সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আগের চেয়ে এখন আরও বেশি করে জেগে থাকুন!

আগের চেয়ে এখন আরও বেশি করে জেগে থাকুন!

আগের চেয়ে এখন আরও বেশি করে জেগে থাকুন!

“আইস, আমরা অন্য সকলের ন্যায় নিদ্রা না যাই, বরং জাগিয়া থাকি ও মিতাচারী হই।”—১ থিষলনীকীয় ৫:৬.

১, ২. (ক) পম্পেই এবং হারকুলেনিয়াম কীধরনের শহর ছিল? (খ) পম্পেই এবং হারকুলেনিয়ামের অনেক অধিবাসী কোন সতর্কবাণীতে মনোযোগ দেয়নি এবং এর ফল কী হয়েছিল?

 আমাদের সাধারণ কালের প্রথম শতাব্দীতে, ভিসুভিয়াস পর্বতের কাছে অবস্থিত পম্পেই এবং হারকুলেনিয়াম ছিল দুটো সমৃদ্ধ রোমীয় শহর। সম্পদশালী রোমীয়দের জন্য সেগুলো ছিল জনপ্রিয় চিত্তবিনোদনের স্থান। সেখানকার নাট্যশালাগুলোতে এক হাজারেরও বেশি দর্শক ধরত আর পম্পেই শহরে এক বিরাট রঙ্গমঞ্চ ছিল, যেখানে প্রায় পুরো শহরের লোকেরা বসতে পারত। পম্পেইয়ের খননকারীরা মোট ১১৮টা পানশালা এবং সরাইখানা পেয়েছে, যেগুলোর মধ্যে কিছু কিছু জুয়াখেলার ঘর বা পতিতালয় ছিল। অনৈতিকতা এবং বস্তুবাদিতা সর্বত্র ছড়িয়ে ছিল, যেমন প্রাচীরের চিত্রকর্ম এবং অন্যান্য ধ্বংসাবশেষগুলো প্রমাণ করে।

সাধারণ কাল ৭৯ সালের ২৪শে আগস্ট ভিসুভিয়াস পর্বতে অগ্ন্যুৎপাত হতে শুরু করে। আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞরা মনে করে যে প্রথম বিস্ফোরণ, যার ফলে দুটো শহরের ওপর লাভা এবং ভস্ম বর্ষিত হয়, তা সম্ভবত অধিবাসীদের পালিয়ে যাওয়া থেকে বিরত করেনি। আবার অনেকে পালিয়েও গিয়েছিল। কিন্তু, অন্য যে-ব্যক্তিরা বিপদের প্রতি কোনো ভ্রূক্ষেপই করেনি বা বিপদসংকেতকে উপেক্ষা করেছিল, তারা থেকে যাবে বলে ঠিক করেছিল। এরপর প্রায় মধ্যরাতে অত্যন্ত উত্তপ্ত গ্যাস, লাভা এবং শিলার আকস্মিক সম্প্রপাত প্রচণ্ড বেগে হারকুলেনিয়ামে নেমে আসে এবং সেই শহরের বাকি সমস্ত অধিবাসীদের মৃত্যু ঘটায়। পরের দিন ভোরবেলায় একইরকমের আকস্মিক সম্প্রপাত পম্পেইয়ের সবাইকে ধ্বংস করে দেয়। বিপদসংকেতে মনোযোগ না দেওয়ার পরিণতি কতই না দুঃখজনক!

যিহুদি বিধিব্যবস্থার শেষ

৩. যিরূশালেমের ধ্বংস এবং পম্পেই ও হারকুলেনিয়ামের ধ্বংসের মধ্যে কোন মিল রয়েছে?

পম্পেই এবং হারকুলেনিয়ামের আতঙ্কজনক পরিণতি থেকে নয় বছর আগে ঘটা যিরূশালেমের আকস্মিক ধ্বংস আরও বেশি ভয়ানক ছিল, যদিও সেই বিপর্যয়ের কারণ মানুষই ছিল। এটাকে “ইতিহাসের সবচেয়ে শোচনীয় একটা আক্রমণ” হিসেবে বর্ণনা করে জানানো হয় যে, এতে দশ লক্ষেরও বেশি যিহুদির মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু পম্পেই এবং হারকুলেনিয়ামের আকস্মিক দুর্ঘটনার মতো যিরূশালেমের ধ্বংসও কোনো সাবধানবাণী ছাড়াই ঘটেনি।

৪. বিধিব্যবস্থার শেষ যে খুব কাছে, সেই সম্বন্ধে যিশু তাঁর অনুসারীদের সাবধান করে দেওয়ার জন্য কোন ভবিষ্যদ্বাণীমূলক চিহ্ন দিয়েছিলেন এবং কীভাবে তা প্রথম শতাব্দীতে প্রাথমিকভাবে পরিপূর্ণ হয়েছিল?

