সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

কীভাবে আমরা আমাদের দিনকে যিহোবার সামনে গণনা করতে পারি?

কীভাবে আমরা আমাদের দিনকে যিহোবার সামনে গণনা করতে পারি?

কীভাবে আমরা আমাদের দিনকে যিহোবার সামনে গণনা করতে পারি?

“গতকাল হারিয়ে গেছে, সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের মাঝে, দুটি সুবর্ণ মুহূর্ত, প্রত্যেকটি ষাটটি হিরের মিনিট দিয়ে খচিত। এটি আর ফিরে আসবে না, কারণ এটি চিরকালের জন্য বিদায় নিয়েছে!” —লিডিয়া এইচ. সিগারনি, আমেরিকার গ্রন্থকার (১৭৯১-১৮৬৫)।

 আমাদের জীবনের দিনগুলো অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ও ক্ষণস্থায়ী বলে মনে হয়। গীতরচক দায়ূদ জীবনের এই ক্ষণস্থায়িত্ব নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছিলেন আর তিনি এই প্রার্থনা করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন: “সদাপ্রভু, আমার অন্তকাল আমাকে জানাও, আমার আয়ুর পরিমাণ কি, জানাও, আমি জানিতে চাহি, আমি কেমন ক্ষণিক। দেখ, তুমি আমার আয়ু কতিপয় মুষ্টি পরিমিত করিয়াছ, আমার জীবনকাল তোমার দৃষ্টিতে অবস্তুবৎ।” দায়ূদের উদ্দেশ্য ছিল যে তিনি তার মুখের বাক্য ও কাজের মাধ্যমে এমন এক জীবনযাপন করবেন, যা ঈশ্বরকে খুশি করবে। ঈশ্বরের ওপর তার নির্ভরতা প্রকাশ করতে গিয়ে, তিনি বলেছিলেন: “তোমাতেই আমার প্রত্যাশা।” (গীতসংহিতা ৩৯:৪, ৫, ৭) যিহোবা শুনেছিলেন। বস্তুত, তিনি দায়ূদের কার্যকলাপ পরিমাপ করেছিলেন এবং সেই অনুসারে তাকে পুরস্কৃত করেছিলেন।

দিনের প্রতিটি মুহূর্তে ব্যস্ত থাকা আর দ্রুতগতি ও কাজকর্মে ভরা জীবনধারার সঙ্গে ভেসে যাওয়া সহজ। এটা আমাদের মধ্যে এক উৎকণ্ঠামূলক উদ্বেগ জাগিয়ে তুলতে পারে, বিশেষ করে যখন দেখি যে অনেক কাজ করতেও অভিজ্ঞতা লাভ করতে হবে অথচ সময় খুবই অল্প। আমাদের উদ্দেশ্যও কি দায়ূদের মতো—এমনভাবে জীবনযাপন করা, যাতে ঈশ্বরের অনুমোদন পাওয়া যায়? এটা নিশ্চিত যে, যিহোবা আমাদের প্রত্যেকের প্রতি নজর রাখেন এবং সতর্কতার সঙ্গে আমাদের পরীক্ষা করেন। ঈশ্বর ভয়শীল ব্যক্তি ইয়োব প্রায় ৩,৬০০ বছর আগে স্বীকার করেছিলেন যে, যিহোবা তার পথের প্রতি দৃষ্টি রেখেছিলেন এবং তার পদক্ষেপগুলো গণনা করেছিলেন। ইয়োব অলংকারপূর্ণ ভাষায় জিজ্ঞেস করেছিলেন: “তিনি তত্ত্ব করিলে তাঁহাকে কি উত্তর দিব?” (ইয়োব ৩১:৪-৬, ১৪) আধ্যাত্মিক বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে, তাঁর আদেশগুলো পালন করে এবং নিজেদের সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করার মাধ্যমে, ঈশ্বরের সামনে আমাদের দিনগুলো গণনা করা সম্ভব। আসুন এই বিষয়গুলো আমরা আরও নিবিড়ভাবে বিবেচনা করে দেখি।

আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে প্রধান বিবেচনার বিষয় করে তুলুন

অনুপ্রাণিত শাস্ত্রগুলো আমাদের যথার্থভাবে উপদেশ দেয় আধ্যাত্মিক বিষয়কে প্রাধান্য দিতে, যখন এটি বলে: ‘যাহা যাহা ভিন্ন প্রকার [“বেশি গুরুত্বপূর্ণ,” NW] তাহা পরীক্ষা করিয়া চিনিয়া লও।’ এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কী? এর উত্তরের অন্তর্ভুক্ত হল ‘তত্ত্বজ্ঞান ও সর্ব্বপ্রকার সূক্ষ্মচৈতন্য।’ (ফিলিপীয় ১:৯, ১০) যিহোবার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করার জন্য আমাদের নিজেদের সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করা দরকার। কিন্তু, আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে আমাদের প্রধান বিবেচনার বিষয় হিসেবে গড়ে তোলা এক পুরস্কারদায়ক ও পরিতৃপ্ত জীবনের নিশ্চয়তা দেয়।

প্রেরিত পৌল আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন, “প্রভুর প্রীতিজনক কি, তাহার পরীক্ষা কর।” অবশ্যই, আমাদের এটা পরীক্ষা করার সঙ্গে নিজেদের উদ্দেশ্য ও হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষাগুলোর আত্ম-পরীক্ষা করা জড়িত। প্রেরিত আরও বলেন: “প্রভুর [“যিহোবার,” NW] ইচ্ছা কি, তাহা বুঝ।” (ইফিষীয় ৫:১০, ১৭) অতএব, যিহোবা কোন্‌ বিষয়কে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন? বাইবেলের একটি প্রবাদ উত্তর দেয়: “প্রজ্ঞাই প্রধান বিষয়, তুমি প্রজ্ঞা উপার্জ্জন কর; সমস্ত উপার্জ্জন দিয়া সুবিবেচনা উপার্জ্জন কর। তাহাকে শিরোধার্য্য কর, সে তোমাকে উন্নত করিবে।” (হিতোপদেশ ৪:৭, ৮) যিহোবা সেই ব্যক্তির জন্য আনন্দ করেন, যিনি ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা অর্জন ও প্রয়োগ করেন। (হিতোপদেশ ২৩:১৫) এইধরনের প্রজ্ঞার সৌন্দর্য হল যে, এটিকে ছিনিয়ে নেওয়া বা নষ্ট করা যায় না। বরং, এটি ‘দুষ্টের পথ হইতে আর যাহারা কুটিল বাক্য বলে’ তাদের কাছ থেকে রক্ষা করে ও সুরক্ষা জোগায়।—হিতোপদেশ ২:১০-১৫.

তাই আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে হালকাভাবে দেখার যেকোন প্রবণতাকে প্রতিরোধ করা কতই না বিজ্ঞের কাজ হবে! যিহোবার বাক্যের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞ মনোভাব এবং তাঁর প্রতি গঠনমূলক ভয় গড়ে তোলা দরকার। (হিতোপদেশ ২৩:১৭, ১৮) যদিও এইধরনের মানসিক প্রবণতা জীবনের যেকোন সময়ই অর্জন করা যায়, তবে যুবকাবস্থায় এই সঠিক ধারাকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং বাইবেলের নীতিগুলোকে আমাদের ব্যক্তিত্বের মধ্যে ফুটিয়ে তোলাই হবে সবচেয়ে উত্তম সময়। জ্ঞানী রাজা শলোমন বলেন, “তুমি যৌবনকালে আপন সৃষ্টিকর্ত্তাকে স্মরণ কর।”—উপদেশক ১২:১.

যিহোবার প্রতি উপলব্ধিবোধ গড়ে তোলার সবচেয়ে অন্তরঙ্গ উপায় হল, প্রতিদিন ব্যক্তিগতভাবে তাঁর কাছে প্রার্থনা করা। যিহোবার কাছে সবকিছু ব্যক্ত করার গুরুত্ব দায়ূদ উপলব্ধি করেছিলেন, কারণ তিনি অনুরোধ করেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, আমার প্রার্থনা শ্রবণ কর, আমার আর্ত্তনাদে কর্ণ দেও, আমার অশ্রুপাতে নীরব থাকিও না।” (গীতসংহিতা ৩৯:১২) ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের গভীরতা কি কখনও কখনও আমাদের আবেগকে এতখানি স্পর্শ করে যে, চোখ দিয়ে জলের ধারা নেমে আসে? অবশ্যই, আমাদের হৃদয়ের অন্তরঙ্গ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা যিহোবার সঙ্গে যত বেশি কথা বলব এবং তাঁর বাক্যে ধ্যান করব, তত বেশি তিনি আমাদের নিকটবর্তী হবেন।—যাকোব ৪:৮.

বাধ্যতা শিখুন

মোশি ছিলেন আরেকজন বিশ্বাসী ব্যক্তি, যিনি ঈশ্বরের ওপর তার নির্ভরতা সম্বন্ধে উপলব্ধি করেছিলেন। দায়ূদের মতো মোশি দেখতে পেয়েছিলেন যে, জীবন সমস্যায় পরিপূর্ণ। তাই, তিনি ঈশ্বরের কাছে আবেদন করেছিলেন, যাতে তিনি তাকে দেখান যে, ‘কিরূপে তার দিন গণনা করা যায় যেন প্রজ্ঞার চিত্ত লাভ করিতে পারে।’ (গীতসংহিতা ৯০:১০-১২) যিহোবার নিয়ম ও নীতিগুলো জানা এবং সেই অনুসারে জীবনযাপন করার দ্বারাই একমাত্র প্রজ্ঞার চিত্ত আসবে। মোশি এটা জানতেন আর তাই তিনি প্রতিজ্ঞাত দেশ অধিকার করার আগে ইস্রায়েল জাতির কাছে বার বার ঈশ্বরের নিয়ম ও বিধিনিষেধগুলো উল্লেখ করার দ্বারা সেই মূল সত্যটিকে তাদের মধ্যে গেঁথে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। যেকোন মনুষ্য রাজা, যাকে পরবর্তী সময়ে যিহোবা ইস্রায়েলের ওপর শাসন করার জন্য বেছে নেবেন, তাকে নিজের জন্য একটা নিয়মের প্রতিলিপি লিখতে হতো আর তার সমস্ত জীবন কালে তা পড়তে হতো। কেন? যাতে তিনি ঈশ্বরকে ভয় করতে শেখেন। এটা হবে রাজার বাধ্যতার এক পরীক্ষা। এটা তাকে তার ভাইদের থেকে নিজের হৃদয়কে উচ্চীকৃত করা থেকে রক্ষা করবে আর তার রাজ্যের শাসনকালকে বৃদ্ধি করবে। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৭:১৮-২০) এই প্রতিজ্ঞার পুনরাবৃত্তি হয়, যখন যিহোবা দায়ূদের পুত্র শলোমনকে বলেন: “তোমার পিতা দায়ূদ যেমন চলিত, তেমনি তুমি যদি আমার আজ্ঞা সকল ও আমার বিধি সকল পালন করিতে আমার পথে চল, তবে আমি তোমার আয়ু দীর্ঘ করিব।”—১ রাজাবলি ৩:১০-১৪.

ঈশ্বরের কাছে বাধ্যতা হল এক গম্ভীর বিষয়। আমরা যদি যিহোবা আমাদের কাছ থেকে যে-বিষয়গুলো চান, সেগুলো এবং তাঁর আদেশের কিছু দিককে গুরুত্বহীন বলে উপেক্ষা করি, তা হলে নিশ্চয়ই তিনি এইধরনের মনোভাবের প্রতি দৃষ্টি দেবেন। (হিতোপদেশ ১৫:৩) এই বিষয় অবগত হওয়া আমাদের যিহোবার সমস্ত ঐশিক নির্দেশনার প্রতি গভীর সম্মান বজায় রাখতে উদ্বুদ্ধ করবে, যদিও তা করা হয়তো সবসময় সহজ না-ও হতে পারে। ঈশ্বরের নিয়ম ও আদেশগুলো মেনে চলার জন্য যতই আমরা চেষ্টা করে যাব, ‘আমাদের বাধা দিতে’ শয়তান ততই যথাসাধ্য করবে।—১ থিষলনীকীয় ২:১৮.

উপাসনা ও সহভাগিতার জন্য একত্রিত হওয়ার যে শাস্ত্রীয় উপদেশ, তা মেনে চলা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩১:১২, ১৩; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) তাই, আমাদের নিজেদের এই প্রশ্ন করা উচিত: ‘যা কিছু প্রকৃতই উত্তম, তা করার জন্য আমার কি দৃঢ়সংকল্প ও লেগে থাকার মনোভাব রয়েছে?’ আর্থিক সুরক্ষা পাওয়ার জন্য খ্রীষ্টীয় সভার সাহচর্য ও উপদেশকে অবহেলা করা, যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে দুর্বল করে দেবে। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “তোমাদের আচার ব্যবহার ধনাসক্তিবিহীন হউক; তোমাদের যাহা আছে, তাহাতে সম্ত্তুষ্ট থাক; কারণ [যিহোবা] বলিয়াছেন, ‘আমি কোন ক্রমে তোমাকে ছাড়িব না, ও কোন ক্রমে তোমাকে ত্যাগ করিব না।’” (ইব্রীয় ১৩:৫) স্বেচ্ছায় যিহোবার আদেশ পালন করা হল সম্পূর্ণ আস্থার প্রমাণ যে, তিনি আমাদের জন্য চিন্তা করবেন।

