সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“সকল মনুষ্যের কাছে সম্পূর্ণ মৃদুতা” দেখান

“সকল মনুষ্যের কাছে সম্পূর্ণ মৃদুতা” দেখান

“সকল মনুষ্যের কাছে সম্পূর্ণ মৃদুতা” দেখান

“তুমি তাহাদিগকে স্মরণ করাইয়া দেও, যেন তাহারা . . . ক্ষান্তশীল [“যুক্তিবাদী,” NW] হয়, সকল মনুষ্যের কাছে সম্পূর্ণ মৃদুতা দেখায়।”—তীত ৩:১, ২.

১. মৃদুতা দেখানো কেন সবসময় সহজ নয়?

 প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন, “যেমন আমিও খ্রিস্টের অনুকারী, তোমরা তেমনি আমার অনুকারী হও।” (১ করি. ১০:৩৪) আজকে, ঈশ্বরের সমস্ত দাসেরা এই পরামর্শে মন দেওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে। আসলে, তা খুব সহজ নয় কারণ আমরা আমাদের প্রথম মানব পিতামাতার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষা এবং স্বভাবচরিত্র পেয়েছি, যা খ্রিস্টের উদাহরণের অনুরূপ নয়। (রোমীয় ৩:২৩; ৭:২১-২৫) তবুও, মৃদুতা দেখানোর বিষয়ে আমরা সকলে সফল হতে পারি, যদি আমরা প্রচেষ্টা করি। কিন্তু, শুধু নিজেদের ইচ্ছাশক্তির ওপর নির্ভর করাই যথেষ্ট নয়। তা হলে, আর কীসের প্রয়োজন?

২. কীভাবে আমরা “সকল মনুষ্যের কাছে সম্পূর্ণ মৃদুতা” দেখাতে পারি?

ঈশ্বরীয় মৃদুতা হল পবিত্র আত্মার ফলের একটা অংশ। যত বেশি আমরা ঈশ্বরের সক্রিয় শক্তির নির্দেশনার প্রতি বাধ্য থাকি, তত বেশি এর ফল দেখা যাবে। তা হলে এবং একমাত্র তখনই আমরা সকলের প্রতি “সম্পূর্ণ মৃদুতা” দেখাতে সমর্থ হব। (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (তীত ৩:২) আসুন আমরা পরীক্ষা করে দেখি যে, কীভাবে আমরা যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি এবং যারা ‘বিশ্রাম [“সতেজতা,” NW] পাইবার’ জন্য আমাদের সংস্পর্শে আসে তাদের সাহায্য করতে পারি।—মথি ১১:২৯; গালাতীয় ৫:২২, ২৩.

পরিবারে

৩. কোন ধরনের পারিবারিক অবস্থা জগতের আত্মাকে প্রতিফলিত করে?

একটা যে-ক্ষেত্রে মৃদুতা অপরিহার্য, সেটা হল পরিবারের মধ্যে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমান করে দেখেছে যে, পারিবারিক দৌরাত্ম্য মহিলাদের স্বাস্থ্যের প্রতি এক বিরাট ঝুঁকি নিয়ে এসেছে, যতটা না যানবাহন দুর্ঘটনা এবং ম্যালেরিয়া একত্রে নিয়ে আসে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইংল্যান্ডের লন্ডনের সমস্ত দৌরাত্ম্যের যে-রিপোর্ট রয়েছে, সেগুলোর এক চতুর্থাংশই ঘরোয়া। পুলিশ প্রায়ই এমন লোকেদের সম্মুখীন হন, যারা তাদের অনুভূতি ‘কলহ, নিন্দার’ মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করে। আরও খারাপ বিষয় হল যে, কিছু দম্পতি তাদের সম্পর্ককে “কটুকাটব্য” দ্বারা প্রভাবিত হতে দিয়েছে। এই সমস্ত কিছুই ‘জগতের আত্মার’ দুঃখজনক প্রতিফলন আর খ্রিস্টান পরিবারগুলোতে এইধরনের বিষয়গুলোর কোনো স্থান নেই।—ইফিষীয় ৪:৩১; ১ করিন্থীয় ২:১২.

৪. পরিবারের ওপর মৃদুতার কোন প্রভাব পড়তে পারে?

জাগতিক প্রবণতাগুলোকে প্রতিহত করার জন্য আমাদের ঈশ্বরের আত্মার প্রয়োজন। “যেখানে প্রভুর [“যিহোবার,” NW] আত্মা, সেইখানে স্বাধীনতা।” (২ করিন্থীয় ৩:১৭) প্রেম, দয়া, আত্মসংযম এবং দীর্ঘ-সহিষ্ণুতা অসিদ্ধ স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে একতাকে শক্তিশালী করে। (ইফিষীয় ৫:৩৩) মৃদুভাব পরিবেশকে হালকা রাখে এবং ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়া এবং তর্কবিতর্ক, যা অনেক পরিবারকে ভেঙে দেয়, সেটার বিপরীতে আনন্দ নিয়ে আসে। একজন ব্যক্তি যা বলেন, তা গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু যেভাবে তিনি তা প্রকাশ করেন সেটা তার কথাগুলোর পিছনে যে-মনোভাব রয়েছে, তা তুলে ধরে। চিন্তাভাবনা এবং উদ্বিগ্নতা মৃদুভাবে প্রকাশ করলে তা চাপ কমিয়ে দেয়। জ্ঞানী রাজা শলোমন লিখেছিলেন: “কোমল [“মৃদু,” NW] উত্তর ক্রোধ নিবারণ করে, কিন্তু কটুবাক্য কোপ উত্তেজিত করে।”—হিতোপদেশ ১৫:১.

৫. মৃদুতা কীভাবে ধর্মের কারণে বিভক্ত পরিবারে সাহায্য করতে পারে?

বিশেষ করে ধর্মের কারণে বিভক্ত পরিবারের জন্য মৃদুতা গুরুত্বপূর্ণ। দয়ার কাজগুলোর সঙ্গে মিলে এটা বিরোধী ব্যক্তিকে যিহোবাকে লাভ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। পিতর খ্রিস্টান স্ত্রীদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমরা আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হও; যেন কেহ কেহ যদিও বাক্যের অবাধ্য হয়, তথাপি যখন তাহারা তোমাদের সভয় বিশুদ্ধ আচার ব্যবহার স্বচক্ষে দেখিতে পায়, তখন বাক্য বিহীনে আপন আপন ভার্য্যার আচার ব্যবহার দ্বারা তাহাদিগকে লাভ করা হয়। আর কেশবিন্যাস ও স্বর্ণাভরণ কিম্বা বস্ত্র পরিধানরূপ বাহ্য ভূষণ, তাহা নয়, কিন্তু হৃদয়ের গুপ্ত মনুষ্য, মৃদু ও প্রশান্ত আত্মার অক্ষয় শোভা, তাহাদের ভূষণ হউক; তাহাই ঈশ্বরের দৃষ্টিতে বহুমূল্য।”—১ পিতর ৩:১-৪.

৬. মৃদুতা দেখানো কীভাবে বাবামা এবং সন্তানদের মধ্যে বন্ধনকে শক্তিশালী করতে পারে?

বাবামা এবং সন্তানদের মধ্যে সম্পর্ক আন্তরিকতাশূন্য হয়ে পড়তে পারে, বিশেষ করে যখন যিহোবার প্রতি প্রেমের অভাব দেখা দেয়। কিন্তু, সমস্ত খ্রিস্টান পরিবারে মৃদুতা দেখানো প্রয়োজন। পৌল বাবাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, বরং প্রভুর [“যিহোবার,” NW] শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া তুল।” (ইফিষীয় ৬:৪) একটা পরিবারে যখন মৃদুতা থাকে, তখন বাবামা এবং সন্তানদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধন আরও শক্তিশালী হয়। পাঁচ সন্তানের মধ্যে ডিন হল একজন আর সে তার বাবার কথা মনে করে বলে: “বাবা মৃদুশীল ছিলেন। আমার কখনও মনে পড়ে না যে আমি তার সঙ্গে তর্ক করেছি—এমনকি আমি যখন কিশোর বয়সী ছিলাম। তিনি সবসময় এমনকি যখন তিনি মনমরা হয়ে থাকতেন, তখনও খুব মৃদু স্বভাবের ছিলেন। কখনও কখনও তিনি আমাকে আমার রুমে পাঠিয়ে দিতেন বা সাময়িকভাবে কিছু বিশেষ সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতেন কিন্তু আমরা কখনও তর্ক করিনি। তিনি শুধু আমাদের বাবাই ছিলেন না। তিনি আমাদের বন্ধুও ছিলেন এবং আমরা তাকে নিরাশ করতে চাইতাম না।” মৃদুতা সত্যিই বাবামা এবং সন্তানদের মধ্যে বন্ধনকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।

আমাদের পরিচর্যায়

৭, ৮. ক্ষেত্রের পরিচর্যায় মৃদুতা দেখানো কেন গুরুত্বপূর্ণ?

