সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“সাহস কর, আমিই জগৎকে জয় করিয়াছি”

“সাহস কর, আমিই জগৎকে জয় করিয়াছি”

“সাহস কর, আমিই জগৎকে জয় করিয়াছি”

যিশুর মৃত্যু দিন—যিহুদি নিশান মাসের ১৪তম দিন—শুরু হয়েছিল সা.কা. ৩৩ সালের ৩১শে মার্চ বৃহস্পতিবার সূর্যাস্তের পর। সেই সন্ধ্যায় যিশু ও তাঁর প্রেরিতরা যিরূশালেমে একটা ঘরের ওপরের কুঠরীতে নিস্তারপর্ব পালন করার জন্য একত্রিত হয়েছিল। ‘এই জগৎ হইতে পিতার কাছে প্রস্থান করিবার’ জন্য যিশু যখন প্রস্তুত হচ্ছিলেন, তখন তিনি দেখিয়েছিলেন যে, শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর প্রেরিতদের ভালবেসেছিলেন। (যোহন ১৩:১) কীভাবে? তাদের চমৎকার শিক্ষা দিয়ে আর এর মাধ্যমে আসন্ন ঘটনাগুলোর জন্য তাদের প্রস্তুত করে।

রাত যতই বাড়ছিল, যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন: “সাহস কর, আমিই জগৎকে জয় করিয়াছি।” (যোহন ১৬:৩৩) এই নির্ভীক উক্তির দ্বারা তিনি কী বোঝাতে চেয়েছিলেন? এক অর্থে এটা: ‘জগতের মন্দতা আমাকে তিক্তও করেনি বা প্রতিশোধ নিতেও পরিচালিত করেনি। আমি জগতের ছাঁচে আমাকে গড়ে উঠতে দিইনি। তোমাদের ক্ষেত্রেও এটা সত্য বলে প্রমাণিত হতে পারে।’ যিশু তাঁর পার্থিব জীবনের শেষ সময়ে তাঁর বিশ্বস্ত প্রেরিতদের যা শিখিয়েছিলেন, তা তাদের একইভাবে জগৎকে জয় করতে সাহায্য করবে।

আজকে জগৎ যে মন্দতায় পরিপূর্ণ, তা কে অস্বীকার করবে? অবিচার ও অর্থহীন হিংস্রতার প্রতি আমরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাই? এগুলো কি আমাদের তিক্ত করে অথবা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য প্রলোভিত করে? আমাদের চারিদিকে ঘটে চলা নৈতিক অধঃপতনের দ্বারা আমরা কীভাবে প্রভাবিত হই? এ ছাড়াও রয়েছে আমাদের মানব অসিদ্ধতা ও পাপপূর্ণ প্রবণতাগুলো আর তাই দুটো বিষয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়: বাইরের দুষ্ট জগতের বিরুদ্ধে ও আমাদের মধ্যে থাকা খারাপ প্রবণতাগুলোর বিরুদ্ধে। ঈশ্বরের সাহায্য ছাড়া জয়ী হব বলে কি আমরা সত্যিই আশা করতে পারি? কীভাবে আমরা তাঁর সাহায্য পেতে পারি? কোন গুণগুলো আমাদের গড়ে তোলা উচিত, যেগুলো আমাদের মাংসিক প্রবণতাগুলো প্রতিরোধ করতে সাহায্য করবে? উত্তর পাওয়ার জন্য আসুন আমরা যিশু পৃথিবীতে তাঁর জীবনের শেষ দিনটিতে তাঁর প্রিয় শিষ্যদের যে-বিষয়গুলো শিক্ষা দিয়েছিলেন, তা বিবেচনা করি।

