সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“নিজেকে প্রশিক্ষিত কর”

“নিজেকে প্রশিক্ষিত কর”

“নিজেকে প্রশিক্ষিত কর”

 কাইটিয়ুস, আলটিয়ুস, ফরটিয়ুস—দ্রুততর, উচ্চতর, প্রবলতর! এগুলোই ছিল মূলমন্ত্র, যার মাধ্যমে প্রাচীন গ্রিস ও রোমের ক্রীড়াবিদরা লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রেরণা পেত। শত শত বছর ধরে, অলিম্পিয়া, ডেলফাই ও নিমিয়া এবং করিন্থের ইস্থ্‌মাসে, দেবদেবীদের “আশীর্বাদ” আর হাজার হাজার উৎসুক দর্শকের উপস্থিতিতে বিশিষ্ট ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। বহু বছর ধরে কঠোর প্রচেষ্টার পরই এইধরনের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাওয়া যেত। জয়ের গৌরব, বিজয়ীদের ও তাদের নিজস্ব শহরের ওপর বর্ষিত হতো।

অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই যে, এইরকম এক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে, খ্রীষ্টীয় গ্রিক শাস্ত্রের লেখকরা খ্রীষ্টানদের আধ্যাত্মিক দৌড়কে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সঙ্গে তুলনা করেছিল। শিক্ষার জোরালো বিষয়গুলোকে তুলে ধরার জন্য প্রেরিত পিতর ও পৌল দুজনেই প্রতিযোগিতার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন দৃষ্টান্ত দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করেছিলেন। আমাদের দিনেও, ঠিক একইরকম খ্রীষ্টীয় দৌড়ের তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের যিহুদি বিধিব্যবস্থার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়েছিল; আজকে আমাদের ধ্বংসের প্রান্তে এসে দাঁড়ানো এক বিশ্বব্যাপী বিধিব্যবস্থার সঙ্গে ‘যুদ্ধ [“প্রতিযোগিতা,” NW]’ করতে হবে। (২ তীমথিয় ২:৫; ৩:১-৫) কেউ কেউ হয়তো দেখতে পায় যে, তাদের ব্যক্তিগত “বিশ্বাসের দৌড় প্রতিযোগিতা” অবিরাম এবং ক্লান্তিকর। (১ তীমথিয় ৬:১২, দ্যা নিউ ইংলিশ বাইবেল) বাইবেলে বর্ণিত কিছু ক্রীড়া প্রতিযোগিতার তুলনামূলক পরীক্ষা সবচেয়ে উপকারী প্রমাণিত হবে।

এক সর্বোৎকৃষ্ট প্রশিক্ষক

একজন ক্রীড়াবিদের সাফল্য অনেকটা নির্ভর করে প্রশিক্ষকের ওপর। প্রাচীন খেলাগুলোর সম্বন্ধে আরকিওলজিয়া গ্রিকা বলে: “প্রতিযোগীরা এই বলে শপথ করতে বাধ্য ছিল যে, প্রস্তুতি হিসেবে তারা পুরো দশ মাস অনুশীলন করেছে।” খ্রীষ্টানদেরও অতি কঠোর প্রশিক্ষণের দরকার। খ্রীষ্টান প্রাচীন তীমথিয়কে পৌল উপদেশ দিয়েছিলেন: “ঈশ্বরীয় ভক্তিকে তোমার লক্ষ্য হিসেবে নিয়ে নিজেকে প্রশিক্ষিত কর।” (১ তীমথিয় ৪:৭, NW) একজন খ্রীষ্টান ‘ক্রীড়াবিদের’ প্রশিক্ষক কে? স্বয়ং যিহোবা ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ নন! প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “সমস্ত অনুগ্রহের ঈশ্বর, . . . নিজে তোমাদের প্রশিক্ষণের শেষ আনবেন, তিনি তোমাদের দৃঢ় করবেন, তোমাদের সবল করবেন।” —১ পিতর ৫:১০, NW.

