যারা বাধ্য যিহোবা তাদের আশীর্বাদ করেন ও সুরক্ষা জোগান
যারা বাধ্য যিহোবা তাদের আশীর্বাদ করেন ও সুরক্ষা জোগান
“কিন্তু যে জন আমার কথা শুনে, সে নির্ভয়ে বাস করিবে, শান্ত থাকিবে, অমঙ্গলের আশঙ্কা করিবে না।”—হিতোপদেশ ১:৩৩.
১, ২. ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতা কেন গুরুত্বপূর্ণ? ব্যাখ্যা করুন।
তুলতুলে, নরম হলুদ মুরগির বাচ্চাগুলো ছোট্ট ঘাসের মধ্যে ব্যস্ত হয়ে খাবার খুঁটে বেড়াচ্ছে, একটা বাজপাখি যে ওপরে উড়ে বেড়াচ্ছে, সেটা এরা খেয়ালই করেনি। হঠাৎ মা মুরগি এক আতঙ্কিত ও তীক্ষ্ণ স্বরে বিপদসংকেত দেয় এবং পাখা মেলে ধরে। বাচ্চারা তার কাছে দৌড়ে আসে এবং কয়েক মুহূর্তের মধ্যে তার পালখের নিচে নিরাপদে আশ্রয় নেয়। বাজপাখি আক্রমণ করতে ব্যর্থ হয়। * শিক্ষাটা কী? বাধ্যতা জীবন বাঁচায়!
২ এই শিক্ষাটা আজকে বিশেষ করে খ্রীষ্টানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কারণ ঈশ্বরের লোকেদের শিকার করার জন্য শয়তান যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। (প্রকাশিত বাক্য ১২:৯, ১২, ১৭) তার লক্ষ্য হল আমাদের আধ্যাত্মিকতা ধ্বংস করে দেওয়া, যাতে আমরা যিহোবার অনুগ্রহ এবং অনন্ত জীবনের প্রত্যাশা হারিয়ে ফেলি। (১ পিতর ৫:৮) কিন্তু, আমরা যদি ঈশ্বরের নিকটবর্তী হই এবং তাঁর বাক্য ও সংগঠনের মাধ্যমে যে-নির্দেশনা পাই, তার প্রতি সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দিই, তা হলে আমরা তাঁর সুরক্ষিত যত্ন সম্বন্ধে নিশ্চিত থাকতে পারি। গীতরচক লিখেছিলেন: “তিনি আপন পালখে তোমাকে আবৃত করিবেন, তাঁহার পক্ষের নীচে তুমি আশ্রয় পাইবে।”—গীতসংহিতা ৯১:৪.
এক অবাধ্য জাতি শিকারে পরিণত হয়
৩. ইস্রায়েলীয়দের বার বার অবাধ্যতার ফল কী হয়েছিল?
৩ ইস্রায়েল জাতি যখন যিহোবার প্রতি বাধ্য ছিল, তখন তারা তাঁর সুরক্ষিত যত্ন থেকে নিয়মিত উপকার পেত। কিন্তু, প্রায়ই লোকেরা তাদের নির্মাণকর্তাকে ত্যাগ করে কাষ্ঠ এবং প্রস্তরের যে-দেবতা—‘অবস্তু যাহারা উপকার ও উদ্ধার করিতে পারে না’—সেগুলোর দিকে দৃষ্টি দিয়েছিল। (১ শমূয়েল ১২:২১) এইধরনের বিদ্রোহের কয়েক শতাব্দী পর, পুরো জাতি ধর্মভ্রষ্টতায় এতটাই ডুবে গিয়েছিল যে, তাদের উদ্ধার করা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। তাই, যীশু দুঃখ করে বলেছিলেন: “হা যিরূশালেম, যিরূশালেম, তুমি ভাববাদিগণকে বধ করিয়া থাক, ও তোমার নিকটে যাহারা প্রেরিত হয়, তাহাদিগকে পাথর মারিয়া থাক! কুক্কুটী যেমন আপন শাবকদিগকে পক্ষের নীচে একত্র করে, তদ্রূপ আমিও কত বার তোমার সন্তানদিগকে একত্র করিতে ইচ্ছা করিয়াছি, কিন্তু তোমরা সম্মত হইলে না। দেখ, তোমাদের গৃহ তোমাদের নিমিত্ত উৎসন্ন পড়িয়া রহিল।”—মথি ২৩:৩৭, ৩৮.
