সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যারা কষ্ট ভোগ করছে তাদের জন্য সান্ত্বনা

যারা কষ্ট ভোগ করছে তাদের জন্য সান্ত্বনা

যারা কষ্ট ভোগ করছে তাদের জন্য সান্ত্বনা

ঈশ্বর কেন দুঃখকষ্ট থাকতে দিয়েছেন, এই প্রশ্ন শত শত বছর ধরে অনেক দার্শনিক এবং ঈশ্বরতত্ত্ববিদকে বিভ্রান্ত করেছে। কেউ কেউ জোরালোভাবে বলেছিল যে, ঈশ্বর যেহেতু সর্বশক্তিমান তাই তিনিই এই দুঃখকষ্টের জন্য দায়ী। দ্বিতীয় শতাব্দীর এক অপ্রামাণিক বই দ্যা ক্লেমেন্টাইন হোমিলিজ এর লেখক দাবি করেন যে, ঈশ্বর দুহাতেই জগৎকে শাসন করেন। তাঁর “বাম হাতে” দিয়াবল, যে দুঃখকষ্ট এবং যন্ত্রণার কারণ এবং তাঁর “ডান হাতে” যিশু, যিনি রক্ষা ও আশীর্বাদ করেন।

অন্যেরা, ঈশ্বর দুঃখকষ্ট না ঘটালেও তিনি তা থাকতে দিয়েছেন বলে মেনে নিতে না পেরে দুঃখকষ্টের অস্তিত্ব আছে বলে অস্বীকার করে। “মন্দতা বিভ্রান্তি ছাড়া আর কিছুই নয় এবং এর কোনো প্রকৃত ভিত্তিও নেই,” ম্যারি বেকার এডি এই কথাগুলো লিখেছিলেন। “যদি পাপ, অসুস্থতা এবং মৃত্যুকে কিছুই মনে করা না হয়, তা হলে সেগুলোর অস্তিত্ব থাকবে না।”—সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ্‌ উইথ কি টু দ্যা স্ত্রিপচারস।

ইতিহাসের দুঃখজনক ঘটনাগুলোর ফলে, বিশেষ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমাদের সময় পর্যন্ত যা ঘটেছে তাতে অনেকেই এই উপসংহারে এসেছে যে, দুঃখকষ্ট প্রতিরোধ করতে ঈশ্বর সমর্থ নন। যিহুদি পণ্ডিত ডেভিড উল্ফ সিলভারম্যান লিখেছিলেন, “আমার মতে, নাৎসি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঈশ্বরের জন্য উপযুক্ত গুণ হিসেবে সর্বশক্তিমান শব্দটির সহজ প্রয়োগকে বাতিল করে দেয়।” তিনি আরও বলেন, ‘যদি ঈশ্বরকে কোনোভাবে স্পষ্ট করে তুলে ধরতে হয়, তা হলে তাঁর মঙ্গলভাব অবশ্যই মন্দের অস্তিত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে আর এই বিষয়টা একমাত্র তখনই সত্য, যখন তিনি সর্বশক্তিমান নন।’

যাহোক, অর্থাৎ ঈশ্বরই কোনো না কোনোভাবে দুঃখকষ্ট দিচ্ছেন, তিনি তা প্রতিরোধ করতে সমর্থ নন অথবা সেই দুঃখকষ্ট আমাদের কল্পনার মিথ্যা রচনা মাত্র, এই দাবিগুলোর কোনোটাই যারা কষ্ট ভোগ করছে তাদের পর্যাপ্ত সান্ত্বনা দেয় না। আরও গুরুত্বপূর্ণ হল, এইধরনের বিশ্বাস ন্যায়বিচারক, শক্তিমান ও যত্নশীল ঈশ্বরের বেলায় অসংগত, যাঁর ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে বাইবেলে প্রকাশ করা হয়েছে। (ইয়োব ৩৪:১০, ১২; যিরমিয় ৩২:১৭; ১ যোহন ৪:৮) তা হলে, কেন দুঃখকষ্ট থাকতে দেওয়া হয়েছে সেই সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে?

কীভাবে দুঃখকষ্ট শুরু হয়েছিল?

