সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আপনি কি জিজ্ঞেস করেন, “যিহোবা কোথায়?”

আপনি কি জিজ্ঞেস করেন, “যিহোবা কোথায়?”

আপনি কি জিজ্ঞেস করেন, “যিহোবা কোথায়?”

“তাহারা আমা হইতে দূরে গিয়াছে, . . . তাহারা বলে নাই যে, সেই সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] কোথায়?”—যিরমিয় ২:৫, ৬.

১. লোকেরা যখন জিজ্ঞেস করে যে, “ঈশ্বর কোথায়?,” তখন তাদের মনে হয়তো কী থাকতে পারে?

 “ঈশ্বর কোথায়?” অনেক লোক এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে থাকে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে শুধু এক মৌলিক বিষয় বোঝার চেষ্টা করে যেমন, তিনি কোথায় থাকেন? আবার অন্যেরা ব্যাপক দুর্দশার পর বা ব্যক্তিগতভাবে নিজেরা যখন প্রচণ্ড চাপের মধ্যে থাকে এবং বুঝতে পারে না যে, কেন ঈশ্বর কোনো হস্তক্ষেপ করেন না, তখন এই প্রশ্ন করে থাকে। কিন্তু, এমনও অনেকে আছে, যারা আদৌ কিছু জানতে চায় না কারণ তারা ঈশ্বরের অস্তিত্বেই বিশ্বাস করে না।—গীতসংহিতা ১০:৪.

২. কারা ঈশ্বরকে অন্বেষণ করায় সফল হয়েছে?

অবশ্য, এমন অনেকে রয়েছে, যারা ঈশ্বর বলে যে কেউ একজন আছেন, সেই বিষয়ে প্রচুর প্রমাণ সম্বন্ধে স্বীকার করে। (গীতসংহিতা ১৯:১; ১০৪:২৪) এদের মধ্যে কেউ কেউ শুধু কোনো একটা ধর্মের মধ্যে থাকতে পেরেই পরিতৃপ্ত। কিন্তু, সত্যের প্রতি গভীর প্রেম সমস্ত দেশের অন্যান্য লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিকে সত্য ঈশ্বরকে অন্বেষণ করতে অনুপ্রাণিত করেছে। তাদের প্রচেষ্টা বৃথা হয়নি কারণ তিনি “আমাদের কাহারও হইতে দূরে নহেন।”—প্রেরিত ১৭:২৬-২৮.

৩. (ক) ঈশ্বরের নিবাস স্থান কোথায়? (খ) “যিহোবা কোথায়?,” এই শাস্ত্রীয় প্রশ্ন কোন অর্থ প্রকাশ করে?

একজন ব্যক্তি যখন সত্যিই যিহোবাকে খুঁজে পান, তখন তিনি বুঝতে পারেন যে, “ঈশ্বর আত্মা,” মানুষের চোখে অদৃশ্য। (যোহন ৪:২৪) যিশু সত্য ঈশ্বরকে ‘আমার স্বর্গস্থ পিতা’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) এর অর্থ কী? আধ্যাত্মিক অর্থে এর অর্থ হল, আমাদের স্বর্গীয় পিতা যে-রাজ্যে বাস করেন, সেটা অনেক উচ্চ, ঠিক যেমন আকাশমণ্ডল পৃথিবী থেকে অনেক অনেক উপরে। (মথি ১২:৫০; যিশাইয় ৬৩:১৫) যদিও আমরা আমাদের মাংসিক চোখ দিয়ে ঈশ্বরকে দেখতে পারি না কিন্তু তিনি আমাদের জন্য তাঁকে জানা এবং তাঁর উদ্দেশ্যগুলো সম্বন্ধে শেখা সম্ভবপর করেছেন। (যাত্রাপুস্তক ৩৩:২০; ৩৪:৬, ৭, NW) যে-আন্তরিক লোকেরা জীবনের অর্থ জানতে চায়, তাদের জিজ্ঞাস্য প্রশ্নের উত্তর তিনি দিয়ে থাকেন। যে-বিষয়গুলো আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করে, সেগুলো সম্বন্ধে তিনি এক নির্ভরযোগ্য ভিত্তি জুগিয়েছেন, যাতে আমরা তাঁর অবস্থান যেমন, এইধরনের বিষয়গুলোকে তিনি কোন দৃষ্টিতে দেখেন এবং আমাদের ইচ্ছাগুলো তাঁর উদ্দেশ্যগুলোর সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কি না, তা বুঝতে পারি। তিনি চান যাতে এইধরনের বিষয়গুলো সম্বন্ধে আমরা অনুসন্ধান করি এবং উত্তরগুলো খোঁজার জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা করি। ভাববাদী যিরমিয়ের মাধ্যমে যিহোবা প্রাচীন ইস্রায়েলের লোকেদের তিরস্কার করেছিলেন কারণ তারা তা করতে ব্যর্থ হয়েছিল। তারা ঈশ্বরের নাম জানত কিন্তু তারা জিজ্ঞেস করেনি, “যিহোবা কোথায়?” (যিরমিয় ২:৬) যিহোবার উদ্দেশ্য তাদের মূল চিন্তার বিষয় ছিল না। তারা তাঁর নির্দেশনা খোঁজেনি। ছোট এবং বড়, যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় কি আপনি জিজ্ঞেস করেন, “যিহোবা কোথায়?”

