সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আগের ও পরের জীবন কুখ্যাত অতীত, উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ

আগের ও পরের জীবন কুখ্যাত অতীত, উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ

“ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও, তাহাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন”

আগের ও পরের জীবন কুখ্যাত অতীত, উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ

 “ঈশ্বরের বাক্য জীবন্ত ও কার্য্যসাধক, এবং সমস্ত দ্বিধার খড়গ অপেক্ষা তীক্ষ্ণ, . . . এবং হৃদয়ের চিন্তা ও বিবেচনার সূক্ষ্ম বিচারক।” (ইব্রীয় ৪:১২) প্রেরিত পৌল ঈশ্বরের বার্তার প্রচণ্ড ক্ষমতা সম্বন্ধে এভাবেই বলেছিলেন। এটির হৃদয়ে পৌঁছানোর যে-ক্ষমতা রয়েছে, তা বিশেষ করে সা.কা. প্রথম শতাব্দীতে প্রমাণিত হয়েছিল। সেই সময়ের খারাপ প্রভাব থাকা সত্ত্বেও যারা খ্রিস্টান হয়েছিল, তারা নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করেছিল।—রোমীয় ১:২৮, ২৯; কলসীয় ৩:৮-১০.

বাইবেলে যেমন বলা হয়েছে যে, ঈশ্বরের বাক্যের পরিবর্তন করার ক্ষমতা আজও স্পষ্ট। উদাহরণ হিসেবে, রিখার্ট নামে একজন লম্বা, বলিষ্ঠ ব্যক্তির কথা বিবেচনা করুন। বদমেজাজি হওয়ায় রিখার্ট সামান্য উত্তেজিত হলেই মারামারি করতেন। তার জীবন দৌরাত্ম্যের কারণে প্রচণ্ডভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। রিখার্ট এমনকি বক্সিং ক্লাবেও যোগ দিয়েছিলেন। তিনি কঠোর প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন এবং জার্মানির ওয়েস্টফেলিয়ায় হেভিওয়েট বক্সিং চ্যাপ্মিয়ন হয়েছিলেন। এ ছাড়া, রিখার্ট অনেক মদ খেতেন এবং প্রায়ই ঝগড়াঝাঁটিতে জড়িয়ে পড়তেন। এইরকম এক পরিস্থিতিতে একজন মারা যায় এবং রিখার্ট প্রায় জেলে যেতে বসেন।

রিখার্টের বৈবাহিক জীবন সম্বন্ধে কী বলা যায়? “হাইকি এবং আমি বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করার আগে” রিখার্ট মনে করে বলেন, “আমরা যার যার মতো করে জীবনযাপন করতাম। হাইকি তার বান্ধবীদের সঙ্গে প্রচুর সময় কাটাত আর আমি আমার শখগুলোতে ডুবে থাকতাম—মূলত বক্সিং, সারফিং এবং ডাইভিং।”

রিখার্ট এবং হাইকি যখন যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে শুরু করে, তখন রিখার্ট ঈশ্বরের বাক্যে দেওয়া উচ্চমানগুলো অনুসারে জীবনযাপন করার ব্যাপারে অসম্ভাব্য পরিবর্তনগুলো করার কথা চিন্তা করে অসহায় বোধ করেন। কিন্তু, রিখার্ট যখন যিহোবা ঈশ্বর সম্বন্ধে আরও ভালভাবে জানেন, তখন তাঁকে খুশি করার এক আকুল আকাঙ্ক্ষা তিনি গড়ে তোলেন। রিখার্ট বুঝতে পারেন যে, ঈশ্বর দৌরাত্ম্যপ্রিয় লোকেদের বা যারা সেটাকে আমোদপ্রমোদের জন্য ব্যবহার করে থাকে, তাদের অনুমোদন করেন না। রিখার্ট শেখেন, “দৌরাত্ম্যপ্রিয় লোক [যিহোবার] প্রাণের ঘৃণাস্পদ।”—গীতসংহিতা ১১:৫.

এ ছাড়া, এক পরমদেশ পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার আশা রিখার্ট এবং হাইকি উভয়কে চমৎকৃত করেছিল। তারা সেখানে একসঙ্গে থাকতে চেয়েছিল! (যিশাইয় ৬৫:২১-২৩) “ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হও, তাহাতে তিনিও তোমাদের নিকটবর্ত্তী হইবেন,” এই আমন্ত্রণ রিখার্টের হৃদয় স্পর্শ করেছিল। (যাকোব ৪:৮) তিনি অনুপ্রাণিত এই পরামর্শে মনোযোগ দেওয়ার মূল্য বুঝতে পেরেছিলেন: “উপদ্রবীর প্রতি ঈর্ষা করিও না, আর তাহার কোন পথ মনোনীত করিও না; কেননা খল সদাপ্রভুর ঘৃণার পাত্র; কিন্তু সরলগণের সহিত তাঁহার গূঢ় মন্ত্রণা।”—হিতোপদেশ ৩:৩১, ৩২.