যিশু খ্রিস্ট সেই শহরের ধ্বংস সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন এবং তিনি কিছু ঘটনার কথা বলেছিলেন, যেগুলো এর আগেই ঘটবে—এইধরনের অশান্ত ঘটনাগুলো যেমন যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, ভূমিকম্প এবং অধর্মাচরণ। মিথ্যা ভাববাদীরা সক্রিয় হবে কিন্তু ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার সারা পৃথিবীতে প্রচারিত হবে। (মথি ২৪:৪-৭, ১১-১৪) যদিও যিশুর কথাগুলো আজকে বিরাট আকারে পরিপূর্ণ হয়েছে কিন্তু সেই সময় সেগুলো ছোট আকারে পরিপূর্ণ হয়েছিল। ইতিহাসে যিহূদার চরম দুর্ভিক্ষ সম্বন্ধে লিপিবদ্ধ আছে। (প্রেরিত ১১:২৮) যিহুদি ইতিহাসবেত্তা জোসিফাস যিরূশালেমের একটা ভূমিকম্পের বিষয়ে উল্লেখ করেন, যা ওই শহর ধ্বংস হওয়ার কিছুকাল আগে হয়েছিল। যখন যিরূশালেমের শেষ এগিয়ে এসেছিল, সেই সময় সেখানে অবিরত বিদ্রোহ, যিহুদি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আভ্যন্তরীণ যুদ্ধ এবং যে-শহরে যিহুদি ও পরজাতীয়রা বাস করত, সেগুলোর কয়েকটাতে গণহত্যা লেগেই ছিল। তা সত্ত্বেও, রাজ্যের সুসমাচার “আকাশমণ্ডলের অধঃস্থিত সমস্ত সৃষ্টির কাছে” প্রচারিত হয়েছিল।—কলসীয় ১:২৩.

৫, ৬. (ক) সাধারণ কাল ৬৬ সালে যিশুর কোন ভবিষ্যদ্বাণীমূলক কথাগুলো পরিপূর্ণ হয়েছিল? (খ) অবশেষে, সা.কা. ৭০ সালে যখন যিরূশালেম পতিত হয়, তখন কেন অনেক লোক মারা গিয়েছিল?

অবশেষে সা.কা. ৬৬ সালে যিহুদিরা রোমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। সেস্টিয়াস গ্যালাস যখন যিরূশালেম আক্রমণ করার জন্য সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তখন যিশুর অনুসারীরা তাঁর এই কথাগুলো স্মরণ করেছিল: “যখন তোমরা যিরূশালেমকে সৈন্যসামন্ত দ্বারা বেষ্টিত দেখিবে, তখন জানিবে যে, তাহার ধ্বংস সন্নিকট। তখন যাহারা যিহূদিয়ায় থাকে, তাহারা পাহাড় অঞ্চলে পলায়ন করুক, এবং যাহারা নগরের মধ্যে থাকে, তাহারা বাহিরে যাউক; আর যাহারা পল্লীগ্রামে থাকে, তাহারা নগরে প্রবেশ না করুক।” (লূক ২১:২০, ২১) যিরূশালেম ছেড়ে চলে যাবার সময় এসেছিল—কিন্তু কীভাবে? অপ্রত্যাশিতভাবে, গ্যালাস তার সেনাবাহিনীকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন আর তা যিরূশালেম ও যিহূদার খ্রিস্টানদের জন্য যিশুর কথাগুলোতে মনোযোগ দেওয়ার এবং পর্বতে পালিয়ে যাওয়ার পথ খুলে দিয়েছিল।—মথি ২৪:১৫, ১৬.

