সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনার বিশ্বাস কতটা দৃঢ়?

আপনার বিশ্বাস কতটা দৃঢ়?

আপনার বিশ্বাস কতটা দৃঢ়?

“বিশ্বাসেই তোমরা দাঁড়াইয়া আছ।”—২ করিন্থীয় ১:২৪.

১, ২. কেন আমাদের অবশ্যই বিশ্বাস থাকতে হবে এবং কীভাবে তা দৃঢ় হতে পারে?

 যিহোবার দাসেরা জানে যে, তাদের অবশ্যই বিশ্বাস থাকতে হবে। বস্তুত, ‘বিনা বিশ্বাসে ঈশ্বরের প্রীতির পাত্র হওয়া কাহারও সাধ্য নয়।’ (ইব্রীয় ১১:৬) তাই, আমরা বিজ্ঞতার সঙ্গে পবিত্র আত্মা এবং বিশ্বাস, যা এর আশীর্বাদজনক ফলগুলোর একটা অংশ, সেগুলোর জন্য প্রার্থনা করি। (লূক ১১:১৩; গালাতীয় ৫:২২, ২৩) সহ বিশ্বাসীদের বিশ্বাস অনুকরণ করাও আমাদের মধ্যে এই গুণকে শক্তিশালী করে তুলতে পারে।—২ তীমথিয় ১:৫; ইব্রীয় ১৩:৭.

আমাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় হবে যদি আমরা সমস্ত খ্রিস্টানের উদ্দেশে ঈশ্বরের বাক্যে উল্লেখিত পথ ক্রমাগত অনুসরণ করে চলি। বিশ্বাস তখনই বাড়তে পারে, যদি আমরা রোজ বাইবেল পড়ি এবং ‘বুদ্ধিমান্‌ গৃহাধ্যক্ষের’ দ্বারা সরবরাহকৃত প্রকাশনাদির সাহায্যে অধ্যবসায়ের সঙ্গে শাস্ত্র অধ্যয়ন করি। (লূক ১২:৪২-৪৪; যিহোশূয়ের পুস্তক ১:৭, ৮) খ্রিস্টীয় সভা, অধিবেশন এবং সম্মেলনগুলোতে নিয়মিত উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে আমরা একে অপরের বিশ্বাসের দ্বারা উৎসাহিত হই। (রোমীয় ১:১১, ১২; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) আর আমাদের বিশ্বাস শক্তিশালী হয়, যখন পরিচর্যায় আমরা অন্যদের সঙ্গে কথা বলি।—গীতসংহিতা ১৪৫:১০-১৩; রোমীয় ১০:১১-১৫.

৩. বিশ্বাসের ক্ষেত্রে, প্রেমময় খ্রিস্টান প্রাচীনদের কাছ থেকে আমরা কোন সাহায্য পাই?

শাস্ত্রীয় পরামর্শ এবং উৎসাহ দেওয়ার মাধ্যমে প্রেমময় খ্রিস্টান প্রাচীনরা আমাদের বিশ্বাসকে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। তাদের প্রেরিত পৌলের মতো মনোভাব রয়েছে, যিনি করিন্থীয়দের বলেছিলেন: “আমরা . . . তোমাদের আনন্দের সহকারী হই; কারণ বিশ্বাসেই তোমরা দাঁড়াইয়া আছ।” (২ করিন্থীয় ১:২৩, ২৪) আরেকটা অনুবাদ এভাবে বিষয়টাকে প্রকাশ করে: “তোমাদের আনন্দিত করার জন্য আমরা তোমাদের সঙ্গে কাজ করছি কারণ তোমাদের বিশ্বাস দৃঢ়।” (কনটেমপোরারি ইংলিশ ভারসন) ধার্মিক ব্যক্তি বিশ্বাস হেতু বাঁচে। অবশ্য, কেউ আমাদের হয়ে বিশ্বাস করতে বা আমাদের অনুগত নীতিনিষ্ঠা বজায়কারী করে তুলতে পারে না। এই ক্ষেত্রে ‘আমাদের নিজ নিজ ভার বহন করিতে হইবে।’—গালাতীয় ৩:১১; ৬:৫.

৪. ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসদের শাস্ত্রীয় বিবরণগুলো কীভাবে আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করার জন্য সাহায্য করতে পারে?

শাস্ত্রে এমন ব্যক্তিদের প্রচুর ঘটনা রয়েছে, যাদের বিশ্বাস ছিল। আমরা হয়তো তাদের অনেক উল্লেখযোগ্য কাজ সম্বন্ধে জানি কিন্তু দিনের পর দিন, হয়তো সারাজীবন ধরে তারা যে-বিশ্বাস দেখিয়ে এসেছে, সেই সম্বন্ধে কী বলা যায়? আমাদের মতো একই পরিস্থিতিতে তারা কীভাবে এই গুণ দেখিয়েছিল, সেই সম্বন্ধে এখন বিবেচনা করা আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে তুলতে সাহায্য করতে পারে।

বিশ্বাস আমাদের সাহস জোগায়

৫. কোন শাস্ত্রীয় প্রমাণ রয়েছে যে, সাহসের সঙ্গে ঈশ্বরের বাক্য ঘোষণা করার জন্য বিশ্বাস আমাদের শক্তি জোগায়?

সাহসের সঙ্গে ঈশ্বরের বাক্য ঘোষণা করতে বিশ্বাস আমাদের শক্তি জোগায়। হনোক সাহসের সঙ্গে ঐশিক বিচার সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। “দেখ,” তিনি বলেছিলেন, “প্রভু [“যিহোবা,” NW] আপন অযুত অযুত পবিত্র লোকের সহিত আসিলেন, যেন সকলের বিচার করেন; আর ভক্তিহীন সকলে আপনাদের যে সকল ভক্তিবিরুদ্ধ কার্য্য দ্বারা ভক্তিহীনতা দেখাইয়াছে, এবং ভক্তিহীন পাপিগণ তাঁহার বিরুদ্ধে যে সকল কঠোর বাক্য কহিয়াছে, তৎপ্রযুক্ত তাহাদিগকে যেন ভর্ৎসনা করেন।” (যিহূদা ১৪, ১৫) এইধরনের কথাগুলো শোনার পর, হনোকের ভক্তিহীন শত্রুরা নিঃসন্দেহে তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। তবুও, তিনি বিশ্বাস দেখিয়ে সাহসের সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং ঈশ্বর মৃত্যুতে ঘুম পাড়িয়ে রেখে “তাঁহাকে গ্রহণ করিলেন,” স্পষ্টতই তাকে মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করতে দেননি। (আদিপুস্তক ৫:২৪; ইব্রীয় ১১:৫) আমাদের এইধরনের অলৌকিক কাজের অভিজ্ঞতা হয় না কিন্তু যিহোবা আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেন, যাতে বিশ্বাস ও সাহসের সঙ্গে আমরা তাঁর বাক্য ঘোষণা করতে পারি।—প্রেরিত ৪:২৪-৩১.

৬. কীভাবে ঈশ্বর-দত্ত বিশ্বাস এবং সাহস নোহকে সাহায্য করেছিল?

বিশ্বাসে নোহ “আপন পরিবারের ত্রাণার্থে এক জাহাজ নির্ম্মাণ করিলেন।” (ইব্রীয় ১১:৭; আদিপুস্তক ৬:১৩-২২) এ ছাড়া, নোহ “ধার্ম্মিকতার প্রচারক” ছিলেন, যিনি তার সময়কার লোকেদের কাছে সাহসের সঙ্গে ঈশ্বরের সাবধানবাণী ঘোষণা করেছিলেন। (২ পিতর ২:৫) নিঃসন্দেহে জলপ্লাবন সম্বন্ধে তার বার্তা শুনে তারা উপহাস করেছিল, ঠিক যেমন আমরা যখন শাস্ত্রীয় প্রমাণ দেখিয়ে বলি যে, বর্তমান বিধিব্যবস্থা খুব শীঘ্রই ধ্বংস হয়ে যাবে, তখন কেউ কেউ উপহাস করে থাকে। (২ পিতর ৩:৩-১২) কিন্তু, হনোক এবং নোহের মতো আমরাও আমাদের ঈশ্বর-দত্ত বিশ্বাস এবং সাহসের কারণে এইধরনের বার্তা ঘোষণা করতে পারি।

বিশ্বাস আমাদের ধৈর্যশীল করে

৭. কীভাবে অব্রাহাম এবং অন্যেরা বিশ্বাস ও ধৈর্য দেখিয়েছে?

