সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

ব্যক্তিগত অধ্যয়ন যা আমাদের শিক্ষক হিসেবে সজ্জিত করে

ব্যক্তিগত অধ্যয়ন যা আমাদের শিক্ষক হিসেবে সজ্জিত করে

ব্যক্তিগত অধ্যয়ন যা আমাদের শিক্ষক হিসেবে সজ্জিত করে

“এ সকল বিষয়ে চিন্তা কর [“ভেবে দেখ,” Nw], এ সকলে স্থিতি কর, যেন তোমার উন্নতি সকলের প্রত্যক্ষ হয়। আপনার বিষয়ে ও তোমার শিক্ষার বিষয়ে সাবধান হও [“সবসময় মনোযোগ দাও,” Nw]।”১ তীমথিয় ৪:১৫, ১৬.

১. সময় ও ব্যক্তিগত অধ্যয়নের ক্ষেত্রে কোন্‌ বিষয়টা সত্য?

 “সকল বিষয়েরই সময় আছে,” বাইবেলের উপদেশক ৩:১ পদ বলে। এটা অবশ্যই, ব্যক্তিগত অধ্যয়নের বেলায় সত্য। অনেকে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো নিয়ে ভেবে দেখাকে কঠিন বলে মনে করে, যদি তা সঠিক সময় ও সঠিক জায়গায় না হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সারাদিন কঠোর পরিশ্রম ও রাতে ভাল খাওয়ার পর আপনার কি অধ্যয়ন করতে ইচ্ছে হবে, বিশেষ করে যদি আপনি আপনার প্রিয় ইজিচেয়ারে বসে টেলিভিশন দেখতে থাকেন? খুব সম্ভবত হবে না। তা হলে সমাধানটি কী? স্পষ্টতই, আমাদের বাছাই করতে হবে যে, আমাদের প্রচেষ্টা থেকে সর্বাধিক উপকার পাওয়ার জন্য কখন ও কোথায় অধ্যয়ন করব।

২. ব্যক্তিগত অধ্যয়নের জন্য প্রায়ই সর্বোত্তম সময় কখন?

অনেকে অধ্যয়নের জন্য ভোরবেলাকে সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক হিসেবে মনে করে, যখন তারা মনের দিক দিয়ে সাধারণত সবচেয়ে বেশি সজাগ থাকে। অন্যেরা দুপুরবেলা অল্প সময়ের জন্য অধ্যয়ন করে থাকে। গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক কাজগুলোর জন্য সময়ের বিষয়ে যা বলা হয়েছে, নিচের উদাহরণগুলোতে তা লক্ষ করুন। প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা দায়ূদ লিখেছিলেন: “প্রাতে আমাকে তোমার দয়ার বচন শুনাও, কেননা তোমাতে আমি নির্ভর করিতেছি; আমার গন্তব্য পথ আমাকে জানাও, কেননা আমি তোমার দিকে নিজ প্রাণ উত্তোলন করি।” (গীতসংহিতা ১৪৩:৮) ভাববাদী যিশাইয়ও একইরকম উপলব্ধি দেখিয়েছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “প্রভু সদাপ্রভু আমাকে শিক্ষাগ্রাহীদের জিহ্বা দিয়াছেন, যেন আমি বুঝিতে পারি, কিরূপে ক্লান্ত লোককে বাক্য দ্বারা সুস্থির করিতে হয়; তিনি প্রভাতে প্রভাতে জাগরিত করেন, আমার কর্ণ জাগরিত করেন, যেন আমি শিক্ষাগ্রাহীদের ন্যায় শুনিতে পাই।” মূল বিষয়টা হল যে, আমাদের তখনই অধ্যয়ন ও যিহোবার সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে যোগাযোগ করা দরকার যখন আমরা মানসিক দিক দিয়ে পুরোপুরি সজাগ থাকি আর তা দিনের যেকোন সময়ই হতে পারে।—যিশাইয় ৫০:৪, ৫; গীতসংহিতা ৫:৩; ৮৮:১৩.

৩. কার্যকারী অধ্যয়নের জন্য কোন্‌ শর্তগুলো কাম্য?