যারা ঈশ্বরের কাছে জিজ্ঞেস করেছে

৪. যিহোবার কাছে জিজ্ঞেস করার বিষয়ে দায়ূদের উদাহরণ থেকে আমরা কীভাবে উপকার পেতে পারি?

যিশয়ের পুত্র দায়ূদ যুবক বয়সেই যিহোবার ওপর দৃঢ় বিশ্বাস গড়ে তুলেছিলেন। তিনি যিহোবাকে ‘জীবন্ত ঈশ্বর’ বলে জানতেন। দায়ূদ ব্যক্তিগতভাবে যিহোবার সুরক্ষা পেয়েছিলেন। ‘সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] নামের’ প্রতি বিশ্বাস এবং প্রেমের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে দায়ূদ ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পলেষ্টীয় দৈত্যাকৃতি গলিয়াৎকে হত্যা করেছিলেন। (১ শমূয়েল ১৭:২৬, ৩৪-৫১) কিন্তু, দায়ূদের সফলতা তাকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলেনি। তিনি এইরকম যুক্তি করেননি যে, এখন তিনি যা কিছুই করুন না কেন, যিহোবা তাকে আশীর্বাদ করবেন। এর পরের বছরগুলোতে বিভিন্ন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হওয়ার সময় দায়ূদ বার বার যিহোবার কাছে জিজ্ঞেস করেছিলেন। (১ শমূয়েল ২৩:২; ৩০:৮; ২ শমূয়েল ২:১; ৫:১৯) তিনি অবিরত প্রার্থনা করতেন: “সদাপ্রভু, তোমার পথ সকল আমাকে জ্ঞাত কর; তোমার পন্থা সকল আমাকে বুঝাইয়া দেও। তোমার সত্যে আমাকে চালাও, আমাকে শিক্ষা দেও, কেননা তুমিই আমার ত্রাণেশ্বর; আমি সমস্ত দিন তোমার অপেক্ষায় থাকি।” (গীতসংহিতা ২৫:৪, ৫) আমাদের জন্য অনুসরণ করার মতো কতই না উত্তম এক উদাহরণ!

৫, ৬. যিহোশাফট তার জীবনের বিভিন্ন সময়ে কীভাবে যিহোবার অন্বেষণ করেছিলেন?

দায়ূদের রাজকীয় বংশের পঞ্চম রাজা যিহোশাফটের দিনে, তিন জাতির সেনাবাহিনী একত্রে যিহূদার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসে। জাতিগত এই সংকটের মুখোমুখি হয়ে যিহোশাফট “সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] অন্বেষণ করিতে প্রবৃত্ত হইলেন।” (২ বংশাবলি ২০:১-৩) যিহোশাফট এই প্রথমবারের মতোই যিহোবার অন্বেষণ করেননি। রাজা, ইস্রায়েলের ধর্মভ্রষ্ট উত্তর রাজ্যে ব্যাপকভাবে ছেয়ে যাওয়া বাল উপাসনা পরিহার করেছিলেন এবং যিহোবার পথে চলা বেছে নিয়েছিলেন। (২ বংশাবলি ১৭:৩, ৪) তা হলে, যিহোশাফট যখন এই সংকটের সম্মুখীন হয়েছিলেন, তখন তিনি কীভাবে “যিহোবার অন্বেষণ” করেছিলেন?