নম্রতার দ্বারা অহংকারকে জয় করুন

উদাহরণ হিসেবে, অহংকার অথবা গর্বের বিষয়ে বিবেচনা করুন। এই বিষয়ে বাইবেল বলে: “বিনাশের পূর্ব্বে অহঙ্কার, পতনের পূর্ব্বে মনের গর্ব্ব।” (হিতোপদেশ ১৬:১৮) এ ছাড়া, শাস্ত্র আমাদের পরামর্শ দেয়: “যদি কেহ মনে করে, আমি কিছু, কিন্তু বাস্তবিক সে কিছুই নয়, তবে সে আপনি আপনাকে ভুলায়।” (গালাতীয় ৬:৩) হ্যাঁ, অহংকার হল ধ্বংসাত্মক ও প্রতারণাপূর্ণ। ‘অহঙ্কার ও দাম্ভিকতাকে’ ঘৃণা করে আমরা বিজ্ঞ হই।—হিতোপদেশ ৮:১৩.

যিশুর প্রেরিতদের মধ্যে কি দাম্ভিকতা ও অহংকারের সমস্যা ছিল? অন্তত একবার, কে শ্রেষ্ঠ এই বিষয়ে তাদের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়েছিল। (মার্ক ৯:৩৩-৩৭) আরেকবার যাকোব ও যোহন রাজ্যে প্রধান প্রধান স্থান পাওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিল। (মার্ক ১০:৩৫-৪৫) যিশু তাঁর শিষ্যদের মধ্যে থেকে এই প্রবণতা দূর করার জন্য তাদের সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। তাই নিস্তারপর্বের ভোজ চলাকালীন তিনি উঠে দাঁড়ান, একটা গামছা নিয়ে কটি বন্ধন করেন এবং তাঁর শিষ্যদের পা ধুইয়ে দেওয়ার জন্য এগিয়ে যান। যে-শিক্ষা তিনি তাদের শেখাতে চেয়েছিলেন, তা তিনি পরিষ্কার করে তাদের জানিয়েছিলেন। যিশু বলেছিলেন, “আমি প্রভু ও গুরু হইয়া যখন তোমাদের পা ধুইয়া দিলাম, তখন তোমাদেরও পরস্পরের পা ধোয়ান উচিত?” (যোহন ১৩:১৪) অহংকারের পরিবর্তে এর বিপরীত গুণ—নম্রতা—দেখানো উচিত।

কিন্তু, অহংকারকে জয় করা এত সহজ নয়। পরে সেই সন্ধ্যায়, ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদা, যে কিছু সময় পরেই যিশুর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করতে চলেছিল তাকে যিশু বের করে দেওয়ার পর, ১১ জন প্রেরিতের মধ্যে প্রচণ্ড তর্কবিতর্ক হয়েছিল। তাদের চিন্তার বিষয় কী ছিল? তাদের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ! তাদের ভর্ৎসনা না করে যিশু আরেকবার ধৈর্যের সঙ্গে অন্যদের সেবা করার গুরুত্ব সম্বন্ধে জোর দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “জাতিগণের রাজারাই তাহাদের উপরে প্রভুত্ব করে, এবং তাহাদের শাসনকর্ত্তারাই ‘হিতকারী’ বলিয়া আখ্যাত হয়। কিন্তু তোমরা সেইরূপ হইও না; বরং তোমাদের মধ্যে যে শ্রেষ্ঠ, সে কনিষ্ঠের ন্যায় হউক; এবং যে প্রধান, সে পরিচারকের ন্যায় হউক।” তাঁর নিজের উদাহরণ সম্বন্ধে তাদের মনে করিয়ে দেওয়ার পর তিনি আরও বলেন: “আমি তোমাদের মধ্যে পরিচারকের ন্যায় রহিয়াছি।”—লূক ২২:২৪-২৭.

প্রেরিতরা কি এই বিষয়টা বুঝতে পেরেছিল? স্পষ্টতই, তারা বুঝতে পেরেছিল। কয়েক বছর পর প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “তোমরা সকলে সমমনা, পরদুঃখে দুঃখিত, ভ্রাতৃপ্রেমিক, স্নেহবান্‌ ও নম্রমনা হও।” (১ পিতর ৩:৮) নম্রতার দ্বারা অহংকারকে জয় করা আমাদের জন্যও কতই না জরুরি! খ্যাতি, ক্ষমতা অথবা মর্যাদার পিছনে ছোটার ফাঁদে না পড়লে আমরা বিজ্ঞ হব। বাইবেল বলে, “ঈশ্বর অহঙ্কারীদের প্রতিরোধ করেন, কিন্তু নম্রদিগকে অনুগ্রহ প্রদান করেন।” (যাকোব ৪:৬) একইভাবে এক প্রাচীন বিজ্ঞ প্রবাদ বলে: “নম্রতার ও সদাপ্রভুর ভয়ের পুরস্কার, ধন, সম্মান ও জীবন।”—হিতোপদেশ ২২:৪.

ঘৃণাকে জয় করুন—কীভাবে?

জগতের আরেকটা প্রচলিত বৈশিষ্ট্যের কথা বিবেচনা করুন—ঘৃণা। ভয়, অজ্ঞানতা, কুসংস্কার, বিরোধিতা, অবিচার, জাতীয়তাবাদ, উপজাতিগত অথবা বর্ণবৈষম্য যেকারণেই হোক না কেন, আমাদের চারপাশেই ঘৃণা রয়েছে। (২ তীমথিয় ৩:১-৪) ঘৃণা যিশুর দিনেও প্রচণ্ড মাত্রায় ছিল। যিহুদি সমাজে করগ্রাহীদের নিচু শ্রেণীর মনে করে ঘৃণা করা হতো। যিহুদি ও শমরীয়দের মধ্যে কোনো রকমের সম্পর্ক ছিল না। (যোহন ৪:৯) আর পরজাতি অথবা ন-যিহুদিরাও যিহুদিদের দ্বারা অবজ্ঞাত হতো। কিন্তু যথা সময়ে যিশু যে-ধরনের উপাসনা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তা সমস্ত জাতির লোকেদের গ্রহণ করেছিল। (প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫; গালাতীয় ৩:২৮) তাই, তিনি প্রেমের সঙ্গে তাঁর শিষ্যদের নতুন কিছু দিয়েছিলেন।

যিশু ঘোষণা করেছিলেন: “এক নূতন আজ্ঞা আমি তোমাদিগকে দিতেছি, তোমরা পরস্পর প্রেম কর; আমি যেমন তোমাদিগকে প্রেম করিয়াছি, তোমরাও তেমনি পরস্পর প্রেম কর।” তাদের এই প্রেম প্রদর্শন করতে শিখতে হয়েছিল কারণ তিনি আরও বলেছিলেন: “তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৪, ৩৫) এই আজ্ঞা নতুন ছিল এই অর্থে যে এটা “আপন প্রতিবাসীকে আপনার মত” প্রেম করার চাইতেও অতিরিক্ত কিছু ছিল। (লেবীয় পুস্তক ১৯:১৮) কীভাবে? যিশু বিষয়টা পরিষ্কার করেছিলেন, এই বলে: “আমার আজ্ঞা এই, তোমরা পরস্পর প্রেম কর, যেমন আমি তোমাদিগকে প্রেম করিয়াছি। কেহ যে আপন বন্ধুদের নিমিত্ত নিজ প্রাণ সমর্পণ করে, ইহা অপেক্ষা অধিক প্রেম কাহারও নাই।” (যোহন ১৫:১২, ১৩) তাদের একে অপরের ও অন্যদের জন্য নিজেদের জীবন বলি দিতে ইচ্ছুক থাকতে হতো।

