“ভীত কি আতঙ্কিত হইও না”
“ভীত কি আতঙ্কিত হইও না”
“ভীত কি নিরাশ [“আতঙ্কিত,” NW] হইও না; . . . সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] তোমাদের সহবর্ত্তী।”—২ বংশাবলি ২০:১৭.
১. লোকেদের ওপর সন্ত্রাসবাদের কোন প্রভাব রয়েছে এবং কেন তাদের ভয়ের বিষয়টা বোধগম্য?
সন্ত্রাসবাদ! শুধু এই শব্দটিই ভীতিগ্রস্ত করে তোলে, নিরাপত্তাহীনতা ও অসহায় অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। এটা আশঙ্কা, দুঃখ এবং রাগের মিশ্র অনুভূতিকে জাগরিত করে। আর এই শব্দটি এমন কিছু বর্ণনা করে, যা আগামী বছরগুলোতে মানবজাতিকে সংক্রামিত করবে বলে অনেকে ভয় পায়। কিছু দেশ দশকের পর দশক ধরে বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে লড়াই করা সত্ত্বেও, খুব কমই সফল হয়েছে আর এই বিষয়টাই এই ধরনের ভয়ের ভিত্তি জোগায়।
২. সন্ত্রাসবাদের সমস্যার প্রতি যিহোবার সাক্ষিরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় আর তা কোন প্রশ্নগুলোর দিকে নিয়ে যায়?
২ তা সত্ত্বেও, আশা রাখার প্রকৃত কারণ রয়েছে। যিহোবার সাক্ষিরা, যারা দেশ এবং অঞ্চল মিলিয়ে পৃথিবীর ২৩৪টা জায়গায় সক্রিয়ভাবে প্রচার করে চলছে, তারা উল্লেখযোগ্যভাবে আশাবাদী। সন্ত্রাসবাদ কখনও দূর হওয়ার নয় এইরকম ভয় পাওয়ার পরিবর্তে তারা আস্থা রাখে যে, তা দূর হয়ে যাবে—এবং খুব শীঘ্রই। তাদের মতো এইরকম আশা রাখা কি বাস্তবসম্মত? এই যন্ত্রণাদায়ক বিষয় দূর করার ক্ষেত্রে কে সফল হতে পারে এবং কীভাবে তা করা যেতে পারে? যেহেতু কিছু কিছু দৌরাত্ম্য হয়তো আমাদের সবাইকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তাই এই ধরনের আশা রাখার ভিত্তি পরীক্ষা করে দেখা উপযুক্ত হবে।
৩. কোন কারণগুলোর জন্য ভয় রয়েছে এবং আমাদের সময় সম্বন্ধে কী ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে?
৩ আজকে, লোকেরা বিভিন্ন কারণে ভয় পায় এবং আতঙ্কগ্রস্ত হয়। যে-অসংখ্য ব্যক্তি বয়স হয়ে যাওয়ায় নিজেদের আর যত্ন নিতে পারে না, যে-ব্যক্তিবিশেষরা দূরারোগ্য ব্যাধির কারণে দূর্বল হয়ে পড়ছে এবং যে-পরিবারগুলো জীবনের নিত্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জোগাতে গিয়ে আর্থিক দিক দিয়ে হিমশিম খাচ্ছে, তাদের কথা ভেবে দেখুন। বস্তুত, জীবনের অনিশ্চয়তা সম্বন্ধেও চিন্তা করে দেখুন! দুর্ঘটনা বা কোনো বিপর্যয়ের কারণে আকস্মিক মৃত্যু প্রতিটি কোণায় ওত পেতে আছে বলে মনে হয়, যা আমাদের কাঙ্ক্ষিত সমস্ত কিছু শেষ করে দেওয়ার জন্য তৈরি রয়েছে। এই ধরনের ভয় এবং উদ্বিগ্নতা ও সেইসঙ্গে অসংখ্য ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব এবং হতাশা আমাদের সময়কে ঠিক প্রেরিত পৌলের দ্বারা বর্ণিত সময়ের মতো করে তুলেছে: “ইহা জানিও, শেষ কালে বিষম সময় উপস্থিত হইবে। কেননা মনুষ্যেরা আত্মপ্রিয়, . . . স্নেহরহিত, ক্ষমাহীন, অপবাদক, অজিতেন্দ্রিয়, প্রচণ্ড, সদ্বিদ্বেষী . . . হইবে।”—২ তীমথিয় ৩:১-৪.
