সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

বিদেশের মাটিতে ছেলেমেয়ে মানুষ করা—প্রতিবন্ধকতা এবং পুরস্কারগুলো

বিদেশের মাটিতে ছেলেমেয়ে মানুষ করা—প্রতিবন্ধকতা এবং পুরস্কারগুলো

বিদেশের মাটিতে ছেলেমেয়ে মানুষ করা—প্রতিবন্ধকতা এবং পুরস্কারগুলো

 নতুন দেশে সবকিছু নতুনভাবে শুরু করার আশা নিয়ে লক্ষ লক্ষ লোক এক দেশ থেকে আরেক দেশে যায়। ইউরোপ এখন ২ কোটিরও ওপরে অভিবাসীর বাসস্থান, যুক্তরাষ্ট্র ২ কোটি ৬০ লক্ষেরও বেশি বিদেশি বসবাসকারীর বাড়ি, অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যার মধ্যে ২১ শতাংশেরও বেশি লোক বিদেশি। প্রায়ই, এইসব অভিবাসী পরিবারকে নতুন ভাষা শিখতে এবং নতুন সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হিমশিম খেতে হয়।

বেশির ভাগ সময়ই ছেলেমেয়েরা খুব দ্রুত তাদের নতুন দেশের ভাষা রপ্ত করে ফেলে এবং নতুন ভাষায় চিন্তা করতে শুরু করে। তাদের বাবামাদের ক্ষেত্রে হয়তো আরও বেশি সময় লাগে। ছেলেমেয়েরা যতই সেই দেশে বেড়ে উঠতে থাকে, যে-দেশ তাদের বাবামাদের কাছে অচেনা, ততই ভাষাগত সমস্যা ও ভাববিনিময়ের ক্ষেত্রে এক বিরাট ব্যবধানের সৃষ্টি হয়, যেগুলোর সমাধান সহজে করা যায় না।

শুধুমাত্র নতুন ভাষাই যে ছেলেমেয়েদের চিন্তাভাবনার ওপর ছাপ ফেলে, তা কিন্তু নয়, নতুন দেশের সংস্কৃতিও তাদের অনুভূতির ওপর প্রভাব ফেলে। বাবামাদের জন্য হয়তো তাদের ছেলেমেয়েদের প্রতিক্রিয়া বোঝা অনেক কষ্টকর হতে পারে। তাই, যে-অভিবাসী বাবামায়েরা তাদের ছেলেমেয়েদের ‘প্রভুর [“যিহোবার,” NW] শাসনে ও চেতনা প্রদানে মানুষ’ করে তোলার চেষ্টা করে, তাদের ভিন্নরকমের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়।—ইফিষীয় ৬:৪.

মন ও হৃদয়ে পৌঁছানোর প্রতিবন্ধকতা

খ্রীষ্টান বাবামাদের ইচ্ছা ও দায়িত্ব হল, তাদের ছেলেমেয়েদের বাইবেলের সত্যের “বিশুদ্ধ ওষ্ঠ” শিক্ষা দেওয়া। (সফনিয় ৩:৯) কিন্তু, বাবামারা যে-ভাষায় কথা বলে, সেই ভাষা সম্বন্ধে ছেলেমেয়েদের যদি শুধু প্রাথমিক জ্ঞান থাকে এবং ছেলেমেয়েরা যে-ভাষার সঙ্গে অভ্যস্ত, সেই ভাষায় বাবামারা যদি নিজেদের ফলপ্রসূভাবে প্রকাশ করতে না পারে, তা হলে কীভাবে বাবামারা তাদের ছেলেমেয়েদের হৃদয়ে যিহোবার আইন গেঁথে দেবে? (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৭) বাবামারা যে-ভাষায় কথা বলে, ছেলেমেয়েরা হয়তো তা বুঝতে পারে কিন্তু যা বলা হচ্ছে, সেটা যদি তাদের হৃদয়ে না-ই পৌঁছায়, তা হলে ছেলেমেয়েরা নিজেদের বাড়িতে অপরিচিতদের মতো থেকে যায়।