এই সংকটময় সময়ে যিরূশালেমে সকলের সামনে করা প্রার্থনায় যিহোশাফট দেখিয়েছিলেন যে, যিহোবার অসীম ক্ষমতার কথা তার মনে আছে। তিনি যিহোবার উদ্দেশ্য সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা করেছিলেন, যা অন্যান্য জাতিকে বিতাড়িত করার এবং উত্তরাধিকারী হিসেবে ইস্রায়েলীয়দের একটি নির্দিষ্ট ভূমি দেওয়ার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছিল। রাজা যিহোবার সাহায্যের প্রয়োজন সম্বন্ধে স্বীকার করেছিলেন। (২ বংশাবলি ২০:৬-১২) সেই সময়ে যিহোবা কি তাঁর উদ্দেশ পেতে দিয়েছিলেন? হ্যাঁ, অবশ্যই দিয়েছিলেন। যহসীয়েল নামে এক জন লেবীয়ের মাধ্যমে যিহোবা নির্দিষ্ট নির্দেশনা জুগিয়েছিলেন এবং পরের দিন তাঁর লোকেদের জন্য বিজয় এনে দিয়েছিলেন। (২ বংশাবলি ২০:১৪-২৮) আপনি কীভাবে নিশ্চিত হতে পারেন যে, আপনি যখন যিহোবার কাছে নির্দেশনা চাইবেন, তখন তিনি আপনাকেও তাঁর উদ্দেশ পেতে দেবেন?

৭. ঈশ্বর কাদের প্রার্থনা শোনেন?

যিহোবা পক্ষপাতিত্ব করেন না। তিনি প্রার্থনায় তাঁকে খোঁজার জন্য সমস্ত জাতির লোকেদের আমন্ত্রণ জানান। (গীতসংহিতা ৬৫:২; প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫, NW) যারা তাঁর কাছে বিনতি করে, তাদের হৃদয়ের অবস্থা সম্বন্ধে তিনি অবগত আছেন। তিনি আমাদের নিশ্চয়তা দেন যে, ধার্মিক ব্যক্তিদের প্রার্থনা তিনি শোনেন। (হিতোপদেশ ১৫:২৯) তিনি সেই সমস্ত ব্যক্তিদের তাঁর উদ্দেশ পেতে দেন, যারা আগে তাঁর প্রতি কোনো আগ্রহ দেখায়নি কিন্তু এখন নম্রভাবে তাঁর নির্দেশনা খোঁজে। (যিশাইয় ৬৫:১) তিনি এমনকি তাদের প্রার্থনাও শোনেন, যারা তাঁর আইন পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে কিন্তু এখন নম্রভাবে অনুতপ্ত হয়েছে। (গীতসংহিতা ৩২:৫, ৬; প্রেরিত ৩:১৯, ২০) কিন্তু, একজন ব্যক্তির হৃদয় যখন ঈশ্বরের প্রতি বশীভূত হয় না, তখন সেই ব্যক্তির প্রার্থনা নিষ্ফল হয়। (মার্ক ৭:৬, ৭) কিছু উদাহরণ বিবেচনা করুন।

তারা প্রার্থনা করেছিল কিন্তু কোনো উত্তর পায়নি

৮. কীসের জন্য রাজা শৌলের প্রার্থনা যিহোবার কাছে অগ্রাহ্য হয়েছিল?