অসিদ্ধ মানুষেরা কীভাবে তাদের জীবন থেকে বিদ্বেষপূর্ণ ঘৃণা নির্মূল করতে পারে? আত্মত্যাগমূলক প্রেমের দ্বারা। সমস্ত জাতি, সংস্কৃতি, ধর্ম ও রাজনৈতিক পটভূমি থেকে আসা লক্ষ লক্ষ আন্তরিক ব্যক্তিরা ঠিক তাই করছে। তারা এখন এক একতাবদ্ধ, ঘৃণাহীন সমাজে—যিহোবার সাক্ষিদের বিশ্বব্যাপী ভ্রাতৃসমাজে—একত্রিত হচ্ছে। তারা প্রেরিত যোহনের অনুপ্রাণিত এই বাক্যগুলো মেনে চলে: “যে কেহ আপন ভ্রাতাকে ঘৃণা করে, সে নরঘাতক; এবং তোমরা জান, অনন্ত জীবন কোন নরঘাতকের অন্তরে অবস্থিতি করে না।” (১ যোহন ৩:১৫) সত্য খ্রিস্টানরা যুদ্ধে অস্ত্র গ্রহণ করাকে কেবল প্রত্যাখ্যানই করে না কিন্তু সেইসঙ্গে পরস্পরের প্রতি প্রেম দেখানোর জন্যও প্রাণপণ চেষ্টা করে।

কিন্তু, যারা আমাদের সহ বিশ্বাসী নয় এবং যারা হয়তো আমাদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করে তাদের প্রতি আমাদের মনোভাব কীরূপ হওয়া উচিত? দণ্ডে ঝুলে থাকা অবস্থায় যিশু তাঁর ঘাতকদের জন্য এই বলে প্রার্থনা করেছিলেন: “পিতঃ, ইহাদিগকে ক্ষমা কর, কেননা ইহারা কি করিতেছে, তাহা জানে না।” (লূক ২৩:৩৪) ঘৃণায় পরিপূর্ণ ব্যক্তিরা যখন শিষ্য স্তিফানকে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করেছিল, তখন তার শেষ কথাগুলো ছিল: “প্রভু [“যিহোবা,” NW] ইহাদের বিপক্ষে এই পাপ ধরিও না।” (প্রেরিত ৭:৬০) যিশু ও স্তিফান এমনকি তাদের জন্যও উত্তমটা চেয়েছিল, যারা তাদের ঘৃণা করেছিল। তাদের হৃদয়ে কোনো ধরনের তিক্ততা ছিল না। বাইবেল আমাদের পরামর্শ দেয় ‘আইস, আমরা সকলের প্রতি, সৎকর্ম্ম করি।’—গালাতীয় ৬:১০.

‘চিরকালের এক সহায়’

এগারো জন বিশ্বস্ত প্রেরিতের সঙ্গে সভা চলাকালীন যিশু তাদের জানিয়েছিলেন যে, শীঘ্রই মাংসিকভাবে তিনি তাদের সঙ্গে আর থাকবেন না। (যোহন ১৪:২৮; ১৬:২৮) কিন্তু তিনি তাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন: “আমি পিতার নিকটে নিবেদন করিব, এবং তিনি আর এক সহায় তোমাদিগকে দিবেন, যেন তিনি চিরকাল তোমাদের সঙ্গে থাকেন।” (যোহন ১৪:১৬) সেই প্রতিজ্ঞাত সহায় হল ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা। এটা তাদের শাস্ত্রের গভীর বিষয়গুলো শিক্ষা দেবে এবং যিশু তাঁর পার্থিব পরিচর্যার সময় তাদের যা কিছু শিখিয়েছিলেন সেগুলো তাদের মনে করিয়ে দেবে।—যোহন ১৪:২৬.

