সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আত্মা যা বলে, তা শুনুন!

আত্মা যা বলে, তা শুনুন!

আত্মা যা বলে, তা শুনুন!

“যাহার কর্ণ আছে, সে শুনুক, আত্মা মণ্ডলীগণকে কি কহিতেছেন।”—প্রকাশিত বাক্য ৩:২২.

১, ২. প্রকাশিত বাক্যে উল্লেখিত সাতটি মণ্ডলীর প্রতি বলা যিশুর বার্তাগুলোর বিষয়ে বার বার কোন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে?

 যিহোবার দাসদের বাইবেলের প্রকাশিত বাক্য বইয়ে উল্লেখিত সাতটি মণ্ডলীর প্রতি বলা আত্মায় অনুপ্রাণিত যিশু খ্রিস্টের কথাগুলোতে মনোযোগ দিতে হবে। বস্তুত, এই বার্তাগুলোর প্রত্যেকটিতে এই পরামর্শ রয়েছে: “যাহার কর্ণ আছে, সে শুনুক, আত্মা মণ্ডলীগণকে কি কহিতেছেন।”—প্রকাশিত বাক্য ২:৭, ১১, ১৭, ২৯; ৩:৬, ১৩, ২২.

ইতিমধ্যেই আমরা ইফিষ, স্মুর্ণা এবং পর্গামের দূতেদের বা অধ্যক্ষদের প্রতি বলা যিশুর বার্তাগুলো বিবেচনা করেছি। পবিত্র আত্মার মাধ্যমে অন্য চারটে মণ্ডলীকে তিনি যা বলেছিলেন, সেগুলো থেকে আমরা কীভাবে উপকার পেতে পারি?

থুয়াতীরার দূতের প্রতি

৩. থুয়াতীরা কোথায় ছিল এবং বিশেষ করে কোন পণ্যের জন্য এই শহর বিখ্যাত ছিল?

“ঈশ্বরের পুত্ত্র,” থুয়াতীরা মণ্ডলীকে প্রশংসা এবং তিরস্কার দুটোই করেছেন। (প্রকাশিত বাক্য ২:১৮-২৯ পদ পড়ুন।) থুয়াতীরা (বর্তমানে আখিসার) পশ্চিম এশিয়া মাইনরের গেডিজ (অতীতে হারমাস) নদীর উপনদীর পাশে গড়ে উঠেছিল। সেই শহর অসংখ্য শিল্পকলার জন্য বিখ্যাত ছিল। এর রং প্রস্তুতকারকরা তাদের বিখ্যাত লাল এবং বেগুনী পোশাকের উৎস হিসেবে হলুদাভ ফুলবিশিষ্ট লতার মূল ব্যবহার করত। লিডিয়া, যিনি গ্রিসের ফিলিপীতে পৌলের পরিদর্শনের সময় খ্রিস্টান হয়েছিলেন, তিনি ‘থুয়াতীরা নগরে বেগুনিয়া কাপড় বিক্রয় করিতেন।’—প্রেরিত ১৬:১২-১৫.

৪. কীসের জন্য থুয়াতীরার মণ্ডলীকে প্রশংসা করা হয়েছিল?

থুয়াতীরার মণ্ডলীর ভাল ভাল কাজ, প্রেম, বিশ্বাস, ধৈর্য এবং পরিচর্যা কাজের জন্য যিশু তাদের প্রশংসা করেছিলেন। বস্তুত ‘তাহাদের প্রথম কর্ম্ম অপেক্ষা শেষ কর্ম্ম প্রচুরতর ছিল।’ কিন্তু, এমনকি আমাদের এক উত্তম রেকর্ড থাকলেও আমাদের নৈতিকতা সম্বন্ধে কখনও অমনোযোগী হয়ে পড়া উচিত নয়।

৫-৭. (ক) “ঈষেবল নাম্নী . . . নারী” কে ছিল এবং তার প্রভাব সম্বন্ধে কী করা হয়েছিল? (খ) থুয়াতীরা মণ্ডলীর প্রতি খ্রিস্টের বার্তা ঈশ্বরীয় মহিলাদের কী করতে সাহায্য করে?

