দাঁড়িয়ে থাকুন এবং যিহোবা যে নিস্তার করবেন, তা দেখুন!
দাঁড়িয়ে থাকুন এবং যিহোবা যে নিস্তার করবেন, তা দেখুন!
“তোমরা শ্রেণীবদ্ধ হও, দাঁড়াইয়া থাক, আর তোমাদের সহবর্ত্তী সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] যে নিস্তার করিবেন, তাহা দেখ।”—২ বংশাবলি ২০:১৭.
১, ২. কেন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের হুমকির চেয়ে “মাগোগ দেশীয় গোগের” আসন্ন আক্রমণের আরও চরম পরিণতি রয়েছে?
সন্ত্রাসবাদকে কেউ কেউ বিশ্ব-সমাজ, এমনকি সভ্যতার ওপরও এক আক্রমণ হিসেবে বর্ণনা করেছে। এটা বোধগম্য যে, এই ধরনের হুমকিকে অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। অন্যদিকে, আরেকটা আক্রমণ যা আরও চরম পরিণতি নিয়ে আসবে, সেটার প্রতি বিশ্ব-সমাজ খুব কমই বা কোনো মনোযোগই দেয় না। সেটা কী?
২ এটা হল, “মাগোগ দেশীয় গোগের” আক্রমণ, যে-সম্বন্ধে বাইবেলের যিহিষ্কেল ৩৮ অধ্যায়ে বলা আছে। এটা বললে কি বাড়িয়ে বলা হবে যে, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের হুমকির চেয়ে এই আক্রমণের আরও চরম পরিণতি রয়েছে? কখনোই না কারণ গোগের আক্রমণ শুধু মনুষ্য সরকারগুলোর ওপর আঘাত আনার চেয়ে আরও বেশি কিছু। এটা ঈশ্বরের স্বর্গীয় সরকারের ওপর আক্রমণ আনে! কিন্তু, মানুষের বিপরীতে—যারা তাদের ব্যবস্থার ওপর আঘাত আনা হলে, সেটার সঙ্গে মোকাবিলা করে খুব কমই সফল হয়েছে—সৃষ্টিকর্তা, গোগের আরও প্রবল আক্রমণের সঙ্গে মোকাবিলা করতে পুরোপুরি সমর্থ।
ঈশ্বরের সরকারের ওপর এক আক্রমণ
৩. সেই ১৯১৪ সাল থেকে জগতের শাসকদের কী করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং তারা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে?
৩ সেই ১৯১৪ সালে স্বর্গে ঈশ্বরের রাজ্য স্থাপিত হওয়ার সময় থেকে ঈশ্বরের বর্তমান শাসনরত রাজা এবং শয়তানের দুষ্ট ব্যবস্থার মধ্যে দ্বন্দ্ব বেড়েই চলেছে। সেই সময় মনুষ্য শাসকদের বলা হয়েছিল তারা যেন ঈশ্বরের মনোনীত শাসকের বশীভূত হয়। কিন্তু, তারা তা করতে অসম্মত হয়েছে, ঠিক যেমন ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল: “পৃথিবীর রাজগণ দণ্ডায়মান হয়, নায়কগণ একসঙ্গে মন্ত্রণা করে, সদাপ্রভুর বিরুদ্ধে এবং তাঁহার অভিষিক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে; [বলে,] ‘আইস, আমরা উহাদের বন্ধন ছিড়িয়া ফেলি, আপনাদের হইতে উহাদের রজ্জু খুলিয়া ফেলি।’” (গীতসংহিতা ২:১-৩) মাগোগ দেশীয় গোগের আক্রমণের সময় রাজ্য শাসনের প্রতি বিরোধিতা স্পষ্টতই এর চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছাবে।
৪, ৫. কীভাবে মানুষরা ঈশ্বরের অদৃশ্য স্বর্গীয় সরকারের সঙ্গে লড়াই করতে পারে?
৪ আমরা হয়তো অবাক হতে পারি যে, কীভাবে মানুষরা এক অদৃশ্য স্বর্গীয় সরকারের বিরদ্ধে লড়াই করতে পারে। বাইবেল জানায় যে, এই সরকার “পৃথিবী হইতে ক্রীত . . . এক লক্ষ চোয়াল্লিশ সহস্র লোক” ও সেইসঙ্গে “মেষশাবক,” খ্রিস্ট যিশুকে নিয়ে গঠিত হয়েছে। (প্রকাশিত বাক্য ১৪:১, ৩; যোহন ১:২৯) স্বর্গীয় হওয়ায়, নতুন সরকারকে ‘নূতন আকাশমণ্ডল’ বলা হয়েছে আর অন্যদিকে এর পার্থিব প্রজাদের যুক্তিযুক্তভাবেই ‘নূতন পৃথিবী’ বলা হয়েছে। (যিশাইয় ৬৫:১৭; ২ পিতর ৩:১৩) খ্রিস্টের ১,৪৪,০০০ সহ শাসকদের মধ্যে বেশির ভাগই ইতিমধ্যে বিশ্বস্ততার সঙ্গে তাদের পার্থিব জীবন শেষ করেছে। এভাবে তারা স্বর্গে সেবা করার নতুন দায়িত্বগুলো গ্রহণ করার বিষয়ে তাদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছে।
৫ কিন্তু, ১,৪৪,০০০-রের ক্ষুদ্র অবশিষ্টাংশ এখনও পৃথিবীতে আছে। ২০০২ সালে প্রভুর সান্ধ্যভোজ উদ্যাপনে ১,৫০,০০০,০০-রও বেশি উপস্থিতির মধ্যে মাত্র ৮,৭৬০ জন এই স্বর্গীয় দায়িত্বের জন্য মনোনীত বলে তাদের আশা প্রকাশ করেছে। যেকেউ রাজ্যের অবশিষ্ট সম্ভাব্য সদস্যদের আক্রমণ করার দুঃসাহস দেখায়, সে বাস্তবিকপক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যকে আঘাত করে।—প্রকাশিত বাক্য ১২:১৭.
রাজা তাঁর জয় সম্পূর্ণ করেন
৬. ঈশ্বরের লোকেদের প্রতি করা বিরোধিতাকে যিহোবা এবং খ্রিস্ট কোন দৃষ্টিতে দেখেন?
৬ যিহোবার প্রতিষ্ঠিত রাজ্যের বিরোধীদের প্রতি তাঁর প্রতিক্রিয়া সম্বন্ধে এভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল: “যিনি স্বর্গে উপবিষ্ট, তিনি হাস্য করিবেন; প্রভু [“যিহোবা,” NW] তাহাদিগকে বিদ্রূপ করিবেন। তখন তিনি ক্রোধে তাহাদের কাছে কথা কহিবেন, কোপে তাহাদিগকে বিহ্বল করিবেন। আমিই আমার রাজাকে স্থাপন করিয়াছি আমার পবিত্র সিয়োন-পর্ব্বতে।” (গীতসংহিতা ২:৪-৬) যিহোবার নির্দেশনায় “জয় করিবার জন্য” খ্রিস্টের সময় এসে গেছে। (প্রকাশিত বাক্য ৬:২) চূড়ান্ত বিজয়ের সময় তাঁর লোকেদের প্রতি করা বিরোধিতাকে যিহোবা কোন দৃষ্টিতে দেখেন? আসলে তা যেন তাঁর এবং তাঁর শাসনরত রাজার বিরুদ্ধেই করা হচ্ছে। “যে ব্যক্তি তোমাদিগকে স্পর্শ করে, সে [আমার] চক্ষুর তারা স্পর্শ করে,” যিহোবা বলেন। (সখরিয় ২:৮) আর যিশু জোরালোভাবে বলেছিলেন যে, লোকেরা তাঁর অভিষিক্ত ভাইদের প্রতি যা করে বা করতে ব্যর্থ হয়, সেটাকে তিনি যেন তাঁর প্রতিই করা হচ্ছে বা করা হচ্ছে না বলে গণ্য করেন।—মথি ২৫:৪০, ৪৫.
৭. কোন কারণগুলোর জন্য প্রকাশিত বাক্য ৭:৯ পদে বলা “বিস্তর লোক” গোগের প্রচণ্ড ক্রোধের শিকার হয়?
৭ অবশ্য, যারা অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশদের সক্রিয়ভাবে সমর্থন করে, তারাও গোগের প্রচণ্ড ক্রোধের শিকার হবে। ঈশ্বরের “নূতন পৃথিবীর” এই সম্ভাব্য সদস্যরা হল, “বিস্তর লোক,” যাদের “প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার” থেকে আহ্বান করা হয়েছে। (প্রকাশিত বাক্য ৭:৯) তাদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে যে, তারা “সিংহাসনের সম্মুখে ও মেষ শাবকের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছে; তাহারা শুক্লবস্ত্র পরিহিত।” এভাবে ঈশ্বর ও খ্রিস্ট যিশুর সামনে তাদের এক অনুমোদনযোগ্য অবস্থান রয়েছে। “তাহাদের হস্তে খর্জ্জুর-পত্র” নিয়ে তারা যিহোবাকে নিখিলবিশ্বের ন্যায্য সার্বভৌম হিসেবে অভিবাদন জানায়, যাঁর শাসন সিংহাসনে অধিষ্ঠিত তাঁর রাজা, “ঈশ্বরের মেষশাবক” যিশু খ্রিস্টের রাজত্বের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।—যোহন ১:২৯, ৩৬.