তার জীবনযাপনের ধরন ত্যাগ করার দৃঢ় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও রিখার্ট বুঝতে পারেন যে, তিনি তার নিজের শক্তিতে তা করতে পারবেন না। তিনি প্রার্থনায় ঈশ্বরের সাহায্য চাওয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তাই, তিনি যিশুর প্রেরিতদের কাছে বলা তাঁর কথাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে কাজ করেন: “প্রার্থনা কর, যেন পরীক্ষায় না পড়; আত্মা ইচ্ছুক বটে, কিন্তু মাংস দুর্ব্বল।”—মথি ২৬:৪১.

দৌরাত্ম্য এবং রাগকে ঈশ্বর কোন দৃষ্টিতে দেখেন, তা জানার পর রিখার্টের মনে আর কোনো সন্দেহ ছিল না যে, বক্সিং কোনো গ্রহণযোগ্য খেলা নয়। যিহোবার কাছ থেকে সাহায্য পেয়ে এবং যারা তার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করত, তাদের উৎসাহে রিখার্ট দৌরাত্ম্যে জড়িত হওয়া বন্ধ করে দেন। তিনি বক্সিং এবং ঝগড়াঝাঁটি করা ছেড়ে দেন এবং তার পারিবারিক জীবনযাপনে উন্নতি করার সিদ্ধান্ত নেন। “বাইবেল থেকে সত্য শেখা আমাকে কিছু করার আগে একটু থেমে ভেবে দেখতে সাহায্য করেছে,” রিখার্ট বলেন, যিনি এখন যিহোবার সাক্ষিদের মণ্ডলীগুলোর একটাতে একজন মৃদুশীল অধ্যক্ষ। তিনি আরও বলেন: “প্রেম এবং সম্মানের নীতিগুলো এখন আমাকে আমার স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে আচরণ করতে পরিচালিত করে। এর ফলে আমার পরিবার একে অপরের নিকটবর্তী হতে পেরেছে।”

ভুল তথ্য পাওয়া লোকেরা মাঝে মাঝে যিহোবার সাক্ষিদেরকে পরিবারে ভাঙন সৃষ্টি করার দোষে অভিযুক্ত করে। কিন্তু ব্যক্তিবিশেষের, যেমন রিখার্টের উদাহরণ তাদের দাবিকে মিথ্যা বলে প্রমাণিত করে। বাস্তবে, যাদের এক কুখ্যাত অতীত ছিল, বাইবেলের সত্য তাদের জন্য পারিবারিক স্থায়ীত্ব এবং এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিয়ে আসতে পারে।—যিরমিয় ২৯:১১.

[৯ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]

“এক পরমদেশ পৃথিবীর আশা আমাকে পরিবর্তিত হওয়ার প্রেরণা জুগিয়েছে”

[৯ পৃষ্ঠার বাক্স]

বাইবেলের নীতিগুলো কার্যরত

লোকেদের জীবনে বাইবেল এক জোরালো প্রভাব ফেলতে পারে। এখানে কিছু শাস্ত্রীয় নীতি দেওয়া হল, যা দৌরাত্ম্যপূর্ণ লোকেদের পরিবর্তিত হতে সাহায্য করেছে:

“যে ক্রোধে ধীর, সে বীর হইতেও উত্তম, নিজ আত্মার শাসনকারী নগর-জয়কারী হইতেও শ্রেষ্ঠ।” (হিতোপদেশ ১৬:৩২) অনিয়ন্ত্রিত রাগ হল দুর্বলতার লক্ষণ, শক্তির নয়।

“মানুষের বুদ্ধি তাহাকে ক্রোধে ধীর করে।” (হিতোপদেশ ১৯:১১) কোনো পরিস্থিতি সম্বন্ধে অন্তর্দৃষ্টি এবং বোধ্যগম্যতা থাকা একজন ব্যক্তিকে দ্বন্দ্ব করার বাহ্যিক কারণগুলোর গভীরে ঢুকে দেখতে সাহায্য করে এবং হঠাৎ রেগে ওঠা থেকে বিরত রাখে।

‘ক্রোধী স্বভাবের লোকের সহিত বন্ধুতা করিও না, পাছে তুমি তাহার আচরণ শিক্ষা কর।’ (হিতোপদেশ ২২:২৪, ২৫) খ্রিস্টানরা বিজ্ঞতার সঙ্গে ক্রোধী স্বভাববিশিষ্ট লোকেদের সঙ্গ এড়িয়ে চলে।