সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“উদ্যোগী রাজ্য ঘোষণাকারীরা” আনন্দের সঙ্গে সমবেত হয়

“উদ্যোগী রাজ্য ঘোষণাকারীরা” আনন্দের সঙ্গে সমবেত হয়

“উদ্যোগী রাজ্য ঘোষণাকারীরা” আনন্দের সঙ্গে সমবেত হয়

 নৈতিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সংকট জগৎকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। কিন্তু, এই অশান্ত অবস্থার মধ্যেও যিহোবার সাক্ষিরা তিন দিনের শান্তিপূর্ণ “উদ্যোগী রাজ্য ঘোষণাকারীরা” জেলা সম্মেলনগুলোর জন্য একত্রিত হয়েছিল। ২০০২ সালের মে মাস থেকে শুরু করে এই জনসমাবেশগুলো সারা পৃথিবীতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

সম্মেলনগুলো সত্যিই আনন্দপূর্ণ সময় হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল। আসুন, আমরা সংক্ষেপে গঠনমূলক বাইবেল-ভিত্তিক কার্যক্রমটি পুনরালোচনা করি।

প্রথম দিন যিশুর উদ্যোগের ওপর জোর দিয়েছিল

সম্মেলনের প্রথম দিনের বিষয়বস্তু ছিল, “আমাদের প্রভু, যীশুর উদ্যোগ অনুকরণ করুন।” (যোহন ২:১৭) “রাজ্য ঘোষণাকারী হিসেবে একত্রিত হতে পেরে আনন্দ করুন,” নামক বক্তৃতা উপস্থিত সকলকে সেই আনন্দে অংশ নিতে উষ্ণ আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, যা ঈশ্বরের লোকেদের সম্মেলনগুলোর এক চিরন্তন বৈশিষ্ট্য। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৬:১৫) এই বক্তৃতার পরে উদ্যোগী সুসমাচার প্রচারকদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল।

“যিহোবাতে আমোদ করুন,” নামক বক্তৃতা গীতসংহিতা ৩৭:১-১১ পদ এক এক করে তুলে ধরেছিল। আমাদের অনুরোধ জানানো হয়েছিল যেন আমরা দুষ্টদের বাহ্যিক সাফল্য দেখে ‘রুষ্ট না হই।’ যদিও দুষ্ট ব্যক্তিরা আমাদের সম্বন্ধে অপপ্রচার করতে পারে কিন্তু যিহোবা তাঁর সময়মতো প্রমাণ করবেন যে, কে তাঁর বিশ্বস্ত লোক। “কৃতজ্ঞ হোন,” নামক বক্তৃতা আলোচনা করেছিল যে, কীভাবে আমরা ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখাতে পারি। সমস্ত খ্রিস্টানকে যিহোবার উদ্দেশে “স্তব বলি” উৎসর্গ করতে হবে। (ইব্রীয় ১৩:১৫) অবশ্য, যিহোবার সেবায় আমরা কতটুকু সময় দেব, তা আমাদের কৃতজ্ঞতা এবং পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।

মুখ্য বক্তৃতার শিরোনাম ছিল “রাজ্যের ঘোষণাকারীরা উদ্যোগী।” এই বক্তৃতা যিশু খ্রিস্টকে আমাদের উদ্যোগের সবচেয়ে উত্তম উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছিল। ১৯১৪ সালে স্বর্গীয় রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, সত্য খ্রিস্টানদের সুসমাচার ঘোষণা করার জন্য উদ্যোগের প্রয়োজন ছিল। বক্তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওর সিডার পয়েন্টের সম্মেলনের বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন এবং আমাদের এই ঐতিহাসিক আহ্বানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন: “রাজা ও তাঁর রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করুন”! সময় পেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসদের উদ্যোগ, সমস্ত জাতির কাছে রাজ্যের অপূর্ব সত্য সম্বন্ধে জানানোর জন্য তাদের পরিচালিত করেছিল।

প্রথম দিন দুপুরে দেওয়া “যিহোবা আমাদের সঙ্গে আছেন জেনে নির্ভীক হোন,” নামক বক্তৃতা দেখিয়েছিল যে, ঈশ্বরের লোকেরা শয়তানের বিশেষ লক্ষ্যবস্তু। কিন্তু, আমরা বিভিন্ন বিরোধিতার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও, বাইবেলের এবং আধুনিক দিনের অনেক উদাহরণ বিবেচনা করলে, সেগুলো আমাদের নির্ভীকভাবে পরীক্ষা এবং তাড়নার মোকাবিলা করতে সাহস জোগায়।—যিশাইয় ৪১:১০.

কার্যক্রমের পরের বিষয়বস্তু ছিল তিন অংশের সিম্পোজিয়াম বক্তৃতা, যেটার বিষয়বস্তু ছিল “মীখার ভবিষ্যদ্বাণী যিহোবার নামে চলতে আমাদের শক্তিশালী করে।” প্রথম বক্তা মীখার দিনের নৈতিক অবক্ষয়, ধর্মভ্রষ্টতা ও বস্তুবাদিতার সঙ্গে আমাদের দিনের তুলনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “ভবিষ্যতের বিষয়ে আমাদের আশা নিশ্চিত হবে যদি আমরা এক বাধ্য হৃদয় গড়ে তুলি এবং নিশ্চিত করি যে, আমাদের আচরণ পবিত্র ও আমাদের জীবন ঈশ্বরীয় ভক্তির কাজগুলোর দ্বারা পূর্ণ—আর আমরা যদি কখনও ভুলে না যাই যে যিহোবার দিন আসবেই।”২ পিতর ৩:১১, ১২.

সিম্পোজিয়ামের দ্বিতীয় বক্তা, যিহূদার নেতাদের প্রতি মীখার তিরস্কারের বিষয়টা তুলে ধরেছিলেন। তারা দরিদ্র এবং অরক্ষিত লোকেদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করত। কিন্তু, মীখা সত্য উপাসনার বিজয় সম্বন্ধেও বলেছিলেন। (মীখা ৪:১-৫) যিহোবার পবিত্র আত্মার মাধ্যমে শক্তি পেয়ে আমরাও আশার এই সতেজ বার্তা ঘোষণা করার জন্য সংকল্পবদ্ধ। কিন্তু, অসুস্থতা বা অন্যান্য ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা যদি বাধা অনুভব করি, তা হলে? তৃতীয় বক্তা বলেছিলেন: “যিহোবা যা চান, সেগুলো যুক্তিসংগত ও সেইসঙ্গে এগুলো পূরণ করা সাধ্যের মধ্যে রয়েছে।” এরপর তিনি মীখা ৬:৮ পদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলেন, যেখানে আমরা পড়ি: “ন্যায্য আচরণ, দয়ায় অনুরাগ ও নম্রভাবে [“বিনয়ের সঙ্গে,” NW] তোমার ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন, ইহা ব্যতিরেকে সদাপ্রভু তোমার কাছে আর কিসের অনুসন্ধান করেন?”

যেহেতু জগতের নৈতিক অবক্ষয় খ্রিস্টানদেরও প্রভাবিত করে, তাই আমরা সকলে “আপনার হৃদয়কে রক্ষা করে শুদ্ধতা বজায় রাখুন,” নামক বক্তৃতা থেকে উপকার পেয়েছিলাম। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের শুদ্ধতা বজায় রাখা আমাদের এক সুখী বিবাহিত জীবন লাভ করতে সাহায্য করেছে। খ্রিস্টান হিসেবে, আমাদের কখনও এমনকি যৌন অনৈতিকতায় জড়িত হওয়ার বিষয়ে চিন্তা করাও উচিত নয়।—১ করিন্থীয় ৬:১৮.

“প্রতারণার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকুন,” নামক বক্তৃতা দেখিয়েছিল যে, ধর্মভ্রষ্টদের বিকৃত, অর্ধসত্য এবং সরাসরি মিথ্যা প্রতারণাকে আমরা বিজ্ঞের সঙ্গে বিষাক্ত হিসেবে দেখি। (কলসীয় ২:৮) একইভাবে, আমাদের এইরকম চিন্তা করে নিজেদের প্রতারিত করা উচিত নয় যে, কোনো ক্ষতিকর পরিণতি ছাড়াই আমরা আমাদের পাপপূর্ণ আকাঙ্ক্ষাগুলোকে চরিতার্থ করতে পারব।

“একমাত্র সত্য ঈশ্বরের উপাসনা করুন,” ছিল প্রথম দিনের শেষ বক্তৃতার শিরোনাম। জগতের অবস্থা যতই সংকটপূর্ণ হচ্ছে, ততই এটা জানা কত উৎসাহজনক যে, যিহোবা শীঘ্রই তাঁর ধার্মিক নতুন জগৎ নিয়ে আসবেন! এর মধ্যে কারা থাকবে? একমাত্র তারা, যারা যিহোবার উপাসনা করে। আমাদের, ছেলেমেয়েদের এবং বাইবেল ছাত্রদের এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য সাহায্য করতে বক্তা একমাত্র সত্য ঈশ্বরের উপাসনা করুন নামক একটা নতুন অধ্যয়ন বই প্রকাশের কথা ঘোষণা করেছিলেন। সেটা পেয়ে আমরা কত আনন্দিতই না হয়েছিলাম!

দ্বিতীয় দিন সদাচরণের পক্ষে উদ্যোগী হওয়ার ওপর জোর দিয়েছিল

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের বিষয়বস্তু ছিল, “সদাচরণের পক্ষে উদ্যোগী হোন।” (১ পিতর ৩:১৩) প্রথম বক্তা বাইবেলের দৈনিক শাস্ত্রপদ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। তিনি জোর দিয়েছিলেন যে, নিয়মিত এবং অর্থপূর্ণভাবে দৈনিক শাস্ত্রপদ বিবেচনা করলে, সেটা আমাদের উদ্যোগ বাড়ায়।

এরপর ছিল “রাজ্য ঘোষণাকারীরা যারা তাদের পরিচর্যাকে গৌরবান্বিত করে” সিম্পোজিয়াম। প্রথম অংশ ঈশ্বরের বাক্য যথার্থরূপে ব্যবহার করার ওপর জোর দিয়েছিল। (২ তীমথিয় ২:১৫) ঈশ্বরের বাক্য উত্তমভাবে ব্যবহার করলে এটা লোকেদের জীবনে ‘কার্য্যসাধনের’ পথ খুলে দেয়। (ইব্রীয় ৪:১২) আমাদের বাইবেলের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করানো উচিত এবং এটির ওপর দৃঢ়প্রত্যেয়ের সঙ্গে যুক্তি করা উচিত। সিম্পোজিয়ামের দ্বিতীয় অংশ আমাদের আগ্রহী ব্যক্তিদের সঙ্গে বার বার পুনর্সাক্ষাৎ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিল। (১ করিন্থীয় ৩:৬) সকল আগ্রহী ব্যক্তিদের প্রণোদিত করার জন্য প্রস্তুতি এবং সাহসের প্রয়োজন। তৃতীয় অংশ, যত ব্যক্তির সঙ্গে আমাদের দেখা হয় তাদের প্রত্যেককে এক সম্ভাব্য শিষ্য হিসেবে দেখার পরামর্শ দিয়েছিল এবং দেখিয়েছিল যে, প্রথম সাক্ষাতে একটা বাইবেল অধ্যয়নের প্রস্তাব দিলে, সেটা লোকেদের শিষ্য তৈরি করার জন্য সাহায্য করতে পারার আনন্দের দিকে পরিচালিত করতে পারে।

পরের বক্তৃতার বিষয়বস্তু ছিল, “যে-কারণে ‘অবিরত প্রার্থনা’ করবেন।” বাইবেল খ্রিস্টানদের তাদের জীবনের সমস্ত দিকে নির্দেশনা লাভের জন্য ঈশ্বরের দিকে দৃষ্টি দিতে পরামর্শ দেয়। ব্যক্তিগত প্রার্থনার জন্য আমাদের সময় করে নেওয়া দরকার। সর্বোপরি, আমাদের প্রার্থনায় রত থাকতে হবে কারণ যিহোবা হয়তো ততক্ষণ আমাদের প্রার্থনা করে যেতে অনুমতি দিতে পারেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাঁর সাড়া দেওয়ার ব্যাপারটা আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে।—যাকোব ৪:৮.

“আধ্যাত্মিক বিষয়ে কথাবার্তা বলা গেঁথে তোলে,” নামক বক্তৃতা আমাদের নিজেদের ও অন্যদের উপকারের জন্য কথা বলার প্রতিভাকে ব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়েছিল। (ফিলিপীয় ৪:৮) বিবাহ সাথি এবং ছেলেমেয়েদের প্রতিদিন আধ্যাত্মিক বিষয় নিয়ে কিছু কথাবার্তা বলার প্রয়োজন। এই কারণে পরিবারগুলোর দিনে অন্তত একবার একসঙ্গে খাবার খাওয়া উচিত, যা গঠনমূলক আলাপআলোচনার সুযোগ করে দেবে।

সকালের কার্যক্রম এই হৃদয়গ্রাহী বক্তৃতা দিয়ে শেষ হয়েছিল, “উৎসর্গীকরণ এবং বাপ্তিস্ম যেভাবে পরিত্রাণের দিকে পরিচালিত করে।” বাপ্তিস্ম প্রার্থীরা জ্ঞান অর্জন করেছে, বিশ্বাস অনুশীলন করেছে, অনুতপ্ত হয়েছে, অন্যায় কাজ থেকে সরে এসেছে এবং নিজেদের ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ করেছে। বক্তা উল্লেখ করেন যে, বাপ্তিস্ম নেওয়ার পর, তাদের ক্রমাগত আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে বেড়ে উঠতে হবে এবং তাদের উদ্যোগ ও উত্তম আচরণ বজায় রাখতে হবে।—ফিলিপীয় ২:১৫, ১৬.

সেই দিন দুপুরে “বিনয়ী হোন এবং আপনার চোখ সরল রাখুন” বক্তৃতায় দুটো প্রধান বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। বিনয়ী হওয়ার মানে হল, ঈশ্বরের সামনে আমাদের সীমাবদ্ধতা এবং অবস্থানের প্রতি বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি রাখা। বিনয়ী মনোভাব আমাদের চোখকে “সরল” রাখতে সাহায্য করে—বস্তুগত বিষয়ের ওপর নয় কিন্তু ঈশ্বরের রাজ্যের ওপর কেন্দ্রীভূত রাখে। আমরা যদি তা করি, তা হলে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই কারণ যিহোবা আমাদের প্রয়োজনগুলো জোগাবেন।—মথি ৬:২২-২৪, ৩৩, ৩৪.

পরের বক্তা দেখিয়েছিলেন যে, কেন আমাদের ‘দুর্দশার সময়ে যিহোবার ওপর পুরোপুরি আস্থা রাখতে’ হবে। কীভাবে আমরা এইধরনের বিষয়গুলো যেমন, ব্যক্তিগত দুর্বলতা এবং আর্থিক বা শারীরিক সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি? আসুন আমরা যিহোবার কাছে ব্যবহারিক প্রজ্ঞা চাই এবং অন্যদের কাছে থেকে সাহায্য চাই। আতঙ্কিত বা হতাশ না হয়ে আমাদের ঈশ্বরের বাক্য পড়ার মাধ্যমে তাঁর ওপর আমাদের আস্থাকে শক্তিশালী করা উচিত।—রোমীয় ৮:৩৫-৩৯.

সম্মেলনের শেষ সিম্পোজিয়ামের বিষয়বস্তু ছিল, “আমাদের বিশ্বাসের গুণগত মান বিভিন্ন পরীক্ষার দ্বারা যাচাই হয়।” এর প্রথম অংশ আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছিল যে, সমস্ত সত্য খ্রিস্টান তাড়নার মুখোমুখি হয়। এটা সাক্ষ্য হিসেবে কাজ করে, আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করে এবং ঈশ্বরের প্রতি আমাদের আনুগত্য দেখানোর সুযোগ করে দেয়। যদিও আমরা আমাদের জীবনকে অযথা ঝুঁকির মধ্যে ফেলি না কিন্তু আমরা কখনও তাড়না এড়ানোর জন্য অশাস্ত্রীয় উপায় ব্যবহার করব না।—১ পিতর ৩:১৬.

এই সিম্পোজিয়ামের দ্বিতীয় বক্তা, নিরপেক্ষতার সঙ্গে জড়িত বিষয় নিয়ে প্রশ্নের আলোচনা করেছিলেন। প্রাথমিক খ্রিস্টানরা শান্তিবাদী ছিল না কিন্তু তারা বুঝতে পেরেছিল যে, মূলত ঈশ্বরের প্রতি তাদের অনুগত থাকতে হবে। একইভাবে আজকে যিহোবার সাক্ষিরা এই নীতি দৃঢ়ভাবে ধরে রেখেছে: “তোমরা ত জগতের নহ।” (যোহন ১৫:১৯) যেহেতু, শীঘ্রই আমাদের নিরপেক্ষতার পরীক্ষা আসতে পারে, তাই পরিবারগুলোর এই বিষয়ের ওপর বাইবেলের নির্দেশনা পুনরালোচনা করার জন্য সময় করে নেওয়া উচিত। এই সিম্পোজিয়ামের তৃতীয় বক্তৃতা যেমন দেখিয়েছিল যে, শয়তানের লক্ষ্য মূলত আমাদের মেরে ফেলা নয় কিন্তু অবিশ্বস্ত হয়ে পড়ার জন্য আমাদের চাপ দেওয়া। বিশ্বস্ততার সঙ্গে উপহাস, অনৈতিক চাপ, মানসিক কষ্ট এবং অসুস্থতা ভোগ করার মাধ্যমে আমরা যিহোবার জন্য প্রশংসা নিয়ে আসতে পারি।

“যিহোবার নিকটবর্তী হোন” এই উষ্ণ আমন্ত্রণ ছিল দিনের শেষ বক্তৃতার শিরোনাম। যিহোবার মুখ্য গুণগুলো আমাদের তাঁর প্রতি আকৃষ্ট করে। তিনি তাঁর লোকেদের বিশেষ করে আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে সাহায্য করার জন্য তাঁর অসীম ক্ষমতা ব্যবহার করেন। তাঁর ন্যায়বিচার কঠোর নয় কিন্তু যারা ধর্মাচরণ করে, তাদের প্রত্যেকের জন্য সহজেই অনন্তজীবন পাওয়ার ব্যবস্থা করতে তাঁকে পরিচালিত করে। বাইবেল লেখার জন্য ঈশ্বর যে অসিদ্ধ মানুষকে ব্যবহার করেছেন, সেটার মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রজ্ঞার প্রমাণ পাওয়া যায়। সবচেয়ে প্রীতিকর হল তাঁর প্রেম, যা তাঁকে যিশু খ্রিস্টের মাধ্যমে মানবজাতির জন্য পরিত্রাণের ব্যবস্থা করতে পরিচালিত করেছে। (যোহন ৩:১৬) বক্তা যিহোবার নিকটবর্তী হোন নামক নতুন হৃদয়গ্রাহী বইয়ের প্রকাশের মাধ্যমে বক্তৃতা শেষ করেছিলেন।

তৃতীয় দিন সৎক্রিয়াতে উদ্যোগী হওয়ার বিষয় তুলে ধরে

সম্মেলনের তৃতীয় দিনের বিষয়বস্তু ছিল, “সৎক্রিয়াতে উদ্যোগী প্রজাবর্গ।” (তীত ২:১৪) সকালের কার্যক্রম পরিবারের সঙ্গে দিনের শাস্ত্রপদ আলোচনার মাধ্যমে শুরু হয়েছিল। পরের বক্তৃতা ছিল, “যিহোবার ওপর কি আপনার আস্থা আছে?” লোকেরা তাদের নিজেদের প্রজ্ঞা এবং শক্তির ওপর বিশ্বাস করে ভুল জায়গায় তাদের আস্থা রেখেছে। কিন্তু, এর বিপরীতে যিহোবার দাসেরা দুর্দশা সত্ত্বেও, সাহস ও আনন্দের সঙ্গে তাঁর ওপর নির্ভর করে।—গীতসংহিতা ৪৬:১-৩, ৭-১১.

“যুবক-যুবতীরা—যিহোবার সংগঠনের সাহায্যে ভবিষ্যৎ গড়ে তোলো” নামক বক্তৃতা এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিল: যুবক-যুবতীরা কীভাবে তাদের জীবন থেকে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট বিষয়টা পেতে পারে? এটা টাকাপয়সার পিছনে ছোটা, বস্তুগত সম্পদ লাভ করা এবং মর্যাদাপূর্ণ পেশায় জড়িত হওয়ার মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব নয়। আমাদের সৃষ্টিকর্তা প্রেমের সঙ্গে যুবক-যুবতীদের যৌবনকালেই তাঁকে স্মরণ করতে অনুরোধ জানিয়েছেন। বক্তা কয়েকজনের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন, যারা তাদের যৌবনকালেই খ্রিস্টীয় সেবা শুরু করেছে এবং আনন্দ পাচ্ছে। আর যুবক-যুবতীরা—তোমাদের জীবনকে তোমরা কীভাবে কাজে লাগাবে? নামক নতুন ট্র্যাক্ট পাওয়া কত উপকারীই না ছিল, যা যুবক-যুবতীদের যিহোবার সংগঠনে অনন্ত ভবিষ্যতের ভিত্তি গড়ে তোলার জন্য সাহায্য করতে তৈরি করা হয়েছে!

এরপর আকর্ষণীয় বাইবেল-ভিত্তিক নাটক হয়েছিল, “তাড়নার সময়ে অটল থাকুন।” এটা যিরমিয়ের অল্পবয়স থেকে শুরু করে যিরূশালেমের ধ্বংস, যে সম্বন্ধে তিনি উদ্যোগের সঙ্গে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, সেই দীর্ঘ জীবনের সারাংশ তুলে ধরেছিল। যিরমিয় তাঁর কার্যভারের ব্যাপারে নিজেকে অযোগ্য মনে করেছিলেন কিন্তু তিনি তা বিরোধিতার মধ্যেও পরিপূর্ণ করেছিলেন এবং যিহোবা তাঁকে উদ্ধার করেছিলেন।—যিরমিয় ১:৮, ১৮, ১৯.

নাটকের পরে “যিরমিয়ের মতো হোন—নির্ভীকভাবে ঈশ্বরের বাক্য ঘোষণা করুন” বক্তৃতা হয়েছিল। বর্তমান দিনের রাজ্য ঘোষণাকারীরা প্রায়ই মিথ্যা তথ্য এবং বিদ্বেষপরায়ণ অপপ্রচারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। (গীতসংহিতা ১০৯:১-৩) কিন্তু, যিরমিয়ের মতো আমরাও যিহোবার বাক্যে আনন্দ করার মাধ্যমে নিরুৎসাহিতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারি। আমরা আস্থা রাখতে পারি যে, যারা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তারা জয়ী হতে পারবে না।

বস্তুত, “এই জগতের দৃশ্যপট পরিবর্তিত হচ্ছে” নামক জনসাধারণের বক্তৃতা সময়োপযোগী ছিল। আমাদের সময়টা নাটকীয় পরিবর্তনের যুগ। বাইবেল ভবিষ্যদ্বাণী করে যে, এইধরনের পরিস্থিতি ও সেইসঙ্গে ‘শান্তি ও অভয়ের’ জন্য আর্তনাদ ঈশ্বরের ভয়ানক বিচারের দিনের দিকে নিয়ে যাবে। (১ থিষলনীকীয় ৫:৩) এটা অপূর্ব পরিবর্তনগুলো নিয়ে আসবে—সমস্ত যুদ্ধ, অপরাধ, দৌরাত্ম্য এবং এমনকি রোগের শেষ। তাই, এই বিধিব্যবস্থার ওপর নির্ভর করার বদলে এটা হল ঈশ্বরীয় ভক্তি এবং শুদ্ধ আচরণ বজায় রাখার সময়।

সাপ্তাহিক প্রহরীদুর্গ সারাংশের পরে সম্মেলনের শেষ বক্তৃতা হয়েছিল, যার শিরোনাম ছিল “উদ্যোগী রাজ্য ঘোষণাকারী হিসেবে সৎক্রিয়ায় উপচে পড়ুন।” বক্তা বলেছিলেন যে, কীভাবে কার্যক্রম আমাদের আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে উদ্দীপিত করেছে এবং যিহোবার ওপর নির্ভর করতে আমাদের সাহায্য করেছে। উপসংহারে তিনি আমাদের শুদ্ধ থাকতে, প্রেমময় হতে এবং ঈশ্বরের রাজ্যের উদ্যোগী ঘোষক হতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।—১ পিতর ২:১২.

নহিমিয়ের দিনের যিহোবার দাসদের মতো মনোভাব রেখে নিশ্চিতভাবে আমরা “উদ্যোগী রাজ্য ঘোষণাকারীরা” জেলা সম্মেলনে পাওয়া আধ্যাত্মিক আশীর্বাদগুলো নিয়ে আনন্দ করতে করতে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলাম। (নহিমিয় ৮:১২) এই উদ্দীপনামূলক সম্মেলন কি আপনাকে আনন্দে পরিপূর্ণ এবং উদ্যোগী রাজ্য ঘোষণাকারী হিসেবে অটল থাকতে সংকল্পবদ্ধ করেনি?

[২৩ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

এক নতুন অধ্যয়ন সহায়ক!

সম্মেলনের প্রথম দিনের শেষে, সেখানে উপস্থিত সকলে একমাত্র সত্য ঈশ্বরের উপাসনা করুন নামক নতুন বই প্রকাশিত হওয়ায় আনন্দিত হয়েছিল। এটি সেইসব ব্যক্তিদের সঙ্গে অধ্যয়ন করানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, যারা ইতিমধ্যেই জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে বইটা শেষ করে ফেলেছে আর নিঃন্দেহে এটি তাদের বিশ্বাসকেও শক্তিশালী করবে, যারা “অনন্ত জীবনের জন্য নিরূপিত।”—প্রেরিত ১৩:৪৮.

[সৌজন্যে]

বইয়ের প্রচ্ছদের ছবি: U.S. Navy photo

[২৪ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]

ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য সাহায্য করুন

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের শেষ বক্তা, যিহোবার নিকটবর্তী হোন (ইংরেজি) নামক নতুন বই প্রকাশের কথা ঘোষণা করেছিলেন। এখানে চারটে মূল বিভাগ রয়েছে আর প্রত্যেকটা বিভাগে যিহোবার মৌলিক গুণ অর্থাৎ শক্তি, ন্যায়বিচার, প্রজ্ঞা ও প্রেমের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বইয়ের প্রতিটা বিভাগে একটি করে অধ্যায় রয়েছে, এটা দেখানোর জন্য যে, কীভাবে যিশু খ্রিস্ট ঈশ্বরের গুণগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছিলেন। এই নতুন বইয়ের মূল উদ্দেশ্য হল, আমাদের ও সেইসঙ্গে আমাদের বাইবেল ছাত্রছাত্রীদের যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ এবং দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য সাহায্য করা।

[২৬ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্রগুলো]

যুবক-যুবতীদের জন্য আধ্যাত্মিক নির্দেশনা

সম্মেলনের তৃতীয় দিনটি উল্লেখযোগ্য ছিল কারণ সেই দিন যুবক-যুবতীরা—তোমাদের জীবনকে তোমরা কীভাবে কাজে লাগাবে? নামক একটি বিশেষ ট্র্যাক্ট প্রকাশিত হয়েছিল। যুবক-যুবতী সাক্ষিদের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করার উদ্দেশে তৈরি এই নতুন ট্র্যাক্টটি যিহোবার সেবায় এক অনন্তকালীন বৃত্তি গড়ে তুলতে শাস্ত্রীয় পরামর্শ দেয়।