সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল

পাঠকদের থেকে প্রশ্নসকল

 সামান্য পরিমাণ অর্থ জড়িত থাকলেও কি জুয়াখেলা ভুল হবে?

জুয়াখেলা সম্বন্ধে ঈশ্বরের বাক্য বিস্তারিত আলোচনা করে না কিন্তু এটি এমন অনেক কিছু বলে যা দেখায় যে, সমস্ত জুয়াখেলা হল বাইবেলের নীতিবিরুদ্ধ। * উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এটা ব্যাপকভাবে স্বীকৃত যে, জুয়াখেলা লোভ জাগিয়ে তোলে। শুধু এই বিষয়টাই খ্রীষ্টানদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় কারণ বাইবেল বলে যে, “লোভী” ব্যক্তিরা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাবে না এবং লোভ প্রতিমাপূজার পর্যায়ে পড়ে।—১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০; কলসীয় ৩:৫.

এ ছাড়া, জুয়াখেলা অহমিকা এবং বিপজ্জনক প্রতিদ্বন্দ্বিতার মনোভাবকে অর্থাৎ জয়ী হওয়ার এক তীব্র আকাঙ্ক্ষাকে জাগিয়ে তোলে। প্রেরিত পৌল এইধরনের বিষয়গুলো সম্বন্ধে সাবধান করেছিলেন যখন তিনি লিখেছিলেন: “আইস . . . অনর্থক দর্প না করি, পরস্পরকে জ্বালাতন [“পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতা,” NW] না করি, পরস্পর হিংসাহিংসি না করি।” (গালাতীয় ৫:২৬) এ ছাড়া, জুয়াখেলা কিছুজনকে ভাগ্যের ওপর কুসংস্কারাচ্ছন্নভাবে নির্ভর করতে উৎসাহিত করে। জুয়াড়িবা সমস্ত রকমের কুসংস্কার গড়ে তোলে এই আশায় যে, নিজেদের পক্ষে ভাগ্যকে যেন প্রভাবিত করা যায়। তারা আমাদের অবিশ্বস্ত ইস্রায়েলীয়দের কথা মনে করিয়ে দেয় যারা ‘ভাগ্য [দেবের] জন্য মেজ সাজাইয়া থাকে, এবং নিরূপণী [দেবীর] উদ্দেশে মিশ্র সুরা পূর্ণ করিয়া থাকে।’—যিশাইয় ৬৫:১১.

কেউ কেউ হয়তো যুক্তি দেখাতে পারে যে, আত্মীয়স্বজন বা ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বন্ধুসুলভ তাস বা বোর্ড গেমস খেলার সময় অল্প পরিমাণ অর্থ বাজি ধরা ক্ষতিহীন বিনোদন ছাড়া আর কিছুই নয়। এটা ঠিক যে, যে-ব্যক্তি অল্প পরিমাণ টাকা বাজি ধরেন, তিনি হয়তো নিজেকে লোভী, আত্মাভিমানী, প্রতিযোগী বা কুসংস্কারচ্ছন্ন মনে করেন না। কিন্তু, যার সঙ্গে তিনি জুয়া খেলছেন, তার ওপর এই জুয়াখেলা কেমন প্রভাব ফেলতে পারে? ‘শুধু মজা করার জন্য’ সামান্য বাজি ধরেই অনেক জুয়াড়িরা শুরু করেছে। (লূক ১৬:১০) আপাতদৃষ্টিতে ক্ষতিহীন বিনোদন তাদের ক্ষেত্রে অনেক বড় অমঙ্গল নিয়ে আসে।

এটা বিশেষভাবে ছোট ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে সত্য। অনেক ছেলেমেয়ে একটা ছোট বাজিতে জেতার উত্তেজনা উপভোগ করেছে এবং আরও মোটা অঙ্কের বাজিতে যাওয়ার জন্য প্রলোভিত হয়েছে। (১ তীমথিয় ৬:১০) আ্যরিজোনা কাউন্সিল অন কমপালসিভ গ্যামব্লিং এর দ্বারা যুক্তরাষ্ট্রে যে-দীর্ঘস্থায়ী গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে, তা স্বীকার করে যে, জুয়ার প্রতি আসক্ত এমন অনেক ব্যক্তি অল্প বয়সেই “খেলাধুলার সময় অথবা বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে তাস খেলার সময় ছোটখাটো বাজি ধরার মাধ্যমে” শুরু করেছে। আরেকটা রিপোর্ট বলে যে, “ছেলেমেয়েরা ঘরে জুয়াখেলা শুরু করে, সাধারণত পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে তাস খেলার মাধ্যমে।” রিপোর্ট আরও বলে, “যে-ছেলেমেয়েরা জুয়া খেলে তাদের মধ্যে ৩০ ভাগই তাদের ১১তম জন্মদিনের আগেই তা শুরু করেছে।” কেন লোকেরা খুব বেশি জুয়া খেলে—অস্বাভাবিকতা এবং সমস্যাজনক জুয়া খেলা (ইংরেজি) গবেষণা অনুসারে অনেক কিশোরকিশোরী জুয়াড়ি, বিভিন্ন অপরাধ বা অনৈতিকতা করে তাদের আসক্তির অর্থ জুগিয়ে থাকে। যেটাকে হয়তো প্রথমে ক্ষতিহীন বলে মনে হয়েছে, সেটার কতই না এক দুঃখজনক পরিণতি!

যেহেতু আমরা এমন একটা জগতে বাস করছি, যেখানে ইতিমধ্যেই অনেক ফাঁদ এবং প্রলোভন রয়েছে, সেখানে কেন আমরা অযথা নিজেদের আরেকটা বিষয়ের মধ্যে জড়াব? (হিতোপদেশ ২৭:১২) জুয়াখেলা—ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বা তাদের আড়ালে, ছোট বা বড় যে-অঙ্কের টাকাই হোক—আধ্যাত্মিকতার পক্ষে ক্ষতিকারক এবং আমাদের তা এড়িয়ে চলা উচিত। যে-খ্রীষ্টানরা বিনোদন হিসেবে বোর্ড বা তাস খেলে তাদের জন্য ভাল পরামর্শ হবে, তারা যেন কাগজে-কলমে হিসেব রাখে বা কোন হিসেব রাখা ছাড়াই শুধু মজা করার জন্য খেলা করে। যে-বিজ্ঞ খ্রীষ্টানরা নিজেদের আধ্যাত্মিকতা ও সেইসঙ্গে তাদের বন্ধুবান্ধব এবং তাদের পরিবারের জন্য চিন্তা করে, তারা জুয়াখেলার অভ্যাস এড়িয়ে চলে—এমনকি এতে যদি অল্প পরিমাণ অর্থও জড়িত থাকে।

[পাদটীকা]

^ ওয়ার্ল্ড বুক এনসাইক্লোপিডিয়া জুয়াখেলাকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করে, “একটা খেলা, ঘটনা বা ভাগ্যের ফলাফল সম্বন্ধে বাজি ধরা।” এটা আরও বলে যে, “জুয়াড়ি বা খেলোয়াড়রা সাধারণত টাকার বাজি ধরে . . . এইধরনের ভাগ্যের খেলাগুলোতে যেমন লটারি, তাস এবং পাশা।”