“জাগিয়া থাকিও”!
“জাগিয়া থাকিও”!
“আমি তোমাদিগকে যাহা বলিতেছি, তাহাই সকলকে বলি, জাগিয়া থাকিও।”—মার্ক ১৩:৩৭.
১, ২. (ক) একজন ব্যক্তি তার সম্পত্তি রক্ষা করার বিষয়ে কোন শিক্ষা পেয়েছিলেন? (খ) যিশুর বলা এক চোরের দৃষ্টান্ত থেকে জেগে থাকার বিষয়ে আমরা কী শিখি?
খোয়ান তার মূল্যবান জিনিসপত্র বাড়িতেই রাখতেন। তিনি সেগুলো তার বিছানার নিচে লুকিয়ে রাখতেন কারণ তার মতে সেটাই হল ঘরের সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। কিন্তু, একদিন রাতে তিনি এবং তার স্ত্রী যখন ঘুমিয়েছিলেন, তখন একজন চোর শোবার ঘরে ঢোকে। স্পষ্টতই, চোর খুব ভাল করেই জানত যে, ঠিক কোন জায়গাটায় খুঁজতে হবে। সে নিঃশব্দে বিছানার নিচ থেকে সমস্ত মূল্যবান জিনিসপত্র ও সেইসঙ্গে বিছানার পাশের টেবিলের ড্রয়ারে খোয়ান যে-টাকাপয়সা রেখেছিলেন, সেগুলো সরিয়ে ফেলে। পরের দিন সকালে খোয়ান চুরির বিষয়টা টের পান। যে-দুঃখজনক শিক্ষা তিনি পেয়েছিলেন, সেটা তার দীর্ঘদিন মনে থাকবে: একজন ঘুমন্ত ব্যক্তি তার সম্পত্তি রক্ষা করতে পারে না।
২ আধ্যাত্মিক দিক দিয়েও এই একই বিষয় সত্য। আমরা আমাদের আশা এবং বিশ্বাস রক্ষা করতে পারি না, যদি কিনা আমরা ঘুমিয়ে পড়ি। তাই, পৌলের উপদেশ হল: “আইস, আমরা অন্য সকলের ন্যায় নিদ্রা না যাই, বরং জাগিয়া থাকি ও মিতাচারী হই।” (১ থিষলনীকীয় ৫:৬) জেগে থাকা যে কত গুরুত্বপূর্ণ, তা দেখাতে গিয়ে যিশু এক চোরের দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেছিলেন। তিনি বিভিন্ন ঘটনা সম্বন্ধে বর্ণনা করেছিলেন, যা বিচারক হিসেবে তাঁর আগমনকে নির্দেশ করবে এবং এরপর তিনি সাবধান করেছিলেন: “অতএব জাগিয়া থাক, কেননা তোমাদের প্রভু কোন্ দিন আসিবেন, তাহা তোমরা জান না। কিন্তু ইহা জানিও, চোর কোন্ প্রহরে আসিবে, তাহা যদি গৃহকর্ত্তা জানিত, তবে জাগিয়া থাকত, নিজ গৃহে সিঁধ কাটিতে দিত না। এই জন্য তোমরাও প্রস্তুত থাক, কেননা যে দণ্ড তোমরা মনে করিবে না, সেই দণ্ডে মনুষ্যপুত্ত্র আসিবেন।” (মথি ২৪:৪২-৪৪) একজন চোর কখনও আগে থেকে বলে না যে, সে কখন আসবে। সে এমন সময়ে আসতে চায়, যখন কেউ তার আসার প্রত্যাশা করে না। একইভাবে, যিশু যেমন বলেছিলেন, এই বিধিব্যবস্থার শেষ ‘যে দণ্ড আমরা মনে করিব না’ সেই দণ্ডেই আসবে।
“জাগিয়া থাক, বিশ্বাসে দাঁড়াইয়া থাক”
৩. যে-দাসেরা বিবাহভোজ থেকে তাদের প্রভুর ফিরে আসার অপেক্ষা করছিল, তাদের দৃষ্টান্ত ব্যবহার করে, যিশু কীভাবে জেগে থাকার গুরুত্ব সম্বন্ধে দেখিয়েছিলেন?
