সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও”

“ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও”

“ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও”

“ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও, তাহাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন।”যাকোব ৪:৮.

১, ২. (ক) মানুষেরা প্রায়ই কী দাবি করে? (খ) যাকোব কোন্‌ উপদেশ দিয়েছিলেন এবং কেন এর প্রয়োজন ছিল?

 “ঈশ্বর আমাদের সঙ্গে আছেন।” এই কথাগুলো বিভিন্ন জাতীয় প্রতীক ও এমনকি সৈন্যদের ইউনিফর্মের মধ্যেও রয়েছে। “আমরা ঈশ্বরের উপর নির্ভর করি,” এই কথাগুলো প্রচলিত মুদ্রার অসংখ্য পয়সার মধ্যে খোদিত এবং টাকার মধ্যে ছেপে দেওয়া হয়েছে। মানুষের পক্ষে এটা দাবি করা খুবই সাধারণ ব্যাপার যে, ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু, আপনি কি একমত হবেন না যে, আসলে এইরকম এক সম্পর্ক থাকার জন্য শুধু মুখে বলা বা স্লোগানের মাধ্যমে প্রকাশ করার চেয়ে আরও বেশি কিছুর প্রয়োজন?

বাইবেল দেখায় যে, ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব। তবে, এর জন্য প্রচেষ্টার প্রয়োজন। এমনকি প্রথম শতাব্দীর কিছু অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদেরও, যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার দরকার হয়েছিল। খ্রীষ্টান অধ্যক্ষ যাকোবকে, কিছু মাংসিক প্রবণতা ও সেইসঙ্গে আধ্যাত্মিক শুচিতার অভাব সম্বন্ধে কয়েকজনকে সাবধান করতে হয়েছিল। সেই পরামর্শের মধ্যে তিনি এই জোরালো উপদেশ দিয়েছিলেন: “ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও, তাহাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন।” (যাকোব ৪:১-১২) “নিকটবর্ত্তী হও” বলার দ্বারা যাকোব কী বুঝিয়েছিলেন?

৩, ৪. (ক) যাকোবের প্রথম শতাব্দীর কিছু পাঠকদের “ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও” বলার দ্বারা হয়তো কী মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল? (খ) কেন আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়া সম্ভব?

যাকোব যে-অভিব্যক্তি ব্যবহার করেছিলেন, সেটা তার অনেক পাঠকের কাছে পরিচিত ছিল। মোশির ব্যবস্থা যাজকদের স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছিল যে, যিহোবার লোকেদের হয়ে কীভাবে তারা তাঁর ‘নিকটবর্ত্তী হইতে’ পারে। (যাত্রাপুস্তক ১৯:২২) এভাবে, যাকোবের পাঠকদের হয়তো মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, যিহোবার নিকটবর্তী হওয়া হালকাভাবে নেওয়ার মতো কোন বিষয় নয়। নিখিলবিশ্বে যিহোবা হলেন সবচেয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তি।

অন্যদিকে, একজন বাইবেল পণ্ডিত যেমন মন্তব্য করেন, “[যাকোব ৪:৮ পদের] এই উপদেশ এক জোরালো আশা প্রকাশ করে।” যাকোব জানতেন যে, যিহোবা সবসময় অসিদ্ধ মানুষকে তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার জন্য প্রেমের সঙ্গে আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছেন। (২ বংশাবলি ১৫:২) যীশুর বলিদান, পূর্ণ অর্থে যিহোবার নিকটবর্তী হওয়ার পথ খুলে দিয়েছিল। (ইফিষীয় ৩:১১, ১২) আজকে, লক্ষ লক্ষ লোকের জন্য ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার পথ খুলে দেওয়া হয়েছে! কিন্তু, কীভাবে আমরা এই অপূর্ব সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারি? আমরা সংক্ষেপে তিনটে মাধ্যম সম্বন্ধে বিবেচনা করব, যেগুলোর দ্বারা আমরা যিহোবা ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে পারি।

ঈশ্বর সম্বন্ধে ‘জ্ঞান নিয়ে’ চলুন

৫, ৬. বালক শমূয়েলের উদাহরণ কীভাবে দেখায় যে, ঈশ্বর সম্বন্ধে ‘জ্ঞান নেওয়ার’ সঙ্গে কী জড়িত?

