সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

প্রাথমিক খ্রিস্টান এবং মোশির ব্যবস্থা

প্রাথমিক খ্রিস্টান এবং মোশির ব্যবস্থা

প্রাথমিক খ্রিস্টান এবং মোশির ব্যবস্থা

“ব্যবস্থা খ্রীষ্টের কাছে আনিবার জন্য আমাদের পরিচালক দাস হইয়া উঠিল।”—গালাতীয় ৩:২৪.

১, ২. কিছু উপকার কী, যেগুলো যে-ইস্রায়েলীয়রা মনোযোগের সঙ্গে মোশির ব্যবস্থা পালন করত, তারা পেয়েছিল?

 সাধারণ কাল পূর্ব ১৫১৩ সালে, যিহোবা ইস্রায়েলীয়দের ব্যবস্থাবিধি দিয়েছিলেন। তিনি লোকেদের বলেছিলেন যে, তারা যদি তাঁর রবে অবধান করে, তা হলে তিনি তাদের আশীর্বাদ করবেন এবং তারা সুখী ও পরিতৃপ্ত জীবন উপভোগ করবে।—যাত্রাপুস্তক ১৯:৫, ৬.

সেই ব্যবস্থাবিধি, যেটিকে মোশির ব্যবস্থা বা শুধু “ব্যবস্থা” বলা হয়, সেটি ছিল “পবিত্র, ন্যায্য ও উত্তম।” (রোমীয় ৭:১২) এটি এইধরনের সদ্‌গুণগুলো তুলে ধরেছিল যেমন দয়া, সততা, নৈতিকতা এবং প্রতিবেশীসুলভ মনোভাব। (যাত্রাপুস্তক ২৩:৪, ৫; লেবীয় পুস্তক ১৯:১৪; দ্বিতীয় বিবরণ ১৫:১৩-১৫; ২২:১০, ২২) ব্যবস্থা যিহুদিদের একে অপরকে প্রেম করতেও উদ্দীপিত করেছিল। (লেবীয় পুস্তক ১৯:১৮) এ ছাড়া, সেগুলো পরজাতীয়দের, যারা ব্যবস্থার অধীন ছিল না, তাদের সঙ্গে মেলামেশা করতে এবং তাদের মধ্যে থেকে কোনো স্ত্রী গ্রহণ করতে নিষেধ করেছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ৭:৩, ৪) যিহুদি এবং পরজাতীয়দের মধ্যে বিচ্ছেদের “ভিত্তি” হিসেবে মোশির ব্যবস্থা ঈশ্বরের লোকেদের পৌত্তলিক চিন্তাভাবনা এবং অভ্যাসগুলো দ্বারা কলুষিত হওয়া থেকে বিরত রেখেছিল।—ইফিষীয় ২:১৪, ১৫; যোহন ১৮:২৪.

৩. যেহেতু কেউই একেবারে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে ব্যবস্থা পালন করতে পারত না, তাই এটির কাজ কী ছিল?

কিন্তু, এমনকি অত্যন্ত সতর্ক যিহুদিরাও ঈশ্বরের ব্যবস্থা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে পালন করতে পারত না। যিহোবা কি তাদের কাছ থেকে খুব বেশি কিছু চেয়েছিলেন? না। যেকারণগুলোর জন্য ইস্রায়েলীয়দের ব্যবস্থা দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে একটা ছিল “অপরাধের কারণ।” (গালাতীয় ৩:১৯) ব্যবস্থা আন্তরিক যিহুদিদের সচেতন করেছিল যে, তাদের জন্য একজন মুক্তিদাতার খুবই প্রয়োজন রয়েছে। সেই মুক্তিদাতা যখন এসেছিলেন, তখন বিশ্বস্ত যিহুদিরা আনন্দিত হয়েছিল। পাপ এবং মৃত্যুর অভিশাপ থেকে তাদের মুক্তি সন্নিকট ছিল!—যোহন ১:২৯.

৪. “খ্রীষ্টের কাছে আনিবার জন্য” কোন অর্থে ব্যবস্থা একজন “পরিচালক দাস” ছিল?

মোশির ব্যবস্থা ছিল এক অস্থায়ী ব্যবস্থা। সহ খ্রিস্টানদের কাছে লেখার সময় প্রেরিত পৌল এটিকে “খ্রীষ্টের কাছে আনিবার জন্য” একজন “পরিচালক দাস” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। (গালাতীয় ৩:২৪) প্রাচীনকালে একজন পরিচালক দাস ছেলেমেয়েদের স্কুলে নিয়ে যেতেন এবং স্কুল থেকে নিয়ে আসতেন। তিনি সাধারণত শিক্ষক ছিলেন না; তিনি কেবল ছেলেমেয়েদের শিক্ষকের কাছে নিয়ে যেতেন। একইভাবে, ঈশ্বর-ভয়শীল যিহুদিদের খ্রিস্টের কাছে পরিচালিত করার জন্য মোশির ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছিল। যিশু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তিনি “যুগান্ত পর্য্যন্ত প্রতিদিন” তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে সঙ্গে থাকবেন। (মথি ২৮:২০) তাই, খ্রিস্টীয় মণ্ডলী গঠিত হওয়ার পর “পরিচালক দাস” অর্থাৎ ব্যবস্থা আর কোনো উদ্দেশ্যই সম্পাদন করেনি। (রোমীয় ১০:৪: গালাতীয় ৩:২৫) কিন্তু, কিছু যিহুদি খ্রিস্টান তখনই এই গুরুত্বপূর্ণ সত্যটি বুঝতে পারেনি। এর ফলে, এমনকি যিশুর পুনরুত্থানের পরেও তারা ব্যবস্থার কিছু কিছু বিষয় পালন করে চলেছিল। কিন্তু, অন্যেরা তাদের চিন্তাভাবনায় রদবদল করেছিল। তা করার মাধ্যমে তারা আজকে আমাদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছে। আসুন আমরা দেখি যে, সেটা কীভাবে?

খ্রিস্টীয় মতবাদ সম্বন্ধে রোমাঞ্চকর বোধগম্যতাগুলো

৫. একটা দর্শনে পিতর কোন নির্দেশনাগুলো পেয়েছিলেন এবং কেন তিনি একেবারে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন?

সাধারণ কাল ৩৬ সালে খ্রিস্টান প্রেরিত পিতর এক উল্লেখযোগ্য দর্শন পেয়েছিলেন। সেই সময় এক স্বর্গীয় কণ্ঠস্বর তাকে সেই সমস্ত পাখি এবং পশু হত্যা করে খেতে বলেছিল, যেগুলো ব্যবস্থা অনুযায়ী অশুচি ছিল। এতে পিতর একেবারে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন! কারণ তিনি কখনও “কোন অপবিত্র কিম্বা অশুচি দ্রব্য ভোজন” করেননি। কিন্তু সেই কণ্ঠস্বর তাকে বলেছিল: “ঈশ্বর যাহা শুচি করিয়াছেন, তুমি তাহা অপবিত্র বলিও না।” (প্রেরিত ১০:৯-১৫) ব্যবস্থার প্রতি কঠোরভাবে লেগে থাকার পরিবর্তে পিতর তার দৃষ্টিভঙ্গি রদবদল করেছিলেন। এটা তাকে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যগুলো সম্বন্ধে বিস্ময়কর কিছু আবিষ্কার করতে পরিচালিত করেছিল।

৬, ৭. কোন বিষয়টা পিতরকে এই উপসংহারে আসতে সাহায্য করেছিল যে তিনি এখন পরজাতীয় ব্যক্তিদের কাছে প্রচার করতে পারেন এবং তিনি সম্ভবত আরও কোন উপসংহারে এসেছিলেন?