৩ লূকের সুসমাচারে লিপিবদ্ধ কথাগুলোতে, যিশু খ্রিস্টানদের সেই দাসদের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যারা বিবাহভোজ থেকে তাদের প্রভুর ফিরে আসার অপেক্ষা করছিল। তাদের সতর্ক থাকা দরকার, যাতে তিনি যখন আসবেন তখন যেন তারা জেগে থাকে, তাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য তৈরি থাকে। একইভাবে, যিশু বলেছিলেন: “যে দণ্ড মনে করিবে না, সেই দণ্ডে মনুষ্যপুত্র আসিবেন।” (লূক ১২:৪০) বহু বছর ধরে যিহোবার সেবা করে আসছে এমন কোনো কোনো ব্যক্তি হয়তো আমরা যে-সময়ে বাস করছি, সেই বিষয়ে তৎপরতার মনোভাব হারিয়ে ফেলতে পারে। এমনকি, তারা হয়তো এই উপসংহারে আসতে পারে যে, শেষ আসতে এখনও অনেক দেরি আছে। কিন্তু, এইধরনের চিন্তাভাবনা আমাদের মনোযোগকে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো থেকে সরিয়ে নিয়ে বস্তুগত লক্ষ্যগুলোর দিকে পরিচালিত করতে পারে আর এই বিক্ষেপগুলো আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে আমাদের তন্দ্রাচ্ছন্ন করে দিতে পারে।—লূক ৮:১৪; ২১:৩৪, ৩৫.
৪. কোন দৃঢ়প্রত্যয় আমাদের জেগে থাকতে প্রেরণা দেবে এবং যিশু কীভাবে সেটা দেখিয়েছিলেন?
৪ যিশুর দৃষ্টান্ত থেকে আমরা আরেকটা শিক্ষা পেতে পারি। যদিও, দাসেরা জানত না যে তাদের প্রভু কোন সময়ে আসবেন কিন্তু স্পষ্টতই তারা এটা জানত যে, কোন রাতে আসবেন। যদি তারা মনে করত যে তাদের প্রভু হয়তো অন্য কোনো রাতে আসবেন, তা হলে সেই সমস্ত রাত জেগে থাকা অনেক কষ্টকর হতো। কিন্তু না, তারা জানত যে তিনি কোন রাতে আসবেন আর সেটাই তাদের জেগে থাকার জন্য প্রবল উৎসাহ দিয়েছিল। একইভাবে, বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো স্পষ্ট দেখায় যে, আমরা শেষকালে বাস করছি; কিন্তু সেগুলো আমাদের শেষকালের দিন বা সময় সম্বন্ধে কিছু বলে না। (মথি ২৪:৩৬) শেষ আসতে চলেছে, এই বিশ্বাস আমাদের জেগে থাকতে সাহায্য করে কিন্তু আমরা যদি দঢ়প্রত্যয়ী হই যে, যিহোবার দিন সত্যিই কাছে, তা হলে জেগে থাকার জন্য আমরা আরও বেশি জোরালো প্রেরণা পাব।—সফনিয় ১:১৪.
৫. কীভাবে আমরা ‘জেগে থাকার’ বিষয়ে পৌলের অনুরোধে সাড়া দিতে পারি?
৫ করিন্থীয়দের কাছে লেখার সময় পৌল অনুরোধ করেছিলেন: “জাগিয়া থাক, বিশ্বাসে দাঁড়াইয়া থাক।” (১ করিন্থীয় ১৬:১৩) হ্যাঁ, জেগে থাকার বিষয়টা খ্রিস্টীয় বিশ্বাসে আমাদের দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকার সঙ্গে যুক্ত। কীভাবে আমরা জেগে থাকতে পারি? ঈশ্বরের বাক্যের গভীর জ্ঞান অর্জন করার মাধ্যমে। (২ তীমথিয় ৩:১৪, ১৫) ব্যক্তিগত অধ্যয়নের উত্তম অভ্যাস এবং নিয়মিত সভাতে উপস্থিত হওয়া আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে আর যিহোবার দিনের আকাঙ্ক্ষায় থাকা হল আমাদের বিশ্বাসের এক গুরুত্বপূর্ণ দিক। তাই, আমরা যে এই বিধিব্যবস্থার শেষের খুব নিকটে বাস করছি, সেই সম্বন্ধে শাস্ত্রীয় প্রমাণ নিয়মিত পুনরালোচনা করা, আমাদের সেই আসন্ন শেষ সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ সত্যগুলো উপেক্ষা না করতে সাহায্য করবে। * এ ছাড়া, জগতের উন্মোচিত ঘটনাগুলোর প্রতিও মনোযোগ দেওয়া উত্তম, যেগুলো বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ করে। জার্মানির একজন ভাই লিখেছিলেন: “যতবার আমি সংবাদ দেখি—যুদ্ধ, ভূমিকম্প, দৌরাত্ম্য এবং আমাদের এই গ্রহের দূষণ—এগুলো আমার কাছে তুলে ধরে যে, শেষ কত নিকটে।”
৬. সময় পেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে সতর্কতা হারিয়ে ফেলার প্রবণতাকে যিশু কীভাবে তুলে ধরেছিলেন?
৬ মার্ক ১৩ অধ্যায়ে আমরা যিশু তাঁর অনুসারীদের জেগে থাকার জন্য যে-উপদেশ দিয়েছিলেন, সেই সম্বন্ধে আরেকটা বিবরণ পাই। এই অধ্যায় অনুসারে যিশু তাদের পরিস্থিতিকে একজন দ্বাররক্ষীর সঙ্গে তুলনা করেন, যিনি বিদেশ থেকে তার প্রভুর ফিরে আসার অপেক্ষা করছেন। দ্বাররক্ষী তার প্রভুর ফিরে আসার সময় সম্বন্ধে জানতেন না। তাকে শুধু জেগে থাকতে হয়েছিল। যিশু চারটে ভিন্ন প্রহরের কথা উল্লেখ করেছেন, যে-সময়ে হয়তো প্রভু আসতে পারে। চতুর্থ প্রহর ছিল, ভোর তিনটে থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত। সেই চূড়ান্ত প্রহরের সময়, দ্বাররক্ষী খুব সহজেই তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়তে পারে। তথ্য অনুযায়ী, সৈন্যরা ভোর হওয়ার আগের সময়টাকে তাদের শত্রুদের অপ্রত্যাশিতভাবে আক্রমণ করার সবচেয়ে ভাল সময় বলে মনে করত। একইভাবে, এই শেষকালে আমাদের চারপাশের জগৎ যখন আধ্যাত্মিক অর্থে গভীর ঘুমে অচেতন, তখন জেগে থাকার জন্য আমাদের হয়তো সবচেয়ে চরম লড়াই করতে হয়। (রোমীয় ১৩:১১, ১২) তাই, যিশু তাঁর দৃষ্টান্তে বার বার অনুরোধ করেন: “সাবধান, তোমরা জাগিয়া থাকিও . . . অতএব তোমরা জাগিয়া থাকিও . . . আমি তোমাদিগকে যাহা বলিতেছি, তাহাই সকলকে বলি, জাগিয়া থাকিও।”—মার্ক ১৩:৩২-৩৭.
৭. প্রকৃতপক্ষে কোন বিপদ রয়েছে এবং এই পরিপ্রেক্ষিতে কোন উৎসাহমূলক বিষয় আমরা বাইবেলে বার বার পড়ি?
৭ যিশু তাঁর পরিচর্যার সময়ে এবং পুনরুত্থানের পরেও অনেকবার সতর্ক থাকার বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। বস্তুত, শাস্ত্রে প্রায় যতবার এই বিধিব্যবস্থার শেষ সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, ততবারই আমরা জেগে থাকার বিষয়ে সাবধানবাণী পাই। * (লূক ১২:৩৮, ৪০; প্রকাশিত বাক্য ৩:২; ১৬:১৪-১৬) স্পষ্টতই, আধ্যাত্মিক তন্দ্রাচ্ছন্নতা প্রকৃতপক্ষে অত্যন্ত বিপদজনক। আমাদের সকলের ওই সাবধানবাণীগুলোর প্রয়োজন আছে!—১ করিন্থীয় ১০:১২; ১ থিষলনীকীয় ৫:২, ৬.
