সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

খ্রীষ্টানদের পরস্পরের প্রয়োজন রয়েছে

খ্রীষ্টানদের পরস্পরের প্রয়োজন রয়েছে

খ্রীষ্টানদের পরস্পরের প্রয়োজন রয়েছে

“আমরা পরস্পর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ।”ইফিষীয় ৪:২৫.

১. একটা এনসাইক্লোপিডিয়া মানব দেহ সম্বন্ধে কী বলে?

 মানব দেহ সৃষ্টির এক বিস্ময়! দ্যা ওয়ার্ল্ড বুক এনসাইক্লোপিডিয়া বলে: “লোকেরা কখনও কখনও মানব দেহকে একটা যন্ত্র বলে থাকে—সর্বকালের সবচেয়ে অপূর্ব নির্মিত বস্তু। অবশ্য, মানব দেহ একটা যন্ত্র নয়। কিন্তু, অনেক দিক দিয়ে এটাকে একটা যন্ত্রের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। একটা যন্ত্রের মতো, দেহও অনেক অংশ নিয়ে গঠিত। দেহের প্রতিটা অংশ ঠিক একটা যন্ত্রের প্রত্যেকটা অংশের মতো, বিশেষ ধরনের কাজ করে। কিন্তু, প্রত্যেকটা অংশ একত্রে কাজ করে আর এর ফলে দেহ বা যন্ত্র স্বচ্ছন্দে সক্রিয় থাকতে পারে।”

২. কোন্‌ দিক দিয়ে মানব দেহ এবং খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী একইরকম?

হ্যাঁ, মানব দেহের অনেক অংশ বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ রয়েছে এবং প্রত্যেকটা অঙ্গই প্রয়োজনীয় বিষয় সরবরাহ করে। কোন একটা শিরা, মাংসপেশী বা দেহের অন্যান্য অঙ্গও উদ্দেশ্যহীন নয়। একইভাবে, খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর প্রত্যেক সদস্য এর আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যে কোন না কোনভাবে অবদান রাখতে পারে। (১ করিন্থীয় ১২:১৪-২৬) যদিও, মণ্ডলীর কোন সদস্যের অন্যদের চেয়ে নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করা বা নিজেকে তুচ্ছ মনে করা উচিত নয়।—রোমীয় ১২:৩.

৩. ইফিষীয় ৪:২৫ পদ কীভাবে ইঙ্গিত দেয় যে, খ্রীষ্টানদের পরস্পরকে প্রয়োজন?

মানব দেহের পরস্পর নির্ভরশীল অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মতো খ্রীষ্টানদেরও পরস্পরকে প্রয়োজন। প্রেরিত পৌল আত্মায়-অভিষিক্ত সহ বিশ্বাসীদের বলেছিলেন: “তোমরা, যাহা মিথ্যা, তাহা ত্যাগ করিয়া প্রত্যেকে আপন আপন প্রতিবাসীর সহিত সত্য আলাপ করিও; কারণ আমরা পরস্পর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ।” (ইফিষীয় ৪:২৫) যেহেতু তারা ‘পরস্পরের,’ তাই আত্মিক ইস্রায়েল অর্থাৎ ‘খ্রীষ্টের দেহের’ সদস্যদের মধ্যে প্রকৃত ভাববিনিময় এবং পূর্ণ সহযোগিতা রয়েছে। হ্যাঁ, তারা প্রত্যেকে একে অপরের। (ইফিষীয় ৪:১১-১৩) পার্থিব আশাসম্পন্ন সত্যবাদী, সহযোগী খ্রীষ্টানরা তাদের সঙ্গে আনন্দিত মনে ঐক্যবদ্ধ।

৪. কোন্‌ কোন্‌ উপায়ে নতুন ব্যক্তিদের সাহায্য করা যেতে পারে?

প্রতি বছর, পার্থিব পরমদেশে বাস করার আশা রয়েছে এমন হাজার হাজার ব্যক্তি বাপ্তিস্ম নিচ্ছে। মণ্ডলীর অন্য সদস্যরা তাদের “সিদ্ধির চেষ্টায় অগ্রসর” হতে আনন্দের সঙ্গে সাহায্য করে। (ইব্রীয় ৬:১-৩) এই সাহায্যের মধ্যে হয়তো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া বা পরিচর্যায় ব্যবহারিক উপায়ে সাহায্য করা। খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে নিয়মিত উপস্থিত হয়ে এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করার মাধ্যমে আমরা নতুন ব্যক্তিদের সাহায্য করতে পারি। হতাশার সময় আমরা উৎসাহ দিতে পারি বা চাইলে সান্ত্বনা দিতে পারি। (১ থিষলনীকীয় ৫:১৪, ১৫) ‘সত্যে চলিবার জন্য’ অন্যদের সাহায্য করতে আমাদের বিভিন্ন উপায় খুঁজে নেওয়া উচিত। (৩ যোহন ৪) আমরা যুবক বা বৃদ্ধ অথবা কিছুদিন হল সত্যে চলতে শুরু করেছি বা অনেক বছর ধরে সত্যে চলছি, যা-ই হই কেন, আমরা সহ বিশ্বাসীদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলকে আরও বাড়াতে পারি—আর আমাদেরকে তাদের প্রয়োজন আছে।

তারা প্রয়োজনীয় সাহায্য দিয়েছিল

৫. আক্বিল্লা এবং প্রিষ্কিল্লা কীভাবে পৌলকে সাহায্য করেছিল?

বিবাহিত খ্রীষ্টান দম্পতিরাও তাদের মধ্যে রয়েছে, যারা সহ বিশ্বাসীদের সাহায্য করে পরিতৃপ্তি পায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আক্বিল্লা এবং তার স্ত্রী প্রিষ্কিল্লা (প্রিষ্কা), পৌলকে সাহায্য করেছিল। তারা তাকে তাদের বাড়িতে থাকতে দিয়েছিল, তাঁবু নির্মাণকারী হিসেবে তার সঙ্গে কাজ করেছিল এবং করিন্থে নতুন মণ্ডলী গড়ে তোলার জন্য তাকে সাহায্য করেছিল। (প্রেরিত ১৮:১-৪) কোন এক অপ্রকাশিত উপায়ে তারা এমনকি পৌলের জন্য তাদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছিল। তারা তখন রোমে বাস করছিল, যখন পৌল সেখানকার খ্রীষ্টানদের বলেছিলেন: “খ্রীষ্ট যীশুতে আমার সহকারী প্রিষ্কা ও আক্বিলাকে মঙ্গলবাদ কর; তাঁহারা আমার প্রাণের নিমিত্তে আপনাদের গ্রীবা পাতিয়া দিয়াছিলেন; কেবল আমিই যে তাঁহাদের ধন্যবাদ করি, এমন নয়, কিন্তু পরজাতীয়দের সমুদয় মণ্ডলীও করে।” (রোমীয় ১৬:৩, ৪) আক্বিল্লা এবং প্রিষ্কিল্লার মতো, আধুনিক দিনের কিছু খ্রীষ্টান অনেক মণ্ডলী গড়ে তোলে এবং সহ উপাসনাকারীদের বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য করে, কখনও কখনও এমনকি ঈশ্বরের অন্য দাসদের তাড়নাকারীদের হাতে নিষ্ঠুরতা বা মৃত্যুর বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নেয়।

৬. আপল্লো কোন্‌ সাহায্য পেয়েছিলেন?

আক্বিল্লা এবং প্রিষ্কিল্লা সুবক্তা খ্রীষ্টান আপল্লোকেও সাহায্য করেছিল, যিনি ইফিষের লোকেদের যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে শিক্ষা দিচ্ছিলেন। সেই সময়, আপল্লো শুধু যোহনের দেওয়া বাপ্তিস্মের কথাই জানতেন, যা নিয়ম চুক্তির বিরুদ্ধে করা পাপের অনুতাপের প্রতীক ছিল। আপল্লোর যে সাহায্যের প্রয়োজন ছিল, তা বুঝতে পেরে আক্বিল্লা এবং প্রিষ্কিল্লা “তাঁহাকে . . . ঈশ্বরের পথ আরও সূক্ষ্মরূপে বুঝাইয়া দিলেন।” সম্ভবত, তারা ব্যাখ্যা করেছিল যে, খ্রীষ্টীয় বাপ্তিস্মের মধ্যে জলে নিমজ্জিত হওয়া এবং পবিত্র আত্মার বর্ষণও অন্তর্ভুক্ত। আপল্লো খুব ভালভাবে শিখেছিলেন। পরে আখায়ায় তিনি “যাহারা অনুগ্রহ দ্বারা বিশ্বাস করিয়াছিল, তাহাদের বিস্তর উপকার করিলেন। কারণ যীশুই যে খ্রীষ্ট, ইহা শাস্ত্রীয় বচন দ্বারা প্রমাণ করিয়া তিনি ক্ষমতার সহিত লোকসাধারণের সাক্ষাতে যিহূদিগণকে একেবারে নিরুত্তর করিলেন।” (প্রেরিত ১৮:২৪-২৮) সহ উপাসকদের মন্তব্য প্রায়ই ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি আমাদের বোধগম্যতা বাড়াতে সাহায্য করে। এই ক্ষেত্রেও আমাদের পরস্পরকে প্রয়োজন।

বস্তুগত সাহায্য জোগানো

৭. সহ খ্রীষ্টানদের যখন বস্তুগত সাহায্যের দরকার হয়েছিল, তখন ফিলিপীয়রা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?

ফিলিপীয়ের খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর সদস্যরা পৌলকে অনেক ভালবাসত এবং তিনি যখন থিষলনীকীতে ছিলেন, তখন তারা তার জন্য বস্তুগত সাহায্য পাঠিয়েছিল। (ফিলিপীয় ৪:১৫, ১৬) যিরূশালেমের ভাইদের যখন বস্তুগত সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তখন ফিলিপীয়রা এমনকি তাদের সাধ্যের অতিরিক্ত দান দেওয়ার ক্ষেত্রে তৎপরতা দেখিয়েছিল। ফিলিপীতে পৌল তার ভাইবোনদের উত্তম মনোভাবের প্রতি এতটাই কৃতজ্ঞ হয়েছিলেন যে, তিনি অন্যান্য বিশ্বাসীদের কাছে তাদেরকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন।—২ করিন্থীয় ৮:১-৬.

৮. ইপাফ্রদীত কেমন মনোভাব দেখিয়েছিলেন?

পৌল যখন বন্দি অবস্থায় ছিলেন, তখন ফিলিপীয়রা তাকে শুধু বস্তুগত উপহারই পাঠায়নি কিন্তু সেইসঙ্গে তারা তাদের ব্যক্তিগত বার্তাবাহক ইপাফ্রদীতকেও পাঠিয়েছিল। পৌল বলেছিলেন: “খ্রীষ্টের কার্য্যের নিমিত্তে [ইপাফ্রদীত] মৃত্যুমুখে উপস্থিত হইয়াছিলেন, ফলতঃ আমার সেবায় তোমাদের ত্রুটি পূরণার্থে প্রাণপণ করিয়াছিলেন।” (ফিলিপীয় ২:২৫-৩০; ৪:১৮) ইপাফ্রদীত একজন প্রাচীন অথবা একজন পরিচারক দাস ছিলেন কি না, সেটা আমাদের বলা হয়নি। যাই হোক না কেন, তিনি আত্মত্যাগী এবং সাহায্যকারী খ্রীষ্টান ছিলেন এবং পৌলের সত্যিই তাকে প্রয়োজন ছিল। আপনার মণ্ডলীতেও কি ইপাফ্রদীতের মতো কেউ আছেন?

তারা “শক্তিবর্ধক” ছিল

৯. আরিষ্টার্খের বিষয়ে কোন্‌ উদাহরণ আমাদের আছে?