থুয়াতীরার মণ্ডলী প্রতিমাপূজা, মিথ্যা শিক্ষা এবং যৌন অনৈতিকতাকে প্রশ্রয় দিয়েছিল। তাদের মধ্যে “ঈষেবল নাম্নী . . . নারী” ছিল—সম্ভবত মহিলাদের একটা দল, যাদের আচরণ ইস্রায়েলের দশ বংশীয় রাজ্যের দুষ্ট রানি ঈষেবলের মতো ছিল। কিছু পণ্ডিত ব্যক্তি বলেন যে, থুয়াতীরার ‘ভাববাদিনীরা’ ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের দেবদবীদের উপাসনা করার এবং প্রতিমাদের কাছে উৎসর্গীকৃত প্রসাদ জড়িত রয়েছে এমন সব উৎসবগুলোতে যোগ দেওয়ার জন্য খ্রিস্টানদের প্রলোভিত করার চেষ্টা করত। আসুন, স্ব-নিযুক্ত কোনো ভাববাদিনীকে যেন বর্তমান দিনের খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর অন্যদের স্বীয় স্বার্থে কাজে লাগানোর জন্য প্রশ্রয় না দিই।

খ্রিস্ট ‘ঈষেবল নাম্নী যে নারী আছে, তাহাকে শয্যাগত করিবেন, এবং যাহারা তাহার সহিত ব্যভিচার করে, তাহারা যদি তাহার কার্য্য হইতে মন না ফিরায়, তবে তাহাদিগকে মহাক্লেশে ফেলিয়া দিবেন।’ অধ্যক্ষদের কখনও এইধরনের মন্দ শিক্ষা এবং প্রভাবের প্রতি বশ্যতাস্বীকার করা উচিত নয় এবং “শয়তানের সেই গভীরতত্ত্ব সকল” যে-একেবারেই মন্দ, তা বুঝতে পেরে কোনো খ্রিস্টান আধ্যাত্মিক এবং শারীরিক ব্যভিচার করবে না বা প্রতিমাপূজায় জড়িত হবে না। আমরা যদি যিশুর সতর্কবাণীতে মনোযোগ দিই, তা হলে ‘যাহা আমাদের আছে, তাহা দৃঢ়রূপে ধারণ করিব’ এবং পাপ আমাদের মধ্যে কর্তৃত্ব করবে না। ভক্তিহীন অভ্যাস, কামনা এবং উদ্দেশ্যগুলোকে প্রত্যাখ্যান করায় পুনরুত্থিত অভিষিক্ত ব্যক্তিরা “জাতিগণের উপরে কর্ত্তৃত্ব” পেয়েছে এবং তাদের চূর্ণবিচূর্ণ করে দেওয়ার জন্য খ্রিস্টের সঙ্গে তারা যোগ দেবে। বর্তমান দিনে, মণ্ডলীগুলোর প্রতীক তারা রয়েছে আর অভিষিক্ত ব্যক্তিরা যখন স্বর্গে পুনরুত্থিত হবে, তখন তাদের “উজ্জ্বল প্রভাতীয় নক্ষত্র” অর্থাৎ বর যিশু খ্রিস্টকে দেওয়া হবে।—প্রকাশিত বাক্য ২২:১৬.

থুয়াতীরা মণ্ডলীকে সাবধান করে দেওয়া হয়েছিল, যাতে ধর্মভ্রষ্ট মহিলাদের মন্দ প্রভাবকে প্রশ্রয় না দেয়। মণ্ডলীর প্রতি বলা খ্রিস্টের আত্মায় অনুপ্রাণিত বার্তা বর্তমানে ঈশ্বরীয় মহিলাদের তাদের ঈশ্বর নিযুক্ত অবস্থান বজায় রাখতে সাহায্য করে। তারা পুরুষের ওপর কর্তৃত্ব করার চেষ্টা করে না এবং কোনো ভাইকে আধ্যাত্মিক বা শারীরিক ব্যভিচারে প্রলোভিত করে না। (১ তীমথিয় ২:১২) এর পরিবর্তে, এইধরনের মহিলারা ভাল ভাল কাজ এবং ঈশ্বরের প্রশংসায় সেবা করার এক উদাহরণ স্থাপন করে। (গীতসংহিতা ৬৮:১১; ১ পিতর ৩:১-৬) মণ্ডলী যদি এটির যা আছে—শুদ্ধ মতবাদ ও আচরণ এবং সঞ্চিত রাজ্যের কাজ—তা রক্ষা করে, তা হলে খ্রিস্ট বিচার নয় বরং, অপূর্ব আশীর্বাদ নিয়ে আসবেন।

সার্দ্দির দূতের প্রতি

৮. (ক) সার্দ্দি কোথায় অবস্থিত ছিল এবং এর সম্বন্ধে কিছু বিস্তারিত বিষয় কী? (খ) কেন সার্দ্দি মণ্ডলীর সাহায্যের দরকার ছিল?