৮. গোগের আক্রমণের ফলে খ্রিস্ট কী করবেন এবং এর ফল কী হবে?
৮ গোগের আক্রমণের কারণে ঈশ্বরের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত রাজা পদক্ষেপ নেবেন এবং হর্মাগিদোনের যুদ্ধ করবেন। (প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪, ১৬) যারা যিহোবার সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করতে অসম্মত হয়েছে, তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। অন্যদিকে, ঈশ্বরের রাজ্যের প্রতি তাদের আনুগত্যের জন্য যারা ক্লেশ ভোগ করেছে, তারা স্থায়ী স্বস্তি উপভোগ করবে। এই সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন “উহা ঈশ্বরের ন্যায়বিচারের স্পষ্ট লক্ষণ, যাহাতে তোমরা ঈশ্বরের সেই রাজ্যের যোগ্য বলিয়া গণ্য হইবে, যাহার নিমিত্ত দুঃখভোগও করিতেছ। বাস্তবিক ঈশ্বরের কাছে ইহা ন্যায্য যে, যাহারা তোমাদিগকে ক্লেশ দেয়, তিনি তাহাদিগকে প্রতিফলরূপে ক্লেশ দিবেন, এবং ক্লেশ পাইতেছ যে তোমরা, তোমাদিগকে আমাদের সহিত বিশ্রাম [“স্বস্তি,” NW] দিবেন, [ইহা তখনই হইবে] যখন প্রভু যীশু স্বর্গ হইতে আপনার পরাক্রমের দূতগণের সহিত জ্বলন্ত অগ্নিবেষ্টনে প্রকাশিত হইবেন, এবং যাহারা ঈশ্বরকে জানে না ও যাহারা আমাদের প্রভু যীশুর সুসমাচারের আজ্ঞাবহ হয় না, তাহাদিগকে সমুচিত দণ্ড দিবেন।”—২ থিষলনীকীয় ১:৫-৮.
৯, ১০. (ক) দুর্দান্ত শত্রুদের ওপর যিহোবা কীভাবে যিহূদার পক্ষে জয় এনে দিয়েছিলেন? (খ) আজকে খ্রিস্টানদের কী করে চলতে হবে?
৯ আসন্ন মহাক্লেশের সময়, যা হর্মাগিদোনে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাবে, খ্রিস্ট সমস্ত মন্দতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন। কিন্তু, তখন তাঁর অনুসারীদের যুদ্ধ করার দরকার হবে না, ঠিক যেমন কয়েক হাজার বছর আগে যিহূদার দুই বংশের লোকেদের জন্য তা করার প্রয়োজন ছিল না। সেই যুদ্ধ যিহোবার ছিল এবং তিনি জয় এনে দিয়েছিলেন। বিবরণ বলে: “সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] যিহূদার বিরুদ্ধে আগত অম্মোনের ও মোয়াবের সন্তানগণের ও সেয়ীর পর্ব্বতীয় লোকদের বিরুদ্ধে লুক্কায়িত সৈন্যদিগকে নিযুক্ত করিলেন; তাহাতে তাহারা পরাহত হইল। আর অম্মোনের ও মোয়াবের সন্তানগণ নিঃশেষে বধ ও বিনাশ করিবার জন্য সেয়ীর পর্ব্বত-নিবাসীদের বিরুদ্ধে উঠিল; আর সেয়ীর-নিবাসীদিগকে সংহার করিবার পর পরস্পর এক জন অন্যের বিনাশ সাধনে সাহায্য করিল। তখন যিহূদার লোকেরা প্রান্তরের প্রহরিদুর্গে উপস্থিত হইয়া লোকসমারোহের প্রতি দৃষ্টিপাত করিল, আর দেখ, ভূমিতে কেবলমাত্র শব পতিত আছে, কেহই পলাইয়া বাঁচে নাই।”—২ বংশাবলি ২০:২২-২৪.