যেকোন মণ্ডলীতে আক্বিল্লা ও প্রিষ্কিল্লা এবং ইপাফ্রদীতের মতো প্রেমময় ভাই ও বোনদের প্রতি অনেক উপলব্ধি দেখানো হয়। আমাদের সহ উপাসকদের মধ্যে কেউ কেউ প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টান আরিষ্টার্খের মতো হতে পারে। তিনি এবং অন্যেরা “সান্ত্বনাজনক [“শক্তিবর্ধক,” NW]” ছিল, সম্ভবত উপশমের উৎস হয়েছিল বা মৌলিক ও ব্যবহারিক বিষয়গুলোতে সাহায্য করেছিল। (কলসীয় ৪:১০, ১১) পৌলকে সাহায্য করার মাধ্যমে আরিষ্টার্খ প্রয়োজনের সময় প্রকৃত বন্ধু হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিলেন। তিনি হিতোপদেশ ১৭:১৭ পদে উল্লেখিত ব্যক্তির মতো: “বন্ধু সর্ব্বসময়ে প্রেম করে, ভ্রাতা দুর্দ্দশার জন্য জন্মে।” আমাদের সকলেরই কি সহ খ্রীষ্টানদের জন্য “শক্তিবর্ধক” হওয়া উচিত নয়? বিশেষ করে যারা দুর্দশা ভোগ করছে, তাদের প্রতি আমাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত।

১০. খ্রীষ্টান প্রাচীনদের জন্য পিতর কোন্‌ উদাহরণ রেখেছেন?

১০ বিশেষ করে খ্রীষ্টান প্রাচীনদের তাদের আধ্যাত্মিক ভাইবোনদের জন্য শক্তিবর্ধক হতে হবে। খ্রীষ্ট প্রেরিত পিতরকে বলেছিলেন: “তোমার ভ্রাতৃগণকে সুস্থির [“শক্তিশালী,” NW] করিও।” (লূক ২২:৩২) পিতর তা করতে পেরেছিলেন কারণ তিনি দৃঢ় ও অটল গুণাবলি দেখিয়েছিলেন, বিশেষ করে যীশুর পুনরুত্থানের পর। প্রাচীনরা, যেকোন উপায়েই হোক, আপনারা স্বেচ্ছায় এবং কোমলভাবে একইরকম করার চেষ্টা করুন কারণ আপনার সহ বিশ্বাসীদের আপনাকে প্রয়োজন।—প্রেরিত ২০:২৮-৩০; ১ পিতর ৫:২, ৩.

১১. তীমথিয়ের মনোভাব বিবেচনা করে আমরা কীভাবে উপকার পেতে পারি?

১১ পৌলের ভ্রমণসঙ্গী তীমথিয় একজন প্রাচীন ছিলেন, যিনি অন্যান্য খ্রীষ্টানদের জন্য গভীর চিন্তা করতেন। যদিও তীমথিয়ের স্বাস্থ্যগত কোন সমস্যা ছিল কিন্তু তিনি আন্তরিক বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন এবং ‘পৌলের সহিত সুসমাচারের নিমিত্ত দাস্যকর্ম্ম করিয়াছিলেন।’ তাই, প্রেরিত ফিলিপীয়দের বলতে পেরেছিলেন: “আমার কাছে এমন সমপ্রাণ কেহই নাই যে, প্রকৃতরূপে তোমাদের বিষয় চিন্তা করিবে।” (ফিলিপীয় ২:২০, ২২; ১ তীমথিয় ৫:২৩; ২ তীমথিয় ১:৫) তীমথিয়ের মতো মনোভাব দেখানোর মাধ্যমে আমরাও যিহোবার সহ উপাসকদের মধ্যে আশীর্বাদস্বরূপ হতে পারি। এটা ঠিক যে, আমাদের নিজেদের মানব অক্ষমতা ও সেইসঙ্গে বিভিন্ন পরীক্ষা সহ্য করতে হবে কিন্তু আমরাও আমাদের আধ্যাত্মিক ভাই ও বোনদের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস এবং প্রেমময় চিন্তা দেখাতে পারি আর আমাদের তা দেখানো উচিত। আমাদের সবসময় মনে রাখা উচিত যে আমাদেরকে তাদের প্রয়োজন।

যে-মহিলারা অন্যদের যত্ন নেন

১২. দর্কার উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

১২ যে-ধার্মিক মহিলারা অন্যদের যত্ন নিয়েছিল, তাদের মধ্যে দর্কাও ছিলেন। তিনি যখন মারা যান, তখন শিষ্যরা পিতরকে ডেকে পাঠায় এবং তাকে ওপরের কুঠরিতে নিয়ে যায়। সেখানে “বিধবারা সকলে তাঁহার চারিদিকে দাঁড়াইয়া রোদন করিতে থাকিল, এবং দর্কা তাহাদের সঙ্গে থাকিবার সময়ে যে সকল আঙ্‌রাখা ও বস্ত্র প্রস্তুত করিয়াছিলেন, সেই সকল দেখাইতে লাগিল।” দর্কাকে আবারও বাঁচিয়ে তোলা হয়েছিল আর নিঃসন্দেহে তিনি “নানা সৎক্রিয়া ও দানকার্য্যে” রত ছিলেন। বর্তমান দিনের খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে দর্কার মতো অনেক মহিলা রয়েছে, যারা হয়তো প্রয়োজন আছে এমন ব্যক্তিদের জন্য জামা তৈরি করে বা অন্যান্য প্রেমময় কাজ করে। অবশ্য, তাদের উত্তম কাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রধান কাজ হল, রাজ্যের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং শিষ্য তৈরির কাজে অংশগ্রহণ করা।—প্রেরিত ৯:৩৬-৪২; মথি ৬:৩৩; ২৮:১৯, ২০.

১৩. কীভাবে সহ খ্রীষ্টানদের প্রতি লুদিয়া চিন্তা দেখিয়েছিলেন?

১৩ লুদিয়া নামে একজন ঈশ্বর-ভয়শীল মহিলা অন্যদের যত্ন নিতেন। থুয়াতীরার একজন অধিবাসী হওয়াতে তিনি ফিলিপীতে বাস করতেন, যখন সা.কা. প্রায় ৫০ সালে পৌল সেখানে প্রচার করেছিলেন। লুদিয়া সম্ভবত যিহুদি ধর্মে ধর্মান্তরিত ছিলেন কিন্তু ফিলিপীতে হয়তো মাত্র অল্প কয়েকজন যিহুদি ছিল এবং সেখানে কোন সমাজগৃহ ছিল না। তিনি এবং অন্যান্য ধর্মনিষ্ঠ মহিলারা উপাসনার জন্য নদীর তীরে সমবেত হয়েছিল, যখন প্রেরিত তাদের কাছে সুসমাচার ঘোষণা করেছিলেন। বিবরণ বলে: “প্রভু [“যিহোবা,” NW] [লুদিয়ার] হৃদয় খুলিয়া দিলেন, যেন তিনি পৌলের কথায় মনোযোগ করেন। তিনি ও তাঁহার পরিবার বাপ্তাইজিত হইলে পর তিনি বিনতি করিয়া কহিলেন, আপনারা যদি আমাকে প্রভুতে [“যিহোবাতে,” NW] বিশ্বাসিনী বালিয়া বিবেচনা করিয়া থাকেন, তবে আমার গৃহে আসিয়া অবস্থিতি করুন। আর তিনি আমাদিগকে সাধ্যসাধনা করিয়া লইয়া গেলেন।” (প্রেরিত ১৬:১২-১৫) লুদিয়া অন্যদের জন্য ভাল কিছু করতে চেয়েছিলেন বলে তিনি পৌল ও তার সঙ্গীদের তার সঙ্গে থাকতে রাজি করিয়েছিলেন। আজকে, দয়ালু এবং প্রেমময় খ্রীষ্টানরা যখন একইভাবে আতিথেয়তা দেখায়, তখন আমরা এর প্রতি কতই না উপলব্ধি দেখাই!—রোমীয় ১২:১৩; ১ পিতর ৪:৯.

অল্পবয়স্করা তোমাদেরও আমাদের প্রয়োজন

১৪. ছোট ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যীশু কেমন আচরণ করেছিলেন?

১৪ খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী, ঈশ্বরের দয়ালু ও আন্তরিক পুত্র যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। তাঁর চারপাশের লোকেরা স্বচ্ছন্দ বোধ করত কারণ তিনি প্রেমময় এবং করুণাময় ছিলেন। একবার, কেউ কেউ যখন তাদের ছোট ছেলেমেয়েদের যীশুর কাছে নিয়ে আসতে শুরু করে, তখন শিষ্যরা তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু যীশু বলেছিলেন: “শিশুদিগকে আমার নিকটে আসিতে দেও, বারণ করিও না; কেননা ঈশ্বরের রাজ্য এই মত লোকদেরই। আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, যে ব্যক্তি শিশুবৎ হইয়া ঈশ্বরের রাজ্য গ্রহণ না করে, সে কোন মতে তাহাতে প্রবেশ করিতে পাইবে না।” (মার্ক ১০:১৩-১৫) রাজ্যের আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য আমাদের ছোট ছেলেমেয়েদর মতো নম্র এবং শিখতে সক্ষম হতে হবে। যীশু ছোটদের কোলে নিয়ে এবং আশীর্বাদ করে তাদের প্রতি তাঁর প্রেম দেখিয়েছিলেন। (মার্ক ১০:১৬) আজকে অল্পবয়স্করা, তোমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? নিশ্চিত হও যে, তোমাদের প্রতি আমাদের ভালবাসা আছে এবং মণ্ডলীতে তোমাদের প্রয়োজন আছে।

১৫. যীশুর জীবনের কোন্‌ ঘটনা লূক ২:৪০-৫২ পদে লিপিবদ্ধ আছে আর অল্পবয়স্কদের জন্য তিনি কোন্‌ উদাহরণ স্থাপন করেছেন?

১৫ যীশু যখন অনেক ছোট ছিলেন, তখনও তিনি ঈশ্বর এবং শাস্ত্রের প্রতি ভালবাসা দেখিয়েছিলেন। তাঁর ১২ বছর বয়সে তিনি এবং তাঁর বাবামা, যোষেফ ও মরিয়ম, নিস্তারপর্ব পালনের জন্য তাদের নিজেদের নগর নাসারৎ থেকে যিরূশালেমে যান। ফেরার পথে যীশুর বাবামা আবিষ্কার করে যে, যীশু তাদের যাত্রীদলের মধ্যে নেই। পরে তারা তাঁকে ধর্মধামে খুঁজে পায়, যেখানে বসে তিনি যিহুদি শিক্ষকদের কথা শুনছিলেন এবং তাদের প্রশ্ন করছিলেন। যোষেফ এবং মরিয়ম তাঁকে কোথায় খুঁজে পাবে, তা না জানায় অবাক হয়ে যীশু জিজ্ঞেস করেন: “আমার পিতার গৃহে আমাকে থাকিতেই হইবে ইহা কি জানিতে না?” তিনি তার বাবামার সঙ্গে ঘরে ফিরে যান, তাদের বশীভূত থাকেন এবং জ্ঞানে ও বয়সে বৃদ্ধি পেতে থাকেন। (লূক ২:৪০-৫২) আমাদের অল্পবয়স্কদের জন্য যীশু কত উত্তম উদাহরণই না স্থাপন করেছেন! নিশ্চিতভাবে, তাঁর মতো তাদেরও বাবামার বাধ্য থাকা উচিত এবং আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো সম্বন্ধে শেখার জন্য আগ্রহী হওয়া উচিত।—দ্বিতীয় বিবরণ ৫:১৬; ইফিষীয় ৬:১-৩.

