“দিয়াবলের প্রতিরোধ কর”
“দিয়াবলের প্রতিরোধ কর”
“দিয়াবলের প্রতিরোধ কর, তাহাতে সে তোমাদের হইতে পলায়ন করিবে।”—যাকোব ৪:৭.
১. বর্তমান জগৎ সম্বন্ধে কী বলা যেতে পারে এবং কেন অভিষিক্ত ও তাদের সঙ্গীদের সতর্ক থাকা দরকার?
“ঈশ্বর উধাও হয়ে গেছেন কিন্তু দিয়াবল এখনও আছে।” ফরাসি লেখক আন্দ্রে ম্যালরোর ওই কথাগুলো উপযুক্তভাবেই আমরা যে-জগতে বাস করছি, সেটার প্রতি প্রয়োগ করা যায়। মানুষের কাজগুলো ঈশ্বরের ইচ্ছার চেয়ে দিয়াবলের ইচ্ছাকেই বেশি প্রতিফলিত করে বলে মনে হয়। শয়তান মানুষকে “মিথ্যার সমস্ত পরাক্রম ও নানা চিহ্ন ও অদ্ভুত লক্ষণ সহকারে . . . এবং যাহারা বিনাশ পাইতেছে, তাহাদের সম্বন্ধে অধার্ম্মিকতার সমস্ত প্রতারণা সহকারে” বিপথে চালিত করছে। (২ থিষলনীকীয় ২:৯, ১০) কিন্তু, এই “শেষ কালে” শয়তান তার প্রচেষ্টাকে ঈশ্বরের উৎসর্গীকৃত দাসদের ওপর কেন্দ্রীভূত করছে, “যাহারা ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন ও যীশুর সাক্ষ্য ধারণ করে” সেই অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে। (২ তীমথিয় ৩:১; প্রকাশিত বাক্য ১২:৯, ১৭) এই সাক্ষিদের ও তাদের পার্থিব আশাসম্পন্ন সঙ্গীদের সতর্ক থাকা দরকার।
২. শয়তান কীভাবে হবাকে প্রতারণা করেছিল এবং প্রেরিত পৌল কোন্ আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন?
২ শয়তান পুরোপুরিই একজন প্রতারক। সাপকে একটা মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে সে চতুরতার সঙ্গে হবাকে এই চিন্তা করতে পরিচালিত করেছিল যে, ঈশ্বর থেকে স্বাধীন হলে সে আরও বেশি সুখী হতে পারবে। (আদিপুস্তক ৩:১-৬) প্রায় চার হাজার বছর পর প্রেরিত পৌল আশঙ্কা করেছিলেন যে, করিন্থের অভিষিক্ত খ্রীষ্টানরা না আবার শয়তানের সুনিপুণ চাতুরীর শিকার হয়ে পড়ে। পৌল লিখেছিলেন: “আশঙ্কা হইতেছে, পাছে সর্প যেমন আপন ধূর্ত্ততায় হবাকে প্রতারণা করিয়াছিল, তেমনি তোমাদের মন খ্রীষ্টের প্রতি সরলতা ও শুদ্ধতা হইতে ভ্রষ্ট হয়।” (২ করিন্থীয় ১১:৩) শয়তান লোকেদের মনকে কলুষিত এবং তাদের চিন্তাধারাকে বিকৃত করে। সে যেমন হবাকে প্রতারণা করেছিল, তেমনই সে খ্রীষ্টানদের এইরকম মিথ্যা যুক্তি করার দিকে চালিত করতে এবং মনে করাতে পারে যে, তাদের সুখ এমন কিছুর ওপর নির্ভর করে, যা যিহোবা ও তাঁর পুত্র অনুমোদন করেন না।
৩. দিয়াবলের কাছ থেকে রক্ষা পেতে যিহোবা কোন্ সুরক্ষা জোগান?