সার্দ্দির মণ্ডলীর জরুরি ভিত্তিতে সাহায্যের দরকার ছিল কারণ এটি আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে মৃত ছিল। (প্রকাশিত বাক্য ৩:১-৬ পদ পড়ুন।) থুয়াতীরা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত সার্দ্দি অনেক সমৃদ্ধশালী শহর ছিল। ব্যাবসাবাণিজ্য, সেই এলাকার উর্বরতা এবং পশমী সুতার কাপড় ও কার্পেটের উৎপাদন এটাকে এক সম্পদশালী শহর হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে, যেখানে একসময় ৫০,০০০ অধিবাসী ছিল। ইতিহাসবেত্তা জোসেফাসের মতানুসারে, সা.কা.পূ. প্রথম শতাব্দীতে সার্দ্দিতে বিরাট যিহুদি সমাজ ছিল। শহরের ধ্বংসপ্রাপ্ত বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল সমাজগৃহ এবং ইফিষীয় দেবী দীয়ানার মন্দির।

৯. আমাদের সেবা যদি নামেমাত্র হয়, তা হলে আমাদের কী করতে হবে?

সার্দ্দি মণ্ডলীর দূতকে খ্রিস্ট বলেছিলেন: “আমি জানি তোমার কার্য্য সকল; তোমার জীবন নামমাত্র; তুমি মৃত।” কী হবে যদি আমাদের আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে সজাগ থাকার সুনাম থাকে কিন্তু আমরা মূলত খ্রিস্টীয় বিশেষ সুযোগগুলোর ব্যাপারে উদাসীন থাকি, আমাদের পরিচর্যা শুধু নামেমাত্র হয় এবং আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে আমরা “মৃতকল্প” হই? তা হলে, আমরা রাজ্যের বার্তা ‘কিরূপে প্রাপ্ত হইয়াছি ও শুনিয়াছি, তাহা স্মরণ’ করতে হবে এবং পবিত্র সেবায় আমাদের প্রচেষ্টাকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। আমাদের অবশ্যই পূর্ণহৃদয়ে খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে অংশগ্রহণ করা শুরু করতে হবে। (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) খ্রিস্ট সার্দ্দির মণ্ডলীকে সাবধান করে দিয়েছিলেন: “যদি জাগ্রৎ না হও, তবে আমি চোরের ন্যায় আসিব; এবং কোন্‌ দণ্ডে তোমার নিকটে আসিব, তাহা তুমি জানিতে পারিবে না।” আমাদের দিন সম্বন্ধে কী বলা যায়? শীঘ্রই আমাদের নিকাশ দিতে হবে।

১০. এমনকি সার্দ্দির মতো পরিস্থিতিতেও কিছু খ্রিস্টানের বেলায় কোন বিষয়টা সত্য?

১০ সার্দ্দির মতো পরিস্থিতি থাকা সত্ত্বেও, এমন কিছু ব্যক্তি হয়তো আছে যারা ‘আপন আপন বস্ত্র মলিন করে নাই এবং যাহারা শুক্ল পরিচ্ছদে খ্রিস্টের সহিত গমনাগমন করিতে পারে; কেননা তাহারা যোগ্য।’ তারা তাদের খ্রিস্টীয় পরিচয় বজায় রাখে, বিমল থাকে এবং নৈতিক ও ধর্মীয় দিক দিয়ে এই জগতের মধ্যে নিষ্কলঙ্ক থাকে। (যাকোব ১:২৭) তাই, যিশু ‘তাহাদের নাম কোন ক্রমে জীবনপুস্তক হইতে মুছিয়া ফেলিবেন না, কিন্তু তাঁহার পিতার সাক্ষাতে ও দূতগণের সাক্ষাতে তাহাদের স্বীকার করিবেন।’ খ্রিস্টের সঙ্গে গমনাগমন করার যোগ্য বলে ঘোষণা করায়, তাঁর অভিষিক্ত ব্যক্তিদের কনে শ্রেণী উজ্জ্বল, শুচি ও মসীনা বস্ত্রে সজ্জিত হবে, যা ঈশ্বরের পবিত্রগণের ধর্মাচরণকে চিত্রিত করে। (প্রকাশিত বাক্য ১৯:৮) স্বর্গে অপূর্ব সেবা করার বিশেষ যে-সুযোগ তাদের জন্য অপেক্ষা করছে, তা তাদের এই জগৎকে জয় করতে উৎসাহ দেয়। এ ছাড়া, চিরকাল পার্থিব জীবনের অধিকারী ব্যক্তিদের জন্যও আশীর্বাদ মজুত রয়েছে। তাদের নামও জীবন-পুস্তকে লেখা রয়েছে।

১১. আমরা যদি আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি, তা হলে আমাদের কী করা উচিত?

১১ আমাদের মধ্যে কেউই সার্দ্দির মণ্ডলীর দুঃখজনক আধ্যাত্মিক অবস্থার মধ্যে পড়তে চায় না। কিন্তু, কী হবে যদি আমরা বুঝতে পারি যে আমরা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ছি? নিজেদের ভালর জন্য আমাদের দ্রুত কাজ করা উচিত। ধরুন, ভক্তিহীন পথগুলো আমাদের প্রলুব্ধ করছে অথবা সভায় উপস্থিত হওয়া বা আমাদের পরিচর্যায় যাওয়া কমিয়ে দিয়েছি। আসুন আমরা আন্তরিক প্রার্থনায় যিহোবার সাহায্য চাই। (ফিলিপীয় ৪:৬, ৭, ১৩) রোজ বাইবেল পড়া এবং শাস্ত্রপদ ও ‘বিশ্বস্ত গৃহাধ্যক্ষের’ দ্বারা জোগানো প্রকাশনাদি অধ্যয়ন করা আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে জেগে থাকার ব্যাপারে সাহায্য করবে। (লূক ১২:৪২-৪৪) তা হলে, আমরা সার্দ্দির সেই লোকেদের মতো হব, যাদের খ্রিস্টের অনুমোদন ছিল আর সহ বিশ্বাসীদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ হব।

ফিলাদিল্‌ফিয়ার দূতের প্রতি

১২. প্রাচীন ফিলাদিল্‌ফিয়ার ধর্মীয় অবস্থা সম্বন্ধে আপনি কীভাবে বর্ণনা করবেন?

১২ যিশু ফিলাদিল্‌ফিয়া মণ্ডলীর প্রশংসা করেছিলেন। (প্রকাশিত বাক্য ৩:৭-১৩ পদ পড়ুন।) ফিলাদিল্‌ফিয়া (বর্তমানে এলাসেহির) পশ্চিম এশিয়া মাইনরের মদ উৎপাদনকারী এলাকার এক সমৃদ্ধশালী কেন্দ্র ছিল। বস্তুত, এর প্রধান দেবতা ছিল মদের দেবতা ডায়োনাইসাস। স্পষ্টতই, ফিলাদিল্‌ফিয়ার যিহুদিরা সেখানকার যিহুদি খ্রিস্টানদের মোশির ব্যবস্থার কিছু নির্দিষ্ট রীতিনীতি পালন করানোর চেষ্টায় বা তাদের দিকে ফিরিয়ে আনতে সফল হয়নি।

১৩. খ্রিস্ট কীভাবে “দায়ূদের চাবি” ব্যবহার করেছেন?

১৩ খ্রিস্ট “দায়ূদের চাবি ধারণ করেন” এবং এভাবে তাঁকে সমস্ত রাজ্যের কাজ এবং বিশ্বস্ত পরিজনকে পরিচালনা করার ভার অর্পণ করা হয়েছে। (যিশাইয় ২২:২২; লূক ১:৩২) প্রাচীন ফিলাদিল্‌ফিয়া এবং অন্যান্য জায়গার খ্রিস্টানদের জন্য রাজ্যের বিশেষ সুযোগগুলো খুলে দিতে যিশু সেই চাবি ব্যবহার করেছেন। সেই ১৯১৯ সাল থেকে তিনি ‘বিশ্বস্ত গৃহাধ্যক্ষের’ সামনে ‘এক বৃহৎ দ্বার’ রেখেছেন, যা রাজ্যের প্রচার কাজের দিকে পরিচালিত করে এবং যেটাকে কোনো বিরোধীই বন্ধ করতে পারবে না। (১ করিন্থীয় ১৬:৯; কলসীয় ৪:২-৪) অবশ্য, রাজ্যের সুযোগগুলোর দ্বার “শয়তানের সমাজের” লোকেদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কারণ তারা আধ্যাত্মিক ইস্রায়েলীয় নয়।