তার অবাধ্যতার জন্য ঈশ্বর তাকে পরিত্যাগ করেছেন, ভাববাদী শমূয়েল রাজা শৌলকে এই কথা বলার পর, শৌল যিহোবার কাছে প্রণিপাত করেছিলেন। (১ শমূয়েল ১৫:৩০, ৩১) কিন্তু, সেটা ছিল লোকদেখানো মাত্র। শৌলের ইচ্ছা ছিল, ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য থাকা নয় কিন্তু লোকেদের সামনে সম্মানিত হওয়া। পরবর্তী সময়ে, পলেষ্টীয়রা যখন ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসে, তখন শৌল দায়সারাভাবে যিহোবাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। কিন্তু কোনো উত্তর না পেয়ে তিনি একজন ভূতুড়িয়ার সঙ্গে পরামর্শ করেছিলেন, যদিও তিনি জানতেন যে যিহোবার কাছে তা নিন্দনীয়। (দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১০-১২; ১ শমূয়েল ২৮:৬, ৭) সংক্ষেপে, ১ বংশাবলি ১০:১৪ পদ শৌল সম্বন্ধে বলে যে তিনি: “সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] কাছে অনুসন্ধান করেন নাই।” কেন তা বলা যায়? কারণ শৌলের প্রার্থনা বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে ছিল না। তাই, এটা এমন ছিল যেন তিনি কোনো প্রার্থনাই করেননি।

৯. যিহোবার নির্দেশনার জন্য সিদিকিয়ের অনুরোধের মধ্যে ভুল কী ছিল?

একইভাবে, যিহূদা রাজ্যের শেষ যখন এগিয়ে আসতে থাকে, তখন অনেক প্রার্থনা এবং যিহোবার ভাববাদীদের মধ্যে পরামর্শ করা হয়। কিন্তু, লোকেরা যিহোবার প্রতি নামেমাত্র সশ্রদ্ধ ভয়ের সঙ্গে প্রতিমাপূজাকে মিশ্রিত করছিল। (সফনিয় ১:৪-৬) যদিও তারা দায়সারাভাবে ঈশ্বরকে জিজ্ঞেস করেছিল কিন্তু তারা তাঁর ইচ্ছার প্রতি বশীভূত হওয়ার জন্য তাদের হৃদয়কে তৈরি করেনি। রাজা সিদিকিয় যিরমিয়কে অনুরোধ করেছিলেন যেন তিনি তার হয়ে যিহোবাকে জিজ্ঞেস করেন। যিহোবা ইতিমধ্যেই রাজাকে বলে দিয়েছিলেন যে, তাকে কী করতে হবে। কিন্তু, বিশ্বাসের অভাবে ও লোকভয়ে রাজা যিহোবার কথা শোনেননি এবং যিহোবাও তাকে আর কোনো উত্তর দেননি, যা হয়তো রাজার মনঃপুত হবে।—যিরমিয় ২১:১-১২; ৩৮:১৪-১৯.

১০. যোহানন যেভাবে যিহোবার নির্দেশনা খুঁজেছিলেন, তাতে ভুল কী ছিল এবং তার ভুল থেকে আমরা কী শিখি?

১০ যিরূশালেম ধ্বংস হয়ে যাওয়ার এবং বাবিলনীয় সেনাবাহিনী বন্দি যিহুদিদের নিয়ে চলে যাওয়ার পর, যোহানন যিহূদার অবশিষ্ট একটি ছোট্ট যিহুদি দলকে মিশরে নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি হন। তাদের পরিকল্পনা করা হয়ে গিয়েছিল কিন্তু চলে যাওয়ার আগে তারা যিরমিয়কে তাদের হয়ে প্রার্থনা করতে এবং যিহোবার কাছ থেকে নির্দেশনা চাইতে অনুরোধ করে। কিন্তু, তারা যখন তাদের মনমতো উত্তর পায়নি, তখন তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যায় এবং কাজ করে। (যিরমিয় ৪১:১৬–৪৩:৭) আপনি কি এই ঘটনাগুলোর মধ্যে শিক্ষাসমূহ দেখতে পান, যেগুলো আপনার উপকার করতে পারে, যাতে আপনি যখন যিহোবার শ্রীমুখের অন্বেষণ করেন, তখন তিনি আপনাকে তাঁর উদ্দেশ পেতে দেবেন?

“পরীক্ষা কর”

১১. কেন আমাদের ইফিষীয় ৫:১০ পদ কাজে লাগানো প্রয়োজন?

