধারণাকে খণ্ডন করতে যীশু একবার সাম্প্রতিক ঘটনার ব্যবহার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “সেই আঠারো জন, যাহাদের উপরে শীলোহে স্থিত উচ্চগৃহ পড়িয়া গিয়া তাহাদিগকে মারিয়া ফেলিল, তোমরা কি তাহাদের বিষয়ে মনে করিতেছ যে, তাহারা যিরূশালেমনিবাসী অন্য সকল লোক অপেক্ষা অধিক অপরাধী ছিল?” (লূক ১৩:৪) নিয়তি সম্পর্কিত কারণের বিরুদ্ধে যীশু অপূর্ব যুক্তি দেখিয়েছিলেন। সেই ১৮ জন ব্যক্তি তাদের পাপের কারণে, যা ঈশ্বরকে অখুশি করেছে, তার জন্য জীবন হারায়নি। বরং তাদের দুঃখজনক মৃত্যু কাল ও দৈবের কারণে ঘটেছিল। (উপদেশক ৯:১১) এভাবে তিনি তাঁর শ্রোতাদের কাছে পরিচিত, এমন একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করে এই মিথ্যা শিক্ষাকে খণ্ডন করেছিলেন।

২০, ২১. (ক) কেন ফরীশীরা যীশুর শিষ্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল? (খ) বিশ্রামবারের বিষয়ে এক কঠোর আইন দেওয়া যে কখনোই যিহোবার উদ্দেশ্য ছিল না, তা দেখাতে গিয়ে যীশু কোন্‌ শাস্ত্রীয় ঘটনা ব্যবহার করেছিলেন? (গ) পরের প্রবন্ধে কোন্‌ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে?

২০ যীশু তাঁর শিক্ষায়, শাস্ত্রীয় উদাহরণগুলোও ব্যবহার করতেন। বিশ্রামবারে শিষ্যরা খেত থেকে শিষ ছিঁড়ে খাচ্ছিল দেখে ফরীশীরা যখন অভিযোগ করেছিল, সেই ঘটনার কথা মনে করে দেখুন। বস্তুতপক্ষে, শিষ্যরা ঈশ্বরের ব্যবস্থা নয়, বরং বিশ্রামবারে কোন্‌ কাজটা অশাস্ত্রীয় এই বিষয় ফরীশীদের স্থাপিত কঠোর ব্যাখ্যাকে লঙ্ঘন করেছিল। বিশ্রামবারের বিষয়ে এইরকম অযৌক্তিক কঠোর আইন দেওয়া যে কখনোই ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ছিল না, তা দেখাতে গিয়ে যীশু একটা ঘটনার বিষয়ে উল্লেখ করেন, যা ১ শমূয়েল ২১:৩-৬ পদে লিপিবদ্ধ করা আছে। খিদে পেয়েছিল বলে দায়ূদ ও তাঁর লোকেরা সমাগম তাঁবুর কাছে থেমে সেখানকার দর্শন রুটি খেয়েছিল, যা সেখানে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। পুরনো রুটি সাধারণত যাজকদের খাওয়ার জন্য সংরক্ষিত থাকত। কিন্তু পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে দায়ূদ ও তার লোকেরা সেগুলো খেয়েছিল বলে তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি। এটা লক্ষণীয় যে, অযাজকীয় ব্যক্তিদের দ্বারা পুরনো রুটির ব্যবহার সম্বন্ধে এটাই হল একমাত্র ঘটনা, যা বাইবেলে লিপিবদ্ধ করা আছে। যীশু একদম সঠিক ঘটনা ব্যবহার করতে জানতেন এবং তাঁর যিহুদি শ্রোতারা নিঃসন্দেহে এর সঙ্গে পরিচিত ছিল।—মথি ১২:১-৮.

২১ সত্যিই যীশু একজন মহান শিক্ষক ছিলেন! তাঁর শ্রোতাদের হৃদয়ে পৌঁছায়, এমনভাবে গুরুত্বপূর্ণ সত্য জানানোর ব্যাপারে তাঁর অদ্বিতীয় ক্ষমতা দেখে আমরা অবাক না হয়ে পারি না। তা হলে, কীভাবে আমরা আমাদের শিক্ষায় তাঁকে অনুকরণ করতে পারি? পরের প্রবন্ধে সেটা আলোচনা করা হবে।

[পাদটীকাগুলো]

^ যীশু অনেক ধরনের দৃষ্টান্ত তুলে ধরতেন যার মধ্যে উদাহরণ, তুলনা, উপমা এবং রূপকও রয়েছে। তিনি তাঁর নীতিগল্প ব্যবহারের জন্য সুপরিচিত ছিলেন, যার ব্যাখ্যা এইভাবে করা হয়েছে, “একটা ছোট, সাধারণত কল্পিত কাহিনী, যার থেকে নৈতিক বা আধ্যাত্মিক সত্য পাওয়া যায়।”

^ যিরীহো থেকে যিরূশালেম উঁচুতে অবস্থিত ছিল। তাই, নীতিগল্পে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে “যিরূশালেম হইতে যিরীহোতে” ভ্রমণ করার সময় একজন পথচারীকে ‘নামিয়া যাইতে’ হতো।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• কেন যীশু বিভিন্ন দৃষ্টান্তের মাধ্যমে শিক্ষা দিতেন?

• কোন্‌ উদাহরণ দেখায় যে, যীশু এমন সব দৃষ্টান্ত ব্যবহার করতেন, যা তাঁর প্রথম শতাব্দীর শ্রোতারা বুঝতে পারে?

• কীভাবে যীশু তাঁর দৃষ্টান্তগুলোতে দক্ষতার সঙ্গে সৃষ্টির জ্ঞানকে ব্যবহার করেছিলেন?

• কোন্‌ কোন্‌ উপায়ে যীশু এমন ঘটনাগুলো ব্যবহার করেছিলেন, যা তাঁর শ্রোতাদের কাছে পরিচিত ছিল?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যীশু একজন দাসের কথা বলেছিলেন, যে তুলনামূলকভাবে সামান্য ঋণ ক্ষমা করতে চায়নি এবং একজন বাবার কথা বলেছিলেন, যিনি তার পুত্রকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন, যে তার সমস্ত উত্তরাধিকার নিয়ে অপব্যয় করেছিল

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

যীশুর প্রতিবেশীপরায়ণ শমরীয়ের নীতিগল্পের বিষয়বস্তুটা কী ছিল?

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

মেষপাল কি সত্যিই তাদের মেষপালকের স্বর বুঝতে পারে?