ঘটনাটা ছিল এইরকম। তিন জন ব্যক্তি পিতর যে-বাড়িতে ছিলেন, সেখানে গিয়ে তাকে তাদের সঙ্গে একজন ধর্মপ্রাণ অছিন্নত্বক্‌ পরজাতীয় ব্যক্তি কর্ণীলিয়ের বাড়িতে যাওয়ার জন্য বলেছিল। পিতর সেই ব্যক্তিদের ঘরে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন এবং তাদের আতিথ্য করেছিলেন। এই দর্শনের তাৎপর্য বুঝতে পেরে পিতর পরের দিন তাদের সঙ্গে কর্ণীলিয়ের বাড়িতে যান। সেখানে পিতর যিশু খ্রিস্ট সম্বন্ধে বিস্তারিত সাক্ষ্য দেন। সেই সময় পিতর বলেছিলেন: “আমি সত্যই বুঝিলাম, ঈশ্বর মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাতিত্ব,” NW] করেন না; কিন্তু প্রত্যেক জাতির মধ্যে যে কেহ তাঁহাকে ভয় করে ও ধর্ম্মাচরণ করে, সে তাঁহার গ্রাহ্য হয়।” শুধু কর্ণীলিয়ই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তার আত্মীয়স্বজন এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবও যিশুতে বিশ্বাস অনুশীলন করেছিল এবং “যত লোক বাক্য শুনিতেছিল, সকলের উপরে পবিত্র আত্মা পতিত হইলেন।” এই বিষয়ে যে যিহোবার হাত রয়েছে, সেটা বুঝতে পেরে পিতর “যীশু খ্রীষ্টের নামে তাঁহাদিগকে বাপ্তাইজ করিবার আজ্ঞা দিলেন।”—প্রেরিত ১০:১৭-৪৮.

কোন বিষয়টা পিতরকে এই উপসংহারে আসতে সাহায্য করেছিল যে, যে-পরজাতীয় ব্যক্তিরা মোশির ব্যবস্থার অধীনে নয়, তারাও এখন যিশু খ্রিস্টের অনুসারী হতে পারে? আধ্যাত্মিক বিচক্ষণতা। যেহেতু ঈশ্বর অছিন্নত্বক্‌ পরজাতীয়দের প্রতি তাঁর অনুমোদন দেখিয়েছিলেন, তাদের ওপর তাঁর আত্মা বর্ষণ করেছিলেন, তাই পিতর বুঝতে পেরেছিলেন যে, তারা বাপ্তিস্মের জন্য গ্রাহ্য হতে পারে। একই সঙ্গে পিতর স্পষ্টতই বুঝতে পেরেছিলেন যে, ঈশ্বর আশা করেননি যে পরজাতীয় খ্রিস্টানরা তাদের বাপ্তিস্মের শর্ত হিসেবে মোশির ব্যবস্থা পালন করবে। আপনি যদি সেই সময়ে বাস করতেন, তা হলে আপনিও কি পিতরের মতো আপনার দৃষ্টিভঙ্গিকে রদবদল করার জন্য ইচ্ছুক থাকতেন?

কেউ কেউ ‘পরিচালক দাসকে’ মেনে চলেছিল

৮. ত্বক্‌চ্ছেদের বিষয়ে যিরূশালেমে বসবাসরত কিছু খ্রিস্টান পিতরের চেয়ে আলাদা কোন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছিল এবং কেন?

কর্ণীলিয়ের বাড়ি ত্যাগ করার পর, পিতর যিরূশালেমে গিয়েছিলেন। অছিন্নত্বক্‌ পরজাতীয়রা “ঈশ্বরের বাক্য গ্রহণ করিয়াছে,” এই সংবাদ সেখানকার মণ্ডলীতে পৌঁছেছিল এবং কিছু যিহুদি শিষ্য এতে অসন্তুষ্ট হয়েছিল। (প্রেরিত ১১:১-৩) পরজাতীয় ব্যক্তিরা যিশুর অনুসারী হতে পারে এই বিষয়টা স্বীকার করলেও “ছিন্নত্বক্‌ লোকেরা” জোর দিয়ে বলেছিল যে, এই ন-যিহুদি জাতির লোকেরা পরিত্রাণ পেতে চাইলে তাদের অবশ্যই ব্যবস্থা পালন করতে হবে। অন্যদিকে, পরজাতীয় প্রভাবসম্পন্ন ক্ষেত্রগুলোতে, যেখানে অল্পসংখ্যক যিহুদি খ্রিস্টান ছিল, সেখানে ত্বক্‌চ্ছেদের ব্যাপারটা কোনো বিচার্য বিষয় ছিল না। এই দুরকম দৃষ্টিভঙ্গি প্রায় ১৩ বছর ধরে ছিল। (১ করিন্থীয় ১:১০) সেই প্রাথমিক খ্রিস্টানদের জন্য—বিশেষ করে যে-পরজাতীয়রা যিহুদি এলাকাগুলোতে থাকত—সেটা কী এক পরীক্ষাই না ছিল!

৯. ত্বক্‌চ্ছেদের বিষয়টা মীমাংসা করা কেন গুরুত্বপূর্ণ ছিল?

অবশেষে, সা.কা. ৪৯ সালে এই বিষয়টা চূড়ান্ত রূপ নেয়, যখন যিরূশালেমের খ্রিস্টানরা সিরিয়ার আন্তিয়খিয়ায় আসে, যেখানে পৌল প্রচার করছিলেন। তারা শিক্ষা দিতে শুরু করে যে, ব্যবস্থা অনুসারে ধর্মান্তরিত পরজাতীয় ব্যক্তিদের ত্বক্‌চ্ছেদ করতে হবে। আর সেখানে পৌল ও বার্ণবার সঙ্গে তাদের প্রচণ্ড বিবাদ এবং তর্কবিতর্ক হয়! এই বিষয়টার যদি মীমাংসা না হয়, তা হলে কিছু খ্রিস্টান, তা তারা যিহুদি বা পরজাতীয় পটভূমি থেকেই হোক না কেন, নিঃসন্দেহে বিঘ্ন পাবে। তাই, পৌল এবং অন্য কয়েকজন ব্যক্তিকে যিরূশালেমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়, যাতে তারা খ্রিস্টান পরিচালক গোষ্ঠীকে বিষয়টার স্থায়ী সমাধান করার জন্য জিজ্ঞেস করতে পারে।—প্রেরিত ১৫:১, ২, ২৪.

এক প্রকৃত মতবিরোধ—এরপর একতা!

১০. কিছু বিষয় কী, যা পরিচালক গোষ্ঠী পরজাতীয় ব্যক্তিদের অবস্থা সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়া আগে বিবেচনা করেছিল?

১০ যে-সভার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, সেখানে স্পষ্টতই কেউ কেউ ত্বক্‌চ্ছেদের পক্ষে তর্ক করেছিল এবং অন্যেরা বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছিল। কিন্তু, এতে আবেগের কোনো স্থান ছিল না। অনেক তর্কবিতর্ক হওয়ার পর, প্রেরিত পিতর এবং পৌল সেই সমস্ত চিহ্নগুলোর বিষয়ে বর্ণনা করে, যা যিহোবা অছিন্নত্বক্‌ ব্যক্তিদের মধ্যে সাধন করেছিলেন। তারা ব্যাখ্যা করে যে, ঈশ্বর অছিন্নত্বক্‌ পরজাতীয় ব্যক্তিদের ওপর পবিত্র আত্মা বর্ষণ করেছেন। বস্তুত, তারা জিজ্ঞেস করেছিল, ‘খ্রিস্টীয় মণ্ডলী কি প্রকৃতপক্ষে সেই সমস্ত ব্যক্তিদের বাদ দিতে পারে, যাদের ঈশ্বর গ্রহণ করেছেন?’ এরপর শিষ্য যাকোব শাস্ত্র থেকে একটা অংশ পড়েন, যা উপস্থিত সকলকে এই বিষয়ে যিহোবার ইচ্ছা সম্বন্ধে বুঝতে সাহায্য করেছিল।—প্রেরিত ১৫:৪-১৭.

১১. ত্বক্‌চ্ছেদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে কোন বিষয়টা জড়িত ছিল না এবং কী দেখায় যে, এই সিদ্ধান্তের ওপর যিহোবার আশীর্বাদ ছিল?