১১ সত্য উপাসনার সঙ্গে শুধু জলে নিমজ্জিত হয়ে আমাদের উৎসর্গীকরণের চিহ্ন প্রকাশ করার, মণ্ডলীর সভাগুলোতে যোগ দেওয়ার এবং জনসাধারণ্যে পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করার চেয়ে আরও বেশি কিছু জড়িত। এর সঙ্গে আমাদের সম্পূর্ণ জীবনযাপনের ধরনও জড়িত। প্রতিদিন আমরা অনেক চাপের মুখোমুখি হই—কিছু সূক্ষ্ণ, কিছু একেবারে স্পষ্ট—যেগুলো আমাদের ঈশ্বরীয় ভক্তির পথ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এগুলোর প্রতি আমরা কেমন মনোভাব দেখাব? ইফিষের বিশ্বস্ত খ্রিস্টানদের কাছে লেখার সময় প্রেরিত পৌল তাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “প্রভুর প্রীতিজনক কি, তাহার পরীক্ষা কর।” (ইফিষীয় ৫:১০) এটা করা যে বিজ্ঞের কাজ তা শাস্ত্রে বর্ণিত বিভিন্ন পরিস্থিতির মাধ্যমে দেখানো হয়েছে।

১২. দায়ূদ যখন নিয়ম-সিন্দুক যিরূশালেমে সরিয়ে নিয়ে আসতে যাচ্ছিলেন, তখন যিহোবা কেন অখুশি হয়েছিলেন?

১২ ইস্রায়েলে নিয়ম-সিন্দুক ফিরিয়ে নিয়ে আসার এবং সেটি অনেক বছর কিরিয়ৎ-যিয়ারীমে রাখার পর, রাজা দায়ূদ সেটি যিরূশালেমে স্থানান্তরিত করতে চান। তিনি অধ্যক্ষদের সঙ্গে আলোচনা করেন এবং বলেন যে, ‘যদি তাহাদের বিহিত বোধ হয়, ও সদাপ্রভু হইতে এ কার্য্য হইয়া থাকে,’ তা হলে সিন্দুক সরানো হবে। কিন্তু, এই বিষয়ে যিহোবার ইচ্ছা সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট অনুসন্ধান করাকে তিনি অবহেলা করেন। তিনি যদি তা করতেন, তা হলে সিন্দুক কখনোই শকটের মধ্যে উঠাতেন না। এটি কহাতীয় লেবীয়দের তাদের কাঁধে বহন করার কথা ছিল, ঠিক যেমন ঈশ্বর স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন। যদিও দায়ূদ সবসময় যিহোবাকে জিজ্ঞেস করতেন কিন্তু সেই সময় তিনি তা সঠিকভাবে করেননি। এর ফল হয়েছিল অমঙ্গলজনক। দায়ূদ পরে স্বীকার করেছিলেন: “আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু আমাদিগকে আক্রমণ করিলেন, কারণ আমরা বিধিমতে তাঁহার অন্বেষণ করি নাই।”—১ বংশাবলি ১৩:১-৩; ১৫:১১-১৩; গণনাপুস্তক ৪:৪-৬, ১৫; ৭:১-৯.

১৩. সিন্দুক সফলতার সঙ্গে সরানোর পরে যে-গান গাওয়া হয়েছিল, সেটার মধ্যে কোন কথাগুলো মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল?

১৩ অবশেষে লেবীয়রা যখন ওবেদ-ইদোমের বাড়ি থেকে সিন্দুক বহন করে যিরূশালেমে নিয়ে এসেছিল, তখন দায়ূদের দ্বারা রচিত একটি গান গাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে এই আন্তরিক কথাগুলোও মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল: “সদাপ্রভুর ও তাঁহার শক্তির অনুসন্ধান কর, নিয়ত তাঁহার শ্রীমুখের অন্বেষণ কর। স্মরণ কর তাঁহার কৃত আশ্চর্য্য কর্ম্ম সকল, তাঁহার অদ্ভুত লক্ষণ ও তাঁহার মুখের শাসন সকল।”—১ বংশাবলি ১৬:১১, ১২.