যোহন ১৭:৩ (NW) পদ অনুসারে, যীশু বলেছিলেন: “এটিই অনন্ত জীবন যে, তারা তোমার, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বর সম্বন্ধে এবং সেই ব্যক্তি যাঁকে তুমি পাঠিয়েছ অর্থাৎ যীশু খ্রীষ্ট সম্বন্ধে জ্ঞান নেয়।” এই পদের অনেক অনুবাদ নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরেজি) থেকে সামান্য ভিন্ন। ঈশ্বর সম্বন্ধে “জ্ঞান নেয়” বলার পরিবর্তে, এগুলো শুধু ঈশ্বরকে “জানা” বা ঈশ্বরকে “জানিতে পায়” ক্রিয়াপদ হিসেবে অনুবাদ করে। কিন্তু, অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি বলেছেন যে, মূল গ্রিক ভাষায় যে-শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে, সেটার অর্থের সঙ্গে আরও বেশি কিছু জড়িত—এক ক্রমাগত প্রক্রিয়া, যা এমনকি অন্যের সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে পরিচিত হতে পরিচালিত করতে পারে।

ঈশ্বরকে অন্তরঙ্গভাবে জানা যীশুর দিনে কোন নতুন ধারণা ছিল না। উদাহরণস্বরূপ, ইব্রীয় শাস্ত্রে আমরা পড়ি যে, শমূয়েল যখন বালক ছিলেন, তিনি “সেই সময়ে . . . সদাপ্রভুর পরিচয় পান নাই [“যিহোবাকে জানেন নাই,” NW]।” (১ শমূয়েল ৩:৭) এর অর্থ কি এই যে, শমূয়েল তার ঈশ্বর সম্বন্ধে খুব কমই জানতেন? না। নিশ্চিতভাবে, তার বাবামা এবং যাজকরা তাকে যথেষ্ট শিক্ষা দিয়েছিল। কিন্তু, একজন পণ্ডিত ব্যক্তির মতানুসারে, সেই পদে যে-ইব্রীয় শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, তা “সবচেয়ে অন্তরঙ্গ পরিচিতির ক্ষেত্রে ব্যবহার” করা যেতে পারে। শমূয়েল সেই সময় যিহোবাকে ততটা অন্তরঙ্গভাবে জানেননি, যতটা তিনি পরে যখন যিহোবার মুখপাত্র হিসেবে সেবা করেছিলেন, তখন জেনেছিলেন। শমূয়েল যতই বড় হতে থাকেন, তিনি প্রকৃতপক্ষে যিহোবাকে জানতে পেরেছিলেন, তাঁর সঙ্গে এক ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন।—১ শমূয়েল ৩:১৯, ২০.

৭, ৮. (ক) বাইবেলের গভীর শিক্ষাগুলো সম্বন্ধে আমাদের ভয় পাওয়া উচিত নয় কেন? (খ) ঈশ্বরের বাক্যের কিছু গভীর সত্য কী, যা আমাদের অধ্যয়ন করা উচিত?

আপনি কি যিহোবা সম্বন্ধে জ্ঞান নিচ্ছেন, যাতে তাঁর সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে পরিচিত হতে পারেন? তা করতে হলে, ঈশ্বর যে-আধ্যাত্মিক খাদ্য জুগিয়ে থাকেন, সেগুলোর জন্য আপনার ‘লালসা করা’ দরকার। (১ পিতর ২:২) মৌলিক বিষয়গুলো জেনেই সন্তুষ্ট থাকবেন না। বাইবেলের আরও গভীর কিছু শিক্ষা সম্বন্ধে জানার চেষ্টা করুন। (ইব্রীয় ৫:১২-১৪) আপনি কি এইধরনের শিক্ষাগুলোতে ভয় পান, মনে করেন যে সেগুলো অনেক কঠিন? যদি তাই হয়, তা হলে মনে রাখুন যে যিহোবা হলেন, “সর্বমহান শিক্ষক।” (যিশাইয় ৩০:২০, NW) তিনি জানেন যে, কীভাবে গভীর সত্যগুলো অসিদ্ধ মানুষের মনে প্রকাশ করা যায়। আর তিনি আপনাকে যে-শিক্ষা দেন, তা বোঝার জন্য আপনার আন্তরিক প্রচেষ্টায় তিনি আশীর্বাদ করতে পারেন।—গীতসংহিতা ২৫:৪.

