সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনার বাচ্চার হৃদয় আপনা আপনি গড়ে উঠবে বলে ছেড়ে দেবেন না!

আপনার বাচ্চার হৃদয় আপনা আপনি গড়ে উঠবে বলে ছেড়ে দেবেন না!

আপনার বাচ্চার হৃদয় আপনা আপনি গড়ে উঠবে বলে ছেড়ে দেবেন না!

 একজন দক্ষ কুম্ভকারের হাতে, অব্যবহার্য মাটির একটা ঢেলা আকর্ষণীয় পাত্রে পরিবর্তিত হতে পারে। খুব অল্প সংখ্যক কুম্ভকারই সামান্য কিছু থেকে অতি সুন্দর কিছু বানাতে পারে। সহস্র বৎসর ধরে মানবসমাজ কাপ, প্লেট, রান্নার পাত্র, সংরক্ষণ পাত্র ও কারুকার্য করা ফুলদানিগুলোর জন্য কুম্ভকারের ওপর নির্ভর করে এসেছে।

বাবামারাও তাদের বাচ্চাদের চরিত্র ও ব্যক্তিত্বকে গঠন করার দ্বারা সমাজে এক অমূল্য অবদান রাখে। বাইবেল আমাদের প্রত্যেককে মাটির সঙ্গে তুলনা করে এবং ঈশ্বর বাবামাদের তাদের “মৃত্তিকা” অর্থাৎ সন্তানদের গড়ে তোলার গুরুত্বপূর্ণ কাজের ভার দিয়েছেন। (ইয়োব ৩৩:৬; আদিপুস্তক ১৮:১৯) মাটির সুন্দর এক পাত্র তৈরি করার মতো একটি বাচ্চাকে এক দায়িত্বপূর্ণ ও সুষম প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিতে পরিণত করা অত সহজ কাজ নয়। এইধরনের পরিবর্তন আপনা আপনি ঘটে না।

আমাদের বাচ্চাদের হৃদয়কে গড়ে তোলার জন্য অনেক ধরনের প্রভাব কাজ করছে। দুঃখের বিষয় যে, এই প্রভাবগুলোর মধ্যে কয়েকটা হল ক্ষতিকর। তাই একটি বাচ্চার হৃদয়কে আপনা আপনি গড়ে উঠতে না দিয়ে এক বিজ্ঞ বাবামা বাচ্চাকে “তাহার গন্তব্য পথানুরূপ” শিক্ষা দেবে, এই আস্থা রেখে যে ‘সে প্রাচীন হইলে তাহা ছাড়িবে না।’—হিতোপদেশ ২২:৬.

একটা বাচ্চাকে লালনপালন করার দীর্ঘ, গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া চলাকালীন বিজ্ঞ খ্রিস্টান বাবামাদের তাদের বাচ্চার হৃদয়কে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে এমন খারাপ প্রভাবগুলোকে দূর করার জন্য সময় দিতে হবে। তাদের ভালবাসা পুরোপুরি পরীক্ষিত হবে, যখন তারা ধৈর্য ধরে বাচ্চাকে “নির্দেশনা দেয় ও সংশোধন করে, যেটা একজন খ্রিস্টান হিসেবে গড়ে ওঠার অংশ।” (ইফিষীয় ৬:৪, দ্যা নিউ ইংলিশ বাইবেল) বাবামাদের এই কাজ অবশ্যই অনেকটা সহজ হয়ে যাবে, যদি তারা ছোট থেকেই বাচ্চাকে শিক্ষা দিতে শুরু করে।

ছোটকাল থেকেই শুরু করা

কুম্ভকাররা সেই ধরনের মাটি দিয়ে কাজ করতে পছন্দ করে যেটা আকার গড়ে তোলার জন্য উপযুক্তরূপে নমনীয় হয় কিন্তু সেইসঙ্গে যেন শক্তও হয়, যাতে একবার আকার গঠিত হওয়ার পর সেটা বজায় রাখতে পারে। মাটিকে মসৃণ করার পর, ছয় মাসের মধ্যে সেটাকে তারা ব্যবহার করতে পছন্দ করে। একইভাবে বাবামাদের তাদের বাচ্চার হৃদয়কে গড়ে তুলতে শুরু করার সবচেয়ে ভাল সময় হল, যখন তা বেশি গ্রহণ করতে ও সহজে গঠিত হতে পারে।

শিশু বিশেষজ্ঞরা বলে, আট মাস বয়স থেকে একটি বাচ্চা ইতিমধ্যে তার স্থানীয় ভাষার ধ্বনিগুলো বুঝতে শেখে, তার বাবামার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলে, বোধগম্যতা বাড়িয়ে তোলে ও তার আশেপাশের জগৎকে নিরীক্ষণ করতে শুরু করে। তার হৃদয়কে গড়ে তুলতে শুরু করার সবচেয়ে ভাল সময় হচ্ছে যখন সে খুব ছোট। আপনার বাচ্চার জন্য এটা কতই না সুবিধাজনক হবে, যদি তীমথিয়ের মতো সে ‘শিশুকাল অবধি পবিত্র শাস্ত্রকলাপ জ্ঞাত হয়’!—২ তীমথিয় ৩:১৫. *

শিশুরা স্বাভাবিকভাবে তাদের বাবামাকে অনুকরণ করে। ধ্বনি, কথা ও অঙ্গভঙ্গিগুলো নকল করা ছাড়াও তারা প্রেম, দয়া ও করুণা সম্বন্ধে শেখে, যখন তারা তাদের বাবামাদের এই গুণগুলোকে প্রদর্শন করতে দেখে। আমরা যদি যিহোবার নিয়মগুলো অনুযায়ী আমাদের বাচ্চাকে শিক্ষা দিতে চাই, তা হলে প্রথমত আমাদের নিজেদের হৃদয়ে ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলো থাকা উচিত। এইধরনের আন্তরিক উপলব্ধি বাবামাদের তাদের ছেলেমেয়েদের কাছে যিহোবা ও তাঁর বাক্য সম্বন্ধে নিয়মিতভাবে কথা বলতে পরিচালিত করবে। বাইবেল উৎসাহ দেয়, “গৃহে বসিবার কিম্বা পথে চলিবার সময়ে এবং শয়ন কিম্বা গাত্রোত্থান কালে ঐ সমস্তের কথোপকথন করিবে।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭) ফ্রানথেস্কো ও রোজা ব্যাখ্যা করে যে, কীভাবে তারা তাদের ছোট্ট দুই ছেলেমেয়ের সঙ্গে এটা করেছে। *

“প্রতিদিনকার কথাবার্তা ছাড়াও আমরা প্রত্যেক দিন কম করে ১৫ মিনিট আমাদের বাচ্চাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলার চেষ্টা করি। যখন আমরা বুঝি যে কোনো সমস্যা রয়েছে, তখন আরও বেশি সময় আমরা ব্যয় করি—আর সত্যি বলতে কী আমরা সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হই। উদাহরণ হিসেবে, সম্প্রতি আমাদের পাঁচ বছর বয়সী ছেলে স্কুল থেকে ফিরে এসে আমাদের বলেছিল যে সে যিহোবাতে বিশ্বাস করে না। আসলে, তার ক্লাসের একজন সহপাঠী তাকে ঠাট্টা করে বলেছিল যে ঈশ্বর বলে কেউ নেই।”

এই বাবামারা বুঝতে পেরেছিল যে, ছেলেমেয়েদের তাদের ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস গড়ে তোলার প্রয়োজন আছে। এই বিশ্বাস ঈশ্বরের সৃষ্টির প্রতি তাদের সহজাত আকর্ষণ থাকার দ্বারাই গড়ে উঠতে পারে। বাচ্চারা পশুপাখি স্পর্শ করতে, জংলি ফুল তুলতে অথবা সমুদ্রের ধারে বালিতে খেলতে কতই না ভালবাসে! বাবামারা তাদেরকে সৃষ্টি ও সৃষ্টিকর্তার মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে। (গীতসংহিতা ১০০:৩; ১০৪:২৪, ২৫) যিহোবার সৃষ্টির প্রতি যে-শ্রদ্ধা ও সম্মান তারা গড়ে তোলে, তা সারাজীবন তাদের মধ্যে থাকতে পারে। (গীতসংহিতা ১১১:২, ১০) এইধরনের উপলব্ধি থাকলে বাচ্চা ঈশ্বরকে খুশি করার এক ইচ্ছা ও তাঁকে অসন্তুষ্ট করার এক ভীতি গড়ে তুলতে পারে। এটা তাকে ‘মন্দ হইতে সরিয়া যাইতে’ পরিচালিত করবে।—হিতোপদেশ ১৬:৬.

যদিও বেশির ভাগ ছোট বাচ্চারা কৌতূহলী হয় ও খুব তাড়াতাড়ি শিখে ফেলে কিন্তু বাধ্যতা খুব সহজে দেখাতে পারে না। (গীতসংহিতা ৫১:৫) কখনও কখনও তারা হয়তো স্বাধীনভাবে চলতে অথবা তারা যা চায়, সেগুলোর সমস্ত কিছু পেতে চাইবে। এইধরনের মনোভাবগুলো মনের মধ্যে গভীরভাব গেঁথে যাওয়া রোধ করার জন্য বাবামাদের দৃঢ় থাকার, ধৈর্য ধরার ও শাসন করার প্রয়োজন আছে। (ইফিষীয় ৬:৪) ফিলিস ও পলের এই অভিজ্ঞতা হয়েছে, যারা সফলতার সঙ্গে পাঁচটা ছেলেমেয়েকে বড় করে তুলেছিল।

ফিলিস মনে করে বলেন: “যদিও প্রত্যেকটি বাচ্চার ব্যক্তিত্ব ছিল ভিন্ন, প্রত্যেকজন নিজের মতো করে চলতে চাইত। এটা খুব কঠিন ছিল কিন্তু ধীরে ধীরে তারা ‘না’ শব্দের অর্থ শিখেছিল। তার স্বামী পল বলেছিলেন: “যদি তারা বোঝার বয়সী হতো, তা হলে আমরা প্রায়ই তাদের আমাদের সিদ্ধান্তের কারণগুলো জানাতাম। আমরা যদিও সবসময় তাদের প্রতি কোমল থাকার চেষ্টা করতাম কিন্তু আমরা তাদের আমাদের ঈশ্বর দত্ত অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে শিখিয়েছিলাম।”

একটি বাচ্চার জন্মের পর শুরুর বছরগুলো যদিও তার জন্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, তবুও অধিকাংশ বাবামা দেখেছে যে, কৈশোরের বছরগুলোতে যখন অপরিপক্ক হৃদয় অনেক নতুন পরীক্ষার মুখোমুখি হয়, তখন সবচেয়ে বড় সমস্যা উপস্থিত হয়।

একজন কিশোর বা কিশোরীর হৃদয়ে পৌঁছানো

মাটি শুকানোর আগেই কুম্ভকারকে তার কাজ শুরু করে দিতে হবে। তিনি যাতে আরও কিছু সময় পান সেইজন্য তিনি হয়তো মাটিকে ভিজা ও নমনীয় রাখার জন্য তাতে জল মিশিয়ে রাখেন। একইভাবে বাবামারা তাদের কিশোর-কিশোরী ছেলেমেয়েদের হৃদয়কে জেদি হওয়া থেকে রোধ করতে কঠিন পরিশ্রম করবেন। অবশ্য তাদের প্রধান হাতিয়ার হল বাইবেল, যেটার মাধ্যমে তারা ‘অনুযোগ, সংশোধন এবং সমস্ত সৎকর্ম্মের জন্য তাহাদের বাচ্চাকে সুসজ্জীভূত’ করতে পারে।—২ তীমথিয় ৩:১৫-১৭.

কিন্তু একজন কিশোর বা কিশোরী, বাবামার আদেশকে অত সহজে গ্রহণ নাও করতে পারে যেমন সে ছোট বয়সে করেছিল। কিশোর-কিশোরীরা হয়তো তাদের বন্ধুবান্ধবদের প্রতি বেশি মনোযোগ দেওয়া শুরু করতে পারে, তাই তাদের বাবামার সঙ্গে খোলামেলা ও সহজতর ভাববিনিময় কমে যেতে পারে। এই সময়টা হচ্ছে অধিক ধৈর্য ও দক্ষতা দেখানোর সময় কারণ এই সময়ে বাবামা ও বাচ্চাদের ভূমিকা এক নতুন ধাপ নেয়। একজন কিশোর বা কিশোরীকে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। তাকে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া ও লক্ষ্যগুলো স্থাপন করা শুরু করতে হবে, যেগুলো তার বাকি জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে। (২ তীমথিয় ২:২২) এই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক সময়গুলোতে তাকে এমন এক শক্তির সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে, যেটা তার হৃদয়ে এক ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে আর সেটা হল বন্ধুবান্ধবদের চাপ।

এইধরনের চাপ খুব কমই বিশেষ কোনো একটা ঘটনার দ্বারা আসে। বরং, এটা সাধারণত ক্রমাগত দুর্বল মন্তব্য ও পরিস্থিতিগুলোর দ্বারা প্রকাশ পায়। অনেকের জন্য এগুলো তাদের দুর্বল জায়গায় আঘাত করে—অন্যান্য যুবক-যুবতীর দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার গভীর ভয়। আত্মসচেতনতার ও স্বীকৃতি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে লড়াই করার জন্য একজন যুবক বা যুবতী হয়তো ‘জগতীস্থ বিষয় সকল’ অনুমোদন করতে শুরু করে, যেগুলো অন্যান্য যুবক-যুবতীরা হয়তো সমর্থন করে।—১ যোহন ২:১৫-১৭; রোমীয় ১২:২.

এর চেয়েও আরও দুঃখজনক বিষয়টা হল, অসিদ্ধ হৃদয়ের স্বভাবজাত আকাঙ্ক্ষাগুলো তার বন্ধুবান্ধবদের কথাগুলোকে মানতে বাধ্য করতে পারে। এইধরনের উৎসাহ যেমন “মজা কর” এবং “যা খুশি তাই কর” খুব শ্রুতিমধুর হতে পারে। মারিয়া তার অভিজ্ঞতা স্মরণ করে বলে: “আমি এমন কিশোর-কিশোরী বন্ধুবান্ধবদের কথা শুনেছিলাম, যারা বিশ্বাস করত যে যুবক-যুবতীদের পুরোপুরিভাবে আনন্দফুর্তি করার অধিকার রয়েছে, তার পরিণাম যাই হোক না কেন। যেহেতু আমি আমার স্কুলের বন্ধুবান্ধবদের মতো করতে চেয়েছিলাম, তাই আমি এক বিরাট সমস্যায় প্রায় জড়িয়েই পড়ছিলাম।” বাবামা হিসেবে, আপনি আপনার কিশোর বা কিশোরী সন্তানকে এইধরনের চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য সাহায্য করতে চাইবেন কিন্তু আপনি কীভাবে তা করতে পারেন?

আপনার কথা ও কাজগুলোর মাধ্যমে তাকে আশ্বাস দিন ও নিশ্চিত করুন যে, আপনি তার জন্য চিন্তা করেন। বিষয়গুলো সম্বন্ধে সে কী মনে করে, তা জানার এবং তার সমস্যাগুলো বোঝার চেষ্টা করুন, যেগুলো হয়তো আপনি স্কুলে থাকার সময় যে-সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়েছিলেন সেগুলোর চেয়ে আরও বেশি কঠিন হতে পারে। বিশেষ করে এই সময়ে আপনার বাচ্চার প্রয়োজন আপনাকে এমন এক ব্যক্তি হিসেবে দেখা, যাকে সে সবকিছু বলতে পারে। (হিতোপদেশ ২০:৫) তার শারীরিক ভাবভঙ্গি অথবা তার মেজাজের দ্বারা আপনি তার যন্ত্রণা অথবা বিভ্রান্তিকে লক্ষ করতে পারেন। তার নীরব কান্নার প্রতি সাড়া দিন ও ‘হৃদয়কে আশ্বাস’ দিন।—কলসীয় ২:২.

অবশ্য যেটা সঠিক সেটার প্রতি দৃঢ়তা দেখানো গুরুত্বপূর্ণ। অনেক বাবামা দেখেছে যে, তারা প্রায়ই দ্বন্দ্বের মুখোমুখি হয় কিন্তু যখন তাদের সিদ্ধান্তের ভিত্তি মজবুত থাকে, তাদের হার মেনে নিতে হয় না। অন্যদিকে, প্রেমময় শাসন দেওয়ার দরকার আছে কি না এবং যদি দরকার থাকে, তা হলে কীভাবে দেওয়া যায় সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনি নিশ্চিত হয়ে নিন যে, পরিস্থিতি সম্বন্ধে আপনার স্পষ্ট ধারণা রয়েছে।—হিতোপদেশ ১৮:১৩.

এমনকি মণ্ডলীর মধ্যে থেকেও

একটি মাটির পাত্র দেখে হয়তো পুরোপুরি তৈরি বলে মনে হতে পারে কিন্তু ভাঁটিতে না পোড়ানো পর্যন্ত, সেটা সেই তরল পদার্থের কারণেও ভেঙে পড়তে পারে, যা রাখার জন্য সেটাকে তৈরি করা হয়েছে। পরীক্ষা ও সমস্যাগুলোকে বাইবেল সেই অগ্নি পদ্ধতির সঙ্গে তুলনা করে কারণ সেগুলো দেখায় যে, আসলে আমরা কীধরনের ব্যক্তি। অবশ্য, বাইবেল বিশেষ করে আমাদের বিশ্বাসের পরীক্ষাগুলোর কথা বলে কিন্তু সাধারণত সেই বিষয়টা অন্যান্য পরীক্ষার প্রতিও প্রযোজ্য। (যাকোব ১:২-৪) আশ্চর্যের বিষয় যে, কিছু কঠিন পরীক্ষা যেগুলোর মুখোমুখি ছোটরা হয়, সেগুলো মণ্ডলীর মধ্যে থেকে আসতে পারে।

আপনার কিশোর ছেলে বা মেয়ে যদিও ওপর থেকে আধ্যাত্মিকভাবে স্বাস্থ্যবান রয়েছে বলে মনে হতে পারে কিন্তু ভিতরে ভিতরে সে হয়তো এক বিভক্ত হৃদয়ের সঙ্গে লড়াই করছে। (১ রাজাবলি ১৮:২১) উদাহরণ হিসেবে, ম্যাগান কিংডম হলে আসা অন্যান্য যুবক-যুবতীদের দ্বারা জাগতিক চিন্তাভাবনার মুখোমুখি হয়েছিল:

“আমি এমন একদল যুবক-যুবতীর প্রভাবে পড়েছিলাম, যারা খ্রিস্টান ধর্মকে ক্লান্তিকর ও আনন্দফুর্তির এক বাধা হিসেবে মনে করত। তারা এইধরনের কথাগুলো বলত: ‘আমার বয়স যেই ১৮ হবে, আমি সত্য ছেড়ে দেব,’ অথবা ‘আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না।’ তারা সেই সব কিশোর-কিশোরীদের এড়িয়ে চলত যারা তাদের বিপরীত কথা বলত, তাদের তারা অতি ধার্মিক বলে ডাকত।”

বাকি অন্যান্যদের প্ররোচিত করতে মাত্র একজন অথবা দুজনের মধ্যে খারাপ মনোভাব থাকাই যথেষ্ট। একটা দলের ব্যক্তিবিশেষ সাধারণত তা-ই করে, যা দলের অধিকাংশরা করে। মূর্খতা ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ মনোভাব বিজ্ঞতা ও ভদ্রতাকে অবহেলা করতে পারে। অনেক দেশে খ্রিস্টান যুবক-যুবতীদের ঝামেলায় জড়িয়ে যাওয়ার মতো দুঃখজনক ঘটনাগুলো ঘটেছে কারণ তারা অধিকাংশ যুবক-যুবতীদের অনুসরণ করেছে।

অবশ্যই, কিশোর-কিশোরীদের এক নির্দিষ্ট মাত্রার আনন্দ পাওয়ার জন্য মেলামেশা দরকার। আপনি একজন বাবামা হিসেবে তা কীভাবে জোগাতে পারেন? তাদের মনোরঞ্জনের প্রতি গম্ভীর মনোযোগ দিন এবং পরিবারের অথবা কিশোর-কিশোরী ও বয়স্কদের এক মিশ্রিত দলের সঙ্গে কিছু আগ্রহজনক কাজকর্মের পরিকল্পনা করুন। আপনার বাচ্চার বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে পরিচিত হোন। তাদের আমন্ত্রণ জানান অথবা একটা সন্ধ্যে তাদের সঙ্গে কাটান। (রোমীয় ১২:১৩) আপনার বাচ্চাকে গঠনমূলক কাজকর্ম যেমন কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজাতে শেখা অথবা অন্য কোনো ভাষায় বা শিল্পকলায় দক্ষ হওয়ার মতো কিছু করতে উৎসাহিত করুন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সে এগুলো ঘরের সুরক্ষিত পরিবেশের মধ্যে থেকে করতে পারবে।

স্কুলে পড়া, সুরক্ষার বিষয় হতে পারে

এ ছাড়া, একজন কিশোর বা কিশোরীর স্কুলে পড়া, মনোরঞ্জনকে সঠিক স্থানে রাখার জন্যও তাকে সাহায্য করতে পারে। ললি, যিনি এক বড় স্কুলে ২০ বছর ধরে প্রশাসনিক আধিকারিক তিনি বলেন: “আমি বহু কিশোর-কিশোরী সাক্ষিদের এই স্কুল থেকে পাশ করে বেরুতে দেখেছি। অনেকে তাদের আচারব্যবহারে প্রশংসনীয় ছিল কিন্তু কয়েক জনকে অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে আলাদা করা যেত না। উত্তম উদাহরণসম্পন্ন ব্যক্তি অবশ্যই তারা ছিল, যারা তাদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেখাত। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বাবামাদের পরামর্শ দেব যেন তারা তাদের বাচ্চাদের পড়াশোনার উন্নতির দিকে বিশেষ আগ্রহ দেখায়, তাদের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে পরিচিত হয় এবং তাদের বাচ্চাদের বুঝিয়ে দেয় যে, ভাল রিপোর্ট হল জরুরি। কিছুজন খুব ভাল করে কিন্তু প্রত্যেকে সন্তুষ্টিজনক স্তরে পৌঁছাতে ও তাদের শিক্ষক-শিক্ষিকার সম্মান অর্জন করতে পারে।”

এ ছাড়া, এভাবে পড়াশোনা করা কিশোর-কিশোরীদের আধ্যাত্মিকভাবে উন্নতি করতেও সাহায্য করতে পারে। এটা তাদের ভাল পড়ার অভ্যাস, মানসিক শাসন ও দায়িত্ববোধ গড়ে তুলতে শিক্ষা দেয়। নিঃসন্দেহে, তাদের ভালভাবে পড়ার ও বিষয়গুলোকে ভালভাবে বুঝতে পারার দক্ষতা তাদের ঈশ্বরের বাক্যের ভাল ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকা হওয়ার জন্য উৎসাহ দিতে পারে। (নহিমিয় ৮:৮) স্কুলের হোমওয়ার্ক ও তাদের আধ্যাত্মিক অধ্যয়নগুলো আমোদপ্রমোদকে সঠিক স্থানে রাখার জন্য সাহায্য করতে পারে।

আপনার ও যিহোবার কৃতিত্ব

প্রাচীন গ্রিসে অনেক ফুলদানিতে কুম্ভকার ও কারুকার্য শিল্পী উভয়েরই সাক্ষর থাকত। তুলনামূলকভাবে, পরিবারে সাধারণত দুজনই থাকে যারা বাচ্চাকে গড়ে তোলায় অংশ নেয়। বাবা ও মা উভয়েই বাচ্চার হৃদয়কে গড়ে তোলার কাজে অংশ নেয় এবং রূপকভাবে আপনার বাচ্চা উভয়েরই “স্বাক্ষর” ধারণ করে। একজন সফল কুম্ভকার এবং/বা সজ্জাশিল্পীর মতো, আপনি একটি ছোট বাচ্চাকে মূল্যবান ও সুন্দররূপে গড়ে তোলার জন্য গর্ব বোধ করতে পারেন।—হিতোপদেশ ২৩:২৪, ২৫.

এই বিরাট চেষ্টার সফলতা বেশির ভাগই নির্ভর করবে, যেভাবে আপনি আপনার বাচ্চার হৃদয়কে গড়ে তুলেছেন তার ওপর। এটা আশা করা যায় যে, আপনি বলতে পারবেন: “তাহার ঈশ্বরের ব্যবস্থা তাহার অন্তরে আছে; তাহার পাদবিক্ষেপ টলিবে না।” (গীতসংহিতা ৩৭:৩১) বাচ্চার হৃদয়ের পরিস্থিতি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে আপনা আপনি তা গড়ে ওঠার জন্য ছেড়ে দেওয়া যায় না।

[পাদটীকা]

^ কিছু কিছু বাবামা তাদের নবজাত শিশুর সামনে বাইবেল পড়ে। মিষ্টি আওয়াজ ও এই আনন্দপূর্ণ অভিজ্ঞতা বাচ্চাকে তার পরবর্তী জীবনে অধ্যয়নে আনন্দ পেতে সাহায্য করতে পারে।

^ কিছু নাম পালটে দেওয়া হয়েছে।