“তোমাদের প্রশিক্ষণের শেষ আনবেন” অভিব্যক্তিটি এসেছে গ্রিক ক্রিয়াপদ থেকে যেটা থিওলজিক্যাল ল্যাক্সিকন অফ দ্যা নিউ টেস্টামেন্ট অনুসারে মূলত “কোন বস্তু [বা ব্যক্তিকে] এর উদ্দেশ্যের জন্য উপযুক্ত করে তোলে, ব্যবহারোপযোগী করার জন্য প্রস্তুত ও উপযোগী করে তোলে।” একইভাবে, লিডেল এবং স্কটের গ্রিক-ইংলিশ লেক্সিকন মন্তব্য করে যে, এই ক্রিয়াপদকে “প্রস্তুত, প্রশিক্ষণ বা পুরোপুরিভাবে সজ্জিত করা” হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায়। কোন্‌ কোন্‌ উপায়ে যিহোবা কঠোর খ্রীষ্টীয় প্রতিযোগিতার জন্য ‘প্রস্তুত করেন, প্রশিক্ষণ দেন বা পুরোপুরি সজ্জিত করেন’? এই তুলনাটা বোঝার জন্য আসুন আমরা কয়েকটা পদ্ধতি বিবেচনা করে দেখি, যা প্রশিক্ষকরা কাজে লাগাত।

প্রাচীন গ্রিসে অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাগুলো (ইংরেজি) বইটি বলে: “যুবকদের প্রশিক্ষণ দানের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তারা দুটো মৌলিক পদ্ধতি ব্যবহার করত, যার মধ্যে প্রথমটা ছিল সর্বোত্তম ফল অর্জন করার জন্য ছাত্রকে যথাসম্ভব শারীরিক প্রচেষ্টা করতে উৎসাহ দেওয়া এবং দ্বিতীয়ত তার পন্থা ও কলাকৌশলে উন্নতি করা।”

একইভাবে, যিহোবা আমাদের উৎসাহ দেন ও শক্তিশালী করেন, যাতে আমরা তাঁর সেবায় সর্বাধিক যোগ্য হওয়ার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি এবং আমাদের দক্ষতাগুলোয় উন্নতি করতে পারি। ঈশ্বর আমাদের বাইবেল, তাঁর পার্থিব সংগঠন এবং পরিপক্ব সহ খ্রীষ্টানদের মাধ্যমে শক্তিশালী করেন। মাঝে মাঝে তিনি শাসন করে আমাদের প্রশিক্ষণ দেন। (ইব্রীয় ১২:৬) অন্যান্য সময়ে তিনি আমাদের ওপর বিভিন্ন পরীক্ষা ও কষ্টভোগের অনুমতি দেন, যাতে আমরা ধৈর্য গড়ে তুলতে পারি। (যাকোব ১:২-৪) সেইসঙ্গে তিনি প্রয়োজনীয় শক্তি জোগান। ভাববাদী যিশাইয় বলেন: “যাহারা সদাপ্রভুর অপেক্ষা করে, তাহারা উত্তরোত্তর নূতন শক্তি পাইবে; তাহারা ঈগল পক্ষীর ন্যায় পক্ষসহকারে ঊদ্ধের্ব উঠিবে; তাহারা দৌড়িলে শ্রান্ত হইবে না; তাহারা গমন করিলে ক্লান্ত হইবে না।”—যিশাইয় ৪০:৩১.

সর্বোপরি, ঈশ্বর আমাদের প্রচুররূপে তাঁর পবিত্র আত্মা দান করেন, যা আমাদের তাঁর গ্রহণযোগ্য সেবা করে যেতে শক্তিশালী করে। (লূক ১১:১৩) অনেক ক্ষেত্রে ঈশ্বরের দাসেরা দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বাসের কঠিন পরীক্ষা সহ্য করেছে। যারা সহ্য করেছে, তারা আমাদের মতোই সাধারণ নারী-পুরুষ। কিন্তু, ঈশ্বরের প্রতি তাদের পূর্ণ নির্ভরতা তাদের তা সহ্য করতে সাহায্য করেছে। সত্যিই, ‘পরাক্রমের উৎকর্ষ ঈশ্বরের, তাহাদের হইতে নয়।’—২ করিন্থীয় ৪:৭.