তিনজন প্রেরিত, যারা জেগে থাকতে পারেনি
৮. গেৎশিমানী বাগানে, যিশুর তিনজন প্রেরিত কীভাবে তাদের জেগে থাকার বিষয়ে যিশুর অনুরোধে সাড়া দিয়েছিল?
৮ জেগে থাকার জন্য উত্তম অভিপ্রায়ের চেয়ে আরও বেশি কিছুর প্রয়োজন, যা আমরা পিতর, যাকোব ও যোহনের উদাহরণ থেকে দেখতে পাই। তারা তিনজন ছিল আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি, যারা অনুগতভাবে যিশুকে অনুসরণ করেছিল এবং তাঁর প্রতি তাদের গভীর অনুভূতি ছিল। তা সত্ত্বেও, সা.কা. ৩৩ সালের ১৪ই নিশান রাতে তারা জেগে থাকতে ব্যর্থ হয়েছিল। যেখানে তারা নিস্তারপর্ব উদ্যাপন করেছিল, সেই ওপরের কুঠরি ছেড়ে চলে আসার পর তিনজন প্রেরিত যিশুর সঙ্গে গেৎশিমানী বাগানে গিয়েছিল। সেখানে যিশু তাদের বলেছিলেন: “আমার প্রাণ মরণ পর্য্যন্ত দুঃখার্ত্ত হইয়াছে; তোমরা এখানে থাক, আমার সঙ্গে জাগিয়া থাক।” (মথি ২৬:৩৮) তিনবার যিশু তাঁর স্বর্গীয় পিতার কাছে ঐকান্তিকভাবে প্রার্থনা করেছিলেন এবং তিনবারই তিনি তাঁর বন্ধুদের কাছে ফিরে এসে তাদের শুধু ঘুমিয়ে থাকতেই দেখেছিলেন।—মথি ২৬:৪০, ৪৩, ৪৫.
৯. সম্ভবত কোন কারণে প্রেরিতরা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল?
৯ কেন এই বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা সেই রাতে যিশুকে হতাশ করেছিল? শারীরিক ক্লান্তি ছিল একটা বিষয়। সেই সময়টা ছিল অনেক বিলম্বে, সম্ভবত মাঝরাতের পরে এবং ঘুমে “তাঁহাদের চক্ষু ভারী হইয়া পড়িয়াছিল।” (মথি ২৬:৪৩) তবুও, যিশু বলেছিলেন: “জাগিয়া থাক, ও প্রার্থনা কর, যেন পরীক্ষায় না পড়; আত্মা ইচ্ছুক বটে, কিন্তু মাংস দুর্ব্বল।”—মথি ২৬:৪১.