১৪. (ক) ফিলাদিল্‌ফিয়া মণ্ডলীর কাছে যিশু কী প্রতিজ্ঞা করেছিলেন? (খ) কীভাবে আমরা “পরীক্ষাকাল” থেকে রক্ষা পেতে পারি?

১৪ যিশু প্রাচীন ফিলাদিল্‌ফিয়ার খ্রিস্টানদের কাছে এই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “তুমি আমার ধৈর্য্যের কথা রক্ষা করিয়াছ, এই কারণ আমিও তোমাকে সেই পরীক্ষাকাল হইতে রক্ষা করিব, যাহা পৃথিবীনিবাসীদের . . . সমস্ত জগতে উপস্থিত হইবে।” প্রচারের জন্য এমন ধৈর্যের প্রয়োজন, যা যিশু দেখিয়েছিলেন। তিনি কখনও শত্রুদের কাছে বশ্যতাস্বীকার করেননি বরং, তাঁর পিতার ইচ্ছা পালন করে চলেছিলেন। তাই, খ্রিস্ট অমর স্বর্গীয় জীবনে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন। যিহোবাকে সেবা করার বিষয়ে আমরা যদি আমাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকি এবং সুসমাচার প্রচার করার মাধ্যমে রাজ্যকে সমর্থন করি, তা হলে আমরা বর্তমান পরীক্ষার মধ্যে অর্থাৎ “পরীক্ষাকাল” থেকে রক্ষা পাব। রাজ্যের সেই কাজগুলোকে বাড়ানোর জন্য প্রাণপণ করার মাধ্যমে আমরা খ্রিস্টের কাছ থেকে পাওয়া ‘আমাদের যাহা আছে তাহা দৃঢ়রূপে ধারণ করিতে’ পারব। তা করলে অভিষিক্ত ব্যক্তিরা অমূল্য স্বর্গীয় মুকুট পাবে এবং তাদের অনুগত সহযোগীরা অনন্ত পার্থিব জীবন পাবে।

১৫. যারা “ঈশ্বরের মন্দিরে স্তম্ভস্বরূপ” হবে, তাদের কী করা প্রয়োজন?

১৫ খ্রিস্ট আরও বলেন: “যে জয় করে, তাহাকে আমি আমার ঈশ্বরের মন্দিরে স্তম্ভস্বরূপ করিব, . . . এবং তাহার উপরে আমার ঈশ্বরের নাম লিখিব, এবং আমার ঈশ্বরের নগরী যে নূতন যিরূশালেম স্বর্গ হইতে, আমার ঈশ্বরের নিকট হইতে নামিবে, তাহার নাম এবং আমার নূতন নাম লিখিব।” অভিষিক্ত অধ্যক্ষদের অবশ্যই সত্য উপাসনাকে তুলে ধরতে হবে। ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে প্রচার করে এবং আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে শুচি থেকে তাদের ‘নূতন যিরূশালেমের’ সদস্য থাকার জন্য যোগ্য থাকতে হবে। তারা যদি গৌরবান্বিত স্বর্গীয় মন্দিরের স্তম্ভ হতে চায় এবং স্বর্গীয় প্রজা হিসেবে ঈশ্বরের নগরের নাম ধারণ করতে চায় ও খ্রিস্টের কনে হিসেবে তাঁর নাম লেখাতে চায়, তা হলে সেটা প্রয়োজনীয়। আর অবশ্যই “আত্মা মণ্ডলীগণকে কি কহিতেছেন,” তাতে তাদের কান দিতে হবে।

লায়দিকেয়ার দূতের প্রতি

১৬. লায়দিকেয়া সম্বন্ধে কিছু বিষয় কী?