যীশু বাধ্যতা শিখেছিলেন ও উপকৃত হয়েছিলেন। আমরাও তাই করতে পারি। (ইব্রীয় ৫:৮) যতই আমরা বাধ্যতা গড়ে তুলব, তা দেখানো ততই সহজ হয়ে উঠবে, এমনকি ছোটোখাটো বিষয়গুলোতেও। এটা সত্যি যে, নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার কারণে আমাদের হয়তো অন্যদের কাছ থেকে অপ্রীতিকর ও নির্মম ব্যবহার সহ্য করতে হতে পারে। বিশেষ করে এটা হতে পারে কর্মক্ষেত্রে, স্কুলে অথবা ধর্মীয়ভাবে বিভক্ত পরিবারে। তবুও, আমরা ইস্রায়েলীয়দের উদ্দেশে ঘোষিত বাক্যের মধ্যে থেকে সান্ত্বনা খুঁজে পাই যে, যদি তারা ‘সদাপ্রভুকে প্রেম করে, তাঁহার রবে অবধান করে, ও তাঁহাতে আসক্ত হয়; তবে তিনিই তাহাদের জীবন ও তাহাদের দীর্ঘ পরমায়ুস্বরূপ হইবেন।’ (দ্বিতীয় বিবরণ ৩০:২০) এই একই প্রতিজ্ঞা আমাদের জন্যও করা হয়েছে।

সময়ের সদ্ব্যবহার করুন

এ ছাড়াও, সময়ের সঠিক ব্যবহার যিহোবার সামনে আমাদের দিনগুলোকে গণনা করতে সাহায্য করবে। অর্থের মতো সময়কে জমিয়ে রাখা যায় না, সময়কে ব্যবহার করতে হয় নতুবা এটা হারিয়ে যাবে। যে-সময় একবার চলে যায়, তা আর ফিরে পাওয়া যায় না। যেহেতু প্রায়ই আমাদের সাধ্যের অতিরিক্ত কাজ করার থাকে, তাই আমাদের জীবনের লক্ষ্য অনুসারে কি আমরা আমাদের সময়কে ব্যবহার করি? প্রত্যেক খ্রীষ্টানের একটা প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত নিয়মিত রাজ্যের প্রচারে ও শিষ্য তৈরির কাজে অংশ নেওয়া।—মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০.

একমাত্র তখনই সময়ের আমরা সদ্ব্যবহার করতে পারব, যখন আমরা এর মূল্য সম্বন্ধে সচেতন হব। যথার্থভাবেই, ইফিষীয় ৫:১৬ পদ আমাদের ‘সুযোগ কিনিয়া লইতে’ উৎসাহ দেয় আর এর মানে হল “ক্রয়” করা, অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে ছেড়ে দেওয়া। এর অর্থ হল, সময়-অপচয়কারী বস্তুগুলোর পিছনে ছুটে চলাকে হ্রাস করা। অতিরিক্ত টেলিভিশন দেখা অথবা ইন্টারনেট সার্ফিং করা, এমন কিছু জাগতিক বই পড়া যেগুলোর মধ্যে কোন উপকারিতা নেই অথবা অতিমাত্রায় আমোদপ্রমোদের পিছনে ছোটা অনায়াসেই আমাদের ক্লান্ত করে তুলতে পারে। এ ছাড়া, অতিরিক্ত পরিমাণে বস্তুগত সম্পত্তি সঞ্চয় করা সেই সময়কে কেড়ে নিতে পারে, যেটা প্রজ্ঞার চিত্ত অর্জন করার জন্য প্রয়োজন।

যারা সময়কে সঠিকভাবে পরিচালনার পক্ষে রয়েছে, তারা বলে: “একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থাপন না করে আপনার পক্ষে সময়ের সদ্ব্যবহার করা একেবারেই অসম্ভব।” তারা লক্ষ্য স্থাপন করার জন্য পাঁচটা নীতির প্রস্তাব দেয়: নির্দিষ্ট, পরিমিত, সাধনযোগ্য, বাস্তবসম্মত ও তালিকাবদ্ধ।