১০, ১১. (ক) যিশু ক্লান্ত থাকা সত্ত্বেও, কোন বিষয়টা তাঁকে গেৎশিমানী বাগানে জেগে থাকতে সাহায্য করেছিল? (খ) যিশু যখন তিনজন প্রেরিতকে জেগে থাকতে বলেছিলেন তখন তাদের যা হয়েছিল, সেটা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১০ নিঃসন্দেহে, সেই ঐতিহাসিক রাতে যিশুও ক্লান্ত ছিলেন। কিন্তু, ঘুমিয়ে পড়ার বদলে তিনি সেই গুরুত্বপূর্ণ শেষ স্বাধীন মুহূর্তগুলো ঐকান্তিক প্রার্থনা করে কাটিয়েছিলেন। কিছুদিন আগে তিনি তাঁর অনুগামীদের এই বলে প্রার্থনা করতে অনুরোধ করেছিলেন: “কিন্তু তোমরা সর্ব্বসময়ে জাগিয়া থাকিও এবং প্রার্থনা করিও, যেন এই যে সকল ঘটনা হইবে, তাহা এড়াইতে, এবং মনুষ্যপুত্ত্রের সম্মুখে দাঁড়াইতে, শক্তিমান্ হও।” (লূক ২১:৩৬; ইফিষীয় ৬:১৮) আমরা যদি যিশুর পরামর্শে মনোযোগ দিই এবং প্রার্থনার বিষয়ে তাঁর উত্তম উদাহরণ অনুসরণ করি, তা হলে যিহোবার কাছে করা আমাদের আন্তরিক প্রার্থনা আমাদের আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে জেগে থাকতে সাহায্য করবে।
১১ অবশ্য, যিশু বুঝতে পেরেছিলেন যে, খুবই শীঘ্রই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে এবং মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে, যে-বিষয়টা সেই সময় তাঁর প্রেরিতরা বুঝতে পারেনি। তাঁর পরীক্ষা যাতনাদণ্ডে যন্ত্রণাদায়ক পরিণতি পর্যন্ত পৌঁছাবে। যিশু তাঁর শিষ্যদের এই বিষয়গুলো সম্বন্ধে সাবধান করে দিয়েছিলেন কিন্তু তিনি যা বলেছিলেন, তা তারা বুঝতে পারেনি। তাই, তিনি যখন জেগে জেগে প্রার্থনা করছিলেন, তখন তারা ঘুমিয়ে পড়েছিল। (মার্ক ১৪:২৭-৩১; লূক ২২:১৫-১৮) প্রেরিতদের বেলায় যেমন সত্য ছিল তেমনই আমাদের মাংসও দুর্বল এবং এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যা আমরা এখনও জানি না। তবুও, আমরা যে-সময়ে বাস করছি, সেই সময় সম্বন্ধে আমরা যদি তৎপরতার মনোভাব হারিয়ে ফেলি, তা হলে আমরা আধ্যাত্মিক অর্থে ঘুমিয়ে পড়তে পারি। একমাত্র সতর্ক থাকার মাধ্যমেই আমরা জেগে থাকতে পারব।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিনটে গুণ
১২. আমাদের মনোভাব বজায় রাখার জন্য পৌল কোন তিনটে গুণ যুক্ত করেছেন?
১২ কীভাবে আমরা তৎপরতার মনোভাব বজায় রাখতে পারি? ইতিমধ্যেই আমরা প্রার্থনা করার গুরুত্ব এবং যিহোবার দিনের আকাঙ্ক্ষায় থাকার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে দেখেছি। এ ছাড়া, পৌল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিনটে গুণ সম্বন্ধে উল্লেখ করেন, যেগুলো আমাদের বাড়িয়ে তোলা উচিত। তিনি বলেন: “আমরা দিবসের বলিয়া আইস, মিতাচারী হই, বিশ্বাস ও প্রেমরূপ বুকপাটা পরি, এবং পরিত্রাণের আশারূপ শিরস্ত্র মস্তকে দিই।” (১ থিষলনীকীয় ৫:৮) আসুন, আমরা আধ্যাত্মিকভাবে আমাদের জাগিয়ে রাখার বিষয়ে বিশ্বাস, আশা এবং প্রেমের ভূমিকা সম্বন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা করি।
১৩. আমাদের সর্তক রাখতে বিশ্বাস কোন ভূমিকা পালন করে?
১৩ আমাদের অবশ্যই এক দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে যে, যিহোবা আছেন এবং “যাহারা তাঁহার অন্বেষণ করে, তিনি তাহাদের পুরস্কারদাতা।” (ইব্রীয় ১১:৬) প্রথমত, প্রথম শতাব্দীতে শেষ সম্বন্ধে যিশুর ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতা, আমাদের সময়ে এর বিরাট পরিপূর্ণতার ওপর আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে। আর আমাদের বিশ্বাস যিহোবার দিনের জন্য আমাদের আকুল প্রত্যাশায় রাখে, নিশ্চিত করে যে, “[ভবিষ্যদ্বাণীমূলক দর্শন] অবশ্য উপস্থিত হইবে, যথাকালে বিলম্ব করিবে না।”—হবক্কূক ২:৩.