১৬ লায়দিকেয়ার আত্মতুস্ট মণ্ডলীকে খ্রিস্ট তিরস্কার করেছিলেন। (প্রকাশিত বাক্য ৩:১৪-২২ পদ পড়ুন।) ইফিষ থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পূর্বে এবং লুকুস নদীর উর্বর উপত্যকায় প্রধান বাণিজ্য পথের সংযোগস্থলে অবস্থিত লায়দিকেয়া অনেক সমৃদ্ধশালী উৎপাদনশীল এক শহর এবং ব্যবসায়িক কেন্দ্র ছিল। সেই এলাকার কালো পশমী সুতা থেকে যে-পোশাকআশাক তৈরি করা হতো, তা বিখ্যাত ছিল। বিখ্যাত মেডিক্যাল স্কুল থাকায় লায়দিকেয়া সম্ভবত চোখের ওষুধ তৈরি করত, যা ফ্রিগিয়ান পাউডার নামে পরিচিত। ওষুধের দেবতা অ্যাসক্লিপিয়াস ছিল সেই শহরের এক প্রধান দেবতা। লায়দিকেয়ায় বিরাট সংখ্যক যিহুদি ছিল বলে মনে হয়, যাদের মধ্যে কেউ কেউ স্পষ্টতই বেশ বিত্তশালী ছিল।

১৭. লায়দিকেয়ার লোকেদের কেন তিরস্কার করা হয়েছিল?

১৭ লায়দিকেয়া মণ্ডলীর ‘দূতের’ মাধ্যমে এটিকে উদ্দেশ করে “বিশ্বাস্য ও সত্যময় সাক্ষী, . . . ঈশ্বরের সৃষ্টির আদি,” হিসেবে যিশু কর্তৃত্ব সহকারে বলেন। (কলসীয় ১:১৩-১৬) আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে “না শীতল না তপ্ত” হওয়াতে লায়দিকেয়াকে তিরস্কার করা হয়েছিল। তারা কদুষ্ণ বলে খ্রিস্ট তাঁর মুখ থেকে তাদের বমি করে ফেলে দিতে চেয়েছিলেন। সেই বিষয়বস্তুটা বোঝা তাদের জন্য মোটেই কঠিন ছিল না। কাছের হিয়রাপলিতে উষ্ণ ঝরনা ছিল এবং কলসীতে ছিল ঠাণ্ডা জল। কিন্তু, যেহেতু পাইপের মাধ্যমে বেশ দূর থেকে লায়দিকেয়ায় জল সরবরাহ করতে হতো, তাই সেই জল শহরে পৌঁছাতে পৌঁছাতে হয়তো কদুষ্ণ হয়ে পড়ত। আসার পথে কিছু অংশে এটি একটি জলবাহিকার মধ্যে দিয়ে যেত। লায়দিকেয়ার কাছাকাছি এসে এটি দৃঢ়ভাবে একত্রে যুক্ত পাথরের ব্লকগুলোর ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে বয়ে যেত।

১৮, ১৯. বর্তমান দিনের যে-খ্রিস্টানরা লায়দিকেয়ার মতো, তাদের কীভাবে সাহায্য করা যেতে পারে?

১৮ আজকে লায়দিকেয়ার মতো ব্যক্তিরা না উদ্দীপকমূলক গরম, না সতেজদায়ক ঠাণ্ডা। কদুষ্ণ জলের মতো তাদের মুখ থেকে ফেলে দেওয়া হবে! যিশু অভিষিক্ত ‘রাজ-দূত’ হিসেবে ‘খ্রীষ্টের পক্ষেই কর্ম্ম করিবার’ জন্য তাদেরকে তাঁর মুখমাত্র হিসেবে চান না। (২ করিন্থীয় ৫:২০) অনুতপ্ত না হলে, রাজ্য ঘোষণাকারী হিসেবে তারা তাদের বিশেষ সুযোগ হারাবে। লায়দিকেয়ার লোকেরা পার্থিব ধনসম্পদের পিছনে ছুটেছিল এবং ‘জানিত না যে, তাহারা দুর্ভাগ্য, কৃপাপাত্র, দরিদ্র, অন্ধ ও উলঙ্গ।’ আজকে যারা তাদের মতো, তাদেরকে তাদের আধ্যাত্মিক দরিদ্রতা, অন্ধতা এবং উলঙ্গতা দূর করার জন্য খ্রিস্টের কাছ থেকে পরীক্ষিত বিশ্বাসের ‘পরিষ্কৃত স্বর্ণ,’ ধার্মিকতার “শুক্ল বস্ত্র” এবং “চক্ষুতে লেপনীয় অঞ্জন,” যা আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকে উন্নত করে, তা কিনতে হবে। তারা যাতে “বিশ্বাসে ধনবান্‌” হয়ে ওঠে, সেটার জন্য তাদের আধ্যাত্মিক প্রয়োজন সম্বন্ধে সচেতন হতে সাহায্য করার জন্য খ্রিস্টান অধ্যক্ষরা আনন্দিত। (যাকোব ২:৫; মথি ৫:৩, NW) এ ছাড়া, আধ্যাত্মিক “চক্ষুতে লেপনীয় অঞ্জন”—যিশুর শিক্ষা, পরামর্শ, উদাহরণ এবং মনের ভাব গ্রহণ করা ও মেনে চলা—কাজে লাগানোর জন্য অধ্যক্ষদের তাদেরকে সাহায্য করা প্রয়োজন। এটা হল ‘মাংসের অভিলাষ, চক্ষুর অভিলাষ, ও জীবিকার দর্পের’ বিরুদ্ধে এক আরোগ্যজনক চিকিৎসা।—১ যোহন ২:১৫-১৭.