১০ এটা ঠিক সেইরকম যেমন যিহোবা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “তোমাদিগকে যুদ্ধ করিতে হইবে না।” (২ বংশাবলি ২০:১৭) এটা খ্রিস্টানদের জন্য অনুসরণযোগ্য আদর্শ স্থাপন করে, যখন যিশু খ্রিস্ট “জয় করিবার জন্য” আসবেন। সেই সময় পর্যন্ত, তারা মন্দতার বিরুদ্ধে লড়াই করে চলবে তবে তা আক্ষরিক নয় কিন্তু আধ্যাত্মিক অস্ত্রশস্ত্রের মাধ্যমে। এভাবে তারা “উত্তমের দ্বারা মন্দকে পরাজয়” করে চলবে।—রোমীয় ৬:১৩; ১২:১৭-২১; ১৩:১২; ২ করিন্থীয় ১০:৩-৫.
গোগের আক্রমণে কে নেতৃত্ব দেবে?
১১. (ক) গোগ তার আক্রমণ চালানোর জন্য কোন প্রতিনিধিদের ব্যবহার করবে? (খ) আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে সতর্ক থাকার সঙ্গে কী জড়িত?
১১ শয়তান দিয়াবলকে মাগোগ দেশীয় গোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যে ১৯১৪ সাল থেকে অবমানিত অবস্থায় আছে। আত্মিক প্রাণী হিসেবে সে সরাসরি তার আক্রমণ করতে পারে না কিন্তু তার কাজগুলো করার জন্য সে মনুষ্য প্রতিনিধিদের ব্যবহার করবে। এই মনুষ্য প্রতিনিধি কারা হবে? বাইবেল আমাদের বিস্তারিতভাবে জানায় না কিন্তু এটি আমাদের নির্দিষ্ট কিছু ইঙ্গিত দেয়, যা আমাদের সাহায্য করে চিহ্নিত করতে যে তারা কারা হবে। বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলো পরিপূর্ণতাস্বরূপ জগতের ঘটনাগুলো ঘটার মাধ্যমে আমরা ধীরে ধীরে আরও স্পষ্ট চিত্র দেখতে পারব। যিহোবার লোকেরা অনুমান করা এড়িয়ে চলে কিন্তু বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতার সঙ্গে মিলে যায় এমন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ঘটনাগুলো সম্বন্ধে পুরোপুরি সচেতন থেকে তারা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে সতর্ক রয়েছে।
১২, ১৩. ঈশ্বরের লোকেদের ওপর চূড়ান্ত আক্রমণ সম্বন্ধে ভাববাদী দানিয়েল কীভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন?
১২ ভাববাদী দানিয়েল ঈশ্বরের লোকেদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত আক্রমণের বিষয়ে আরও তথ্য জানান, এটি লিখে: “সে [উত্তরের রাজা] অনেককে উচ্ছিন্ন ও নিঃশেষে বিনষ্ট করণার্থে মহাক্রোধে যাত্রা করিবে। আর সে সমুদ্রের ও পবিত্র গিরিরত্নের মধ্যে রাজকীয় তাম্বু স্থাপন করিবে।”—দানিয়েল ১১:৪৪, ৪৫.
১৩ বাইবেলের সময়ে, ‘সমুদ্র’ ছিল মহাসমুদ্র বা ভূমধ্যসাগর আর ‘পবিত্র গিরি’ বা পর্বত ছিল সিয়োন, যেটা সম্বন্ধে যিহোবা বলেছিলেন: “আমিই আমার রাজাকে স্থাপন করিয়াছি আমার পবিত্র সিয়োন-পর্ব্বতে।” (গীতসংহিতা ২:৬; যিহোশূয়ের পুস্তক ১:৪) এভাবে, আধ্যাত্মিক অর্থে “সমুদ্রের ও পবিত্র গিরিরত্নের মধ্যে” যে-দেশ, তা অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের সমৃদ্ধশালী আধ্যাত্মিক কর্মকাণ্ডের রাজ্যকে বোঝায়। তারা ঈশ্বরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন মনুষ্য সমুদ্রের আর অংশ নয় এবং তারা স্বর্গীয় রাজ্যে খ্রিস্ট যিশুর সঙ্গে শাসন করার জন্য অপেক্ষা করে আছে। স্পষ্টতই, ঈশ্বরের অভিষিক্ত দাসেরা ও সেইসঙ্গে তাদের বিস্তর লোকের অনুগত সহযোগীরা উত্তরের রাজার লক্ষ্যবস্তু হবে, যখন তিনি দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতায় প্রচণ্ড আক্রমণ নিয়ে আসবেন।—যিশাইয় ৫৭:২০; ইব্রীয় ১২:২২; প্রকাশিত বাক্য ১৪:১.