চার বছর পর, নিস্তারপর্বের কাছাকাছি সময়ে রোমীয় সেনাবাহিনী সেনাপতি টাইটাসের নেতৃত্বে আবার ফিরে আসে আর সেনাপতি টাইটাস যিহুদি বিদ্রোহকে একেবারে উচ্ছেদ করে দেওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। তার সেনারা যিরূশালেম অবরোধ করে এবং “চারিদিকে জাঙ্গাল” বাঁধে, যার ফলে পালানো অসম্ভব হয়ে ওঠে। (লূক ১৯:৪৩, ৪৪) যুদ্ধের আশঙ্কা সত্ত্বেও, রোমীয় সাম্রাজ্যের সমস্ত জায়গা থেকে যিহুদিরা নিস্তারপর্ব পালনের জন্য দলে দলে যিরূশালেমে আসে। তখন তারা ফাঁদে আটকা পড়ে যায়। জোসিফাসের মতানুসারে, এই অসহায় দর্শনার্থীরাই রোমীয় আক্রমণের বেশির ভাগ শিকারে পরিণত হয়েছিল। * অবশেষে, যিরূশালেম যখন পতিত হয়, তখন রোমীয় সাম্রাজ্যের প্রায় সাত ভাগের এক ভাগ যিহুদি প্রাণ হারায়। যিরূশালেম ও এর মন্দির ধ্বংস হয়ে যাওয়ার অর্থ ছিল যিহুদি রাজ্য এবং মোশির ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে এর ধর্মীয় ব্যবস্থার অবসান। *মার্ক ১৩:১, ২.

৭. কেন বিশ্বস্ত খ্রিস্টানরা যিরূশালেমের ধ্বংস থেকে রক্ষা পেয়েছিল?

সাধারণ কাল ৭০ সালে যিহুদি খ্রিস্টানরা মারা যেতে বা যিরূশালেমের বাকি সকলের সঙ্গে বন্দিত্বে চলে যেতে পারত। কিন্তু, ঐতিহাসিক প্রমাণ অনুসারে তারা ৩৭ বছর আগে দেওয়া যিশুর সাবধানবাণীতে মনোযোগ দিয়েছিল। তারা শহর ছেড়ে চলে গিয়েছিল এবং আর ফিরে আসেনি।

প্রেরিতদের কাছ থেকে সময়োপযোগী সাবধানবাণী

৮. পিতর কোন বিষয়টার প্রয়োজন বোধ করেছিলেন এবং যিশুর কোন কথাগুলো হয়তো তার মনে ছিল?

আজকে আরও ব্যাপক ধ্বংস নিকটবর্তী, যা সমস্ত বিধিব্যবস্থার শেষ নিয়ে আসবে। যিরূশালেম ধ্বংস হওয়ার ছয় বছর আগে প্রেরিত পিতর জরুরি এবং সময়োপযোগী পরামর্শ দিয়েছিলেন, যা বিশেষ করে আমাদের দিনের খ্রিস্টানদের বেলায় প্রযোজ্য: সতর্ক থাক! পিতর খ্রিস্টানদের “সরল চিত্তকে” জাগিয়ে তোলার প্রয়োজন বোধ করেছিলেন, যাতে তারা ‘প্রভু’ যিশু খ্রিস্টের “আজ্ঞা” অবহেলা না করে। (২ পিতর ৩:১, ২) খ্রিস্টানদের সতর্ক থাকার বিষয়ে অনুরোধ করার সময় পিতরের মনে হয়তো সেই বিষয়টা ছিল, যা তিনি যিশুকে তাঁর মৃত্যুর কিছুদিন আগে প্রেরিতদের বলতে শুনেছিলেন: “সাবধান, তোমরা জাগিয়া থাকিও ও প্রার্থনা করিও; কেননা সে সময় কবে হইবে, তাহা জান না।”—মার্ক ১৩:৩৩.

৯. (ক) কেউ কেউ কোন বিপদজনক মনোভাব গড়ে তুলতে পারে? (খ) সন্দেহবাদী মনোভাব বিশেষ করে কেন বিপদজনক?

আজকে, কেউ কেউ উপহাস করে জিজ্ঞেস করে: “তাঁহার আগমনের প্রতিজ্ঞা কোথায়?” (২ পিতর ৩:৩, ৪) স্পষ্টতই, সেই ব্যক্তিরা মনে করে যে, আসলে কখনও পরিস্থিতির পরিবর্তিন হয় না কিন্তু জগৎ সৃষ্টির শুরু থেকে যেমন আছে সবসময় তেমনই রয়ে যায়। এইধরনের সন্দেহবাদ বিপদজনক। সন্দেহ আমাদের তৎপরতার মনোভাবকে দুর্বল করে দিতে পারে, নিজের স্বার্থের প্রতি বেশি মনোযোগ দিতে প্রভাবিত করতে পারে। (লূক ২১:৩৪) এ ছাড়া, পিতর যেমন বলেছেন যে, এইধরনের উপহাসকারীরা নোহের দিনের জলপ্লাবনের কথা ভুলে গিয়েছে, যা সম্পূর্ণ জগৎ বিধিব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। সেই সময় বাস্তবিকই জগৎ পরিবর্তিত হয়েছিল!—আদিপুস্তক ৬:১৩, ১৭; ২ পিতর ৩:৫, ৬.

১০. কোন কথাগুলোর মাধ্যমে পিতর সেই সমস্ত ব্যক্তিদের উৎসাহ দিয়েছিলেন, যারা অধৈর্য হয়ে পড়েছিল?

১০ পিতর তার পাঠকদের ধৈর্য গড়ে তুলতে সাহায্য করেন এটা মনে করিয়ে দেওয়ার দ্বারা যে, কেন ঈশ্বর প্রায়ই তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নেন না। প্রথমে, পিতর বলেন: “প্রভুর [“যিহোবার,” NW] কাছে এক দিন সহস্র বৎসরের সমান, এবং সহস্র বৎসর এক দিনের সমান।” (২ পিতর ৩:৮) যেহেতু যিহোবা অনন্তকাল স্থায়ী, তাই তিনি সমস্ত বিষয় বিবেচনায় আনতে এবং পদক্ষেপ নেওয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় বেছে নিতে পারেন। এরপর পিতর যিহোবার এই ইচ্ছার কথা উল্লেখ করেন যে, সমস্ত জায়গার লোকেরা যেন অনুতপ্ত হয়। ঈশ্বরের ধৈর্য মানে এমন অনেকের জন্য পরিত্রাণ, যারা মারা পড়ত যদি তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নিতেন। (১ তীমথিয় ২:৩, ৪; ২ পিতর ৩:৯) কিন্তু, যিহোবার ধৈর্য মানে এই নয় যে, তিনি কখনও পদক্ষেপ নেবেন না। পিতর বলেছেন, “প্রভুর [“যিহোবার,” NW] দিন চোর ন্যায় আসিবে।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)—২ পিতর ৩:১০.

১১. কী আমাদের আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে জেগে থাকতে সাহায্য করবে এবং কীভাবে এটা বলতে গেলে যিহোবার দিনকে ‘ত্বরান্বিত করে’?

১১ পিতরের তুলনা উল্লেখযোগ্য ছিল। চোরদের ধরা খুব সহজ নয় কিন্তু একজন প্রহরী, যিনি মাঝে মাঝে তন্দ্রা যান, তার চেয়ে যিনি সারারাত জেগে থাকেন তিনি আরও ভাল চোর ধরতে পারেন। কীভাবে একজন প্রহরী জেগে থাকতে পারেন? সতর্ক থাকার জন্য সারারাত বসে না থেকে হাঁটাচলা করা আরও বেশি উপকারী। একইভাবে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে সক্রিয় থাকা খ্রিস্টানদের জেগে থাকতে সাহায্য করবে। তাই, পিতর আমাদের “পবিত্র আচার ব্যবহার ও ভক্তিতে” ব্যস্ত থাকতে অনুরোধ জানিয়েছেন। (২ পিতর ৩:১১) এইধরনের কাজ আমাদের সবসময় “ঈশ্বরের সেই দিনের আগমনের . . . আকাঙ্ক্ষা করিতে” সাহায্য করবে। যে-গ্রিক শব্দকে ‘আকাঙ্ক্ষা করা’ হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটার আক্ষরিক অনুবাদ হতে পারে ‘ত্বরান্বিত করা।’ (২ পিতর ৩:১২; পাদটীকা) এটা ঠিক যে, আমরা যিহোবার সময়সূচির পরিবর্তন করতে পারি না। তাঁর দিন তাঁর নিরূপিত সময়েই আসবে। কিন্তু, এখন থেকে তখন পর্যন্ত সময় নিশ্চয়ই আরও দ্রুত কেটে যাবে, যদি আমরা তাঁর সেবায় ব্যস্ত থাকি।—১ করিন্থীয় ১৫:৫৮.

