‘অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ করুন’
‘অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ করুন’
“যাহা যাহা শুনিয়াছি, তাহাতে অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ করা আমাদের উচিত, পাছে কোন ক্রমে ভাসিয়া চলিয়া যাই।”—ইব্রীয় ২:১.
১. ব্যাখ্যা করুন যে, কীভাবে অন্যমনস্ক হয়ে পড়া দুর্দশার দিকে পরিচালিত করতে পারে।
প্রতি বছর শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই মোটরগাড়ি দুর্ঘটনা প্রায় ৩৭,০০০ লোকের জীবন কেড়ে নেয়। বিশেষজ্ঞরা বলে যে, এইরকম অনেক মৃত্যু এড়ানো যেত যদি চালকরা রাস্তার প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দিত। কোন কোন মোটর-চালক বিভিন্ন সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড অথবা তাদের সেলুলার ফোনের কারণে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। এ ছাড়া, এমন ব্যক্তিরাও রয়েছে, যারা চালানোর সময় খাওয়া-দাওয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এই পরিস্থিতিগুলোতে অন্যমনস্ক হয়ে পড়া দুর্দশার দিকে পরিচালিত করতে পারে।
২, ৩. ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের পৌল কোন্ সতর্কবাণী দিয়েছিলেন এবং তার পরামর্শ কেন উপযুক্ত ছিল?
২ মোটরগাড়ি উদ্ভাবনের প্রায় ২,০০০ বছর আগে প্রেরিত পৌল একধরনের অন্যমনস্কতার কথা বলেছিলেন, যা কিছু ইব্রীয় খ্রীষ্টানের জন্য দুর্দশা ডেকে এনেছিল। পৌল জোর দিয়েছিলেন যে, পুনরুত্থিত যীশু খ্রীষ্টকে সমস্ত দূতেদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ স্থান দেওয়া হয়েছে, কারণ তিনি ঈশ্বরের দক্ষিণে উপবিষ্ট হয়েছেন। এরপর প্রেরিত বলেছিলেন: “এই জন্য যাহা যাহা শুনিয়াছি, তাহাতে অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ করা আমাদের উচিত, পাছে কোন ক্রমে ভাসিয়া চলিয়া যাই।”—ইব্রীয় ২:১.
৩ কেন ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের যীশুর বিষয়ে ‘যাহা যাহা শুনিয়াছিল, তাহাতে অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ করিবার’ দরকার ছিল? কারণ যীশু পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার পর প্রায় ৩০ বছর কেটে গিয়েছিল। তাদের প্রভুর এই অনুপস্থিতিতে কিছু ইব্রীয় খ্রীষ্টান প্রকৃত বিশ্বাস থেকে সরে পড়তে শুরু করেছিল। তারা যিহুদিধর্ম অর্থাৎ তাদের পূর্বের উপাসনা পদ্ধতির দ্বারা অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল।
তাদের আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার দরকার ছিল
৪. কেন কিছু খ্রীষ্টান হয়তো যিহুদিধর্মে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রলোভিত হয়েছিল?
৪ কেন একজন খ্রীষ্টান যিহুদি ধর্মে ফিরে যাওয়ার জন্য হয়তো প্রলোভিত হয়েছিল? আসলে, ব্যবস্থার অধীনে উপাসনা পদ্ধতির সঙ্গে দৃশ্যত বিষয়বস্তু জড়িত ছিল। লোকেরা যাজকদের দেখতে পেত এবং উৎসর্গীকৃত বলির ঘ্রাণ নিতে পারত। কিন্তু, কিছু কিছু ক্ষেত্রে খ্রীষ্টধর্ম পুরোপুরি আলাদা ছিল। খ্রীষ্টানদের একজন মহাযাজক ছিলেন, যিনি হলেন যীশু খ্রীষ্ট কিন্তু গত তিন দশক ধরে তাঁকে পৃথিবীতে দেখা যায়নি। (ইব্রীয় ৪:১৪) তাদের একটা মন্দির ছিল কিন্তু এর পবিত্র স্থান ছিল স্বর্গ। (ইব্রীয় ৯:২৪) ব্যবস্থার অধীনে মাংসিক ত্বক্চ্ছেদের বিপরীতে খ্রীষ্টীয় ত্বক্চ্ছেদ ছিল ‘হৃদয়ের ত্বক্চ্ছেদ, যাহা আত্মায় হয়।’ (রোমীয় ২:২৯) তাই, ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের কাছে হয়তো খ্রীষ্টধর্ম অলীক প্রকৃতির বলে মনে হয়েছিল।
৫. কীভাবে পৌল দেখিয়েছিলেন যে, যীশুর দ্বারা স্থাপিত উপাসনা পদ্ধতি, ব্যবস্থার অধীনে পদ্ধতির চেয়ে শ্রেষ্ঠ ছিল?
৫ ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের খ্রীষ্টের দ্বারা স্থাপিত উপাসনা পদ্ধতি সম্বন্ধে আরও গুরুত্বপূর্ণ কিছু বোঝার দরকার ছিল। এটা দেখার চেয়ে বরং বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে ছিল, এমনকি ভাববাদী মোশির মাধ্যমে দেওয়া ব্যবস্থার চেয়ে আরও শ্রেষ্ঠ ছিল। পৌল লিখেছিলেন, “ছাগদের ও বৃষদের রক্ত এবং অশুচিদের উপরে প্রোক্ষিত গাভীভস্ম যদি মাংসের শুচিতার জন্য পবিত্র করে, তবে, যিনি অনন্তজীবী আত্মা দ্বারা নির্দ্দোষ বলিরূপে আপনাকেই ঈশ্বরের উদ্দেশে উৎসর্গ করিয়াছেন, সেই খ্রীষ্টের রক্ত তোমাদের সংবেদকে মৃত ক্রিয়াকলাপ হইতে কত অধিক নিশ্চয় শুচি না করিবে, যেন তোমরা জীবন্ত ঈশ্বরের আরাধনা করিতে পার!” (ইব্রীয় ৯:১৩, ১৪) হ্যাঁ, যীশু খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্যে বিশ্বাসের মাধ্যমে যে পাপের ক্ষমা পাওয়া যায়, তা অনেক দিক দিয়ে ব্যবস্থার অধীনে উৎসর্গীকৃত বলির মাধ্যমে পাওয়া ক্ষমার চেয়ে অধিক শ্রেষ্ঠ ছিল।—ইব্রীয় ৭:২৬-২৮.
৬, ৭. (ক) কোন্ পরিস্থিতি ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের ‘যাহা যাহা শুনিয়াছিল, তাহাতে অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ করার’ গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছিল? (খ) পৌল যখন ইব্রীয়দের কাছে তার চিঠি লিখেছিলেন তখন যিরূশালেমের জন্য আর কত সময় বাকি ছিল? (পাদটীকা দেখুন।)
৬ আরেকটা কারণে ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের যীশুর বিষয়ে তারা যা শুনেছিল, তাতে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার দরকার ছিল। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, যিরূশালেম ধ্বংস হবে। যীশু বলেছিলেন: “তোমার উপরে এমন সময় উপস্থিত হইবে, যে সময়ে তোমার শত্রুগণ তোমার চারিদিকে জাঙ্গাল বাঁধিবে, তোমাকে বেষ্টন করিবে, তোমাকে সর্ব্বদিকে অবরোধ করিবে, এবং তোমাকে ও তোমার মধ্যবর্ত্তী তোমার বৎসগণকে ভূমিসাৎ করিবে, তোমার মধ্যে প্রস্তরের উপরে প্রস্তর থাকিতে দিবে না; কারণ তোমার তত্ত্বাবধানের সময় তুমি বুঝ নাই।”—লূক ১৯:৪৩, ৪৪.
৭ এটা কখন ঘটবে? যীশু সেই দিন বা সময়ের কথা প্রকাশ করেননি। বরং, তিনি এই নির্দেশনা দিয়েছিলেন: “যখন তোমরা যিরূশালেমকে সৈন্যসামন্ত দ্বারা বেষ্টিত দেখিবে, তখন জানিবে যে, তাহার ধ্বংস সন্নিকট। তখন যাহারা যিহূদিয়ায় থাকে, তাহারা পাহাড় অঞ্চলে পলায়ন করুক, এবং যাহারা নগরের মধ্যে থাকে, তাহারা বাহিরে যাউক; আর যাহারা পল্লীগ্রামে থাকে, তাহারা নগরে প্রবেশ না করুক।” (লূক ২১:২০, ২১) যীশু ওই কথাগুলো বলার পর ৩০ বছরের মধ্যে যিরূশালেমের কিছু খ্রীষ্টান তাদের তৎপরতার মনোভাব হারিয়ে ফেলেছিল এবং অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল। তারাও যেন রাস্তা থেকে তাদের চোখ সরিয়ে নিয়েছিল। তারা যদি তাদের চিন্তাভাবনায় রদবদল না করত, তা হলে দুর্দশা অনিবার্য ছিল। তারা মনে করুক বা না-ই করুক, যিরূশালেমের ধ্বংস সন্নিকট ছিল। * আশা করা যায় যে, পৌলের পরামর্শ যিরূশালেমের যে-খ্রীষ্টানরা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে ঘুমন্ত ছিল, তাদের জন্য এক বিপদসংকেত ছিল।
আজকে “অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ” করা
৮. কেন আমাদের ঈশ্বরের বাক্যের সত্যের প্রতি “অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ করা” দরকার?
৮ প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের মতো আমাদেরও ঈশ্বরের বাক্যের সত্যের প্রতি “অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ করা” দরকার। কেন? কারণ আমরাও আসন্ন ধ্বংসের দোরগোঁড়ায় রয়েছি আর সেই ধ্বংস শুধু একটা জাতিরই নয় কিন্তু পুরো বিধিব্যবস্থার। (প্রকাশিত বাক্য ১১:১৮; ১৬:১৪, ১৬) এটা ঠিক যে, যিহোবা কখন সেই পদক্ষেপ নেবেন, সেটার সঠিক দিন এবং সময় সম্বন্ধে আমরা জানি না। (মথি ২৪:৩৬) কিন্তু, আমরা বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতা দেখতে পাচ্ছি, যা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে আমরা “শেষ কালে” বাস করছি। (২ তীমথিয় ৩:১-৫) তাই, আমাদের এমন যেকোন কিছুর থেকে সাবধান থাকতে হবে, যা আমাদের অন্যমনস্ক করে তুলতে পারে। ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি আমাদের মনোযোগ দিতে হবে এবং অধিক তৎপরতার মনোভাব বজায় রাখতে হবে। একমাত্র তা করার মাধ্যমেই আমরা “এই যে সকল ঘটনা হইবে, তাহা এড়াইতে” পারব।—লূক ২১:৩৬.
৯, ১০. (ক) কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর প্রতি আমরা মনোযোগী? (খ) কীভাবে ঈশ্বরের বাক্য ‘আমাদের চরণের প্রদীপ’ এবং ‘আমাদের পথের আলোক’?
৯ এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর প্রতি আমরা “অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ” করছি? একটা উপায় হল, খ্রীষ্টীয় সভা, অধিবেশন এবং সম্মেলনগুলোতে আমাদের নিয়মিত উপস্থিত হতে হবে। এ ছাড়া, আমাদের বাইবেলের অধ্যবসায়ী ছাত্র হতে হবে, যাতে এর গ্রন্থাকার যিহোবার নিকটবর্তী হতে পারি। (যাকোব ৪:৮) ব্যক্তিগত অধ্যয়ন এবং সভাগুলোর মাধ্যমে আমরা যদি যিহোবা সম্বন্ধে জ্ঞান নিই, তা হলে আমরা গীতরচকের মতো হব, যিনি ঈশ্বরের উদ্দেশে বলেছিলেন: “তোমার বাক্য আমার চরণের প্রদীপ, আমার পথের আলোক।”—গীতসংহিতা ১১৯:১০৫.
১০ বাইবেল ‘আমাদের পথের আলোক’ হিসেবে কাজ করে, যখন এটি ভবিষ্যতের জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে আমাদের জানায়। এ ছাড়া, এটি ‘আমাদের চরণের প্রদীপ।’ অন্য কথায়, আমরা যখন জীবনের কঠিন সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হই, তখন এটি আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করতে পারে। এই কারণে আমরা যখন নির্দেশনার জন্য সহ বিশ্বাসীদের সঙ্গে মিলিত হই বা ব্যক্তিগতভাবে ঈশ্বরের বাক্য পড়ি, তখন আমাদের “অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ করা” খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যে-তথ্য নিই, তা আমাদের বিজ্ঞ ও উপকারী সিদ্ধান্তগুলো নিতে সাহায্য করে, যা যিহোবাকে খুশি করে এবং তাঁর হৃদয়কে আনন্দিত করে। (হিতোপদেশ ২৭:১১; যিশাইয় ৪৮:১৭) সভাগুলোতে এবং ব্যক্তিগত অধ্যয়নের সময় কীভাবে আমরা আমাদের মনোযোগ বাড়াতে পারি, যাতে আমরা ঈশ্বরের আধ্যাত্মিক ব্যবস্থাগুলো থেকে সবচেয়ে বেশি উপকার পেতে পারি?
সভাগুলোতে আমাদের মনোযোগকে আরও বাড়ানো
১১. কেন কখনও কখনও, খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে মনোযোগ দেওয়া খুবই কঠিন হয়?
১১ কখনও কখনও, খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে মনোযোগ দেওয়া খুবই কঠিন হয়। একটা বাচ্চার কান্না শুনে বা দেরিতে আসা কোন ব্যক্তিকে বসার জায়গা খুঁজতে দেখলে মন খুব সহজেই অন্যমনস্ক হয়ে পড়তে পারে। দীর্ঘ সময়ের কাজের পরে, স্বাভাবিকভাবেই আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারি। মঞ্চ থেকে যে-ব্যক্তি বক্তৃতা দিচ্ছেন তিনি হয়তো মনোযোগ আকর্ষণ করায় ততটা দক্ষ না-ও হতে পারেন আর এই বিষয়টা বোঝার আগেই আমরা হয়তো দিবাস্বপ্ন দেখা শুরু করি—এমনকি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়তে পারি! গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে বলে মণ্ডলীর সভাগুলোতে আমাদের মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতাকে আরও বাড়ানোর জন্য যথাসাধ্য করা উচিত। কিন্তু, কীভাবে আমরা তা করতে পারি?
১২. কোন্ বিষয়টা আমাদের সভাগুলোতে মনোযোগ দেওয়া সহজ করে দেয়?
১২ সাধারণত মণ্ডলীর সভাগুলোতে মনোযোগ দেওয়া খুব সহজ হয়, যদি আমরা ভালভাবে প্রস্তুতি নিই। তা হলে, যে-বিষয়গুলো আলোচনা করা হবে সেগুলো নিয়ে আগে থেকে চিন্তা করার জন্য সময় আলাদা করে রাখুন না কেন? সাপ্তাহিক বাইবেল পাঠের জন্য নির্ধারিত অধ্যায়গুলো থেকে রোজ একটা অংশ পড়তে এবং সেগুলোর ওপর ধ্যান করতে মাত্র কয়েক মিনিট সময় লাগে। এ ছাড়া, একটু পরিকল্পনা করে আমরা মণ্ডলীর বই অধ্যয়ন এবং প্রহরীদুর্গ অধ্যয়নের জন্য প্রস্তুতি নিতে সময় বের করতে পারি। যে-তালিকাই আমরা বেছে নিই না কেন, একটা বিষয় নিশ্চিত: যে-বিষয়গুলো মণ্ডলীর সভাগুলোতে আলোচনা করা হচ্ছে, প্রস্তুতি নেওয়া সেগুলোর প্রতি আমাদের মনোযোগ দিতে সাহায্য করবে।
১৩. সভাগুলোতে যে-বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করা হচ্ছে, সেগুলোর প্রতি কেন্দ্রীভূত থাকার জন্য কী আমাদের সাহায্য করতে পারে?
১৩ ভালভাবে প্রস্তুতি নেওয়া ছাড়াও, কেউ কেউ দেখেছেন যে তারা যখন কিংডম হলের একেবারে সামনের আসনে বসেন, তখন সভাগুলোতে আরও বেশি করে মনোযোগ দিতে পারেন। বক্তার চোখে চোখ রাখা, কোন শাস্ত্রপদ পড়া হলে সঙ্গে সঙ্গে বাইবেল থেকে তা মিলিয়ে দেখা এবং নোট নেওয়া হল আরও অন্যান্য উপায়, যেগুলো আমাদের মনকে অন্যমনস্ক হওয়া থেকে বিরত রাখে। কিন্তু, মনোযোগী হওয়ার কৌশলের চেয়ে তৈরি হৃদয় থাকা হল আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের একত্রিত হওয়ার উদ্দেশ্য উপলব্ধি করা দরকার। মূলত যিহোবাকে উপাসনা করার জন্য আমরা আমাদের সহ বিশ্বাসীদের সঙ্গে মিলিত হই। (গীতসংহিতা ২৬:১২; লূক ২:৩৬, ৩৭) সভাগুলো হল এক গুরুত্বপূর্ণ উপায়, যেখানে আমরা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে পুষ্টি লাভ করি। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) এ ছাড়া, এগুলো আমাদের “প্রেম ও সক্রিয়ার সম্বন্ধে পরস্পরকে উদ্দীপিত করিয়া” তোলার সুযোগ করে দেয়।—ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫.