ঈশ্বরের দাসেরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে?
১৪. আক্রমণ করা হলে ঈশ্বরের লোকেরা কোন তিনটে বিষয় করবে?
১৪ ঈশ্বরের দাসেরা আক্রমণের মুখোমুখি হলে তারা কী করবে বলে আশা করা হয়? আবারও, যিহোশাফটের দিনে ঈশ্বরের বিশেষ জাতির প্রতিক্রিয়া এই বিষয়ে আদর্শ স্থাপন করে। লক্ষ করুন যে, এই অধিবাসীদের তিনটে বিষয় করার জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছিল: (১) শ্রেণীবদ্ধ হওয়া, (২) দাঁড়িয়ে থাকা এবং (৩) যিহোবা যে নিস্তার করবেন, তা দেখা। আজকে ঈশ্বরের লোকেরা কীভাবে এই কথাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে কাজ করবে?—২ বংশাবলি ২০:১৭.
১৫. যিহোবার লোকেদের জন্য শ্রেণীবদ্ধ হওয়ার মানে কী?
১৫ শ্রেণীবদ্ধ হওয়া: অবিচলিত না হয়ে ঈশ্বরের লোকেরা ঈশ্বরের রাজ্যকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করার জন্য তাদের অবস্থান বজায় রাখবে। তারা তাদের খ্রিস্টীয় নিরপেক্ষতার অবস্থান বজায় রেখে চলবে। তারা যিহোবার প্রতি তাদের অনুগত সেবায় “সুস্থির . . . নিশ্চল” থাকবে এবং যিহোবার প্রেমপূর্ণ-দয়ার জন্য ক্রমাগত জনসাধারণ্যে তাঁর প্রশংসা করা চালিয়ে যাবে। (১ করিন্থীয় ১৫:৫৮; গীতসংহিতা ১১৮:২৮, ২৯, NW) বর্তমান বা ভবিষ্যতের কোন চাপই তাদের এই ঐশিক অবস্থান থেকে টলাতে পারবে না।
১৬. কোন উপায়ে যিহোবার দাসেরা দাঁড়িয়ে থাকবে?
১৬ দাঁড়িয়ে থাকা: যিহোবার দাসেরা নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করবে না বরং, যিহোবার ওপর পুরোপুরি নির্ভর রাখবে। একমাত্র তিনিই তাঁর দাসদের জগতের নৈরাজ্য থেকে উদ্ধার করতে সমর্থ এবং তিনি তা করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন। (যিশাইয় ৪৩:১০, ১১; ৫৪:১৫; বিলাপ ৩:২৬) যিহোবার ওপর নির্ভর রাখার সঙ্গে বর্তমান দিনের দৃশ্যত মাধ্যমের ওপর নির্ভর করা অন্তর্ভুক্ত, যে-মাধ্যম তিনি তাঁর উদ্দেশ্যগুলো বাস্তবায়িত করার জন্য কয়েক দশক ধরে ব্যবহার করছেন। তাই, যিহোবা ও তাঁর শাসনরত রাজা যে-সহ উপাসকদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য অনুমোদন করেছেন, তাদের ওপর সত্য খ্রিস্টানদের আগের চেয়ে আরও বেশি করে আস্থা রাখার প্রয়োজন হবে। এই বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা ঈশ্বরের লোকেদের পরিচালনা দেবে। তাদের নির্দেশনা অবহেলা করলে দুর্দশা আসতে পারে।—মথি ২৪:৪৫-৪৭; ইব্রীয় ১৩:৭, ১৭.
১৭. ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দাসেরা কেন যিহোবার নিস্তার দেখবে?
১৭ যিহোবা যে নিস্তার করবেন, তা দেখা: যারা খ্রিস্টীয় নীতিনিষ্ঠার অবস্থান ধরে রাখে এবং উদ্ধারের জন্য যিহোবার ওপর নির্ভর করে, তাদের সকলকে নিস্তার করার মাধ্যমে পুরস্কার দেওয়া হবে। চূড়ান্ত সময়ের আগে পর্যন্ত—এবং যতদূর তাদের পক্ষে সম্ভব—তারা যিহোবার বিচার দিনের আগমন সম্বন্ধে ঘোষণা করবে। সমস্ত সৃষ্টিকে জানতে হবে যে, যিহোবা হলেন সত্য ঈশ্বর এবং পৃথিবীতে তাঁর বিশ্বস্ত দাসেরা রয়েছে। আর কখনও যিহোবার সার্বভৌমত্বের ন্যায্যতা নিয়ে কোনো দীর্ঘ বিতর্কের প্রয়োজন হবে না।—যিহিষ্কেল ৩৩:৩৩; ৩৬:২৩.