আরেকটা যে-ক্ষেত্রে মৃদুতা দেখানো গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হল ক্ষেত্রের পরিচর্যায়। আমরা যখন অন্যদের কাছে রাজ্যের সুসমাচার জানাই, তখন আমরা বিভিন্ন স্বভাবের লোকেদের দেখা পাই। আমরা যে-বার্তা নিয়ে যাই, কেউ কেউ খুশি মনে তা শোনে। অন্যেরা হয়তো বিভিন্ন কারণে প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া দেখায়। তখনই মৃদুতা গুণটি পৃথিবীর প্রান্ত পর্যন্ত সাক্ষি হওয়ার জন্য আমাদের দায়িত্ব পরিপূর্ণ করতে অনেক সাহায্যকারী হয়।—প্রেরিত ১:৮; ২ তীমথিয় ৪:৫.

প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “হৃদয়মধ্যে খ্রীষ্টকে প্রভু বলিয়া পবিত্র করিয়া মান। যে কেহ তোমাদের অন্তরস্থ প্রত্যাশার হেতু জিজ্ঞাসা করে, তাহাকে উত্তর দিতে সর্ব্বদা প্রস্তুত থাক। কিন্তু মৃদুতা ও ভয় [“গভীর সম্মান,” NW] সহকারে উত্তর দিও।” (১ পিতর ৩:১৪, ১৫) যেহেতু খ্রিস্টকে আমরা আমাদের আদর্শ হিসেবে হৃদয়ে ধারণ করেছি, তাই যারা কঠোরভাবে কথা বলে তাদের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার সময়ে মৃদুতা এবং সম্মান দেখানোর বিয়য়টা খেয়াল রাখব। এইধরনের আচরণ প্রায়ই উল্লেখযোগ্য ফল নিয়ে আসে।

৯, ১০. ক্ষেত্রের পরিচর্যায় মৃদুতার মূল্য সম্বন্ধে দেখানোর জন্য একটা অভিজ্ঞতা বলুন।

কিথের স্ত্রী যখন তাদের অ্যাপার্টমেন্টের দরজায় কড়া নাড়ায় উত্তর দিচ্ছিল, তখন কিথ ভিতরে ছিলেন। তাদের অভ্যাগত যে একজন যিহোবার সাক্ষি, তা জানার পর কিথের স্ত্রী রেগে গিয়ে এই বলে সাক্ষিদের দোষারোপ করেন যে, সাক্ষিরা তাদের সন্তানদের প্রতি নিষ্ঠুর। ভাই শান্ত ছিলেন। মৃদুভাবে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন: “আমি দুঃখিত যে, আপনি এইরকম মনে করছেন। আমি কি আপনাকে দেখাতে পারি যে, যিহোবার সাক্ষিরা আসলে কী বিশ্বাস করে?” কিথ তাদের কথাবার্তা শুনছিলেন এবং তারপর তিনি সেই সাক্ষাতের ইতি টানার জন্য দরজার কাছে আসেন।

১০ পরে সেই দম্পতি তাদের অভ্যাগতের সঙ্গে কর্কশভাবে ব্যবহার করায় দুঃখ প্রকাশ করতে শুরু করে। তার মৃদু আচরণ তাদের হৃদয় স্পর্শ করেছিল। তাদের অবাক করে দিয়ে এক সপ্তাহ পর সেই ভাই আবার ফিরে আসেন এবং কিথ ও তার স্ত্রী সেই ভাইকে তার বিশ্বাস সম্বন্ধে শাস্ত্র থেকে ব্যাখ্যা করতে দেন। পরে তারা মন্তব্য করেছিল: “পরের দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা অন্যান্য সাক্ষিদের কাছ থেকে অনেক কিছু শুনেছি।” তারা বাইবেল অধ্যয়ন করতে রাজি হয় এবং পরবর্তী সময়ে তারা দুজনেই যিহোবার কাছে তাদের উৎসর্গীকরণের চিহ্ন হিসেবে বাপ্তিস্ম নেয়। কিথ এবং তার স্ত্রীর কাছে প্রথমে যে-সাক্ষি গিয়েছিলেন, তার জন্য এটা কতই না পুরস্কারজনক! কয়েক বছর পর, এই দম্পতির সঙ্গে সেই সাক্ষির দেখা হয় আর তিনি দেখতে পান যে তারা এখন তার আধ্যাত্মিক ভাই ও বোন। মৃদুতা জয় লাভ করে।