১২. ব্যক্তিগতভাবে আমরা কীভাবে যিহোবার ধৈর্য থেকে উপকার পেতে পারি?

১২ তাই, যে-ব্যক্তি মনে করে যে, যিহোবার দিন আসতে বিলম্ব করছে তাদের যিহোবার নিরূপিত সময়ের জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার জন্য পিতরের এই পরামর্শে মনোযোগ দিতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। সত্যিই, ঈশ্বর ধৈর্য ধরে যে-অতিরিক্ত সময় দিয়েছেন, তা আমরা বিজ্ঞতার সঙ্গে কাজে লাগাতে পারি। উদাহরণস্বরূপ, আমরা গুরুত্বপূর্ণ খ্রিস্টীয় গুণাবলি ক্রমাগত গড়ে তুলতে পারি ও সেইসঙ্গে যাদের কাছে সম্ভব তাদের চেয়ে আরও বেশি লোকের কাছে সুসমাচার প্রচার করতে পারি। আমরা যদি জেগে থাকি, তা হলে যিহোবা এই বিধিব্যবস্থার শেষে আমাদের “নিষ্কলঙ্ক ও নির্দ্দোষ অবস্থায় শান্তিতে” দেখতে পাবেন। (২ পিতর ৩:১৪, ১৫) সেটা কত আশীর্বাদজনকই না হবে!

১৩. থিষলনীকীর খ্রিস্টানদের উদ্দেশে বলা পৌলের কোন কথাগুলো আজকে বিশেষভাবে উপযুক্ত?

১৩ পৌল থিষলনীকীর খ্রিস্টানদের উদ্দেশে লেখা তার প্রথম চিঠিতে জেগে থাকার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধেও বলেছেন। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন: “আইস, আমরা অন্য সকলের ন্যায় নিদ্রা না যাই, বরং জাগিয়া থাকি ও মিতাচারী হই।” (১ থিষলনীকীয় ৫:২, ৬) আজকে, সম্পূর্ণ জগৎ ব্যবস্থার ধ্বংস যেহেতু এগিয়ে আসছে, তাই এটা কতই না জরুরি! যিহোবার উপাসকরা আধ্যাত্মিক বিষয়ের প্রতি উদাসীনতায় ভরা এক জগতে বাস করছে এবং এটা তাদের প্রভাবিত করতে পারে। তাই পৌল পরামর্শ দেন: “আইস, মিতাচারী হই, বিশ্বাস ও প্রেমরূপ বুকপাটা পরি, এবং পরিত্রাণের আশারূপ শিরস্ত্র মস্তকে দিই।” (১ থিষলনীকীয় ৫:৮) নিয়মিত ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন এবং সভাগুলোতে আমাদের ভাইবোনদের সঙ্গে নিয়মিত মেলামেশা আমাদের পৌলের পরামর্শ মেনে চলতে এবং তৎপরতার মনোভাব বজায় রাখতে সাহায্য করবে।—মথি ১৬:১-৩.

লক্ষ লক্ষ লোক জেগে আছে

১৪. কোন পরিসংখ্যান দেখায় যে, আজকে অনেকে জেগে থাকার বিষয়ে পিতরের পরামর্শ মেনে চলছে?

১৪ আজকে কি এমন অনেক ব্যক্তি আছে, যারা সতর্ক থাকার অনুপ্রাণিত উৎসাহে মনোযোগ দেন? হ্যাঁ, আছে। ২০০২ সালের পরিচর্যা বছরে সর্বোচ্চ ৬৩,০৪,৬৪৫ জন প্রকাশক—২০০১ সাল থেকে শতকরা ৩.১ ভাগ বৃদ্ধি—অন্যদের সঙ্গে ১২০,২৩,৮১,৩০২ ঘন্টা ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে কথা বলে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে সতর্ক থাকার প্রমাণ দিয়েছে। তাদের কাছে এইধরনের কাজ হালকাভাবে নেওয়ার মতো কোনো বিষয় ছিল না। এটা তাদের জীবনের প্রধান অংশ ছিল। তাদের অনেকের মনোভাব এল সালভাডরের এডুয়ার্ডো এবং নোইমির মতো উদাহরণের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।

১৫. এল সালভাডরের কোন অভিজ্ঞতা দেখায় যে, অনেকে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে সতর্ক আছে?