পেদ্রো এবং স্যান্ড্রা দক্ষিণ আমেরিকা থেকে অস্ট্রেলিয়ায় যায় এবং তারা তাদের কিশোর বয়সী দুই ছেলেকে মানুষ করতে গিয়ে এই প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়। * পেদ্রো বলেন: “আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার সময় হৃদয় এবং আবেগও এর সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে। আপনাকে আরও গভীরভাবে এবং আরও অর্থপূর্ণ ধারণা প্রকাশ করতে হবে আর তাই আরও বেশি শব্দভাণ্ডারের জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।” স্যান্ড্রা যোগ করেন: “আমাদের ছেলেদের যদি মাতৃভাষা সম্বন্ধে যথেষ্ট বোধগম্যতা না থাকে, তা হলে তাদের আধ্যাত্মিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তারা হয়তো সত্যের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে এবং তারা যা শিখছে, সেগুলোর পিছনে যে-মূল নীতি রয়েছে, তা বুঝতে ব্যর্থ হতে পারে। তাদের আধ্যাত্মিক বিচক্ষণতা বিঘ্নিত হতে পারে এবং যিহোবার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।”

নানাপিরাকাসাম এবং হেলেন শ্রীলঙ্কা থেকে জার্মানিতে আসে এবং এখন তাদের দুটি ছেলেমেয়ে আছে। তারা স্বীকার করে: “আমরা মনে করি যে আমাদের ছেলেমেয়েদের জার্মান ভাষা শেখার সঙ্গে সঙ্গে তাদের মাতৃভাষাও শেখা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের জন্য এটা খুবই জরুরি, যাতে তারা আমাদের কাছে তাদের আবেগ ব্যক্ত করতে এবং খোলাখুলি কথা বলতে পারে।”

মিগেল এবং কারমেন, যারা উরুগুয়ে থেকে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসী হিসেবে আছে, তারা বলে: “আমাদের মতো পরিস্থিতির বাবামাদের অনেক কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। হয় তাদের নতুন ভাষা খুব ভাল করে শিখতে হয়, যাতে তারা সেই ভাষায় আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো বোঝাতে বা ব্যাখ্যা করতে পারে নতুবা ছেলেমেয়েদের তাদের বাবামার ভাষায় দক্ষ করে তুলতে হয়।”

পারিবারিক সিদ্ধান্ত

যেকোন অভিবাসী পরিবারের আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের প্রাথমিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, কোন্‌ ভাষায় পরিবারের সবাই “সদাপ্রভুর কাছে শিক্ষা পাইবে,” সেটা নির্ধারণ করা। (যিশাইয় ৫৪:১৩) পরিবারের মাতৃভাষায় কথা বলে এমন কোন মণ্ডলী যদি কাছাকাছি কোথাও থাকে, তা হলে পরিবারগতভাবে তারা সেই মণ্ডলীকে সমর্থন করা বেছে নিতে পারে। অন্যদিকে, তারা হয়তো এমন কোন মণ্ডলীতে যোগ দেওয়া বেছে নিতে পারে, যেখানে তারা যে-দেশে এসেছে সেই দেশের প্রধান ভাষায় কথা বলা হয়। কোন্‌ বিষয়গুলোর ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত?

দিমিত্রিয়স এবং পট্রুলা, যারা সাইপ্রাস থেকে ইংল্যান্ডে অভিবাসী হয়ে এসেছে এবং সেখানে তারা তাদের পাঁচটি ছেলেমেয়েকে মানুষ করেছে, তারা ব্যাখ্যা করে যে, কোন্‌ বিষয়টা তাদের সিদ্ধান্তের ওপর প্রভাব ফেলেছিল: “প্রথম প্রথম আমাদের পরিবার গ্রিক-ভাষী মণ্ডলীতে যোগ দিত। যদিও এতে আমরা বাবামারা অনেক সাহায্য পেয়েছিলাম কিন্তু দেখা গিয়েছিল যে, তা আমাদের ছেলেমেয়েদের আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। গ্রিক ভাষা সম্বন্ধে তাদের প্রাথমিক জ্ঞান থাকলেও, সূক্ষ্ম বিষয়গুলো বুঝতে তাদের কষ্ট হতো। আর এটা তাদের ধীর গতিতে আধ্যাত্মিক উন্নতি দ্বারা প্রকাশ পেয়েছিল। পরিবারগতভাবে আমরা ইংরেজি-ভাষী মণ্ডলীতে যোগ দিতে শুরু করি আর এতে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে এক উত্তম ফল দেখা গিয়েছিল। তারা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব সহজ ছিল না কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে তা সঠিক পদক্ষেপ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল।”

এখনও এই পরিবার মাতৃভাষার প্রতি উপলব্ধি বজায় রেখেছে এবং তা প্রচুর পুরস্কার নিয়ে এসেছে। তাদের ছেলেমেয়েরা মন্তব্য করে: “একাধিক ভাষায় জ্ঞান থাকা হচ্ছে একটা সম্পদ। যদিও ইংরেজি আমাদের মুখ্যভাষা কিন্তু আমরা দেখেছি যে, গ্রিক ভাষা সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান থাকায়, সেটা আমাদের দৃঢ় এবং ঘনিষ্ঠ পারিবারিক সম্পর্ক বজায় রাখতে, বিশেষ করে দাদুদিদিমার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করেছে। এ ছাড়া, এটা আমাদের অভিবাসীদের প্রতি আরও বেশি সহানুভূতিশীল হতে শিখিয়েছে এবং নিশ্চয়তা দিয়েছে যে, আমরা অন্য ভাষা শিখতে পারি। তাই, আমরা যখন আরও বড় হই, তখন আমাদের পরিবার আলবেনীয়-ভাষী মণ্ডলীতে যোগ দেয়।”

ক্রিস্টোফার এবং মার্গারিটাও সাইপ্রাস থেকে ইংল্যান্ডে এসেছিলে এবং তারা তাদের তিন ছেলেমেয়ে মানুষ করে তুলেছে। তারা গ্রিক-ভাষী মণ্ডলীকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের ছেলে নিকস, যিনি এখন গ্রিক-ভাষী মণ্ডলীতে একজন প্রাচীন হিসেবে কাজ করছেন, তিনি মনে করে বলেন: “নতুন গঠিত গ্রিক-ভাষী মণ্ডলীতে যোগ দিতে আমাদের উৎসাহিত করা হয়েছিল। আমাদের পরিবার এটাকে এক ঐশিক দায়িত্ব হিসেবে দেখেছিল।”

মার্গারিটা বলেন: “দুই ছেলে যখন যথাক্রমে সাত এবং আট বছরের ছিল, তারা ঐশিক পরিচর্যা বিদ্যালয়ে যোগ দেয়। গ্রিক ভাষা সম্বন্ধে তাদের সীমিত জ্ঞান থাকায় বাবামা হিসেবে আমরা কিছুটা চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু, প্রত্যেকটা দায়িত্ব ছিল পারিবারিক প্রকল্প এবং তাদের বক্তৃতা তৈরি করার জন্য সাহায্য করতে আমরা অনেক সময় ব্যয় করতাম।”

তাদের মেয়ে জোয়েনা বলেন: “আমার মনে আছে যে, বাবা ঘরে একটা ব্ল্যাক বোর্ডের মধ্যে বর্ণমালা লিখে আমাদের গ্রিক শেখাতেন এবং আমাদের সেগুলো খুব ভালভাবে শিখতে হয়েছিল। অনেকে একটা ভাষা শিখতে গিয়ে কয়েক বছর পার করে দেয় কিন্তু বাবামার সাহায্যে আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যে গ্রিক ভাষা শিখতে পেরেছি।”