১১ সবার মনোযোগ তখন পরিচালক গোষ্ঠীর ওপর ছিল। তাদের যিহুদি পটভূমি কি ত্বক্‌চ্ছেদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তাদের পরিচালিত করেছিল? না। এই বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা শাস্ত্র এবং ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার পরিচালনা মেনে চলার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিল। সম্পর্কযুক্ত সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ শোনার পর, পরিচালক গোষ্ঠী সর্বসম্মতভাবে একমত হয়েছিল যে, পরজাতীয় খ্রিস্টানদের ত্বক্‌চ্ছেদ করার এবং মোশির ব্যবস্থার অধীন হওয়ার প্রয়োজন নেই। এই কথাগুলো যখন ভাইদের কানে পৌঁছেছিল, তখন তারা আনন্দ করেছিল এবং মণ্ডলী “দিন দিন সংখ্যায় বৃদ্ধি পাইল।” যে-খ্রিস্টানরা স্পষ্ট ঈশতান্ত্রিক নির্দেশনার প্রতি বশীভূত হয়েছিল, তাদের দৃঢ় শাস্ত্রীয় উত্তর দিয়ে আশীর্বাদ করা হয়েছিল। (প্রেরিত ১৫:১৯-২৩, ২৮, ২৯; ১৬:১-৫) কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া তখনও বাকি ছিল।

যিহুদি খ্রিস্টানদের সম্বন্ধে কী বলা যায়?

১২. কোন বিষয়টা অমীমাংসিত রয়ে গিয়েছিল?

১২ পরিচালক গোষ্ঠী স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, পরজাতীয় খ্রিস্টানদের ত্বক্‌চ্ছেদ করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু যিহুদি খ্রিস্টানদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? পরিচালক গোষ্ঠীর সিদ্ধান্ত থেকে সেই প্রশ্নের বিষয়ে নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি।

১৩. কেন এই বিষয়টা দাবি করা ভুল যে, পরিত্রাণের জন্য মোশির ব্যবস্থা পালন করা প্রয়োজনীয় ছিল?

১৩ কিছু যিহুদি খ্রিস্টান, যারা “ব্যবস্থার পক্ষে উদ্‌যোগী” ছিল, তারা তাদের ছেলেমেয়েদের তখনও ত্বক্‌চ্ছেদ করাত এবং ব্যবস্থার কিছু বিষয় পালন করত। (প্রেরিত ২১:২০) অন্যেরা আরও এগিয়ে গিয়েছিল, এমনকি জোর দিয়ে বলেছিল যে, পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য যিহুদি খ্রিস্টানদের ব্যবস্থা পালন করার প্রয়োজন রয়েছে। এভাবে তারা গুরুতর ভুল করছিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন খ্রিস্টান পাপের ক্ষমার জন্য কীভাবে পশু বলি দিতে পারত? খ্রিস্টের বলিদান এইধরনের উৎসর্গ করাকে বাতিল করে দিয়েছিল। ব্যবস্থার এই চাহিদা সম্বন্ধেই বা কী বলা যায়, যেখানে যিহুদিদের পরজাতীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে? উদ্যোগী খ্রিস্টান প্রচারকদের জন্য সেই বিধিনিষেধগুলো মেনে চলা এবং একই সঙ্গে যিশু যা কিছু শিখিয়েছিলেন সেগুলো সম্বন্ধে পরজাতীয়দের শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব পরিপূর্ণ করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ত। (মথি ২৮:১৯, ২০; প্রেরিত ১:৮; ১০:২৮) * পরিচালক গোষ্ঠীর সভায় এই বিষয়টা স্পষ্ট করা হয়েছিল কি না, সেই বিষয়ে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ নেই। তারপরও, মণ্ডলীকে সাহায্য করা হয়েছিল।

১৪. পৌলের অনুপ্রাণিত চিঠিগুলো ব্যবস্থা সম্বন্ধে কোন নির্দেশনা জোগায়?