আমাদের বিশ্বাস এবং ধৈর্যের দরকার, বিশেষ করে এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থা শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করার সময়। ‘যাহারা বিশ্বাস ও দীর্ঘসহিষ্ণুতা দ্বারা প্রতিজ্ঞা-সমূহের দায়াধিকারী হইবে’ তাদের মধ্যে একজন হলেন ঈশ্বর-ভয়শীল ব্যক্তি অব্রাহাম। (ইব্রীয় ৬:১১, ১২) বিশ্বাসে তিনি ঊর ও সেই শহরের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা ত্যাগ করেছিলেন এবং ঈশ্বর তার কাছে যে-প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, সেই অনুযায়ী বিদেশে প্রবাসী হয়ে থেকেছিলেন। ইস্‌হাক এবং যাকোব সেই একই প্রতিজ্ঞার উত্তরাধিকারী ছিলেন। কিন্তু, “বিশ্বাসানুরূপে ইহাঁরা সকলে মরিলেন; ইহাঁরা প্রতিজ্ঞাকলাপের ফল প্রাপ্ত হন নাই।” বিশ্বাসে তারা ‘আরও উত্তম দেশের, অর্থাৎ স্বর্গীয় দেশের, আকাঙ্ক্ষা করিয়াছিল।’ সেই অনুসারে ঈশ্বর “তাঁহাদের নিমিত্ত এক নগর প্রস্তুত করিয়াছেন।” (ইব্রীয় ১১:৮-১৬) হ্যাঁ, অব্রাহাম, ইস্‌হাক এবং যাকোব—এবং তাদের ঈশ্বর-ভয়শীল স্ত্রীরা—ধৈর্য সহকারে ঈশ্বরের স্বর্গীয় রাজ্যের অপেক্ষায় ছিল, যে-রাজ্যের মাধ্যমে তারা পৃথিবীতে জীবনে পুনরুত্থিত হবে।

৮. কী সত্ত্বেও অব্রাহাম, ইস্‌হাক এবং যাকোব ধৈর্য এবং বিশ্বাস দেখিয়েছে?

অব্রাহাম, ইস্‌হাক এবং যাকোব বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেনি। প্রতিজ্ঞাত দেশ তাদের নিয়ন্ত্রণে আসেনি এবং তারা সমস্ত জাতিকে আশীর্বাদপ্রাপ্ত হতে দেখেনি, যা অব্রাহামের বংশের মাধ্যমে করা হয়েছিল। (আদিপুস্তক ১৫:৫-৭; ২২:১৫-১৮) যদিও শত শত বছর পার না হওয়া পর্যন্ত ‘ঈশ্বরের নির্ম্মিত নগর’ বাস্তবে পরিণত হয়নি, তবুও এই ব্যক্তিরা সারাজীবন তাদের বিশ্বাস ও ধৈর্য দেখিয়ে চলেছিল। নিশ্চিতভাবে, আমাদেরও ঠিক তাই করা উচিত, যেহেতু মশীহ রাজ্য এখন স্বর্গে এক বাস্তব বিষয়।—গীতসংহিতা ৪২:৫, ১১; ৪৩:৫.

বিশ্বাস আমাদের সর্বোত্তম লক্ষ্যগুলো দেয়

৯. লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যগুলোর ওপর বিশ্বাসের কোন প্রভাব রয়েছে?

বিশ্বস্ত কুলপতিরা কখনও অধঃপতিত কনানীয় জীবনধারা অবলম্বন করেনি কারণ তাদের আরও অনেক উত্তম উত্তম লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য ছিল। একইভাবে বিশ্বাস আমাদের আধ্যাত্মিক লক্ষ্য দেয়, যা আমাদের জগতের সঙ্গে মিশে যাওয়াকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে, যে-জগৎ পাপাত্মা অর্থাৎ শয়তান দিয়াবলের অধীনে শুয়ে রয়েছে।—১ যোহন ২:১৫-১৭; ৫:১৯.

১০. কীভাবে আমরা জানি যে, যোষেফ জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তি হওয়ার চেয়ে আরও উত্তম লক্ষ্যের অনুধাবন করেছিলেন?

১০ ঐশিক পরিচালনার মাধ্যমে যাকোবের পুত্র যোষেফ মিশরে খাদ্য প্রশাসক হিসেবে কাজ করেছিলেন কিন্তু এই জগতের মহান ব্যক্তি হওয়া তার লক্ষ্য ছিল না। যিহোবার প্রতিজ্ঞার পরিপূর্ণতার ওপর বিশ্বাস রেখে ১১০ বছর বয়স্ক যোষেফ তার ভাইদের বলেছিলেন, “আমি মরিতেছি, কিন্তু ঈশ্বর অবশ্য তোমাদের তত্ত্বাবধান করিবেন, এবং অব্রাহামের, ইস্‌হাকের ও যাকোবের নিকটে যে দেশ দিতে দিব্য করিয়াছেন, তোমাদিগকে এই দেশ হইতে সেই দেশে লইয়া যাইবেন।” যোষেফ বলেছিলেন তাকে যেন প্রতিজ্ঞাত দেশে কবর দেওয়া হয়। মৃত্যুর পর তার দেহে ক্ষয়-নিবারক দ্রব্য দেওয়া হয়েছিল এবং মিশরের শবাধারে রাখা হয়েছিল। কিন্তু, ইস্রায়েলীয়রা যখন মিশরের বন্দিত্ব থেকে মুক্ত হয়েছিল, তখন ভাববাদী মোশি যোষেফের অস্থি প্রতিজ্ঞাত দেশে কবর দেওয়ার জন্য সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ৫০:২২-২৬; যাত্রাপুস্তক ১৩:১৯) যোষেফের মতো বিশ্বাস আমাদের জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তি হওয়ার চেয়ে আরও উত্তম উত্তম লক্ষ্য অনুধাবন করতে পরিচালিত করে।—১ করিন্থীয় ৭:২৯-৩১.

১১. কোন উপায়ে মোশি প্রমাণ দিয়েছিলেন যে, তার আধ্যাত্মিক লক্ষ্য ছিল?

১১ মিশরের রাজপরিবারের একজন শিক্ষিত ব্যক্তি হিসেবে মোশি “পাপজাত ক্ষণিক সুখভোগ অপেক্ষা বরং ঈশ্বরের প্রজাবৃন্দের সঙ্গে দুঃখভোগ মনোনীত করিলেন।” (ইব্রীয় ১১:২৩-২৬; প্রেরিত ৭:২০-২২) এর ফলে তাকে জাগতিক সম্মান এবং সম্ভবত কোনো বিখ্যাত মিশরীয় স্থানে সুসজ্জিত শবাধারে কবরপ্রাপ্ত হওয়ার সুযোগ ছেড়ে দিতে হয়েছিল। কিন্তু, একজন “ঈশ্বরের লোক,” নিয়ম চুক্তির মধ্যস্থকারী, যিহোবার ভাববাদী এবং বাইবেল লেখক হওয়ার সুযোগের সঙ্গে তুলনা করলে সেটার কী-ই বা মূল্য রয়েছে? (ইষ্রা ৩:২) আপনি কি সম্মানজনক জাগতিক পদ চান নাকি বিশ্বাস আপনাকে আরও উত্তম উত্তম আধ্যাত্মিক লক্ষ্য দিয়েছে?

বিশ্বাস এক পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন নিয়ে আসে

১২. রাহবের জীবনে বিশ্বাসের কোন প্রভাব ছিল?

১২ বিশ্বাস শুধু লোকেদের সর্বোত্তম লক্ষ্যগুলোই দেয় না কিন্তু সেইসঙ্গে এক পরিতৃপ্তিদায়ক জীবনও দেয়। নিঃসন্দেহে যিরীহোর রাহব, বেশ্যা হিসেবে তার জীবনে কোনো অর্থই খুঁজে পাননি। কিন্তু তিনি যখন বিশ্বাস অনুশীলন করেছিলেন, তখন তা কতই না পরিবর্তন এনেছিল! তিনি ‘[বিশ্বাসের] কর্ম্মহেতু ধার্ম্মিক গণিতা হইলেন, তিনি ত [ইস্রায়েলীয়] দূতগণকে অতিথি করিয়াছিলেন, এবং অন্য পথ দিয়া বাহিরে পাঠাইয়া দিয়াছিলেন’ আর এর ফলে তারা কনানীয় শত্রুদের কাছ থেকে পালাতে পেরেছিল। (যাকোব ২:২৪-২৬) যিহোবাকে সত্য ঈশ্বর হিসেবে স্বীকার করে রাহব তার বেশ্যাবৃত্তি ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমেও বিশ্বাস দেখিয়েছিলেন। (যিহোশূয়ের পুস্তক ২:৯-১১; ইব্রীয় ১১:৩০, ৩১) তিনি যিহোবার এক দাসকে বিয়ে করেছিলেন, অবিশ্বাসী কোনো কনানীয়কে নয়। (দ্বিতীয় বিবরণ ৭:৩, ৪; ১ করিন্থীয় ৭:৩৯) মশীহের পূর্বপুরুষ হওয়ার এক বিরাট সুযোগ রাহবের হয়েছিল। (১ বংশাবলি ২:৩-১৫; রূতের বিবরণ ৪:২০-২২; মথি ১:৫, ৬) অন্যদের মতো, যাদের মধ্যে কেউ কেউ অনৈতিক জীবনযাপন ছেড়ে দিয়েছে, তিনিও আরেকটা পুরস্কার পাবেন—পরমদেশ পৃথিবীতে জীবনে পুনরুত্থান।