১৪. শলোমনের ভাল উদাহরণ এবং পরবর্তী জীবনে তার ভুলগুলো থেকে আমরা কীভাবে উপকৃত হতে পারি?

১৪ দায়ূদ তার মৃত্যুর আগে, তার ছেলে শলোমনকে পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তুমি যদি [যিহোবার] অন্বেষণ কর, তবে তিনি তোমাকে আপনার উদ্দেশ পাইতে দিবেন।” (১ বংশাবলি ২৮:৯) রাজত্ব গ্রহণ করার পর শলোমন গিবিয়োনে যান, যেখানে সমাগম-তাম্বু ছিল এবং যিহোবার কাছে বলি উৎসর্গ করা হয়েছিল। সেখানে যিহোবা শলোমনকে আমন্ত্রণ জানান: “যাচ্ঞা কর, আমি তোমাকে কি দিব?” শলোমনের অনুরোধের উত্তরে যিহোবা উদারভাবে তাকে ইস্রায়েলে বিচার করার জন্য প্রজ্ঞা এবং জ্ঞান দিয়েছিলেন ও সেইসঙ্গে ধনসম্পদ এবং সম্মানও দিয়েছিলেন। (২ বংশাবলি ১:৩-১২) দায়ূদকে দেওয়া যিহোবার নির্মাণকৌশলের পরিকল্পনা অনুযায়ী শলোমন এক চমৎকার মন্দির তৈরি করেন। কিন্তু, নিজের বৈবাহিক বিষয়গুলোতে শলোমন যিহোবার কাছে অন্বেষণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। শলোমন এমন মহিলাদের বিয়ে করেছিলেন, যারা যিহোবার উপাসক ছিল না। পরবর্তী বছরগুলোতে তারা যিহোবার কাছ থেকে তার হৃদয়কে দূরে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। (১ রাজাবলি ১১:১-১০) আমাদের যত বিশিষ্ট, বিজ্ঞ বা জ্ঞানী বলেই মনে হোক না কেন, ‘প্রভুর প্রীতিজনক কি, তাহার পরীক্ষা করা’ গুরুত্বপূর্ণ!

১৫. কূশীয় সেরহ যখন যিহূদার বিরুদ্ধে আসে, তখন আসা কেন আস্থা সহকারে প্রার্থনা করতে পেরেছিলেন, যাতে যিহোবা যিহূদাকে রক্ষা করেন?

১৫ এটা করার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে শলোমনের প্রপৌত্র রাজা আসার বিবরণের মাধ্যমে আরও জোর দেওয়া হয়। আসা রাজা হওয়ার এগারো বছর পর, সেরহ নামে একজন কূশীয় ব্যক্তি দশ লক্ষ সেনাকে যিহূদার বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। যিহোবা কি যিহূদাকে রক্ষা করেছিলেন? ৫০০ বছরেরও বেশি আগে যিহোবা স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছিলেন যে, তারা যদি তাঁর কথা শোনে এবং তাঁর আজ্ঞাসকল পালন করে, তা হলে তারা কী আশা করতে পারে এবং যদি সেইমতো না করে, তা হলে কী আশা করতে পারে। (দ্বিতীয় বিবরণ ২৮:১, ৭, ১৫, ২৫) তার রাজত্বের শুরুতেই আসা তার রাজ্য থেকে মিথ্যা উপাসনার জন্য ব্যবহৃত বেদি এবং স্তম্ভ সরিয়ে ফেলেছিলেন। তিনি লোকেদের “সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] অন্বেষণ . . . করিতে” পরামর্শ দিয়েছিলেন। আর বিপর্যয়ের সঙ্গে মোকাবিলা করার আগেই আসা তা করেছিলেন। তাই, যিহোবার ওপর বিশ্বাস নিয়ে আসা তাদের হয়ে কাজ করার জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা করতে পেরেছিলেন। এর ফল কী হয়েছিল? যিহূদার পক্ষে এক উল্লেখযোগ্য বিজয় নিয়ে আসা হয়েছিল।—২ বংশাবলি ১৪:২-১২.

