সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

অন্যদের যিহোবার মতো করে দেখার চেষ্টা করুন

অন্যদের যিহোবার মতো করে দেখার চেষ্টা করুন

অন্যদের যিহোবার মতো করে দেখার চেষ্টা করুন

“মানুষ যেভাবে দেখে, ঈশ্বর সেভাবে দেখেন না।”—১ শমূয়েল ১৬:৭, Nw.

১, ২. ইলীয়াব সম্বন্ধে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে শমূয়েলের দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে আলাদা ছিল এবং এর থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

 সাধারণ কাল পূর্ব ১১ শতাব্দীতে, যিহোবা ভাববাদী শমূয়েলকে এক গোপন কাজের জন্য পাঠিয়েছিলেন। তিনি ভাববাদীকে যিশয় নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে যেতে এবং যিশয়ের ছেলেদের মধ্যে একজনকে ইস্রায়েলের ভাবী রাজা হিসেবে অভিষিক্ত করতে আদেশ দিয়েছিলেন। শমূয়েল যখন যিশয়ের বড় ছেলে ইলীয়াবকে দেখেছিলেন, তখন নিশ্চিত হয়েছিলেন যে তিনি সেই ব্যক্তিকে খুঁজে পেয়েছেন, যাকে ঈশ্বর মনোনীত করেছেন। কিন্তু যিহোবা বলেছিলেন: ‘তুমি উহার মুখশ্রীর বা কায়িক দীর্ঘতার প্রতি দৃষ্টি করিও না; কারণ আমি উহাকে অগ্রাহ্য করিলাম। কেননা মানুষ যেভাবে দেখে, ঈশ্বর সেভাবে দেখেন না; যেহেতু মনুষ্য প্রত্যক্ষ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি করে, কিন্তু সদাপ্রভু অন্তঃকরণের প্রতি দৃষ্টি করেন।’ (১ শমূয়েল ১৬:৬, ৭) শমূয়েল, ইলীয়াবকে যিহোবার মতো করে দেখতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। *

অন্যদের মূল্যায়ন করতে গিয়ে মানুষ কত সহজেই ভুল করতে পারে! একদিকে, আমরা হয়তো এমন ব্যক্তিদের দ্বারা প্রতারিত হতে পারি, যারা বাহ্যিক দিক দিয়ে আকর্ষণীয় কিন্তু ভিতরে বিবেকহীন এক ব্যক্তি। অন্যদিকে, আবার আমরা হয়তো সেই সমস্ত আন্তরিক ব্যক্তিদের মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে কঠোর এবং রূঢ় হতে পারি, যাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আমাদের অসন্তোষ জন্মায়।

৩, ৪. (ক) দুজন খ্রিস্টানের মধ্যে যদি সমস্যা দেখা দেয়, তা হলে তাদের প্রত্যেককেই কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত? (খ) কোনো সহ বিশ্বাসীর সঙ্গে গুরুতর মতবিরোধ থাকলে নিজেদের কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করা উচিত?

সমস্যা তখনই দেখা দিতে পারে, যখন আমরা খুব দ্রুত অন্যদের, এমনকি যাদের আমরা বহু বছর ধরে জানি, তাদের মূল্যায়ন করি। আপনার হয়তো এমন একজন খ্রিস্টানের সঙ্গে তুমুল ঝগড়া হয়েছে, যিনি একসময় আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। আপনি কি সেই বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে চান? তা করতে কোন বিষয়টা আপনাকে সাহায্য করবে?

