যিহোশূয় যা মনে রেখেছিলেন
যিহোশূয় যা মনে রেখেছিলেন
যিহোবা বলেছিলেন, “আমার দাস মোশির মৃত্যু হইয়াছে; এখন উঠ, তুমি এই সমস্ত লোক লইয়া এই যর্দ্দন পার হও, এবং তাহাদিগকে . . . আমি যে দেশ দিতেছি, সেই দেশে যাত্রা কর।” (যিহোশূয়ের পুস্তক ১:২) যিহোশূয়ের সামনে কী এক কঠিন কাজই না ছিল! তিনি প্রায় ৪০ বছর মোশির পরিচারক ছিলেন। এখন তাকে তার প্রভুর স্থানটি নিতে এবং প্রতিজ্ঞাত দেশে ইস্রায়েল সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার জন্য নেতৃত্ব দিতে বলা হয়, যারা কিনা প্রায়ই অসুবিধার সৃষ্টি করত।
যিহোশূয় যখন সামনে কী রয়েছে সেই বিষয় নিয়ে গভীরভাবে ভেবেছিলেন, তখন সম্ভবত ইতিমধ্যেই তিনি যে-পরীক্ষাগুলোর মুখোমুখি হয়েছিলেন ও মোকাবিলা করেছিলেন, সেই বিষয়গুলো তার মনে এসেছিল। যিহোশূয় যা মনে রেখেছিলেন তা নিঃসন্দেহে সেই সময় তার জন্য এক অমূল্য সাহায্যস্বরূপ ছিল আর আজকে খ্রীষ্টানদের জন্যও তা প্রযোজ্য হতে পারে।
দাস থেকে নেতা
যিহোশূয়ের স্মৃতিগুলোর একটা অংশ ছিল বহুবছরের দাসত্ব। (যাত্রাপুস্তক ১:১৩, ১৪; ২:২৩) ওই সময়ে যিহোশূয়ের ঠিক কীধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তা শুধু আমরা কল্পনাই করতে পারি কারণ বাইবেল এই বিষয়ে নির্দিষ্টভাবে কিছু বলে না। যিহোশূয় হয়তো মিশরে কাজ করার সময়ই এক উত্তম সংগঠক হতে শিখেছিলেন এবং ইব্রীয়দের ও ‘মিশ্রিত লোকদের মহাজনতাকে’ সেই দেশ থেকে সুষ্ঠুভাবে বের করে নিয়ে যাওয়ার কাজে তিনি হয়তো সাহায্য করেছিলেন।—যাত্রাপুস্তক ১২:৩৮.
যিহোশূয় ছিলেন ইফ্রয়িম গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। তার ঠাকুরদাদা ইলীশামা একজন অধ্যক্ষ ছিলেন এবং সম্ভবত তিনি ইস্রায়েলের তিন বিভাগীয় গোষ্ঠীর মধ্যে অন্যতম একটা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ১,০৮,১০০ জন সামরিক লোকেদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। (গণনাপুস্তক ১:৪, ১০, ১৬; ২:১৮-২৪; ১ বংশাবলি ৭:২০, ২৬, ২৭) তবুও, ইস্রায়েলীয়রা মিশর ছেড়ে
যাত্রাপুস্তক ১৭:৮, ৯ক) উদাহরণ হিসেবে, তার ঠাকুরদাদা অথবা তার বাবাকে না ডেকে কেন যিহোশূয়কেই ডাকা হয়েছিল? এর একটা সম্ভাব্য কারণ হল: “ইফ্রয়িমের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠীর প্রধান হিসেবে এবং একজন যিনি তার সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য ইতিমধ্যেই সুপরিচিত এবং যাকে লোকেরা পুরোপুরি বিশ্বাস করে, সেই [যিহোশূয়]-কেই মোশি নেতা হিসেবে সৈন্যদের সংগঠিত করার জন্য সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন।”