কিছু কিছু পরিবার বিদেশে তাদের ভাষার মণ্ডলীকে সমর্থন করে কারণ বাবামারা মনে করে যে, ‘আত্মিক জ্ঞান’ গড়ে তোলার এবং উন্নতি করার জন্য তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষা নেওয়া প্রয়োজন। (কলসীয় ১:৯, ১০; ১ তীমথিয় ৪:১৩, ১৫) অথবা পরিবার হয়তো তাদের ভাষার দক্ষতাকে অন্যান্য অভিবাসীদের সত্য শেখানোর জন্য একটা সম্পদ বলে মনে করতে পারে।

অন্যদিকে, একটা পরিবার হয়তো মনে করতে পারে যে, তারা যে-দেশের অভিবাসী সেই দেশের প্রধান ভাষার একটা মণ্ডলীতে যোগ দেওয়া তাদের জন্য সবচেয়ে উপকারী হবে। (ফিলিপীয় ২:৪; ১ তীমথিয় ৩:৫) পরিবারের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার পর, প্রার্থনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব হল পরিবারের মস্তকের। (রোমীয় ১৪:৪; ১ করিন্থীয় ১১:৩; ফিলিপীয় ৪:৬, ৭) কোন্‌ পরামর্শগুলো এই পরিবারগুলোকে সাহায্য করতে পারে?

কিছু বাস্তব পরামর্শ

শুরুতে উল্লেখিত পেদ্রো এবং স্যান্ড্রা বলে: “আমরা যে আমাদের মাতৃভাষাকে ভুলে যাচ্ছি না, সেটা নিশ্চিত করার জন্য ঘরে শুধু স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলা আমাদের নিয়ম ছিল। এই নিয়ম মেনে চলা অনেক কঠিন ছিল যেহেতু আমাদের ছেলেরা জানত যে, আমরা ইংরেজি বুঝতে পারি। কিন্তু আমরা যদি এই নিয়ম মেনে না চলতাম, তা হলে তারা হয়তো খুব শীঘ্রই স্প্যানিশ ভাষার প্রতি তাদের বোধগম্যতা হারিয়ে ফেলত।”

মিগেল এবং কারমেন, যাদের কথাও আগে উল্লেখ করা হয়েছে, তারা সুপারিশ করে: “বাবামারা যদি মাতৃভাষায় নিয়মিত পারিবারিক অধ্যয়ন পরিচালনা এবং দৈনিক শাস্ত্রপদ আলোচনা করে, তা হলে ছেলেমেয়েরা ভাষা সম্বন্ধে শুধু প্রাথমিক জ্ঞানই লাভ করবে না—তারা সেই ভাষায় আধ্যাত্মিক ধারণাগুলোও প্রকাশ করতে শিখবে।”

এ ছাড়া, মিগেল পরামর্শ দেন: “সাক্ষ্য দেওয়াকে উপভোগ্য করে তুলুন। আমাদের এলাকা এক বিরাট শহরের বড় অঞ্চলকে ব্যাপৃত করে এবং বেশির ভাগ সময়ই আমাদের ভাষায় কথা বলে এমন লোকেদের কাছে গাড়িতে করে পৌঁছানোর জন্য অনেক সময় লাগত। সেই সময়টাতে আমরা বাইবেল গেমস খেলতাম এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতাম। আমি সাক্ষ্য দেওয়ার বিষয় নিয়ে পরিকল্পনা করতাম, যাতে আমরা একাধিক উত্তম পুনর্সাক্ষাৎ করতে পারি। এরপর দিনের শেষে ছেলেমেয়েরা অনন্তপক্ষে একটা অর্থপূর্ণ আলোচনার সঙ্গে জড়িত হতে পারত।”