৪. দ্বিতীয় তীমথিয় ৩:১-৪ পদে যে-ভয়ানক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, সেখানে কোন ইতিবাচক বিষয় রয়েছে?
৪ যদিও এই শাস্ত্রপদ এক ভয়ানক চিত্র তুলে ধরে কিন্তু এটা আবার আশার আলোরও নির্দেশ দেয়। লক্ষ করুন যে, শয়তানের বর্তমান দুষ্ট বিধিব্যবস্থার “শেষ কালে” বিষম সময় দেখা দেবে। এর অর্থ হল যে, স্বস্তি খুব কাছেই আর দুষ্ট জগতের জায়গায় খুব শীঘ্রই ঈশ্বরের সিদ্ধ রাজ্যের শাসন আসবে, যে-রাজ্য সম্বন্ধে যিশু তাঁর অনুসারীদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন। (মথি ৬:৯, ১০) সেই রাজ্য হল ঈশ্বরের স্বর্গীয় সরকার, যা “কখনও বিনষ্ট হইবে না,” ভাববাদী দানিয়েল বলেন কিন্তু “তাহা ঐ সকল [মানুষের] রাজ্য চূর্ণ ও বিনষ্ট করিয়া আপনি চিরস্থায়ী হইবে।”—দানিয়েল ২:৪৪.
খ্রিস্টীয় নিরপেক্ষতা বনাম সন্ত্রাসবাদ
৫. সম্প্রতি সন্ত্রাসবাদের হুমকির প্রতি জাতিগুলো কেমন সাড়া দিয়েছে?
৫ দশকের পর দশক ধরে, সন্ত্রাসবাদ হাজার হাজার মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক সিটি এবং ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে আক্রমণ হওয়ার পর, সেই বিপদ সম্বন্ধে পৃথিবীব্যাপী সচেতনতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সন্ত্রাসবাদের ব্যাপকতা এবং বিশ্বব্যাপী এর প্রসারের পরিপ্রেক্ষিতে, সারা পৃথিবীর জাতিগুলো দ্রুত এটাকে প্রতিরোধ করার জন্য একত্রে দল গঠন করে। উদাহরণ হিসেব বলা যায়, প্রচারমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০১ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর “ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং মধ্য এশিয়ার ৫৫টি দেশ থেকে আসা পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা সর্বসম্মত এক পরিকল্পনা করে,” যা তাদের প্রচেষ্টাকে সমন্বয় করার জন্য তৈরি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পালটা সন্ত্রাসবাদের প্রচেষ্টাকে “এক নতুন মাত্রার কর্মশক্তি” দেওয়া হয়েছে বলে এই কাজের প্রশংসা করেন। হঠাৎ করেই, কোটি কোটি লোক সেই বিষয়ের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছে, যেটাকে দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিন বলে “এক মহাযুদ্ধের শুরু।” এই ধরনের প্রচেষ্টাগুলো কতটা সফল হবে, তা ভবিষ্যতেই দেখা যাবে। কিন্তু, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এইরকম যুদ্ধের পরবর্তী পরিণাম অনেকের মধ্যে ভয় এবং আশঙ্কা জাগিয়ে তোলে কিন্তু যারা যিহোবার ওপর নির্ভর করে, তাদের মধ্যে নয়।
৬. (ক) যিহোবার সাক্ষিরা যে-খ্রিস্টীয় নিরপেক্ষতা দেখায়, কখনও কখনও তা মেনে নিতে কারও কারও জন্য কেন কঠিন হতে পারে? (খ) রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে যিশু তাঁর অনুসারীদের জন্য কোন উদাহরণ স্থাপন করেছেন?
৬ যিহোবার সাক্ষিরা তাদের রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার জন্য সুপরিচিত। যদিও শান্তিপূর্ণ সময়ে বেশির ভাগ লোকই এই অবস্থান মেনে নিতে ইচ্ছুক কিন্তু যখন অস্বাভাবিক পরিস্থিতিগুলো দেখা দেয়, তখন তাদের সহনশীলতা কমে যায়। বেশির ভাগ সময়ই যুদ্ধের কারণে আসা ভয় এবং অনিশ্চয়তা জাতীয়তাবাদের দৃঢ় অনুভূতি জাগিয়ে তোলে। এর ফলে হয়তো কারও কারও বুঝতে কষ্ট হয় যে, কেন জনপ্রিয় জাতীয় আন্দোলনগুলোতে সমর্থন করতে কোনো ব্যক্তি অনিচ্ছুক হয়। তবুও, সত্য খ্রিস্টানরা জানে যে, ‘জগতের না’ হওয়ার বিষয়ে যিশুর আদেশের প্রতি তাদের বাধ্য থাকতে হবে। (যোহন ১৫:১৯; ১৭:১৪-১৬; ১৮:৩৬; যাকোব ৪:৪) এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক বা সামাজিক বিষয়গুলোতে তাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা। যিশু নিজে সঠিক উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন। তাঁর নিখুঁত প্রজ্ঞা এবং অসাধারণ ক্ষমতা সম্বন্ধে বিবেচনা করলে তিনি তাঁর সময়ের মানুষের বিষয়গুলোতে অনেক উত্তম অবদান রাখতে পারতেন। তবুও, রাজনৈতিকভাবে জড়িত হওয়া থেকে তিনি বিরত ছিলেন। তাঁর পরিচর্যার শুরুতে তিনি জগতের সমস্ত রাজ্যের ওপর শাসন করার বিষয়ে শয়তানের প্রস্তাবকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। পরে, যখন রাজনৈতিক পদের জন্য তাঁকে জোর করা হয়, তখন তিনি সুস্পষ্টভাবে তা এড়িয়ে গিয়েছিলেন।—মথি ৪:৮-১০; যোহন ৬:১৪, ১৫.
৭, ৮. (ক) যিহোবার সাক্ষিদের রাজনৈতিক দিক দিয়ে নিরপেক্ষ থাকার মানে কী নয় এবং কেন? (খ) রোমীয় ১৩:১, ২ পদ কীভাবে সরকারগুলোর বিরুদ্ধে দৌরাত্ম্যপূর্ণ কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে নিষেধ করে?
৭ যিহোবার সাক্ষিদের নিরপেক্ষ থাকার অর্থকে এইরকম ভুল বোঝা উচিত নয় যে, তারা দৌরাত্ম্যপূর্ণ কাজকে সমর্থন করে বা উপেক্ষা করে। তা করা তাদের এই দাবিকে মিথ্যে বলে প্রমাণিত করবে যে, তারা ‘প্রেমের ও শান্তির ঈশ্বরের’ দাস। (২ করিন্থীয় ১৩:১১) তারা শিখেছে যে, যিহোবা দৌরাত্ম্য সম্বন্ধে কেমন মনে করেন। গীতরচক লিখেছিলেন: “সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] ধার্ম্মিকের পরীক্ষা করেন, কিন্তু দুষ্ট ও দৌরাত্ম্যপ্রিয় লোক তাঁহার প্রাণের ঘৃণাস্পদ।” (গীতসংহিতা ১১:৫) এ ছাড়া, প্রেরিত পিতরকে যিশু কী বলেছিলেন, সেই সম্বন্ধেও তারা জানে: “তোমার খড়্গ পুনরায় স্বস্থানে রাখ, কেননা যে সকল লোক খড়্গ ধারণ করে, তাহারা খড়্গ দ্বারা বিনষ্ট হইবে।”—মথি ২৬:৫২.
