কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা এবং পরিতৃপ্তি হুমকির মুখে
কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা এবং পরিতৃপ্তি হুমকির মুখে
রাষ্ট্রসংঘের দ্বারা প্রকাশিত মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা (ইংরেজি) অনুসারে, “কাজ করার অধিকার” সমস্ত মানুষের জন্য এক মৌলিক অধিকার। কিন্তু, এই বিশেষাধিকারের নিশ্চয়তা সবসময় থাকে না। চাকরির নিরাপত্তা অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে—স্থানীয় অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে শুরু করে বিশ্ব বাজার পরিস্থিতির ওপর। তা সত্ত্বেও, যখন চাকরি চলে যায় বা চলে যাওয়ার ভয় থাকে, তখন প্রায়ই এর পরিণতি হয় বিক্ষোভ, দাঙ্গা এবং ধর্মঘট। কিছু দেশ এর ব্যতিক্রম। একজন লেখক বলেছিলেন, এমনকি “কাজ” শব্দটা “সবসময়ই এক আবেগ উদ্রেগকারী শব্দ।”
অনেক কারণে কাজ আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। উপার্জন করতে সাহায্য করা ছাড়াও, এটা আমাদের মানসিক এবং আবেগগত মঙ্গলের ক্ষেত্রে অবদান রাখে। কাজ, সমাজে উৎপাদনক্ষম সদস্য হওয়ার বিষয়ে মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে পরিতৃপ্ত করে এবং জীবনে উদ্দেশ্য এনে দেয়। এ ছাড়া, এটা আমাদের মধ্যে কিছুটা হলেও আত্মসম্মানবোধ জাগিয়ে তোলে। তাই এমনকি কেউ কেউ, যাদের নিজেদের চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ আছে বা যারা অবসর গ্রহণ করার জন্য উপযুক্ত, তারাও কাজ করে যেতে চায়। হ্যাঁ, কাজ এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে এর অভাব হলে, তা সাধারণত গুরুতর সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করে।
অন্যদিকে, এমন ব্যক্তিরা রয়েছে যাদের চাকরি আছে ঠিকই কিন্তু কর্মক্ষেত্রে এত বেশি চাপের মুখোমুখি হয় যে, তারা তাদের চাকরির পরিতৃপ্তি হারিয়ে ফেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আজকের তুমুল প্রতিযোগী বাজারের কারণে প্রতিনিয়ত অসংখ্য কোম্পানি ব্যয় কমানোর জন্য তাদের কর্মচারী ছাটাই করেছে। এটা হয়তো অবশিষ্ট কর্মচারীদের ওপর অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দিতে পারে, যাদের হয়তো এভাবে বাড়তি কাজ করতে হতে পারে।
আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যা, যেটির জীবনকে আরও সহজ এবং কাজকে আরও ফলপ্রদ করে তোলার কথা, সেটিই হয়তো কর্মক্ষেত্রে চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কমপিউটার, ফ্যাক্স মেশিন এবং ইন্টারনেটের কারণে লোকেরা দিনের শেষে তাদের কাজ বাড়িতে নেওয়াকেই বেছে নেয় আর এভাবে বাড়ি এবং কর্মক্ষেত্রের মধ্যে কোনো পার্থক্যই থাকে না। একজন কর্মী মনে করতেন যে, তার সঙ্গে যে-পেজার এবং সেলুলার ফোন রয়েছে, সেগুলো এক অদৃশ্য দড়ির মতো, যা অপর প্রান্তে তার মালিক ধরে রেখেছে।
আমাদের দ্রুত পরিবর্তিত অর্থনীতিতে এবং কাজের জায়গায় অনেক বৃদ্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে এই ভয় দিন-দিন বেড়ে যাচ্ছে যে, সময় হওয়ার আগেই না আবার তাদের অকর্মণ্য হিসেবে দেখা হয়। এই সম্বন্ধে, মানবাধিকারের প্রাক্তন কমিশনার ক্রিস সিডোটি বলেছিলেন: “মনে হয় যেন এইরকম
বাঁধাধরা মান রয়েছে যে, আপনার বয়স যদি ৪০ এর নিচে না হয়, তা হলে আপনি কমপিউটার এবং নতুন প্রযুক্তিবিদ্যার সঙ্গে পেরে উঠতে পারবেন না।” তাই, অনেক পরিশ্রমী কর্মী যাদেরকে আগে সবচেয়ে সফল ব্যক্তি বলে মনে করা হয়েছে, তাদের এখন ব্যবহার করার ক্ষেত্রে একেবারেই নগণ্য বলে মনে করা হয়। কতই না দুঃখজনক!এটা স্পষ্ট যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কাজের নীতি এবং কোম্পানির প্রতি আনুগত্য থাকার মান নিচে নেমে গিয়েছে। “শেয়ার বাজার সামান্য পড়ে যাওয়ার কারণে কোনো সংস্থা যখন লোকেদের ছাটাই করে, তখন সংস্থার প্রতি আনুগত্য থাকা অতীতের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়,” ফরাসী পত্রিকা লিবেরাসিয়ঁন বলে। “অবশ্য, আপনাকে কাজ করতে হবে, তবে কোম্পানির জন্য নয় কিন্তু নিজের জন্য।”
বৃদ্ধিরত এই সমস্যাগুলো সত্ত্বেও, কাজ করার বিষয়ে মানুষের মৌলিক চাহিদা একই রয়ে গেছে। তাই, এই দ্রুত পরিবর্তিত সময়ে কীভাবে একজন ব্যক্তি কাজের প্রতি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে এবং একইসঙ্গে নিরাপত্তা এবং চাকরির পরিতৃপ্তি বজায় রাখতে পারেন?
[৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যা হয়তো কর্মক্ষেত্রে চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে