সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রভুর সান্ধ্যভোজ আপনার জন্য কী অর্থ রাখে?

প্রভুর সান্ধ্যভোজ আপনার জন্য কী অর্থ রাখে?

প্রভুর সান্ধ্যভোজ আপনার জন্য কী অর্থ রাখে?

“যে কেহ অযোগ্যরূপে প্রভুর রুটী ভোজন কিম্বা পানপাত্রে পান করিবে, সে প্রভুর শরীরের ও রক্তের দায়ী হইবে।”—১ করিন্থীয় ১১:২৭.

১. দুহাজার তিন সালের জন্য পরিকল্পিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি কী এবং এর উৎপত্তি কীভাবে হয়েছিল?

 দুহাজার তিন সালের জন্য পরিকল্পিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ১৬ই এপ্রিল সূর্যাস্তের পর অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। সেইদিন যিহোবার সাক্ষিরা যিশু খ্রিস্টের মৃত্যুর স্মরণার্থ উদ্‌যাপন করার জন্য সমবেত হবে। আগের প্রবন্ধে যেমন দেখানো হয়েছে, যিশু সা.কা. ৩৩ সালের ১৪ই নিশান নিস্তারপর্ব উদ্‌যাপন করার পর এই অনুষ্ঠান প্রবর্তন করেছিলেন, যেটাকে প্রভুর সান্ধ্যভোজও বলা হয়। স্মরণার্থের প্রতীক তাড়িশূন্য রুটি ও লাল দ্রাক্ষারস খ্রিস্টের নিষ্পাপ দেহ ও তাঁর পাতিত রক্তকে চিত্রিত করে—একমাত্র বলিদান যা মানবজাতিকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পাপ ও মৃত্যু থেকে মুক্ত করতে পারে।—রোমীয় ৫:১২; ৬:২৩.

২. প্রথম করিন্থীয় ১১:২৭ পদে কোন সতর্কবাণী রয়েছে?

যারা স্মরণার্থের প্রতীকগুলো গ্রহণ করে তাদের অবশ্যই তা যোগ্যরূপে গ্রহণ করতে হবে। প্রেরিত পৌল সেই বিষয়টা স্পষ্ট করেছিলেন, যখন তিনি প্রাচীন করিন্থের খ্রিস্টানদের উদ্দেশে লিখেছিলেন, যেখানে প্রভুর সান্ধ্যভোজ সঠিকভাবে উদ্‌যাপিত হচ্ছিল না। (১ করিন্থীয় ১১:২০-২২) পৌল লিখেছিলেন: “যে কেহ অযোগ্যরূপে প্রভুর রুটী ভোজন কিম্বা পানপাত্রে পান করিবে, সে প্রভুর শরীরের ও রক্তের দায়ী হইবে।” (১ করিন্থীয় ১১:২৭) সেই কথাগুলোর তাৎপর্য কী?

কেউ কেউ এটা অযোগ্যরূপে উদ্‌যাপন করেছিল

৩. করিন্থের অনেক খ্রিস্টান প্রভুর সান্ধ্যভোজ উদ্‌যাপনের সময় কেমন আচরণ করেছিল?

করিন্থের অনেক খ্রিস্টান অযোগ্যরূপে স্মরণার্থের প্রতীকগুলো গ্রহণ করেছিল। তাদের মধ্যে দলাদলি ছিল এবং অন্তত একবারের জন্য হলেও কেউ কেউ সেখানে তাদের রাতের খাবার নিয়ে এসেছিল এবং তা সভার আগে বা সভা চলাকালীন গ্রহণ করেছিল, প্রায়ই অতিরিক্ত ভোজন ও পান করেছিল। তারা মানসিক বা আধ্যাত্মিক কোনো দিক দিয়েই সতর্ক ছিল না। এটা তাদেরকে “প্রভুর শরীরের ও রক্তের দায়ী” করেছিল। যারা রাতের খাবার খেয়ে আসেনি তারা ক্ষুধার্ত ছিল এবং অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছিল। হ্যাঁ, অনেকেই কোনো সম্মান ও সেই ঘটনার গাম্ভীর্য পুরোপুরি উপলব্ধি না করেই গ্রহণ করেছিল। কোনো সন্দেহ নেই যে, তারা নিজেদের জন্য বিচার নিয়ে এসেছিল!—১ করিন্থীয় ১১:২৭-৩৪.

৪, ৫. যারা সাধারণত স্মরণার্থের প্রতীকগুলো গ্রহণ করে থাকে, তাদের আত্মপরীক্ষা করা কেন অতীব জরুরি?

প্রতি বছর স্মরণার্থ যখন ঘনিয়ে আসে, তখন যারা সাধারণত প্রতীক গ্রহণ করে তাদের আত্মপরীক্ষা করা অতীব জরুরি। এই মঙ্গলার্থক ভোজে সঠিকভাবে অংশ নেওয়ার জন্য তাদের আধ্যাত্মিক অবস্থা অবশ্যই উত্তম থাকতে হবে। যেকেউ যিশুর বলিদানের প্রতি অসম্মান এমনকি অবজ্ঞা দেখায়, তার ‘ঈশ্বরের লোকদের মধ্য হইতে উচ্ছিন্ন হইবার’ আশঙ্কা থাকবে, ঠিক একজন ইস্রায়েলীয় ব্যক্তির মতো যে কিনা অশুচি অবস্থায় মঙ্গলার্থক ভোজে অংশ নিত।—লেবীয় পুস্তক ৭:২০; ইব্রীয় ১০:২৮-৩১.

পৌল স্মরণার্থকে প্রাচীন ইস্রায়েলের এক মঙ্গলার্থক ভোজের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তিনি খ্রিস্টের সঙ্গে সম্মিলিত অংশগ্রহণকারীদের বিষয়ে উল্লেখ করার পর বলেছিলেন: “প্রভুর [“যিহোবার,” NW] পানপাত্র ও ভূতদের পানপাত্র, তোমরা এই উভয় পাত্রে পান করিতে পার না; প্রভুর [“যিহোবার,” NW] মেজ ও ভূতদের মেজ, তোমরা এই উভয় মেজের অংশী হইতে পার না।” (১ করিন্থীয় ১০:১৬-২১) সাধারণত স্মরণার্থের প্রতীকগুলো গ্রহণ করে থাকেন এমন একজন ব্যক্তি যদি কোনো গুরুতর পাপ করেন, তা হলে তার উচিত যিহোবার কাছে তা স্বীকার করা এবং মণ্ডলীর প্রাচীনদের সাহায্য চাওয়া। (হিতোপদেশ ২৮:১৩; যাকোব ৫:১৩-১৬) তিনি যদি সত্যিই অনুতপ্ত হন এবং মনপরিবর্তনের উপযুক্ত ফল উৎপন্ন করেন, তা হলে তিনি তা অযোগ্যরূপে গ্রহণ করেন না।—লূক ৩:৮.

সম্মানীয় দর্শক হিসেবে উপস্থিত থাকা

৬. প্রভুর সান্ধ্যভোজের প্রতীক গ্রহণের অদ্বিতীয় সুযোগটি ঈশ্বর কাদের জন্য সংরক্ষিত করে রেখেছেন?

যারা বর্তমানে খ্রিস্টের ১,৪৪,০০০ জন ভাইদের অবশিষ্টাংশের প্রতি মঙ্গল করছে, তাদের কি প্রভুর সান্ধ্যভোজের প্রতীক গ্রহণ করা উচিত? (মথি ২৫:৩১-৪০; প্রকাশিত বাক্য ১৪:১) না। এই অদ্বিতীয় সুযোগটি ঈশ্বর কেবল সেই ব্যক্তিদের জন্য সংরক্ষিত করে রেখেছেন, যাদের তিনি “খ্রীষ্টের সহদায়াদ” হওয়ার জন্য পবিত্র আত্মার দ্বারা অভিষিক্ত করেছেন। (রোমীয় ৮:১৪-১৮; ১ যোহন ২:২০) তা হলে, যারা রাজ্য শাসনের অধীনে পৃথিবীব্যাপী এক পরমদেশে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা রাখে, তাদের অবস্থান কী? (লূক ২৩:৪৩; প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪) যেহেতু তারা যিশুর স্বর্গীয় আশাসম্পন্ন সহদায়াদ নয়, তাই তারা কেবল সম্মানীয় দর্শক হিসেবে স্মরণার্থে উপস্থিত থাকে।—রোমীয় ৬:৩-৫.

৭. প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানরা কেন জানত যে, তাদের স্মরণার্থের প্রতীকগুলো গ্রহণ করা উচিত?

প্রথম শতাব্দীর সত্য খ্রিস্টানরা পবিত্র আত্মার দ্বারা অভিষিক্ত হয়েছিল। তাদের মধ্যে অনেকে আত্মার এক বা একাধিক অলৌকিক দান ব্যবহার করতে পারত, যেমন বিভিন্ন ভাষায় কথা বলা। তাই, এই ব্যক্তিদের এটা জানতে কোনো অসুবিধাই হতো না যে, তারা আত্মায় অভিষিক্ত ছিল এবং স্মরণার্থের প্রতীকগুলো তাদের গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু, আমাদের সময়ে এটা কেবলমাত্র এই অনুপ্রাণিত কথাগুলোর ভিত্তিতে নির্ধারণ করা যায়: “যত লোক ঈশ্বরের আত্মা দ্বারা চালিত হয়, তাহারাই ঈশ্বরের পুত্ত্র। বস্তুতঃ তোমরা দাসত্বের আত্মা পাও নাই যে, আবার ভয় করিবে; কিন্তু দত্তকপুত্ত্রতার আত্মা পাইয়াছ, যে আত্মাতে আমরা আব্বা, পিতা, বলিয়া ডাকিয়া উঠি।”—রোমীয় ৮:১৪, ১৫.

৮. মথি ১৩ অধ্যায়ে উল্লেখিত ‘গোম’ এবং ‘শ্যামাঘাস’ কাদের প্রতিনিধিত্ব করে?

শত শত বছর ধরে, প্রকৃত অভিষিক্ত ব্যক্তিরা ‘গোম’ হিসেবে ‘শ্যামাঘাস’ বা মিথ্যা খ্রিস্টানদের এক খেতের মধ্যে বেড়ে উঠেছে। (মথি ১৩:২৪-৩০, ৩৬-৪৩) ১৮৭০ এর দশক থেকে ‘গোম’ আরও বেশি করে স্পষ্ট হতে থাকে এবং বেশ কয়েক বছর পরে অভিষিক্ত খ্রিস্টান অধ্যক্ষদের বলা হয়েছিল: “প্রাচীনদের . . . [স্মরণার্থের জন্য] যারা সমবেত হয়েছে তাদের সামনে এই শর্তগুলো স্পষ্ট করে দেওয়া উচিত—(১) [খ্রিস্টের] রক্তে বিশ্বাস; এবং (২) মৃত্যু পর্যন্ত প্রভু ও তাঁর পরিচর্যায় নিজেকে উৎসর্গ করা। এরপর তাদের উচিত সেই সমস্ত ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো, যাদের এইরকম মনোভাব রয়েছে এবং প্রভুর মৃত্যু উদ্‌যাপনে অংশ নেওয়ার জন্য উৎসর্গীকৃত হয়েছে।”—শাস্ত্রের ওপর অধ্যয়ন (ইংরেজি), খণ্ড ৬, নতুন সৃষ্টি (ইংরেজি), পৃষ্ঠা ৪৭৩. *

‘আরও মেষের’ অন্বেষণ করা

৯. কীভাবে ১৯৩৫ সালে ‘বিস্তর লোকের’ পরিচয়কে স্পষ্ট করা হয়েছিল এবং কীভাবে তা স্মরণার্থের প্রতীক গ্রহণে অংশগ্রহণকারী কিছু ব্যক্তিকে প্রভাবিত করেছিল?

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, যিহোবার সংগঠন খ্রিস্টের অভিষিক্ত অনুসারীদের ছাড়াও অন্যদের ওপর মনোযোগ দিতে শুরু করে। ১৯৩০ এর দশকের মাঝামাঝিতে এই বিষয়ে এক লক্ষণীয় অগ্রগতি সাধিত হয়। এর আগে, ঈশ্বরের লোকেরা প্রকাশিত বাক্য ৭:৯ পদে উল্লেখিত ‘বিস্তর লোককে’ নিতকনে বা খ্রিস্টের কনের সহচরীদের মতো গৌণ আধ্যাত্মিক শ্রেণী হিসেবে দেখত, যারা স্বর্গে পুনরুত্থিত অভিষিক্ত ১,৪৪,০০০ জন ব্যক্তির সঙ্গে মিলিত হবে। (গীতসংহিতা ৪৫:১৪, ১৫; প্রকাশিত বাক্য ৭:৪; ২১:২, ৯) কিন্তু, ১৯৩৫ সালের ৩১শে মে, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে অনুষ্ঠিত যিহোবার সাক্ষিদের একটা সম্মেলনে শাস্ত্র থেকে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল যে, “বিস্তর লোক” (“বিস্তর জনতা,” কিং জেমস ভারসন) ‘আরও মেষদের’ বোঝায়, যারা শেষ সময়ে বাস করে। (যোহন ১০:১৬) সেই সম্মেলনের পর, যারা আগে স্মরণার্থের প্রতীকগুলো গ্রহণ করত তারা তা গ্রহণ করা থেকে বিরত হয়েছিল, কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল যে, তাদের আশা স্বর্গীয় নয় কিন্তু পার্থিব।

১০. বর্তমান দিনের ‘আরও মেষদের’ আশা এবং দায়িত্বগুলোকে আপনি কীভাবে বর্ণনা করবেন?

১০ বিশেষ করে ১৯৩৫ সাল থেকে সেই ব্যক্তিদের অন্বেষণ করা শুরু হয়েছে, যারা “আরও মেষ,” যাদের মুক্তির মূল্যে বিশ্বাস রয়েছে, নিজেদের ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গ এবং রাজ্যের প্রচার কাজে অভিষিক্ত ‘ক্ষুদ্র মেষপালকে’ সমর্থন করে। (লূক ১২:৩২) এই আরও মেষেরা পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা রাখে কিন্তু অন্যান্য আর সমস্ত ক্ষেত্রে তারা বর্তমান দিনের রাজ্যের দায়াদদের অবশিষ্টাংশদের মতোই। প্রাচীন ইস্রায়েলের প্রবাসীদের মতো যারা যিহোবার উপাসনা করত এবং ব্যবস্থার বশীভূত থাকত, আজকের আরও মেষেরাও খ্রিস্টীয় দায়িত্বগুলোকে গ্রহণ করে থাকে, যেমন আত্মিক ইস্রায়েলের সদস্যদের সঙ্গে সুসমাচার প্রচার করা। (গালাতীয় ৬:১৬) কিন্তু, ঠিক যেমন কোনো প্রবাসী ইস্রায়েলের রাজা বা একজন যাজক হতে পারতেন না, তেমনই এই আরও মেষদের মধ্যে থেকে কেউই স্বর্গীয় রাজ্যে শাসন করতে কিংবা যাজক হিসেবে সেবা করতে পারে না।—দ্বিতীয় বিবরণ ১৭:১৫.

১১. কেন একজন ব্যক্তির উৎসর্গীকরণের তারিখ তার আশার ওপর প্রভাব ফেলে?

১১ অতএব, ১৯৩০ এর দশকের মধ্যে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল যে, সাধারণত স্বর্গীয় শ্রেণীকে বাছাই করা হয়ে গেছে। দশকের পর দশক ধরে এখন আরও মেষদের অন্বেষণ করা হচ্ছে, যাদের আশা হল পার্থিব। একজন অভিষিক্ত ব্যক্তি যদি অবিশ্বস্ত প্রমাণিত হন, তা হলে খুব সম্ভবত আরও মেষের মধ্যে থেকে একজন ব্যক্তি, যিনি অনেক দিন ধরে বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরকে সেবা করে আসছেন, তিনি ১,৪৪,০০০ জন ব্যক্তির মধ্যে হওয়া সেই শূন্যস্থানটি পূরণ করবেন।

যেকারণে ভুল ধারণা হয়

১২. কোন পরিস্থিতিতে একজন ব্যক্তির স্মরণার্থের প্রতীকগুলো গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা উচিত এবং কেন?

১২ অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত যে, তাদের স্বর্গীয় আহ্বান রয়েছে। কিন্তু, কিছু ব্যক্তির যদি এই আহ্বান না থাকে অথচ তারা স্মরণার্থের প্রতীকগুলো গ্রহণ করেই চলে, তা হলে কী? তাদের কখনোই স্বর্গীয় আশা ছিল না, এই বিষয়টা বুঝতে পারায় এখন নিশ্চয়ই তাদের বিবেক তাদেরকে সেটা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে চালিত করবে। ঈশ্বর এমন কোনো ব্যক্তির প্রতি অনুগ্রহ দেখাবেন না, যিনি নিজেকে একজন স্বর্গীয় রাজা ও যাজক হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করেন অথচ জানেন যে, তার আসলে এই ধরনের আহ্বান নেই। (রোমীয় ৯:১৬; প্রকাশিত বাক্য ২০:৬) যিহোবা লেবীয় কোরহকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন যখন তিনি অহংকার করে হারোণের যাজকপদ পেতে চেয়েছিলেন। (যাত্রাপুস্তক ২৮:১; গণনাপুস্তক ১৬:৪-১১, ৩১-৩৫) কোনো খ্রিস্টান যদি উপলব্ধি করেন যে, তিনি ভুলভাবে স্মরণার্থের প্রতীকগুলো গ্রহণ করেছেন, তা হলে তার সেটা গ্রহণ করা বন্ধ করে দেওয়া এবং নম্রভাবে যিহোবার কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রার্থনা করা উচিত।—গীতসংহিতা ১৯:১৩.

১৩, ১৪. কেন কেউ কেউ ভুলভাবে মনে করতে পারে যে তাদের স্বর্গীয় আহ্বান রয়েছে?

১৩ কেন কেউ কেউ ভুলভাবে মনে করতে পারে যে, তাদের স্বর্গীয় আহ্বান রয়েছে? সঙ্গীর মৃত্যু বা অন্য কোনো দুঃখজনক ঘটনার কারণে তারা হয়তো পৃথিবীতে বেঁচে থাকার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। কিংবা তারা হয়তো কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধু, যিনি একজন অভিষিক্ত খ্রিস্টান বলে দাবি করেন, তার মতো একই আশা লাভ করার আকাঙ্ক্ষা করেন। অবশ্যই ঈশ্বর এই বিশেষ সুযোগটির জন্য অন্যদের উৎসাহ দিতে কাউকে নিযুক্ত করেননি। আর তিনি রাজ্যের দায়াদদের কোনো বার্তা শোনানোর মাধ্যমে তাদের অভিষিক্ত করেন না।

১৪ সব ভাল লোক স্বর্গে যায় এই মিথ্যা ধর্মীয় ধারণাটা কাউকে কাউকে এই চিন্তার দিকে পরিচালিত করতে পারে যে, তাদের স্বর্গীয় আহ্বান রয়েছে। তাই, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে আমরা অতীতের ভুল দৃষ্টিভঙ্গি বা অন্যান্য বিষয়গুলোর দ্বারা প্রভাবিত না হই। উদাহরণস্বরূপ, কেউ কেউ হয়তো নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারে: ‘আমি কি এমন কোনো ওষুধ সেবন করি, যা আমার আবেগকে প্রভাবিত করে? আমার কি এমন গভীর আবেগ রয়েছে যেজন্য ভুলভাবে বিচার করতে পারি?’

১৫, ১৬. কেন কিছু ব্যক্তি ভুলভাবে মনে করতে পারে যে, তারা অভিষিক্ত ব্যক্তি?

১৫ কেউ কেউ হয়তো নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারে: ‘আমি কি বিশিষ্ট কেউ হতে চাই? আমি কি এখন বা ভবিষ্যতে খ্রিস্টের সঙ্গে সহদায়াদ হিসেবে কর্তৃত্ব পেতে উচ্চাকাঙ্ক্ষী?’ প্রথম শতাব্দীতে রাজ্যের দায়াদদের যখন আহ্বান করা হয়েছিল, তখন তারা সকলেই মণ্ডলীর দায়িত্বে ছিল না। আর স্বর্গীয় আহ্বান সম্পন্ন ব্যক্তিরা বিশিষ্ট হওয়ার চেষ্টা করে না অথবা অভিষিক্ত হওয়ায় গর্বও করে না। তারা সেই নম্রতা প্রদর্শন করে, যা “খ্রীষ্টের মন” রয়েছে এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে আশা করা হয়।—১ করিন্থীয় ২:১৬.

১৬ কেউ কেউ হয়তো এই উপসংহারে পৌঁছেছে যে, তাদের স্বর্গীয় আহ্বান রয়েছে কারণ তারা বাইবেল সম্বন্ধে যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করেছে। কিন্তু আত্মায় অভিষিক্ত হওয়ার মানে এই নয় যে, তাদের অসাধারণ বোধগম্যতা রয়েছে, কারণ কয়েকজন অভিষিক্ত খ্রিস্টানকে পৌলের নির্দেশনা এবং পরামর্শ দেওয়ার দরকার হয়েছিল। (১ করিন্থীয় ৩:১-৩; ইব্রীয় ৫:১১-১৪) ঈশ্বর তাঁর সমস্ত লোককে আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগানোর জন্য এক ব্যবস্থা করেছেন। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) তাই কারও এইরকম চিন্তা করা উচিত নয় যে, একজন অভিষিক্ত খ্রিস্টান হওয়ায় তাকে পার্থিব আশাসম্পন্ন ব্যক্তিদের চেয়েও আরও উৎকৃষ্ট প্রজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। শাস্ত্রীয় প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার, সাক্ষ্যদান করার বা বাইবেল-ভিত্তিক বক্তৃতা দেওয়ার দক্ষতা আছে বলে তা ইঙ্গিত দেয় না যে, একজন ব্যক্তি আত্মায় অভিষিক্ত। পার্থিব আশাসম্পন্ন খ্রিস্টানরাও এই ক্ষেত্রগুলোতে দক্ষ।

১৭. আত্মায় অভিষিক্তকরণ কীসের ওপর ও কার ওপর নির্ভর করে?

১৭ কোনো সহ বিশ্বাসী যদি স্বর্গীয় আহ্বানের বিষয় জিজ্ঞেস করেন, তা হলে একজন প্রাচীন বা অন্য কোনো পরিপক্ব খ্রিস্টান এই বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে পারেন। কিন্তু, একজন ব্যক্তি অন্যের ব্যাপারে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। যে-ব্যক্তির সত্যিই এই আহ্বান রয়েছে, তার অন্যদের জিজ্ঞেস করার দরকার পড়ে না যে তার এই আশা আছে কি না। অভিষিক্ত ব্যক্তিরা ‘ক্ষয়ণীয় বীর্য্য হইতে নয়, কিন্তু অক্ষয় বীর্য্য হইতে ঈশ্বরের জীবন্ত ও চিরস্থায়ী বাক্য দ্বারা পুনর্জাত হইয়াছে।’ (১ পিতর ১:২৩) তাঁর আত্মা ও বাক্যের মাধ্যমে ঈশ্বর সেই “বীর্য্য” স্থাপন করেন, যা ব্যক্তিকে স্বর্গীয় আশা সহ “নূতন সৃষ্টি” করে তোলে। (২ করিন্থীয় ৫:১৭) আর যিহোবা তা বাছাই করেন। অভিষিক্তকরণ “যে ইচ্ছা করে, বা যে দৌড়ে, তাহা হইতে এটী হয় না, কিন্তু . . . ঈশ্বর হইতে হয়।” (রোমীয় ৯:১৬) তাই, কীভাবে একজন ব্যক্তি নিশ্চিত হতে পারেন যে, তার স্বর্গীয় আহ্বান রয়েছে?

যেকারণে তারা নিশ্চিত

১৮. ঈশ্বরের আত্মা কীভাবে আত্মায় অভিষিক্ত ব্যক্তিদের বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়?

১৮ ঈশ্বরের আত্মার সাক্ষ্য অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের দৃঢ়প্রত্যয়ী করে যে, তাদের স্বর্গীয় আশা রয়েছে। “তোমরা . . . দত্তকপুত্ত্রতার আত্মা পাইয়াছ” পৌল লিখেছিলেন, “যে আত্মাতে আমরা আব্বা, পিতা, বলিয়া ডাকিয়া উঠি। আত্মা আপনিও আমাদের আত্মার সহিত সাক্ষ্য দিতেছেন যে, আমরা ঈশ্বরের সন্তান। আর যখন সন্তান, তখন দায়াদ, ঈশ্বরের দায়াদ ও খ্রীষ্টের সহদায়াদ—যদি বাস্তবিক আমরা তাঁহার সহিত দুঃখভোগ করি, যেন তাঁহার সহিত প্রতাপান্বিতও হই।” (রোমীয় ৮:১৫-১৭) পবিত্র আত্মার প্রভাবে অভিষিক্ত ব্যক্তিদের আত্মা বা প্রধান মনোভাব যিহোবার আত্মিক সন্তানদের বিষয়ে শাস্ত্র যা বলে, তা নিজেদের ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে তাদের চালিত করে। (১ যোহন ৩:২) ঈশ্বরের আত্মা তাদেরকে তাঁর সঙ্গে পিতা-পুত্রের সম্পর্কের এক বোধ দান করে এবং তাদের মধ্যে এক অদ্বিতীয় আশা উৎপন্ন করে। (গালাতীয় ৪:৬, ৭) হ্যাঁ, সিদ্ধ মানুষ হিসেবে অনন্তকালীন পার্থিব জীবনে পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে জীবন অত্যন্ত চমৎকার হতো কিন্তু তাদের জন্য ঈশ্বর-দত্ত আশা সেটা নয়। ঈশ্বর তাঁর আত্মার মাধ্যমে তাদের মধ্যে এত জোরালো স্বর্গীয় আশা উৎপন্ন করেছেন যে, তারা সমস্ত পার্থিব আসক্তি ও প্রত্যাশাকে জলাঞ্জলি দিতে ইচ্ছুক।—২ করিন্থীয় ৫:১-৫, ৮; ২ পিতর ১:১৩, ১৪.

১৯. নতুন চুক্তি একজন অভিষিক্ত খ্রিস্টানের জীবনে কোন ভূমিকা পালন করে?

১৯ অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা নিশ্চিত যে তাদের স্বর্গীয় আশা রয়েছে, তাদেরকে নতুন চুক্তিতে গ্রহণ করা হয়েছে। স্মরণার্থ প্রবর্তন করার সময় যিশু এই বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন এবং বলেছিলেন: “এই পানপাত্র আমার রক্তে নূতন নিয়ম [“চুক্তি,” NW], যে রক্ত তোমাদের নিমিত্ত পাতিত হয়।” (লূক ২২:২০) নতুন চুক্তির অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিরা হলেন ঈশ্বর এবং অভিষিক্ত ব্যক্তিরা। (যিরমিয় ৩১:৩১-৩৪; ইব্রীয় ১২:২২-২৪) যিশু হলেন মধ্যস্থ। খ্রিস্টের পাতিত রক্তের দ্বারা কার্যকারী হয়ে নতুন চুক্তি শুধুমাত্র যিহুদিদের মধ্যে থেকে নয় কিন্তু সেইসঙ্গে অন্যান্য জাতি থেকেও যিহোবার নামের জন্য একদল প্রজা গ্রহণ করেছিল ও তাদের অব্রাহামের ‘বংশের’ অংশ করেছিল। (গালাতীয় ৩:২৬-২৯; প্রেরিত ১৫:১৪) এই ‘অনন্তকালস্থায়ী নিয়ম [“চুক্তি,” NW]’ সমস্ত আত্মিক ইস্রায়েলীয়কে স্বর্গে অমর জীবনে পুনরুত্থিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়।—ইব্রীয় ১৩:২০.

২০. অভিষিক্ত ব্যক্তিদের খ্রিস্টের সঙ্গে কোন চুক্তিতে গ্রহণ করা হয়েছে?

২০ অভিষিক্ত ব্যক্তিরা তাদের আশা সম্বন্ধে নিশ্চিত। তাদের অতিরিক্ত আরেকটা চুক্তিতে গ্রহণ করা হয়েছে, যেটা হল রাজ্য চুক্তি। খ্রিস্টের সঙ্গে তাদের সহভাগিতার বিষয়ে যিশু বলেছিলেন: “তোমরাই আমার সকল পরীক্ষার মধ্যে আমার সঙ্গে সঙ্গে বরাবর রহিয়াছ; আর আমার পিতা যেমন আমার জন্য নিরূপণ করিয়াছেন, আমিও তেমনি তোমাদের জন্য এক রাজ্য নিরূপণ করিতেছি [“আমার পিতা যেমন আমার সঙ্গে এক রাজ্যের জন্য চুক্তি করেছেন, তেমনই আমিও তোমাদের সঙ্গে একটা চুক্তি করছি,” NW]।” (লূক ২২:২৮-৩০) খ্রিস্ট ও তাঁর সহযোগী রাজাদের মধ্যে এই চুক্তি চিরকাল কার্যকারী থাকবে।—প্রকাশিত বাক্য ২২:৫.

স্মরণার্থ মরশুম—আনন্দের এক সময়

২১. স্মরণার্থ মরশুম থেকে আমরা কীভাবে প্রচুর উপকার পেতে পারি?

২১ স্মরণার্থ মরশুমের আশীর্বাদ অনেক। আমরা এই সময়ের জন্য নির্ধারিত বাইবেল পাঠ থেকে উপকার পেতে পারি। এ ছাড়াও এটি বিশেষ করে প্রার্থনা করার, যিশুর পার্থিব জীবন ও মৃত্যু নিয়ে ধ্যান করার এবং রাজ্যের প্রচার কাজে অংশ নেওয়ার জন্য এক উপযুক্ত সময়। (গীতসংহিতা ৭৭:১২; ফিলিপীয় ৪:৬, ৭) এই উদ্‌যাপন আমাদের যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের মাধ্যমে ঈশ্বর ও খ্রিস্ট যে-প্রেম দেখিয়েছেন, তা স্মরণ করিয়ে দেয়। (মথি ২০:২৮; যোহন ৩:১৬) এই ব্যবস্থা আমাদের আশা ও সান্ত্বনা জোগায় আর তা খ্রিস্টতুল্য পথ অনুধাবন করার বিষয়ে আমাদের সংকল্পকে আরও মজবুত করবে। (যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬; ইব্রীয় ১২:৩) তাই, ঈশ্বরের দাস হিসেবে আমাদের উৎসর্গীকরণ পূর্ণ করতে এবং তাঁর প্রিয় পুত্রের অনুগত অনুসারী হতে স্মরণার্থ আমাদেরও শক্তিশালী করবে।

২২. মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের সর্বোত্তম উপহার কী এবং এর প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখানোর একটা উপায় কী?

২২ যিহোবা আমাদের কত উত্তম উত্তম উপহারই না দিয়েছেন! (যাকোব ১:১৭) আমাদের কাছে তাঁর বাক্যের নির্দেশনা, তাঁর আত্মার সাহায্য এবং অনন্তজীবনের আশা রয়েছে। ঈশ্বরের সর্বোত্তম উপহার হল, অভিষিক্ত ব্যক্তি এবং অন্যান্য যারা বিশ্বাস অনুশীলন করে তাদের সকলের পাপের জন্য যিশুর বলিদান। (১ যোহন ২:১, ২) তাই, যিশুর মৃত্যু আপনার জন্য কতখানি অর্থ রাখে? ২০০৩ সালের ১৬ই এপ্রিল সূর্যাস্তের পর, যারা এর প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখানোর জন্য প্রভুর সান্ধ্যভোজ উদ্‌যাপন করতে একত্রিত হবে, তাদের মধ্যে কি আপনিও থাকবেন?

[পাদটীকাগুলো]

^ যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত কিন্তু এখন আর ছাপানো হয় না।

আপনার উত্তর কী?

• স্মরণার্থের প্রতীকগুলো কাদের গ্রহণ করা উচিত?

• কেন ‘আরও মেষেরা’ প্রভুর সান্ধ্যভোজে সম্মানীয় দর্শক হিসেবে অংশ নেয়?

• অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা কীভাবে জানে যে, খ্রিস্টের মৃত্যুর স্মরণার্থে তাদের রুটি ও দ্রাক্ষারস গ্রহণ করা উচিত?

• স্মরণার্থ মরশুম কীসের জন্য এক উপযুক্ত সময়?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৮ পৃষ্ঠার রেখাচিত্র/চিত্রগুলো]

(পুরোপুরি ফরম্যাট করা টেক্সটের জন্য এই প্রকাশনা দেখুন)

স্মরণার্থ উপস্থিতি

লক্ষে

১৫,৫৯৭,৭৪৬

১৫

১৪

১৩,১৪৭,২০১

১৩

১২

১১

১০

 ৯

 ৮

 ৭

 ৬

 ৫

৪,৯২৫,৬৪৩

 ৪

 ৩

 ২

 ১

৮৭৮,৩০৩

৬৩,১৪৬

১৯৩৫ ১৯৫৫ ১৯৭৫ ১৯৯৫ ২০০২

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

এই বছর আপনি কি প্রভুর সান্ধ্যভোজে উপস্থিত থাকবেন?

[২১ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

স্মরণার্থ মরশুম হল আরও বেশি বাইবেল পাঠ ও রাজ্যের প্রচার কাজে অংশ নেওয়ার এক উপযুক্ত সময়