৩ শয়তানকে একজন পাখি শিকারির সঙ্গে তুলনা করা যায়, যে তার অনিশ্চিত শিকারকে ধরার জন্য ফাঁদ পাতে। শয়তানের ফাঁদগুলো এড়িয়ে চলার জন্য আমাদের সুরক্ষার এক রূপক জায়গা ‘পরাৎপরের অন্তরালে থাকা’ দরকার, যা যিহোবা সেই ব্যক্তিদের দেন, যারা তাদের কাজের মাধ্যমে তাঁর সার্বিক সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে। (গীতসংহিতা ৯১:১-৩) ঈশ্বর তাঁর বাক্য, তাঁর আত্মা এবং তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে যে-সুরক্ষা দেন, এর সমস্তই আমাদের দরকার, যাতে আমরা “দিয়াবলের নানাবিধ চাতুরীর [“ষড়যন্ত্রের,” NW] সম্মুখে দাঁড়াইতে” পারি। (ইফিষীয় ) ‘ষড়যন্ত্রের’ জন্য যে-গ্রিক শব্দ রয়েছে সেটাকে ‘সুনিপুণ চাতুরী’ অথবা ‘কৌশল’ হিসেবেও অনুবাদ করা যায়। কোন সন্দেহ নেই যে, যিহোবার দাসদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টায় দিয়াবল অনেক কৌশল ও সুনিপুণ চাতুরী ব্যবহার করে থাকে। ৬:১১
প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের জন্য শয়তান যে-ফাঁদগুলো পেতে রেখেছিল
৪. প্রাথমিক খ্রীষ্টানরা কোন্ ধরনের পরিবেশে বাস করত?
৪ সাধারণ কাল প্রথম ও দ্বিতীয় শতাব্দীতে যে-খ্রীষ্টানরা জীবিত ছিল, তারা এমন এক সময়ে বাস করছিল যখন রোমীয় সাম্রাজ্য ছিল ক্ষমতার শীর্ষে। প্যাক্স রোমানা (রোমীয় শান্তি), ব্যাবসা-বাণিজ্যের প্রসারে অবদান রেখেছিল। এই উন্নতি শাসক শ্রেণীর জন্য প্রচুর অবসর সময় নিয়ে এসেছিল এবং শাসকরা লক্ষ রেখেছিল যেন জনগণ পর্যাপ্ত বিনোদনের সুযোগ পায়, যাতে তারা বিদ্রোহ করতে না পারে। এর মধ্যে কোন কোন সময়ে, সরকারি ছুটির দিনগুলোর পরিমাণ প্রায় কাজের দিনের মতোই ছিল। নেতারা সরকারি তহবিল থেকে লোকেদের খাদ্য ও মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করত, তাদের পেট ভরা রাখত ও মনকে অন্যদিকে সরিয়ে রাখত।
৫, ৬. রোমীয় থিয়েটার ও আ্যমফিথিয়েটারগুলোতে নিয়মিত যাওয়া খ্রীষ্টানদের জন্য কেন অনুপযুক্ত ছিল? (খ) শয়তান কোন্ কৌশল ব্যবহার করেছিল এবং খ্রীষ্টানরা কীভাবে তা এড়িয়ে চলতে পারত?
৫ এই পরিস্থিতি কি প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের জন্য বিপজ্জনক ছিল? টারটুলিয়ানের মতো, প্রেরিতদের পরবর্তী সময়কার লেখকদের সাবধানবাণী বিবেচনা করে দেখা যায় যে, সেই সময়ে অবসর সময় কাটানোর বেশির ভাগ কাজগুলোই সত্য খ্রীষ্টানদের জন্য আধ্যাত্মিক ও নৈতিক দিক দিয়ে বিপজ্জনক ছিল। একটা বিষয় হল, বেশির ভাগ সরকারি উৎসব ও ক্রীড়াগুলো পৌত্তলিক দেবদেবীদের সম্মানে অনুষ্ঠিত হতো। (২ করিন্থীয় ৬:১৪-১৮) থিয়েটারগুলোতে, এমনকি অনেক ঐতিহ্যময় নাটকগুলোও জঘন্য অনৈতিকতা বা রক্তাক্ত দৌরাত্ম্যে পরিপূর্ণ ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঐতিহ্যপূর্ণ বিষয়গুলোর প্রতি জনগণের পছন্দ হ্রাস পেতে থাকে এবং এর জায়গায় নিকৃষ্টমানের নির্বাক অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। প্রাচীন রোমে দৈনন্দিন জীবন (ইংরেজি) বইয়ে ইতিহাসবেত্তা জেরম কারকোপিনো বলেন: “এই নাটকগুলোতে অভিনেত্রীদের পুরোপুরি বিবস্ত্র হওয়ার অনুমতি ছিল . . . প্রচুর রক্ত ঝরানো হতো। . . . [এইধরনের অভিনয়গুলো] রীতিমতো বিকৃতির একেবারে চরমে পৌঁছে যেত, যা রাজধানীর বেশির ভাগ লোকেদের মন জয় করেছিল। এইধরনের প্রদর্শনে তারা বিরক্তি বোধ করত না কারণ আ্যমফিথিয়েটারের ভয়ংকর নৃশংসতা অনেক আগেই তাদের অনুভূতিকে নষ্ট এবং তাদের সহজাত প্রবৃত্তিকে বিকৃত করে দিয়েছিল।”—মথি ৫:২৭, ২৮.