ঈশ্বর মানুষকে কষ্ট ভোগ করার জন্য সৃষ্টি করেননি। এর বিপরীতে, তিনি প্রথম মানব দম্পতি, আদম ও হবাকে নিখুঁত মন এবং দেহ দিয়েছিলেন, তাদের ঘর হিসেবে এক চমৎকার বাগান তৈরি করেছিলেন আর তাদের অর্থপূর্ণ ও সন্তোষজনক কাজ দিয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ১:২৭, ২৮, ৩১; ২:৮) কিন্তু, তাদের স্থায়ী সুখ নির্ভর করেছিল তারা ঈশ্বরের শাসনব্যবস্থাকে এবং ভালমন্দ নির্ধারণ করার ব্যাপারে তাঁর ক্ষমতাকে মেনে নেবে কি না, সেটার ওপর। সেই ঐশিক আদেশ প্রতিনিধিত্ব করেছিল একটা গাছের দ্বারা যেটাকে “সদসদ্‌-জ্ঞানদায়ক . . . বৃক্ষ” বলা হয়েছে। (আদিপুস্তক ২:১৭) আদম ও হবা যদি সেই গাছ থেকে ফল না খেয়ে ঈশ্বরের আদেশ পালন করত, তা হলে তারা ঈশ্বরের প্রতি তাদের বশীভূত হওয়ার মনোভাব দেখাতে পারত। *

খুবই দুঃখের বিষয় যে, আদম ও হবা ঈশ্বরের বাধ্য থাকতে ব্যর্থ হয়েছিল। এক বিদ্রোহী আত্মিক প্রাণী, যে পরে শয়তান দিয়াবল হিসেবে পরিচিত হয়েছিল, হবাকে এই বলে ভুলিয়েছিল যে, ঈশ্বরের বাধ্য থাকা তার জন্য প্রধান আগ্রহের বিষয় হওয়ার কথা নয়। আসলে, ঈশ্বর তাকে অত্যন্ত কাম্য কিছু থেকে বঞ্চিত করছিলেন যা হল: পূর্ণ স্বাধীনতা, কোনটা ভাল ও কোনটা মন্দ ছিল তা বেছে নেওয়ার বিষয়ে তার নিজের অধিকার। শয়তান দাবি করেছিল যে, হবা যদি ওই গাছের ফল খায়, তা হলে ‘তাহার চক্ষু খুলিয়া যাইত, তাহাতে সে ঈশ্বরের সদৃশ হইয়া সদসদ্‌-জ্ঞান প্রাপ্ত হইত।’ (আদিপুস্তক ৩:১-৬; প্রকাশিত বাক্য ১২:৯) স্বাধীনতার প্রত্যাশায় প্রলুব্ধ হয়ে হবা সেই নিষিদ্ধ ফল খেয়েছিল আর শীঘ্রই আদমও সেই একই কাজ করেছিল।

সেদিন থেকেই আদম ও হবা তাদের বিদ্রোহের পরিণাম ভোগ করতে শুরু করেছিল। ঐশিক শাসনব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান করায় তারা সমস্ত সুরক্ষা এবং আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত হয়েছিল, যা ঈশ্বরের প্রতি বশ্যতার কারণে তারা পেতে পারত। ঈশ্বর তাদের পরমদেশ থেকে বের করে দিয়েছিলেন এবং আদমকে বলেছিলেন: “এই জন্য তোমার নিমিত্ত ভূমি অভিশপ্ত হইল; তুমি যাবজ্জীবন ক্লেশে উহা ভোগ করিবে; তুমি ঘর্ম্মাক্ত মুখে আহার করিবে, যে পর্য্যন্ত তুমি মৃত্তিকায় প্রতিগমন না করিবে।” (আদিপুস্তক ৩:১৭, ১৯) আদম ও হবা অসুস্থতা, যন্ত্রণা, বার্ধক্য এবং মৃত্যুর অধীন হয়ে পড়েছিল। দুঃখকষ্ট মানুষের জীবনের একটা অংশ হয়ে গিয়েছিল।—আদিপুস্তক ৫:২৯.