১৬. (ক) যীশু যখন মন্দিরে সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন, তখন কিছু বালক কী বলে চিৎকার করছিল? (খ) আজকে অল্পবয়সী খ্রীষ্টানদের কোন্‌ সুযোগ রয়েছে?

১৬ একজন অল্পয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে তুমি হয়তো স্কুলে বা তোমার বাবামার সঙ্গে ঘরে-ঘরে প্রচারে যিহোবার সম্বন্ধে সাক্ষ্য দাও। (যিশাইয় ৪৩:১০-১২; প্রেরিত ২০:২০, ২১) যীশুর মৃত্যুর আগে তিনি যখন মন্দিরে লোকেদের কাছে সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন এবং আরোগ্য করছিলেন, তখন কিছু বালক চিৎকার করে বলেছিল: “হোশান্না দায়ূদ-সন্তান।” এতে রেগে গিয়ে প্রধান যাজক এবং অধ্যাপকরা আপত্তি জানিয়েছিল: “শুনিতেছ, ইহারা কি বলিতেছে?” “হাঁ,” উত্তরে যীশু বলেছিলেন। “তোমরা কি কখনও পাঠ কর নাই যে, ‘তুমি শিশু ও দুগ্ধপোষ্যদের মুখ হইতে স্তব সম্পন্ন করিয়াছ’?” (মথি ২১:১৫-১৭) ওই ছেলেমেয়েদের মতো মণ্ডলীর অল্পবয়স্করা, তোমাদেরও ঈশ্বর ও তাঁর পুত্রের প্রশংসা করার মহান সুযোগ রয়েছে। রাজ্য ঘোষণাকারী হিসেবে আমাদের সঙ্গে আমরা তোমাদের চাই এবং তোমাদের প্রয়োজন।

যখন দুর্দশা আসে

১৭, ১৮. (ক) যিহূদার খ্রীষ্টানদের জন্য পৌল কেন দান সংগ্রহ করেছিলেন? (খ) যিহূদার বিশ্বাসীদের জন্য স্বেচ্ছাকৃত দান যিহুদি এবং পরজাতীয় খ্রীষ্টানদের ওপর কেমন প্রভাব ফেলেছিল?

১৭ আমাদের পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, প্রেম আমাদের সহ খ্রীষ্টানদের প্রয়োজনেরর সময় তাদের সাহায্য করতে প্রেরণা দেয়। (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫; যাকোব ২:১৪-১৭) যিহূদার ভাই ও বোনদের প্রতি প্রেমই পৌলকে আখায়া, গালাতীয়, মাকিদনিয়া এবং এশিয়া থেকে দান সংগ্রহ করতে পরিচালিত করেছিল। যিরূশালেমের শিষ্যরা সম্ভবত তাড়না, আভ্যন্তরীণ বিক্ষোভ এবং দুর্ভিক্ষ ভোগ করেছিল, যেটাকে পৌল ‘দুঃখভোগ,’ ‘ক্লেশ’ এবং “আপন আপন সম্পত্তির লুট স্বীকার” বলে অভিহিত করেছিলেন। (ইব্রীয় ১০:৩২-৩৪; প্রেরিত ১১:২৭–১২:১) এরপর তিনি যিহূদার দরিদ্র খ্রীষ্টানদের জন্য একটা তহবিলের ব্যবস্থা করেন।—১ করিন্থীয় ১৬:১-৩; ২ করিন্থীয় ৮:১-৪, ১৩-১৫; ৯:১, ২, ৭.