সাংস্কৃতিক বৈসাদৃশ্যের সঙ্গে মোকাবিলা করা

ঈশ্বরের বাক্য যুবক-যুবতীদের উৎসাহ দেয়: “বৎস, তুমি তোমার পিতার উপদেশ শুন, তোমার মাতার ব্যবস্থা ছাড়িও না।” (হিতোপদেশ ১:৮) কিন্তু সমস্যা তখনই দেখা দিতে পারে, যখন বাবার শাসনের মান এবং মায়ের “ব্যবস্থা” এমন এক সংস্কৃতির দ্বারা চালিত হয়, যা তাদের ছেলেমেয়েরা যে-পরিবেশের মধ্যে আছে, সেটা থেকে ভিন্ন।

অবশ্য, এটা প্রতিটা পরিবারের মস্তকের ওপর নির্ভর করে যে, তিনি কীভাবে তার ঘরকে পরিচালনা দেবেন আর এক্ষেত্রে অন্যান্য পরিবারের দ্বারা তার অযথা প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়। (গালাতীয় ৬:৪, ৫) তবুও, বাবামা এবং ছেলেমেয়েদের মধ্যে উত্তম ভাববিনিময় হয়তো নতুন রীতিনীতি মেনে নেওয়ার পথ খুলে দেবে।

কিন্তু, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অনেক রীতিনীতি অথবা প্রথা রয়েছে, যা খ্রীষ্টানদের আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। যৌন অনৈতিকতা, লোভ এবং বিদ্রোহিতা প্রায়ই জনপ্রিয় গানবাজনা ও আমোদপ্রমোদের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। (রোমীয় ১:২৬-৩২) খ্রীষ্টান বাবামারা শুধু ভাষা বুঝতে পারে না বলেই যে, তাদের ছেলেমেয়েদের গানবাজনা এবং আমোদপ্রমোদ বাছাই করার ক্ষেত্রে তাদের নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব থেকে মুক্ত, তা কিন্তু নয়। তাদের নির্দিষ্ট দৃঢ় নির্দেশনা স্থাপন করতে হবে। কিন্তু, এটা হয়তো একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বিষয় হয়ে উঠতে পারে।

কারমেন বলেন: “আমাদের ছেলেমেয়েরা যেধরনের গানবাজনা শুনত, সেগুলোর কথাগুলো প্রায়ই আমরা বুঝতে পারতাম না। সুর শুনতে হয়তো ভাল লাগত কিন্তু কথাগুলোর মধ্যে যদি দ্বৈত অর্থ থাকে বা আজেবাজে ভাষা থাকে যা অনৈতিক, তা হলে আমরা সেগুলো বুঝতে পারতাম না।” তারা কীভাবে এই পরিস্থিতির সঙ্গে মোকাবিলা করেছিল? মিগেল বলেন: “আমাদের ছেলেমেয়েদের অনৈতিক গানবাজনার বিপদ সম্বন্ধে শেখাতে আমরা অনেক সময় ব্যয় করেছিলাম এবং আমরা তাদের এমন গানবাজনা বেছে নিতে সাহায্য করার চেষ্টা করেছিলাম, যা যিহোবার কাছে গ্রহণযোগ্য।” হ্যাঁ, সাংস্কৃতিক বৈসাদৃশ্যের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য সর্তকতা এবং বিবেচনাবোধের দরকার।—দ্বিতীয় বিবরণ ১১:১৮, ১৯; ফিলিপীয় ৪:৫.

পুরস্কার লাভ করা

বিদেশে ছেলেমেয়ে মানুষ করে তোলার জন্য অতিরিক্ত সময় এবং প্রচেষ্টার প্রয়োজন। এই সম্বন্ধে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু, বাবামা এবং ছেলেমেয়ে উভয়ই তাদের চেষ্টার জন্য অতিরিক্ত পুরস্কার পেতে পারে।