কার্যকারী অধ্যয়নের আরেকটা বিষয় হল যে, ইজিচেয়ার বা আরামদায়ক সোফায় বসে আমাদের তা করা উচিত নয়। এভাবে সজাগ থাকা যায় না। যখন আমরা অধ্যয়ন করি, তখন আমাদের মন উদ্দীপিত হওয়া দরকার আর যদি শারীরিক দিক দিয়ে আরামআয়েশে থাকি, তা হলে এর উলটোটাই হয়। এ ছাড়া, অধ্যয়ন ও ধ্যানের জন্য তুলনামূলকভাবে শান্ত ও বিক্ষিপ্ততা থেকে মুক্ত পরিবেশ দরকার। রেডিও, টেলিভিশন খুলে রেখে অথবা ছেলেমেয়েরা যদি আপনার মনোযোগ পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে এমন অবস্থায় কখনও সর্বোত্তম ফল পাওয়া যাবে না। যীশু যখন ধ্যান করতে চেয়েছিলেন, তখন তিনি একটা নির্জন জায়গায় চলে গিয়েছিলেন। এ ছাড়া, তিনি প্রার্থনা করার জন্য এক নিরিবিলি জায়গা খোঁজার মূল্য সম্বন্ধেও বলেছিলেন।—মথি ৬:৬; ১৪:১৩; মার্ক ৬:৩০-৩২.

ব্যক্তিগত অধ্যয়ন যা আমাদের উত্তর দেওয়ার জন্য সজ্জিত করে

৪, ৫. কোন্‌ কোন্‌ উপায়ে চান ব্রোশার এক ব্যবহারিক সাহায্য?

ব্যক্তিগত অধ্যয়ন পরিতৃপ্তিদায়ক হয় যখন আমরা কোন একটা বিষয় আরও গভীরভাবে খনন করতে, বিশেষ করে কারও আন্তরিক প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার জন্য বাইবেল অধ্যয়নের বিভিন্ন সহায়কগুলো ব্যবহার করি। (১ তীমথিয় ১:৪; ২ তীমথিয় ২:২৩) শুরুতে অনেক নতুন ব্যক্তিরা ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে কী চান? * ব্রোশার অধ্যয়ন করছে, যেটা এখন ২৬১টি ভাষায় পাওয়া যাচ্ছে। এটা খুবই সরল অথচ নির্দিষ্ট একটা প্রকাশনা, পুরোটাই বাইবেল-ভিত্তিক। এটা পাঠকদের খুব তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করতে সাহায্য করে যে, সত্য উপাসনার জন্য ঈশ্বর কী কী চান। কিন্তু এটা যেভাবে তৈরি করা হয়েছে, তা প্রতিটা বিষয়ের ওপর খুব গভীরভাবে অধ্যয়ন করার সুযোগ দেয় না। আলোচনার সময় আপনার বাইবেল ছাত্র যদি বাইবেলের কিছু বিষয়ের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো করে, তা হলে কীভাবে আপনি বাইবেলের আরও বেশি তথ্য সংগ্রহ করবেন, যা তাকে সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে সাহায্য করবে?

যাদের কাছে তাদের নিজস্ব ভাষায় সিডি-রমে ওয়াচটাওয়ার লাইব্রেরি আছে তাদের জন্য কমপিউটারে অনেক তথ্যের উৎস পাওয়া সহজ। কিন্তু সেই লোকেদের বিষয় কী বলা যায়, যাদের কাছে এই হাতিয়ারটি নেই? আমাদের বোধগম্যতাকে কীভাবে আমরা বাড়াতে পারি এবং আরও বিস্তারিতভাবে কীভাবে উত্তর দিতে পারি, তা দেখার জন্য আসুন আমরা চান ব্রোশারে আলোচনা করা হয়েছে এমন দুটো বিষয় পরীক্ষা করে দেখি—বিশেষ করে কেউ যদি এইধরনের প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করে যেমন, ঈশ্বর কে এবং যীশু আসলে কেমন ছিলেন?—যাত্রাপুস্তক ৫:২; লূক ৯:১৮-২০; ১ পিতর ৩:১৫.

ঈশ্বর কে?

৬, ৭. (ক) ঈশ্বর সম্বন্ধে কোন্‌ প্রশ্নগুলো ওঠে? (খ) একজন পাদরি তার বক্তৃতায় কোন্‌ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাদ দিয়েছিলেন?