১৫ কয়েক বছর আগে, এডুয়ার্ডো এবং নোইমি, পৌলের এই কথাগুলোতে মনোযোগ দিয়েছিল: “সংসারের অভিনয় অতীত হইতেছে।” (১ করিন্থীয় ৭:৩১) তারা তাদের জীবনকে সাধাসিধে করেছিল এবং পূর্ণ-সময়ের অগ্রগামী পরিচর্যা শুরু করেছিল। সময় পেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা অনেকভাবে আশীর্বাদ পেয়েছিল ও এমনকি সীমা এবং জেলার কাজে অংশ নিয়েছিল। গুরুতর সমস্যা থাকা সত্ত্বেও এডুয়ার্ডো ও নোইমি দৃঢ় প্রত্যয়ী যে, তারা সঠিক সিন্ধান্ত নিয়েছে যখন তারা পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যার জন্য বস্তুগত আরাম-আয়েশ ত্যাগ করেছিল। এল সালভাডরের ২৯,২৬৯ জন প্রকাশকের মধ্যে অনেকে—ও সেইসঙ্গে ২,৪৫৪ জন অগ্রগামী—একই আত্মত্যাগের মনোভাব দেখিয়েছে আর এটা ছিল একটা কারণ যার ফলে সেই দেশে প্রকাশকের সংখ্যা গত বছরের চেয়ে শতকরা ২ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

১৬. কোট ডিভোরে একজন যুবক ভাই কীধরনের মনোভাব দেখিয়েছে?

১৬ কোট ডিভোরে, একজন যুবক খ্রিস্টান একই মনোভাব দেখিয়েছে, যে শাখা অফিসকে লিখেছিল: “আমি একজন পরিচারক দাস হিসেবে সেবা করছি। কিন্তু আমি নিজে এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন না করে ভাইদের অগ্রগামীর কাজ করতে বলতে পারি না। তাই, আমি খুব ভাল বেতনের একটা চাকরি ছেড়ে দিই আর এখন নিজের ব্যাবসা দেখাশোনা করছি, যা আমাকে পরিচর্যায় আরও বেশি সময় দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।” এই যুবক ৯৮৩ জন অগ্রগামীর মধ্যে একজন, যারা কোট ডিভোরে সেবা করছে, যে-দেশ গত বছর ৬,৭০১ জন প্রকাশকের রিপোর্ট দিয়েছিল, যা শতকরা ৫ ভাগ বৃদ্ধি।

১৭. বেলজিয়ামে, একজন যুবতী সাক্ষি কীভাবে দেখিয়েছিল যে, সে ভুল ধারণার কারণে ভয় পেয়ে যায়নি?

১৭ অসহিষ্ণুতা, ভুল ধারণা এবং দলাদলি বেলজিয়ামের ২৪,৯৬১ জন রাজ্য প্রকাশকের জন্য সবসময় বিভিন্ন সমস্যার কারণ হয়ে আসছে। তা সত্ত্বেও, তারা উদ্যোগী কিন্তু ভয় পাওয়ার পাত্র নয়। ১৬ বছর বয়সী একজন সাক্ষি যখন স্কুলে নীতিশিক্ষার ক্লাসে যিহোবার সাক্ষিদের এক গোঁড়া সম্প্রদায় হিসেবে বর্ণনা করতে শোনে, তখন সে আসল বিষয়টা তুলে ধরার জন্য অনুমতি চায়। যিহোবার সাক্ষীরা—নামের পিছনে যে সংগঠন (ইংরেজি) ভিডিও এবং যিহোবার সাক্ষিরা—তারা কারা? ব্রোশার ব্যবহার করে সে বোঝাতে পেরেছিল যে, যিহোবার সাক্ষিরা আসলে কারা। সেই তথ্যের প্রতি অনেক উপলব্ধি দেখানো হয়েছিল এবং পরের সপ্তাহে সমস্ত ছাত্রছাত্রীকে একটা পরীক্ষা দিতে হয়েছিল, যেখানে সমস্ত প্রশ্ন যিহোবার সাক্ষিদের খ্রিস্টীয় ধর্ম সম্বন্ধে ছিল।