‘ঈশ্বরের গভীর বিষয় সকলের’ কিছু নিয়ে আপনি নিজেই পরীক্ষা করুন না কেন? (১ করিন্থীয় ২:১০) এগুলো একঘেয়ে কোন বিষয় নয়, যেগুলো নিয়ে হয়তো ঈশ্বরতত্ত্ববিদ এবং পাদরিরা তর্ক করতে পারে। এগুলো জীবন্ত মতবাদ, যা আমাদের প্রেমময় পিতার মন ও হৃদয় সম্বন্ধে মনোরম অন্তর্দৃষ্টি দেয়। উদাহরণস্বরূপ, মুক্তির মূল্য, ‘নিগূঢ়তত্ত্ব’ এবং বিভিন্ন চুক্তি, যা যিহোবা তাঁর লোকেদের আশীর্বাদ ও তাঁর উদ্দেশ্যগুলো পরিপূর্ণ করার জন্য ব্যবহার করেছেন—এই বিষয়গুলো এবং এগুলোর মতো অন্যান্য অনেক বিষয় ব্যক্তিগত গবেষণা ও অধ্যয়নের জন্য অনেক আনন্দদায়ক এবং পরিতৃপ্তিকর প্রসঙ্গ।—১ করিন্থীয় ২:৭.

৯, ১০. (ক) গর্ব কেন বিপদজনক আর এটা এড়াতে কী আমাদের সাহায্য করবে? (খ) যিহোবা বিষয়ক জ্ঞানের ক্ষেত্রে কেন আমাদের নম্র হওয়ার প্রচেষ্টা করতে হবে?

গভীর আধ্যাত্মিক সত্যগুলো সম্বন্ধে আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি করার সঙ্গে সঙ্গে সেই জ্ঞান নেওয়ার সঙ্গে যে-বিপদ আসতে পারে, সেই সম্বন্ধে সতর্ক হোন—যেটা হল গর্ব। (১ করিন্থীয় ৮:১) গর্ব অত্যন্ত বিপদজনক কারণ এটা মানুষকে ঈশ্বরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। (হিতোপদেশ ১৬:৫; যাকোব ৪:৬) মনে রাখবেন যে, কোন মানুষেরই তার জ্ঞান নিয়ে গর্ব করার কোন কারণ নেই। উদাহরণ হিসেবে, একটা বইয়ের ভূমিকা থেকে নেওয়া এই কথাগুলো বিবেচনা করে দেখুন, যে-বইটা মানুষের সবচেয়ে সাম্প্রতিক বৈজ্ঞানিক উন্নতি সম্বন্ধে সমীক্ষা করে: “আমরা যত জানতে পারছি তত বেশি উপলব্ধি করছি যে, কত কমই না আমরা জানি। . . . যা কিছু আমরা শিখেছি, সেগুলো এখনও আমাদের যা কিছু শিখতে হবে, সেটার তুলনায় কিছুই নয়।” এইধরনের নম্রতা পরিতৃপ্তিদায়ক। এখন, সর্বোচ্চ জ্ঞানের ভাণ্ডার অর্থাৎ যিহোবা ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞানের ক্ষেত্রে নম্রতা বজায় রাখার আরও বেশি কারণ আমাদের রয়েছে। কেন?

১০ যিহোবা সম্বন্ধে বাইবেলের কিছু বিবৃতি লক্ষ করুন। “তোমার সঙ্কল্প সকল অতি গভীর।” (গীতসংহিতা ৯২:৫) “[যিহোবার] বুদ্ধির ইয়ত্তা নাই।” (গীতসংহিতা ১৪৭:৫) “[যিহোবার] বুদ্ধির অনুসন্ধান করা যায় না।” (যিশাইয় ৪০:২৮) “আহা! ঈশ্বরের ধনাঢ্যতা ও প্রজ্ঞা ও জ্ঞান কেমন অগাধ!” (রোমীয় ১১:৩৩) স্পষ্টতই, আমরা কখনও যিহোবা সম্বন্ধে যা জানার আছে, তা জেনে শেষ করতে পারব না। (উপদেশক ৩:১১) তিনি আমাদের অনেক অপূর্ব বিষয় শিখিয়েছেন কিন্তু আমাদের সামনে সবসময় জ্ঞানের অফুরন্ত ভাণ্ডার থাকবে, যেখান থেকে আমরা আরও শিখতে পারব। সেই সম্ভাবনা কি আমাদের কাছে রোমাঞ্চকর এবং গর্বহীন বলে মনে হয় না? তা হলে, আসুন আমরা যেন আমাদের জ্ঞানকে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার এবং অন্যদেরও তা করতে সাহায্য করার জন্য ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করি—কখনও নিজেকে অন্যদের চেয়ে উচ্চীকৃত করার জন্য নয়।—মথি ২৩:১২; লূক ৯:৪৮.

যিহোবার প্রতি আপনার প্রেম প্রকাশ করুন

১১, ১২. (ক) যিহোবা সম্বন্ধে আমরা যে-জ্ঞান নিই, তা কীভাবে আমাদের প্রভাবিত করে? (খ) ঈশ্বরের প্রতি একজন ব্যক্তির প্রেম আন্তরিক কি না, তা কোন্‌ বিষয়টা নির্ধারণ করে?

১১ উপযুক্তভাবেই, প্রেরিত পৌল জ্ঞান এবং প্রেমের মধ্যে এক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। তিনি লিখেছিলেন: “আমি এই প্রার্থনা করিয়া থাকি, তোমাদের প্রেম যেন তত্ত্বজ্ঞানে [“সঠিক জ্ঞানে,” NW] ও সর্ব্বপ্রকার সূক্ষ্মচৈতন্যে উত্তর উত্তর উপচিয়া পড়ে।” (ফিলিপীয় ১:৯) গর্বান্ধ না হয়ে বরং যিহোবা এবং তাঁর উদ্দেশ্যগুলো সম্বন্ধে আমরা যে-প্রত্যেক মূল্যবান সত্য শিখি, সেগুলো যেন আমাদের স্বর্গীয় পিতার প্রতি আমাদের প্রেম বাড়িয়ে তোলে।

১২ অবশ্য, অনেকে যারা দাবি করে যে তারা ঈশ্বরকে প্রেম করে, আসলে তারা তা করে না। তারা হয়তো তাদের হৃদয়ের দৃঢ় অনুভূতি সম্বন্ধে আন্তরিক। এইরকম অনুভূতি থাকা ভাল এমনকি প্রশংসাযোগ্য, যখন সেটা সঠিক জ্ঞানের সঙ্গে মিল রেখে হয়। কিন্তু, সেগুলো ঈশ্বরের প্রতি প্রকৃত প্রেম নয়। কেন নয়? লক্ষ করুন যে, ঈশ্বরের বাক্য এইধরনের প্রেমকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে: “ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই, যেন আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি।” (১ যোহন ৫:৩) তা হলে, যিহোবার প্রতি প্রেম একমাত্র তখনই আন্তরিক হয়, যখন তা বাধ্য কাজগুলোর মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

১৩. ঈশ্বরীয় ভয় কীভাবে যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেম দেখাতে সাহায্য করবে?