আপনার খ্রিস্টান ভাই বা বোনের দিকে একটু ভাল করে, সময় নিয়ে ইতিবাচক দৃষ্টি দিন না কেন? আর তা যিশুর এই কথাগুলোর আলোকে করুন: “পিতা, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনি আকর্ষণ না করিলে কেহ আমার কাছে আসিতে পারে না।” (যোহন ৬:৪৪) এরপর নিজেকে জিজ্ঞেস করুন: ‘যিহোবা কেন এই ব্যক্তিকে তাঁর পুত্রের কাছে আকর্ষিত করেছেন? ওই ব্যক্তির কোন উত্তম গুণগুলো রয়েছে? আমি কি সেগুলোকে উপেক্ষা করেছি বা অবমূল্যায়ন করেছি? আগে, কেন আমরা একে অপরের বন্ধু হয়েছিলাম? কোন বিষয়টা আমাকে এই ব্যক্তির প্রতি আকৃষ্ট করেছিল?’ প্রথম প্রথম উত্তম গুণগুলো নিয়ে চিন্তা করতে আপনার হয়তো একটু সমস্যা হতে পারে, বিশেষ করে আপনি যদি কিছু সময়ের জন্য যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতি পুষে রাখেন। কিন্তু, আপনাদের দুজনের ভাঙা সম্পর্ককে জোড়া লাগানোর জন্য এটা হল এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কীভাবে তা করা যেতে পারে, সেটা ব্যাখ্যা করার জন্য আসুন আমরা দুজন ব্যক্তির ইতিবাচক চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো দেখি, যারা একসময় নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রেখেছিল। তারা হলেন ভাববাদী যোনা এবং প্রেরিত পিতর।

যোনার প্রতি এক নিরপেক্ষ দৃষ্টি

৫. যোনাকে কোন কার্যভার দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?

যোয়াশের ছেলে রাজা যারবিয়াম ২য়র সময় ইস্রায়েলের উত্তর রাজ্যে যোনা একজন ভাববাদী হিসেবে সেবা করতেন। (২ রাজাবলি ১৪:২৩-২৫) একদিন, যিহোবা যোনাকে ইস্রায়েল ছেড়ে শক্তিশালী অশূরীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী নীনবীতে যাওয়ার আদেশ দেন। তার কার্যভার কী ছিল? এই নগরের লোকেদের সাবধান করে দেওয়া যে, তাদের মহানগরী ধ্বংস হতে যাচ্ছে। (যোনা ১:১, ২) ঈশ্বরের নির্দেশনা অনুসরণ না করে যোনা পালিয়ে গিয়েছিলেন! তিনি তর্শীশগামী একটি জাহাজে ওঠেন, যা নীনবী থেকে অনেক দূরে ছিল।—যোনা ১:৩.

৬. নীনবীতে যাওয়ার জন্য যিহোবা কেন যোনাকে বেছে নিয়েছিলেন?

আপনি যখন যোনার বিষয়ে চিন্তা করেন, তখন আপনার মনে কোন বিষয়টা আসে? আপনি কি তাকে একজন অবাধ্য ভাববাদী বলে মনে করেন? হঠাৎ করে তার কথা চিন্তা করলে আমরা হয়তো এইরকম উপসংহারে আসতে পারি। কিন্তু, যোনা অবাধ্য ছিলেন বলে কি ঈশ্বর তাকে একজন ভাববাদী হিসেবে মনোনীত করেছেন? কখনোই না! অবশ্যই যোনার কিছু উত্তম গুণাবলি ছিল। ভাববাদী হিসেবে তার বিবরণ বিবেচনা করুন।

৭. ইস্রায়েলে যোনা কোন পরিস্থিতিতে যিহোবাকে সেবা করেছিলেন এবং তা জানা কীভাবে তার প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করে?

যোনা আসলে বিশ্বস্ততার সঙ্গে ইস্রায়েলে, যে-এলাকার লোকেরা সাড়া দিত না, সেখানে কাজ করেছিলেন। ভাববাদী আমোষ, যিনিও প্রায় যোনার সময়েই বাস করতেন, তিনি সেই সময়ের ইস্রায়েলীয়দের বস্তুবাদী আমোদপ্রিয় বলে বর্ণনা করেছিলেন। * সেখানে মন্দ বিষয়গুলো ঘটে চলছিল কিন্তু ইস্রায়েলীয়রা সেগুলোর প্রতি একেবারে উদাসীন ছিল। (আমোষ ৩:১৩-১৫; ৪:৪; ৬:৪-৬) কিন্তু, দিনের পর দিন যোনা বিশ্বস্ততার সঙ্গে তাদের কাছে তার প্রচার করার কার্যভার পালন করেছিলেন। আপনি যদি একজন সুসমাচার ঘোষণাকারী হয়ে থাকেন, তা হলে আপনি জানেন যে, এমন লোকেদের সঙ্গে কথা বলা কতটা কঠিন যারা পরিতৃপ্ত বলে মনে করে এবং উদাসীন। তা হলে, যোনার দুর্বলতা বুঝতে পারলেও আসুন আমরা যেন তার বিশ্বস্ততা এবং ধৈর্যের মতো গুণগুলোকে উপেক্ষা না করি, যা তিনি অবিশ্বস্ত ইস্রায়েলীয়দের কাছে প্রচার করার সময় দেখিয়েছিলেন।