চান ব্রোশারের ২য় পাঠ এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটির উত্তর দেয় যে, ঈশ্বর কে? এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কারণ একজন ব্যক্তি সত্য ঈশ্বরকে উপাসনা করতে পারেন না যদি তিনি তাঁকে না জানেন বা তাঁর অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ করেন। (রোমীয় ১:১৯, ২০; ইব্রীয় ১১:৬) তবুও, ঈশ্বর কে, এই বিষয় নিয়ে সারা পৃথিবীর মানুষের হাজারটা ধারণা রয়েছে। (১ করিন্থীয় ৮:৪-৬) প্রত্যেক ধর্মীয় দর্শনবিদ্যায় ঈশ্বরের পরিচয় নিয়ে বিভিন্ন উত্তর রয়েছে। খ্রীষ্টীয়জগতের বেশির ভাগ ধর্মগুলো ঈশ্বরকে এক ত্রিত্ব হিসেবে দেখে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিখ্যাত পাদরি “আপনি কি ঈশ্বরকে জানেন?” শিরোনামের ওপর একটা বক্তৃতা দিয়েছিলেন কিন্তু তার বক্তৃতায় কোথাও একটিবারের জন্যও তিনি ঐশিক নাম উল্লেখ করেননি, এমনকি যদিও তিনি ইব্রীয় শাস্ত্র থেকে বেশ কয়েকবার উদ্ধৃতি করেছিলেন। অবশ্য, তিনি এমন একটা বাইবেল অনুবাদ থেকে পড়েছিলেন যাতে যিহোবা বা ইয়াওয়ের বদলে অস্পষ্ট এবং নামহীন “প্রভু [Lord]” ব্যবহার করা হয়েছে।

সেই পাদরি কত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ই না বাদ দিয়েছিলেন যখন তিনি যিরমিয় ৩১:৩৩, ৩৪ পদ থেকে উদ্ধৃতি করেছিলেন: “‘তোমরা সদাপ্রভুকে জ্ঞাত হও,’ [ইব্রীয়, “যিহোবাকে জান”] এই কথা বলিয়া তাহারা প্রত্যেকে আপন আপন প্রতিবাসীকে ও আপন আপন ভ্রাতাকে আর শিক্ষা দিবে না; কারণ তাহারা ক্ষুদ্র ও মহান সকলেই আমাকে জ্ঞাত হইবে, ইহা সদাপ্রভু [ইব্রীয়, যিহোবা] কহেন।” তিনি যে-অনুবাদটি ব্যবহার করেছিলেন সেটাতে ঈশ্বরের স্বতন্ত্র নাম, যিহোবা বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল।—যাত্রাপুস্তক ৩:১৫.

৮. কোন্‌ বিষয়টা ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করার গুরুত্বকে স্পষ্টভাবে দেখায়?

গীতসংহিতা ৮:৯ পদ স্পষ্টভাবে দেখায় যে, কেন যিহোবার নাম ব্যবহার করা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ: “হে সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW], আমাদের প্রভু, সমস্ত পৃথিবীতে তোমার নাম কেমন মহিমান্বিত।” এটাকে এর সঙ্গে তুলনা করুন: “হে প্রভু (LORD), আমাদের প্রভু (Lord), সমস্ত পৃথিবীতে তোমার নাম কেমন চমৎকার!” (কিং জেমস ভারসন; এ ছাড়াও দেখুন দ্যা নিউ আ্যমেরিকান বাইবেল, দ্যা হোলি বাইবেল—নিউ ইন্টারন্যাশনাল ভারসন, তানাখ—দ্যা হোলি স্ক্রিপচারস) সেইসঙ্গে আগের প্রবন্ধে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, আমরা “ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান” অর্জন করতে পারি, যদি আমরা তাঁর বাক্যকে আমাদের আলোকিত করতে দিই। কিন্তু বাইবেল অধ্যয়নের কোন্‌ সহায়কটি ঐশিক নামের গুরুত্ব সম্বন্ধে আমাদের প্রশ্নগুলোর স্পষ্ট উত্তর দেবে?—হিতোপদেশ ২:১-৬.

৯. (ক) কোন্‌ প্রকাশনাটি ঐশিক নাম ব্যবহার করার গুরুত্বকে ব্যাখ্যা করতে আমাদের সাহায্য করতে পারে? (খ) কীভাবে অনেক অনুবাদক ঈশ্বরের নামের প্রতি সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে?

আমরা আপনি পরমদেশ পৃথিবীতে অনন্তকাল বেঁচে থাকতে পারেন বইটি দেখতে পারি, যেটা ১৩১টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। * “ঈশ্বর—তিনি কে?” (পৃষ্ঠা ৪১-৪৪, অনুচ্ছেদ ১৮-২৪) শিরোনামের চতুর্থ অধ্যায়টি স্পষ্টভাবে দেখায় যে, ইব্রীয় টেট্রাগ্র্যামাটোন (গ্রিক অর্থ, “চারটে অক্ষর”) প্রাচীন ইব্রীয় লিপিতে প্রায় ৭,০০০ বার দেখা যায়। কিন্তু, যিহুদিধর্ম ও খ্রীষ্টীয়জগতের পাদরি ও অনুবাদকরা তাদের বেশির ভাগ বাইবেল অনুবাদ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে এটাকে বাদ দিয়ে দিয়েছে। * তারা যদি ঈশ্বরের নাম ধরে তাঁকে ডাকতে অস্বীকার করে, তা হলে কীভাবে তারা দাবি করতে পারে যে, তারা তাঁকে জানে এবং তাঁর সঙ্গে এক গ্রহণযোগ্য সম্পর্ক তাদের রয়েছে? তাঁর প্রকৃত নাম তাঁর উদ্দেশ্যগুলো কী তা বোঝার এবং তিনি কে তা জানার পথ খুলে দেয়। এ ছাড়া, “হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ, তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক,” যীশুর এই আদর্শ প্রার্থনারই বা কী মূল্য রয়েছে, যদি ঈশ্বরের নাম কখনও ব্যবহারই না করা হয়?—মথি ৬:৯; যোহন ৫:৪৩; ১৭:৬.

যীশু খ্রীষ্ট কে?

১০. কোন্‌ কোন্‌ উপায়ে যীশুর জীবন ও পরিচর্যা সম্বন্ধে আমরা পূর্ণাঙ্গ চিত্র পেতে পারি?

১০ চান ব্রোশারের ৩য় পাঠের শিরোনাম হল “যীশু খ্রীষ্ট কে?” মাত্র ছয়টি অনুচ্ছেদের মাধ্যমে এটা খুব সংক্ষেপে যীশুর সম্বন্ধে, তাঁর উৎস ও পৃথিবীতে আসার পিছনে তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে জানায়। কিন্তু, আপনি যদি তাঁর জীবন সম্বন্ধে পূর্ণ বিবরণ জানতে চান, তা হলে সুসমাচারের বিবরণগুলো ছাড়াও সর্বমহান পুরুষ যিনি কখনও জীবিত ছিলেন বইয়ের চেয়ে ভাল আর একটিও নেই, যেটা ১১১টি ভাষায় পাওয়া যাচ্ছে।* এই বইটি, চারটে সুসমাচারের বিবরণের ওপর ভিত্তি করে খ্রীষ্টের জীবন ও শিক্ষা সম্বন্ধে এক পূর্ণ ধারাবাহিক বিবরণ তুলে ধরে। এর ১৩৩টি অধ্যায় যীশুর জীবন ও পরিচর্যার ঘটনাগুলো তুলে ধরে। আলাদা, বিশ্লেষণধর্মী পদ্ধতির জন্য আপনি অন্তর্দৃষ্টি বইয়ের ২য় খণ্ডের “যীশু খ্রীষ্ট” শিরোনামের অধীনের বিষয়গুলো দেখতে পারেন।

১১. (ক) যীশু সম্বন্ধে কোন্‌ বিশ্বাস যিহোবার সাক্ষিদের আলাদা করে তোলে? (খ) কিছু বাইবেলের পদ কী যা ত্রিত্ব মতবাদকে সুস্পষ্টভাবে খণ্ডন করে আর এই ক্ষেত্রে কোন্‌ প্রকাশনাটি সাহায্য করে?

১১ খ্রীষ্টীয়জগতে যীশুর সম্বন্ধে বিতর্ক রয়েছে যে, তিনি আসলে “ঈশ্বরের পুত্র” নাকি “পুত্র ঈশ্বর”—অন্য কথায়, ক্যাটেকিসম অফ দ্যা ক্যাথলিক চার্চ যে ত্রিত্বকে “খ্রীষ্টীয় বিশ্বাসের মূল রহস্য” বলে, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। খ্রীষ্টীয়জগতের ধর্মগুলোর চেয়ে আলাদা ধারণায় বিশ্বাসী যিহোবার সাক্ষিরা বিশ্বাস করে যে, যীশু ঐশিক উৎস থেকে এসেছেন কিন্তু ঈশ্বর নন। এই বিষয়ের ওপর এক চমৎকার আলোচনা আপনার কি ত্রিত্বে বিশ্বাস করা উচিৎ?, ব্রোশারে পাওয়া যায়, যা ৯৫টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। * ত্রিত্ব মতবাদকে খণ্ডন করার জন্য ব্যবহৃত অসংখ্য শাস্ত্রপদগুলোর মধ্যে কয়েকটি হল মার্ক ১৩:৩২ এবং ১ করিন্থীয় ১৫:২৪, ২৮.

১২. আরও কোন্‌ কোন্‌ প্রশ্ন রয়েছে যেগুলোতে আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত?

১২ ঈশ্বর ও যীশু খ্রীষ্ট সম্বন্ধে ওপরের আলোচনাগুলো কয়েকটা উপায় সম্বন্ধে দেখায়, যেগুলোর মাধ্যমে আমরা বাইবেলের সত্যের সঙ্গে পরিচিত নয় এমন ব্যক্তিদের সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে সাহায্য করার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করতে পারি। (যোহন ১৭:৩) কিন্তু সেই লোকেদের সম্বন্ধে কী বলা যায়, যারা অনেক বছর ধরে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা করছে? তাদের পুঞ্জিভূত বাইবেল জ্ঞানের পটভূমি থাকা সত্ত্বেও, তাদের কি এখনও যিহোবার বাক্যের ব্যক্তিগত অধ্যয়নের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার?

কেন ‘সবসময় মনোযোগ দেবেন’?

১৩. ব্যক্তিগত অধ্যয়ন সম্বন্ধে কারও কারও কোন্‌ ভুল দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে?

১৩ অনেক বছর ধরে মণ্ডলীর সদস্য এমন কেউ কেউ হয়তো যিহোবার সাক্ষি হিসেবে তাদের প্রথম কয়েক বছরে তারা যা শিখেছে, ততটুকু বাইবেলের জ্ঞানের ওপরই নির্ভর করার অভ্যাস থাকতে পারে। মনে মনে এইরকম যুক্তি দেখানো সহজ যে: “নতুন ব্যক্তিদের মতো এতটা গুরুত্বের সঙ্গে আমার অধ্যয়ন করার প্রয়োজন নেই। শত হলেও আমি বেশ অনেক বছর ধরে কতবার বাইবেল ও বাইবেল-ভিত্তিক প্রকাশনাগুলো পড়েছি, তা একটু ভেবে দেখুন।” এটা বলা আসলে এইরকম কথা বলারই সামিল যে: “আমার খাদ্যতালিকার প্রতি আসলে ততটা মনোযোগ দেওয়ার দরকার নেই, কারণ কত বছর ধরে আমি খাবার খেয়ে আসছি।” আমরা জানি যে শরীরকে সুস্থ ও সক্রিয় রাখার জন্য সঠিকভাবে তৈরি করা ভাল খাবার থেকে শরীরের সবসময় পুষ্টির দরকার। তা হলে, আমাদের আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য ও শক্তি বজায় রাখার জন্য এটা আরও কত বেশি সত্য!—ইব্রীয় ৫:১২-১৪.

১৪. কেন আমাদের নিজেদের প্রতি সবসময় মনোযোগ দেওয়া দরকার?

১৪ তাই, আমাদের সকলের, তা অনেক দিন ধরে বাইবেল ছাত্র হই বা না হই, তীমথিয়কে বলা পৌলের পরামর্শে মনোযোগ দেওয়া দরকার, যিনি সেই সময়ের মধ্যে একজন পরিপক্ব, দায়িত্ববান অধ্যক্ষ হয়ে উঠেছিলেন: “আপনার বিষয়ে ও তোমার শিক্ষার বিষয়ে সবসময় মনোযোগ দাও, এ সকলে স্থির থাক; কেননা তাহা করিলে তুমি আপনাকে ও যাহারা তোমার কথা শুনে, তাহাদিগকেও পরিত্রাণ করিবে।” (১ তীমথিয় ৪:১৫, ১৬) কেন আমাদের পৌলের উপদেশে মনোযোগ দেওয়া উচিত? মনে রাখবেন, পৌল এও বলেছিলেন যে, “দিয়াবলের নানাবিধ চাতুরীর” বিরুদ্ধে এবং “স্বর্গীয় স্থানে দুষ্টতার আত্মাগণের সহিত” আমাদের লড়াই করতে হবে। আর প্রেরিত পিতর সাবধান করে দিয়েছিলেন যে, দিয়াবল “কাহাকে গ্রাস করিবে, তাহার অন্বেষণ করিয়া বেড়াইতেছে” আর সেই “কাহাকে” আমাদের মধ্যে যে কেউ হতে পারে। আমাদের আত্মতুষ্টির মনোভাব ঠিক তেমনটাই হতে পারে, যেটার অন্বেষণ সে করে চলেছে।—ইফিষীয় ৬:১১, ১২; ১ পিতর ৫:৮.

১৫. কোন্‌ আধ্যাত্মিক সুরক্ষা আমাদের রয়েছে এবং কীভাবে আমরা এটা বজায় রাখতে পারি?

১৫ তাই, আমাদের কোন্‌ সুরক্ষা রয়েছে? প্রেরিত পৌল আমাদের মনে করিয়ে দেন: “তোমরা ঈশ্বরের সমগ্র যুদ্ধসজ্জা গ্রহণ কর, যেন সেই কুদিনে প্রতিরোধ করিতে এবং সকলই সম্পন্ন করিয়া দাঁড়াইয়া থাকিতে পার।” (ইফিষীয় ৬:১৩) সেই আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জার কার্যকারিতা কেবলমাত্র এর প্রাথমিক অবস্থার ওপরই নির্ভর করে না কিন্তু নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করে চলার ওপরও নির্ভর করে। তাই, ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা সেই পূর্ণ সজ্জার অন্তর্ভুক্ত ঈশ্বরের বাক্যের চলতি জ্ঞান। এটা সত্য সম্বন্ধে আমাদের বোধগম্যতাকে নতুন নতুন তথ্য দিয়ে ভরিয়ে রাখার গুরুত্বকে তুলে ধরে, যা যিহোবার দ্বারা তাঁর বাক্যের মাধ্যমে এবং বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস শ্রেণীর দ্বারা প্রকাশিত হয়। আমাদের আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জা বজায় রাখার জন্য বাইবেল ও বাইবেল-ভিত্তিক প্রকাশনাগুলোর নিয়মিত ব্যক্তিগত অধ্যয়ন অত্যন্ত জরুরি।—মথি ২৪:৪৫-৪৭; ইফিষীয় ৬:১৪, ১৫.

১৬. আমাদের ‘বিশ্বাসের ঢাল’ কাজ করার মতো ভাল অবস্থায় রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা কী করতে পারি?

১৬ এ ছাড়া, পৌল আমাদের আত্মরক্ষামূলক আরেকটা যে-গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কথা বলেন, তা হল ‘বিশ্বাসের ঢাল,’ যেটার সাহায্যে আমরা শয়তানের মিথ্যা অভিযোগ ও ভ্রান্ত শিক্ষার অগ্নিবাণ প্রতিরোধ ও নিঃশেষ করে দিতে পারি। (ইফিষীয় ৬:১৬) তাই, এটা খুবই জরুরি যেন আমরা মূল্যায়ন করি যে, আমাদের বিশ্বাসের ঢাল কতটা শক্তিশালী এবং এটাকে শক্তিশালী করার জন্য আমাদের কোন্‌ কোন্‌ পদক্ষেপ নিতে হবে। উদাহরণ হিসেবে, আপনি হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন: ‘প্রহরীদুর্গ ব্যবহার করে কীভাবে আমি সাপ্তাহিক বাইবেল অধ্যয়নের জন্য প্রস্তুত হই? সভার সময় “প্রেম ও সৎক্রিয়ায় . . . উদ্দীপিত করিয়া” তুলতে আমি কি ভালভাবে প্রস্তুত করা উত্তর দিই? উদ্ধৃত নয় কিন্তু উল্লেখিত শাস্ত্রপদগুলো কি আমি বাইবেল থেকে খুলে দেখি ও পড়ি? সভাগুলোতে উদ্যোগের সঙ্গে অংশ নিয়ে আমি কি অন্যদের উৎসাহ দিই?’ আমাদের আধ্যাত্মিক খাদ্য হল কঠিন খাবার এবং এর থেকে পুরোপুরি উপকার পেতে হলে পরিপাকের দরকার আছে।—ইব্রীয় ৫:১৪; ১০:২৪.

১৭. (ক) আমাদের আধ্যাত্মিকতাকে নষ্ট করে দেওয়ার জন্য শয়তান কোন্‌ বিষ ব্যবহার করার চেষ্টা করছে? (খ) শয়তানের বিষের প্রতিষেধক কী?

১৭ শয়তান অসিদ্ধ মাংসের দুর্বলতাগুলো সম্বন্ধে জানে এবং তার চাতুরীগুলো অত্যন্ত সূক্ষ্ম। একটা যে-উপায়ে সে তার মন্দ প্রভাবকে ছড়িয়ে দিচ্ছে, তা হল অশ্লীল চিত্রকে টেলিভিশন, ইন্টারনেট, ভিডিও এবং ছাপানো প্রকাশনার মধ্যে অত্যন্ত সহজে প্রকাশ করার দ্বারা। কিছু খ্রীষ্টান তাদের প্রতিরোধ শক্তিকে দুর্বল করে দিতে এই বিষকে প্রশ্রয় দিয়েছে আর ফলে মণ্ডলীতে সুযোগ হারানো বা এর চেয়েও আরও গুরুতর পরিণতি নিয়ে এসেছে। (ইফিষীয় ৪:১৭-১৯) শয়তানের এই আধ্যাত্মিক বিষের প্রতিষেধক কী? আমাদের কখনোই নিয়মিত ব্যক্তিগত বাইবেল অধ্যয়ন, খ্রীষ্টীয় সভাগুলো এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা সমগ্র যুদ্ধসজ্জাকে তুচ্ছ করা উচিত নয়। এই বিষয়গুলো একত্রে আমাদের সঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য করার এবং ঈশ্বর যা ঘৃণা করেন, তা ঘৃণা করার ক্ষমতা জোগায়।—গীতসংহিতা ৯৭:১০; রোমীয় ১২:৯.

১৮. আমাদের আধ্যাত্মিক যুদ্ধে কীভাবে “আত্মার খড়্গ” আমাদেরকে সাহায্য করতে পারে?

১৮ যদি আমরা আমাদের নিয়মিত বাইবেল অধ্যয়নের অভ্যাস বজায় রাখি, তা হলে আমরা শুধু ঈশ্বরের বাক্যের সঠিক জ্ঞানের মাধ্যমে দৃঢ় প্রতিরোধকই পাব না কিন্তু সেইসঙ্গে “আত্মার খড়্গ” অর্থাৎ ঈশ্বরের বাক্যের মাধ্যমে মোকাবিলার কার্যকারী হাতিয়ারও লাভ করব। ঈশ্বরের বাক্য “সমস্ত দ্বিধার খড়্গ অপেক্ষা তীক্ষ্ণ, এবং প্রাণ ও আত্মা, গ্রন্থি ও মজ্জা, এই সকলের বিভেদ পর্য্যন্ত মর্ম্মবেধী, এবং হৃদয়ের চিন্তা ও বিবেচনার সূক্ষ্ম বিচারক।” (ইফিষীয় ৬:১৭; ইব্রীয় ৪:১২) যদি আমরা সেই “খড়্গ” ব্যবহারে দক্ষ হই, তা হলে প্রলোভনের মুখোমুখি হলে, দেখতে অক্ষতিকর বা এমনকি আকর্ষণীয় বলে মনে হয় এমন যেকোন বিষয়কে আলাদা করতে পারব এবং এটাকে মন্দ কোন ব্যক্তির মারাত্মক ফাঁদ হিসেবে প্রকাশ করতে পারব। বাইবেলের জ্ঞানভাণ্ডার ও বোধগম্যতা আমাদের যা মন্দ তা পরিহার করে যা সঠিক তা করতে সাহায্য করবে। তাই, আমাদের সকলের নিজেদের জিজ্ঞেস করা দরকার: ‘আমার খড়্গ নির্ভরযোগ্য নাকি মরচে পড়া? আক্রমণ প্রতিরোধ করতে শক্তিশালী করে এমন বাইবেলের পদ মনে করতে কি আমার কষ্ট হয়?’ আসুন আমরা ব্যক্তিগত অধ্যয়নের বিষয়ে আমাদের ভাল অভ্যাসগুলো বজায় রাখি এবং এভাবে দিয়াবলকে প্রতিরোধ করি।—ইফিষীয় ৪:২২-২৪.

১৯. যদি আমরা ব্যক্তিগত অধ্যয়নে রত থাকি, তা হলে কোন্‌ কোন্‌ উপকার আমরা লাভ করতে পারি?

১৯ পৌল লিখেছিলেন: “ঈশ্বর-নিশ্বসিত প্রত্যেক শাস্ত্রলিপি আবার শিক্ষার, অনুযোগের, সংশোধনের, ধার্ম্মিকতা সম্বন্ধীয় শাসনের নিমিত্ত উপকারী, যেন ঈশ্বরের লোক পরিপক্ব, সমস্ত সৎকর্ম্মের জন্য সুসজ্জীভূত হয়।” যদি আমরা তীমথিয়কে বলা পৌলের কথাগুলোর প্রতি মনোযোগ দিই, তা হলে আমরা আমাদের নিজেদের আধ্যাত্মিকতাকে শক্তিশালী করতে পারি এবং আমরা আমাদের পরিচর্যাকে আরও কার্যকারী করতে পারি। আধ্যাত্মিকমনা প্রাচীনরা এবং পরিচারক দাসেরা মণ্ডলীর জন্য প্রচুর উপকারের উৎস হতে পারে আর আমরা সকলে বিশ্বাসে অটল থাকতে পারি।—২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭; মথি ৭:২৪-২৭.

[পাদটীকাগুলো]

^ সাধারণত চান ব্রোশার দিয়ে অধ্যয়ন করছেন এমন একজন নতুন আগ্রহী ব্যক্তি পরে জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে বই অধ্যয়ন করে থাকেন, দুটোই যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত। এখানে দেওয়া পরামর্শগুলো আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে আসা বাধাগুলোকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত। যাদের কাছে তাদের নিজেদের ভাষায় শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইংরেজি) রয়েছে, তারা এর ২য় খণ্ডের “যিহোবা” শিরোনামের নিচে তথ্য পেতে পারে।

^ কয়েকটা স্প্যানিশ ও কাটালোনিয়ান অনুবাদ ইব্রীয় টেট্রাগ্র্যামাটোন অনুবাদের ক্ষেত্রে লক্ষণীয় ব্যতিক্রম করেছে, এগুলো “ইয়েভে” “ইয়াভ্যা,” “জাভ্যা,” এবং “খ্যায়োভা” শব্দগুলো ব্যবহার করেছে।

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত।

আপনার কি মনে আছে?

• কোন্‌ পরিস্থিতিগুলো কার্যকারী ব্যক্তিগত অধ্যয়নের ক্ষেত্রে অবদান রাখে?

• অনেক বাইবেল অনুবাদ ঈশ্বরের নাম সম্বন্ধে কোন্‌ ভুলগুলো করে?

• ত্রিত্বের শিক্ষাকে খণ্ডন করার জন্য আপনি কোন্‌ শাস্ত্রপদগুলো ব্যবহার করবেন?

• আমরা এমনকি অনেক বছর ধরে সত্য খ্রীষ্টান হয়ে থাকলেও শয়তানের চাতুরীগুলো থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

কার্যকারী ব্যক্তিগত অধ্যয়নের জন্য আপনার সঠিক পরিবেশ দরকার, যেখানে আপনার বিক্ষিপ্ত হওয়ার সুযোগ খুব কমই থাকবে

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

আপনার “খড়্গ” কি নির্ভরযোগ্য নাকি মরচে পড়া?