১৮ যিহূদার পবিত্রদিগের জন্য স্বেচ্ছাকৃত দান প্রমাণ করেছিল যে, যিহোবার যিহুদি ও পরজাতীয় উপাসকদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববন্ধন রয়েছে। এ ছাড়া, এই দান পরজাতীয় খ্রীষ্টানদের তাদের যিহুদি সহ উপাসকদের কাছ থেকে তারা যে আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি পেয়েছিল, সেটার প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখানোর সুযোগ করে দিয়েছিল। এইভাবে, বস্তুগত এবং আধ্যাত্মিক দান ভাগ করা হয়েছিল। (রোমীয় ১৫:২৬, ২৭) আজকেও অভাবী সহ বিশ্বাসীদের জন্য স্বেচ্ছায় দান দেওয়া হয় এবং তা প্রেমের দ্বারা পরিচালিত হয়ে করা হয়। (মার্ক ১২:২৮-৩১) এই ক্ষেত্রেও আমাদের পরস্পরকে প্রয়োজন, যাতে সমভাব হয় ‘এবং যে অল্প সংগ্রহ করে, তাহার অভাব না হয়।’—২ করিন্থীয় ৮:১৫.

১৯, ২০. দুর্যোগের সময় যিহোবার লোকেরা কীভাবে সাহায্য করে, সেটার একটা উদাহরণ দিন।

১৯ খ্রীষ্টানদের যে পরস্পরকে প্রয়োজন, তা জানি বলে আমরা খুব দ্রুত আমাদের বিশ্বাসী ভাইবোনদের সাহায্যে আসি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০০১ সালে এল সালভাদরে যখন ভূমিকম্প এবং ভূমিধ্বস ঘটে তখন কী হয়েছিল, তা বিবেচনা করুন। একটা রিপোর্ট বলে: “এল সালভাদরের সমস্ত জায়গায় ভাইয়েরা ত্রাণসামগ্রী বিতরণের কাজ সংগঠিত করেছিল। গুয়েতেমালা, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার ভাইদের দল আমাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। . . . অল্প সময়ের মধ্যে ৫০০রও বেশি ঘরবাড়ি এবং ৩টে আকর্ষণীয় কিংডম হল তৈরি করা হয়েছিল। আত্মত্যাগী ভাইবোনদের কঠোর পরিশ্রম এবং সমর্থন বিরাট সাক্ষ্য দিয়েছিল।”

২০ দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা একটা রিপোর্ট বলে: “মোজাম্বিকে বন্যা কবলিত বেশির ভাগ জায়গায় আমাদের অনেক ভাইবোন আক্রান্ত হয়েছিল। মোজাম্বিকের শাখা তাদের বেশির ভাগ প্রয়োজনগুলোর দেখাশোনা করেছিল। কিন্তু তারা অনুরোধ জানিয়েছিল, যাতে আমরা অভাবী ভাইবোনদের জন্য ব্যবহার করা ভাল কাপড়চোপড় পাঠাই। মোজাম্বিকে আমাদের ভাইবোনদের জন্য কাপড়ে বোঝাই ১২ মিটারের একটা বড় বাক্স পাঠানোর জন্য আমরা যথেষ্ট কাপড়চোপড় একত্রিত করি।” হ্যাঁ, এই ক্ষেত্রগুলোতেও আমাদের পরস্পরকে প্রয়োজন।

২১. পরের প্রবন্ধে কী আলোচনা করা হবে?

২১ শুরুতে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে যে, মানব দেহের সমস্ত অংশই গুরুত্বপূর্ণ। নিশ্চিতভাবে, খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য। এর সকল সদস্যদের পরস্পরকে প্রয়োজন। তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে সেবা করে চলারও প্রয়োজন। পরের প্রবন্ধে কিছু বিষয় বিবেচনা করা হবে, যা এটা সম্ভবপর করে তোলে।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• মানব দেহ এবং খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর মধ্যে কোন্‌ মিল রয়েছে?

• সহ বিশ্বাসীদের যখন সাহায্যের দরকার হয়েছিল, তখন প্রাথমিক খ্রীষ্টানরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?

• কিছু শাস্ত্রীয় উদাহরণ কী, যা দেখায় যে খ্রীষ্টানদের পরস্পরকে প্রয়োজন এবং তারা একে অপরকে সাহায্য করে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

আক্বিল্লা এবং প্রিষ্কিল্লা অন্যদের যত্ন নিত

[১২ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

দুর্যোগের সময় যিহোবার লোকেরা পরস্পরকে ও অন্যদের সাহায্য করে