আজাম এবং তার স্ত্রী সারা তুরস্ক থেকে জার্মানিতে আসে, যেখানে তারা তিন ছেলেকে মানুষ করে তুলেছে। তাদের বড় ছেলে এখন জার্মানির জেল্টজারের যিহোবার সাক্ষিদের শাখা অফিসে সেবা করছেন। আজাম বলেন: “ছেলেদের জন্য সবচেয়ে বড় উপকার হল তারা এমন গুণগুলো গড়ে তুলতে পারে, যা উভয় সংস্কৃতির জন্য জরুরি সম্পদ।”

আ্যনটনিও এবং লুটোনাডিও আ্যংগোলা থেকে জার্মানিতে এসেছে এবং সেখানে তাদের নটি ছেলেমেয়ে মানুষ করে তুলেছে। তাদের পরিবার লিংগালা, ফ্রেঞ্চ এবং জার্মান ভাষায় কথা বলতে পারে। আ্যনটনিও বলেন: “বিভিন্ন ভাষায় কথা বলার ক্ষমতা আমাদের পরিবারকে অনেক দেশের লোকেদের কাছে সাক্ষ্য দিতে সাহায্য করেছে। এটা সত্যিই আমাদের জন্য অনেক বড় আনন্দ নিয়ে এসেছে।”

দুই ছেলেমেয়ে আছে এমন এক জাপানি দম্পতি, যারা ইংল্যান্ডে এসেছে তারা মনে করে যে, জাপানি এবং ইংরেজি দুটো ভাষা জানা অনেক সুবিধাজনক। ছেলেমেয়েরা বলে: “দুটো ভাষা জানা আমাদের চাকরি পেতে সাহায্য করেছে। আমরা ইংরেজি-ভাষী বড় সম্মেলনগুলো থেকে অনেক উপকার পেয়েছি। একইসঙ্গে, জাপানি-ভাষী মণ্ডলীতে আমাদের সেবা করার সুযোগ হয়েছে, যেখানে অনেক প্রয়োজন রয়েছে।”

আপনি সফল হতে পারেন

নিজের সংস্কৃতির নয়, এমন লোকেদের মধ্যে বসবাস করে ছেলেমেয়ে মানুষ করে তোলা এক বড় প্রতিদ্বন্ধকতা, যা সেই বাইবেলের সময় থেকে ঈশ্বরের দাসেরা মোকাবিলা করে আসছে। মোশির বাবামা সফল হয়েছিল, যদিও তিনি মিশরে বড় হয়েছিলেন। (যাত্রাপুস্তক ২:৯, ১০) বাবিলে অনেক বন্দি যিহুদি তাদের ছেলেমেয়ে মানুষ করেছে, যে-ছেলেমেয়েরা সত্য উপাসনা পুর্নস্থাপন করার জন্য যিরূশালেমে ফিরে যেতে ইচ্ছুক ছিল।—ইষ্রা ২:১, ২, ৬৪-৭০.

একইভাবে আজকে, খ্রীষ্টান বাবামারাও সফল হতে পারে। তারাও হয়তো ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে এইরকম কিছু শোনার পুরস্কার পেতে পারে, যা এক দম্পতি তাদের ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে শুনেছিল: “বাবামার প্রেমময় যত্নের জন্য আমাদের পরিবারের মধ্যে অনেক আন্তরিকতা আছে, যাদের সঙ্গে আমরা সবসময় উত্তম ভাববিনিময় উপভোগ করে আসছি। আমরা পৃথিবীব্যাপী পরিবারের একটা অংশ হতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত, যারা যিহোবার সেবা করছে।”

[পাদটীকা]

^ কিছু নাম পালটে দেওয়া হয়েছে।

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঘরে শুধু মাতৃভাষায় কথা বলা আপনার ছেলেমেয়েদের সেই ভাষা সম্বন্ধে প্রাথমিক জ্ঞান দিতে সাহায্য করবে

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

একই ভাষা দাদুদিদিমা এবং নাতিনাতনিদের মধ্যে সম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করে

[২৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করা তাদের “আত্মিক জ্ঞানে” গড়ে উঠতে সাহায্য করবে