৮. একজন ইস্রায়েলীয় ভাববাদীকে নীনবীতে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলোর সম্মুখীন হতে হতো?

নীনবীতে যাওয়ার কার্যভারের সঙ্গে আরও কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা জড়িত ছিল। সেই নগরে পৌঁছানোর জন্য যোনাকে পায়ে হেঁটে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হতো—এক কঠিন যাত্রা, যার জন্য প্রায় এক মাস সময় লাগত। সেখানে পৌঁছেই ভাববাদীকে সেই অশূরীয়দের কাছে প্রচার করতে হতো, যারা তাদের নিষ্ঠুরতার জন্য পরিচিত ছিল। তাদের যুদ্ধগুলোতে নির্মম অত্যাচার ছিল এক সাধারণ বিষয়। তারা এমনকি তাদের নৃশংসতা নিয়ে গর্বও করত। তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, নীনবীকে ‘রক্তপাতী নগর’ বলা হতো।—নহূম ৩:১, ৭.

৯. প্রচণ্ড ঝড় যখন নাবিকদের ভয় পাইয়ে দিয়েছিল, তখন যোনা কোন গুণাবলি দেখিয়েছিলেন?

যিহোবার আদেশ অমান্য করে যোনা এমন একটি জাহাজে ওঠেন, যেটি তাকে তার কার্যভার থেকে অনেক অনেক দূরে নিয়ে যাচ্ছিল। তবুও, যিহোবা তাঁর ভাববাদীর ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেননি বা তার জায়গায় অন্য কাউকে দায়িত্ব দেননি। পরিবর্তে, যিহোবা যোনাকে তার চেতনা ফিরে পেতে সাহায্য করেছিলেন। ঈশ্বর সমুদ্রে প্রচণ্ড ঝড় নিয়ে এসেছিলেন। যে-জাহাজে যোনা ছিল, সেটি ঢেউয়ের কারণে এদিক-ওদিক দুলছিল। নিরীহ লোকগুলো একমাত্র যোনার কারণে তাদের প্রাণ হারাতে বসেছিল। (যোনা ১:৪) যোনা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? তার কারণে যাতে জাহাজের নাবিকরা প্রাণ না হারায় তাই যোনা তাদের বলেছিলেন: “আমাকে ধরিয়া সমুদ্রে ফেলিয়া দেও, তাহাতে সমুদ্র তোমাদের পক্ষে ক্ষান্ত হইবে।” (যোনা ১:১২) অবশেষে নাবিকরা যখন যোনাকে জাহাজ থেকে নিচে ফেলে দেয়, তখন তার এমন মনে করার কোনো কারণ ছিল না যে, যিহোবা তাকে সমুদ্রের মধ্যে থেকে উদ্ধার করবেন। (যোনা ১:১৫) কিন্তু, যোনা স্বেচ্ছায় মরতে চেয়েছিলেন, যাতে নাবিকদের প্রাণ হারাতে না হয়। আমরা কি এখানে সাহস, নম্রতা এবং প্রেমের প্রকাশ দেখতে পাই না?

১০. যিহোবা যোনাকে আবারও কার্যভার দেওয়ার পর কী ঘটেছিল?

১০ অবশেষে যিহোবা যোনাকে উদ্ধার করেছিলেন। যোনার এই কাজ কি তাকে আবার কখনও ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসেবে সেবা করার অযোগ্য করে তুলেছিল? না, যিহোবা করুণার সঙ্গে এবং প্রেম দেখিয়ে ভাববাদীকে আবারও নীনবীর লোকেদের কাছে প্রচার করার কার্যভার দিয়েছিলেন। যোনা যখন নীনবীতে উপস্থিত হয়েছিলেন, তখন তিনি সাহসের সঙ্গে এর অধিবাসীদের বলেছিলেন যে, ঈশ্বর তাদের প্রচণ্ড মন্দতা দেখেছেন আর তাই ৪০ দিনের মধ্যে এই নগর ধ্বংস হয়ে যাবে। (যোনা ১:২; ৩:৪) যোনার এই স্পষ্ট বার্তা শুনে নীনবীর লোকেরা অনুতপ্ত হয়েছিল এবং তাদের নগর রক্ষা পেয়েছিল।

১১. কী দেখায় যে, যোনা এক মূল্যবান শিক্ষা পেয়েছিলেন?

১১ তারপরও যোনার সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ছিল না। কিন্তু, এক বাস্তব শিক্ষার মাধ্যমে যিহোবা ধৈর্যের সঙ্গে যোনাকে শিখতে সাহায্য করেছিলেন যে, তিনি শুধু বাহ্যিক বিষয়ের চেয়ে আরও বেশি কিছু দেখেন। তিনি হৃদয়ের পরীক্ষা করেন। (যোনা ৪:৫-১১) যোনা যে এক মূল্যবান শিক্ষা পেয়েছিলেন, সেটা তার নিজের লিপিবদ্ধ নিরপেক্ষ বিবরণ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া, তার নিজের ভুলগুলো সম্বন্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বর্ণনা করা তার নম্রতারও প্রমাণ দেয়। কোনো ভুল স্বীকার করার জন্য সাহসের প্রয়োজন!

১২. (ক) কীভাবে আমরা জানি যে, যিশু যিহোবার মতো করে লোকেদের দেখেন? (খ) আমরা যে-লোকেদের কাছে সুসমাচার প্রচার করি, তাদের প্রতি কোন দৃষ্টিভঙ্গি রাখার জন্য আমাদের উৎসাহ দেওয়া হয়েছে? (১৮ পৃষ্ঠার বাক্স দেখুন।)

১২ কয়েক শতাব্দী পর, যিশু খ্রিস্ট যোনার জীবনের একটি ঘটনার ইতিবাচক বিবৃতি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “যোনা যেমন তিন দিবারাত্র বৃহৎ মৎস্যের উদরে ছিলেন, তেমনি মনুষ্যপুত্ত্রও তিন দিবারাত্র পৃথিবীর গর্ব্ভে থাকিবেন।” (মথি ১২:৪০) পুনরুত্থিত হওয়ার পর যোনা জানতে পারবেন যে, যিশু নিজের কবরে থাকার বিষয়টা ভাববাদীর জীবনের অন্ধকারময় সময়ের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। আমরা কি এমন এক ঈশ্বরকে সেবা করতে পেরে আনন্দিত নই, যিনি তাঁর দাসেরা যখন ভুল করে তখন তাদের ত্যাগ করেন না? গীতরচক লিখেছিলেন: “পিতা সন্তানদের প্রতি যেমন করুণা করেন, যাহারা সদাপ্রভুকে ভয় করে, তাহাদের প্রতি তিনি তেমনি করুণা করেন। কারণ তিনিই আমাদের গঠন জানেন; আমরা যে ধূলিমাত্র, ইহা তাঁহার স্মরণে আছে।” (গীতসংহিতা ১০৩:১৩, ১৪) সত্যিই এই “ধূলিমাত্র”—যেটার অন্তর্ভুক্ত আজকের অসিদ্ধ লোকেরা—ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার সাহায্যে বিরাট কিছু সম্পাদন করতে পারে!

পিতরের ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি

১৩. পিতরের কোন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো হয়তো মনে আসতে পারে কিন্তু কেন যিশু তাকে একজন প্রেরিত হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন?

১৩ আসুন এখন আমরা দ্বিতীয় উদাহরণটা সংক্ষেপে বিবেচনা করি, যেটা হল প্রেরিত পিতরের উদাহরণ। আপনাকে যদি পিতরের সম্বন্ধে বর্ণনা করতে বলা হয়, তা হলে আপনি কি সঙ্গে সঙ্গে এইধরনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে চিন্তা করবেন যেমন বেপরোয়া, একরোখা এমনকি অহংকারী? কখনও কখনও পিতর এইরকম বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু, পিতর যদি একজন বেপরোয়া, একরোখা বা অহংকারী মনোভাবের ব্যক্তি হতেন, তা হলে যিশু কি তাকে ১২ জন প্রেরিতদের মধ্যে একজন হিসেবে বেছে নিতেন? (লূক ৬:১২-১৪) অবশ্যই নয়! স্পষ্টতই, যিশু এইধরনের দোষগুলোকে উপেক্ষা করে পিতরের ইতিবাচক গুণগুলো দেখেছিলেন।

১৪. (ক) কোন বিষয়টা পিতরের আপাতদৃষ্টিতে খোলাখুলি কথা বলার কারণ সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করে? (খ) পিতর প্রায়ই নানা প্রশ্ন করতেন বলে কেন আমাদের কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত?

১৪ মাঝে মাঝে পিতর অন্যান্য প্রেরিতদের মুখপাত্র হিসেবে আচরণ করতেন। কেউ কেউ হয়তো এটাকে বিনয়ের অভাব বলে মনে করতে পারে। কিন্তু, আসলেই কি তাই? কেউ কেউ বলে যে, পিতর হয়তো অন্যান্য প্রেরিতদের চেয়ে বয়সে বড় ছিলেন—হয়তো যিশুর চেয়েও বড় ছিলেন। এটা যদি সঠিক হয়, তা হলে এটা হয়তো ব্যাখ্যা করতে সাহায্যে করতে পারে যে, কেন পিতর প্রায়ই প্রথমে কথা বলতেন। (মথি ১৬:২২) কিন্তু, বিবেচনা করার মতো আরেকটা বিষয় রয়েছে। পিতর একজন আধ্যাত্মিকমনা ব্যক্তি ছিলেন। জ্ঞানের জন্য তার আকুল আকাঙ্ক্ষা তাকে নানা প্রশ্ন করতে পরিচালিত করত। সেগুলো আমাদের উপকার করেছে। পিতরের প্রশ্নগুলোর উত্তরে যিশু অনেক মূল্যবান বিবৃতি দিয়েছিলেন এবং সেগুলো বাইবেলে সংরক্ষিত রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পিতরের বিবৃতির উত্তরেই যিশু “বিশ্বস্ত . . . গৃহাধ্যক্ষ” সম্বন্ধে বলেছিলেন। (লূক ১২:৪১-৪৪) আর পিতরের প্রশ্ন বিবেচনা করুন: “আমরা সমস্তই পরিত্যাগ করিয়া আপনার পশ্চাদ্গামী হইয়াছি; আমরা তবে কি পাইব?” আর এটাই যিশুর জোরালো প্রতিজ্ঞা সম্বন্ধে জানিয়েছিল: “যে কোন ব্যক্তি আমার নামের জন্য বাটী, কি ভ্রাতা, কি ভগিনী, কি পিতা, কি মাতা, কি সন্তান, কি ক্ষেত্র পরিত্যাগ করিয়াছে, সে তাহার শত গুণ পাইবে, এবং অনন্ত জীবনের অধিকারী হইবে।”—মথি ১৫:১৫; ১৮:২১, ২২; ১৯:২৭-২৯.

১৫. কেন বলা যেতে পারে যে, পিতর সত্যিই অনুগত ছিলেন?

১৫ পিতরের আরেকটা উত্তম গুণ ছিল—তিনি অনুগত ছিলেন। অনেক শিষ্য যিশুর একটা শিক্ষা বুঝতে পারেনি বলে যখন তাঁকে অনুসরণ করা বন্ধ করে দিয়েছিল, তখন পিতরই ১২ জন প্রেরিতের হয়ে এই কথা বলেছিলেন: “প্রভু, কাহার কাছে যাইব? আপনার নিকটে অনন্ত জীবনের কথা আছে।” (যোহন ৬:৬৬-৬৮) এই কথাগুলো যিশুর হৃদয়কে কত উষ্ণই না করেছিল! পরে, জনতা যখন প্রভুকে গ্রেপ্তার করতে আসে, তখন তার বেশির ভাগ প্রেরিতই পালিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, পিতর দূর থেকে জনতাকে অনুসরণ করেছিলেন এবং সরাসরি মহাযাজকের প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেছিলেন। ভয় নয় কিন্তু সাহসই তাকে সেখানে নিয়ে গিয়েছিল। যিশুকে যখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল, তখন পিতর একদল যিহুদির সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন, যারা আগুন পোহাচ্ছিল। মহাযাজকের একজন দাস তাকে চিনতে পারেন এবং তিনি যিশুর সঙ্গে ছিলেন বলে অভিযোগ করেন। হ্যাঁ, পিতর তার প্রভুকে অস্বীকার করেছিলেন কিন্তু আমরা যেন ভুলে না যাই যে, যিশুর প্রতি আনুগত্য এবং উদ্বিগ্নতাই পিতরকে সেই বিপদজনক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছিল, যে-পরিস্থিতির মোকাবিলা করার সাহস অন্যান্য প্রেরিতদের হয়নি।—যোহন ১৮:১৫-২৭.

১৬. কোন বাস্তব কারণের জন্য আমরা যোনা এবং পিতরের ইতিবাচক গুণগুলো বিবেচনা করেছি?

১৬ পিতরের ইতিবাচক গুণগুলো তার ভুলগুলোর ঊর্ধ্বে ছিল। যোনার ক্ষেত্রেও একই বিষয় সত্যি। ঠিক যেমন আমরা যোনা ও পিতরের দিকে স্বাভাবিকের চেয়ে আরও বেশি ইতিবাচক দৃষ্টি দিয়েছি, তেমনই আমাদের বর্তমান দিনের আধ্যাত্মিক ভাই ও বোনদের মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে আরও ইতিবাচক হওয়ার জন্য নিজেদের প্রশিক্ষিত করতে হবে। আর তা করলে তাদের সঙ্গে আমাদের আরও ভাল সম্পর্ক গড়ে উঠবে। কেন এটি করার প্রকৃত প্রয়োজন রয়েছে?

আজকে এই শিক্ষা কাজে লাগানো

১৭, ১৮. (ক) খ্রিস্টানদের মধ্যে কেন বিরোধ দেখা দিতে পারে? (খ) বাইবেলের কোন পরামর্শ সহ বিশ্বাসীদের সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে ফেলার জন্য আমাদের সাহায্য করতে পারে?

১৭ আর্থিক দিক দিয়ে সমস্ত স্তরের ও সেইসঙ্গে শিক্ষাগত এবং জাতিগত পটভূমির পুরুষ, নারী ও শিশুরা আজকে একত্রে যিহোবার সেবা করছে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯, ১০) খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে আমরা কত আলাদা ব্যক্তিত্বের লোকেদেরই না দেখি! যেহেতু আমরা কাছাকাছি থেকে ঈশ্বরের সেবা করছি, তাই কখনও কখনও মতবিরোধ দেখা দেবেই।—রোমীয় ১২:১০; ফিলিপীয় ২:৩.

১৮ যদিও আমরা আমাদের ভাইবোনদের ভুলগুলো লক্ষ করি কিন্তু আমরা সেগুলোর প্রতি মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করি না। আমরা যিহোবাকে অনুকরণ করার আপ্রাণ চেষ্টা করি, যাঁর সম্বন্ধে গীতরচক বলেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, তুমি যদি অপরাধ সকল ধর, তবে, হে প্রভু, কে দাঁড়াইতে পারিবে?” (গীতসংহিতা ১৩০:৩) যে-চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো আমাদের পৃথক করতে পারে, সেগুলো ধরে রাখার বদলে আমরা “যে যে বিষয় শান্তিজনক, ও যে যে বিষয়ের দ্বারা পরস্পরকে গাঁথিয়া তুলিতে পারি, . . . সেই সকলের অনুধাবন করি।” (রোমীয় ১৪:১৯) আমরা প্রত্যেককে যিহোবার মতো করে দেখার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করি, ভুলগুলোকে উপেক্ষা করে উত্তম গুণগুলোর দিকে মনোযোগ দিই। আমরা যখন তা করি, তখন এটা আমাদের “পরস্পর সহনশীল” হতে সাহায্য করে।—কলসীয় ৩:১৩.

১৯. গুরুতর মতবিরোধ মিটমাট করার জন্য একজন খ্রিস্টান বাস্তবসম্মত যে-পদক্ষেপগুলো নিতে পারেন, সেগুলো তুলে ধরুন।

১৯ এমন ভুল বোঝাবুঝি হলে কী হবে, যা হয়তো আমরা হৃদয় থেকে দূর করতে পারি না? (গীতসংহিতা ৪:৪) এটা কি আপনার ও সহ বিশ্বাসীর মধ্যে ঘটেছে? বিষয়টা মিটমাট করার চেষ্টা করুন না কেন? (আদিপুস্তক ৩২:১৩-১৫) প্রথমে, প্রার্থনায় যিহোবার নিকটবর্তী হয়ে তাঁর নির্দেশনা চান। এরপর ব্যক্তির উত্তম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলোর কথা মনে রেখে “জ্ঞানের মৃদুতায়” তার কাছে যান। (যাকোব ৩:১৩) তাকে বলুন যে, আপনি শান্তি স্থাপন করতে চান। অনুপ্রাণিত এই পরামর্শের কথা মনে রাখুন: “শ্রবণে সত্বর, কথনে ধীর, ক্রোধে ধীর হউক।” (যাকোব ১:১৯) “ক্রোধে ধীর” হওয়ার পরামর্শ পরোক্ষভাবে বোঝায় যে, অপর ব্যক্তি হয়তো এমন কিছু করতে বা বলতে পারে, যেকারণে আপনি রেগে যেতে পারেন। যদি তা-ই হয়, তা হলে ইন্দ্রিয়দমন বজায় রাখার জন্য যিহোবার সাহায্য চান। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) আপনার ভাই বা বোনকে কথা বলতে দিন এবং তার কথা মন দিয়ে শুনুন। তার কথায় বাধা দেবেন না, এমনকি তিনি যা বলছেন সেগুলোর সঙ্গে আপনি যদি একমত নাও হন। তার দৃষ্টিভঙ্গি হয়তো ভুল হতে পারে তবুও, এটা তার দৃষ্টিভঙ্গি। তার দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টা উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন। এভাবে আপনি হয়তো আপনার ভাইয়ের দৃষ্টিভঙ্গিতে নিজেকে দেখতে পাবেন।—হিতোপদেশ ১৮:১৭.

২০. মতবিরোধের মীমাংসা করার সময় আর কোন কোন পদক্ষেপ সম্ভবত বিষয়টার মিটমাট করতে সাহায্য করবে?

২০ যখন আপনার কথা বলার সুযোগ আসে, তখন সদয় হোন। (কলসীয় ৪:৬, NW) আপনার ভাইকে বলুন যে, তার কোন কোন বিষয়গুলো আপনার ভাল লাগে। ভুল বোঝাবুঝির ক্ষেত্রে আপনার যতটুকু ভূমিকা থাকুক না কেন, সেই বিষয়ে অপরাধ স্বীকার করুন। আপনার নম্র প্রচেষ্টার কারণে যদি বিষয়টার মিটমাট হয়ে যায়, তা হলে যিহোবাকে ধন্যবাদ দিন। যদি এগুলোতে কাজ না হয়, তা হলে শান্তি স্থাপন করার আরও সুযোগ খোঁজার সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশনার জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা করে চলুন।—রোমীয় ১২:১৮.

২১. এই আলোচনা আপনাকে কীভাবে অন্যদের যিহোবার মতো করে দেখতে সাহায্য করেছে?

২১ যিহোবা তাঁর সকল দাসকে ভালবাসেন। আমাদের অসিদ্ধতা সত্ত্বেও, তিনি তাঁর সেবায় আমাদের সকলকে ব্যবহার করতে পেরে আনন্দিত। যতই আমরা অন্যদের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে শিখব, আমাদের ভাই ও বোনদের প্রতি আমাদের ভালবাসা ততই গভীর হবে। কোনো সহ বিশ্বাসীর প্রতি আমাদের প্রেম যদি শীতল হয়ে যায়, তা হলে আবারও তা জাগিয়ে তোলা যায়। অন্যদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করার জন্য, হ্যাঁ, তাদের যিহোবার মতো করে দেখতে আমরা যদি অবিরত প্রচেষ্টা করে চলি, তা হলে আমরা কত আশীর্বাদই না পাব!

[পাদটীকাগুলো]

^ পরবর্তী সময়ে স্পষ্ট হয়েছিল যে, ইস্রায়েলের একজন উপযুক্ত রাজা হওয়ার জন্য সুদর্শন ইলীয়াবের প্রয়োজনীয় গুণাবলি ছিল না। পলেষ্টীয় দৈত্যাকার গলিয়াৎ যখন ইস্রায়েলীয়দের যুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করেছিল, তখন ইলীয়াব ও সেইসঙ্গে ইস্রায়েলের অন্যান্য লোকেরা ভয়ে জড়সড় হয়ে গিয়েছিল।—১ শমূয়েল ১৭:১১, ২৮-৩০.

^ কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ বিজয় এবং প্রাক্তন অঞ্চলকে পুনর্স্থাপন করা ও এর ফলস্বরূপ সম্ভবত রাজস্ব সংগ্রহ করার কারণে যারবিয়াম ২য় স্পষ্টতই উত্তর রাজ্যের ঐশ্বর্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে অবদান রেখেছিলেন।—২ শমূয়েল ৮:৬; ২ রাজাবলি ১৪:২৩-২৮; ২ বংশাবলি ৮:৩, ৪; আমোষ ৬:২.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের ভুলগুলোকে কীভাবে দেখেন?

• যোনা এবং পিতরের কোন ইতিবাচক গুণগুলো আপনি উল্লেখ করতে পারেন?

• আপনার খ্রিস্টান ভাইবোনদের প্রতি কোন দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখবেন বলে আপনি দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৮ পৃষ্ঠার বাক্স]

চিন্তা করুন যে অন্যদের ঈশ্বর কোন দৃষ্টিতে দেখেন

বাইবেলে যোনার ঘটনা নিয়ে ধ্যান করার সময় আপনি কি যে-লোকেদের কাছে নিয়মিত সুসমাচার প্রচার করেন, তাদের নতুন করে দেখার প্রয়োজন লক্ষ করেছেন? তাদের হয়তো ইস্রায়েলীয়দের মতো নিজেদের পরিতৃপ্ত করতে চায় বা উদাসীন বলে মনে হতে পারে বা তারা হয়তো ঈশ্বরের বার্তার বিরোধিতা করতে পারে। কিন্তু, যিহোবা ঈশ্বর তাদের কোন দৃষ্টিতে দেখেন? এমনকি এই বিধিব্যবস্থার বিখ্যাত কিছু ব্যক্তিও হয়তো একদিন যিহোবার কাছে আসতে পারে, ঠিক যেমন যোনার প্রচারের কারণে নীনবীর রাজা অনুতপ্ত হয়েছিলেন।—যোনা ৩:৬, ৭.

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি অন্যদের যিহোবার মতো করে দেখেন?

[১৬, ১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

যোনার অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে বলার জন্য যিশু ইতিবাচক কিছু খুঁজে পেয়েছিলেন