১৪. আমাদের জেগে থাকার জন্য আশা কীভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ?
১৪ আমাদের নিশ্চিত আশা “প্রাণের লঙ্গরস্বরূপ,” যা সমস্যাগুলো সহ্য করতে আমাদের সমর্থ করে, এমনকি আমাদের যদি যিহোবার প্রতিজ্ঞাগুলোর নির্দিষ্ট কয়েকটার পরিপূর্ণতার জন্য অপেক্ষাও করতে হয়। (ইব্রীয় ৬:১৮, ১৯) মার্গারেট নামে আত্মায় অভিষিক্ত এক বোন, যার বয়স ৯০ এর কোঠায় এবং যিনি ৭০ বছরের বেশি আগে বাপ্তিস্ম নিয়েছেন, তিনি স্বীকার করেন: “১৯৬৩ সালে ক্যানসারের কারণে যখন আমার স্বামী মৃত্যুশয্যায়, তখন আমার মনে হয়েছিল যে, খুব শীঘ্রই যদি শেষ আসে তা হলে অনেক ভাল হবে। কিন্তু, এখন আমি বুঝতে পারি যে, আমি মূলত আমার নিজের সুবিধার কথা চিন্তা করেছিলাম। সেই সময়ে আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না যে, সারা পৃথিবীতে কতদূর পর্যন্ত কাজ বিস্তৃত হবে। এমনকি এখনও অনেক জায়গা আছে, যেখানে কাজ সবেমাত্র শুরু হচ্ছে। তাই আমি আনন্দিত যে, যিহোবা ধৈর্য দেখিয়েছেন।” প্রেরিত পৌল আমাদের আশ্বাস দেন: “ধৈর্য্য পরীক্ষাসিদ্ধতাকে এবং পরীক্ষাসিদ্ধতা প্রত্যাশাকে উৎপন্ন করে; আর প্রত্যাশা লজ্জাজনক হয় না।”—রোমীয় ৫:৩-৫.
১৫. কীভাবে প্রেম আমাদের প্রেরণা দেবে, এমনকি যদিও মনে হয় যে আমরা দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করছি?
১৫ খ্রিস্টীয় প্রেম হল এক উল্লেখযোগ্য গুণ কারণ আমরা যা কিছুই করি না কেন, সেগুলোর মূলে রয়েছে প্রেম। আমরা যিহোবাকে সেবা করি কারণ আমরা তাঁকে ভালবাসি, তা তাঁর সময়সীমা যাই হোক না কেন। প্রতিবেশীর প্রতি প্রেম আমাদের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করতে প্রেরণা দেয়, তা যত দিন পর্যন্তই সেই কাজ আমরা করি বলে যিহোবা চান না কেন বা যতবারই আমরা একই ঘরে যাই না কেন। পৌল যেমন লিখেছিলেন, “বিশ্বাস, প্রত্যাশা, প্রেম এই তিনটী আছে, আর ইহাদের মধ্যে প্রেমই শ্রেষ্ঠ।” (১ করিন্থীয় ১৩:১৩) প্রেম আমাদের সক্রিয় রাখে এবং জেগে থাকতে সাহায্য করে। “[প্রেম] সকলই প্রত্যাশা করে, সকলই ধৈর্য্যপূর্ব্বক সহ্য করে। প্রেম কখনও শেষ হয় না।”—১ করিন্থীয় ১৩:৭, ৮.
“তোমার যাহা আছে, তাহা দৃঢ়রূপে ধারণ কর”
১৬. ধীর হয়ে পড়ার বদলে আমাদের কোন মনোভাব গড়ে তোলা উচিত?