১৮. কোন প্রমাণ রয়েছে যে, আর্থিক সমস্যার কারণে আর্জেন্টিনা এবং মোজাম্বিকের প্রকাশকরা যিহোবার সেবা থেকে সরে পড়েনি?

১৮ বেশির ভাগ খ্রিস্টানকে এই শেষকালে অনেক গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তবুও, তারা সরে না পড়ার চেষ্টা করে। আর্থিক সমস্যা সম্বন্ধে খুব ভালভাবে জানা সত্ত্বেও আর্জেন্টিনা গত বছরে নতুন সর্বোচ্চ ১,২৬,৭০৯ জন সাক্ষি সম্বন্ধে রিপোর্ট করে। মোজাম্বিকে এখনও দরিদ্রতা রয়েছে। তবুও, ৩৭,৫৬৩ জন সাক্ষ্যদানের কাজ সম্বন্ধে রিপোর্ট করেছে, যা হল শতকরা ৪ ভাগ বৃদ্ধি। আলবানিয়াতে অনেকের জন্য জীবন অত্যন্ত কষ্টকর কিন্তু সেই দেশ শতকরা ১২ ভাগ বৃদ্ধির চমৎকার রিপোর্ট করে, সর্বোচ্চ প্রকাশকের সংখ্যা ২,৭০৮ জনে গিয়ে পৌঁছেছে। স্পষ্টতই, যিহোবার আত্মা সমস্যাপূর্ণ পরিস্থিতির মাধ্যমে থেমে থাকে না, যখন তাঁর লোকেরা রাজ্যের কাজকে প্রথমে রাখে।—মথি ৬:৩৩.

১৯. (ক) কী প্রমাণ দেয় যে, এখনও এমন অনেক মেষতুল্য ব্যক্তি রয়েছে, যারা বাইবেলের সত্যের জন্য ক্ষুধার্ত? (খ) বার্ষিক রিপোর্টের অন্য আরও কিছু বিষয় কী, যেগুলো দেখায় যে যিহোবার দাসেরা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে জেগে আছে? (১২-১৫ পৃষ্ঠায় দেওয়া তালিকা দেখুন।)

১৯ গত বছর সারা পৃথিবীতে মাসে গড়ে ৫৩,০৯,২৮৯টা বাইবেল অধ্যয়নের রিপোর্ট দেখায় যে, এখনও অনেক মেষতুল্য ব্যক্তি রয়েছে, যারা বাইবেলের সত্যের জন্য ক্ষুধার্ত। ১,৫৫,৯৭,৭৪৬ জন ব্যক্তি স্মরণার্থক সভায় যোগ দিয়েছে, যা নতুন সর্বোচ্চ সংখ্যা ও যাদের মধ্যে বেশির ভাগই এখনও সক্রিয়ভাবে যিহোবার সেবা করছে না। তারা যেন জ্ঞানে এবং যিহোবা ও ভ্রাতৃবর্গ উভয়ের জন্য ভালবাসায় ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়। এটা দেখা অনেক রোমাঞ্চকর যে, ‘আরও মেষের’ “বিস্তর লোক” তাদের আত্মায় অভিষিক্ত ভাইদের সঙ্গে “দিবারাত্র তাঁহার মন্দিরে” সৃষ্টিকর্তার সেবা করার সঙ্গে সঙ্গে ফল উৎপন্ন করে চলেছে।—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১৫; যোহন ১০:১৬.

লোটের ঘটনা থেকে শিক্ষা

২০. লোট ও তার স্ত্রীর উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখি?

২০ অবশ্য, এমনকি ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসেরাও কখনও কখনও তৎপরতার মনোভাব হারিয়ে ফেলতে পারে। অব্রাহামের ভাইপো লোটের কথা বিবেচনা করুন। তিনি দুজন দর্শনার্থী দূতের কাছ থেকে জেনেছিলেন যে, ঈশ্বর সদোম ও ঘমোরা ধ্বংস করে দেবেন। সেই সংবাদটা লোটকে অবাক করেনি, যিনি “ধর্ম্মহীনদের স্বৈরাচারে ক্লিষ্ট হইতেন।” (২ পিতর ২:৭) তবুও, দুজন দূত যখন তাকে সদোম থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছিল, তখন তিনি “ইতস্ততঃ” করেছিলেন। দূতেরা তাকে ও তার পরিবারকে প্রায় জোর করেই নগরের বাইরে নিয়ে এসেছিল। দুঃখজনক যে, লোটের স্ত্রী পিছনে ফিরে না তাকানোর বিষয়ে দূতের সাবধানবাণীতে মনোযোগ দেয়নি। তার শীতল মনোভাবের জন্য তাকে বিরাট মূল্য দিতে হয়েছিল। (আদিপুস্তক ১৯:১৪-১৭, ২৬) যিশু সাবধান করেছিলেন, “লোটের স্ত্রীকে স্মরণ করিও।”—লূক ১৭:৩২.

২১. আগের চেয়ে এখন কেন আরও বেশি করে জেগে থাকা জরুরি?

২১ পম্পেই ও হারকুলেনিয়ামের বিপর্যয় এবং যিরূশালেমের ধ্বংসকে কেন্দ্র করে ঘটা ঘটনাগুলো ও সেইসঙ্গে নোহের দিনের জলপ্লাবন এবং লোটের উদাহরণ সমস্ত কিছুই সতর্কবাণীগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার বিষয়টা তুলে ধরে। যিহোবার দাস হিসেবে আমরা শেষকালের চিহ্ন বুঝতে পারি। (মথি ২৪:৩) আমরা মিথ্যা ধর্ম থেকে নিজেদের পৃথক করেছি। (প্রকাশিত বাক্য ১৮:৪) প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের মতো আমাদেরও ‘ঈশ্বরের সেই দিনের আগমনের আকাঙ্ক্ষা করা’ দরকার। (২ পিতর ৩:১২) হ্যাঁ, আগের চেয়ে এখন আরও বেশি করে আমাদের জেগে থাকতে হবে! জেগে থাকার জন্য আমরা কোন পদক্ষেপ নিতে পারি এবং কোন গুণগুলো গড়ে তুলতে পারি? পরের প্রবন্ধে এই বিষয়গুলো আলোচনা করা হবে।

[পাদটীকাগুলো]

^ প্রথম শতাব্দীতে যিরূশালেমের অধিবাসী ১,২০,০০০রের বেশি হতেই পারে না। ইউসেবিয়াস হিসেব করেন যে, সা.কা. ৭০ সালে নিস্তারপর্ব পালনের জন্য ৩,০০,০০০ অধিবাসী যিহূদা অঞ্চল থেকে যিরূশালেমে এসেছিল। বাকি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা নিশ্চয়ই সাম্রাজ্যের অন্যান্য জায়গা থেকে এসেছিল।

^ অবশ্য যিহোবার দৃষ্টিতে মোশির ব্যবস্থা সা.কা. ৩৩ সালে নতুন চুক্তির মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত হয়েছিল।—ইফিষীয় ২:১৫.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• কোন ঘটে চলা ঘটনাগুলো যিহুদি খ্রিস্টানদের যিরূশালেমের ধ্বংস থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করেছিল?

• প্রেরিত পিতর এবং পৌলের লিখিত পরামর্শ কীভাবে আমাদের জেগে থাকতে সাহায্য করে?

• কারা আজকে পুরোপুরি জেগে থাকার প্রমাণ দিচ্ছে?

• লোট ও তার স্ত্রীর ঘটনা থেকে আমরা কী শিক্ষা পাই?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১২-১৫ পৃষ্ঠার তালিকা]

২০০২ SERVICE YEAR REPORT OF JEHOVAH’S WITNESSES WORLDWIDE

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

সাধারণ কাল ৬৬ সালে, যিরূশালেমের খ্রিস্টীয় সমাজ যিশুর সাবধানবাণীতে মনোযোগ দিয়েছিল

[১০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

সক্রিয় থাকা খ্রিস্টানদের জেগে থাকতে সাহায্য করে