৪. যিহোবা যে যিরূশালেমকে ত্যাগ করেছিলেন, তা কীভাবে সা.কা. ৭০ সালে প্রমাণিত হয়েছিল?
৪ যিহোবা যে বিপথগামী ইস্রায়েলীয়দের ত্যাগ করেছিলেন, সেটার তিক্ত প্রমাণ সা.কা. ৭০ সালে দেখা গিয়েছিল। সেই বছর রোমীয় সৈন্যরা তাদের ঈগলের প্রতীক যুক্ত পতাকা তুলে ধরে শোচনীয় হত্যাকাণ্ড চালানোর জন্য যিরূশালেমের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওই সময় নিস্তারপর্ব উদ্যাপন করার জন্য নগর লোকারণ্য ছিল। তাদের অনেক বলিদানও ঈশ্বরের অনুগ্রহ পেতে তাদের সাহায্য করেনি। সেটাই ছিল অবাধ্য রাজা শৌলের প্রতি বলা শমূয়েলের কথাগুলোর এক দুঃখজনক অনুস্মারক: “সদাপ্রভুর রবে অবধান করিলে যেমন, তেমন কি হোমে ও বলিদানে সদাপ্রভু প্রসন্ন হন? দেখ, বলিদান অপেক্ষা আজ্ঞাপালন উত্তম, এবং মেষের মেদ অপেক্ষা অবধান করা উত্তম।”—১ শমূয়েল ১৫:২২.
৫. যিহোবা কীধরনের বাধ্যতা চান এবং আমরা কীভাবে জানি যে, এইধরনের বাধ্যতা দেখানো সম্ভব?
৫ যদিও যিহোবা বাধ্যতার ওপর জোর দেন কিন্তু তিনি অসিদ্ধ মানুষের সীমাবদ্ধতা সম্বন্ধে খুব ভালভাবেই অবগত আছেন। (গীতসংহিতা ১৩০:৩, ৪) তিনি যা চান তা হল, হৃদয়ের আন্তরিকতা এবং বাধ্যতা যার ভিত্তি হল বিশ্বাস, প্রেম ও তাঁকে অখুশি করার এক গঠনমূলক ভীতি। (দ্বিতীয় বিবরণ ১০:১২, ১৩; হিতোপদেশ ১৬:৬; যিশাইয় ৪৩:১০; মীখা ৬:৮; রোমীয় ৬:১৭) এইধরনের বাধ্যতা দেখানো যে সম্ভব, তা ‘প্রাক-খ্রীষ্টীয় বৃহৎ সাক্ষিমেঘের’ দ্বারা প্রকাশ পেয়েছিল, যারা ভয়ংকর পরীক্ষাগুলোর এমনকি মৃত্যুর মুখেও তাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রেখেছিল। (ইব্রীয় ১১:৩৬, ৩৭; ১২:১) তারা যিহোবার হৃদয়কে কতই না আনন্দিত করেছিল! (হিতোপদেশ ২৭:১১) অন্যেরা আবার, যদিও শুরুতে বিশ্বস্ত ছিল কিন্তু বাধ্যতার পথে স্থির থাকতে ব্যর্থ হয়েছিল। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন প্রাচীন যিহূদার রাজা যোয়াশ।
একজন রাজা কুসংসর্গের কারণে বিনষ্ট হন
৬, ৭. যিহোয়াদার জীবিতকালে, যোয়াশ কেমন রাজা ছিলেন?
৬ রাজা যোয়াশ শিশু অবস্থায় অল্পের জন্য গুপ্তহত্যা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। যোয়াশের বয়স যখন সাত বছর, তখন মহাযাজক যিহোয়াদা সাহসের সঙ্গে তাকে গুপ্ত স্থান থেকে বের করে আনেন এবং তাকে রাজা করেন। ঈশ্বর-ভয়শীল ব্যক্তি যিহোয়াদা যেহেতু যোয়াশের পিতা এবং উপদেশকের ভূমিকা পালন করেছিলেন, তাই যুবক শাসক “যিহোয়াদা যাজকের সমস্ত জীবনকালে . . . সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে যাহা ন্যায্য, তাহাই করিতেন।”—২ বংশাবলি ২২:১০–২৩:১, ১১; ২৪:১, ২.
৭ যোয়াশের উত্তম কাজগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল যিহোবার মন্দির মেরামত—যে-কাজ “যোয়াশের মনোরথ” অনুযায়ী ছিল। তিনি মহাযাজক যিহোয়াদাকে যিহূদা এবং যিরূশালেম থেকে মন্দিরের কর সংগ্রহ করার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, যা ‘মোশির দ্বারা নিরূপিত’ হয়েছিল, যাতে মেরামত কাজের খরচ বহন করা যায়। স্পষ্টত, যিহোয়াদা যুবক রাজাকে ঈশ্বরের ব্যবস্থা অধ্যয়ন করতে এবং সেটির বাধ্য থাকার জন্য উৎসাহ দিতে সফল হয়েছিলেন। এর ফলে মন্দিরের এবং মন্দিরের সাজসরঞ্জামের কাজ খুব দ্রুত শেষ হয়েছিল।—২ বংশাবলি ২৪:৪, ৬, ১৩, ১৪; দ্বিতীয় বিবরণ ১৭:১৮.
৮. (ক) মূলত কোন্ বিষয়টা যোয়াশের আধ্যাত্মিক অধঃপতন ঘটিয়েছিল? (খ) রাজার অবাধ্যতা পরিশেষে তাকে কী করতে পরিচালিত করেছিল?
৮ দুঃখের বিষয় যে, যিহোবার প্রতি যোয়াশের বাধ্যতা শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয়নি। কেন? ঈশ্বরের বাক্য আমাদের বলে: “যিহোয়াদার মৃত্যুর পরে যিহূদার অধ্যক্ষগণ আসিয়া রাজার কাছে প্রণিপাত করিল; তখন রাজা তাহাদেরই কথায় কর্ণপাত করিতে লাগিলেন। পরে তাহারা আপনাদের পিতৃপুরুষদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর গৃহ ত্যাগ করিয়া আশেরা-মূর্ত্তি ও নানা প্রতিমার পূজা করিতে লাগিল; আর তাহাদের এই দোষ প্রযুক্ত যিহূদার ও যিরূশালেমের উপরে ক্রোধ উপস্থিত হইল।” এ ছাড়া, যিহূদার অধ্যক্ষদের মন্দ প্রভাব রাজাকে ঈশ্বরের ভাববাদীদের কথায় কান না দিতে পরিচালিত করেছিল, যে-ভাববাদীদের মধ্যে একজন ছিলেন যিহোয়াদার পুত্র সখরিয়, যিনি সাহসের সঙ্গে যোয়াশকে এবং লোকেদের তাদের অবাধ্যতার জন্য তিরস্কার করেছিলেন। অনুতপ্ত হওয়ার পরিবর্তে যোয়াশ সখরিয়কে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করান। যোয়াশ কত নিষ্ঠুর ও অবাধ্য এক ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন—এই সমস্ত কিছু ঘটেছিল কুসংসর্গমূলক প্রভাবের প্রতি বশ্যতা স্বীকারের ফলে।—২ বংশাবলি ২৪:১৭-২২; ১ করিন্থীয় ১৫:৩৩.
৯. যোয়াশ এবং অধ্যক্ষদের চূড়ান্ত পরিণতি কীভাবে অবাধ্য হওয়ার মূর্খতার ওপর জোর দিয়েছিল?
৯ যিহোবাকে ত্যাগ করার ফলে, যোয়াশ ও তার দুষ্ট অধ্যক্ষ সঙ্গীদের কী হয়েছিল? সিরিয়ার সেনাবাহিনী—মাত্র “অল্প লোকবিশিষ্ট”—যিহূদা আক্রমণ করে এবং “লোকেদের মধ্যে জনাধ্যক্ষ সকলকে বিনষ্ট করিল।” এ ছাড়া, আক্রমণকারীরা রাজাকে তার নিজের সম্পত্তি ও সেইসঙ্গে পবিত্র স্থানের স্বর্ণ এবং রৌপ্য দিয়ে দিতে বাধ্য করেছিল। যদিও যোয়াশ রক্ষা পেয়েছিলেন কিন্তু তিনি দুর্বল হয়ে গিয়েছিলেন এবং অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এর কিছুদিন পরেই, তার নিজের দাসদের মধ্যে চক্রান্তকারীরা গোপনে তাকে হত্যা করে। (২ বংশাবলি ২৪:২৩-২৫; ২ রাজাবলি ১২:১৭, ১৮) ইস্রায়েলের প্রতি যিহোবার বাক্য কতই না সত্য: “যদি তুমি আপন ঈশ্বর সদাপ্রভুর রবে কর্ণপাত না কর, . . . তাঁহার যে সমস্ত আজ্ঞা ও বিধি . . . যত্নপূর্ব্বক সেই সকল পালন না কর, তবে এই সমস্ত অভিশাপ তোমার প্রতি বর্ত্তিবে ও তোমাকে আশ্রয় করিবে”!—দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:১৫.