৬ আ্যমফিথিয়েটারগুলোতে মল্লবিদরা একে অন্যের সঙ্গে অথবা বন্য জন্তুদের সঙ্গে মৃত্যু পর্যন্ত লড়াই করত, হয় তারা সেগুলোকে হত্যা করত নতুবা সেগুলোর দ্বারা নিজেরাই মৃত্যুর শিকার হতো। কুখ্যাত আসামিদের এবং পরিশেষে অনেক খ্রীষ্টানদেরও হিংস্র পশুদের কাছে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এমনকি ওই প্রাথমিক দিনগুলোতেও শয়তানের কৌশল ছিল অনৈতিকতা ও দৌরাত্ম্যের প্রতি লোকেদের ঘৃণাবোধকে নষ্ট করে দেওয়া, যতক্ষণ না সেগুলো সাধারণ বিষয় হয়ে ওঠে ও জনগণ সেগুলোর প্রতি দাবি জানাতে শুরু করে। সেই ফাঁদ থেকে মুক্ত হওয়ার একমাত্র উপায় ছিল, থিয়েটার ও আ্যমফিথিয়েটারগুলো থেকে দূরে থাকা।—১ করিন্থীয় ১৫:৩২, ৩৩.
৭, ৮. (ক) একজন খ্রীষ্টানের জন্য ঘোড়ার গাড়ির প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া কেন মূর্খতার কাজ হতো? (খ) শয়তান কীভাবে রোমীয় স্নানাগারগুলোকে খ্রীষ্টানদের ফাঁদে ফেলার জন্য ব্যবহার করতে পারত?
৭ সুদীর্ঘ মল্লভূমিগুলোতে ঘোড়ার গাড়ির প্রতিযোগিতা নিঃসন্দেহে খুব উত্তেজনাপূর্ণ ছিল কিন্তু সেগুলো খ্রীষ্টানদের জন্য অনুপযুক্ত ছিল কারণ জনতা প্রায়ই হিংসাত্মক হয়ে উঠত। তৃতীয় শতাব্দীর একজন লেখক বিবৃতি দিয়েছিলেন যে, কিছু কিছু দর্শক নিজেদের মধ্যে লড়াই করত এবং কারকোপিনো বলেন যে, মল্লভূমির পাশেই তোরণশোভিত পথে “জ্যোতিষী ও পতিতাদের ব্যাবসার কেন্দ্রস্থল ছিল।” স্পষ্টতই, রোমীয় মল্লভূমিগুলো কোনভাবেই খ্রীষ্টানদের জন্য ছিল না।—১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০.
৮ বিখ্যাত রোমীয় স্নানাগারগুলো সম্বন্ধে কী বলা যায়? পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার জন্য স্নান করার মধ্যে অবশ্যই দোষের কিছু ছিল না। কিন্তু, অনেক রোমীয় স্নানাগারগুলোতে প্রচুর সুযোগসুবিধা ছিল, যার মধ্যে রয়েছে মাসাজ রুম, জিমন্যাসিয়াম, জুয়া খেলার জায়গা এবং খাওয়াদাওয়া ও পান করার কক্ষ। যদিও নারী ও পুরুষদের আলাদা আলাদাভাবে স্নানাগার ব্যবহারের জন্য সময় বলতে গেলে নির্ধারিত ছিল কিন্তু প্রায়ই নারী-পুরুষকে একসঙ্গে স্নান করতে অনুমতি দেওয়া হতো। আলেকজান্দ্রিয়ার ক্লেমেন্ট লিখেছিলেন: “স্নানাগারগুলো বাছবিচারহীনভাবে নারী-পুরুষদের জন্য খোলা থাকত; আর নিয়ম অগ্রাহ্য করে তারা বিবস্ত্র হতো।” এভাবে, এক বৈধ প্রতিষ্ঠান সহজেই খ্রীষ্টানদের জন্য শয়তানের একটা ফাঁদ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারত। বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা এগুলো থেকে দূরে থাকত।
৯. প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের কোন্ ফাঁদগুলো এড়িয়ে চলতে হয়েছিল?
৯ রোমীয় সাম্রাজ্য ক্ষমতার শীর্ষে থাকার সময় জুয়াখেলা ছিল এক জনপ্রিয় অবসর বিনোদন। প্রাথমিক খ্রীষ্টানরা মল্লভূমিতে না গিয়ে খুব সহজেই ঘোড়ার গাড়ির প্রতিযোগিতার সময় যে-বাজি ধরা হতো, তা থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখতে পারত। এ ছাড়া, পান্থশালা এবং পানশালার পিছনে কোন গুপ্ত স্থানে বেআইনিভাবে ছোটখাটো জুয়াখেলা অনুষ্ঠিত হতো। খেলোয়াড়রা বিজোড় বা জোড় সংখ্যাগুলোর ওপর অথবা অপর খেলোয়াড়ের হাতে কতগুলো গুটলি আছে এর ওপর ভিত্তি করে বাজি ধরত। জুয়াখেলা লোকেদের জীবনে বৈচিত্র আনত কারণ এটা সহজে টাকা উপার্জনের একটা আশা দিত। (ইফিষীয় ৫:৫) এ ছাড়া, এইধরনের পানশালাগুলোতে কর্মরতা নারীরা বেশির ভাগ সময়ই পতিতা ছিল, যা যৌন অনৈতিকতার বিপদকে আরও বাড়িয়ে তুলত। এগুলো ছিল কিছু ফাঁদ যেগুলো শয়তান রোমীয় সাম্রাজ্যে বসবাসকারী খ্রীষ্টানদের জন্য পেতে রেখেছিল। আজকে এই বিষয়গুলো কি খুবই আলাদা?
আজকে শয়তানের ফাঁদগুলো
১০. আজকের পরিস্থিতি কীভাবে রোমীয় সাম্রাজ্যের সমরূপ?
১০ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই, শত শত বছর পরেও শয়তানের কৌশলগুলো বদলায়নি। কলুষিত শহর করিন্থে বসবাসকারী খ্রীষ্টানরা যেন ‘শয়তানকর্ত্তৃক প্রতারিত না হয়’ সেইজন্য প্রেরিত পৌল তাদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “[শয়তানের] কল্পনা সকল আমরা অজ্ঞাত নই।” (২ করিন্থীয় ২:১১) আজকে অনেক উন্নত দেশগুলোর অবস্থা, রোমীয় সাম্রাজ্য যখন ক্ষমতার শিখরে ছিল তখনকার মতোই। বিগত যেকোন সময়ের তুলনায় আজকে অনেক লোকের প্রচুর অবসর সময় আছে। সরকারি লটারিগুলো এমনকি গরিব লোকেদেরও আশার আলো দেখায়। লোকেদের মনকে আচ্ছন্ন করার জন্য প্রচুর সস্তা বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। খেলাধুলার স্টেডিয়ামগুলো ভরা, লোকেরা জুয়া খেলছে, কখনও কখনও জনতা হিংস্র হয়ে ওঠে ও সেইসঙ্গে খেলোয়াড়রাও। খারাপ সংগীত লোকেদের কান ভরিয়ে রেখেছে এবং রঙ্গমঞ্চ আর সেইসঙ্গে সিনেমা ও টেলিভিশনের পর্দা নোংরা অনুষ্ঠানগুলোর দ্বারা পরিপূর্ণ। কিছু কিছু দেশে, সোয়ানা এবং হট স্প্রিংয়ে নারী-পুরুষ একত্রে স্নান করা বেশ জনপ্রিয় আর কিছু কিছু সমুদ্র সৈকতে নগ্ন স্নানের কথা তো বলাই বাহুল্য। খ্রীষ্টধর্মের প্রাথমিক শতাব্দীগুলোর মতো শয়তান জাগতিক অবসর বিনোদনগুলোর মাধ্যমে ঈশ্বরের দাসদের প্রলোভিত করার চেষ্টা করে।
১১. স্বস্তি এবং অবসর সময় কাটাতে চাওয়ার ক্ষেত্রে কোন্ কোন্ ফাঁদ রয়েছে?
১১ এমন এক জগৎ যেখানে চাপ খুবই সাধারণ বিষয়, সেখানে স্বস্তি বোধ করতে বা এর থেকে মুক্ত হতে চাওয়া খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু, রোমীয় স্নানাগারের কিছু বৈশিষ্ট্য যেমন প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের জন্য সম্ভাব্য বিপদ নিয়ে আসত, তেমনই অবকাশ যাপনের কিছু সুযোগসুবিধা এবং জায়গাগুলো শয়তানের ফাঁদ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে, যা সে আধুনিক দিনের খ্রীষ্টানদের অনৈতিকতা বা অতিরিক্ত মদ খাওয়ার দিকে পরিচালিত করতে ব্যবহার করেছে। করিন্থের খ্রীষ্টানদের পৌল লিখেছিলেন: “ভ্রান্ত হইও না, কুসংসর্গ শিষ্টাচার নষ্ট করে। ধার্ম্মিক হইবার জন্য চেতন হও, পাপ করিও না, কেননা কাহারও কাহারও ঈশ্বর-জ্ঞান নাই।”—১ করিন্থীয় ১৫:৩৩, ৩৪.
১২. আজকে যিহোবার দাসদের ফাঁদে ফেলার জন্য শয়তানের ব্যবহৃত কিছু কৌশল কী?
১২ হবার ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যে, শয়তান তার চিন্তাধারাকে কলুষিত করার জন্য কীভাবে ধূর্ততাকে কাজে লাগিয়েছিল। (২ করিন্থীয় ১১:৩) আজকে দিয়াবলের ফাঁদগুলোর মধ্যে একটা হল খ্রীষ্টানদের এই চিন্তার দিকে পরিচালিত করা যে, যিহোবার সাক্ষিরা অন্য লোকেদের মতোই সাধারণ, এটা দেখানোর জন্য যদি তারা যতটা সম্ভব জগতের সঙ্গে মেলামেশা করে, তা হলে তারা কাউকে না কাউকে খ্রীষ্টীয় সত্যের দিকে আকৃষ্ট করতে সফল হবে। কখনও কখনও তারা সীমা অতিক্রম করে এবং এর উলটোটাই ঘটে। (হগয় ২:১২-১৪) শয়তানের আরেকটা কৌশল হল, অল্পবয়সী বা প্রাপ্তবয়স্ক উৎসর্গীকৃত খ্রীষ্টানদের দ্বৈত জীবনযাপন করার এবং ‘ঈশ্বরের পবিত্র আত্মাকে দুঃখিত করিবার’ মতো সাহসী করে তোলা। (ইফিষীয় ৪:৩০) কেউ কেউ ইন্টারনেটের অপব্যবহার করে এই ফাঁদে পড়েছে।
১৩. দিয়াবলের সুনিপুণ চাতুরীগুলোর মধ্যে একটা গোপন ফাঁদ কী এবং হিতোপদেশের কোন্ পরামর্শ এখানে উপযুক্ত?
১৩ শয়তানের আরেকটা ফাঁদ হচ্ছে জাদুবিদ্যায় জড়িত হওয়ার ক্ষতিকে গোপন রাখা। কোন সত্য খ্রীষ্টানই ইচ্ছাকৃতভাবে শয়তানবাদ বা প্রেতচর্চায় জড়িত হবে না। কিন্তু, কেউ কেউ দৌরাত্ম্য বা ভূতুড়ে চর্চাকে তুলে ধরে এমন সিনেমা, টেলিভিশনের ধারাবাহিক নাটক, ভিডিও গেইম এবং এমনকি বাচ্চাদের বই ও কৌতুকগুলোর ক্ষেত্রে নিজেদের অজান্তে অসতর্ক হয়ে পড়ে। জাদুমন্ত্রের ছোয়া রয়েছে এমন যেকোন কিছু থেকেই দূরে থাকা দরকার। বিজ্ঞ হিতোপদেশ বলে: “কুটিল ব্যক্তির পথে কন্টক ও ফাঁদ থাকে; যে আপন প্রাণ রক্ষা করে, সে তাহাদের হইতে দূরে থাকিবে।” (হিতোপদেশ ২২:৫) যেহেতু শয়তান হল “এই যুগের দেব,” তাই অত্যন্ত জনপ্রিয় এমন যেকোন কিছুতেই সম্ভবত তার একটা ফাঁদ লুকিয়ে থাকতে পারে।—২ করিন্থীয় ৪:৪; ১ যোহন ২:১৫, ১৬.
যীশু দিয়াবলের প্রতিরোধ করেছিলেন
১৪. কীভাবে যীশু দিয়াবলের প্রথম প্রলোভন প্রতিরোধ করেছিলেন?
১৪ দিয়াবলকে প্রতিরোধ এবং তাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করার ক্ষেত্রে যীশু এক সুন্দর উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন। বাপ্তিস্মের পর ৪০ দিন ধরে উপবাস থাকার পর যীশু শয়তানের দ্বারা প্রলোভিত হয়েছিলেন। (মথি ৪:১-১১) প্রথম প্রলোভন স্বাভাবিক খিদের সুযোগ নিয়েছিল, যা যীশু উপবাস থাকার পর বোধ করেছিলেন। শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য শয়তান যীশুকে তাঁর প্রথম অলৌকিক কাজ সম্পাদন করতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। দ্বিতীয় বিবরণ ৮:৩ পদের কথা উদ্ধৃতি করে, যীশু তাঁর শক্তিকে স্বার্থপরভাবে কাজে লাগাতে অস্বীকার করেছিলেন এবং আধ্যাত্মিক খাদ্যকে শারীরিক খাদ্যের চেয়ে উচ্চে রেখেছিলেন।
১৫. (ক) যীশুকে প্রলোভিত করার জন্য শয়তান কোন্ স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষা কাজে লাগিয়েছিল? (খ) আজকে ঈশ্বরের দাসদের বিরুদ্ধে দিয়াবলের প্রধান সুনিপুণ চাতুরীগুলোর মধ্যে একটা কী কিন্তু কীভাবে আমরা তার প্রতিরোধ করতে পারি?
১৫ এই প্রলোভনের ক্ষেত্রে একটা আগ্রহজনক বিষয় হল যে, দিয়াবল যীশুকে দিয়ে যৌন সংক্রান্ত কোন পাপ করানোর চেষ্টা করেনি। খিদে, খাবারের প্রতি যে-স্বাভাবিক আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে, এই ক্ষেত্রে যীশুকে প্রলোভিত করার জন্য সবচেয়ে জোরালো সেই শারীরিক আকাঙ্ক্ষাকে ব্যবহার করা শ্রেয় বলে মনে হয়েছিল। আজকে ঈশ্বরের লোকেদের প্রলুব্ধ করতে দিয়াবল কোন্ কোন্ প্রলোভন ব্যবহার করে? সেগুলো অনেক এবং বিভিন্ন ধরনের কিন্তু যিহোবার লোকেদের নীতিনিষ্ঠা ভেঙে ফেলার চেষ্টায় যৌন প্রলোভনকে সে একটা প্রধান সুনিপুণ চাতুরী হিসেবে ব্যবহার করছে। যীশুকে অনুকরণ করে, আমরাও দিয়াবলের প্রতিরোধ করতে পারি এবং প্রলোভনগুলোকে প্রতিহত করতে পারি। ঠিক যেভাবে যীশু উপযুক্ত শাস্ত্রপদগুলো মনে করার মাধ্যমে শয়তানের চেষ্টাগুলো বানচাল করে দিয়েছিলেন, তেমনই প্রলোভনে পড়লে আমরাও আদিপুস্তক ৩৯:৯ এবং ১ করিন্থীয় ৬:১৮ পদের কথা মনে করতে পারি।
১৬. শয়তান কীভাবে দ্বিতীয় বার যীশুকে প্রলোভিত করেছিল? (খ) শয়তান কোন্ কোন্ উপায়ে যিহোবাকে পরীক্ষা করতে আমাদের প্রলোভিত করতে পারে?
১৬ এরপর, দিয়াবল যীশুকে মন্দিরের চূড়া থেকে লাফ দিতে বলে এবং স্বর্গ দূতেদের সাহায্যে তাঁকে রক্ষা করার ক্ষমতা ঈশ্বরের আছে কি না, তা পরীক্ষা করতে বলে। দ্বিতীয় বিবরণ ৬:১৬ পদের কথা উদ্ধৃতি করে যীশু তাঁর পিতাকে পরীক্ষা করতে প্রত্যাখ্যান করেন। শয়তান হয়তো আমাদের কোন মন্দিরের প্রাচীর থেকে লাফ দেওয়ার জন্য প্রলোভিত করবে না কিন্তু যিহোবাকে পরীক্ষা করতে সে আমাদের প্রলোভিত করতে পারে। অনুযোগ না পেয়েই কতদূর পর্যন্ত আমরা আমাদের পোশাক-আশাক ও সাজগোজের ক্ষেত্রে জাগতিক চালচলনকে নিবিড়ভাবে অনুকরণ করতে পারি, সেই বিষয় পরখ করে দেখতে কি আমরা প্রলোভিত হই? আমরা কি আপত্তিকর বিনোদনের ক্ষেত্রে প্রলোভিত হই? তা হলে আমরা হয়তো যিহোবার পরীক্ষা করছি। আমাদের যদি এইরকম প্রবণতাগুলো থাকে, তা হলে শয়তান আমাদের কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়ার বদলে আমাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকবে, তার পক্ষ নেওয়ার জন্য আমাদের অবিরত প্রলুব্ধ করবে।
১৭. (ক) কীভাবে দিয়াবল তৃতীয় বার যীশুকে প্রলোভিত করেছিল? (খ) যাকোব ৪:৭ পদ কীভাবে আমাদের প্রতি সত্য হতে পারে?
১৭ শয়তান যখন কেবল একবার তাকে উপাসনা করার বদলে যীশুকে জগতের সমস্ত রাজ্য দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল, তখনও যীশু শাস্ত্র উদ্ধৃতি করে তার প্রতিরোধ করেছিলেন, তাঁর পিতার একাগ্র উপাসনার পক্ষে দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ৫:৯, NW; ৬:১৩; ১০:২০) শয়তান হয়তো আমাদের জগতের রাজ্যগুলো দেওয়ার প্রস্তাব দেবে না কিন্তু সে সবসময় আমাদের চাকচিক্যময় বস্তুগত বিষয়গুলো দ্বারা প্রলোভিত করার চেষ্টা করে, এমনকি এক ক্ষুদ্র ব্যক্তিগত সাম্রাজ্য গড়ার প্রত্যাশাও দিতে পারে। যিহোবাকে আমাদের একাগ্র ভক্তি দেওয়ার দ্বারা আমরা কি যীশুর মতো সাড়া দিই? যদি দিই, তা হলে যীশুর বেলায় যা হয়েছিল, আমাদেরও তা-ই হবে। মথির বিবরণ বলে: “তখন দিয়াবল তাঁহাকে ছাড়িয়া গেল।” (মথি ৪:১১) শয়তান আমাদের ছেড়ে যাবে, যদি আমরা বাইবেলের উপযুক্ত নীতিগুলো মনে রেখে এবং সেগুলো কাজে লাগিয়ে তার বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নিই। শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন: “দিয়াবলের প্রতিরোধ কর, তাহাতে সে তোমাদের হইতে পলায়ন করিবে।” (যাকোব ৪:৭) একজন খ্রীষ্টান ফ্রান্সে যিহোবার সাক্ষিদের শাখা অফিসে লিখেছিলেন: “শয়তান সত্যি খুবই ধূর্ত। আমার সদুদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও, আমার অনুভূতি ও আকাঙ্ক্ষাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা আমার পক্ষে খুব মুশকিল হয়ে পড়ে। কিন্তু, সাহস, ধৈর্য ও সর্বোপরি যিহোবার সাহায্যে আমি আমার নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে ও সত্যে টিকে থাকতে পেরেছি।”
দিয়াবলের প্রতিরোধ করার জন্য পুরোপুরি সজ্জিত
১৮. কোন্ আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জা দিয়াবলের প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের সজ্জিত করে?