১৪ নির্দেশনা এসেছিল, তবে পরিচালক গোষ্ঠীর কাছ থেকে আসা চিঠির মাধ্যমে নয় কিন্তু প্রেরিতদের দ্বারা লিখিত অন্যান্য অনুপ্রাণিত চিঠির মাধ্যমে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রেরিত পৌল রোমে বসবাসরত যিহুদি এবং পরজাতীয়দের কাছে এক জোরালো বার্তা পাঠিয়েছিলেন। তাদের কাছে লেখা চিঠিতে তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, একজন প্রকৃত যিহুদি ‘আন্তরিক এবং তাহার হৃদয়ের ত্বক্‌চ্ছেদ আত্মায়।’ (রোমীয় ২:২৮, ২৯) একই চিঠিতে পৌল একটা দৃষ্টান্তের ব্যবহার করেছিলেন এটা প্রমাণ করার জন্য যে, খ্রিস্টানরা আর ব্যবস্থার অধীনে নয়। তিনি যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে, একজন মহিলা একইসঙ্গে দুজন পুরুষকে বিয়ে করতে পারেন না। কিন্তু, তার স্বামী যদি মারা যান, তা হলে তিনি পুনরায় বিয়ে করার জন্য স্বাধীন। এরপর পৌল দৃষ্টান্তের প্রয়োগ করেছিলেন, দেখিয়েছিলেন যে অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা একইসঙ্গে মোশির ব্যবস্থার অধীন এবং খ্রিস্টের হতে পারে না। তাদের “ব্যবস্থার সম্বন্ধে . . . মৃত্যু” হয়েছিল, যাতে তারা খ্রিস্টের সঙ্গে মিলিত হতে পারে।—রোমীয় ৭:১-৫.

ধীরে ধীরে বিষয়বস্তু বোঝা

১৫, ১৬. কিছু যিহুদি খ্রিস্টান কেন ব্যবস্থা সম্বন্ধে আসল বিষয়টি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল এবং এটা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে সতর্ক থাকার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে কী দেখায়?

১৫ ব্যবস্থা সম্বন্ধে পৌলের যুক্তি অকাট্য ছিল। তা হলে, কীভাবে কিছু যিহুদি খ্রিস্টান বিষয়বস্তু বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল? একটা বিষয় হল যে, তাদের আধ্যাত্মিক বিচক্ষণতার অভাব ছিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তারা কঠিন আধ্যাত্মিক খাবার গ্রহণ করাকে অবহেলা করেছিল। (ইব্রীয় ৫:১১-১৪) এ ছাড়া, তাদের খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে আসা অনিয়মিত হয়ে পড়েছিল। (ইব্রীয় ১০:২৩-২৫) আরেকটা যেকারণে কেউ কেউ হয়তো বিষয়বস্তু বুঝতে পারেনি সেটা হল, ব্যবস্থার প্রকৃতি। এটি সেই সমস্ত বিষয়বস্তুর ওপর কেন্দ্রীভূত ছিল যা দেখা যেত, অনুভব করা যেত এবং স্পর্শ করা যেত, যেমন মন্দির এবং যাজকত্ব। আধ্যাত্মিকতার অভাব রয়েছে এমন কিছু ব্যক্তির কাছে অদৃশ্য বাস্তব বিষয়গুলোর ওপর কেন্দ্রীভূত খ্রিস্টধর্মের গভীর নীতিগুলো মেনে নেওয়ার চেয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা আরও সহজ ছিল।—২ করিন্থীয় ৪:১৮.

১৬ নিজেদের খ্রিস্টান বলে দাবি করত, এমন কিছু ব্যক্তিরা আরেকটা যেকারণে ব্যবস্থা মেনে চলতে আগ্রহী ছিল, সেটা পৌল গালাতীয়দের প্রতি লেখা তার চিঠিতে তুলে ধরেছিলেন। তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, এইধরনের ব্যক্তিরা চেয়েছিল যেন অন্যেরা তাদের সম্মানীয় হিসেবে, একটা প্রধান ধর্মের সদস্য হিসেবে দেখে। সমাজে লক্ষণীয় ব্যক্তি হওয়ার পরিবর্তে বরং তারা এর অংশ হওয়ার জন্য যেকোনো আপোশ করতে রাজি ছিল। তারা ঈশ্বরের অনুমোদন পাওয়ার চেয়ে মানুষের অনুমোদন পাওয়ার জন্য আরও বেশি আগ্রহী ছিল।—গালাতীয় ৬:১২.

১৭. ব্যবস্থা পালনের বিষয়ে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি কখন পুরোপুরি স্পষ্ট হয়েছিল?

১৭ বিচক্ষণ খ্রিস্টান, যারা মন দিয়ে পৌল এবং অন্যদের ঐশিক অনুপ্রাণিত লেখাগুলো অধ্যয়ন করেছিল, তারা ব্যবস্থা সম্বন্ধে সঠিক উপসংহারে এসেছিল। কিন্তু সা.কা. ৭০ সালের আগে পর্যন্ত সমস্ত যিহুদি খ্রিস্টানদের কাছে মোশির ব্যবস্থার প্রতি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি স্পষ্ট হয়নি। এটা তখনই স্পষ্ট হয়েছিল, যখন ঈশ্বর যিরূশালেম এবং এর মন্দির ও যাজকদের দায়িত্ব সম্বন্ধে বিবরণগুলো ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। এটা যেকারও জন্যই ব্যবস্থার সমস্ত দিক পালন করা অসম্ভব করে তুলেছিল।

আজকে শিক্ষা কাজে লাগানো

১৮, ১৯. (ক) আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে ভাল থাকতে হলে আমাদের কোন মনোভাবগুলো গড়ে তোলা উচিত এবং কোন মনোভাবগুলো এড়িয়ে চলা উচিত? (খ) দায়িত্ববান ভাইদের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা মেনে চলার বিষয়ে পৌলের উদাহরণ আমাদের কী শেখায়? (২৪ পৃষ্ঠার বাক্স দেখুন।)

১৮ বহু পূর্বের এই ঘটনাগুলো বিবেচনা করার পর, আপনি হয়তো ভাবছেন: ‘আমি যদি সেই সময়ে বাস করতাম, তা হলে ঈশ্বরের ইচ্ছা যখন ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছিল, তখন সেটার প্রতি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাতাম? আমি কি দৃঢ়ভাবে রীতিগত দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখতাম? অথবা আমি কি সঠিক বোধগম্যতা স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধরতাম? আর যখন তা স্পষ্ট হতো, আমি কি তা পূর্ণহৃদয়ে সমর্থন করতাম?’

১৯ অবশ্য, আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি না যে, সেই সময়ে বেঁচে থাকলে আমরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাতাম। কিন্তু আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘আজকে যে-বাইবেলের বোধগম্যতার স্পষ্টতা তুলে ধরা হয়, সেগুলোর প্রতি আমি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাই? (মথি ২৪:৪৫) যখন শাস্ত্রীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়, তখন আমি কি সেগুলো শুধু আক্ষরিকভাবে মেনে না চলে এর মূল বিষয়বস্তু কাজে লাগানোর চেষ্টা করি? (১ করিন্থীয় ১৪:২০) দীর্ঘদিন ধরে আছে, এমন কোনো প্রশ্নের উত্তর যদি দেরিতে আসছে বলে মনে হয়, তা হলে আমি কি ধৈর্য ধরে যিহোবার জন্য অপেক্ষা করি?’ আজকে যে-আধ্যাত্মিক খাবারগুলো পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলোর উত্তম ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ, “পাছে কোন ক্রমে ভাসিয়া চলিয়া যাই।” (ইব্রীয় ২:১) যিহোবা যখন তাঁর বাক্য, তাঁর পবিত্র আত্মা এবং তাঁর পার্থিব সংগঠনের মাধ্যমে নির্দেশনা দেন, তখন আসুন আমরা তা মন দিয়ে শুনি। আমরা যদি তা করি, তা হলে যিহোবা আমাদের অনন্তজীবন দিয়ে আশীর্বাদ করবেন যা আনন্দদায়ক এবং পরিতৃপ্তিজনক।

[পাদটীকা]

^ পিতর যখন সিরিয়ার আন্তিয়খিয়া পরিদর্শন করেছিলেন, তখন তিনি পরজাতীয় বিশ্বাসীদের সঙ্গে উষ্ণ মেলামেশা উপভোগ করেছিলেন। কিন্তু যিহুদি খ্রিস্টানরা যখন যিরূশালেম থেকে এসেছিল, তখন পিতর “ছিন্নত্বক্‌দের ভয়ে পিছাইয়া পড়িতে ও আপনাকে পৃথক্‌ রাখিতে লাগিলেন।” আমরা কল্পনা করতে পারি যে, সেই ধর্মান্তরিত পরজাতীয়রা কত আঘাতই না পেয়েছিল, যখন একজন সম্মানীয় প্রেরিত তাদের সঙ্গে খাবার খেতে অস্বীকার করেছিলেন।—গালাতীয় ২:১১-১৩.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• “খ্রীষ্টের কাছে আনিবার জন্য” কোন অর্থে মোশির ব্যবস্থা একজন ‘পরিচালক দাসের’ মতো ছিল?

• সত্যের বোধগম্যতার ক্ষেত্রে যে-রদবদল হয়েছিল, সেই বিষয়ে পিতর এবং “ছিন্নত্বক্‌ লোকেরা” যে-ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল, সেগুলোকে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

• যিহোবা আজকে যে-উপায়ে সত্য প্রকাশ করছেন, সেই সম্বন্ধে আপনি কী শিখেছেন?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২৪ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]

পৌল নম্রভাবে পরীক্ষার মোকাবিলা করেন

এক সফল মিশনারি যাত্রার পর, পৌল সা.কা. ৫৬ সালে যিরূশালেমে এসে উপস্থিত হন। সেখানে তার জন্য এক পরীক্ষা অপেক্ষা করছিল। ব্যবস্থা বাতিল হয়ে গেছে বলে তিনি যে-শিক্ষা দিয়েছিলেন সেই সংবাদ মণ্ডলীতে পৌঁছে গিয়েছিল। প্রাচীনবর্গ এই ভয় পেয়েছিল যে, নতুন ধর্মান্তরিত যিহুদি খ্রিস্টানরা ব্যবস্থার বিষয়ে পৌলের খোলাখুলি বক্তব্য শুনে না আবার বিঘ্ন পায় আর এই উপসংহারে আসে যে, খ্রিস্টানদের যিহোবার ব্যবস্থার প্রতি সম্মানের অভাব রয়েছে। মণ্ডলীতে চার জন যিহুদি খ্রিস্টান ছিল, যারা সম্ভবত নাসরীয় হওয়ার ব্রত করেছিল। ব্রত করার যে-চাহিদাগুলো রয়েছে, তা পূরণ করার উদ্দেশ্যে তাদের মন্দিরে যেতে হয়েছিল।

প্রাচীনবর্গ পৌলকে সেই চার জনের সঙ্গে মন্দিরে যেতে বলেছিলেন এবং তাদের ব্যয় বহন করতে বলেছিলেন। পৌল কমপক্ষে দুটো অনুপ্রাণিত চিঠি লিখেছিলেন যেখানে তিনি যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে, পরিত্রাণের জন্য ব্যবস্থা পালন আবশ্যক নয়। কিন্তু, তিনি অন্যদের নীতিবোধের প্রতি বিবেচনা দেখিয়েছিলেন। পূর্বে তিনি লিখেছিলেন: “আমি ব্যবস্থার অধীন লোকদিগকে লাভ করিবার জন্য ব্যবস্থাধীনদিগের কাছে ব্যবস্থাধীনের ন্যায় হইলাম।” (১ করিন্থীয় ৯:২০-২৩) যেখানে গুরুত্বপূর্ণ শাস্ত্রীয় নীতিগুলো জড়িত, সেগুলোর ক্ষেত্রে কখনও আপোশ না করে, পৌল বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি প্রাচীনবর্গের পরামর্শ মেনে চলতে পারেন। (প্রেরিত ২১:১৫-২৬) তা করা তার জন্য ভুল ছিল না। ব্রত ব্যবস্থা অশাস্ত্রীয় ছিল না এবং মন্দির ব্যবহৃত হতো শুদ্ধ উপাসনার জন্য, প্রতিমাপূজার জন্য নয়। তাই, যাতে বিঘ্ন না জন্মে সেই উদ্দেশ্যে পৌল তাদের অনুরোধ অনুসারে কাজ করেছিলেন। (১ করিন্থীয় ৮:১৩) কোনো সন্দেহ নেই যে, এর জন্য পৌলকে যথেষ্ট নম্রতা দেখাতে হয়েছিল আর এই বিষয়টাই তার প্রতি আমাদের উপলব্ধিবোধকে আরও গভীর করে।

[২২, ২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

কিছু বছরের জন্য খ্রিস্টানদের মধ্যে মোশির ব্যবস্থা সম্বন্ধে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়ে গিয়েছিল