১৩ ঈশ্বরীয় ভয় আমাদের যিহোবার বাধ্য থাকতে সাহায্য করবে। যিহোবার প্রতি এই সশ্রদ্ধ ভয় এবং গভীর সম্মান আসে তাঁর সম্বন্ধে জ্ঞান নেওয়ার মাধ্যমে, তাঁর অসীম পবিত্রতা, মহিমা, ক্ষমতা, ন্যায়বিচার, প্রজ্ঞা ও প্রেম সম্বন্ধে জানার মাধ্যমে। এইধরনের ভয় তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বস্তুত, গীতসংহিতা ২৫:১৪ পদ কী বলে লক্ষ করুন: “সদাপ্রভুর গূঢ় মন্ত্রণা [“যিহোবার সঙ্গে অন্তরঙ্গতা,” NW] তাঁহার ভয়কারীদের অধিকার।” তাই, আমাদের প্রিয় স্বর্গীয় পিতাকে অখুশি করার গঠনমূলক ভয় যদি আমাদের থাকে, তা হলে আমরা তাঁর নিকটবর্তী হতে পারব। ঈশ্বরীর ভয় আমাদের হিতোপদেশ ৩:৬ পদে লিপিবদ্ধ এই বিজ্ঞ পরামর্শের প্রতি মনোযোগ দিতে সাহায্য করবে: “তোমার সমস্ত পথে তাঁহাকে স্বীকার কর; তাহাতে তিনি তোমার পথ সকল সরল করিবেন।” এর অর্থ কী?

১৪, ১৫. (ক) কিছু সিদ্ধান্ত কী, যা আমাদের প্রতিদিনকার জীবনে নিতে হয়? (খ) কীভাবে আমরা সিদ্ধান্তগুলো এমন উপায়ে নিতে পারি, যা ঈশ্বরীয় ভয়কে প্রতিফলিত করে?

১৪ আপনাকে প্রতিদিন ছোট বড় উভয় সিদ্ধান্তই নিতে হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনার সহকর্মী, সহপাঠী, পাড়াপ্রতিবেশীদের সঙ্গে আপনি কীধরনের কথাবার্তা বলবেন? (লূক ৬:৪৫) আপনার কাছে যে-কাজ আছে, তা করার জন্য আপনি কি কঠোর পরিশ্রম করবেন নাকি সামান্য পরিশ্রম করে তা শেষ করার উপায় খুঁজবেন? (কলসীয় ৩:২৩) আপনি কি যারা যিহোবার প্রতি সামান্য বা কোন প্রেমই দেখায় না, তাদের নিকটবর্তী হবেন নাকি আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তিদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবেন? (হিতোপদেশ ১৩:২০) ঈশ্বরের রাজ্যের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আপনি কী করবেন, এমনকি তা যদি ছোটখাটো কোন বিষয়ও হয়? (মথি ৬:৩৩) এখানে উল্লেখিত এইধরনের শাস্ত্রীয় নীতিগুলো যদি আপনাকে প্রতিদিন সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার বিষয়ে পরিচালনা দেয়, তা হলে আপনি সত্যিই “সমস্ত পথে” যিহোবাকে স্বীকার করছেন।

১৫ আসলে, আমরা যে-সিদ্ধান্তই নিই না কেন, আমাদের এই চিন্তাধারার দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত: ‘আমি কী করব বলে যিহোবা চান? কোন্‌ কাজটা তাঁকে সবচেয়ে বেশি খুশি করবে?’ (হিতোপদেশ ২৭:১১) এইভাবে যিহোবার প্রতি প্রেম প্রকাশ করতে ঈশ্বরীয় ভয় দেখানো হল এক উত্তম উপায়। ঈশ্বরীয় ভয় আমাদের শুচি থাকতেও প্রেরণা দেবে—আধ্যাত্মিকভাবে, নৈতিকভাবে এবং দৈহিকভাবে। মনে রাখবেন যে, যে-পদে যাকোব “ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী” হওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন, সেই একই পদে তিনি উপদেশ দিয়েছেন: “হে পাপিগণ, হস্ত শুচি কর; হে দ্বিমনা লোক সকল, হৃদয় বিশুদ্ধ কর।”—যাকোব ৪:৮.

১৬. যিহোবাকে দেওয়ার মাধ্যমে আমরা কখনও কী সম্পন্ন করতে পারি না কিন্তু কী করতে আমরা সবসময় সফল হতে পারি?

১৬ অবশ্য, যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেম প্রকাশ করার সঙ্গে শুধু যা খারাপ, তা থেকে দূরে থাকার চেয়ে আরও বেশি কিছুকে বোঝায়। এ ছাড়া, প্রেম আমাদের যা সঠিক, তা করতেও প্রেরণা দেয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যিহোবার অগাধ উদারতার প্রতি আমরা কীভাবে সাড়া দিই? যাকোব লিখেছিলেন: “সমস্ত উত্তম দান এবং সমস্ত সিদ্ধ বর উপর হইতে আইসে, জ্যোতির্গণের সেই পিতা হইতে নামিয়া আইসে।” (যাকোব ১:১৭) এটা ঠিক যে, আমরা যখন যিহোবাকে আমাদের সম্পদ দিই, তখন আমরা তাঁকে সমৃদ্ধ করি না। কারণ ইতিমধ্যেই যেসমস্ত বস্তু এবং সম্পদ রয়েছে, সেগুলো তাঁরই। (গীতসংহিতা ৫০:১২) আর আমরা যখন যিহোবাকে আমাদের সময় এবং শক্তি দিই, তখন আমরা এমন কোন চাহিদা পূরণ করছি না, যা কিনা তিনি মেটাতে পারেন না। এমনকি আমরা যদি ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করতে না-ও চাই, তিনি পাথরকে দিয়ে তা বলাতে পারেন! তা হলে, কেন যিহোবাকে আমাদের সম্পদ, সময় এবং শক্তি দেওয়া? মূলত, এভাবে আমরা আমাদের পূর্ণ অন্তঃকরণ, প্রাণ, মন এবং শক্তি দিয়ে তাঁর প্রতি প্রেম দেখাই।—মার্ক ১২:২৯, ৩০.

১৭. যিহোবাকে হৃষ্টচিত্তে দেওয়ার জন্য কোন্‌ বিষয়টা আমাদের প্রেরণা দিতে পারে?

১৭ আমরা যখন যিহোবাকে দিই, তখন আমাদের অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে দেওয়া উচিত “কেননা ঈশ্বর হৃষ্টচিত্ত দাতাকে ভালবাসেন।” (২ করিন্থীয় ৯:৭) দ্বিতীয় বিবরণ ১৬:১৭ পদে বলা নীতি আমাদের হৃষ্টচিত্তে দিতে সাহায্য করে: “প্রত্যেক জন তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভুর দত্ত আশীর্ব্বাদানুসারে আপন আপন সঙ্গতি অনুযায়ী উপহার দিবে।” আমরা যখন বিবেচনা করি যে, যিহোবা আমাদের ক্ষেত্রে কত উদার, তখন আমরা তাঁকে স্বেচ্ছায় দিতে চাই। এইধরনের দান তাঁর হৃদয়কে আনন্দিত করে, ঠিক যেমন একটা প্রিয় সন্তানের কাছ থেকে ছোট্ট উপহার পেয়ে বাবামা আনন্দিত হয়। এভাবে আমাদের প্রেম প্রকাশ করলে, তা আমাদের ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে সাহায্য করবে।

প্রার্থনার মাধ্যমে অন্তরঙ্গতা গড়ে তুলুন

১৮. আমাদের প্রার্থনার গুণগত মানকে কীভাবে আরও উন্নত করা যায়, তা বিবেচনা করা কেন উপযুক্ত?

১৮ আমাদের ব্যক্তিগত প্রার্থনার মুহূর্তগুলো অমূল্য সুযোগ করে দেয়—আমাদের স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে অন্তরঙ্গ হওয়া এবং ব্যক্তিগত কথাবার্তা বলা। (ফিলিপীয় ৪:৬) যেহেতু, ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হল প্রার্থনা, তাই একটু থেমে আমাদের প্রার্থনার গুণগত মান সম্বন্ধে বিবেচনা করা উপযুক্ত। সেগুলো বাগাড়ম্বরপূর্ণ আদর্শ এবং সংগঠিত হতে হবে, তা নয় কিন্তু সেগুলো যেন আন্তরিক অভিব্যক্তি হয়, যা হৃদয় থেকে আসে। কীভাবে আমরা আমাদের প্রার্থনার গুণগত মানকে উন্নত করতে পারি?

১৯, ২০. প্রার্থনা করার আগে কেন ধ্যান করব এবং এইধরনের ধ্যান করার জন্য কিছু উপযুক্ত বিষয় কী?

১৯ আমরা হয়তো প্রার্থনার আগে ধ্যান করতে পারি। আমরা যদি আগে থেকেই কিছু সময় ধ্যান করি, তা হলে আমরা আমাদের প্রার্থনাকে নির্দিষ্ট ও অর্থপূর্ণ করতে পারব এবং এভাবে শব্দসমষ্টির পুনরাবৃত্তি করার অভ্যাস এড়িয়ে চলব, যা সুপরিচিত এবং সহজেই মনে আসে। (হিতোপদেশ ১৫:২৮, ২৯) সম্ভবত কিছু বিষয় নিয়ে চিন্তা করা, যা যীশু তাঁর আদর্শ প্রার্থনায় উল্লেখ করেছিলেন এবং এরপর সেগুলো কীভাবে আমাদের নিজেদের পরিস্থিতির সঙ্গে যুক্ত, তা বিবেচনা করা সাহায্যকারী হতে পারে। (মথি ৬:৯-১৩) উদাহরণস্বরূপ, আমরা হয়তো নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি যে, এই পৃথিবীতে যিহোবার ইচ্ছা পালন করার জন্য আমরা কোন্‌ সামান্য ভূমিকা পালন করব বলে আশা করি। আমরা কি যিহোবার কাছে আমাদের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করতে পারি, যাতে যথাসম্ভব তাঁর কার্যকারী হতে পারি এবং যে-দায়িত্বই তিনি আমাদের দিন না কেন, তা করার জন্য তিনি যেন আমাদের সাহায্য করেন, সেটার জন্য অনুরোধ জানাতে পারি? আমাদের বস্তুগত চাহিদাগুলোর চিন্তায় আমরা কি ভারগ্রস্ত? কোন্‌ পাপের জন্য আমাদের ক্ষমার প্রয়োজন এবং কার প্রতি আমাদের আরও বেশি ক্ষমা দেখানোর প্রয়োজন? কোন্‌ তাড়নাগুলো আমাদের কষ্ট দেয় এবং আমরা কি বুঝতে পারি যে, সেই বিষয়ে আমাদের যিহোবার সুরক্ষা কত জরুরি?

২০ এ ছাড়া, আমরা সেই সমস্ত লোকেদের বিষয়ে চিন্তা করতে পারি, যাদের নির্দিষ্টভাবে যিহোবার সাহায্য দরকার। (২ করিন্থীয় ১:১১) কিন্তু, ধন্যবাদ দেওয়ার বিষয়টাও ভুলে যাওয়ার মতো নয়। আমরা যদি একটু থেমে চিন্তা করি, তা হলে নিশ্চিতভাবে আমরা রোজ যিহোবাকে ধন্যবাদ দেওয়ার এবং তাঁর অগাধ মঙ্গলভাবের জন্য তাঁর প্রশংসা করার অনেক কারণ পাব। (দ্বিতীয় বিবরণ ৮:১০; লূক ১০:২১) তা করা আরও উপকার নিয়ে আসে—এটা আমাদের জীবনের প্রতি আরও ইতিবাচক ও কৃতজ্ঞ মনোভাব অর্জন করতে সাহায্য করতে পারে।

২১. আমরা যখন প্রার্থনায় যিহোবার নিকটবর্তী হই, তখন কোন্‌ শাস্ত্রীয় উদাহরণগুলো আমাদের সাহায্য করতে পারে?