১৬, ১৭. (ক) যদিও আসা জয়ী হয়েছিলেন, তবুও যিহোবা তাকে কী মনে করিয়ে দিয়েছিলেন? (খ) আসা যখন মূর্খের মতো কাজ করেছিলেন, তখন তাকে কোন সাহায্য দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? (গ) আসার আচরণ বিবেচনা করে আমরা কীভাবে উপকৃত হতে পারি?

১৬ তবুও আসা যখন জয়ী হয়ে ফিরে আসেন, তখন যিহোবা অসরিয়কে রাজার সঙ্গে দেখা করার ও এই বলার জন্য পাঠান: “হে আসা, এবং হে যিহূদার ও বিন্যামীনের সমস্ত লোক, তোমরা আমার বাক্য শুন; তোমরা যতদিন সদাপ্রভুর সঙ্গে থাক, ততদিন তিনিও তোমাদের সঙ্গে আছেন; আর যদি তোমরা তাঁহার অন্বেষণ কর, তবে তিনি তোমাদিগকে তাঁহার উদ্দেশ পাইতে দিবেন; কিন্তু যদি তাঁহাকে ত্যাগ কর, তবে তিনি তোমাদিগকে ত্যাগ করিবেন।” (২ বংশাবলি ১৫:২) নব উদ্যোগে আসা সত্য উপাসনা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু, ২৪ বছর পর, যখন আবারও যুদ্ধের মুখোমুখি হন, তখন আসা যিহোবার অন্বেষণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তিনি ঈশ্বরের বাক্য থেকে পরামর্শ নেননি আর তাই কূশীয় সেনাবাহিনী যখন যিহূদা আক্রমণ করতে এসেছিল, তখন যিহোবা কী করেছিলেন, সেই বিষয়ে তিনি ভুলে গিয়েছিলেন। মূর্খের মতো তিনি সিরিয়ার সঙ্গে মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।—২ বংশাবলি ১৬:১-৬.

১৭ এই কারণে যিহোবা দর্শক হনানিকে দিয়ে আসাকে তিরস্কার করেন। এমনকি সেই সময়েও, বিষয়টা সম্বন্ধে যখন যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করা হয়েছিল তখনও আসা উপকৃত হতে পারতেন। এর পরিবর্তে, তিনি রেগে যান এবং হনানিকে কারাগারে রাখেন। (২ বংশাবলি ১৬:৭-১০) কতই না দুঃখজনক! আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? আমরা কি ঈশ্বরের অন্বেষণ করি কিন্তু এর পর তাঁর পরামর্শ মেনে নিতে অসম্মত হই? যখন জগতের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে থাকি বলে কোনো চিন্তাশীল এবং যত্নশীল প্রাচীন আমাদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য বাইবেল ব্যবহার করেন, তখন আমরা কি “প্রভুর প্রীতিজনক কি,” তা জানার জন্য আমাদের যে-প্রেমময় সাহায্য দেওয়ার হয়েছে, সেটার প্রতি উপলব্ধি দেখাই?

জিজ্ঞেস করতে ভুলে যাবেন না

১৮. ইয়োবের প্রতি বলা ইলীহূর কথাগুলো থেকে আমরা কীভাবে উপকার পেতে পারি?

১৮ কঠিন চাপের মুখে, এমনকি যে-ব্যক্তি যিহোবার সেবায় এক উত্তম নথি গড়ে তুলেছেন, তিনিও হয়তো ভুল করতে পারেন। ইয়োব যখন জঘন্য রোগের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিলেন, তার ছেলেমেয়ে ও বস্তুগত সম্পদ হারিয়েছিলেন এবং তার সঙ্গীদের দ্বারা মিথ্যাভাবে অভিযুক্ত হয়েছিলেন, তখন তিনি নিজেকে নিয়ে বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। ইলীহূ তাকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন: “কেহ বলে না, আমার নির্ম্মাতা ঈশ্বর কোথায়?” (ইয়োব ৩৫:১০) ইয়োবের যিহোবার দিকে মনোযোগ ফিরিয়ে আনার এবং তিনি পরিস্থিতিকে কীভাবে দেখেন, সেই বিষয়ে বিবেচনা করার প্রয়োজন ছিল। ইয়োব মনে করিয়ে দেওয়া সেই কথাগুলো নম্রভাবে গ্রহণ করেছিলেন এবং তার উদাহরণ আমাদেরও তাই করতে সাহায্য করতে পারে।

১৯. ইস্রায়েলের লোকেরা প্রায়ই কী করতে ব্যর্থ হয়েছিল?