৮ যদিও ইতিহাস স্পষ্টভাবে দেখায় যে, নকল খ্রিস্টানরা প্রায়ই “খড়্গ” ধারণ করেছে কিন্তু যিহোবার সাক্ষিদের বেলায় তা সত্য নয়। তারা এই ধরনের সমস্ত কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকে। সাক্ষিরা বিশ্বস্ততার সঙ্গে রোমীয় ১৩:১, ২ পদের এই আদেশের প্রতি বাধ্য থাকে: “প্রত্যেক প্রাণী প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষদের [সরকারি শাসকদের] বশীভূত হউক; কেননা ঈশ্বরের নিরূপণ ব্যতিরেকে কর্ত্তৃত্ব হয় না; এবং যে সকল কর্ত্তৃপক্ষ আছেন, তাঁহারা ঈশ্বরনিযুক্ত। অতএব যে কেহ কর্ত্তৃত্বের প্রতিরোধী হয়, সে ঈশ্বরের নিয়োগের প্রতিরোধ করে; আর যাহারা প্রতিরোধ করে, তাহারা আপনাদের উপরে বিচারাজ্ঞা প্রাপ্ত হইবে।”
৯. কোন দুটো উপায়ে যিহোবার সাক্ষিরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে?
৯ কিন্তু, সন্ত্রাসবাদ যেহেতু অত্যন্ত মন্দ একটা বিষয়, তাই যিহোবার সাক্ষিদের কি এটিকে প্রতিরোধ করার জন্য কিছু করা উচিত নয়? হ্যাঁ, তাদের তা করা উচিত এবং তারা তা করে থাকে। প্রথমত, তারা নিজেরা এই ধরনের যেকোনো কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকে। দ্বিতীয়ত, তারা লোকেদের খ্রিস্টীয় যে-নীতিগুলো সম্বন্ধে শিক্ষা দেয়, সেগুলো পালন করলে সমস্ত ধরনের দৌরাত্ম্য দূর করা যায়। * গত বছর, সাক্ষিরা এই খ্রিস্টীয় পথ সম্বন্ধে লোকেদের শিখতে সাহায্য করার জন্য ১২০,২৩,৮১,৩০২ ঘন্টা ব্যয় করেছে। এটা সময়ের অপচয় ছিল না কারণ এই কার্যক্রমের ফলে ২,৬৫,৪৬৯ জন ব্যক্তি যিহোবার সাক্ষি হিসেবে বাপ্তিস্ম নিয়েছে আর এভাবে দৌরাত্ম্যকে পুরোপুরি পরিত্যাগ করার বিষয়টা জনসাধারণ্যে প্রকাশ করেছে।
১০. আজকের জগৎ থেকে দৌরাত্ম্য মুছে ফেলার প্রত্যাশাগুলো কী?
১০ এ ছাড়া, যিহোবার সাক্ষিরা স্বীকার করে যে তারা নিজেরা কখনও মন্দতার জগৎ দূর করতে পারবে না। এই কারণে তারা যিনি পারেন, তাঁর ওপর তাদের পূর্ণ নির্ভরতা রাখে আর তিনি হলেন যিহোবা ঈশ্বর। (গীতসংহিতা ৮৩:১৮, NW) আন্তরিক প্রচেষ্টাগুলো থাকা সত্ত্বেও, মানুষরা দৌরাত্ম্যের শেষ নিয়ে আসতে পারে না। অনুপ্রাণিত বাইবেল লেখক আমাদের সময় অর্থাৎ ‘শেষ কাল’ সম্বন্ধে আমাদেরকে আগেই সাবধান করেন এবং বলেন: “দুষ্ট লোকেরা ও বঞ্চকেরা, পরের ভ্রান্তি জন্মাইয়া ও আপনারা ভ্রান্ত হইয়া, উত্তর উত্তর কুপথে অগ্রসর হইবে।” (২ তীমথিয় ৩:১, ১৩) এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে মন্দতার বিরুদ্ধে মানুষের জয়ী হওয়ার আশা একেবারেই নেই। অন্যদিকে, দৌরাত্ম্য পুরোপুরি এবং স্থায়ীভাবে দূর করার জন্য আমরা যিহোবার ওপর নির্ভর করতে পারি।—গীতসংহিতা ৩৭:১, ২, ৯-১১; হিতোপদেশ ২৪:১৯, ২০; যিশাইয় ৬০:১৮.