১৩. বৎশেবার সঙ্গে দায়ূদ কোন পাপ করেছিলেন কিন্তু তিনি কেমন মনোভাব দেখিয়েছিলেন?

১৩ রাহব তার পাপপূর্ণ জীবন ছেড়ে দেওয়ার পর স্পষ্টতই সৎ কাজ করা বজায় রেখেছিলেন। কিন্তু, কিছুজন দীর্ঘদিন ধরে ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গীকৃত হওয়ার পরও গুরুতর পাপ করেছে। রাজা দায়ূদ, বৎশেবার সঙ্গে ব্যভিচার করেছিলেন, তার স্বামীকে যুদ্ধক্ষেত্রে হত্যা করিয়েছিলেন এবং এরপর তাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। (২ শমূয়েল ১১:১-২৭) গভীর দুঃখে অনুতপ্ত হয়ে দায়ূদ যিহোবার কাছে বিনতি করেছিলেন: “তোমার পবিত্র আত্মাকে আমা হইতে হরণ করিও না।” দায়ূদ ঈশ্বরের আত্মাকে হারাননি। তার বিশ্বাস ছিল যে, যিহোবা তাঁর দয়া দেখিয়ে পাপের কারণে “ভগ্ন ও চূর্ণ অন্তঃকরণ” ব্যক্তিকে তুচ্ছ করবেন না। (গীতসংহিতা ৫১:১১, ১৭; ১০৩:১০-১৪) দায়ূদ ও বৎশেবা তাদের বিশ্বাসের জন্য মশীহের বংশধরের তালিকায় পুরস্কারজনক স্থান পেয়েছিল।—১ বংশাবলি ৩:৫; মথি ১:৬, ১৬; লূক ৩:২৩, ৩১.

বিশ্বাস নিশ্চয়তার মাধ্যমে শক্তিশালী হয়

১৪. গিদিয়োন কোন নিশ্চয়তা পেয়েছিলেন আর এই ঘটনা কীভাবে আমাদের বিশ্বাসকে প্রভাবিত করে?

১৪ যদিও আমরা বিশ্বাসের মাধ্যমে চলি কিন্তু আমাদের হয়তো কখনও কখনও ঐশিক সাহায্যের নিশ্চয়তা দরকার হয়। এটা বিচারকর্তা গিদিয়োনের বেলায় সত্য হয়েছিল, যিনি “বিশ্বাস দ্বারা” যে-ব্যক্তিরা ‘নানা রাজ্য পরাজয় করিয়াছিলেন,’ তাদের মধ্যে একজন ছিলেন। (ইব্রীয় ১১:৩২, ৩৩) মিদিয়নীয়রা এবং তাদের মিত্ররা যখন ইস্রায়েল আক্রমণ করেছিল, তখন ঈশ্বরের আত্মা গিদিয়োনকে আবেশ করেছিল। যিহোবা যে তার সঙ্গে আছেন, সেই নিশ্চয়তা পাওয়ার জন্য তিনি ছিন্ন মেষলোম সারারাত খামারে রাখার পরীক্ষার বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। প্রথম পরীক্ষায় শুধু লোমের ওপর শিশির পড়েছিল কিন্তু ভূমি শুকনো ছিল। দ্বিতীয় পরীক্ষার সময় পরিস্থিতি বিপরীত হয়েছিল। এইধরনের নিশ্চয়তার মাধ্যমে শক্তিশালী হয়ে সতর্ক গিদিয়োন বিশ্বাস দেখিয়ে কাজ করেছিলেন এবং ইস্রায়েলের শত্রুদের পরাজিত করেছিলেন। (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৬:৩৩-৪০; ৭:১৯-২৫) সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমরা যদি নিশ্চয়তা চাই, তা হলে এর অর্থ এই নয় যে আমাদের বিশ্বাসের অভাব আছে। আসলে আমরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বাইবেল এবং খ্রিস্টীয় প্রকাশনাদি থেকে পরামর্শ নিয়ে ও পবিত্র আত্মার নির্দেশনার জন্য প্রার্থনা করে বিশ্বাস দেখাই।—রোমীয় ৮:২৬, ২৭.