বিচার্য বিষয়ের মীমাংসা

কেউ হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন, ‘ঈশ্বর কি আদম ও হবার পাপকে উপেক্ষা করতে পারতেন না?’ না, কারণ এটা করা হলে তাঁর কর্তৃত্বকে আরও অবজ্ঞা করা হতো, সম্ভবত এটা ভবিষ্যৎ বিদ্রোহকে উসকে দিত আর এর ফলস্বরূপ আরও দুঃখকষ্টের সৃষ্টি হতো। (উপদেশক ৮:১১) এ ছাড়া, এইরকম অবাধ্যতাকে মেনে নেওয়া ঈশ্বরকে দুষ্কর্মের একজন সহযোগী করে তুলত। বাইবেল লেখক মোশি আমাদের মনে করিয়ে দেন: “[ঈশ্বরের] কর্ম্ম সিদ্ধ, কেননা তাঁহার সমস্ত পথ ন্যায্য; তিনি বিশ্বাস্য ঈশ্বর, তাঁহাতে অন্যায় নাই; তিনিই ধর্ম্মময় ও সরল।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪) নিজের কাছে সৎ থাকার জন্য ঈশ্বর আদম ও হবাকে অবাধ্যতার পরিণতিগুলো ভোগ করতে অনুমতি দিয়েছিলেন।

কেন ঈশ্বর সেই সময়েই প্রথম মানব দম্পতি সহ শয়তানকে ধ্বংস করে দিলেন না, যে কিনা তাদের বিদ্রোহের অদৃশ্য প্ররোচক ছিল? এটা করার শক্তি ঈশ্বরের ছিল। আর তা হলে আদম ও হবা এমন বংশধর উৎপন্ন করত না, যারা উত্তরাধিকারসূত্রে কষ্ট আর মৃত্যুর অধীন। কিন্তু, ঐশিক শক্তির এইরকম নমুনা তাঁর বুদ্ধিমান প্রাণীদের ওপর ঈশ্বরের কর্তৃত্বের ন্যায্যতাকে প্রমাণ করত না। এ ছাড়া, আদম ও হবার সন্তানবিহীন অবস্থায় মারা যাওয়ার অর্থ হতো তাদের সিদ্ধ বংশধরদের দিয়ে পৃথিবীকে পরিপূর্ণ করার বিষয়ে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হওয়া। (আদিপুস্তক ১:২৮) আর “ঈশ্বর মানুষের মতো নন . . . তিনি যা কিছু প্রতিজ্ঞা করেন, তা পূর্ণ করেন; তিনি বলেন আর তা হয়ে যায়।”—গণনাপুস্তক ২৩:১৯, টুডেজ ইংলিশ ভারসান।

যিহোবা ঈশ্বর তাঁর নিখুঁত প্রজ্ঞা দ্বারা চালিত হয়ে এই বিদ্রোহকে একটা সীমিত সময় পর্যন্ত চলতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এই বিদ্রোহ ঈশ্বর থেকে স্বাধীন হওয়ার ফলগুলো ভোগ করার প্রচুর সুযোগ করে দেবে। সমগ্র ইতিহাসের ঘটনাবলি সন্দেহাতীতভাবে দেখাবে যে, মানুষের জন্য ঐশিক নির্দেশনা দরকার আর মানুষ বা শয়তানের চেয়ে ঈশ্বরের শাসনই সর্বোৎকৃষ্ট। পৃথিবীর জন্য তাঁর আদি উদ্দেশ্য যেন পূর্ণ হয় তা নিশ্চিত করতে ঈশ্বর সেই সীমিত সময়ের মধ্যে উপযুক্ত পদক্ষেপও নিয়েছিলেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, এক “বংশ” আসবে যে ‘শয়তানের মস্তক চূর্ণ করিবে,’ চিরকালের জন্য তার বিদ্রোহ ও এর ক্ষতিকর প্রভাবকে নির্মূল করে দেবে।—আদিপুস্তক ৩:১৫.

যিশু খ্রিস্ট ছিলেন সেই প্রতিজ্ঞাত বংশ। ১ যোহন ৩:৮ পদে আমরা পড়ি যে, “ঈশ্বরের পুত্ত্র এই জন্যই প্রকাশিত হইলেন, যেন দিয়াবলের কার্য্য সকল লোপ করেন।” আর এটা তিনি আদমের সন্তানদের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া পাপ ও মৃত্যু থেকে উদ্ধার করার জন্য তাঁর সিদ্ধ মানব জীবন উৎসর্গ করে এবং মুক্তির মূল্য দিয়ে করেছিলেন। (যোহন ১:২৯; ১ তীমথিয় ২:৫, ৬) যারা যিশুর বলিদানে সত্যই বিশ্বাস রাখে তাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে যে, তারা দুঃখকষ্ট থেকে মুক্তি পাবে। (যোহন ৩:১৬; প্রকাশিত বাক্য ৭:১৭) কিন্তু কখন এটা হবে?

দুঃখকষ্টের শেষ

ঈশ্বরের কর্তৃত্বকে প্রত্যাখ্যান করার ফলেই এত দুঃখকষ্ট। তাই এটা যথাযথ যে, মানুষের সমস্ত দুঃখকষ্টের শেষ আনার এবং পৃথিবীর জন্য তাঁর আদি উদ্দেশ্য পূর্ণ করতে ঈশ্বর তাঁর নিজের কর্তৃত্বকে বিশেষ উপায়ে ব্যবহার করবেন। যিশু তাঁর অনুসারীদের প্রার্থনা করার বিষয়ে শিক্ষা দেওয়ার সময় এই ঐশিক ব্যবস্থা সম্বন্ধে উল্লেখ করে বলেছিলেন: “হে আমাদের স্বর্গস্থ পিতঃ, . . . তোমার রাজ্য আইসুক, তোমার ইচ্ছা সিদ্ধ হউক, যেমন স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও হউক।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)—মথি ৬:৯, ১০.

ঈশ্বর মানুষকে নিজেদের সরকার নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালানোর জন্য যে-সময় দিয়েছিলেন, তা প্রায় শেষ হয়ে আসছে। বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতা অনুসারে, ১৯১৪ সালে তাঁর রাজ্য স্বর্গে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আর যিশু খ্রিস্ট হলেন এর রাজা। * খুব শীঘ্রই এটা সমস্ত মানব সরকারকে চূর্ণ ও বিনষ্ট করে দিবে।—দানিয়েল ২:৪৪.

 যিশু তাঁর সংক্ষিপ্ত পার্থিব পরিচর্যা কালে সেই আশীর্বাদগুলোর এক পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, যা ঐশিক শাসনের পুর্নপ্রতিষ্ঠা মানবজাতির জন্য নিয়ে আসবে। সুসমাচারগুলো প্রমাণ দেয় যে, সমাজের যে-লোকেরা দরিদ্র এবং বিদ্বেষের কারণে অবহেলিত ছিল তাদের প্রতি যিশু করুণা দেখিয়েছিলেন। তিনি অসুস্থদের সুস্থ করেছিলেন, ক্ষুধার্তদের খাইয়েছিলেন এবং মৃত ব্যক্তিদের পুনরুত্থিত করেছিলেন। এমনকি প্রকৃতির শক্তিগুলোও তাঁর নির্দেশ মান্য করেছিল। (মথি ১১:৫; মার্ক ৪:৩৭-৩৯; লূক ৯:১১-১৬) সমস্ত বাধ্য মানবজাতির উপকারের জন্য যিশু যখন তাঁর মুক্তির মূল্যের শুচি করার প্রভাবকে প্রয়োগ করবেন, তখন তিনি কত বড় এক কাজই না সম্পাদন করবেন, তা একটু ভেবে দেখুন! বাইবেল প্রতিজ্ঞা করে যে, খ্রিস্টের শাসনের মাধ্যমে ঈশ্বর “[মানবজাতির] সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না।”—প্রকাশিত বাক্য ২১:৪.

দুঃখকষ্টে জর্জরিত ব্যক্তিদের জন্য সান্ত্বনা

এটা জানা কতই না উৎসাহজনক যে, আমাদের প্রেমময় ও সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যিহোবা আমাদের জন্য চিন্তা করেন এবং তিনি খুব শীঘ্রই মানবজাতির জন্য স্বস্তি আনবেন! সাধারণত এক মুমূর্ষু রোগী স্বেচ্ছায় সেই চিকিৎসা গ্রহণ করবেন যা তাকে সুস্থ করবে, এমনকি তা যদি খুব বেদনাদায়কও হয়। একইভাবে, আমরা যদি জানি যে ঈশ্বর যেভাবে বিভিন্ন বিষয়কে মীমাংসা করেন তা অনন্ত আশীর্বাদ নিয়ে আসবে, তা হলে সাময়িক যেকোনো সমস্যার মুখোমুখি আমরা হই না কেন, এই জ্ঞান আমাদের শক্তি জোগাবে।

রিকার্ডু, যার কথা আগের প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি বাইবেলের প্রতিজ্ঞাগুলো থেকে সান্ত্বনা লাভ করতে শিখেছেন। তিনি মনে করে বলেন, ‘আমার স্ত্রীর মৃত্যুর পর আমি নিজেকে অন্যদের থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করার চিন্তা করেছিলাম কিন্তু আমি খুব শীঘ্রই বুঝতে পেরেছিলাম যে, তা করা আমার স্ত্রীকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেবে না বরং, আমি আমার বেদনাকে আরও বাড়িয়ে তুলব।’ এর বদলে, রিকার্ডু নিয়মিত খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে উপস্থিত থেকেছেন এবং বাইবেলের বার্তা অন্যদের কাছে বলে চলেছেন। রিকার্ডু বলেন, ‘যখন আমি যিহোবার প্রেমময় সমর্থন উপলব্ধি করেছিলাম এবং দেখেছিলাম যে আপাতদৃষ্টিতে সামান্য বলে মনে হলেও তিনি কীভাবে আমার প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন, তখন আমি তাঁর আরও নিকটবর্তী হয়েছিলাম। ঈশ্বরের প্রেম সম্বন্ধে নিশ্চিত থাকাই আমাকে সেই পরীক্ষা সহ্য করতে সাহায্য করেছিল, যা আমার জীবনের চরম ছিল।’ তিনি স্বীকার করেন: “আমি এখনও আমার স্ত্রীর অভাব ভীষণ অনুভব করি কিন্তু আমি এখন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, যিহোবা এমন কিছু ঘটতে দেন না, যা আমাদের স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে।”

আপনিও কি রিকার্ডু এবং আরও লক্ষ লক্ষ লোকের মতো সেই সময়ের আকাঙ্ক্ষা করেন যখন মানবজাতির বর্তমান দুঃখকষ্টগুলো “স্মরণে থাকিবে না, আর মনে পড়িবে না”? (যিশাইয় ৬৫:১৭) নিশ্চিত থাকুন যে, ঈশ্বরের রাজ্যের আশীর্বাদগুলো আপনিও ভোগ করতে পারেন যদি আপনি বাইবেলের এই পরামর্শ মেনে চলেন: “সদাপ্রভুর অন্বেষণ কর, যাবৎ তাঁহাকে পাওয়া যায়, তাঁহাকে ডাক, যাবৎ তিনি নিকটে থাকেন।”—যিশাইয় ৫৫:৬.

আর তা করার জন্য আপনি ঈশ্বরের বাক্য পড়া এবং মনোযোগের সঙ্গে অধ্যয়ন করাকে আপনার জীবনের এক অপরিহার্য বিষয় করে তুলুন। ঈশ্বরকে এবং তিনি যাঁকে পাঠিয়েছেন সেই যিশু খ্রিস্টকে জানুন। ঈশ্বরের মানগুলোর সঙ্গে মিল রেখে জীবনযাপন করতে প্রাণপণ চেষ্টা করুন আর এইভাবে দেখান যে, আপনি তাঁর সার্বভৌমত্বের প্রতি বশীভূত থাকতে ইচ্ছুক। আপনাকে বিভিন্ন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হলেও এইধরনের পদক্ষেপ আপনার জন্য এখনই প্রচুর সুখ নিয়ে আসবে। আর এর ফলে ভবিষ্যতে, দুঃখকষ্ট মুক্ত এক পৃথিবীতে আপনি জীবন উপভোগ করতে পারবেন।—যোহন ১৭:৩.

[পাদটীকাগুলো]

^ দ্যা যিরূশালেম বাইবেল আদিপুস্তক ২:১৭ পদের পাদটীকায় “ভালমন্দ-জ্ঞানকে” ব্যাখ্যা করে ‘কোনটা ভাল ও কোনটা মন্দ, তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা এবং সেই অনুযায়ী কাজ করা, এটা পুরোপুরি নৈতিক স্বাধীনতার এক দাবি যেটার দ্বারা মানুষ এক সৃষ্ট সত্ত্বা হিসেবে তার মর্যাদাকে অস্বীকার করে।’ এটা আরও বলে: “প্রথম পাপ ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের ওপর একটা আক্রমণ ছিল।”

^ ১৯১৪ সালের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে বইয়ের ১০ ও ১১ অধ্যায় দেখুন।

[৬, ৭ পৃষ্ঠার বাক্স]

আমরা কীভাবে দুঃখকষ্টের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি?

“তোমাদের সমস্ত ভাবনার ভার [ঈশ্বরের] উপরে ফেলিয়া দেও।” (১ পিতর ৫:৭) দ্বন্দ্ব, রাগ এবং হাল ছেড়ে দেওয়ার অনুভূতির প্রকাশ তখনই স্বাভাবিক যখন আমরা দুঃখকষ্ট সহ্য করি বা আমাদের প্রিয়জনকে কোনো কষ্ট ভোগ করতে দেখি। তবুও নিশ্চিত হোন যে, যিহোবা আমাদের অনুভূতিগুলো বুঝতে পারেন। (যাত্রাপুস্তক ৩:৭; যিশাইয় ৬৩:৯) প্রাচীন কালের বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের মতো, তাঁর কাছে আমরা আমাদের গভীর অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে এবং আমাদের দ্বিধা ও উদ্বিগ্নতাগুলোর কথা বলতে পারি। (যাত্রাপুস্তক ৫:২২; ইয়োব ১০:১-৩; যিরমিয় ১৪:১৯; হবক্‌কূক ১:১৩) তিনি হয়তো অলৌকিক উপায়ে আমাদের পরীক্ষাগুলো দূর করবেন না, তবে আমাদের আন্তরিক প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে তিনি আমাদেরকে প্রজ্ঞা ও শক্তি দিতে পারেন, যাতে আমরা সেগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি।—যাকোব ১:৫, ৬.

“তোমরা যে-বেদনাদায়ক পরীক্ষা ভোগ করছ তা তোমাদের প্রতি অদ্ভুত কিছু ঘটছে ভেবে আশ্চর্য মনে কর না।” (১ পিতর ৪:১২, নিউ ইন্টারন্যাশনাল ভারসন) পিতর এখানে তাড়নার বিষয়ে বলছেন কিন্তু তার কথাগুলো একজন বিশ্বাসীর যেকোনো দুঃখকষ্ট সহ্য করার ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য। মানুষেরা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ঘাটতির, অসুস্থতা এবং প্রিয়জনদের হারানোর কষ্ট ভোগ করে। বাইবেল বলে যে, সকলের প্রতি “কাল ও দৈব ঘটে।” (উপদেশক ৯:১১) বর্তমানে এই বিষয়গুলো মানুষের সার্বিক পরিস্থিতির অংশ বলা যায়। এই বিষয়টা উপলব্ধি করা আমাদেরকে দুঃখকষ্ট এবং অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটলে সেটার সঙ্গে মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে। (১ পিতর ৫:৯) মূল বিষয় হল, “ধার্ম্মিকগণের প্রতি সদাপ্রভুর দৃষ্টি আছে, তাহাদের আর্ত্তনাদের প্রতি তাঁহার কর্ণ আছে” এই নিশ্চয়তা বার বার মনে করা বিশেষ করে সান্ত্বনার এক উৎস হবে।—গীতসংহিতা ৩৪:১৫; হিতোপদেশ ১৫:৩; ১ পিতর ৩:১২.

“প্রত্যাশায় আনন্দ কর।” (রোমীয় ১২:১২) যে-সুখ আমরা হারিয়েছি সেটা নিয়ে চিন্তা না করে, সমস্ত দুঃখকষ্ট শেষ করা সম্বন্ধে ঈশ্বর যে-প্রতিজ্ঞা করেছেন, সেই বিষয়ে আমরা ধ্যান করতে পারি। (উপদেশক ৭:১০) এই সুদৃঢ় প্রত্যাশা আমাদের সেইভাবে রক্ষা করবে যেমন এক শিরস্ত্রাণ মাথাকে রক্ষা করে। প্রত্যাশা জীবনের দুর্ঘটনাগুলোকে লাঘব করে এবং এটা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে যে, সেগুলো আমাদের মানসিক, আবেগগত বা আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্য যেন মারাত্মক প্রমাণিত না হয়।—১ থিষলনীকীয় ৫:৮.

[৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

আদম ও হবা ঐশিক শাসনব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করেছিল

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বর দুঃখকষ্ট মুক্ত এক পৃথিবীর প্রতিজ্ঞা করেছেন