১৬ আমরা অতি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বাস করছি, যখন জগতের ঘটনাগুলো আমাদের অবিরতভাবে মনে করিয়ে দেয় যে আমরা শেষকালের চূড়ান্ত মুহূর্তে বাস করছি। (২ তীমথিয় ৩:১-৫) এখন ধীর হয়ে পড়ার সময় নয় কিন্তু ‘আমাদের যাহা আছে, তাহা দৃঢ়রূপে ধারণ করিবার’ সময়। (প্রকাশিত বাক্য ৩:১১) ‘প্রার্থনার নিমিত্ত প্রবুদ্ধ থাকিবার’ মাধ্যমে এবং বিশ্বাস, আশা ও প্রেম গড়ে তোলার মাধ্যমে আমরা পরীক্ষার সময় নিজেদের তৈরি বলে প্রমাণ করব। (১ পিতর ৪:৭) প্রভুর কাজে উপচে পড়ার মতো অনেক কাজ আমাদের আছে। ঈশ্বরীর ভক্তির কাজে ব্যস্ত থাকা আমাদের পুরোপুরি জেগে থাকতে সাহায্য করবে।—২ পিতর ৩:১১.
১৭. (ক) সাময়িক হতাশার কারণে কেন আমাদের নিরুৎসাহিত হওয়া উচিত নয়? (২১ পৃষ্ঠার বাক্স দেখুন।) (খ) কীভাবে আমরা যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারি এবং যারা তা করে তাদের জন্য কোন আশীর্বাদ অপেক্ষা করছে?
১৭ “সদাপ্রভুই আমার অধিকার,” যিরমিয় লিখেছিলেন, “এই জন্য আমি তাঁহাতে প্রত্যাশা করিব। সদাপ্রভু মঙ্গলস্বরূপ, তাঁহার আকাঙ্ক্ষীদের পক্ষে, তাঁহার অন্বেষী প্রাণের পক্ষে। সদাপ্রভুর পরিত্রাণের প্রত্যাশা করা, নীরবে অপেক্ষা করা, ইহাই মঙ্গল।” (বিলাপ ৩:২৪-২৬) আমাদের মধ্যে কেউ কেউ মাত্র অল্প সময় ধরে অপেক্ষা করছে। অন্যেরা যিহোবার পরিত্রাণ দেখার জন্য অনেক বছর ধরে অপেক্ষা করছে। কিন্তু, এই অপেক্ষার পালা সামনের চিরস্থায়ীত্বের তুলনায় কত সংক্ষিপ্ত! (২ করিন্থীয় ৪:১৬-১৮) আর যিহোবার নিরূপিত সময়ের জন্য অপেক্ষা করার সময় আমরা অপরিহার্য খ্রিস্টীয় গুণাবলি গড়ে তুলতে পারি এবং অন্যদের যিহোবার ধৈর্য থেকে উপকার পেতে এবং সত্যকে গ্রহণ করতে সাহায্য করতে পারি। তাই, আমরা সকলে যেন জেগে থাকি। আসুন, আমরা যিহোবাকে অনুকরণ করি ও ধৈর্যশীল হই এবং আমাদের যে-আশা দেওয়া হয়েছে, তার জন্য কৃতজ্ঞ হই। আর বিশ্বস্ততার সঙ্গে সতর্ক থাকার সময় আমরা যেন অনন্তজীবনের আশা দৃঢ়রূপে ধরে রাখি। তা হলে, এই ভবিষ্যদ্বাণীমূলক প্রতিজ্ঞাগুলো সত্যিই আমাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে: “[যিহোবা] তোমাকে দেশের অধিকার ভোগের জন্য উন্নত করিবেন; দুষ্টগণের উচ্ছেদ হইলে তুমি তাহা দেখিতে পাইবে।”—গীতসংহিতা ৩৭:৩৪.
[পাদটীকাগুলো]
^ যে-ছয়টা প্রমাণ দেখায় যে আমরা “শেষ কালে” বাস করছি, সেগুলো পুনরালোচনা করা সাহায্যকারী হতে পারে। আর এগুলো ২০০০ সালের ১৫ই জানুয়ারি প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১২-১৩ পৃষ্ঠায় তুলে ধরা হয়েছে।—২ তীমথিয় ৩:১.
^ যে-ইব্রীয় ক্রিয়াপদকে ‘জাগিয়া থাক’ হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটা সম্বন্ধে বলতে গিয়ে গ্রন্থাকার ডব্লুই. ই. ভাইন ব্যাখ্যা করেন যে, এর আক্ষরিক অর্থ হল, ‘ঘুম তাড়িয়ে দেওয়া’ এবং এটা “শুধু জাগ্রত অবস্থাকে নয় কিন্তু তাদের সতর্কাবস্থাকে প্রকাশ করে, যারা কোনো কিছুর প্রতি নিবিষ্ট।”
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• কীভাবে আমরা আমাদের দৃঢ়প্রত্যয়কে শক্তিশালী করতে পারি যে, এই বিধিব্যবস্থার শেষ খুব নিকটে?
• পিতর, যাকোব এবং যোহনের উদাহরণ থেকে কী শেখা যায়?
• কোন তিনটে গুণ আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে সতর্ক থাকতে সাহায্য করবে?
• কেন এখন ‘আমাদের যাহা আছে, তাহা ধরিয়া রাখিবার’ সময়?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[২১ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]
“ধন্য সেই, যে ধৈর্য্য ধরিয়া . . . থাকিবে।”—দানিয়েল ১২:১২
কল্পনা করুন যে, একজন প্রহরী সন্দেহ করছেন যে, তিনি যে-জায়গায় পাহারা দিচ্ছেন, একটা চোর সেখান থেকে চুরি করার পরিকল্পনা করছে। রাত হওয়ার পর, এমন শব্দ যা হয়তো সিঁধেল চোরের উপস্থিতির ইঙ্গিত দেবে, সেগুলো প্রহরী অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে শুনছেন। ঘন্টার পর ঘন্টা তিনি তার চোখ ও কান খোলা রাখছেন। এটা বোঝা খুবই সহজ যে, কীভাবে তিনি মিথ্যা সংকেত দ্বারা প্রতারিত হতে পারেন—গাছে দমকা হাওয়ার শব্দ বা কোনো কিছুর ওপর বিড়ালের আঘাত করার শব্দ।—লূক ১২:৩৯, ৪০.
একইরকম কিছু তাদের প্রতিও ঘটতে পারে, যারা ‘আমাদের প্রভু যিশু খ্রীষ্টের প্রকাশের অপেক্ষা করিতেছে।’ (১ করিন্থীয় ১:৭) প্রেরিতরা মনে করেছিল যে, যিশু তাঁর পুনরুত্থানের পরপরই “ইস্রায়েলের হাতে রাজ্য ফিরাইয়া আনিবেন।” (প্রেরিত ১:৬) কয়েক বছর পর, থিষলনীকীর খ্রিস্টানদের মনে করিয়ে দিতে হয়েছিল যে, যিশুর উপস্থিতি ছিল ভবিষ্যতের বিষয়। (২ থিষলনীকীয় ২:৩, ৮) তবুও, যিহোবার দিন সম্বন্ধে মিথ্যা প্রত্যাশার কারণে যিশুর সেই প্রাথমিক অনুসারীরা জীবনের পথ ছেড়ে সরে পড়েনি।—মথি ৭:১৩.
আমাদের দিনে, এই বিধিব্যবস্থার শেষ আসতে দেরি হচ্ছে বলে মনে করে হতাশ হয়ে আমাদের সতর্ক থাকাকে কমিয়ে দেওয়া উচিত নয়। একজন সতর্ক প্রহরী হয়তো মিথ্যা সংকেত দ্বারা প্রতারিত হতে পারে কিন্তু তাকে অবশ্যই জেগে থাকতে হবে! এটাই তার কাজ। সত্য খ্রিস্টানদের বেলায়ও একই বিষয় সত্য।
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনি কি দৃঢ়প্রত্যয়ী যে, যিহোবার দিন খুব নিকটে?
[১৯ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
সভা, প্রার্থনা এবং অধ্যয়নের উত্তম অভ্যাস আমাদের জেগে থাকতে সাহায্য করে
[২২ পৃষ্ঠার চিত্র]
মার্গারেটের মতো আমরা যেন ধৈর্য সহকারে এবং সক্রিয়ভাবে জেগে থাকি