আসার কিছুদিন পরেই যখন অমালেকীয়রা ইস্রায়েলকে আক্রমণ করে, প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করার জন্য মোশি তখন যিহোশূয়কেই ডাকেন। (কারণ যা-ই হোক না কেন, যখন তাকে বেছে নেওয়া হয়, যিহোশূয় ঠিক মোশির নির্দেশ অনুসারে কাজ করেছিলেন। যদিও ইস্রায়েল যুদ্ধ সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ ছিল কিন্তু যিহোশূয় ঐশিক সাহায্য সম্বন্ধে নিশ্চিত ছিলেন। তাই, যখন মোশি তাকে বলেন, “কল্য আমি ঈশ্বরের যষ্টি হস্তে লইয়া পর্ব্বতের শিখরে দাঁড়াইব,” সেটাই তার পক্ষে যথেষ্ট ছিল। যিহোশূয়ের নিশ্চয়ই মনে ছিল যে, যিহোবা সবেমাত্র সেই সময়কার সবচেয়ে বড় সামরিক শক্তিকে ধ্বংস করেছিলেন। পরের দিন যখন মোশি সূর্যাস্ত অবধি তার হাত উঠিয়ে রাখেন, কোন শত্রু ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারেনি আর অমালেকীয়রা পরাজিত হয়। এরপর যিহোবা মোশিকে ঐশিক ঘোষণাটি একটি পুস্তকের মধ্যে লিখতে আর তা ‘যিহোশূয়ের কর্ণগোচরে শুনাইতে’ আদেশ দেন: “আমি আকাশের নীচে হইতে অমালেকের নাম নিঃশেষে লোপ করিব।” (যাত্রাপুস্তক ১৭:৯খ-১৪) হ্যাঁ, যিহোবা সেই বিচার আনতে কখনোই ব্যর্থ হবেন না।
মোশির পরিচারকের ভূমিকায়
অমালেককে কেন্দ্র করে যে-ঘটনা ঘটেছিল, তা নিশ্চয়ই যিহোশূয় ও মোশির সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করে তুলেছিল। ‘তার যুবকাবস্থা থেকে’ (NW) মোশির মৃত্যু পর্যন্ত, প্রায় ৪০ বছর তার ব্যক্তিগত সঙ্গী অর্থাৎ “পরিচারক” হওয়ার সুযোগ যিহোশূয়ের হয়েছিল।—গণনাপুস্তক ১১:২৮.
সেই পদের অর্থ ছিল বিশেষ কিছু সুযোগ ও দায়িত্ব। উদাহরণস্বরূপ, যখন মোশি, হারোণ, হারোণের পুত্ররা এবং ইস্রায়েলের ৭০ জন প্রাচীন সীনয় পর্বতে উঠে যিহোবার মহিমার এক দর্শন দেখেছিল, তখন সম্ভবত তাদের মধ্যে যিহোশূয়ও ছিলেন। পরিচারক হিসেবে তিনি মোশির সঙ্গে পাহাড়ের আরও উঁচুতে উঠেছিলেন আর তিনি হয়তো কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন যখন মোশি মেঘের মধ্যে প্রবেশ করেন, যা যিহোবার উপস্থিতিকে চিত্রিত করেছিল। এটা উল্লেখযোগ্য যে, যিহোশূয় পাহাড়ের ওপর ৪০ দিন ও ৪০ রাত কাটিয়েছিলেন। তিনি বিশ্বস্ততার সঙ্গে তার প্রভুর ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিলেন কারণ মোশি যখন প্রস্তরফলক নিয়ে নিচে নেমে আসেন, তখন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য যিহোশূয় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।—যাত্রাপুস্তক ২৪:১, ২, ৯-১৮; ৩২:১৫-১৭.
সুবর্ণ গোবৎসকে কেন্দ্র করে ইস্রায়েলের প্রতিমাপূজার ঘটনার পরেও যিহোশূয় মোশির পরিচারক হিসেবে শিবিরের বাইরে সমাগম তাঁবুতে কাজ করে চলেছিলেন। সেখানে যিহোবা মোশির মুখোমুখি কথা বলেছিলেন। কিন্তু মোশি যখন শিবিরে ফিরে আসেন, তখন যিহোশূয় “তাম্বুর মধ্য হইতে যাত্রাপুস্তক ৩৩:৭, ১১.
বাহিরে যাইতেন না।” সম্ভবত সেখানে তার উপস্থিতির প্রয়োজন ছিল, যাতে ইস্রায়েলীয়রা তাদের অশুচি অবস্থা নিয়ে তাঁবুর মধ্যে প্রবেশ করতে না পারে। যিহোশূয় সেই দায়িত্ব কত গুরুত্বের সঙ্গেই না গ্রহণ করেছিলেন!—ইতিহাসবেত্তা জোসেফাসের মতানুসারে, যিহোশূয়ের থেকে ৩৫ বছরের বড় মোশির সঙ্গে মেলামেশা নিশ্চয়ই যিহোশূয়ের বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করেছিল। তাদের সম্পর্ককে বলা হতো “পরিপক্ব ও যুবকের, শিক্ষক ও ছাত্রের মিলন,” যার ফলে যিহোশূয় হয়ে ওঠেন “একজন দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি।” আজকে আমাদের মধ্যে মোশির মতো কোন ভাববাদী নেই কিন্তু যিহোবার লোকেদের মণ্ডলীগুলোর মধ্যে প্রাচীনরা রয়েছে, যারা তাদের অভিজ্ঞতা ও আধ্যাত্মিকতার জন্য সত্যিই এক দৃঢ়তা এবং উৎসাহের উৎস হয়ে ওঠে। আপনি কি তাদের উপলব্ধি করেন? আর আপনি কি তাদের সাহচর্যের দ্বারা উপকৃত হচ্ছেন?
কনান দেশে এক গুপ্তচর
ইস্রায়েলীরা ব্যবস্থা পাওয়ার ঠিক পরেই যিহোশূয়ের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটা ঘটে। প্রতিজ্ঞাত দেশ নিরীক্ষণ করার জন্য তাকে তার গোষ্ঠীর প্রতিনিধি হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। এই ঘটনাটা খুবই সুপরিচিত। ১২জন গুপ্তচরই স্বীকার করেছিল যে সেই দেশ, ঠিক যিহোবার প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী “দুগ্ধমধুপ্রবাহী” ছিল। কিন্তু দশজন, বিশ্বাসের অভাবের দরুণ ভয় পেয়েছিল যে, ইস্রায়েল কখনোই সেই দেশের অধিবাসীদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দিতে পারবে না। কেবলমাত্র যিহোশূয় ও কালেব, ভয়ের কারণে লোকেদের বিদ্রোহ না করতে উৎসাহ দিয়েছিল কারণ যিহোবা নিশ্চয়ই তাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকবেন। এতে, সমবেত সকলে আপত্তি জানিয়েছিল আর ওই দুজনকে পাথর ছুড়ে মেরে ফেলার কথা বলেছিল। সম্ভবত তারা সেটাই করত যদি না যিহোবা তাঁর মহিমা প্রকাশের দ্বারা হস্তক্ষেপ করতেন। তাদের বিশ্বাসের অভাবের জন্য ঈশ্বর ঘোষণা করেন যে, ইস্রায়েলে নথিভুক্ত ২০ বছর বয়স থেকে শুরু করে এর উর্ধ্বে কেউই কনান দেশে প্রবেশ করার জন্য বেঁচে থাকবে না। এদের মধ্যে কেবল যিহোশূয়, কালেব এবং লেবীয়রা বেঁচে ছিল।—গণনাপুস্তক ১৩:১-১৬, ২৫-২৯; ১৪:৬-১০, ২৬-৩০.
এই লোকেরা কি মিশরে যিহোবার পরাক্রম কাজগুলো দেখেনি? তা হলে কোন্ বিষয়টা যিহোশূয়কে ঈশ্বরের সাহায্যের ওপর বিশ্বাস রাখতে সাহায্য করেছিল, যেখানে অধিকাংশই এই বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল? যিহোবা যা কিছু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন ও পরিপূর্ণ করেছিলেন সেই সমস্ত নিশ্চয়ই যিহোশূয় তার মনের মধ্যে স্পষ্টভাবে ধরে রেখেছিলেন ও সেগুলো নিয়ে ধ্যান করেছিলেন। অনেক বছর পর তিনি বলতে পেরেছিলেন যে, ‘ঈশ্বর সদাপ্রভু ইস্রায়েলকে যত মঙ্গলবাক্য বলিয়াছিলেন, তাহার মধ্যে একটীও বিফল হয় নাই; সকলই সফল হইয়াছে।’ (যিহোশূয়ের পুস্তক ২৩:১৪) তাই, যিহোশূয়ের বিশ্বাস ছিল যে, ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে যিহোবা যা কিছু প্রতিজ্ঞা করেছেন, তা অবশ্যই পরিপূর্ণ হবে। (ইব্রীয় ১১:৬) এটা একজন ব্যক্তিকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে প্রেরণা দেবে: ‘আমার সম্বন্ধে কী বলা যায়? যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলো নিয়ে অধ্যয়ন ও ভেবে দেখার জন্য আমি যে সময় দেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করেছি, তা কি আমাকে এই দৃঢ়প্রত্যয় জুগিয়েছে যে, সেগুলো নির্ভরযোগ্য? আমি কি বিশ্বাস করি যে, আসন্ন মহাক্লেশে ঈশ্বর আমাকে তাঁর লোকেদের সঙ্গে রক্ষা করবেন?’
যিহোশূয় কেবল বিশ্বাসই অনুশীলন করেননি কিন্তু তিনি নৈতিক সাহসও দেখিয়েছিলেন। একমাত্র তিনি ও কালেব এক দিকে ছিলেন এবং সমবেত সমস্ত লোক তাদের পাথর ছুঁড়ে মারার কথা বলছিল। আপনি এই বিষয়ে কেমন মনে করতেন? আপনি কি ভয় পেতেন? যিহোশূয় পাননি। তিনি ও কালেব যা বিশ্বাস করতেন, তা-ই দৃঢ়ভাবে বলেছিলেন। যিহোবার প্রতি আনুগত্যের ফলে আমাদেরও হয়তো একদিন তা-ই করতে হতে পারে।
গুপ্তচরদের ঘটনাটা আমাদের আরও জানায় যে, যিহোশূয়ের নাম পরিবর্তিত হয়েছিল। তার আসল নাম হোশেয়, যার মানে হল “পরিত্রাণ,” এই নামের সঙ্গে মোশি আরেকটা অক্ষর জুড়ে দিয়েছিলেন, যা ঐশিক নামকে চিত্রিত করে আর তিনি তাকে যিহোশূয়া বা যিহোশূয় বলে সম্বোধন করেন, যেটার অর্থ হল “যিহোবা হলেন পরিত্রাণ।” সেপ্টুয়াজিন্ট সংস্করণে তার নামকে “যীশু” বলে অনুবাদ করা হয়েছে। (গণনাপুস্তক ১৩:৮, ১৬, পাদটীকা, NW) সেই নামের সত্যতাস্বরূপ, যিহোশূয় সাহসের সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন যে, যিহোবা হলেন পরিত্রাণ। যিহোশূয়ের নামের পরিবর্তন একটা সাধারণ ব্যাপার ছিল না। এটা যিহোশূয়ের চরিত্রের প্রতি মোশির যে সম্মান ছিল, তা প্রতিফলিত করেছিল এবং ভবিষ্যতে নতুন প্রজন্মকে প্রতিজ্ঞাত দেশে নিয়ে যাওয়ার সময় নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে যিহোশূয় যে একটা বিশেষ ভূমিকা পালন করবেন, সেটার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
তাদের পূর্বপুরুষদের মৃত্যুর পর, ইস্রায়েলীয়রা ৪০ বছর ধরে অস্বস্তিকর পরিবেশে প্রান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছিল। সেই সময় যিহোশূয়ের সম্বন্ধে আমরা কিছুই জানি না। নিশ্চয়ই, এগুলো তাকে অনেক কিছু শিখিয়েছিল। সম্ভবত তিনি বিদ্রোহী কোরহ, গণনাপুস্তক ১৬:১-৫০; ২০:৯-১৩; ২৫:১-৯.
দাথন ও অবীরাম এবং তাদের অনুসারীরা ও যারা বালদেবের জঘন্য উপাসনায় অংশ গ্রহণ করেছিল, তাদের ওপর ঈশ্বরের বিচারের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। নিঃসন্দেহে, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে যিহোশূয় জানতে পেরেছিলেন যে, যেহেতু মোশি মরীবায় জল সংক্রান্ত ঘটনায় যিহোবার প্রশংসা করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন, তাই তিনিও প্রতিজ্ঞাত দেশে ঢুকতে পারবেন না।—মোশির উত্তরসূরি হিসেবে নিযুক্ত
মোশির মৃত্যু যখন ঘনিয়ে আসে, তিনি ঈশ্বরকে তার উত্তরসূরি নিযুক্ত করতে বলেন, যাতে ইস্রায়েল “অরক্ষক মেষপালের ন্যায় না হয়।” যিহোবার প্রতিক্রিয়া? “আত্মাবিষ্ট লোক,” যিহোশূয়ের সমবেত লোকের সামনে নিযুক্ত হওয়ার কথা ছিল। তাদের তার কথা শুনতে হবে। কতই না এক উত্তম সুপারিশ! যিহোবা যিহোশূয়ের বিশ্বাস ও ক্ষমতা দেখেছিলেন। এর চাইতে দক্ষ ব্যক্তির ওপর ইস্রায়েলের নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব হতো না। (গণনাপুস্তক ২৭:১৫-২০) তবুও, মোশি জানতেন যে যিহোশূয় অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তাই, মোশি তার উত্তরসূরিকে ‘বলবান হইতে ও সাহস’ করতে বলেছিলেন কারণ যিহোবা সবসময় তার সঙ্গে থাকবেন।—দ্বিতীয় বিবরণ ৩১:৭, ৮.
ঈশ্বর নিজে যিহোশূয়ের প্রতি সেই একই উৎসাহজনক শব্দের পুনরাবৃত্তি করেন ও আরও বলেন: “তুমি কেবল বলবান হও ও অতিশয় সাহস কর; আমার দাস মোশি তোমাকে যে ব্যবস্থা আদেশ করিয়াছে, তুমি সেই সমস্ত ব্যবস্থা যত্নপূর্ব্বক পালন কর; তাহা হইতে দক্ষিণে কি বামে ফিরিও না; যেন তুমি যে কোন স্থানে যাও, সেই স্থানে বুদ্ধিপূর্ব্বক চলিতে পার। তোমার মুখ হইতে এই ব্যবস্থাপুস্তক বিচলিত না হউক; তন্মধ্যে যাহা যাহা লিখিত আছে, যত্নপূর্ব্বক সেই সকলের অনুযায়ী কর্ম্ম করণার্থে তুমি দিবারাত্র তাহা ধ্যান কর; কেননা তাহা করিলে তোমার শুভগতি হইবে ও তুমি বুদ্ধিপূর্ব্বক চলিবে। আমি কি তোমাকে আজ্ঞা দিই নাই? তুমি বলবান হও ও সাহস কর, মহাভয়ে ভীত কি নিরাশ হইও না; কেননা তুমি যে কোন স্থানে যাও, সেই স্থানে তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু তোমার সহবর্ত্তী।”—যিহোশূয়ের পুস্তক ১:৭-৯.
একদিকে যিহোবার কথাগুলো যিহোশূয়ের কানে বাজছিল আর অন্যদিকে তিনি যেসমস্ত অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলেন, সেগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে কীভাবে সন্দেহ প্রকাশ করতে পারেন? সেই দেশ জয় করা ছিল সুনিশ্চিত। সমস্যা আসবেই আর নিঃসন্দেহে প্রথম বিপদটা ছিল, উপচে পড়া অবস্থায় যর্দন নদী পার হওয়া। তবুও, যিহোবা নিজে আদেশ দিয়েছিলেন: “যর্দ্দন পার হও।” তা হলে আর কী সমস্যা থাকতে পারে?—যিহোশূয়ের পুস্তক ১:২.
যিহোশূয়ের জীবনের পরবর্তী ঘটনাগুলো—যিরিহো জয়, কালক্রমে তাদের শত্রুদের পরাজিত করা, দেশ বিভক্তিকরণ—এই সমস্ত কিছুই প্রমাণ করে যে, তিনি কখনও ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতিকে ভুলে যাননি। তার জীবনের শেষ দিনগুলোতে যখন যিহোবা ইস্রায়েলকে তাদের শত্রুদের হাত থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন, তখন যিহোশূয় লোকেদের সমবেত করে তাদের সঙ্গে ঈশ্বরের আচরণ পুনরালোচনা করেন আর তাদের পূর্ণহৃদয় দিয়ে তাঁর সেবা করতে উৎসাহ দেন। এর ফলে, ইস্রায়েল যিহোবার সঙ্গে তাদের যে-চুক্তি, তা গুরুত্বের সঙ্গে পুনরুজ্জীবিত করে আর নিঃসন্দেহে তাদের নেতার আদর্শের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে “যিহোশূয়ের সমস্ত জীবনকালে . . . ইস্রায়েল সদাপ্রভুর সেবা করিল।”—যিহোশূয়ের পুস্তক ২৪:১৬, ৩১.
যিহোশূয় আমাদের জন্য এক চমৎকার উদাহরণ রেখেছেন। আজকে খ্রীষ্টানরা বিশ্বাসের অসংখ্য পরীক্ষার সম্মুখীন হয়। যিহোবার অনুমোদন পাওয়ার জন্য ও পরিশেষে তাঁর প্রতিজ্ঞার অংশীদার হওয়ার জন্য এগুলো সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যিহোশূয়ের সাফল্য নির্ভর করেছিল তার দৃঢ় বিশ্বাসের ওপর। এটা সত্যি যে, আমরা যিহোশূয়ের মতো ঈশ্বরের পরাক্রম কাজ দেখিনি কিন্তু যদি কেউ এই বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশও করে, তা হলে যিহোশূয়ের নামে এই বাইবেল পুস্তকটি যিহোবার বাক্যের নির্ভরযোগ্যতার এক প্রত্যক্ষ সাক্ষি। যিহোশূয়ের মতো আমাদেরও নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে যে, যদি আমরা নিয়মিত ঈশ্বরের বাক্য পড়ি ও যত্নসহকারে তা প্রয়োগ করি, তা হলে আমরা প্রজ্ঞা পাব ও সফল হব।
আপনি কি কখনও কখনও, সহ খ্রীষ্টানদের ব্যবহারে দুঃখ পান? যিহোশূয়ের ধৈর্যের কথা চিন্তা করে দেখুন, ৪০ বছর তিনি বাধ্য ছিলেন, তার নিজের কোন দোষ না থাকা সত্ত্বেও তিনি প্রান্তরে অবিশ্বাসী সহকারীদের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। আপনি যা বিশ্বাস করেন, তার পক্ষ নিতে কি আপনার অসুবিধা হয়? মনে করে দেখুন যিহোশূয় ও কালেব কী করেছিলেন। তাদের বিশ্বাস ও বাধ্যতার জন্য তারা উত্তম পুরস্কার পেয়েছিল। হ্যাঁ, সত্যিই যিহোশূয়ের বিশ্বাস ছিল যে, যিহোবা তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলো পরিপূর্ণ করবেনই করবেন। আমাদের ক্ষেত্রেও যেন একই বিষয় সত্য হয়।—যিহোশূয়ের পুস্তক ২৩:১৪.
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
মোশির সাহচর্য যিহোশূয়ের বিশ্বাসকে দৃঢ় করেছিল
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবার শক্তির ওপর যিহোশূয় ও কালেবের আস্থা ছিল
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোশূয়ের নেতৃত্ব যিহোবার প্রতি আসক্ত থাকতে লোকেদের অনুপ্রাণিত করেছিল