১১. কোন উপায়ে মৃদুতা একজন ব্যক্তির জন্য খ্রিস্টীয় সত্যকে মেনে নেওয়া সহজ করে দিতে পারে?

১১ একজন সৈনিক হিসেবে হ্যারল্ডের অভিজ্ঞতা তাকে তিক্ত করে তুলেছিল এবং ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্বন্ধে তিনি সন্দেহ করতে শুরু করেন। হ্যারল্ডের সমস্যাগুলো আরও তীব্র হয়, যখন একজন মাতাল চালকের কারণে এক যানবাহন দুর্ঘটনায় তিনি চিরদিনের জন্য শারীরিক দিক দিয়ে অক্ষম হয়ে পড়েন। যিহোবার সাক্ষিরা যখন তার ঘরে আসে, তখন হ্যারল্ড তাদের আর কখনও আসতে নিষেধ করে দেন। কিন্তু, একদিন বিল নামে এক সাক্ষি একজন আগ্রহী ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে যান, যিনি হ্যারল্ডের ঘর থেকে দুই ঘর পরে থাকেন। ভুল করে বিল হ্যারল্ডের ঘরে কড়া নাড়েন। হ্যারল্ড যখন দুটো লাঠিতে ভর দিয়ে দরজা খুলে দেন, তখন বিল সঙ্গে সঙ্গে তার কাছে ক্ষমা চান, তাকে বুঝিয়ে বলেন যে তিনি আসলে কাছেই একটা বাড়িতে এসেছেন। হ্যারল্ড কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? বিলের অজান্তে হ্যারল্ড টেলিভিশনের সংবাদে সাক্ষিদের সম্বন্ধে একটা প্রতিবেদন দেখেছিলেন, যেখানে তারা অল্প সময়ের মধ্যে একটা নতুন কিংডম হল তৈরি করার জন্য একত্রে কাজ করছে। অনেক লোককে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে দেখে তিনি এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে, সাক্ষিদের সম্বন্ধে তার মনোভাব পালটে গিয়েছিল। সদয়ভাবে বিলের ক্ষমা চাওয়া এবং তার হাসিখুশি ও মৃদু আচরণের দ্বারা অভিভূত হয়ে হ্যারল্ড যিহোবার সাক্ষিদের সাক্ষাৎকে মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি বাইবেল অধ্যয়ন করেন, উন্নতি করেন এবং যিহোবার একজন বাপ্তাইজিত দাস হন।

মণ্ডলীতে

১২. কোন জাগতিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সদস্যদের প্রতিরোধ করা উচিত?

১২ তৃতীয় যে-ক্ষেত্রে মৃদুতা অতীব গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হল খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে। আজকের সমাজে দ্বন্দ্ব খুবই সাধারণ ব্যাপার। বাগ্‌বিতণ্ডা, তর্কবিতর্ক এবং ঝগড়া-বিবাদ সেই সমস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে খুবই সাধারণ, যারা জীবনকে জাগতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখে। কখনও কখনও এইধরনের জাগতিক বৈশিষ্ট্যগুলো ধীরে ধীরে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে প্রবেশ করে আর তা তর্কবিতর্ক এবং দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়। দায়িত্বপ্রাপ্ত ভাইদের যখন এইধরনের পরিস্থিতিগুলোর মোকাবিলা করতে হয়, তখন তারা অনেক দুঃখ পায়। তবুও, যিহোবা এবং ভাইবোনদের প্রতি প্রেম ভুল করেছে এমন ব্যক্তিদের পুনরায় লাভ করার জন্য তাদের প্রণোদিত করে।—গালাতীয় ৫:২৫, ২৬.

১৩, ১৪. ‘মৃদু ভাবে বিরোধিগণকে শাসন করিবার’ ফল কী হতে পারে?

১৩ প্রথম শতাব্দীতে, পৌল এবং তার সঙ্গী তীমথিয় মণ্ডলীর মধ্যে কারও কারও কাছ থেকে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। তীমথিয়কে পৌল সেই সমস্ত ভাইদের ব্যাপারে সাবধান থাকতে বলেছিলেন, যারা “অনাদরের” পাত্রের সমরূপ। “যুদ্ধ করা প্রভুর দাসের উপযুক্ত নহে,” পৌল যুক্তি দেখিয়েছিলেন “কিন্তু সকলের প্রতি কোমল, শিক্ষাদানে নিপুণ, সহনশীল হওয়া, এবং মৃদুভাবে বিরোধিগণকে শাসন করা তাহার উচিত।” এমনকি বিরক্তির মধ্যেও আমরা যদি মৃদুভাব বজায় রাখি, তা হলে ভিন্ন মতাবলম্বী ব্যক্তিরা প্রায়ই তাদের সমালোচনাকে পুনরায় মূল্যায়ন করতে পরিচালিত হয়। এর ফলে যিহোবা হয়তো, পৌল যেমন আরও লেখেন, “তাহাদিগকে মনপরিবর্ত্তন দান করিবেন, যেন তাহারা সত্যের তত্ত্বজ্ঞান প্রাপ্ত হয়।” (২ তীমথিয় ২:২০, ২১, ২৪, ২৫, ২৬) লক্ষ করুন যে, পৌল কোমলভাব এবং সহনশীলতাকে মৃদুতার সঙ্গে যুক্ত করেছেন।

১৪ পৌল যা প্রচার করেছিলেন, নিজেও তা কাজে লাগিয়েছিলেন। করিন্থীয় মণ্ডলীর “প্রেরিত-চূড়ামণিদের” সঙ্গে কথা বলার সময় পৌল ভাইবোনদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “আর আমি পৌল নিজে খ্রীষ্টের মৃদুতা ও সৌজন্য [“দয়া,” NW] দ্বারা তোমাদিগকে অনুনয় করিতেছি। আমি নাকি সম্মুখে তোমাদের মধ্যে বিনত, কিন্তু অসাক্ষাতে তোমাদের প্রতি সাহসিক।” (২ করিন্থীয় ১০:১; ১১:৫) পৌল সত্যিই খ্রিস্টকে অনুকরণ করেছিলেন। লক্ষ করুন যে, তিনি খ্রিস্টের ‘মৃদুতার দ্বারা’ এই ভাইদের কাছে আবেদন করেছিলেন। এভাবে তিনি গর্বিত এবং স্বতন্ত্র মনোভাব এড়িয়ে চলেছিলেন। কোন সন্দেহ নেই যে, তার এই পরামর্শ মণ্ডলীতে প্রতিক্রিয়াশীল ব্যক্তিদের হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। তিনি আন্তরিকতাশূন্য সম্পর্ককে প্রশমিত করেছিলেন এবং মণ্ডলীতে শান্তি ও একতার জন্য ভিত্তি গড়ে তুলেছিলেন। এটা কি এমন কাজ নয়, যা আমরা সবাই অনুকরণ করার চেষ্টা করতে পারি? বিশেষ করে প্রাচীনদের খ্রিস্ট এবং পৌলের কাজগুলো অনুকরণ করা দরকার।

১৫. পরামর্শ দেওয়ার সময় মৃদুতা কেন জরুরি?

১৫ অন্যদের সাহায্য করার দায়িত্ব শুধু তখনই সীমাবদ্ধ নয়, যখন মণ্ডলীর শান্তি এবং একতা ঝুঁকির মুখে থাকে। আন্তরিকতাশূন্য সম্পর্ক শুরু হওয়ার আগেই ভাইবোনদের প্রেমময় নির্দেশনার প্রয়োজন। পৌল পরামর্শ দিয়েছিলেন, “ভ্রাতৃগণ, যদি কেহ কোন অপরাধে ধরাও পড়ে, তবে আত্মিক যে তোমরা, তোমরা সেই প্রকার ব্যক্তিকে . . . সুস্থ [“পুনঃসমন্বয়,” NW] কর।” কিন্তু, কীভাবে? “মৃদুতার আত্মায় . . . আপনাকে দেখ, পাছে তুমিও পরীক্ষাতে পড়।” (গালাতীয় ৬:১) ‘মৃদুতার আত্মা’ বজায় রাখা সবসময় সহজ নয় বিশেষত কারণটা হল যে, নিযুক্ত ব্যক্তিরা সহ সমস্ত খ্রিস্টানই পাপপূর্ণ প্রবণতাগুলোর অধীন। তবুও, ভুল করেছে এমন এক ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় পুনঃসমন্বয়সাধন করার ক্ষেত্রে মৃদুতা সাহায্য করবে।

১৬, ১৭. কোন বিষয়টা হয়তো পরামর্শ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে যেকোনো অনিচ্ছাকে প্রতিহত করতে সাহায্য করে?

১৬ মূল গ্রিকে যে-শব্দকে “পুনঃসমন্বয়” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটা পুনরায় বিন্যাস বা ভাঙা হাড়গুলো জোড়া লাগানোকেও বোঝাতে পারে, যেটা এক কষ্টকর প্রক্রিয়া। একজন আশ্বাসদায়ক ডাক্তার, যিনি ভাঙা হাড় জোড়া লাগান, তিনি প্রক্রিয়ার উপকার সম্বন্ধে ইতিবাচক কথা বলেন। তার শান্ত স্বভাব সান্ত্বনাজনক। আগে থেকেই কিছু কথা অস্বাচ্ছন্দ্যকর খারাপ অবস্থাকে প্রশমিত করতে সাহায্য করে। একইভাবে, এক আধ্যাত্মিক পুনঃসমন্বয়সাধন হয়তো কষ্টকর হতে পারে। কিন্তু, মৃদুতা এই পরিস্থিতিকে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে সাহায্য করবে আর এভাবে মধুর সম্পর্ক পুনরায় স্থাপন হয় এবং যে-ব্যক্তি ভুল করেছেন, তার জন্য পরিবর্তন হওয়ার পথ তৈরি হয়ে যায়। এমনকি প্রথম প্রথম পরামর্শ মেনে নিতে না চাইলেও যিনি সাহায্য করেন, তার মৃদুতা হয়তো উপযুক্ত শাস্ত্রীয় উপদেশ মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে যেকোনো অনিচ্ছাকে প্রতিহত করতে পারে।—হিতোপদেশ ২৫:১৫, NW.

১৭ পুনঃসমন্বয় করার জন্য যখন অন্যদের সাহায্য করা হয়, তখন পরামর্শকে হয়তো সমালোচনা হিসেবে নেওয়ার বিপদ সবসময় থাকতে পারে। একজন লেখক এইরকম মন্তব্য করেন: “অন্যদের সংশোধন করার সময় অসঙ্গতভাবে নিজেকে জাহির করার চেয়ে বড় আর কোনো বিপদ আমাদের জন্য নেই, তাই নম্রতার খুবই প্রয়োজন।” নম্রতা থেকে উৎপন্ন মৃদুতা অনুশীলন করা খ্রিস্টান পরামর্শদাতাকে এই বিপদ এড়াতে সাহায্য করবে।

“সকল মনুষ্যের কাছে”

১৮, ১৯. (ক) কেন খ্রিস্টানরা জগতের কর্তৃপক্ষদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে মৃদুতা দেখানো কঠিন বলে মনে করতে পারে? (খ) যারা কর্তৃত্বে রয়েছে, তাদের প্রতি মৃদুতা দেখাতে কোন বিষয়টা খ্রিস্টানদের সাহায্য করবে এবং এতে কোন সম্ভাব্য ফলাফল রয়েছে?