১৪. কোন্ বিষয়টা প্রকৃতই একটা সভাকে সফল করে তোলে?
১৪ কেউ কেউ হয়তো অংশগ্রহণকারীদের শিক্ষা দেওয়ার ক্ষমতার ওপর সভার গুণগত মান মূল্যায়ন করতে পারে। বক্তারা যদি অনেক দক্ষ হয়, তা হলে হয়তো বলা হয় যে সভা অনেক ভাল হয়েছে। কিন্তু, যদি কার্যকারী শিক্ষার অভাব বলে মনে হয়, তা হলে আমরা হয়তো বিপরীত মনোভাব পোষণ করতে পারি। এটা ঠিক যে, কার্যক্রমে যারা রয়েছে, তাদের শিক্ষা দেওয়ার কৌশল ব্যবহার করার এবং বিশেষ করে হৃদয়ে পৌঁছানোর জন্য যথাসাধ্য করা উচিত। (১ তীমথিয় ৪:১৬) কিন্তু আমরা যারা শুনছি, খুব বেশি সমালোচনা করা আমাদের উচিত নয়। যদিও অংশগ্রহণকারীদের শিক্ষা দেওয়ার ক্ষমতা থাকা জরুরি কিন্তু একটা সভাকে সফল করে তোলার জন্য সেটাই একমাত্র বিষয় নয়। আপনি কি একমত নন যে, আমাদের মূল চিন্তা বক্তা কীভাবে বক্তৃতা দিচ্ছেন সেটা নয়, বরং আমরা কতটা ভালভাবে শুনছি সেটা হওয়া উচিত? আমরা যখন সভাগুলোতে উপস্থিত হই এবং যে-বিষয়বস্তু তুলে ধরা হচ্ছে তার প্রতি মনোযোগ দিই, তখন আমরা ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে তাঁকে উপাসনা করছি। এটাই একটা সভাকে সফল করে তোলে। আমরা যদি ঈশ্বর সম্বন্ধে জ্ঞান নিতে আগ্রহী হই, তা হলে বক্তার ক্ষমতা যেমনই হোক না কেন, আমরা আমাদের সভাগুলো থেকে উপকার পাব। (হিতোপদেশ ২:১-৫) তা হলে, আসুন আমাদের সভাগুলোতে ‘অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ করিবার’ জন্য আমরা দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই।
ব্যক্তিগত অধ্যয়ন থেকে পুরোপুরি উপকার পাওয়া
১৫. কীভাবে অধ্যয়ন এবং ধ্যান আমাদের উপকার করতে পারে?
১৫ ব্যক্তিগত অধ্যয়ন এবং ধ্যানের সময় ‘অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ করিবার’ মাধ্যমে আমরা প্রচুর উপকার পাই। বাইবেল এবং খ্রীষ্টীয় প্রকাশনাদি পড়া এবং সেগুলো নিয়ে চিন্তা করা আমাদের ঈশ্বরের বাক্য হৃদয়ে গেঁথে নেওয়ার মূল্যবান সুযোগ করে দেবে। এর ফলে এটা আমাদের চিন্তা এবং কাজের ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে। সত্যিই, এটা আমাদের যিহোবার ইচ্ছা পালন করায় আনন্দ পেতে সাহায্য করবে। (গীতসংহিতা ১:২; ৪০:৮) তাই, আমাদের মনোযোগের ক্ষমতা গড়ে তোলা দরকার, যাতে আমাদের অধ্যয়নের সময়ে তা আমাদের উপকার করে। অন্যমনস্ক হয়ে পড়া খুবই সহজ! সামান্য বিঘ্ন সৃষ্টি যেমন, একটা ফোনের শব্দ বা কোন হইচই আমাদের মনোযোগ বিঘ্নিত করতে পারে। অথবা প্রথম প্রথম আমরা হয়তো অল্প সময়ের জন্য মনোযোগ দিতে পারি। আমরা হয়তো আধ্যাত্মিক খাবার খাওয়ার জন্য ভাল মনোভাব নিয়ে বসতে পারি কিন্তু আসলে মন হয়তো আগেই অন্য দিকে বিচরণ করছে। ঈশ্বরের বাক্য নিয়ে ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করার সময় আমরা কীভাবে ‘অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ করিতে’ পারি?
১৬. (ক) ব্যক্তিগত অধ্যয়নের জন্য আমাদের সময় নির্ধারণ করা কেন জরুরি? (খ) ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়নের জন্য আপনি কীভাবে সময় করে নিয়েছেন?
১৬ একটা তালিকা তৈরি করা এবং অধ্যয়নের জন্য উপযোগী একটা পরিবেশ বাছাই করা উপকারী। আমাদের মধ্যে বেশির ভাগ লোকের জন্য সময় এবং নিরিবিলি পরিবেশ খুবই দুর্লভ। দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততা আমাদের প্রবল স্রোতে একটা ছোট্ট ডালের মতো ভাসিয়ে নিয়ে যায়। আসলেই, আমাদের যেন স্রোতের সঙ্গে লড়াই করা এবং শান্ত ছোট্ট এক দ্বীপ খুঁজে বের করা দরকার। অধ্যয়ন করার সুযোগ এমনি এমনি আসবে বলে আমরা সেই অপেক্ষায় বসে থাকতে পারি না। পরিবর্তে, অধ্যয়নের জন্য সময় করে নিয়ে আমাদের পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। (ইফিষীয় ৫:১৫, ১৬) কেউ কেউ সকালে কিছু সময় আলাদা করে রাখে যখন হয়তো তাদের মনোযোগ কম বিক্ষিপ্ত হয়। অন্যেরা বিকেলটাকে ভাল সুযোগ বলে মনে করে। বিষয়টা হল যে, ঈশ্বর ও তাঁর পুত্র সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান নেওয়ার গুরুত্বকে আমরা অবহেলা করব না। (যোহন ১৭:৩) তাই আসুন, ব্যক্তিগত অধ্যয়নের জন্য সময় নির্ধারণ করি এবং এরপর সেই তালিকা মেনে চলি।
১৭. ধ্যান কী এবং কীভাবে এটা আমাদের সাহায্য করে?
১৭ ধ্যান—অধ্যয়নের মাধ্যমে আমরা যা শিখেছি, তা নিয়ে চিন্তা করার প্রক্রিয়া—হল অমূল্য। এটা ছাপানো পৃষ্ঠা থেকে ঈশ্বরের চিন্তাভাবনা তুলে এনে আমাদের হৃদয়ে ছেপে দিতে সাহায্য করে। ধ্যান আমাদের দেখতে সাহায্য করে যে, কীভাবে বাইবেলের পরামর্শ কাজে লাগানো যায়, যাতে আমরা ‘ঈশ্বরের বাক্যের কার্যকারী হই, শ্রোতামাত্র না হই।’ (যাকোব ১:২২-২৫) সর্বোপরি, ধ্যান আমাদের যিহোবার আরও নিকটবর্তী হতে সাহায্য করে কারণ এটা আমাদের অধ্যয়নের সময় তাঁর গুণাবলি এবং কীভাবে সেগুলো যে-বিষয়বস্তু আলোচনা করা হচ্ছে তাতে তুলে ধরা হয়েছে, তা নিয়ে চিন্তা করতে সাহায্য করে।
১৮. কার্যকারী ধ্যানের জন্য কোন্ পরিস্থিতির প্রয়োজন?
১৮ অধ্যয়ন এবং ধ্যান থেকে পুরোপুরি উপকার পেতে হলে, অন্যমনস্ক হওয়া থেকে আমাদের মন পরিষ্কার রাখতে হবে। ধ্যান করার সময় নতুন নতুন তথ্য নেওয়ার জন্য আমাদের বর্তমান জীবনের বিষয়বস্তু নিয়ে অন্যমনস্ক হওয়া বন্ধ করতে হবে। যদিও এর জন্য সময় এবং নির্জন স্থান প্রয়োজন কিন্তু ঈশ্বরের বাক্যে পাওয়া আধ্যাত্মিক খাবার এবং সত্যের জল গ্রহণ করা কতই না সতেজতাদায়ক!