একজন সচিব বাধ্যতার কারণে রক্ষা পেয়েছিলেন
১০, ১১. (ক) বারূকের প্রতি যিহোবার পরামর্শ বিবেচনা করা কেন সাহায্যকারী? (খ) বারূককে যিহোবা কোন্ পরামর্শ দিয়েছিলেন?
১০ খ্রীষ্টীয় পরিচর্যায় আপনি যে-লোকেদের দেখা পান, তাদের মধ্যে খুব কম লোকই সুসমাচারের প্রতি আগ্রহ দেখায় বলে কি আপনি কখনও কখনও নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন? অথবা আপনি কি মাঝে মাঝে তাদের প্রাচুর্যপূর্ণ এবং আত্মপ্রিয় জীবনযাপন দেখে কিছুটা ঈর্ষা বোধ করেন? যদি তাই হয়, তা হলে যিরমিয়ের সচিব বারূক এবং তার প্রতি যিহোবার প্রেমময় পরামর্শ সম্বন্ধে বিবেচনা করুন।
১১ বারূক এক ভাববাণীমূলক বার্তা লিখতে যাবেন এমন সময় তিনি নিজেই যিহোবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন। কেন? কারণ বারূক তার জীবন নিয়ে দুঃখ করতে শুরু করেছিলেন এবং ঈশ্বরকে সেবা করার বিশেষ সুযোগের চেয়ে আরও ভাল কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন। বারূকের আচরণে এই পরিবর্তন দেখে যিহোবা তাকে স্পষ্ট কিন্তু এক সদয় পরামর্শ দিয়েছিলেন এই বলে: “তুমি কি আপনার জন্য মহৎ মহৎ বিষয় চেষ্টা করিবে? সে চেষ্টা করিও না; কেননা দেখ, আমি সমস্ত মর্ত্ত্যের প্রতি অমঙ্গল ঘটাইব, . . . কিন্তু তুমি যে সকল স্থানে যাইবে, সে সকল স্থানে লুট দ্রব্যের ন্যায় তোমার প্রাণ তোমাকে দিব।”—যিরমিয় ৩৬:৪; ৪৫:৫.
১২. বর্তমান বিধিব্যবস্থায় কেন আমরা নিজেদের জন্য ‘মহৎ মহৎ বিষয়ের’ চেষ্টা করাকে এড়িয়ে চলব?
১২ বারূকের প্রতি যিহোবার ওই কথাগুলোর মধ্যে আপনি কি এই উত্তম ব্যক্তির জন্য তাঁর গভীর উদ্বিগ্নতা উপলব্ধি করতে পারছেন, যিনি যিরমিয়ের সঙ্গে একত্রে, যথেষ্ট বিশ্বস্ততা ও সাহসের সঙ্গে যিহোবার সেবা করে এসেছেন? একইভাবে আজকেও যিহোবা সেই সমস্ত ব্যক্তির জন্য গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, যারা এই বিধিব্যবস্থায় যেটাকে তারা আরও ভাল কিছু বলে মনে করে, তা পাওয়ার চেষ্টা করতে প্রলোভিত হয়। আনন্দের বিষয় যে, বারূকের মতো এইধরনের ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকে দায়িত্ববান আধ্যাত্মিক ভাইদের প্রেমময় সংশোধনের প্রতি সাড়া দিয়েছে। (লূক ১৫:৪-৭) হ্যাঁ, আমরা যেন সবাই এটা বুঝতে পারি যে, যারা এই বিধিব্যবস্থায় নিজেদের জন্য ‘মহৎ মহৎ বিষয়ের’ চেষ্টা করে তাদের কোন ভবিষ্যৎ নেই। এইধরনের ব্যক্তিরা যে শুধু প্রকৃত সুখ পেতেই ব্যর্থ হয় তা নয় কিন্তু আরও শোচনীয় হল যে, খুব শীঘ্রই এই জগৎ ও এর স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গে তারাও শেষ হয়ে যাবে।—মথি ৬:১৯, ২০; ১ যোহন ২:১৫-১৭.
১৩. বারূকের ঘটনা নম্রতা সম্বন্ধে আমাদের কী শিক্ষা দেয়?
১৩ বারূকের ঘটনা আমাদের নম্রতা সম্বন্ধেও এক উত্তম শিক্ষা দেয়। লক্ষ করুন যে, যিহোবা বারূককে সরাসরি পরামর্শ দেননি কিন্তু যিরমিয়ের মাধ্যমে দিয়েছিলেন, যার অসিদ্ধতা এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে বারূক হয়তো খুব ভাল করেই জানতেন। (যিরমিয় ৪৫:১, ২) তবুও, বারূক গর্বিত মনোভাব দেখাননি; তিনি নম্রভাবে পরামর্শের প্রকৃত উৎস সম্বন্ধে উপলব্ধি করেছিলেন, যিনি হলেন যিহোবা। (২ বংশাবলি ২৬:৩, ৪, ১৬; হিতোপদেশ ১৮:১২; ১৯:২০) ‘সচেতন হওয়ার আগে আমরা যদি ভুল পদক্ষেপ নিই’ এবং ঈশ্বরের বাক্য থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ পাই, তা হলে আসুন আমরা বারূকের পরিপক্বতা, আধ্যাত্মিক উপলব্ধি এবং নম্রতা অনুকরণ করি।—গালাতীয় ৬:১, NW.
১৪. আমাদের মধ্যে যারা নেতৃত্ব দেয়, তাদের বাধ্য থাকা কেন আমাদের জন্য ভাল?
১৪ আমাদের এই নম্রতা, যারা পরামর্শ দেয় তাদেরও সাহায্য করে। ইব্রীয় ১৩:১৭ পদ বলে: “তোমরা তোমাদের নেতাদিগের আজ্ঞাগ্রাহী ও বশীভূত হও, কারণ নিকাশ দিতে হইবে বলিয়া তাঁহারা তোমাদের প্রাণের নিমিত্ত প্রহরি-কার্য্য করিতেছেন, —যেন তাঁহারা আনন্দপূর্ব্বক সেই কার্য্য করেন, আর্ত্তস্বরপূর্ব্বক না করেন; কেননা ইহা তোমাদের পক্ষে মঙ্গলজনক নয়।” কতবারই না প্রাচীনরা যিহোবার কাছে আন্তরিক হৃদয়ে সাহস, প্রজ্ঞা এবং কৌশলতার জন্য প্রার্থনা করে, যা তাদের পালকের কাজের কঠিন বিষয়গুলো পূরণ করার জন্য প্রয়োজনীয়! আসুন আমরা ‘এই প্রকার লোকদিগকে চিনিয়া মান্য করি।’—১ করিন্থীয় ১৬:১৮.
১৫. (ক) যিরমিয় কীভাবে বারূকের প্রতি তার আস্থা দেখিয়েছিলেন? (খ) নম্রভাবে বাধ্য থাকার ফলে বারূক কীভাবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন?
১৫ বারূক যে তার চিন্তাধারার সংশোধন করেছিলেন, তা স্পষ্ট হয়েছিল কারণ যিরমিয় পরে তাকে আরও কঠিন দায়িত্ব দিয়েছিলেন—মন্দিরে গিয়ে উচ্চস্বরে বিচার বার্তা পড়া, যা তিনি যিরমিয়ের মুখ থেকে শুনে নিজে লিখেছিলেন। বারূক কি বাধ্য হয়েছিলেন? হ্যাঁ, তিনি “যিরমিয় ভাববাদীর আজ্ঞানুসারে সমস্ত কার্য্য” করেছিলেন। বস্তুতপক্ষে, তিনি এমনকি একই বার্তা যিরূশালেমের অধ্যক্ষদের সামনে পড়েছিলেন, যার জন্য নিঃসন্দেহে যথেষ্ট সাহসের প্রয়োজন ছিল। (যিরমিয় ৩৬:১-৬, ৮, ১৪, ১৫) কল্পনা করুন যে, প্রায় ১৮ বছর পর যখন এই নগর বাবিলনীয়দের দ্বারা পতিত হয়েছিল, তখন বারূক রক্ষা পাওয়ায় কতই না কৃতজ্ঞ হয়েছিলেন কারণ তিনি যিহোবার সাবধানবাণীতে মনোযোগ দিয়েছিলেন এবং নিজের জন্য ‘মহৎ মহৎ বিষয়ের’ চেষ্টা করা বন্ধ করেছিলেন!—যিরমিয় ৩৯:১, ২, ১১, ১২; ৪৩:৬.
অবরোধের সময় বাধ্যতা জীবন রক্ষা করেছিল
১৬. সাধারণ কাল পূর্ব ৬০৭ সালে বাবিলনীয়রা যখন যিরূশালেম আক্রমণ করে, তখন যিহোবা কীভাবে যিহুদিদের প্রতি করুণা দেখিয়েছিলেন?
১৬ সাধারণ কাল পূর্ব ৬০৭ সালে যখন যিরূশালেমের বিনাশ আসে, তখন বাধ্য ব্যক্তিদের প্রতি ঈশ্বরের করুণা আবারও প্রকাশ পায়। অবরোধের চূড়ান্ত মুহূর্তে যিহোবা যিহুদিদের বলেছিলেন: “দেখ, তোমাদের সম্মুখে আমি জীবনের পথ ও মৃত্যুর পথ রাখিতেছি। যে ব্যক্তি এই নগরে থাকিবে, সে খড়্গে, দুর্ভিক্ষে ও মহামারীতে মারা পড়িবে; কিন্তু যে ব্যক্তি বাহিরে গিয়া তোমাদের অবরোধকারী কল্দীয়দের পক্ষে দাঁড়াইবে, সে বাঁচিবে, এবং তাহার প্রাণ তাহার পক্ষে লুটদ্রব্যের ন্যায় হইবে।” (যিরমিয় ২১:৮, ৯) যদিও যিরূশালেমের লোকেরা ধ্বংসের যোগ্য ছিল কিন্তু যারা এমনকি সেই কঠিন শেষ সময়েও যিহোবার বাধ্য ছিল, তাদের প্রতি তিনি করুণা দেখিয়েছিলেন। *
১৭. (ক) কোন্ দুটো উপায়ে যিরমিয়ের বিশ্বাস পরীক্ষিত হয়েছিল যখন যিহোবা আক্রান্ত যিহুদিদের ‘কল্দীয়দের পক্ষে দাঁড়াইবার’ জন্য তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন? (খ) যিরমিয়ের সাহসিকতাপূর্ণ বাধ্যতা থেকে আমরা কীভাবে উপকৃত হতে পারি?
১৭ যিহুদিদের আত্মসমর্পণ করতে বলা নিঃসন্দেহে যিরমিয়ের বাধ্যতাকে পরীক্ষা করেছিল। একটা বিষয় হল যে, তিনি ঈশ্বরের নামের জন্য উদ্যোগী ছিলেন। তিনি এটিকে শত্রুদের দ্বারা নিন্দিত হতে দিতে চাননি, যারা তাদের জয়ের গৌরব নিষ্প্রাণ দেবতাদের ওপর আরোপ করবে। (যিরমিয় ৫০:২, ১১; বিলাপ ২:১৬) এ ছাড়া যিরমিয় জানতেন যে, লোকেদের আত্মসমর্পণ করতে বলে তিনি তার নিজের জীবনকে অনেক ঝুঁকির মুখে ফেলেছিলেন কারণ অনেকে তার কথাগুলোকে রাজদ্রোহী হিসেবে ব্যাখ্যা করবে। তবুও, তিনি ভয়ে সংকুচিত হয়ে পড়েননি কিন্তু বাধ্যতার সঙ্গে যিহোবার বার্তা ঘোষণা করেছিলেন। (যিরমিয় ৩৮:৪, ১৭, ১৮) যিরমিয়ের মতো আমরাও অপ্রিয় বার্তা ঘোষণা করি। এটা সেই একই বার্তা, যার জন্য যীশু অবমানিত হয়েছিলেন। (যিশাইয় ৫৩:৩; মথি ২৪:৯) তাই আসুন, আমরা যেন ‘লোক-ভয়ে’ ভীত না হই কিন্তু যিরমিয়ের মতো সাহসের সঙ্গে যিহোবার বাধ্য হই, তাঁর ওপর পুরোপুরি আস্থা রাখি।—হিতোপদেশ ২৯:২৫.
গোগের আক্রমণের মুখে বাধ্যতা
১৮. যিহোবার দাসেরা ভবিষ্যতে কোন্ বাধ্যতার পরীক্ষার মুখোমুখি হবে?