১৮ একটা যে-ক্ষেত্রে অনেকে মৃদুতা দেখানো কঠিন বলে মনে করে, সেটা হল জগতের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আচরণ করার ক্ষেত্রে। এটা ঠিক যে, কোনো কোনো কর্তৃপক্ষ এমনভাবে আচরণ করে, যা কঠোরতাকে ও সহানুভূতির অভাবকে প্রকাশ করে। (উপদেশক ৪:১; ৮:৯) কিন্তু, যিহোবার প্রতি আমাদের প্রেম তাঁর সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব স্বীকার করতে এবং সরকারি কর্তৃপক্ষদের প্রতি তাদের প্রাপ্য সেই আপেক্ষিক বশ্যতা দেখাতে সাহায্য করবে। (রোমীয় ১৩:১, ৪; ১ তীমথিয় ২:১, ২) এমনকি উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা যখন জনসাধারণ্যে যিহোবার প্রতি আমাদের উপাসনাকে সীমাবদ্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করে, তখনও আমরা আনন্দের সঙ্গে সেই উপায়গুলো খুঁজি, যা এখনও যিহোবাকে প্রশংসা বলি দেওয়ার জন্য খোলা রয়েছে।—ইব্রীয় ১৩:১৫.

১৯ কোনো পরিস্থিতিতেই আমরা যেন শত্রুভাবাপন্ন না হই। ধার্মিক নীতিগুলোর ক্ষেত্রে কখনও আপোশ না করে আমরা যুক্তিবাদী হওয়ার চেষ্টা করি। এভাবেই আমাদের ভাইবোনেরা সারা পৃথিবীতে দ্বীপ ও দেশ মিলিয়ে ২৩৪টা জায়গায় তাদের পরিচর্যা চালিয়ে যেতে সফল হয়েছে। আমরা পৌলের এই পরামর্শে মন দিই, ‘আধিপত্যের ও কর্ত্তৃত্বের বশীভূত হও, বাধ্য হও, সর্ব্বপ্রকার সৎক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত হও, কাহারও নিন্দা না করিয়া, নির্ব্বিরোধ ও যুক্তিবাদী হও, সকল মনুষ্যের কাছে সম্পূর্ণ মৃদুতা দেখাও।’—তীত ৩:১, ২.

২০. যারা মৃদুতা দেখায় তাদের জন্য কোন পুরস্কারগুলো রয়েছে?

২০ যারা মৃদুতা দেখায়, তাদের সবার জন্য প্রচুর আশীর্বাদ সঞ্চিত রয়েছে। “ধন্য [“সুখী,” NW] যাহারা মৃদুশীল,” যীশু বলেছিলেন, “কারণ তাহারা দেশের [“পৃথিবীর,” NW] অধিকারী হইবে।” (মথি ৫:৫) খ্রিস্টের আত্মায় অভিষিক্ত ভাইদের জন্য মৃদুতা বজায় রাখা তাদের সুখ এবং পার্থিব রাজ্যের ওপর শাসন করার বিশেষ সুযোগকে নিশ্চিত করে। ‘আরও মেষের’ “বিস্তর লোক” মৃদুতা দেখিয়ে চলে এবং তারা এই পৃথিবীতে পরমদেশে বেঁচে থাকার জন্য সাগ্রহে অপেক্ষা করে আছে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯; যোহন ১০:১৬; গীতসংহিতা ৩৭:১১) সামনে কত অপূর্ব ভবিষ্যৎই না রয়েছে! তাই, আসুন ইফিষের খ্রিস্টানদের পৌল যা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, আমরা যেন কখনও সেটা অবহেলা না করি: “অতএব প্রভুতে বন্দি আমি তোমাদিগকে বিনতি করিতেছি, তোমরা যে আহ্বানে আহূত হইয়াছ, তাহার যোগ্যরূপে চল। সম্পূর্ণ নম্রতা ও মৃদুতা সহকারে . . . চল।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)—ইফিষীয় ৪:১, ২.

পুনরালোচনা

• মৃদুতা দেখানোর ফলে কোন আশীর্বাদগুলো আসবে

• পরিবারে?

• ক্ষেত্রের পরিচর্যায়?

• মণ্ডলীতে?

• যারা মৃদুশীল, তাদের জন্য কোন পুরস্কারগুলো সম্বন্ধে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

ধর্মের কারণে বিভক্ত এক পরিবারে মৃদুতা বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ

[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]

মৃদুতা পারিবারিক বন্ধনকে শক্তিশালী করে

[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

মৃদুতা এবং গভীর সম্মানের সঙ্গে উত্তর দিন

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

একজন পরামর্শদাতার মৃদুতা হয়তো ভুল করেছে এমন একজন ব্যক্তিকে সাহায্য করতে পারে