একটা যথার্থ লক্ষ্য হল, আমাদের বাইবেল পড়ার ক্ষেত্রে উন্নতি করা। প্রথম পদক্ষেপ হল, আমাদের লক্ষ্যকে নির্দিষ্ট করা—সম্পূর্ণ বাইবেলটি পড়া। পরের পদক্ষেপটা হল, আমাদের লক্ষ্যকে পরিমিত রাখা। এটা করার দ্বারা আমরা আমাদের উন্নতির ধারাকে বুঝতে পারব। লক্ষ্যগুলো আমাদের নিজেদেরকে উজাড় করে দিতে ও বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া, এগুলো যেন সাধনযোগ্য ও বাস্তবসম্মত হয়। ব্যক্তিগত ক্ষমতা, দক্ষতা এবং প্রাপ্ত সময়ের বিষয়গুলোও বিবেচনা করা দরকার। কিছুজনের ক্ষেত্রে একটা লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য হয়তো আরও বেশি সময়ের প্রয়োজন হতে পারে। তাই পরিশেষে বলা যায় যে, আমাদের লক্ষ্য যেন তালিকাবদ্ধ হয়। একটা কিছু সম্পাদন করার জন্য নির্দিষ্ট দিন নির্ধারণ করা আমাদের প্রেরণাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

সারা পৃথিবীর সমস্ত বেথেল পরিবারের সদস্য, যারা যিহোবার সাক্ষিদের বিশ্বের প্রধান কার্যালয়ে অথবা পৃথিবীব্যাপী কোন একটা শাখায় সেবা করছে, তাদের বেথেলে থাকার প্রথম বছরে সম্পূর্ণ বাইবেল পড়ার একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে। তারা উপলব্ধি করে যে, গঠনমূলক বাইবেল পাঠ তাদের আধ্যাত্মিক উন্নতিতে সাহায্য করে এবং যিহোবার সঙ্গে সম্পর্ককে আরও নিবিড় করে, যিনি তাদের নিজেদের উপকারার্থে শিক্ষা দেন। (যিশাইয় ৪৮:১৭) আমরাও কি নিয়মিত বাইবেল পাঠকে আমাদের লক্ষ্য করে তুলতে পারি?

আমাদের দিন গণনা করার উপকারগুলো

আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া অনেক আশীর্বাদ নিয়ে আসে। প্রথমত, এটা প্রাপ্তির এক বিশেষ উপলব্ধিবোধ ও জীবনের উদ্দেশ্যের ক্ষেত্রে অবদান রাখে। যিহোবার সঙ্গে আন্তরিক প্রার্থনার মাধ্যমে নিয়মিত ভাববিনিময় আমাদের তাঁর আরও কাছে নিয়ে আসে। প্রার্থনার মাধ্যমেই তাঁর ওপর আমাদের আস্থা প্রমাণিত হয়। ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ দ্বারা সরবরাহকৃত বাইবেল ও বাইবেল-ভিত্তিক প্রকাশনগুলো নিয়মিত পাঠ করা দেখায় যে, ঈশ্বর যখন কথা বলেন তখন আমরা তা শুনতে ইচ্ছুক। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) এটা আমাদের প্রজ্ঞার চিত্ত অর্জন করতে সাহায্য করে, যাতে আমরা জীবনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ও বাছাই করতে পারি।—গীতসংহিতা ১:১-৩.

যিহোবার আদেশগুলো মেনে চলে আমরা আনন্দিত কারণ এটা করা দুর্বহ নয়। (১ যোহন ৫:৩) যিহোবার সামনে আমাদের প্রতিটা দিন যতই আমরা গণনা করি, তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ততই মজবুত হয়। এ ছাড়াও, আমরা আমাদের সহ খ্রীষ্টানদের পক্ষে এক প্রকৃত আধ্যাত্মিক সাহায্য হয়ে উঠি। এইধরনের কাজ যিহোবা ঈশ্বরকে খুশি করে। (হিতোপদেশ ২৭:১১) আর বর্তমানে ও চিরকালের জন্য যিহোবার অনুমোদন উপভোগ করার চেয়ে বড় পুরস্কার আর কিছুই নেই!

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

খ্রীষ্টানরা আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখে

[২২ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আপনি কি আপনার সময় সঠিকভাবে ব্যবহার করছেন?

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবার সঙ্গে প্রত্যেকটা দিন গণনা করার দ্বারা আমরা তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে দৃঢ় করে তুলি