১৮ শীঘ্রই শয়তানের সম্পূর্ণ দুষ্ট বিধিব্যবস্থা এক নজিরবিহীন ‘মহাক্লেশের’ দ্বারা ধ্বংস হবে। (মথি ২৪:২১) কোন সন্দেহ নেই যে, এর আগে এবং সেই সময়ে ঈশ্বরের লোকেরা তাদের বিশ্বাস ও বাধ্যতার বিরাট পরীক্ষার মুখোমুখি হবে। উদাহরণস্বরূপ, বাইবেল বলে যে শয়তান তার “মাগোগ দেশীয় গোগের” ভূমিকায় যিহোবার দাসদের ওপর সমস্ত শক্তি দিয়ে আক্রমণ করবে, আক্রমণের জন্য বাহিনী তৈরি করবে যেটাকে ‘বিক্রমী সৈনসামন্ত মেঘের ন্যায় দেশ আচ্ছাদন করিবার’ মতো করে বর্ণনা করা হয়েছে। (যিহিষ্কেল ৩৮:২, ১৪-১৬) অসংখ্য এবং অস্ত্রবিহীন ঈশ্বরের লোকেরা যিহোবার “পালখে” আশ্রয় খুঁজবে, যা তিনি বাধ্য ব্যক্তিদের আশ্রয়ের জন্য মেলে ধরেন।
১৯, ২০. (ক) ইস্রায়েলীয়রা যখন লোহিত সাগরে ছিল, তখন তাদের বাধ্য থাকা কেন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল? (খ) লোহিত সাগরের ঘটনাটা প্রার্থনাপূর্বক বিবেচনা করা আজকে আমাদের জন্য উপকারী কেন?
১৯ এই পরিস্থিতি আমাদের মিশর থেকে ইস্রায়েলীয়দের যাত্রার কথা মনে করিয়ে দেয়। মিশরে উল্লেখযোগ্য দশটা ধ্বংসাত্মক আঘাতের পর, যিহোবা তাঁর লোকেদের প্রতিজ্ঞাত দেশে যাওয়ার জন্য সংক্ষিপ্ত রাস্তা দিয়ে পরিচালনা দেননি কিন্তু লোহিত সাগরের মধ্যে দিয়ে দিয়েছিলেন, যেখানে তারা খুব সহজেই বিপদে পড়বে এবং আক্রমণের স্বীকার হবে। সামরিক দৃষ্টিভঙ্গিতে সেটা সর্বনাশের পথ বলে মনে হতে পারে। আপনি যদি সেখানে থাকতেন, তা হলে আপনি কি মোশির মাধ্যমে দেওয়া যিহোবার কথার বাধ্য হতেন এবং পূর্ণ আস্থা নিয়ে লোহিত সাগরের দিকে যেতেন, যদিও জানতেন যে প্রতিজ্ঞাত দেশ কিছুটা ভিন্ন দিকে রয়েছে?—যাত্রাপুস্তক ১৪:১-৪.
২০ আমরা যখন যাত্রাপুস্তক ১৪ অধ্যায় পড়ি, তখন আমরা দেখি যে যিহোবা কীভাবে অসাধারণ ক্ষমতা দেখিয়ে তাঁর লোকেদের রক্ষা করেছিলেন। এই ঘটনা আমাদের বিশ্বাসকে কতই না শক্তিশালী করে যখন আমরা তা অধ্যয়ন করতে এবং সেগুলোর ওপর ধ্যান করার জন্য সময় করে নিই! (২ পিতর ২:৯) এর ফলে, দৃঢ় বিশ্বাস যিহোবার প্রতি বাধ্য থাকতে আমাদের শক্তিশালী করে এমনকি যখন তিনি যা চান, তা যদি মানুষের যুক্তির বিপরীতও হয়। (হিতোপদেশ ৩:৫, ৬) তাই নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘অধ্যবসায়ের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন, প্রার্থনা এবং ধ্যান করে ও সেইসঙ্গে নিয়মিত ঈশ্বরের লোকেদের সঙ্গে মেলামেশা করে আমি কি আমার বিশ্বাস গড়ে তোলার চেষ্টা করছি?’—ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫; ১২:১-৩.
বাধ্যতা আশার সঞ্চার করে
২১. যারা যিহোবার প্রতি বাধ্য, তাদের ওপর বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে কোন্ আশীর্বাদগুলো আসবে?