১৯ ইস্রায়েলের লোকেরা তাদের জাতির সঙ্গে ঈশ্বরের আচরণের বিবরণ সম্বন্ধে জানত। কিন্তু, প্রায়ই তারা তাদের জীবনের নির্দিষ্ট পরিস্থিতিগুলোর সঙ্গে মোকাবিলার করার সময় সেগুলো ভুলে যেত। (যিরমিয় ২:৫, ৬, ৮) জীবনে সিদ্ধান্তগুলোর মুখোমুখি হলে তারা “যিহোবা কোথায়?” এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার পরিবর্তে বরং, তাদের নিজেদের অভিলাষের পিছনে ছুটত।—যিশাইয় ৫:১১, ১২.

জিজ্ঞেস করে চলুন, “যিহোবা কোথায়?”

২০, ২১. (ক) আজকে কারা যিহোবার নির্দেশনা খোঁজার জন্য ইলীশায়ের মতো মনোভাব দেখিয়েছে? (খ) তাদের বিশ্বাসের উদাহরণ আমরা কীভাবে অনুকরণ করতে এবং তা থেকে উপকৃত হতে পারি?

২০ এলিয়ের জনসাধারণ্যে পরিচর্যা যখন শেষ হয়ে এসেছিল, তখন তার অনুগামী ইলীশায় এলিয়ের কাছ থেকে পতিত শাল তুলে নিয়েছিলেন এবং যর্দন নদীতে গিয়ে জলে আঘাত করে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “এলিয়ের ঈশ্বর সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] কোথায়?” (২ রাজাবলি ২:১৪) যিহোবা উত্তর দিয়েছিলেন এটা দেখানোর মাধ্যমে যে, তাঁর আত্মা এখন থেকে ইলীশায়ের ওপর রয়েছে। এর থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

২১ আধুনিক সময়েও, একইরকম বিষয় ঘটেছে। কিছু অভিষিক্ত ব্যক্তি, যারা প্রচার কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিল, তারা মারা গেছে। যাদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়, তারা শাস্ত্র পরীক্ষা করে এবং নির্দেশনার জন্য যিহোবার কাছে প্রার্থনা করে। তারা জিজ্ঞেস করতে ব্যর্থ হয়নি যে, “যিহোবা কোথায়?” ফলে, যিহোবা ক্রমাগত তাঁর লোকেদের পরিচালনা এবং তাদের কাজে বৃদ্ধি দিয়ে চলেছেন। আমরা কি তাদের বিশ্বাস অনুকরণ করি? (ইব্রীয় ১৩:৭) যদি করি, তা হলে আমরা যিহোবার সংগঠনের সঙ্গে সঙ্গে থাকব, এর নির্দেশনায় সাড়া দেব এবং যিশু খ্রিস্টের নির্দেশনায় এটি যে-কাজ করছে, তাতে পূর্ণরূপে অংশগ্রহণ করব।—সখরিয় ৮:২৩.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• কোন উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের জিজ্ঞেস করা উচিত যে, “যিহোবা কোথায়?”

• আজকে কীভাবে আমরা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে পারি যে, “যিহোবা কোথায়?”

• ঐশিক নির্দেশনার জন্য করা কিছু প্রার্থনার উত্তর কেন পাওয়া যায়নি?

• বাইবেলের কোন উদাহরণগুলো ‘প্রভুর ইচ্ছা কি, তাহা পরীক্ষা করিবার’ প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে তুলে ধরে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

রাজা যিহোশাফট কীভাবে যিহোবার অন্বেষণ করেছিলেন?

[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]

শৌল কেন একজন ভূতুড়িয়ার সঙ্গে পরামর্শ করেছিলেন?

[১২ পৃষ্ঠার চিত্র]

‘যিহোবা কোথায়,’ সেই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রার্থনা, অধ্যয়ন এবং ধ্যান করুন