১৫. বারকের বিশ্বাস সম্বন্ধে বিবেচনা করে কীভাবে আমরা সাহায্য পেতে পারি?

১৫ বিচারকর্তা বারকের বিশ্বাস এক উৎসাহজনক নিশ্চয়তার মাধ্যমে শক্তিশালী হয়েছিল। ভাববাদিনী দবোরা তাকে ইস্রায়েলীয়দের হতাশা থেকে মুক্ত করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার উৎসাহ দিয়েছিলেন, যে-হতাশা কনানীয় রাজা যাবীনের কারণে হয়েছিল। বিশ্বাস দেখিয়ে এবং ঐশিক সাহায্যের নিশ্চয়তায় বারক ১০,০০০ সামান্য সজ্জিত লোকেদের যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন এবং সীষরার নেতৃত্বে যাবীনের বিরাট সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে জয়লাভ করেন। সেই বিজয় দবোরা এবং বারকের রোমাঞ্চকর গানের মাধ্যমে উদ্‌যাপিত হয়েছিল। (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ৪:১–৫:৩১) দবোরা বারককে ইস্রায়েলের ওপর ঈশ্বর নিযুক্ত নেতা হিসেবে কাজ করতে উৎসাহ দিয়েছিলেন আর বারক যিহোবার একজন উপাসক ছিলেন, যিনি বিশ্বাসের মাধ্যমে “অন্যজাতীয়দের সৈন্যশ্রেণী তাড়াইয়া দিলেন।” (ইব্রীয় ১১:৩৪) বারক বিশ্বাসের সঙ্গে কাজ করেছেন বলে ঈশ্বর কীভাবে তাকে আশীর্বাদ করেছিলেন, তা বিবেচনা করা আমাদের সক্রিয় হতে পরিচালিত করতে পারে, যদি কিনা আমরা যিহোবার সেবায় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক কাজ পরিপূর্ণ করতে দ্বিধাবোধ করি।

বিশ্বাস শান্তি বাড়ায়

১৬. লোটের সঙ্গে শান্তি অনুধাবন করার ক্ষেত্রে অব্রাহাম কোন উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন?

১৬ বিশ্বাস যেমন আমাদের ঈশ্বরের সেবার কঠিন দায়িত্বগুলো পরিপূর্ণ করতে সাহায্য করে, ঠিক তেমনই এটা শান্তি এবং প্রশান্তি বাড়ায়। বৃদ্ধ অব্রাহাম ও তার যুবক ভাইপোর পশুপালকরা যখন ঝগড়া করেছিল এবং তাদের আলাদা হয়ে পড়ার দরকার হয়েছিল, তখন অব্রাহাম লোটকে সবচেয়ে ভাল চারণভূমি বেছে নিতে বলেছিলেন। (আদিপুস্তক ১৩:৭-১২) অব্রাহাম নিশ্চয়ই এই সমস্যা সমাধানের জন্য ঈশ্বরের সাহায্যের জন্য বিশ্বাসের সঙ্গে প্রার্থনা করেছিলেন। তার স্বার্থকে প্রথমে রাখার বদলে তিনি বিষয়টা শান্তিপূর্ণভাবে মিটমাট করেছিলেন। আমাদের খ্রিস্টান ভাইবোনদের সঙ্গে যদি আমাদের তর্কবিতর্ক হয়, তা হলে আসুন অব্রাহামের প্রেমময় বিবেচনার উদাহরণের কথা মনে রেখে আমরা বিশ্বাস নিয়ে প্রার্থনা করি এবং “শান্তির চেষ্টা” করি।—১ পিতর ৩:১০-১২.

১৭. কেন আমরা বলতে পারি যে, আপাতদৃষ্টিতে পৌল, বার্ণবা ও মার্কের মধ্যে যে-বিবাদ হয়েছিল, তা শান্তিপূর্ণভাবে মিটমাট হয়ে গিয়েছিল?

১৭ বিশ্বাস সহকারে খ্রিস্টীয় নীতিগুলো কাজে লাগালে, তা কীভাবে শান্তি বাড়ানোর জন্য আমাদের সাহায্য করে, তা বিবেচনা করুন। পৌল যখন তার দ্বিতীয় মিশনারি যাত্রা শুরু করতে যাবেন, তখন বার্ণবা সাইপ্রাস এবং এশিয়া মাইনরের মণ্ডলীগুলো পরিদর্শন করার প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়েছিলেন। কিন্তু, বার্ণবা তার আত্মীয় মার্ককে সঙ্গে নিতে চেয়েছিলেন। পৌল এর সঙ্গে একমত হননি কারণ মার্ক পাম্ফুলিয়াতে তাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। এর ফলে, প্রচণ্ড “বিতণ্ডা” হয়েছিল এবং এই তর্কের ফলে তারা আলাদা হয়ে গিয়েছিল। বার্ণবা মার্ককে সঙ্গে নিয়ে সাইপ্রাস গিয়েছিলেন আর অন্যদিকে পৌল তার সঙ্গী হিসেবে সীলকে বেছে নিয়েছিলেন এবং “সুরিয়া ও কিলিকিয়া দিয়া গমন করিতে করিতে মণ্ডলীগণকে সুস্থির করিলেন।” (প্রেরিত ১৫:৩৬-৪১) পরে সেই বিবাদ মিটমাট হয়ে যায় কারণ মার্ক, পৌলের সঙ্গে রোমে কাজ করেছিলেন এবং পৌল তার অনুকূলে কথা বলেছিলেন। (কলসীয় ৪:১০; ফিলীমন ২৩, ২৪) সা.কা. প্রায় ৬৫ সালে পৌল যখন রোমে বন্দি ছিলেন, তখন তিনি তীমথিয়কে বলেছিলেন: “তুমি মার্ককে সঙ্গে করিয়া আইস, কেননা তিনি পরিচর্য্যা বিষয়ে আমার বড় উপকারী।” (২ তীমথিয় ৪:১১) স্পষ্টতই, বার্ণবা ও মার্কের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে পৌল বিশ্বাসের সঙ্গে প্রার্থনা করেছিলেন এবং এটা শান্তি নিয়ে এসেছিল, যা ‘শান্তির ঈশ্বরের’ সঙ্গে জড়িত।—ফিলিপীয় ৪:৬, ৭.

১৮. ইবদিয়া ও সুন্তুখীর মধ্যে কী হয়েছিল বলে মনে হয়?

১৮ অবশ্য, অসিদ্ধ হওয়ার ফলে “আমরা সকলে অনেক প্রকারে উছোট খাই।” (যাকোব ৩:২) দুজন খ্রিস্টান মহিলার মধ্যে সমস্যা হয়েছিল, যাদের সম্বন্ধে পৌল লিখেছিলেন “আমি ইবদিয়াকে বিনতি করিয়া, ও সুন্তুখীকে বিনতি করিয়া বলিতেছি, তোমরা প্রভুতে একই বিষয় ভাব। . . . ইহাঁদের সাহায্য কর, কেননা ইহারা সুসমাচারে আমার সহিত পরিশ্রম করিয়াছিলেন।” (ফিলিপীয় ৪:১-৩) সম্ভবত এই ঈশ্বর-ভয়শীল মহিলারা মথি ৫:২৩, ২৪ পদে লিপিবদ্ধ পরামর্শ কাজে লাগিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের সমস্যার সমাধান করেছিল। বিশ্বাসের সঙ্গে শাস্ত্রীয় পরামর্শ কাজে লাগালে, তা আজকেও শান্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রে অনেক অবদান রাখে।

বিশ্বাস আমাদের সহ্য করতে সাহায্য করে

১৯. কোন কষ্টকর পরিস্থিতি ইস্‌হাক ও রিবিকার বিশ্বাসকে কখনও নষ্ট করতে পারেনি?

১৯ বিশ্বাসের মাধ্যমে আমরাও দুর্দশা সহ্য করতে পারি। আমরা হয়তো আমাদের পরিবারের কোনো বাপ্তাইজিত সদস্য অবিশ্বাসী কাউকে বিয়ে করে ঈশ্বরের অবাধ্য হয়েছে বলে হতাশ হতে পারি। (১ করিন্থীয় ৭:৩৯) ইস্‌হাক এবং রিবিকার ছেলে এষৌ অধার্মিক মহিলাদের বিয়ে করেছিলেন বলে তারা কষ্টভোগ করেছিল। তার হিত্তিয় স্ত্রীরা তাদের কাছে “মনের দুঃখদায়িকা হইল”—এতটাই হয়েছিল যে, রিবিকা বলেছিলেন: “এই হিত্তীয়দের কন্যাদের বিষয় আমার প্রাণে ঘৃণা হইতেছে। যদি যাকোবও ইহাদের মত কোন হিত্তীয় কন্যাকে, এতদ্দেশীয় কন্যাদের মধ্যে কোন কন্যাকে বিবাহ করে, তবে প্রাণধারণে আমার কি লাভ?” (আদিপুস্তক ২৬:৩৪, ৩৫; ২৭:৪৬) তবুও, এই কষ্টকর পরিস্থিতি ইস্‌হাক ও রিবিকার বিশ্বাসকে নষ্ট করে দিতে পারেনি। আসুন আমরা দৃঢ় বিশ্বাস বজায় রাখি, এমনকি পরিস্থিতি যদি আমাদের কাছে কঠিন বলেও মনে হয়।

২০. নয়মী ও রূতের বিশ্বাসের কোন উদাহরণ আমাদের আছে?

২০ বৃদ্ধা নয়মী একজন যিহুদি ছিলেন এবং জানতেন যে, যিহূদার একজন মহিলা সন্তানের জন্ম দেবে, যিনি মশীহের পূর্বপুরুষ হবেন। কিন্তু, তার ছেলেরা মারা যাওয়ায় এবং তার সন্তান জন্ম দেওয়ার বয়স পার হয়ে যাওয়ায় তার পরিবারের মশীহের বংশধর হওয়ার সম্ভাবনা সত্যিই ক্ষীণ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, তার বিধবা পুত্রবধূ রূৎ বয়স্ক বোয়সের স্ত্রী হন, তার জন্য এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন এবং যিশুর অর্থাৎ মশীহের পূর্বপুরুষ হন। (আদিপুস্তক ৪৯:১০, ৩৩; রূতের বিবরণ ১:৩-৫; ৪:১৩-২২; মথি ১:১, ৫) নয়মী এবং রূতের বিশ্বাস দুর্দশার মধ্যেও টিকে ছিল এবং তা তাদের জন্য আনন্দ নিয়ে এসেছিল। আমাদেরও অনেক আনন্দ থাকবে, যদি আমরা দুর্দশার সময়ে বিশ্বাস বজায় রাখি।

২১. বিশ্বাস আমাদের জন্য কী করতে পারে এবং আমাদের সংকল্প কী হওয়া উচিত?

২১ যদিও আমরা বলতে পারি না যে, ব্যক্তিগতভাবে কালকে আমাদের জন্য কী আসবে কিন্তু বিশ্বাসের মাধ্যমে আমরা যেকোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতার মোকাবিলা করতে পারি। বিশ্বাস আমাদের সাহসী এবং ধৈর্যশীল করে। এটা আমাদের সর্বোত্তম লক্ষ্যগুলো এবং পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন দেয়। অন্যদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এবং দুর্দশার মধ্যে টিকে থাকতে বিশ্বাসের ইতিবাচক এক প্রভাব রয়েছে। তাই, আমরা যেন “প্রাণের রক্ষার জন্য বিশ্বাসের লোক” হই। (ইব্রীয় ১০:৩৯) আমাদের প্রেমময় ঈশ্বর, যিহোবার শক্তিতে এবং তাঁর মহিমায় আসুন আমরা সবসময় বিশ্বাস অনুশীলন করে চলি।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• বিশ্বাস যে আমাদের সাহসী করে তোলে, সেটার কোন শাস্ত্রীয় প্রমাণ রয়েছে?

• কেন আমরা বলতে পারি যে, বিশ্বাস আমাদের এক পরিতৃপ্তিদায়ক জীবন দেয়?

• বিশ্বাস কীভাবে শান্তি বাড়ায়?

• কোন প্রমাণ রয়েছে যে, বিশ্বাস আমাদের দুর্দশা সহ্য করতে সাহায্য করে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

বিশ্বাস নোহ এবং হনোককে যিহোবার বার্তা ঘোষণা করতে সাহস জুগিয়েছিল

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

মোশির মতো বিশ্বাস আমাদের আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোর অনুধাবন করতে প্রেরণা দেয়

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

ঐশিক সাহায্যের নিশ্চয়তা বারক, দবোরা এবং গিদিয়োনের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছিল