সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সমস্ত চিত্তে যিহোবাতে নির্ভর করুন

সমস্ত চিত্তে যিহোবাতে নির্ভর করুন

সমস্ত চিত্তে যিহোবাতে নির্ভর করুন

“যাহারা তোমার নাম জানে, তাহারা তোমাতে বিশ্বাস রাখিবে [“নির্ভর করবে,” NW]।” —গীতসংহিতা ৯:১০.

১, ২. কিছু বিষয় কী, যেগুলোর ওপর লোকেরা নিরাপত্তার জন্য অযথাই নির্ভর করে?

 আজকে অসংখ্য বিষয় আমাদের মঙ্গলের ওপর হুমকি নিয়ে আসে বলে এমন কারও বা কোনো কিছুর প্রত্যাশা করা খুবই স্বাভাবিক, যা নিরাপত্তা দিতে পারবে। কেউ কেউ মনে করে যে, আরও বেশি টাকাপয়সা থাকলে বুঝি তাদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ হবে কিন্তু সত্যি বলতে কী, টাকাপয়সা হল অনিশ্চিত এক অবলম্বন। বাইবেল বলে: “যে আপন ধনে নির্ভর করে, সে পতিত হয়।” (হিতোপদেশ ১১:২৮) অন্যেরা মনুষ্য নেতাদের ওপর নির্ভর করে কিন্তু সবচেয়ে উত্তম নেতারাও ভুল করে থাকে। আর একসময় তারা সকলে মারা যায়। বিজ্ঞের সঙ্গে বাইবেল বলে: “তোমরা নির্ভর করিও না রাজন্যগণে, বা মনুষ্য-সন্তানে, যাহার নিকটে ত্রাণ নাই।” (গীতসংহিতা ১৪৬:৩) এই অনুপ্রাণিত বাক্যগুলো শুধুমাত্র নিজেদের প্রচেষ্টার ওপর নির্ভর করার বিরুদ্ধেও আমাদের সাবধান করে। কারণ আমরাও সামান্য ‘মনুষ্য-সন্তান।’

ভাববাদী যিশাইয় তার দিনের ইস্রায়েলের জাতীয় নেতাদের সমালোচনা করেছিলেন কারণ তারা ‘অলীকতারূপ আশ্রয়ে’ নির্ভর করেছিল। (যিশাইয় ২৮:১৫-১৭) নিরাপত্তা খুঁজতে গিয়ে তারা প্রতিবেশী জাতিগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল। এইধরনের মৈত্রীবন্ধন নির্ভরযোগ্য নয়, সেগুলো হল অলীক। একইভাবে, আজকে অনেক ধর্মীয় নেতা রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলছে। এইধরনের মৈত্রীবন্ধনও ‘অলীক’ বলে প্রমাণিত হবে। (প্রকাশিত বাক্য ১৭:১৬, ১৭) তারা স্থায়ী নিরাপত্তা নিয়ে আসবে না।

যিহোশূয় এবং কালেবের উত্তম উদাহরণ

৩, ৪. যিহোশূয় ও কালেবের তথ্য কীভাবে অন্য আরও দশ জন গুপ্তচরের তথ্য থেকে ভিন্ন ছিল?

তা হলে, নিরাপত্তার জন্য আমরা কোথায় প্রত্যাশা রাখব? সেই একই উৎসের ওপর, যেখানে মোশির দিনে যিহোশূয় এবং কালেব রেখেছিল। মিশর থেকে মুক্ত হওয়ার পরই ইস্রায়েল জাতি প্রতিজ্ঞাত দেশ কনানে প্রবেশ করার জন্য তৈরি ছিল। ১২ জন ব্যক্তিকে দেশ নিরীক্ষণ করার জন্য পাঠানো হয়েছিল এবং ৪০ দিন পর ফিরে এসে তারা তাদের তথ্য জানিয়েছিল। কেবল দুজন অর্থাৎ যিহোশূয় এবং কালেব কনানে ইস্রায়েলীয়দের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে অনুকূল কথা বলেছিল। অনেকে স্বীকার করেছিল যে, সেই দেশ অনেক মনোহর কিন্তু সেইসঙ্গে এও বলেছিল: “তদ্দেশনিবাসী লোকেরা বলবান্‌, ও তথাকার নগর সকল প্রাচীরবেষ্টিত ও অতি বৃহৎ; . . . আমরা সেই লোকদের বিরুদ্ধে যাইতে সমর্থ নহি, কেননা আমাদের অপেক্ষা তাহারা বলবান্‌।”—গণনাপুস্তক ১৩:২৭, ২৮, ৩১.

ইস্রায়েলীয়রা সেই দশ জন গুপ্তচরের কথায় কান দিয়েছিল এবং ভয় পেয়ে গিয়েছিল, এমনকি মোশির বিরুদ্ধে বচসা করতে শুরু করেছিল। অবশেষে যিহোশূয় ও কালেব ব্যাকুল হয়ে বলেছিল: “আমরা যে দেশ নিরীক্ষণ করিতে গিয়াছিলাম, সে যার পর নাই উত্তম দেশ। সদাপ্রভু যদি আমাদিগেতে প্রীত হন, তবে তিনি আমাদিগকে সেই দেশে প্রবেশ করাইবেন, ও সেই দুগ্ধমধুপ্রবাহী দেশ আমাদিগকে দিবেন। কিন্তু তোমরা কোন মতে সদাপ্রভুর বিদ্রোহী হইও না, ও সে দেশের লোকদিগকে ভয় করিও না।” (গণনাপুস্তক ১৪:৬-৯) তবুও, ইস্রায়েলীয়রা তা শোনেনি আর এর ফলে সেই সময় তাদের প্রতিজ্ঞাত দেশে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

৫. যিহোশূয় এবং কালেব কেন অনুকূল তথ্য দিয়েছিল?

অন্য দশ জন খারাপ তথ্য দিলেও যিহোশূয় ও কালেব কেন ভাল তথ্য দিয়েছিল? এই ১২ জনের সকলেই সেই একই নগর এবং এর প্রতিষ্ঠিত জাতিগণকে দেখেছিল। আর দশ জন এটা ঠিকই বলেছিল যে, ইস্রায়েল সেই দেশ জয় করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। যিহোশূয় ও কালেবও তা জানত। কিন্তু, সেই দশ জন বিষয়গুলোকে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেছিল। অন্যদিকে, যিহোশূয় ও কালেব যিহোবার ওপর নির্ভর করেছিল। তারা মিশর, লোহিত সাগর এবং সীনয় পর্বতের নিচে তাঁর শক্তিশালী কাজগুলো দেখেছিল। আর কয়েক দশক পর শুধু সেই কাজগুলো সম্বন্ধে শুনেই যিরীহোর রাহব যিহোবার লোকেদের জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নিতে পরিচালিত হয়েছিলেন! (যিহোশূয়ের পুস্তক ২:১-২৪; ৬:২২-২৫) যিহোবার কাজগুলোর প্রত্যক্ষ সাক্ষি যিহোশূয় এবং কালেবের পুরোপুরি আস্থা ছিল যে, ঈশ্বর তাঁর লোকেদের জন্য যুদ্ধ করে যাবেন। চল্লিশ বছর পর তাদের নির্ভরতা সত্য প্রমাণিত হয়েছিল যখন যিহোশূয়ের নেতৃত্বে ইস্রায়েলীয়দের এক নতুন প্রজন্ম কনানে প্রবেশ করেছিল এবং দেশ জয় করেছিল।

যেকারণে আমরা যিহোবার ওপর পুরোপুরি নির্ভর করব

৬. কেন আজকে খ্রিস্টানরা চাপের মধ্যে রয়েছে আর কোথায় তাদের নির্ভর করা উচিত?

এই ‘বিষম সময়ে’ ইস্রায়েলীয়দের মতো আমরাও আমাদের চেয়ে শক্তিশালী শত্রুদের মুখোমুখি হচ্ছি। (২ তীমথিয় ৩:১) আমরা নৈতিক, আধ্যাত্মিক এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমনকি শারীরিক দিক দিয়েও চাপের মুখোমুখি হচ্ছি। আমরা নিজেরা সেই চাপগুলোর প্রতিরোধ করতে পারি না, যেহেতু সেগুলো আসে অতিমানবীয় উৎস, শয়তান দিয়াবল থেকে। (ইফিষীয় ৬:১২; ১ যোহন ৫:১৯) তা হলে, আমরা কোথা থেকে সাহায্য পেতে পারি? যিহোবার কাছে প্রার্থনা করার সময় প্রাচীন কালের একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি বলেছিলেন: ‘যাহারা তোমার নাম জানে, তাহারা তোমাতে নির্ভর করিবে।’ (গীতসংহিতা ৯:১০) আমরা যদি সত্যিই যিহোবাকে জেনে থাকি এবং তাঁর নামের তাৎপর্য কী তা বুঝি, তা হলে নিশ্চিতভাবেই যিহোশূয় ও কালেবের মতো আমরা তাঁর ওপর নির্ভর করব।—যোহন ১৭:৩.

৭, ৮. (ক) কীভাবে সৃষ্টি যিহোবার ওপর নির্ভর করার জন্য আমাদের বিভিন্ন কারণ জোগায়? (খ) যিহোবার ওপর নির্ভর করার জন্য বাইবেল আমাদের কোন কারণগুলো জোগায়?

কেন আমাদের যিহোবার ওপর নির্ভর করা উচিত? যিহোশূয় এবং কালেবের নির্ভর করার একটা কারণ ছিল যে তারা তাঁর শক্তির প্রমাণ দেখেছিল। আমরাও দেখেছি। উদাহরণস্বরূপ, যিহোবার সৃষ্টির কাজ ও সেইসঙ্গে কোটি কোটি ছায়াপথ সহ এর নিখিলবিশ্বের কথা বিবেচনা করুন। যিহোবা যে-বিশাল প্রাকৃতিক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেন, তা দেখায় যে তিনিই সর্বশক্তিমান। আমরা যদি তাঁর সৃষ্টির বিস্ময় নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি, তা হলে আমাদের ইয়োবের সঙ্গে একমত হতে হবে, যিনি যিহোবা সম্বন্ধে বলেছিলেন: “কে তাঁহাকে নিবারণ করিবে? কে বা তাঁহাকে বলিবে, ‘তুমি কি করিতেছ?’” (ইয়োব ৯:১২) সত্যিই, যিহোবা যদি আমাদের পক্ষে থাকেন, তা হলে পুরো নিখিলবিশ্বের কাউকেই আমাদের ভয় পাওয়ার দরকার নেই।—রোমীয় ৮:৩১.

এ ছাড়া, যিহোবার বাক্য বাইবেল সম্বন্ধেও বিবেচনা করুন। ঐশিক প্রজ্ঞার এই অক্ষয় উৎস আমাদের খারাপ অভ্যাসগুলো কাটিয়ে উঠতে এবং যিহোবার ইচ্ছা অনুযায়ী আমাদের জীবনকে পরিচালিত করতে সাহায্য করার জন্য খুবই শক্তিশালী। (ইব্রীয় ৪:১২) বাইবেলের মাধ্যমেই আমরা যিহোবাকে তাঁর নাম দ্বারা জানতে পেরেছি এবং তাঁর নামের তাৎপর্য বুঝতে পেরেছি। (যাত্রাপুস্তক ৩:১৪) আমরা বুঝতে পারি যে, যিহোবা তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার জন্য যা ইচ্ছা করেন তা-ই হতে পারেন—একজন প্রেমময় পিতা, ন্যায়পরায়ণ বিচারক, জয়ী যোদ্ধা। আর আমরা দেখি যে, তাঁর বাক্য কীভাবে সবসময় সত্যি হয়। ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করার মাধ্যমে গীতরচকের মতো আমরাও বলি: “আমি তোমার বাক্যে নির্ভর করিতেছি।”—গীতসংহিতা ১১৯:৪২; যিশাইয় ৪০:৮.

৯. মুক্তির মূল্য এবং যিশুর পুনরুত্থান কীভাবে যিহোবার ওপর আমাদের নির্ভরতাকে শক্তিশালী করে?

যিহোবার ওপর নির্ভর করার আরেকটা কারণ হল মুক্তির মূল্য। (মথি ২০:২৮) এটা কত অপূর্ব যে, ঈশ্বর আমাদের জন্য তাঁর নিজ পুত্রকে মুক্তির মূল্য হিসেবে জীবন দিতে পাঠিয়েছিলেন। আর মুক্তির মূল্য সত্যিই কার্যকারী। এটি সেই সমস্ত মানুষের পাপ ঢেকে দেয়, যারা অনুতপ্ত হয় এবং সৎহৃদয়ে যিহোবার কাছে আসে। (যোহন ৩:১৬; ইব্রীয় ৬:১০; ১ যোহন ৪:১৬, ১৯) মুক্তির মূল্য দেওয়ার যে-প্রক্রিয়া, সেটার একটা অংশ ছিল যিশুর পুনরুত্থান। শত শত প্রত্যক্ষ সাক্ষির দ্বারা প্রমাণিত সেই অলৌকিক কাজ যিহোবার ওপর নির্ভর করার আরেকটা কারণ। এটা হল একটা নিশ্চয়তা যে, আমাদের আশা কোনো হতাশার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়ে যাবে না।—প্রেরিত ১৭:৩১; রোমীয় ৫:৫; ১ করিন্থীয় ১৫:৩-৮.

১০. যিহোবার ওপর নির্ভর করার কোন ব্যক্তিগত কারণ আমাদের রয়েছে?

১০ এগুলো হল মাত্র কয়েকটা কারণ, যেগুলোর জন্য আমরা যিহোবার ওপর পুরোপুরি নির্ভর করতে পারি এবং আমাদের তা করা উচিত। আরও অনেক কারণ রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে কিছু কিছু হল ব্যক্তিগত। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মাঝে মাঝে আমরা সকলে জীবনে অনেক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হই। সেগুলো মোকাবিলা করার জন্য যখন যিহোবার নির্দেশনা খুঁজি, তখন আমরা দেখি যে, সেই নির্দেশনা কত বাস্তব। (যাকোব ১:৫-৮) দৈনন্দিন জীবনে আমরা যত বেশি যিহোবার ওপর ভরসা রাখি এবং এর ভাল ফল দেখি, ততই তাঁর ওপর আমাদের নির্ভরতা দৃঢ় হবে।

দায়ূদ যিহোবার ওপর নির্ভর করেছিলেন

১১. কোন পরিস্থিতিগুলো সত্ত্বেও, দায়ূদ যিহোবার ওপর নির্ভর করেছিলেন?

১১ প্রাচীন ইস্রায়েলের দায়ূদ ছিলেন একজন ব্যক্তি, যিনি যিহোবার ওপর নির্ভর করেছিলেন। দায়ূদ একসময় রাজা শৌল এবং শক্তিশালী পলেষ্টীয় সেনাবাহিনীর হুমকির মুখোমুখি হয়েছিলেন। শৌল তাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন এবং পলেষ্টীয়রা ইস্রায়েলকে পরাজিত করতে চেয়েছিল। তারপরও তিনি রক্ষা পেয়েছিলেন ও এমনকি জয়ী হয়েছিলেন। কেন? দায়ূদ নিজে তা ব্যাখ্যা করেন: “সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] আমার জ্যোতি, আমার পরিত্রাণ, আমি কাহা হইতে ভীত হইব? সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] আমার জীবন-দুর্গ আমি কাহা হইতে ত্রাসযুক্ত হইব?” (গীতসংহিতা ২৭:১) আমরাও সফল হতে পারব যদি একইভাবে আমরা যিহোবার ওপর নির্ভর করি।

১২, ১৩. দায়ূদ কীভাবে দেখিয়েছেন যে, যিহোবার ওপর আমাদের নির্ভর করা উচিত এমনকি বিরোধীরা যখন আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে তাদের জিহ্বাকে ব্যবহার করে?

১২ একবার দায়ূদ প্রার্থনা করেছিলেন: “হে ঈশ্বর, আমার কাতরোক্তির রব শুন, শত্রুভয় হইতে আমার জীবন রক্ষা কর। দুরাচারদের গূঢ় মন্ত্রণা হইতে, অধর্ম্মাচারীদের জনতা হইতে, আমাকে সঙ্গোপন কর। তাহারা খড়্গের ন্যায় আপন আপন জিহ্বা শাণিত করিয়াছে; তাহারা কটুবাক্যরূপ তীর যোজনা করিয়াছে, যেন গোপনে সিদ্ধ [“নির্দোষ,” NW] লোকের প্রতি তাহা নিক্ষেপ করে।” (গীতসংহিতা ৬৪:১-৪) আমরা নিশ্চিত করে জানি না যে, কোন বিষয়টা দায়ূদকে এই কথাগুলো লিখতে পরিচালিত করেছিল। কিন্তু, আমরা জানি যে আজকে একইভাবে বিরোধীরা যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে উক্তি ব্যবহার করার জন্য ‘আপন আপন জিহ্বা শাণিত করে।’ তারা মিথ্যা বর্ণনার “তীর” হিসেবে মৌখিক অথবা লিখিত বাক্য ব্যবহার করে তা নির্দোষ খ্রিস্টানদের দিকে “নিক্ষেপ করে।” আমরা যদি স্থিরভাবে যিহোবার ওপর নির্ভর করি, তা হলে এর ফল কী হবে?

১৩ দায়ূদ বলে চলেন: “ঈশ্বর তাহাদিগকে বাণ মারিবেন, অকস্মাৎ তাহারা বাণে আহত হইবে। এইরূপে তাহারা উছোট খাইবে; তাহাদের জিহ্বা তাহাদের বিপক্ষ হইবে; . . . ধার্ম্মিক লোক সদাপ্রভুতে আনন্দ করিবে, ও তাঁহার শরণাগত থাকিবে।” (গীতসংহিতা ৬৪:৭-১০) হ্যাঁ, যদিও শত্রুরা আমাদের বিরুদ্ধে তাদের জিহ্বা শাণিত করে কিন্তু শেষ পর্যন্ত “তাহাদের জিহ্বা তাহাদের বিপক্ষে হইবে।” অবশেষে যিহোবা বিষয়গুলোকে এক ইতিবাচক পরিণতিতে নিয়ে আসবেন, যাতে যারা তাঁর ওপর নির্ভর করেছে, তারা যিহোবাতে আনন্দ করতে পারে।

হিষ্কিয়ের নির্ভরতা সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছিল

১৪. (ক) কোন গুরুতর পরিস্থিতি সত্ত্বেও, হিষ্কিয় যিহোবার ওপর নির্ভর করেছিলেন? (খ) হিষ্কিয় কীভাবে দেখিয়েছিলেন যে, তিনি অশূরীয়দের মিথ্যা কথায় বিশ্বাস করেন না?

১৪ রাজা হিষ্কিয় ছিলেন আরেকজন ব্যক্তি, যিহোবার ওপর যার নির্ভরতা সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছিল। হিষ্কিয়ের রাজত্বের সময় শক্তিশালী অশূরীয় সেনাবাহিনী যিরূশালেমকে হুমকি দিয়েছিল। সেই সেনাবাহিনী অন্যান্য অনেক জাতিকে পরাজিত করেছিল। এই সেনাবাহিনী একমাত্র যিরূশালেম ছাড়া যিহূদার নগরগুলো পর্যন্ত জয় করেছিল এবং সন্‌হেরীব গর্ব করে বলেছিলেন, তিনি সেই নগরও জয় করবেন। রব্‌শাকির মাধ্যমে উপযুক্তভাবেই তিনি বলেছিলেন যে, সাহায্যের জন্য মিশরের ওপর নির্ভর করা সত্যিই ব্যর্থ হবে। কিন্তু এরপর তিনি বলেছিলেন: “তোমার বিশ্বাসভূমি ঈশ্বর এই বলিয়া তোমার ভ্রান্তি না জন্মাউন যে [“তুমি যে-ঈশ্বরে নির্ভর করছ তাঁকে এই বলে প্রতারণা করতে দিও না যে,” NW], যিরূশালেম অশূররাজের হস্তে সমর্পিত হইবে না।” (যিশাইয় ৩৭:১০) কিন্তু, হিষ্কিয় জানতেন যে, যিহোবা কখনও প্রতারণা করবেন না। তাই, তিনি এই বলে প্রার্থনা করেছিলেন: “হে আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW], তুমি তাহার হস্ত হইতে আমাদিগকে নিস্তার কর; তাহাতে পৃথিবীর সমস্ত রাজ্য জানিতে পারিবে যে, তুমি, কেবল মাত্র তুমিই সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW]।” (যিশাইয় ৩৭:২০) যিহোবা হিষ্কিয়ের প্রার্থনা শুনেছিলেন। একরাতের মধ্যে একজন দূত ১,৮৫,০০০ অশূরীয় সৈন্য হত্যা করেছিলেন। যিরূশালেম রক্ষা পেয়েছিল এবং সন্‌হেরীব যিহূদা ত্যাগ করেছিলেন। যারা সেই ঘটনা শুনেছিল, তারা সকলে জেনেছিল যে যিহোবা সর্বমহান।

১৫. একমাত্র কোন বিষয়টা আমাদের এমন যেকোনো কঠিন পরিস্থিতির জন্য তৈরি হতে সাহায্য করবে, যেখানে আমরা হয়তো এই অস্থির জগতের মধ্যে পড়তে পারি?

১৫ আজকে হিষ্কিয়ের ন্যায় আমরা যুদ্ধের মতো পরিস্থিতিতে রয়েছি। আমাদের বেলায় সেই যুদ্ধ হল আধ্যাত্মিক। তবুও, আধ্যাত্মিক যোদ্ধা হিসেবে আমাদের রক্ষা করার দক্ষতা গড়ে তোলা প্রয়োজন। আমাদের আগে থেকে বোঝা উচিত যে, আক্রমণ আসবে আর তাই নিজেদের তৈরি রাখা প্রয়োজন, যাতে আমরা সেগুলোকে প্রতিহত করতে পারি। (ইফিষীয় ৬:১১, ১২, ১৭) এই অস্থির জগতে পরিস্থিতি হঠাৎ করে পরিবর্তিত হতে পারে। অপ্রত্যাশিতভাবে আভ্যন্তরীণ বিক্ষোভ দেখা দিতে পারে। যে-দেশগুলো ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য পরিচিত, সেই পরিস্থিতি আর নাও থাকতে পারে। একমাত্র হিষ্কিয়ের মতো আমরা যদি যিহোবার ওপর পূর্ণ নির্ভরতা গড়ে তোলার মাধ্যমে নিজেদের তৈরি করি, তা হলে আমরা যেকোনো কিছুর জন্য প্রস্তুত থাকব, যা হয়তো ঘটতে পারে।

যিহোবার ওপর নির্ভর করার মানে কী?

১৬, ১৭. কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, আমরা যিহোবার ওপর নির্ভর করি?

১৬ যিহোবার ওপর নির্ভর করা শুধু মুখে বলাই নয়। এর সঙ্গে আমাদের হৃদয় জড়িত এবং কাজের মাধ্যমে তা প্রকাশ পায়। আমরা যদি যিহোবার ওপর নির্ভর করি, তা হলে আমরা তাঁর বাক্য বাইবেলে পুরোপুরি নির্ভর করব। আমরা প্রতিদিন এটি পড়ব, এটি নিয়ে ধ্যান করব এবং আমাদের জীবনে এটিকে পরিচালনা দিতে দেব। (গীতসংহিতা ১১৯:১০৫) যিহোবার ওপর নির্ভর করার সঙ্গে তাঁর পবিত্র আত্মার শক্তির ওপর নির্ভর করাও জড়িত। পবিত্র আত্মার সাহায্যে আমরা সেই সমস্ত ফলগুলো গড়ে তুলতে পারি, যেগুলো যিহোবাকে খুশি করে এবং দৃঢ়ভাবে স্থাপিত খারাপ অভ্যাসগুলো পরাভূত করতে পারি। (১ করিন্থীয় ৬:১১; গালাতীয় ৫:২২-২৪) এভাবে পবিত্র আত্মার সাহায্যে অনেকে ধূমপান বা মাদকদ্রব্য সেবন করা ছেড়ে দিতে পেরেছে। অন্যেরা অনৈতিক জীবনযাপন ত্যাগ করেছে। হ্যাঁ, আমরা যদি যিহোবার ওপর নির্ভর করি, তা হলে আমরা নিজেদের শক্তিতে নয় কিন্তু তাঁর শক্তিতে কাজ করি।—ইফিষীয় ৩:১৪-১৮.

১৭ এ ছাড়া, যিহোবার ওপর নির্ভর করার মানে হল, তাদের ওপরও নির্ভর করা যাদের ওপর তিনি নির্ভর করেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, পার্থিব রাজ্যের বিষয়গুলোর যত্ন নেওয়ার জন্য যিহোবা ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্‌ দাসের’ ব্যবস্থা করেছেন। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) আমরা স্বাধীনচেতাভাবে কাজ করার চেষ্টা করি না এবং সেই নিযুক্তিকরণ অবহেলা করি না কারণ আমরা যিহোবার ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করি। অধিকন্তু, প্রাচীনরা স্থানীয় খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে সেবা করে এবং প্রেরিত পৌলের কথা অনুসারে তারা পবিত্র আত্মার দ্বারা নিযুক্ত। (প্রেরিত ২০:২৮) মণ্ডলীতে প্রাচীন ব্যবস্থাকে সমর্থন করার মাধ্যমে আমরা যিহোবার ওপরও নির্ভর করতে পারি।—ইব্রীয় ১৩:১৭.

পৌলের উদাহরণ অনুসরণ করুন

১৮. আজকে খ্রিস্টানরা কীভাবে পৌলের উদাহরণ অনুসরণ করে কিন্তু কীসের ওপর তারা নির্ভর করে না?

১৮ প্রেরিত পৌল তার পরিচর্যায় অনেক চাপের মুখোমুখি হয়েছিলেন, ঠিক যেমন আমরাও হয়ে থাকি। তার দিনে কর্তৃপক্ষের কাছে খ্রিস্টধর্মকে ভুলভাবে তুলে ধরা হয়েছিল এবং তিনি কখনও কখনও সেই মিথ্যা ধারণা শুধরে দেওয়ার বা প্রচার কাজকে বৈধভাবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছিলেন। (প্রেরিত ২৮:১৯-২২; ফিলিপীয় ১:৭) আজকে, খ্রিস্টানরা তার উদাহরণ অনুসরণ করে। যেখানেই সম্ভব, আমরা আমাদের কাজ সম্বন্ধে জানতে অন্যদের সাহায্য করি, তা সেটা যেকোনো উপায়েই হোক না কেন। আর আমরা সুসমাচারকে সমর্থন এবং বৈধভাবে তা প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করি। কিন্তু, আমরা এইধরনের প্রচেষ্টাগুলোর ওপর পুরোপুরি নির্ভর করি না কারণ আমরা মনে করি না যে, সফলতা বা ব্যর্থতা আদালতের মামলায় আমাদের জয়ী হওয়া বা ভাল প্রচারণার ওপর নির্ভর করে। এর পরিবর্তে, আমরা যিহোবার ওপর নির্ভর করি। আমরা প্রাচীন ইস্রায়েলীয়দের প্রতি তাঁর উৎসাহজনক কথাগুলো মনে রাখি: “সুস্থির থাকিয়া বিশ্বাস [“নির্ভর,” NW] করিলে তোমাদের পরাক্রম হইবে।”—যিশাইয় ৩০:১৫.

১৯. আমাদের ভাইয়েরা যখন তাড়নার শিকার হয়েছে, তখন যিহোবার ওপর তাদের নির্ভরতা কীভাবে সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে?