২১ অধ্যয়ন আমাদের প্রার্থনার মানকেও উন্নত করতে পারে। বিশ্বস্ত নারী-পুরুষদের উল্লেখযোগ্য প্রার্থনা সম্বন্ধে ঈশ্বরের বাক্যে বলা আছে। উদাহরণস্বরূপ, কঠিন কোন সমস্যা যদি আমাদের সামনে আসে, আমাদের কোন উদ্বেগের কারণ হয় ও এমনকি আমাদের বা আমাদের প্রিয়জনদের মঙ্গলের পক্ষে আতঙ্কজনক হয়, তা হলে আমরা হয়তো যাকোবের প্রার্থনা পড়তে পারি, যিনি তার প্রতিশোধপরায়ণ ভাই এষৌর সঙ্গে মিলিত হওয়ার আগে করেছিলেন। (আদিপুস্তক ৩২:৯-১২) অথবা আমরা রাজা আসার প্রার্থনা সম্বন্ধে অধ্যয়ন করতে পারি, যিনি প্রায় দশ লক্ষ ইথিওপীয় সৈন্য যখন ঈশ্বরের লোকেদের জন্য ভীতিজনক হয়েছিল, তখন করেছিলেন। (২ বংশাবলি ১৪:১১, ১২) আমরা যদি কোন সমস্যার দ্বারা জর্জরিত হই, যা যিহোবার সুনামের ওপর নিন্দা নিয়ে আসার ভয় রাখে, তা হলে কর্মিল পর্বতে বাল উপাসনাকারীদের সামনে এলিয়ের প্রার্থনা বিবেচনা করা উত্তম, ঠিক যেমন যিরূশালেমের মন্দ অবস্থার জন্য নহিমিয় করেছিলেন। (১ রাজাবলি ১৮:৩৬, ৩৭; নহিমিয় ১:৪-১১) এইধরনের প্রার্থনা সম্বন্ধে পড়া এবং ধ্যান করা আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে এবং আমাদের ধারণা দিতে পারে যে, যে-উদ্বেগগুলো আমাদের ভারগ্রস্ত করে সেগুলো সহ কীভাবে যিহোবার নিকটবর্তী হওয়া যায়।

২২. দুহাজার তিন সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদ কী এবং বছর জুড়ে আমরা হয়তো কোন্‌ প্রশ্ন নিজেদের মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করতে পারি?

২২ স্পষ্টতই, ‘ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হওয়ার’ বিষয়ে যাকোবের পরামর্শে মনোযোগ দেওয়ার চেয়ে সম্মানীয় এবং উত্তম লক্ষ্য আর কিছু হতে পারে না। (যাকোব ৪:৮) ঈশ্বরের সম্বন্ধে জ্ঞান নিয়ে, তাঁর প্রতি আমাদের প্রেমকে আরও বেশি করে প্রকাশ করার উপায় খুঁজে এবং আমাদের প্রার্থনায় মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে অন্তরঙ্গতা গড়ে তুলে আমরা যেন তা করি। ২০০৩ সাল জুড়ে, বার্ষিক শাস্ত্রপদ হিসেবে যাকোব ৪:৮ পদ মনে রেখে আসুন আমরা নিজেদের পরীক্ষা করি যে, প্রকৃতপক্ষে আমরা যিহোবার নিকটবর্তী হচ্ছি কি না। কিন্তু, এর পরের উক্তি সম্বন্ধে কী বলা যায়? কোন্‌ অর্থে যিহোবা আপনার “নিকটবর্তী” হবেন এবং এর থেকে কোন্‌ উপকারগুলো আসে? পরের প্রবন্ধ এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে।

আপনি কি মনে করতে পারেন?

• কেন ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়া গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার মতো এক বিষয়?

• কিছু লক্ষ্য কী, যা আমরা যিহোবা সম্বন্ধে জ্ঞান নেওয়ার জন্য স্থাপন করতে পারি?

• কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, যিহোবার প্রতি আমাদের আন্তরিক প্রেম আছে?

• কোন্‌ কোন্‌ উপায়ে আমরা প্রার্থনার মাধ্যমে যিহোবার সঙ্গে আরও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১২ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

২০০৩ সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদ হবে: “ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও, তাহাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন।”—যাকোব ৪:৮.

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

পরিপক্ব হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শমূয়েল যিহোবাকে অন্তরঙ্গভাবে জেনেছিলেন

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

কর্মিল পর্বতে এলিয় যে-প্রার্থনা করেছিলেন, তা আমাদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