আজকে পবিত্র আত্মা আমাদের কীভাবে সাহায্য করতে পারে? বাইবেল হল ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য। যে-ব্যক্তিদের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো বলার জন্য এবং বাইবেল লেখার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল তারা ‘পবিত্র আত্মা দ্বারা চালিত হইয়াছিল।’ (২ পিতর ১:২০, ২১; ২ তীমথিয় ৩:১৬) শাস্ত্র পড়া ও আমরা যা শিখছি তা কাজে লাগানো আমাদের জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বোধগম্যতা, অন্তর্দৃষ্টি, বিচক্ষণতা ও চিন্তা করার ক্ষমতা দান করে। তা হলে, এই মন্দ জগতের চাপগুলোর মুখোমুখি হওয়ার জন্য আমরা কি আরও ভালভাবে তৈরি নই?

আরেকটা উপায়ে পবিত্র আত্মা হল সহায়। ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা হল শক্তিশালী উপকারজনক শক্তি, যা যাদের ওপর এর প্রভাব রয়েছে তাদের ঈশ্বরীয় গুণগুলো প্রদর্শন করতে সাহায্য করে। বাইবেল বলে, “আত্মার ফল প্রেম, আনন্দ, শান্তি, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য্য, মঙ্গলভাব, বিশ্বস্ততা, মৃদুতা, ইন্দ্রিয়দমন।” অনৈতিকতা, শত্রুতা, ঈর্ষা, রাগ ও এইধরনের অন্যান্য বিষয়গুলোর প্রতি আমাদের মাংসিক প্রবণতাগুলোকে জয় করার জন্য আমাদের কি ঠিক এই গুণগুলোরই দরকার নয়?—গালাতীয় ৫:১৯-২৩.

ঈশ্বরের আত্মার ওপর নির্ভর করে আমরাও যেকোনো ধরনের সমস্যা অথবা দুর্দশা মোকাবিলা করার জন্য “পরাক্রমের উৎকর্ষ” পেতে পারি। (২ করিন্থীয় ৪:৭) যদিও পবিত্র আত্মা হয়তো পরীক্ষা অথবা প্রলোভনগুলোকে সরিয়ে দেবে না কিন্তু এটা এগুলোকে সহ্য করতে নিশ্চিতভাবে আমাদের সাহায্য করবে। (১ করিন্থীয় ১০:১৩) প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন, “যিনি আমাকে শক্তি দেন, তাঁহাতে আমি সকলই করিতে পারি।” (ফিলিপীয় ৪:১৩) ঈশ্বর তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে এইধরনের শক্তি প্রদান করেন। এই পবিত্র আত্মার জন্য আমরা কতই না কৃতজ্ঞ হতে পারি! এটা তাদের জন্য প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে, যারা ‘যিশুকে প্রেম করে এবং তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করে।’—যোহন ১৪:১৫.

“আমার প্রেমে অবস্থিতি কর”

মানুষ হিসেবে তাঁর শেষ রাতে যিশু তাঁর প্রেরিতদের বলেছিলেন: “যে ব্যক্তি আমার আজ্ঞা সকল প্রাপ্ত হইয়া সে সকল পালন করে, সেই আমাকে প্রেম করে; আর যে আমাকে প্রেম করে, আমার পিতা তাহাকে প্রেম করিবেন।” (যোহন ১৪:২১) তিনি তাদের বলেছিলেন, “আমার প্রেমে অবস্থিতি কর।” (যোহন ১৫:৯) কীভাবে পিতা ও পুত্রের প্রেমে অবস্থিতি করা আমাদের মধ্যে থাকা পাপপূর্ণ প্রবণতাগুলো সহ বাইরের দুষ্ট জগতের সঙ্গে যুদ্ধ করতে আমাদের সাহায্য করে?

আমাদের যদি মন্দ প্রবণতাগুলো রোধ করার মতো জোরালো প্রেরণারই ঘাটতি থাকে, তা হলে কি আমরা সত্যিই তা রোধ করতে পারি? তাই যিহোবা ঈশ্বর ও তাঁর পুত্রের সঙ্গে এক ভাল সম্পর্ক রাখার আকাঙ্ক্ষার বড় চালিকা শক্তি আর কীই বা হতে পারে? এরন্যাস্টো * নামের এক যুবককে অনৈতিক জীবনধারার বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই করতে হয়েছিল, যে-জীবনযাপন সে তার কিশোর বয়সের শুরু থেকে করে আসছিল, সে ব্যাখ্যা করে: “আমি ঈশ্বরকে খুশি করতে চেয়েছিলাম আর আমি বাইবেল থেকে শিখেছিলাম যে আমি যেধরনের জীবনযাপন করছিলাম তা, তিনি অনুমোদন করেন না। তাই, আমি এক ভিন্ন ধরনের ব্যক্তি হওয়ার, ঈশ্বরের নিয়মগুলো মেনে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। প্রতিদিন আমাকে নেতিবাচক, নোংরা চিন্তাগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছিল, যেগুলো তখনও আমার মনে আসত। কিন্তু আমি এই যুদ্ধে জয়ী হওয়ার সংকল্প নিয়েছিলাম এবং ঈশ্বরের সাহায্য পাওয়ার জন্য অবিরত প্রার্থনা করেছিলাম। দুবছর পর বিপদটা কেটে যায় যদিও এখনও আমি নিজেকে অত্যন্ত কড়াকড়িভাবে সংযত রাখি।”

বাইরের জগতের বিরুদ্ধে লড়াই করার বিষয়ে যিশুর শেষ প্রার্থনাটা বিবেচনা করুন, যা তিনি যিরূশালেমে সেই ওপরের কুঠরীটা ছেড়ে যাওয়ার আগে করেছিলেন। তাঁর শিষ্যদের হয়ে তিনি তাঁর পিতার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন ও অনুরোধ জানিয়েছিলেন: “আমি নিবেদন করিতেছি না যে, তুমি তাহাদিগকে জগৎ হইতে লইয়া যাও, কিন্তু তাহাদিগকে সেই পাপাত্মা হইতে রক্ষা কর। তাহারা জগতের নয়, যেমন আমিও জগতের নই।” (যোহন ১৭:১৫, ১৬) কতই না আশ্বাসজনক! যিহোবা তাদের রক্ষা করেন, যাদের তিনি ভালবাসেন এবং তাদের শক্তি জোগান যখন তারা জগৎ থেকে নিজেদের পৃথক রাখে।

“বিশ্বাস কর”

সত্যিই, যিশুর আজ্ঞাগুলো মেনে চলা মন্দ জগৎ ও আমাদের পাপপূর্ণ প্রবণতাগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হতে আমাদের সাহায্য করতে পারে। যদিও এগুলোতে জয়ী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু এগুলো জগৎ কিংবা উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া পাপ, এর কোনোটাকেই মুছে ফেলতে পারবে না। তবে আমাদের হতাশ হওয়ার দরকার নেই।

বাইবেল বলে, “জগৎ ও তাহার অভিলাষ বহিয়া যাইতেছে; কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে, সে অনন্তকালস্থায়ী।” (১ যোহন ২:১৭) যিশু তাঁর জীবন দিয়েছেন, যাতে “যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে” পাপ ও মৃত্যু থেকে মুক্তি পায়। (যোহন ৩:১৬) ঈশ্বরের ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞানে আমরা যতই বৃদ্ধি পাই, আসুন আমরা যিশুর এই পরামর্শে মনোযোগ দিই: “ঈশ্বরে বিশ্বাস কর, আমাতেও বিশ্বাস কর।”—যোহন ১৪:১.

[পাদটীকা]

^ এখানে একটা বিকল্প নাম ব্যবহার করা হয়েছে।

[৬, ৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশু তাঁর প্রেরিতদের বলেছিলেন, “আমার প্রেমে অবস্থিতি কর”

[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]

পাপ ও এর প্রভাবগুলো থেকে মুক্তি শীঘ্রই বাস্তবায়িত হবে