২১ যারা যিহোবার প্রতি বাধ্য থাকে, তারা তাদের জীবনে এমনকি এখনই হিতোপদেশ ১:৩৩ পদের পরিপূর্ণতা দেখতে পায়, যেখানে বলা আছে: “কিন্তু যে জন আমার কথা শুনে, সে নির্ভয়ে বাস করিবে, শান্ত থাকিবে, অমঙ্গলের আশঙ্কা করিবে না।” এই সান্ত্বনাদায়ক বাক্যগুলো যিহোবার আসন্ন প্রতিশোধের দিনে কতই না চমৎকারভাবে কাজে লাগবে! বস্তুত, যীশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “এ সকল ঘটনা আরম্ভ হইলে তোমরা ঊর্দ্ধ্বদৃষ্টি করিও, মাথা তুলিও, কেননা তোমাদের মুক্তি সন্নিকট।” (লূক ২১:২৮) স্পষ্টতই, যারা ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য একমাত্র তারাই এই কথাগুলো আস্থার সঙ্গে মেনে চলবে।—মথি ৭:২১.
২২. (ক) আস্থার কোন্ কারণ যিহোবার লোকেদের রয়েছে? (খ) পরের প্রবন্ধে কোন্ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে?
২২ আস্থা রাখার আরেকটা কারণ হল যে, “প্রভু সদাপ্রভু [“সার্বভৌম প্রভু যিহোবা,” NW] আপনার দাস ভাববাদিগণের নিকটে আপন গূঢ় মন্ত্রণা প্রকাশ না করিয়া কিছুই করেন না।” (আমোষ ৩:৭) অতীতের মতো আজকে, যিহোবা ভাববাদীদের অনুপ্রাণিত করেন না; বদলে তিনি এক বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস শ্রেণীকে উপযুক্ত সময়ে তাঁর পরিজনদের জন্য আধ্যাত্মিক খাবার জোগানোর আদেশ দিয়েছেন। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) তা হলে সেই ‘দাসের’ প্রতি বাধ্য মনোভাব থাকা আমাদের জন্য কতই না জরুরি! পরের প্রবন্ধ যেমন দেখাবে যে, এইধরনের বাধ্যতা ‘দাসের’ প্রভু, যীশুর প্রতি আমাদের মনোভাবকেও প্রতিফলিত করে। তিনিই হলেন সেই ব্যক্তি, যার প্রতি ‘জাতিগণ . . . আজ্ঞাবহতা স্বীকার করে।’—আদিপুস্তক ৪৯:১০.
[পাদটীকাগুলো]
^ পশুপাখি সংস্থার একটা প্রকাশনা বলে, যদিও প্রায়ই নিরীহ হিসেবে বর্ণিত কিন্তু “একটা মা মুরগি তার বাচ্চাদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য মৃত্যু পর্যন্ত লড়াই করে।”
^ যিরমিয় ৩৮:১৯ পদ দেখায় যে, কিছু যিহুদি যারা কলদীয়দের ‘পক্ষে গিয়াছিল,’ তারা মৃত্যু থেকে রক্ষা পেয়েছিল ঠিকই কিন্তু বন্দিত্ব এড়াতে পারেনি। যিরমিয়ের কথা অনুযায়ী তারা আত্মসমর্পণ করেছিল কি না, তা আমাদের বলা হয়নি। যা-ই হোক না কেন, তাদের রক্ষা পাওয়া ভাববাদীর কথার সত্যতা প্রতিপাদন করে।
আপনি কি মনে করতে পারেন?
• ইস্রায়েলীয়দের বার বার অবাধ্যতার কী ফল হয়েছিল?
• রাজা যোয়াশ জীবনের শুরুতে এবং পরে কীভাবে সংসর্গের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন?
• বারূকের কাছ থেকে আমরা কোন্ শিক্ষা পাই?
• বর্তমান বিধিব্যবস্থার শেষ এগিয়ে আসলেও, যিহোবার বাধ্য লোকেদের ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই কেন?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোয়াদার নির্দেশনায় যুবক যোয়াশ যিহোবার বাধ্য ছিলেন
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
কুসংসর্গ যোয়াশকে যিহোবার ভাববাদীকে হত্যা করাতে পরিচালিত করেছিল
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনি কি যিহোবার বাধ্য হতেন এবং তাঁর রক্ষা করার অসাধারণ ক্ষমতা প্রত্যক্ষ করতেন?