একজন সহানুভূতিশীল প্রশিক্ষক

প্রাচীনকালের একজন প্রশিক্ষকের কাজগুলোর মধ্যে একটা ছিল “নির্দিষ্ট করে একেক জন ক্রীড়াবিদ এবং নির্দিষ্ট খেলার জন্য অনুশীলনের ধরন ও সংখ্যা নির্ধারণ করা,” একজন পণ্ডিত ব্যক্তি বলেন। ঈশ্বর যখন আমাদের প্রশিক্ষণ দেন, তখন তিনি আমাদের প্রত্যেকের পরিস্থিতি, ক্ষমতা, গঠন ও সীমাবদ্ধতাগুলো বিবেচনা করেন। প্রায়ই যিহোবার দ্বারা আমাদের প্রশিক্ষণের সময় আমরা ইয়োবের মতো তাঁকে অনুরোধ জানাই: “স্মরণ কর, তুমি মৃৎপাত্রের ন্যায় আমাকে গড়িয়াছ।” (ইয়োব ১০:৯) আমাদের সহানুভূতিশীল প্রশিক্ষক কীভাবে সাড়া দেন? যিহোবার সম্বন্ধে দায়ূদ লিখেছিলেন: “তিনিই আমাদের গঠন জানেন; আমরা যে ধূলিমাত্র, ইহা তাঁহার স্মরণে আছে।”—গীতসংহিতা ১০৩:১৪.

আপনার হয়তো কোন গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, যা আপনাকে পরিচর্যায় আপনি যতখানি করতে পারেন, তাতে সীমিত করে তোলে বা আপনি হয়তো কিছুটা আত্মগ্লানিতে ভুগছেন। সম্ভবত আপনি এক বদভ্যাস ত্যাগ করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছেন বা আপনি হয়তো মনে করেন যে, পাড়ায়, কর্মক্ষেত্রে বা স্কুলে সঙ্গীসাথিদের চাপ মোকাবিলা করার মতো সাহস আপনার নেই। আপনার পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, কখনও ভুলে যাবেন না যে, অন্য যেকোন ব্যক্তির চেয়ে—এমনকি আপনার চেয়েও—যিহোবা আপনার সমস্যাগুলো আরও ভাল বোঝেন! একজন চিন্তাশীল প্রশিক্ষক হিসেবে, তিনি সবসময় আপনাকে সাহায্য করার জন্য তৈরি আছেন, যদি আপনি তাঁর নিকটবর্তী হন।—যাকোব ৪:৮.

প্রাচীনকালে প্রশিক্ষকরা “নির্ণয় করতে পারত যে, ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুশীলনের কারণে নয় বরং অন্যান্য কারণ যেমন মানসিক আবেগ, খারাপ মেজাজ, হতাশা বা অন্য কোন কিছু থেকে হয়েছে। . . . [প্রশিক্ষকদের] আইনগত অধিকার এতটাই ব্যাপক ছিল যে, তারা এমনকি ক্রীড়াবিদদের ব্যক্তিগত জীবনেরও খোঁজখবর নিতে পারত ও যেখানে প্রয়োজন মনে করত, সেখানে তারা হস্তক্ষেপও করত।”