১৯ যাদের প্রতি যিশুর ভালবাসা আছে, তাদের সকলকে তিনি তিরস্কার করেন এবং শাসন করেন। তাঁর অধীনস্ত অধ্যক্ষরাও কোমলতার সঙ্গে একই বিষয় করবেন। (প্রেরিতদের ২০:২৮, ২৯) লায়দিকেয়ার লোকেদের তাদের চিন্তাভাবনা এবং জীবনের পথ পরিবর্তন করে ‘উদ্যোগী হওয়ার, ও মন ফিরানোর’ প্রয়োজন ছিল। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ কি এমন জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে, যা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের পবিত্র সেবাকে জীবনে কম গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে? তা হলে আসুন আমরা ‘যীশুর নিকট হইতে চক্ষুতে লেপনীয় অঞ্জন ক্রয় করি,’ যাতে আমরা উদ্যোগের সঙ্গে প্রথমে রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা করার গুরুত্ব বুঝতে পারি।—মথি ৬:৩৩.

২০, ২১. আজকে কারা সঠিকভাবে যিশুর ‘আঘাতে’ সাড়া দিচ্ছে এবং তাদের আশাগুলো কী?

২০ “দেখ,” খ্রিস্ট বলেন, “আমি দ্বারে দাঁড়াইয়া আছি, ও আঘাত করিতেছি; কেহ যদি আমার রব শুনে ও দ্বার খুলিয়া দেয়, তবে আমি তাহার কাছে প্রবেশ করিব, ও তাহার সহিত ভোজন করিব, এবং সেও আমার সহিত ভোজন করিবে।” যিশু খাবার খাওয়ার সময় প্রায়ই আধ্যাত্মিক নির্দেশনা দিতেন। (লূক ৫:২৯-৩৯; ৭:৩৬-৫০; ১৪:১-২৪) তিনি এখন লায়দিকেয়ার মতো মণ্ডলীর দ্বারে আঘাত করছেন। এর সদস্যরা কি তাঁর আঘাতে সাড়া দেবে, তাঁর প্রতি তাদের অনুভূতিকে পুনরুদ্দীপিত করবে, তাদের মাঝে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাবে এবং তাঁকে শিক্ষা দিতে দেবে? যদি তা-ই হয়, তা হলে খ্রিস্ট তাদের মহান আধ্যাত্মিক উপকারের জন্য তাদের সঙ্গে ভোজন করবেন।

২১ আজকের “আরও মেষ” রূপকভাবে যিশুকে আসতে দিচ্ছেন এবং এইধরনের কাজ অনন্তজীবনের দিকে পরিচালিত করে। (যোহন ১০:১৬; মথি ২৫:৩৪-৪০, ৪৬) প্রত্যেক বিজয়ী অভিষিক্ত ব্যক্তিকে খ্রিস্ট এই বিশেষ সুযোগ দিবেন—‘তাঁহার সহিত তাঁহার সিংহাসনে বসিতে দিবেন, যেমন তিনি জয় করিয়াছেন, এবং তাঁহার পিতার সহিত তাঁহার সিংহাসনে বসিয়াছেন।’ হ্যাঁ, অভিষিক্ত বিজয়ীদের কাছে যিশু স্বর্গে তাঁর সঙ্গে তাঁর পিতার দক্ষিণে সিংহাসনে বসার মহান পুরস্কারের বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করেছেন। আর বিজয়ী আরও মেষ রাজ্যের শাসনে পৃথিবীতে এক অপূর্ব পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করে আছে।

আমাদের সকলের জন্য শিক্ষা

২২, ২৩. (ক) সাতটি মণ্ডলীর প্রতি বলা যিশুর কথাগুলো থেকে কীভাবে সমস্ত খ্রিস্টান উপকার পেতে পারে? (খ) আমাদের সংকল্প কী হওয়া উচিত?