১৯ আমাদের আধুনিক ইতিহাসে, উত্তর এবং পশ্চিম ইউরোপ, এশিয়া এবং আফ্রিকার কিছু অংশে এবং দক্ষিণ এবং উত্তর আমেরিকার কিছু দেশে এক সময় আমাদের কাজ নিষিদ্ধ বা সীমাবদ্ধ ছিল। এর অর্থ কি এই যে, যিহোবার ওপর আমাদের নির্ভর করা ভুল হয়েছে? না। যদিও তিনি তাঁর নিজ উত্তম উদ্দেশ্যের কারণে তিক্ত তাড়না ভোগ করার অনুমতি দেন কিন্তু যিহোবা প্রেমের সঙ্গে সেই সমস্ত ব্যক্তিদের শক্তিশালী করেন, যারা সেই তাড়নার লক্ষ্যবস্তু হয়। এই তাড়নার মধ্যে অনেক খ্রিস্টান ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস এবং নির্ভরতার এক অপূর্ব নথি গড়ে তুলেছে।

২০. যদিও আমরা বৈধ স্বাধীনতা থেকে উপকার পাই কিন্তু কোন ক্ষেত্রগুলোতে আমরা কখনও আপোশ করব না?

২০ অন্যদিকে, বেশির ভাগ দেশে আমাদের বৈধ স্বীকৃতি রয়েছে এবং কখনও কখনও প্রচারমাধ্যমে আমরা ভাল প্রচারণা পাই। এর জন্য আমরা কৃতজ্ঞ এবং উপলব্ধি করি যে, এটিও যিহোবার উদ্দেশ্য সাধনে অবদান রাখছে। তাঁর আশীর্বাদ পেয়ে আমরা আরও স্বাধীনতা ব্যবহার করি, আমাদের ব্যক্তিগত জীবনধারার উন্নতির জন্য নয় কিন্তু জনসাধারণ্যে ও পূর্ণরূপে যিহোবার সেবা করার জন্য। তবে, কেবলমাত্র কর্তৃপক্ষদের কাছ থেকে সুনাম লাভ করার জন্য আমরা কখনও আমাদের নিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে আপোশ করব না, আমাদের প্রচার কাজকে কমিয়ে দেব না অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে যিহোবার প্রতি আমাদের সেবাকে দুর্বল করে দেব না। আমরা মশীহ রাজ্যের প্রতি বশীভূত এবং পুরোপুরি যিহোবার সার্বভৌমত্বের পক্ষে রয়েছি। আমাদের আশা এই বিধিব্যবস্থার মধ্যে নয় কিন্তু নতুন জগতে, যেখানে স্বর্গীয় মশীহ রাজ্য এই পৃথিবীর ওপর শাসনরত একমাত্র সরকার হবে। কোনো বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র বা পারমাণবিক আক্রমণ সেই সরকারকে টলাতে পারবে না বা স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করতে পারবে না। এটি অপরাজেয় এবং এর জন্য করা যিহোবার উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করবে।—দানিয়েল ২:৪৪; ইব্রীয় ১২:২৮; প্রকাশিত বাক্য ৬:২.

২১. কোন পথ অনুসরণ করার জন্য আমরা দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?

২১ পৌল বলেছিলেন: “আমরা বিনাশের জন্য সরিয়া পড়িবার লোক নহি, বরং প্রাণের রক্ষার জন্য বিশ্বাসের লোক।” (ইব্রীয় ১০:৩৯) তা হলে, আমরা সকলে যেন শেষ পর্যন্ত বিশ্বস্ততার সঙ্গে যিহোবাকে সেবা করি। এখন এবং চিরকালের জন্য যিহোবার ওপর পুরোপুরি নির্ভর করার যথেষ্ট কারণ আমাদের রয়েছে।—গীতসংহিতা ৩৭:৩; ১২৫:১, NW.

আপনি কী শিখেছেন?

• যিহোশূয় এবং কালেব ফিরে এসে কেন অনুকূল তথ্য দিয়েছিল?

• কিছু কারণ কী, যেজন্য যিহোবার ওপর আমাদের পুরোপুরি নির্ভর করা উচিত?

• যিহোবার ওপর নির্ভর করার মানে কী?

• যিহোবার ওপর নির্ভর করে আমরা কোন পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোশূয় এবং কালেব কেন অনুকূল তথ্য দিয়েছিল?

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবার ওপর নির্ভর করতে সৃষ্টি আমাদের জন্য জোরালো কারণ জোগায়

[সৌজন্যে]

তিনটে চিত্রই: Courtesy of Anglo-Australian Observatory, photograph by David Malin

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবার ওপর নির্ভর করার মানে হল, তাদের ওপরও নির্ভর করা যাদের ওপর তিনি নির্ভর করেন