আপনি কি মাঝে মাঝে এই জগতের অবিরাম চাপ ও প্রলোভনের কারণে ক্লান্ত বা দুর্বল বোধ করেন? আপনার প্রশিক্ষক হিসেবে, যিহোবা আপনার প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী। (১ পিতর ৫:৭) তিনি আপনার মধ্যে আধ্যাত্মিক দুর্বলতার বা শ্রান্তির যেকোন লক্ষণকে সঙ্গে সঙ্গে নির্ণয় করেন। যদিও যিহোবা আমাদের স্বাধীন ইচ্ছা ও ব্যক্তিগত পছন্দকে সম্মান করেন কিন্তু আমাদের অনন্ত মঙ্গলের কথা চিন্তা করে তিনি দরকার হলে প্রচুর সাহায্য এবং সংশোধন জোগান। (যিশাইয় ৩০:২১) কীভাবে? বাইবেল এবং বাইবেল-ভিত্তিক প্রকাশনা, মণ্ডলীর আধ্যাত্মিক-মনা প্রাচীন এবং আমাদের প্রেমময় ভ্রাতৃসমাজের মাধ্যমে।

“সর্ব্ববিষয়ে ইন্দ্রিয়দমন”

অবশ্য, শুধু একজন ভাল প্রশিক্ষক ছাড়াও আরও বেশি কিছুর প্রয়োজন ছিল। অনেক কিছুই নির্ভর করত স্বয়ং ক্রীড়াবিদ এবং কঠোর প্রশিক্ষণ করার বিষয়ে তার অঙ্গীকারের ওপর। স্বাস্থ্যবিধান ছিল বেশ কড়াকড়ি, যেহেতু প্রশিক্ষণের মধ্যে কঠোর সংযম এবং পরিমিত খাদ্যতালিকা ছিল। হোরেস নামে সা.কা.পূ. প্রথম শতাব্দীর একজন কবি বলেছিলেন যে, প্রতিযোগীরা “চির আকাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর” জন্য “নারী এবং মদ থেকে বিরত থাকত।” আর বাইবেল পণ্ডিত এফ. সি. কুকের কথা অনুসারে, খেলায় অংশগ্রহণকারীদের “দশ মাস . . . আত্মসংযম [এবং] পরিমিত খাদ্যতালিকা মেনে চলতে হতো।”

করিন্থের খ্রীষ্টানদের লেখার সময় পৌল এই তুলনা ব্যবহার করেছিলেন, যে-শহরটা পার্শ্ববর্তী ইস্থ্‌মিয়ান ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সঙ্গে বেশ পরিচিত ছিল: “যে কেহ মল্লযুদ্ধ করে, সে সর্ব্ববিষয়ে ইন্দ্রিয়দমন করে।” (১ করিন্থীয় ৯:২৫) সত্য খ্রীষ্টানরা জগতের বস্তুবাদী, অনৈতিক এবং নোংরা জীবনধারাকে এড়িয়ে চলে। (ইফিষীয় ৫:৩-৫; ১ যোহন ২:১৫-১৭) অধার্মিক ও অশাস্ত্রীয় আচরণগুলোকেও অবশ্যই পুরোপুরি ত্যাগ করতে হবে এবং সেই জায়গায় খ্রীষ্টতুল্য গুণাবলি গ্রহণ করতে হবে।—কলসীয় ৩:৯, ১০, ১২.

এটা কীভাবে করা যায়? একটা উপায় সম্বন্ধে পৌল এক জোরালো দৃষ্টান্তের মাধ্যমে কীভাবে এর উত্তর দিয়েছেন, তা লক্ষ করুন: “আমার নিজ দেহকে প্রহার করিয়া দাসত্বে রাখিতেছি, পাছে অন্য লোকদের কাছে প্রচার করিবার পর আমি আপনি কোন ক্রমে অগ্রাহ্য হইয়া পড়ি।”—১ করিন্থীয় ৯:২৭.

পৌল এখানে কতই না এক জোরালো বিষয় তুলে ধরেছিলেন! তিনি এখানে শারীরিক আঘাতের বিষয় উল্লেখ করছিলেন না। এর পরিবর্তে তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, তার মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব ছিল। মাঝে মাঝে তিনি এমন কিছু করে ফেলতেন, যা তিনি করতে চাননি এবং যা তিনি করতে চাইতেন তা করতেন না। কিন্তু, তিনি কখনও দুর্বলতাগুলোকে তার ওপর কর্ত্তৃত্ব করার জন্য প্রশ্রয় দেননি। তিনি ‘নিজ দেহকে প্রহার করিয়াছিলেন,’ অর্থাৎ মাংসিক আকাঙ্ক্ষা ও আচরণগুলোকে জোরালোভাবে পরাভূত করেছিলেন।—রোমীয় ৭:২১-২৫.

সমস্ত খ্রীষ্টানের একই বিষয় করা দরকার। করিন্থের কিছু ব্যক্তিদের পরিবর্তনের বিষয়ে পৌল বলেছিলেন, যারা আগে ব্যভিচার, প্রতিমাপূজা, সমকামিতা, চুরি এবং আরও অন্যান্য কাজে রত ছিল। কী তাদের পরিবর্তন করতে সাহায্য করেছিল? ঈশ্বরের বাক্য ও পবিত্র আত্মার শক্তি এবং সেইসঙ্গে এর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করার জন্য তাদের দৃঢ়সংকল্প। “কিন্তু তোমরা . . . আপনাদিগকে ধৌত করিয়াছ,” পৌল বলেছিলেন “প্রভু যীশু খ্রীষ্টের নামে ও আমাদের ঈশ্বরের আত্মায় . . . পবিত্রীকৃত হইয়াছ, ধার্ম্মিক গণিত হইয়াছ।” (১ করিন্থীয় ৬:৯-১১) যারা এইরকম বদভ্যাসগুলো পরিত্যাগ করেছিল, তাদের বিষয়ে পিতরও একই কথা লিখেছিলেন। খ্রীষ্টান হিসেবে তারা সবাই সত্যিকারের পরিবর্তনগুলো করেছিল।—১ পিতর ৪:৩, ৪.

সুনির্দিষ্ট প্রচেষ্টাগুলো

পৌল আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলো অনুধাবন করার ক্ষেত্রে তার একনিষ্ঠ ও পূর্ণ মনোযোগকে এই কথা বলে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছিলেন: “আমি . . . এরূপে মুষ্টিযুদ্ধ করিতেছি যে শূন্যে আঘাত করিতেছি না।” (১ করিন্থীয় ৯:২৬) একজন প্রতিযোগী কীভাবে মুষ্টাঘাত করেন বা আঘাত করেন? গ্রিক ও রোমীয়দের জীবন (ইংরেজি) বইটি উত্তরে বলে: “কেবল প্রচণ্ড শক্তিরই যে দরকার ছিল তা নয় কিন্তু সেইসঙ্গে শত্রুর দুর্বল দিকটা খুঁজে বের করার জন্য চোখের দৃঢ়তারও প্রয়োজন হতো। সেইসঙ্গে কুস্তি-স্কুলগুলোতে শেখা হাত দিয়ে নিপুণভাবে আঘাত এবং দ্রুতগতিতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করাও সমান কার্যকারী ছিল।”

আমাদের অসিদ্ধ মাংস হল আমাদের শত্রুগুলোর মধ্যে একটা। আমরা কি আমাদের ব্যক্তিগত “দুর্বল দিকগুলো” চিহ্নিত করেছি? আমরা কি অন্যেরা আমাদের যেভাবে দেখে—বিশেষ করে শয়তান আমাদের যেভাবে দেখে থাকে—সেভাবে নিজেদের দেখি? এর জন্য আন্তরিক আত্ম-বিশ্লেষণ ও আত্মপরীক্ষা এবং পরিবর্তনগুলো করার জন্য ইচ্ছার প্রয়োজন। আত্ম-প্রতারণা খুব সহজেই আসতে পারে। (যাকোব ১:২২) মূর্খতাপূর্ণ কাজের জন্য অজুহাত দেখানো কত সহজ! (১ শমূয়েল ১৫:১৩-১৫, ২০, ২১) সেটা ‘শূন্যে আঘাত করিবারই’ সমান।

এই শেষ কালে যারা যিহোবাকে সন্তুষ্ট করতে এবং জীবন পেতে চায় তাদের কখনও সঠিক ও অন্যায়ের মধ্যে, ঈশ্বরের মণ্ডলী ও কলুষিত জগতের মধ্যে বেছে নিতে দ্বিধা বোধ করা উচিত নয়। তাদের অবশ্যই চঞ্চল মনোভাব, ‘তাহাদের সকল পথে অস্থির’ হওয়া এড়িয়ে চলা উচিত। (যাকোব ১:৮) তাদের কখনও নিষ্ফল জিনিস অনুধাবন করার জন্য প্রচেষ্টা করা উচিত নয়। একজন ব্যক্তি যখন এই সোজা, একনিষ্ঠ পথ অনুসরণ করেন, তখন তিনি সুখী হবেন এবং ‘তাহার উন্নতি সকলের প্রত্যক্ষ হইবে।’—১ তীমথিয় ৪:১৫.

হ্যাঁ, খ্রীষ্টীয় দৌড় এখনও চলছে। যিহোবা—আমাদের মহান প্রশিক্ষক—প্রেমের সঙ্গে আমাদের ধৈর্য ও চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও সাহায্য জোগাচ্ছেন। (যিশাইয় ৪৮:১৭) প্রাচীনকালের ক্রীড়াবিদদের মতো আমাদের বিশ্বাসের যুদ্ধে আত্মশাসন, আত্মসংযম এবং একনিষ্ঠ মনোভাব গড়ে তোলা দরকার। আমাদের সুনির্দিষ্ট প্রচেষ্টাগুলো প্রচুররূপে পুরস্কৃত হবে।—ইব্রীয় ১১:৬.

[৩১ পৃষ্ঠার বাক্স]

‘তাহাকে তৈলাভিষিক্ত করুন’

প্রাচীন গ্রিসে ক্রীড়াসংক্রান্ত প্রশিক্ষণ কাজের কিছুটা অংশ একজন অভিষিক্তকারী করত। তার কাজ ছিল অনুশীলন করতে যাবে এমন পুরুষদের তেল দিয়ে অভিষিক্ত করা। প্রশিক্ষকরা “লক্ষ করেছিল যে, প্রশিক্ষণের আগে দক্ষভাবে মাংসপেশী মালিশ করার অনেক উপকারী প্রভাব আছে এবং যে-ক্রীড়াবিদ এক দীর্ঘ প্রশিক্ষণের পর্ব সম্পূর্ণ করেছেন, সতর্কভাবে, হালকা মালিশ তাকে ক্লান্তি কাটিয়ে উঠতে ও সতেজতা লাভ করতে বেশ সাহায্য করে,” প্রাচীন গ্রিসে অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতাগুলো বইটি মন্তব্য করে।

আক্ষরিক অর্থে তেল মালিশ করা যেমন একজনের দেহের জন্য উপশমকারী, আরোগ্যদায়ক হতে পারে, তেমনই একজন ক্লান্ত খ্রীষ্টান ‘ক্রীড়াবিদের’ ওপর ঈশ্বরের বাক্যের প্রয়োগ তাকে সংশোধিত করতে, সান্ত্বনা দিতে এবং আরোগ্যলাভে সাহায্য করতে পারে। তাই, যিহোবার নির্দেশাধীনে মণ্ডলীর প্রাচীন ব্যক্তিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এইধরনের ব্যক্তির জন্য প্রার্থনা করতে, রূপক অর্থে ‘প্রভুর [“যিহোবার,” NW] নামে তাহাকে তৈলাভিষিক্ত করিতে,’ যা আধ্যাত্মিক আরোগ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি।—যাকোব ৫:১৩-১৫; গীতসংহিতা ১৪১:৫.

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]

বলিদান করার পর ক্রীড়াবিদরা শপথ করত যে, তারা দশ মাস প্রশিক্ষণ নিয়েছে

[সৌজন্যে]

Musée du Louvre, Paris

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]

Copyright British Museum