সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবা আপনার জন্য চিন্তা করেন

যিহোবা আপনার জন্য চিন্তা করেন

যিহোবা আপনার জন্য চিন্তা করেন

“তোমাদের সমস্ত ভাবনার ভার [ঈশ্বরের] উপরে ফেলিয়া দেও; কেননা তিনি তোমাদের জন্য চিন্তা করেন।”১ পিতর ৫:৭.

১. কোন্‌ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে যিহোবা ও শয়তান পুরোপুরি আলাদা?

 যিহোবা এবং শয়তান একে অন্যের থেকে পুরোপুরি আলাদা। যেকোন ব্যক্তি নিজেকে যিহোবার নিকটবর্তী মনে করেন, তিনি অবশ্যই দিয়াবলের দ্বারা বিতাড়িত হবেন।। এই পার্থক্য এক তথ্য গ্রন্থে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বাইবেলের ইয়োব বইয়ে শয়তানের কাজ সম্বন্ধে যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, সেটার পরিপ্রেক্ষিতে এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা (১৯৭০) বলে: ‘শয়তানের কাজ হল পৃথিবীতে বিচরণ করে সেইধরনের কাজ বা ব্যক্তিদের খোঁজা, যাদের সম্বন্ধে খারাপ বিবৃতি পাওয়া যায়; তাই তার কাজ “প্রভুর চোখের” চেয়ে একেবারে আলাদা, যা সমস্ত ভাল কিছুকে সুদৃঢ় করার জন্য পৃথিবীতে বিচরণ করে (II বংশা. xvi, ৯)। মানুষের নিঃস্বার্থ মঙ্গলভাবকে শয়তান অবজ্ঞার সঙ্গে সন্দেহ করে থাকে এবং ঈশ্বরের কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণের অধীনে এবং সীমার মধ্যে এটিকে পরীক্ষা করে দেখার অনুমতি তার আছে।’ সত্যি, কতই না এক বৈসাদৃশ্য!—ইয়োব ১:৬-১২; ২:১-৭.

২, ৩. (ক) ইয়োবের বেলায় যা ঘটেছিল, তা থেকে “দিয়াবল” নামের মানে কীভাবে স্পষ্ট বোঝা যায়? (খ) বাইবেল কীভাবে দেখায় যে, শয়তান পৃথিবীতে যিহোবার দাসদের অভিযোগ করেই চলেছে?

“দিয়াবল” শব্দটা যে-গ্রিক শব্দ থেকে এসেছে সেটার মানে হল, “মিথ্যা অভিযোগকারী,” “অপবাদক।” ইয়োবের বই প্রকাশ করে যে, শয়তান যিহোবার বিশ্বস্ত দাস ইয়োবের সম্বন্ধে অভিযোগ করেছিল, তিনি স্বার্থের জন্য তাঁর সেবা করেন, এই কথা বলে: “ইয়োব কি বিনা লাভে ঈশ্বরকে ভয় করে?” (ইয়োব ১:৯) ইয়োবের বইয়ের বিবরণ দেখায় যে, বিভিন্ন পরীক্ষা ও কষ্টভোগ সত্ত্বেও ইয়োব সবসময় যিহোবার আরও নিকটবর্তী হয়েছিলেন। (ইয়োব ১০:৯, ১২; ১২:৯, ১০; ১৯:২৫; ২৭:৫; ২৮:২৮) তার কঠোর পরীক্ষার পর তিনি ঈশ্বরকে বলেছিলেন: “পূর্ব্বে তোমার বিষয় কর্ণে শুনিয়াছিলাম, কিন্তু সম্প্রতি আমার চক্ষু তোমাকে দেখিল।”—ইয়োব ৪২:৫.

ইয়োবের সময়ের পর থেকে কি শয়তান ঈশ্বরের দাসদের সম্বন্ধে অভিযোগ করা বন্ধ করে দিয়েছিল? না। প্রকাশিত বাক্য বই দেখায় যে, এই শেষকালে শয়তান খ্রীষ্টের অভিষিক্ত ভাইদের সম্বন্ধে ও সেইসঙ্গে অবশ্যই তাদের বিশ্বস্ত সহযোগীদের সম্বন্ধেও অভিযোগ করেই চলেছে। (২ তীমথিয় ৩:১২; প্রকাশিত বাক্য ১২:১০, ১৭) তাই, সত্য খ্রীষ্টান হিসেবে যে-জিনিসটা করা আমাদের সকলের খুবই দরকার তা হল, আমাদের চিন্তাশীল ঈশ্বর যিহোবার বশীভূত হওয়া, গভীর প্রেমের দ্বারা চালিত হয়ে তাঁকে সেবা করা আর এভাবে শয়তানের অভিযোগকে মিথ্যা প্রমাণ করা। এটা করে, আমরা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করব।—হিতোপদেশ ২৭:১১.

যিহোবা আমাদের সাহায্য করতে চান

৪, ৫. (ক) শয়তানের বিপরীতে, যিহোবা পৃথিবীতে কী অন্বেষণ করেন? (খ) আমরা যদি যিহোবার অনুগ্রহ পেতে চাই, তা হলে আমাদের কী করা দরকার?

দিয়াবল কাউকে না কাউকে অভিযোগ ও গ্রাস করার চেষ্টা করার জন্য সারা পৃথিবীতে বিচরণ করছে। (ইয়োব ১:৭, ৯; ১ পিতর ৫:৮) এর বিপরীতে, যিহোবা সেই ব্যক্তিদের সাহায্য করতে চান, যাদের তাঁর শক্তির প্রয়োজন রয়েছে। ভাববাদী হনানি রাজা আসাকে বলেছিলেন: “সদাপ্রভুর প্রতি যাহাদের অন্তঃকরণ একাগ্র, তাহাদের পক্ষে আপনাকে বলবান দেখাইবার জন্য তাঁহার চক্ষু পৃথিবীর সর্ব্বত্র ভ্রমণ করে।” (২ বংশাবলি ১৬:৯) শয়তানের ঘৃণার্হ তল্লাসি ও যিহোবার প্রেমপূর্ণ চিন্তার মধ্যে কতই না বড় পার্থক্য!

আমাদের প্রত্যেকটা ভুল ও ব্যর্থতা ধরার উদ্দেশ্যে যিহোবা সবসময় আমাদের ওপর গোপনে নজরদারী করেন না। গীতরচক লিখেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, তুমি যদি অপরাধ সকল ধর, তবে, হে প্রভু, কে দাঁড়াইতে পারিবে?” (গীতসংহিতা ১৩০:৩) এর পরোক্ষ উত্তর হল: কেউই না। (উপদেশক ৭:২০) আমরা যদি পূর্ণ হৃদয়ে যিহোবার নিকটবর্তী হই, তা হলে তাঁর চোখ আমাদের ওপর থাকবে, তবে সেটা আমাদের দোষ ধরার জন্য নয় কিন্তু আমাদের প্রচেষ্টাগুলো দেখার জন্য এবং সাহায্য ও ক্ষমা সম্বন্ধে আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেওয়ার জন্য। প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “ধার্ম্মিকগণের প্রতি প্রভুর [“যিহোবার,” NW] চক্ষু আছে; তাহাদের বিনতির প্রতি তাঁহার কর্ণ আছে; কিন্তু প্রভুর [“যিহোবার,” NW] মুখ দুরাচারদের প্রতিকূল।”—১ পিতর ৩:১২.

৬. দায়ূদের উদাহরণ কীভাবে আমাদের জন্য সান্ত্বনা ও একইসঙ্গে সতর্কতামূলক?

দায়ূদ অসিদ্ধ ছিলেন এবং গুরুতর পাপ করেছিলেন। (২ শমূয়েল ১২:৭-৯) কিন্তু তিনি যিহোবার প্রতি তার হৃদয় উজাড় করে দিয়েছিলেন এবং ঐকান্তিক প্রার্থনায় তাঁর নিকটবর্তী হয়েছিলেন। (গীতসংহিতা ৫১:১-১২, শীর্ষলিখন) যিহোবা তার প্রার্থনা শুনেছিলেন এবং তাকে ক্ষমা করেছিলেন, যদিও দায়ূদ তার পাপের তিক্ত পরিণতি ভোগ করেছিলেন। (২ শমূয়েল ১২:১০-১৪) এটা আমাদের জন্য সান্ত্বনা ও একইসঙ্গে সতর্কতামূলক হওয়া উচিত। এটা জানা সান্ত্বনাদায়ক যে, যিহোবা আমাদের পাপ ক্ষমা করতে আগ্রহী যদি আমরা সত্যিই অনুতপ্ত হই কিন্তু সেইসঙ্গে এটাও উপলব্ধি করা দরকার যে, পাপ প্রায়ই গুরুতর পরিণতি নিয়ে আসে। (গালাতীয় ৬:৭-৯) যদি আমরা যিহোবার নিকটবর্তী হতে চাই, তা হলে যিহোবাকে অসন্তুষ্ট করে এমন যেকোন কিছু থেকে আমাদের যত দূর সম্ভব দূরে থাকা উচিত।—গীতসংহিতা ৯৭:১০.

যিহোবা তাঁর লোকেদের নিজের কাছে আকর্ষণ করেন

৭. কোন্‌ ধরনের লোকেদের প্রতি যিহোবা লক্ষ রাখেন এবং কীভাবে তিনি নিজের কাছে তাদের আকর্ষণ করেন?

দায়ূদ তার একটি গীতে লিখেছিলেন: “সদাপ্রভু উচ্চ, তথাপি অবনতের প্রতি দৃষ্টি রাখেন, কিন্তু গর্ব্বিতকে দূর হইতে জানেন।” (গীতসংহিতা ১৩৮:৬) একইভাবে, আরেকটি গীত বলে: “কে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর তুল্য? তিনি উদ্ধের্ব সমাসীন; তিনি অবনত হইয়া দৃষ্টিপাত করেন আকাশে ও পৃথিবীতে। তিনি ধূলি হইতে দীনহীনকে তুলেন।” (গীতসংহিতা ১১৩:৫-৭) হ্যাঁ, মহাবিশ্বের সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা পৃথিবীর দিকে তাকানোর জন্য অবনত হন এবং তাঁর চোখ “অবনতের প্রতি,” ‘দীনহীনের প্রতি,’ যে-লোকেরা “সমস্ত ঘৃণার্হ কার্য্যের বিষয়ে . . . দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করে ও কোঁকায়” তাদের প্রতি রয়েছে। (যিহিষ্কেল ৯:৪) তিনি তাঁর পুত্রের মাধ্যমে এই লোকেদের নিজের কাছে আকর্ষণ করেন। পৃথিবীতে থাকাকালীন যীশু বলেছিলেন: “পিতা, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনি আকর্ষণ না করিলে কেহ আমার কাছে আসিতে পারে না, . . . যদি পিতা হইতে ক্ষমতা দত্ত না হয়, তবে কেহই আমার নিকটে আসিতে পারে না।”—যোহন ৬:৪৪, ৬৫.

৮, ৯. (ক) কেন আমাদের সকলের যীশুর কাছে আসা দরকার? (খ) মুক্তির মূল্যের ব্যবস্থার মধ্যে কী এমন উল্লেখযোগ্য বিষয় রয়েছে?

সমস্ত মানুষের উচিত যীশুর কাছে আসা এবং তাঁর মুক্তির মূল্যের ওপর বিশ্বাস রাখা কারণ তারা জন্মগতভাবে পাপী, ঈশ্বর থেকে বিচ্ছিন্ন। (যোহন ৩:৩৬) তাদের আবার ঈশ্বরের সঙ্গে সম্মিলিত হওয়া দরকার। (২ করিন্থীয় ৫:২০) ঈশ্বর অপেক্ষা করে থাকেননি যে পাপীরা তাঁর কাছে অনুরোধ করবে যেন তিনি কোন ব্যবস্থা নেন, যাতে তারা তাঁর সঙ্গে শান্তি স্থাপন করতে পারে। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “ঈশ্বর আমাদের প্রতি তাঁহার নিজের প্রেম প্রদর্শন করিতেছেন; কারণ আমরা যখন পাপী ছিলাম, তখনও খ্রীষ্ট আমাদের নিমিত্ত প্রাণ দিলেন। . . . কেননা যখন আমরা শত্রু ছিলাম, তখন যদি ঈশ্বরের সহিত তাঁহার পুত্ত্রের মৃত্যু দ্বারা সম্মিলিত হইলাম, তবে সম্মিলিত হইয়া কত অধিক নিশ্চয় তাঁহার জীবনে পরিত্রাণ পাইব।”—রোমীয় ৫:৮, ১০.

প্রেরিত যোহন এই কথা লিখে ওই মহান সত্যকে নিশ্চিত করেছিলেন যে, ঈশ্বর মানুষকে তাঁর সঙ্গে সম্মিলিত করছেন: “আমাদিগেতে ঈশ্বরের প্রেম ইহাতেই প্রকাশিত হইয়াছে যে, ঈশ্বর আপনার একজাত পুত্ত্রকে জগতে প্রেরণ করিয়াছেন, যেন আমরা তাঁহা দ্বারা জীবন লাভ করিতে পারি। ইহাতেই প্রেম আছে; আমরা যে ঈশ্বরকে প্রেম করিয়াছিলাম, তাহা নয়; কিন্তু তিনিই আমাদিগকে প্রেম করিলেন, এবং আপন পুত্ত্রকে আমাদের পাপার্থক প্রায়শ্চিত্ত হইবার জন্য প্রেরণ করিলেন।” (১ যোহন ৪:৯, ১০) ঈশ্বরই প্রথমে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, মানুষ নয়। আপনি কি এমন একজন ঈশ্বরের প্রতি আকর্ষণ বোধ করেন না, যিনি ‘পাপীদের’ প্রতি এক অর্থে এমনকি ‘শত্রুদের’ প্রতিও এত প্রেম দেখিয়েছিলেন?—যোহন ৩:১৬.

যিহোবাকে অন্বেষণ করার প্রয়োজনীয়তা

১০, ১১. (ক) যিহোবার অন্বেষণ করার জন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে? (খ) শয়তানের বিধিব্যবস্থাকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?

১০ অবশ্য, যিহোবা তাঁর কাছে আসতে আমাদের জোর করেন না। আমাদের অবশ্যই তাঁকে অন্বেষণ করতে হবে, ‘হাঁতড়িয়া হাঁতড়িয়া তাঁহার উদ্দেশ পাইতে হইবে; অথচ তিনি আমাদের কাহারও হইতে দূরে নহেন।’ (প্রেরিত ১৭:২৭) আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, আমাদের বশ্যতা দাবি করার অধিকার যিহোবার রয়েছে। শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন: “অতএব তোমরা ঈশ্বরের বশীভূত হও; কিন্তু দিয়াবলের প্রতিরোধ কর, তাহাতে সে তোমাদের হইতে পলায়ন করিবে। ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও, তাহাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন। হে পাপিগণ, হস্ত শুচি কর; হে দ্বিমনা লোক সকল, হৃদয় বিশুদ্ধ কর।” (যাকোব ৪:৭, ৮) দিয়াবলের বিরুদ্ধে এবং যিহোবার পক্ষে এক দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের দ্বিধা করা উচিত নয়।

১১ এর মানে হল শয়তানের দুষ্ট বিধিব্যবস্থা থেকে নিজেদের দূরে রাখা। যাকোব এও লিখেছিলেন: “তোমরা কি জান না যে, জগতের মিত্রতা ঈশ্বরের সহিত শত্রুতা? সুতরাং, যে কেহ জগতের মিত্র হইতে বাসনা করে, সে আপনাকে ঈশ্বরের শত্রু করিয়া তুলে।” (যাকোব ৪:৪) অন্যদিকে, আমরা যদি যিহোবার মিত্র হতে চাই, তা হলে আমাদের অবশ্যই আশা করা উচিত যে, শয়তানের জগৎ আমাদের ঘৃণা করবে।—যোহন ১৫:১৯; ১ যোহন ৩:১৩.

১২. (ক) দায়ূদ কোন্‌ সান্ত্বনাদায়ক কথাগুলো লিখেছিলেন? (খ) ভাববাদী অসরিয়ের মাধ্যমে যিহোবা কোন্‌ সাবধানবাণী দিয়েছিলেন?

১২ শয়তানের জগৎ যখন আমাদের প্রতি কয়েকটা নির্দিষ্ট উপায়ে বিরোধিতা করে, তখন আমাদের বিশেষ করে প্রার্থনায় যিহোবার নিকটবর্তী হওয়া দরকার, তাঁর সাহায্য চাওয়া দরকার। দায়ূদ, যিনি অনেকবার যিহোবার উদ্ধার করার ক্ষমতাকে উপলব্ধি করেছিলেন, তিনি আমাদের সান্ত্বনার জন্য লিখেছিলেন: “সদাপ্রভু সেই সকলেরই নিকটবর্ত্তী, যাহারা তাঁহাকে ডাকে, যাহারা সত্যে তাঁহাকে ডাকে। যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, তিনি তাহাদের বাঞ্ছা পূর্ণ করেন, আর তাহাদের আর্ত্তনাদ শুনিয়া তাহাদিগকে ত্রাণ করেন। যাহারা সদাপ্রভুকে প্রেম করে, তিনি তাহাদের সকলকে রক্ষা করেন, কিন্তু তিনি সমুদয় দুষ্টকে সংহার করিবেন।” (গীতসংহিতা ১৪৫:১৮-২০) এই গীত দেখায় যে, যিহোবা আমাদের রক্ষা করতে পারেন, যখন আমরা ব্যক্তিগতভাবে পরীক্ষিত হই এবং “মহাক্লেশের” সময় তিনি তাঁর লোকেদের সমষ্টিগতভাবে রক্ষা করবেন। (প্রকাশিত বাক্য ৭:১৪) যিহোবা আমাদের নিকটবর্তী থাকবেন, যদি আমরা তাঁর নিকটবর্তী থাকি। “ঈশ্বরের আত্মা” দ্বারা পরিচালিত হয়ে, ভাববাদী অসরিয় যে-কথা বলেছিলেন, সেটাকে আমরা এক সার্বিক সত্য হিসেবে গ্রহণ করতে পারি: “তোমরা যতদিন সদাপ্রভুর সঙ্গে থাক, ততদিন তিনিও তোমাদের সঙ্গে আছেন; আর যদি তোমরা তাঁহার অন্বেষণ কর, তবে তিনি তোমাদিগকে তাঁহার উদ্দেশ পাইতে দিবেন; কিন্তু যদি তাঁহাকে ত্যাগ কর, তবে তিনি তোমাদিগকে ত্যাগ করিবেন।”—২ বংশাবলি ১৫:১, ২.

আমাদের কাছে যিহোবা অবশ্যই বাস্তব হতে হবে

১৩. কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, যিহোবা আমাদের কাছে বাস্তব?

১৩ মোশির বিষয়ে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন যে, “তিনি . . . যিনি অদৃশ্য, তাঁহাকে যেন দেখিয়াই স্থির থাকিলেন।” (ইব্রীয় ১১:২৭) অবশ্যই, মোশি কখনও যিহোবাকে আক্ষরিকভাবে দেখেননি। (যাত্রাপুস্তক ৩৩:২০) কিন্তু যিহোবা তাঁর কাছে এতটাই বাস্তব ছিলেন, যেন তিনি তাঁকে প্রকৃতই দেখেছিলেন। একইভাবে, ইয়োবের প্রতি পরীক্ষাগুলো ঘটার পর তার বিশ্বাসের চোখ দিয়ে তিনি যিহোবাকে আরও স্বতন্ত্রভাবে দেখেছিলেন, এমন এক ঈশ্বর হিসেবে যিনি তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের প্রতি পরীক্ষা ঘটার অনুমতি দেন কিন্তু তিনি কখনও তাদের পরিত্যাগ করেন না। (ইয়োব ৪২:৫) হনোক ও নোহের বিষয় বলা হয়েছিল যে, তারা ‘ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন করিতেন।’ এটা তারা করেছিলেন ঈশ্বরকে খুশি করার চেষ্টা করে এবং তাঁর বাধ্য থেকে। (আদিপুস্তক ৫:২২-২৪; ৬:৯, ২২; ইব্রীয় ১১:৫, ৭) যিহোবা যদি আমাদের কাছে ততখানি বাস্তব হন, যতখানি তিনি হনোক, নোহ, ইয়োব ও মোশির কাছে ছিলেন, তা হলে আমরা আমাদের সমস্ত পথে “তাঁহাকে স্বীকার” করব আর তিনি “[আমাদের] পথ সকল সরল করিবেন।”—হিতোপদেশ ৩:৫, ৬.

১৪. যিহোবার প্রতি “আসক্ত” থাকার মানে কী?

১৪ ইস্রায়েলীয়রা প্রতিজ্ঞাত দেশে ঢোকার ঠিক আগের মুহূর্তে মোশি তাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমরা আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুরই অনুগামী হও, তাঁহাকেই ভয় কর, তাঁহারই আজ্ঞা পালন কর, তাঁহারই রবে অবধান কর, তাঁহারই সেবা কর, ও তাঁহাতেই আসক্ত থাক।” (দ্বিতীয় বিবরণ ১৩:৪) তাদের যিহোবার অনুগামী হতে হবে, তাঁকে ভয় করতে হবে, তাঁর আজ্ঞা পালন করতে হবে এবং তাঁর প্রতি আসক্ত থাকতে হবে। এখানে যে-শব্দটিকে “আসক্ত” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেই সম্বন্ধে একজন বাইবেল পণ্ডিত বলেন যে, “এই ভাষা এক অতি নিকট ও অন্তরঙ্গ সম্পর্কের ইঙ্গিত করে।” গীতরচক বলেছিলেন: “সদাপ্রভুর গূঢ় মন্ত্রণা [“সঙ্গে অন্তরঙ্গতা,” NW] তাঁহার ভয়কারীদের অধিকার।” (গীতসংহিতা ২৫:১৪) যিহোবার সঙ্গে এই মহামূল্য, নিকট সম্পর্ক আমাদের হবে, যদি তিনি আমাদের কাছে বাস্তব হন এবং আমরা তাঁকে এতটা ভালবাসি যে, আমরা কোনভাবে তাঁকে অখুশি করতে ভয় পাই।—গীতসংহিতা ১৯:৯-১৪.

যিহোবার চিন্তা সম্বন্ধে আপনি কি অবগত?

১৫, ১৬. (ক) গীতসংহিতা ৩৪ অধ্যায় কীভাবে দেখায় যে, যিহোবা আমাদের জন্য চিন্তা করেন? (খ) আমাদের কী করা উচিত যদি আমাদের প্রতি যিহোবার মঙ্গলভাবের কথাগুলো মনে করা আমাদের জন্য মুশকিল হয়?

১৫ শয়তানের সুনিপুণ চাতুরীগুলোর মধ্যে একটা হল, আমাদের ঈশ্বর যিহোবা যে সবসময় তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের জন্য চিন্তা করে চলেছেন, সেই বিষয় থেকে আমাদের দৃষ্টি সরিয়ে নিতে চেষ্টা করা। ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদ ভালভাবেই অবগত ছিলেন যে, যিহোবা সুরক্ষার হাত বাড়িয়ে দেন এমনকি যখন তিনি সবচেয়ে চরম মুহূর্তের মুখোমুখি হয়েছিলেন। গাতের রাজা আখীশের সামনে যখন তিনি পাগলের ভান করতে বাধ্য হয়েছিলেন, তখন তিনি একটা গান রচনা করেছিলেন, এক চমৎকার গীত, যেটার মধ্যে বিশ্বাসের এই অভিব্যক্তিগুলো ছিল: “আমার সহিত সদাপ্রভুর মহিমা কীর্ত্তন কর; আইস, আমরা একসঙ্গে তাঁহার নামের প্রতিষ্ঠা করি। আমি সদাপ্রভুর অন্বেষণ করিলাম, তিনি আমাকে উত্তর দিলেন, আমার সকল আশঙ্কা হইতে উদ্ধার করিলেন। সদাপ্রভুর দূত, যাহারা তাঁহাকে ভয় করে, তাহাদের চারিদিকে শিবির স্থাপন করেন, আর তাহাদিগকে উদ্ধার করেন। আস্বাদন করিয়া দেখ, সদাপ্রভু মঙ্গলময়; ধন্য সেই ব্যক্তি, যে তাঁহার শরণাপন্ন। সদাপ্রভু ভগ্নচিত্তদের নিকটবর্ত্তী, তিনি চূর্ণমনাদের পরিত্রাণ করেন। ধার্ম্মিকের বিপদ অনেক, কিন্তু সেই সকল হইতে সদাপ্রভু তাহাকে উদ্ধার করেন।”—গীতসংহিতা ৩৪:৩, ৪, ৭, ৮, ১৮, ১৯; ১ শমূয়েল ২১:১০-১৫.

১৬ যিহোবার রক্ষা করার ক্ষমতা সম্বন্ধে কি আপনি নিশ্চিত? আপনি কি তাঁর দূত বাহিনীর দ্বারা সুরক্ষার বিষয়ে অবগত আছেন? আপনি কি ব্যক্তিগতভাবে পরীক্ষা করেছেন এবং দেখেছেন যে, যিহোবা মঙ্গলময়? সম্প্রতি, কবে আপনি বিশেষ করে বুঝতে পেরেছিলেন যে, যিহোবা আপনার প্রতি মঙ্গলময়? মনে করার চেষ্টা করুন। পরিচর্যায় শেষের ঘরটায় গিয়ে কি আপনার মনে হচ্ছিল যে, আপনি আর বেশি করতে পারবেন না? সম্ভবত এরপর গৃহকর্তার সঙ্গে আপনার এক চমৎকার আলোচনা হয়েছিল। প্রয়োজনীয় বাড়তি শক্তি ও আশীর্বাদের জন্য আপনি কি মনে করে যিহোবাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন? (২ করিন্থীয় ৪:৭) অন্যদিকে, যিহোবা আপনার প্রতি নির্দিষ্টভাবে যে-মঙ্গলভাব দেখিয়েছেন, তা মনে করা আপনার জন্য হয়তো কিছুটা মুশকিল হতে পারে। আপনার হয়তো এক সপ্তাহ, এক মাস, এক বছর বা আরও আগের কথা চিন্তা করতে হতে পারে। যদি তা-ই হয়, তা হলে যিহোবার আরও নিকটবর্তী হওয়ার এবং তিনি আপনাকে কীভাবে পরিচালনা ও নির্দেশনা দেন, তা দেখার চেষ্টা করুন না কেন? প্রেরিত পিতর খ্রীষ্টানদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমরা ঈশ্বরের পরাক্রান্ত হস্তের নীচে নত হও, . . . তোমাদের সমস্ত ভাবনার ভার তাঁহার উপরে ফেলিয়া দেও; কেননা তিনি তোমাদের জন্য চিন্তা করেন।” (১ পিতর ৫:৬, ৭) বস্তুত, তিনি আপনার জন্য যে এত চিন্তা করেন তা দেখে আপনি একেবারে অবাক হয়ে যাবেন!—গীতসংহিতা ৭৩:২৮.

যিহোবার অন্বেষণ করে চলুন

১৭. আমরা যদি যিহোবার অন্বেষণ করে চলতে চাই, তা হলে কী করা দরকার?

১৭ যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বজায় রাখা অবশ্যই এক ক্রমাগত বিষয় হওয়া উচিত। প্রার্থনায় যীশু তাঁর পিতাকে বলেছিলেন: “আর ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে, জানিতে পায়।” (যোহন ১৭:৩) যিহোবা ও তাঁর পুত্র সম্বন্ধে জ্ঞান নেওয়ার জন্য আমাদের ক্রমাগত প্রচেষ্টা করা দরকার। ‘ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকল’ উপলব্ধি করার জন্য আমাদের প্রার্থনা ও পবিত্র আত্মার সাহায্য দরকার। (১ করিন্থীয় ২:১০; লূক ১১:১৩) এ ছাড়া, আমাদের মনকে “উপযুক্ত সময়ে” আধ্যাত্মিক খাদ্য দিয়ে পূর্ণ করার জন্য ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ নির্দেশনাও দরকার। (মথি ২৪:৪৫) এই মাধ্যমের সাহায্যে যিহোবা আমাদের প্রতিদিন তাঁর বাক্য পড়তে, নিয়মিত খ্রীষ্টীয় সভায় উপস্থিত হতে এবং “রাজ্যের সুসমাচার প্রচার” করায় অর্থপূর্ণভাবে অংশ নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। (মথি ২৪:১৪) তা করে আমরা আমাদের চিন্তাশীল ঈশ্বর যিহোবার অন্বেষণ করে চলব।

১৮, ১৯. (ক) কী করার জন্য আমাদের সংকল্পবদ্ধ হতে হবে? (খ) যদি আমরা দিয়াবলের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নিই এবং যিহোবার অন্বেষণ করে চলি, তা হলে আমরা কীভাবে আশীর্বাদ পাব?

১৮ শয়তান তার সমস্ত শক্তি দিয়ে যিহোবার লোকেদের ওপর বিভিন্ন দিক দিয়ে তাড়না, বিরোধিতা এবং চাপ নিয়ে আসছে। সে আমাদের শান্তি নষ্ট করতে চায় এবং ঈশ্বরের সামনে আমাদের উত্তম মানকে ধ্বংস করে দিতে চায়। সে চায় না যে, আমরা সৎহৃদয়ের ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার কাজ করে চলি ও সার্বিক সার্বভৌমত্বের বিচার্য বিষয়ে তাদের যিহোবার পক্ষ নিতে সাহায্য করি। কিন্তু আমাদের অবশ্যই যিহোবার প্রতি অনুগত থাকার জন্য সংকল্পবদ্ধ হতে হবে, মন্দ ব্যক্তির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাঁর ওপর আস্থা রাখতে হবে। ঈশ্বরের বাক্যকে আমাদের পথ দেখাতে দিয়ে এবং তাঁর দৃশ্যত সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয় থেকে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, আমাদের সমর্থন দেওয়ার জন্য তিনি সবসময় থাকবেন।—যিশাইয় ৪১:৮-১৩.

১৯ তাই, আসুন আমরা সবাই দিয়াবল ও তার সুনিপুণ চাতুরীগুলোর বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ নিই, সবসময় আমাদের প্রিয় ঈশ্বর যিহোবার অন্বেষণ করে চলি, যিনি কখনও ‘আমাদের সুস্থির, সবল, বদ্ধমূল করিতে’ ব্যর্থ হবেন না। (১ পিতর ৫:৮-১১) এভাবে, আমরা ‘ঈশ্বরের প্রেমে আপনাদিগকে রক্ষা করিব, এবং অনন্ত জীবনের জন্য আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের দয়ার অপেক্ষায় থাকিব।’—যিহূদা ২১.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• “দিয়াবল” শব্দের মানে কী এবং কীভাবে দিয়াবল সেই উপাধির যোগ্য?

• যিহোবা পৃথিবীর অধিবাসীদের যেভাবে লক্ষ করেন, সেই ক্ষেত্রে দিয়াবল কীভাবে তাঁর চেয়ে আলাদা?

• যিহোবার নিকটবর্তী হতে একজন ব্যক্তিকে কেন অবশ্যই মুক্তির মূল্যকে গ্রহণ করতে হবে?

• যিহোবাতে “আসক্ত” থাকার মানে কী এবং কীভাবে আমরা তাঁকে অন্বেষণ করে চলতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

বিভিন্ন পরীক্ষা সত্ত্বেও ইয়োব উপলব্ধি করেছিলেন যে, যিহোবা তার জন্য চিন্তা করেন

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

প্রতিদিন বাইবেল পড়া, খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে নিয়মিত উপস্থিতি এবং প্রচার কাজে উদ্যোগী অংশ নেওয়া আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, যিহোবা আমাদের জন্য চিন্তা করেন