২২ কোনো সন্দেহ নেই যে, সমস্ত খ্রিস্টান এশিয়া মাইনরের সাতটি মণ্ডলীর প্রতি বলা যিশুর কথাগুলো থেকে প্রচুর উপকার পেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, খ্রিস্টকে উপযুক্ত প্রশংসা করতে দেখে প্রেমময় খ্রিস্টান প্রাচীনরা, যে সমস্ত ব্যক্তি এবং মণ্ডলী আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে ভাল করছে, তাদের প্রত্যেককে প্রশংসা করতে প্রেরণা পায়। যেখানে দুর্বলতাগুলো রয়েছে, সেখানে প্রাচীনরা সহ বিশ্বাসীদের শাস্ত্রীয় চিকিৎসা কাজে লাগাতে সাহায্য করে। সাতটি মণ্ডলীকে খ্রিস্ট বিভিন্ন ধরনের যে-পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেগুলো থেকে আমরা সকলে ক্রমাগত উপকার পেতে পারি, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা প্রার্থনা সহকারে এবং দেরি না করে তা কাজে লাগাই। *

২৩ এই শেষ কালে আত্মতুষ্ট, বস্তুবাদী হওয়ার বা যে-বিষয়গুলো ঈশ্বরের প্রতি করা আমাদের সেবাকে হালকা করে দেয়, সেগুলো করার সময় আর নেই। তাই, আসুন সমস্ত মণ্ডলীকে দীপবৃক্ষের মতো ক্রমাগত আলোকিত হতে দিই, যেগুলো যিশু সেগুলোর নিজ নিজ অবস্থানে রেখেছেন। বিশ্বস্ত খ্রিস্টান হিসেবে, আমরা যেন খ্রিস্টের কথায় মনোযোগ দেওয়ার এবং আত্মা যা বলে, তা শোনার জন্য সবসময় দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই। তা হলে, যিহোবার গৌরবের জ্যোতিবাহক হিসেবে আমাদের স্থায়ী আনন্দ থাকবে।

[পাদটীকাগুলো]

^ এ ছাড়া, যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত প্রকাশিত বাক্য—এর মহান পরিপূর্ণতা সন্নিকট! (ইংরেজি) বইয়ের ৭ থেকে ১৩ অধ্যায়ের মধ্যেও প্রকাশিত বাক্য ২:১–৩:২২ পদ আলোচনা করা হয়েছে।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• “ঈষেবল নাম্নী . . . নারী” কে ছিল এবং কেন ঈশ্বরীয় মহিলারা তাকে অনুকরণ করবে না?

• সার্দ্দি মণ্ডলীতে কোন পরিস্থিতি বিদ্যমান ছিল এবং সেখানে বসবাসরত অনেক খ্রিস্টানের মতো হওয়া এড়িয়ে চলার জন্য আমরা কী করতে পারি?

• ফিলাদিল্‌ফিয়া মণ্ডলীর কাছে যিশু কোন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন এবং সেগুলো কীভাবে আজকেও প্রযোজ্য?

• লায়দিকেয়ার লোকেদের কেন তিরস্কার করা হয়েছিল কিন্তু উদ্যোগী খ্রিস্টানদের সামনে কোন আশাগুলো রয়েছে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

‘ঈষেবল নাম্নী নারীর’ মন্দ কাজগুলো এড়িয়ে চলতে হবে

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিশু তাঁর অনুসারীদের সামনে ‘এক বৃহৎ দ্বার’ রেখেছেন, যা রাজ্যের বিশেষ সুযোগগুলোর দিকে পরিচালিত করে

[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]

আপনি কি যিশুকে স্বাগতম জানাবেন এবং তাঁর কথা শুনবেন?