১৮, ১৯. (ক) যারা গোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে যাত্রাপুস্তক ১৫ অধ্যায়ের বিজয় সংগীত কীভাবে তাদের অনুভূতিকে প্রতিফলিত করে? (খ) ঈশ্বরের লোকেদের জন্য এখনই কী করা উপযুক্ত?
১৮ পুনরায় শক্তিপ্রাপ্ত হয়ে ঈশ্বরের লোকেরা নতুন জগতে প্রবেশ করবে, এক বিজয় সংগীত গাওয়ার জন্য উৎসুক হয়ে থাকবে ঠিক যেমন প্রাচীন ইস্রায়েলীয়রা লোহিত সাগরের মধ্যে দিয়ে উদ্ধার পাওয়ার পর করেছিল। যিহোবার সুরক্ষার জন্য তাঁর প্রতি চির কৃতজ্ঞ হয়ে আলাদা আলাদা এবং দলগতভাবে তারা প্রাচীনকালের এই কথাগুলোর সঙ্গে সুর মেলাবে: “আমি সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] উদ্দেশে গান করিব; কেননা তিনি মহিমান্বিত হইলেন, . . . সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] যুদ্ধবীর; সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] তাঁহার নাম। . . . হে সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW], তোমার দক্ষিণ হস্ত শত্রু চূর্ণকারী। তুমি নিজ মহিমার মহত্ত্ব, যাহারা তোমার বিরুদ্ধে উঠে, তাহাদিগকে নিপাত করিয়া থাক; তোমার প্রেরিত কোপাগ্নি নাড়ার ন্যায় তাহাদিগকে ভক্ষণ করে। . . . তুমি যে লোকদিগকে মুক্ত করিয়াছ, তাহাদিগকে নিজ দয়াতে [“প্রেমপূর্ণ-দয়াতে,” NW] চালাইতেছ, তুমি নিজ পরাক্রমে তাহাদিগকে তোমার পবিত্র নিবাসে লইয়া যাইতেছ। . . . তুমি তাহাদিগকে লইয়া যাইবে, আপন অধিকার-পর্ব্বতে রোপণ করিবে; হে সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW], তথায় তুমি আপন নিবাসার্থ স্থান প্রস্তুত করিয়াছ; হে প্রভু [“যিহোবা,” NW], তথায় তোমার হস্ত ধর্ম্মধাম স্থাপন করিয়াছে। সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] যুগে যুগে অনন্তকাল রাজত্ব করিবেন।”—যাত্রাপুস্তক ১৫:১-১৯.
১৯ অনন্তজীবনের আশা এখন আগের চেয়ে আরও বেশি উজ্জ্বল বলে ঈশ্বরের দাসদের যিহোবার প্রতি তাদের ভক্তি দেখানোর এবং রাজা হিসেবে তাঁকে চিরকাল সেবা করার বিষয়ে তাদের দৃঢ়সংকল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য এটা কত এক উপযুক্ত সময়!—১ বংশাবলি ২৯:১১-১৩.
আপনি কি ব্যাখা করতে পারেন?
• কেন অভিষিক্ত এবং আরও মেষের ওপর গোগ আক্রমণ নিয়ে আসবে?
• যিহোবার লোকেরা কীভাবে শ্রেণীবদ্ধ হবে?
• দাঁড়িয়ে থাকার মানে কী?
• যিহোবা যে নিস্তার করবেন, তা ঈশ্বরের লোকেরা কীভাবে দেখবে?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবা, যিহোশাফট এবং তার লোকেদের পক্ষে জয় এনে দিয়েছিলেন, যেকারণে তাদের যুদ্ধ করার দরকার হয়নি
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
অভিষিক্তরা এবং আরও মেষ যিহোবার সার্বভৌমত্বকে তুলে ধরায় অংশ নেয়
[২২ পৃষ্ঠার চিত্র]
প্রাচীনকালের ইস্রায়েলীয়দের মতো ঈশ্বরের লোকেরা খুব শীঘ্রই এক বিজয় সংগীত গাইবে