১৮ যিহোবা আমাদের পূর্ণ আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জা জুগিয়েছেন, যা আমাদের “দিয়াবলের নানাবিধ ষড়যন্ত্রের সম্মুখে দাঁড়াইতে” সাহায্য করে। (ইফিষীয় ৬:১১-১৮) সত্যের প্রতি আমাদের ভালবাসা আমাদের বদ্ধকটি করবে বা খ্রীষ্টীয় কাজের জন্য আমাদের প্রস্তুত করে তুলবে। যিহোবার ধার্মিক মানগুলো ধরে রাখতে আমাদের যে-সংকল্প, তা আমাদের হৃদয়কে বুকপাটার মতো রক্ষা করবে। আমাদের চরণ যদি সুসমাচার দ্বারা সজ্জিত হয়, তা হলে তা আমাদের নিয়মিত প্রচারে নিয়ে যাবে এবং এটা আমাদের আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শক্তিশালী করবে ও সুরক্ষা জোগাবে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস এক বড় ঢালের মতো হবে, যা “পাপাত্মার সমস্ত অগ্নিবাণ,” তার সুনিপুণ চাতুরী এবং প্রলোভনগুলো থেকে আমাদের রক্ষা করবে। যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলোর পরিপূর্ণতার ওপর আমাদের নিশ্চিত আশা এক শিরস্ত্রাণের মতো হবে, যা আমাদের চিন্তা করার ক্ষমতাকে রক্ষা করবে এবং আমাদের মনের শান্তি এনে দেবে। (ফিলিপীয় ৪:৭) যদি আমরা ঈশ্বরের বাক্য ব্যবহার করার ক্ষেত্রে দক্ষ হই, তা হলে এটা একটা খড়্গের মতো হবে, যা আমরা শয়তানের আধ্যাত্মিক দাসত্ব থেকে লোকেদের মুক্ত করতে ব্যবহার করতে পারব। এ ছাড়া, আমরা নিজেদের রক্ষা করতেও এটাকে ব্যবহার করতে পারি, ঠিক যেভাবে প্রলোভনের সময় যীশু করেছিলেন।
১৯. ‘দিয়াবলের প্রতিরোধ করা’ ছাড়াও আর কী দরকার?
১৯ “ঈশ্বরের সমগ্র যুদ্ধসজ্জা” পরিধান এবং সবসময় প্রার্থনা করে চলার দ্বারা, আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, শয়তান যখন আমাদের আক্রমণ করবে তখন যিহোবা আমাদের সুরক্ষা জোগাবেন। (যোহন ১৭:১৫; ১ করিন্থীয় ১০:১৩) কিন্তু যাকোব দেখিয়েছিলেন যে, শুধু ‘দিয়াবলের প্রতিরোধ করাই’ যথেষ্ট নয়। সর্বোপরি, আমাদের ‘ঈশ্বরের বশীভূত হইতে হইবে,’ যিনি আমাদের জন্য চিন্তা করেন। (যাকোব ৪:৭, ৮) কীভাবে আমরা তা করতে পারি, সেটা পরের প্রবন্ধে আলোচনা করা হবে।
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• শয়তানের কোন্ ফাঁদগুলো প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের এড়িয়ে চলতে হয়েছিল?
• যিহোবার দাসদের ফাঁদে ফেলার জন্য আজকে শয়তান কোন্ সুনিপুণ চাতুরীগুলো ব্যবহার করে?
• যীশু কীভাবে দিয়াবলের প্রলোভনগুলো প্রতিরোধ করেছিলেন?
• কোন্ আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জা দিয়াবলকে প্রতিরোধ করতে আমাদের সাহায্য করে?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
যীশু দৃঢ়ভাবে দিয়াবলের প্রতিরোধ করেছিলেন
[১০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানরা দৌরাত্ম্যপূর্ণ এবং অনৈতিক বিনোদনকে প্রত্যাখ্যান করেছিল
[সৌজন্যে]
The Complete Encyclopedia of Illustration/J. G. Heck