১৯. (ক) ব্যক্তিগত অধ্যয়নের ক্ষেত্রে কোন্ বিষয়টা কারও কারও মনোযোগের পরিধি বাড়াতে সাহায্য করেছে? (খ) অধ্যয়নের প্রতি আমাদের মনোভাব কেমন হওয়া উচিত এবং এই গুরুত্বপূর্ণ কাজ থেকে আমরা কী উপকার পেতে পারি?
১৯ আমাদের মনোযোগ যদি অল্প সময়ের জন্য হয় এবং কিছুক্ষণ অধ্যয়ন করার পর যদি আমাদের মন অন্যদিকে চলে যায়, তা হলে কী? কেউ কেউ লক্ষ করেছে যে, প্রথম প্রথম অল্প সময়ের জন্য অধ্যয়ন এবং ধীরে ধীরে তা বাড়িয়ে, অধ্যয়নের সময় তাদের মনোযোগের ক্ষমতা বাড়াতে পারে। তাড়াহুড়ো না করে বরং যথেষ্ট সময় নিয়ে অধ্যয়ন করা আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। যে-বিষয়বস্তু বিবেচনা করা হচ্ছে, সেটার প্রতি আমাদের আন্তরিক আগ্রহ গড়ে তুলতে হবে। আর বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস শ্রেণী যে-বিশাল বিষয়বস্তু জুগিয়েছে, তা ব্যবহার করে আমরা আরও গবেষণা করতে পারি। “ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকল” অনুসন্ধান করার অনেক মূল্য রয়েছে। (১ করিন্থীয় ২:১০) তা করা ঈশ্বর সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান বাড়াতে এবং আমাদের বোঝার ক্ষমতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। (ইব্রীয় ৫:১৪) আমরা যদি ঈশ্বরের বাক্যের অধ্যবসায়ী ছাত্র হই, তা হলে আমরাও “অন্য অন্য লোককেও শিক্ষা দিতে সক্ষম” হব।—২ তীমথিয় ২:২.
২০. কীভাবে আমরা যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে এক অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং তা বজায় রাখতে পারি?
২০ খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে উপস্থিত হওয়া এবং ব্যক্তিগত অধ্যয়নে রত থাকা আমাদের যিহোবার সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং তা বজায় রাখতে অনেক সাহায্য করে। স্পষ্টত, গীতরচকের ক্ষেত্রে তা হয়েছিল যিনি ঈশ্বরকে বলেছিলেন, “আমি তোমার ব্যবস্থা কেমন ভালবাসি! তাহা সমস্ত দিন আমার ধ্যানের বিষয়।” (গীতসংহিতা ১১৯:৯৭) তা হলে, আসুন আমরা যেন অবশ্যই সমস্ত সভা, অধিবেশন এবং সম্মেলনগুলোতে নিয়মিত যোগ দিই। আর সেইসঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন এবং ধ্যান করার জন্য আমরা যেন সময় কিনে নিই। এভাবে “অধিক আগ্রহের সহিত মনোযোগ” দিলে আমরা অনেক পুরস্কার পাব।
[পাদটীকা]
^ সম্ভবত সা.কা. ৬১ সালে ইব্রীয়দের কাছে চিঠি লেখা হয়েছিল। যদি তাই হয়, তা হলে এর মাত্র প্রায় পাঁচ বছর পর সেসটিয়াস গ্যালাসের সেনাবাহিনী যিরূশালেম ঘেরাও করেছিল। খুব শীঘ্রই সেই সেনাবাহিনী ফিরে যায় আর এটা সতর্ক খ্রীষ্টানদের পালানোর সুযোগ করে দেয়। এর চার বছর পর জেনারেল টাইটাসের নেতৃত্বে রোমীয় সেনাবাহিনী শহরকে ধ্বংস করে দেয়।
আপনি কি মনে করতে পারেন?
• কেন কিছু ইব্রীয় খ্রীষ্টান প্রকৃত বিশ্বাস থেকে সরে গিয়েছিল?
• খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে আমরা কীভাবে মনোযোগ দিতে পারি?
• ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়ন এবং ধ্যান করা থেকে উপকার পাওয়ার জন্য কোন্ বিষয়টা আমাদের সাহায্য করবে?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১১ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিরূশালেমের আসন্ন ধ্বংস সম্বন্ধে ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের সতর্ক থাকার দরকার ছিল
[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
খ্রীষ্টীয় সভাগুলো থেকে উপকার পাওয়ার জন্য বাবামারা তাদের ছেলেমেয়েদের সাহায্য করতে পারে