সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সামান্য লোকেদের জন্য যিহোবা চিন্তা করেন

সামান্য লোকেদের জন্য যিহোবা চিন্তা করেন

সামান্য লোকেদের জন্য যিহোবা চিন্তা করেন

 যিহোবার দৃষ্টিতে আসার জন্য আমাদের কি অসাধারণ বা বিশিষ্ট হওয়ার দরকার আছে? যুক্তরাষ্ট্রের ১৬তম রাষ্ট্রপতি অব্রাহাম লিংকন যা বলেছিলেন, সেটাকে এভাবে উদ্ধৃতি করা হয়: “প্রভু সাধারণ লোকেদের পছন্দ করেন। আর এই কারণেই তিনি তাদের অনেককে জয় করেছেন।” অনেকে নিজেদের সামান্য লোক বলে মনে করে, যাদের দেওয়ার মতো বিশেষ কিছুই নেই। সামান্য হওয়ার অর্থ হতে পারে, “দরিদ্র, নিচু” হওয়া। একইভাবে “সাধারণ” শব্দটির অর্থ “বিশেষ সুযোগ বা বিশেষ মর্যাদার অভাব” “সামান্য মানের চেয়েও নিচু” বা এমনকি “দ্বিতীয় শ্রেণী”-কে ইঙ্গিত করতে পারে। কীধরনের লোকেদের মাঝে আপনি থাকতে পছন্দ করেন? উদ্ধত, একরোখা, গর্বিত ব্যক্তিদের মাঝে? এর পরিবর্তে আপনি কি বন্ধুত্বপরায়ণ, নম্র, বিনয়ী লোকেদের মাঝে থাকতে চান না, যারা অন্যদের প্রতি এক আন্তরিক এবং অকৃত্রিম আগ্রহ দেখায়?

যেহেতু আজকে জগতে মানসিকভাবে পীড়া দেওয়া এবং উপহাস করা খুবই সাধারণ, তাই কারও কারও জন্য এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে, ঈশ্বর ব্যক্তিগতভাবে তাদের প্রতি আগ্রহী। “আমি এমন একটা পরিবার থেকে এসেছি, যেখানে ভালবাসা বলে কিছু ছিল না। আমাকে হেয়জ্ঞান করা হতো এবং আমাকে নিয়ে পরিহাস ও ঠাট্টা করা হতো। তাই, ছোটবেলা থেকেই আমি নিজেকে অযোগ্য মনে করতাম,” এই পত্রিকার একজন পাঠক লেখেন। “আগের অনুভূতিগুলো এখনও আমার মনে এতটাই গেঁথে আছে যে, যখন আমি দুর্দশা ভোগ করি তখন তা আমাকে নিরুৎসাহিত করে ফেলে।” কিন্তু, এটা বিশ্বাস করার অনেক কারণ রয়েছে যে, ঈশ্বর ব্যক্তিগতভাবে সামান্য লোকের প্রতি আগ্রহী।

সাধারণ লোকেদের প্রতি ঈশ্বরের আগ্রহ

“সদাপ্রভু মহান্‌ ও অতীব কীর্ত্তনীয়; তাঁহার মহিমার তত্ত্ব পাওয়া যায় না,” রাজা দায়ূদ লিখেছিলেন। (গীতসংহিতা ১৪৫:৩) কিন্তু, তা যিহোবাকে আমাদের জন্য প্রেমময় এবং সমবেদনাপূর্ণ উপায়ে চিন্তা করতে বাধা দেয় না। (১ পিতর ৫:৭) উদাহরণ হিসেবে, গীতরচক বলেছিলেন: “সদাপ্রভু ভগ্নচিত্তদের নিকটবর্ত্তী, তিনি চূর্ণমনাদের পরিত্রাণ করেন।”—গীতসংহিতা ৩৪:১৮.

জগতে যে-জিনিসগুলো লোকেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যেমন শারীরিক সৌন্দর্য, সম্মান বা ধনসম্পদ, সেগুলোকে ঈশ্বর গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন না। ইস্রায়েলকে দেওয়া ঈশ্বরের ব্যবস্থা দরিদ্র, অনাথ, বিধবা এবং বিদেশিদের প্রতি তাঁর সমবেদনাপূর্ণ আগ্রহ সম্বন্ধে প্রকাশ করে। মিশরে নির্মমভাবে অত্যাচারিত ইস্রায়েলীয়দের ঈশ্বর বলেছিলেন: “তুমি বিদেশীর প্রতি অন্যায় করিও না, তাহার প্রতি উপদ্রব করিও না, . . . তোমরা কোন বিধবাকে কিম্বা পিতৃহীনকে দুঃখ দিও না। তাহাদিগকে কোন মতে দুঃখ দিলে যদি তাহারা আমার নিকটে ক্রন্দন করে, তবে আমি অবশ্য তাহাদের ক্রন্দন শুনিব।” (যাত্রাপুস্তক ২২:২১-২৪) এ ছাড়া, ভাববাদী যিশাইয় হীন ব্যক্তিদের প্রতি ঈশ্বরের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে তার আস্থা প্রকাশ করেছিলেন: “তুমি দরিদ্রের দৃঢ় দুর্গ, সঙ্কটে দীনহীনের দৃঢ় দুর্গ ঝটিকানিবারক আশ্রয়, রৌদ্রনিবারক ছায়া হইয়াছ, যখন দুর্দ্দান্তদের নিঃশ্বাস ভিত্তিতে ঝটিকার ন্যায় হয়।”—যিশাইয় ২৫:৪.

ঈশ্বরের “মুদ্রাঙ্ক” যিশু খ্রিস্ট তাঁর সম্পূর্ণ পরিচর্যায় সাধারণ লোকেদের প্রতি প্রকৃত আগ্রহ দেখানোর ক্ষেত্রে তাঁর শিষ্যদের সামনে এক উদাহরণ হয়েছিলেন। (ইব্রীয় ১:৩)) বিস্তর লোক দেখে যারা “ব্যাকুল ও ছিন্নভিন্ন ছিল, যেন পালকবিহীন মেষপাল” যিশু “তাহাদের প্রতি করুণাবিষ্ট হইলেন।”—মথি ৯:৩৬.

এ ছাড়া, যিশু কীধরনের লোকেদের তাঁর প্রেরিত হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, তা লক্ষ করুন—যে লোকেদের “অশিক্ষিত সামান্য” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। (প্রেরিত ৪:১৩) যিশুর মৃত্যুর পর তাঁর অনুসারীরা সমস্ত ধরনের লোককে ঈশ্বরের বাক্য শোনার জন্য আমন্ত্রণ জানাতে শুরু করেছিল। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন যে, “কোন অবিশ্বাসী কি সামান্য ব্যক্তি” খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে আসতে এবং একজন বিশ্বাসী হতে পারেন। (১ করিন্থীয় ১৪:২৪, ২৫) জগতের মান অনুযায়ী যারা প্রশংসনীয়, শুধু তাদের বেছে নেওয়ার পরিবর্তে, ঈশ্বর অনেক সহজসরল, সামান্য লোককে তাঁর সেবা করার জন্য বেছে নিয়েছেন। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন, “হে ভ্রাতৃগণ, তোমাদের আহ্বান দেখ, যেহেতুক মাংস অনুসারে জ্ঞানবান্‌ অনেক নাই, পরাক্রমী অনেক নাই, উচ্চ পদস্থ অনেক নাই; কিন্তু ঈশ্বর জগতীস্থ মূর্খ বিষয় সকল মনোনীত করিলেন, যেন জ্ঞানবান্‌দিগকে লজ্জা দেন; এবং ঈশ্বর জগতের দুর্ব্বল বিষয় সকল মনোনীত করিলেন, যেন শক্তিমন্ত বিষয় সকলকে লজ্জা দেন; এবং জগতের যাহা যাহা নীচ ও যাহা যাহা তুচ্ছ, যাহা যাহা কিছু নয়, সেই সকল ঈশ্বর মনোনীত করিলেন, যেন, যাহা যাহা আছে, সে সকল অকিঞ্চন করেন; যেন কোন মর্ত্ত্য ঈশ্বরের সাক্ষাতে শ্লাঘা না করে।”—১ করিন্থীয় ১:২৬-২৯.

আজকে একইভাবে, ঈশ্বর আমাদের প্রতি সত্যিই আগ্রহী। ঈশ্বরের ইচ্ছা হল যেন “সমুদয় মনুষ্য পরিত্রাণ পায়, ও সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পারে।” (১ তীমথিয় ২:৪) ঈশ্বর যদি মানবজাতিকে এতটা ভালবেসে থাকেন যে, তিনি তাঁর পুত্রকে আমাদের জন্য মৃত্যুবরণ করতে পৃথিবীতে পাঠান, তা হলে আমাদের এইরকম মনে করার কোনো কারণ নেই যে আমাদের ভালবাসেন না এবং আমরা অযোগ্য। (যোহন ৩:১৬) যিশু খ্রিস্ট তাঁর অনুগামীদের তাঁর আত্মিক ভাইদের মধ্যে এমনকি সবচেয়ে ক্ষুদ্র ব্যক্তির সঙ্গে ব্যবহার করার গুরুত্ব সম্বন্ধে দেখিয়েছিলেন, যেন ব্যক্তিগতভাবে যিশুর প্রতিই ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেছিলেন: “আমার এই ভ্রাতৃগণের—এই ক্ষুদ্রতমদিগের—মধ্যে এক জনের প্রতি যখন ইহা করিয়াছিলে, তখন আমারই প্রতি করিয়াছিলে।” (মথি ২৫:৪০) জগৎ আমাদের যেভাবেই দেখুক না কেন আমরা যদি সত্য ভালবাসি, তা হলে ঈশ্বরের চোখে আমরা বিশেষ কিছু।

ব্রাজিলের এক পিতৃহীন ছেলে ফ্রানসিসকু * ঈশ্বরের সঙ্গে এক ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তোলার পর এইরকমই বোধ করেছিল। সে ব্যাখ্যা করে: “যিহোবা ও তাঁর সংগঠনকে জানা আমাকে অনিশ্চয়তা এবং লজ্জার অনুভূতি কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। আমি শিখেছি যে, যিহোবা আমাদের প্রত্যেকের প্রতি ব্যক্তিগতভাবে আগ্রহী।” ফ্রানসিসকুর কাছে যিহোবা একজন প্রকৃত পিতা হয়েছেন।

যুবক-যুবতীদের প্রতি চিন্তা

যিহোবা যুবক-যুবতীদের শুধু দলগতভাবেই নয় কিন্তু ব্যক্তিবিশেষের প্রতিও প্রকৃত আগ্রহ দেখান। অবশ্য, যুবক বা বৃদ্ধ যে-ই হই না কেন, আমরা কখনও নিজেদের সম্বন্ধে খুব উচ্চ ধারণা রাখতে চাই না। কিন্তু, আমাদের যে-দক্ষতা ও গুণাবলি আছে, সেগুলো ঈশ্বর ভবিষ্যতে ব্যবহার করতে পারেন। যিহোবা জানেন যে আমাদের দক্ষতাকে পুরোপুরি ব্যবহার করার জন্য কীধরনের পরিশোধন এবং প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আমাদের রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে, ১ শমূয়েল ১৬ অধ্যায়ের ঘটনাটা বিবেচনা করুন। যেহেতু ভাববাদী শমূয়েলের কাছে ইস্রায়েলের রাজা হওয়ার জন্য অন্যান্য প্রার্থীদের আরও বেশি যোগ্য বলে মনে হয়েছিল, তাই যিহোবা যিশয়ের ছোট ছেলে দায়ূদকে ইস্রায়েলের ভাবী রাজা হিসেবে বেছে নেওয়ার কারণগুলো সম্বন্ধে এভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন: “উহার [দায়ূদের বড় ভাইয়ের] মুখশ্রীর বা কায়িক দীর্ঘতার প্রতি দৃষ্টি করিও না; কারণ আমি উহাকে অগ্রাহ্য করিলাম। কেননা মনুষ্য যাহা দেখে, তাহা কিছু নয়; যেহেতু মনুষ্য প্রত্যক্ষ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি করে, কিন্তু সদাপ্রভু অন্তঃকরণের প্রতি দৃষ্টি করেন।”—১ শমূয়েল ১৬:৭.

আজকে যুবক-যুবতীরা কি আস্থা রাখতে পারে যে, যিহোবা তাদের জন্য প্রকৃত আগ্রহ দেখান? ব্রাজিলের একজন যুবতী অ্যানার কথা বিবেচনা করুন। অন্যান্য অনেক যুবক-যুবতীর মতো সেও দুর্নীতি এবং অবিচার দেখে বিরক্ত হয়ে যায়। এরপর তার বাবা তাকে ও তার বোনদের খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে নিয়ে যান। পরে সে ঈশ্বরের বাক্য সম্বন্ধে যা কিছু শিখছিল, তা উপভোগ করতে শুরু করে। অ্যানা বাইবেলের সঙ্গে খ্রিস্টীয় প্রকাশনাদিও পড়তে এবং যিহোবা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে সে ঈশ্বরের সঙ্গে এক অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে তোলে। সে ব্যাখ্যা করে: “আমি আমার বাড়ির কাছে একটা পাহাড়ে সাইকেল চালানো উপভোগ করি, যেখানে আমি অপূর্ব সূর্যাস্ত দেখতে পারি। আমি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি এবং তাঁর দয়া ও উদারতার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ দিই আর তাঁকে আমি কতটা ভালবাসি তা প্রকাশ করার চেষ্টা করি। যিহোবা ঈশ্বর এবং তাঁর উদ্দেশ্যগুলো সম্বন্ধে জানা আমাকে মনের শান্তি এবং সুরক্ষাবোধ দিয়েছে।” তুমিও কি যিহোবার প্রেমময় চিন্তা সম্বন্ধে ভেবে দেখার জন্য সময় খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা কর?

এটা ঠিক যে, আমাদের পটভূমি হয়তো যিহোবার সঙ্গে এক অন্তরঙ্গ সম্পর্ক উপভোগ করতে আমাদের বাধা দিতে পারে। উদাহরণ হিসেবে, লিডিয়ার কথা চিন্তা করুন। সে যখন তার বাবাকে অত্যন্ত ব্যক্তিগত চিন্তার এক বিষয় সম্বন্ধে হৃদয় খুলে জানিয়েছিল, তখন তিনি তাকে শুধু এই বলে ধমক দিয়েছিলেন: “বাজে কথা।” যদিও লিডিয়া বুঝতে পেরেছিল যে তার বাবা চেয়েছিলেন যেন সে সমস্যাটার কথা ভুলে যায় কিন্তু লিডিয়া বলে: “বাইবেল অধ্যয়ন করা আমাকে আমি যা কিছু চেয়েছিলাম এবং এর চেয়ে আরও বেশি কিছু দিয়েছে। যিহোবার আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব তাঁকে আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু করে তুলেছে। এখন আমার এক প্রেমময়, চিন্তাশীল পিতা আছে, যাঁর কাছে আমি মন খুলে আমার অনুভূতি এবং আমার অত্যন্ত ব্যক্তিগত চিন্তার বিষয় সকল প্রকাশ করতে পারি। নিখিলবিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার জন্য আমি ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যয় করতে পারি কারণ আমি নিশ্চিত যে, তিনি আমার কথা শুনবেন।” বাইবেলের এই ধরনের পদগুলো যেমন ফিলিপীয় ৪:৬, ৭ তাকে যিহোবার প্রেমময় চিন্তা অনুভব করতে সাহায্য করেছে। সেখানে বলা আছে: “কোন বিষয়ে ভাবিত হইও না, কিন্তু সর্ব্ববিষয়ে প্রার্থনা ও বিনতি দ্বারা ধন্যবাদ সহকারে তোমাদের যাচ্ঞা সকল ঈশ্বরকে জ্ঞাত কর। তাহাতে সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি তাহা তোমাদের হৃদয় ও মন খ্রীষ্ট যীশুতে রক্ষা করিবে।”

আপনার প্রয়োজনগুলোর বিষয়ে চিন্তা করার জন্য সাহায্য

যিহোবা তাঁর দাসদের প্রতি ব্যক্তিগতভাবে ও সেইসঙ্গে সারা পৃথিবীতে তাঁর মণ্ডলীর প্রতি চিন্তা প্রকাশ করেন। আমরাও আমাদের স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে কথা বলার জন্য সময় করে নিয়ে তাঁর প্রতি আমাদের প্রেম দেখাতে পারি। তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে কখনও হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। দায়ূদ যিহোবার সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়ে সবসময় সচেতন ছিলেন। তিনি বলেছিলেন: “সদাপ্রভু, তোমার পথ সকল আমাকে জ্ঞাত কর; তোমার পন্থা সকল আমাকে বুঝাইয়া দেও। তোমার সত্যে আমাকে চালাও, আমাকে শিক্ষা দেও, কেননা তুমিই আমার ত্রাণেশ্বর; আমি সমস্ত দিন তোমার অপেক্ষায় থাকি।”—গীতসংহিতা ২৫:৪, ৫.

ঈশ্বরের সঙ্গে এক অন্তরঙ্গ সম্পর্ক থাকার বিষয়টা আপনার কাছে হয়তো নতুন মনে হতে পারে। আপনার যে-সমস্যাই থাকুক না কেন, আপনি সবসময় নিশ্চিত থাকতে পারেন যে পরাৎপর তাঁর ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে আপনাকে সাহায্য করতে সমর্থ। (১ যোহন ৫:১৪, ১৫) তাই, আপনার পরিস্থিতি এবং প্রয়োজনগুলো সম্বন্ধে বিবেচনা করে আপনার প্রার্থনায় নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে শিখুন।

আমাদের প্রয়োজনগুলো বোঝার গুরুত্ব রাজা শলোমনের প্রার্থনায় আলোকপাত করা হয়েছে, যা তিনি মন্দির উৎসর্গ করার সময় করেছিলেন: “দেশের মধ্যে যদি দুর্ভিক্ষ হয়, যদি মহামারী হয়, যদি শস্যের শোষ কি ম্লানি কি পঙ্গপাল কিম্বা কীট হয়, যদি তাহাদের শত্রুগণ তাহাদের দেশে নগরে নগরে তাহাদিগকে অবরোধ করে, যদি কোন মারীর বা রোগের প্রাদুর্ভাব হয়; তাহা হইলে কোন ব্যক্তি বা তোমার সমস্ত প্রজা ইস্রায়েল, যাহারা প্রত্যেকে আপন আপন মনঃপীড়া ও মর্ম্মব্যথা জানে . . . তবে তুমি . . . স্বর্গ হইতে তাহা শুনিও, এবং ক্ষমা করিও, এবং প্রত্যেক জনকে স্ব স্ব সমস্ত পথ অনুযায়ী প্রতিফল দিও।” (২ বংশাবলি ৬:২৮-৩০) প্রকৃতপক্ষে, একমাত্র আপনি ‘আপনার মনঃপীড়া ও মর্ম্মব্যাথ্যা জানেন।’ তাই, আপনার প্রকৃত চাহিদা এবং ইচ্ছাগুলো সম্বন্ধে বুঝতে পারা কত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি তা করেন, তা হলে ‘[যিহোবা] আপনার মনোবাঞ্ছা সকল পূর্ণ করিবেন।’—গীতসংহিতা ৩৭:৪.

যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্ককে শক্তিশালী করুন

সামান্য লোকেদের তাঁর সঙ্গে এক অন্তরঙ্গ সম্পর্ক উপভোগ করতে দিতে যিহোবা খুশি হন। তাঁর বাক্য আমাদের আশ্বাস দেয়: “আমিই . . . তোমাদের পিতা হইব, ও তোমরা আমার পুত্ত্র কন্যা হইবে, ইহা সর্ব্বশক্তিমান্‌ প্রভু [“যিহোবা,” NW] কহেন।” (২ করিন্থীয় ৬:১৭, ১৮) সত্যিই, যিহোবা এবং তাঁর পুত্র চান যেন আমরা সফল হই এবং অনন্তজীবন পাই। এটা জানা কত উৎসাহজনক যে, পরিবারে, চাকরি ক্ষেত্রে এবং খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে আমাদের দায়িত্বগুলো পালন করার ব্যাপারে যিহোবা আমাদের সাহায্য করবেন!

তবুও, আমরা সবাই কঠিন সময়ের মুখোমুখি হই। খারাপ স্বাস্থ্য, পারিবারিক সমস্যাগুলো, স্বল্প আয় বা অন্য কিছু হয়তো আমাদের কষ্ট দিতে পারে। আমরা হয়তো জানি না যে, কীভাবে পরীক্ষা বা তাড়নার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হয়। সরাসরি বা পরোক্ষভাবে হোক, বেড়ে চলা চাপগুলো দুষ্ট দোষারোপকারী শয়তান দিয়াবল দিয়ে থাকে, যে ঈশ্বরের লোকেদের বিরুদ্ধে এক আধ্যাত্মিক লড়াই করছে। কিন্তু, একজন আছেন যিনি আমাদের বোঝেন এবং যিহোবার সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখতে আমাদের সাহায্য করেন। সেই ব্যক্তি স্বর্গে উচ্চে অবস্থানরত যিশু খ্রিস্ট ছাড়া আর কেউ নন। আমরা পড়ি: “আমরা এমন মহাযাজককে পাই নাই, যিনি আমাদের দুর্ব্বলতাঘটিত দুঃখে দুঃখিত হইতে পারেন না, কিন্তু তিনি সর্ব্ববিষয়ে আমাদের ন্যায় পরীক্ষিত হইয়াছেন, বিনা পাপে। অতএব আইস, আমরা সাহসপূর্ব্বক অনুগ্রহ-সিংহাসনের নিকটে উপস্থিত হই, যেন দয়া লাভ করি, এবং সময়ের উপযোগী উপকারার্থে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হই।”—ইব্রীয় ৪:১৫, ১৬.

এটা জানা কত আশ্বাসজনক যে, ঈশ্বরের অনুগ্রহ উপভোগ করার জন্য আমাদের বিখ্যাত বা ধনী হওয়ার প্রয়োজন নেই! এমনকি কষ্টকর পরিস্থিতিতে থাকলেও, গীতরচকের মতো হোন যিনি প্রার্থনা করেছিলেন: “আমি দুঃখী ও দরিদ্র, প্রভুই [“যিহোবাই,” NW] আমার পক্ষে চিন্তা করেন; তুমি আমার সহায় ও আমার নিস্তারকর্ত্তা।” (গীতসংহিতা ৩১:৯-১৪; ৪০:১৭) নিশ্চিত থাকুন যে, যিহোবা নম্র ও সামান্য লোকেদের ভালবাসেন। সত্যিই, ‘আমরা আমাদের সমস্ত ভাবনার ভার তাঁহার উপরে ফেলিয়া দিতে পারি; কেননা তিনি আমাদের জন্য চিন্তা করেন।’—১ পিতর ৫:৭.

[পাদটীকা]

^ কিছু নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশুর অনুসারীদের অনেকেই অশিক্ষিত ও সামান্য লোক ছিল

[৩০ পৃষ্ঠার চিত্র]

খ্রিস্টানরা দৃঢ় বিশ্বাসের জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করে

[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]

ঈশ্বরের অনুগ্রহ পাওয়ার জন্য আমাদের বিখ্যাত হওয়ার প্রয়োজন নেই