আসন্ন আক্রমণের মুখে নির্ভীক থাকা
১১. দৌরাত্ম্য দূর করার জন্য যিহোবা ইতিমধ্যেই কোন পদক্ষেপগুলো নিয়েছেন?
১১ যেহেতু শান্তির ঈশ্বর দৌরাত্ম্য ঘৃণা করেন, তাই আমরা বুঝতে পারি যে, এর মূল কারণ শয়তান দিয়াবলকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য কেন তিনি পদক্ষেপগুলো নিয়েছেন। বস্তুত, ইতিমধ্যেই তিনি প্রধান দূত মীখায়েলের হাতে শয়তানকে শোচনীয়ভাবে পরাজয় ভোগ করতে দিয়েছেন আর এই মীখায়েল হলেন সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ঈশ্বরের নতুন রাজা খ্রিস্ট যিশু। বাইবেল এইভাবে বর্ণনা করে: “স্বর্গে যুদ্ধ হইল; মীখায়েল ও তাঁহার দূতগণ ঐ নাগের সহিত যুদ্ধ করিতে লাগিলেন। তাহাতে সেই নাগ ও তাহার দূতগণও যুদ্ধ করিল, কিন্তু জয়ী হইল না, এবং স্বর্গে তাহাদের স্থান আর পাওয়া গেল না। আর সেই মহানাগ নিক্ষিপ্ত হইল; এ সেই পুরাতন সর্প, যাহাকে দিয়াবল [অপবাদক] এবং শয়তান [বিপক্ষ] বলা যায়, সে সমস্ত নরলোকের ভ্রান্তি জন্মায়; সে পৃথিবীতে নিক্ষিপ্ত হইল, এবং তাহার দূতগণও তাহার সঙ্গে নিক্ষিপ্ত হইল।”—প্রকাশিত বাক্য ১২:৭-৯.
১২, ১৩. (ক) ১৯১৪ সাল সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা কী? (খ) যারা ঈশ্বরের রাজ্যকে সমর্থন করে, তাদের সম্বন্ধে যিহিষ্কেলের ভবিষ্যদ্বাণী কী বলে?
১২ বাইবেলের কালনিরূপণ বিদ্যা এবং জগতের ঘটনাগুলো ১৯১৪ সালকে সেই বছর হিসেবে নির্দেশ করে যখন স্বর্গে এই যুদ্ধ হয়েছিল। তখন থেকে জগতের অবস্থা ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্রকাশিত বাক্যে ১২:১২ পদ এর কারণ ব্যাখ্যা করে এই বলে: “অতএব, হে স্বর্গ ও তন্নিবাসিগণ, আনন্দ কর; পৃথিবী ও সমুদ্রের সন্তাপ হইবে; কেননা দিয়াবল তোমাদের নিকটে নামিয়া গিয়াছে; সে অতিশয় রাগাপন্ন, সে জানে, তাহার কাল সংক্ষিপ্ত।”
১৩ এটা বোধগম্য যে, দিয়াবলের রাগ মূলত ঈশ্বরের অভিষিক্ত উপাসক এবং তাদের ‘আরও মেষের’ সহযোগীদের ওপর রয়েছে। (যোহন ১০:১৬; প্রকাশিত বাক্য ১২:১৭) এই বিরোধিতা খুব শীঘ্রই এর চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছাবে, যখন দিয়াবল তাদের সবার ওপর তীব্র আক্রমণ নিয়ে আসবে, যারা ঈশ্বরের প্রতিষ্ঠিত রাজ্যকে সমর্থন করে এবং যারা এর ওপর নির্ভর করে। সর্বশক্তি দিয়ে করা এই আক্রমণের বিষয়ে যিহিষ্কেল ৩৮ অধ্যায়ে উল্লেখ রয়েছে, যেখানে এটাকে বলা হয়েছে “মাগোগ দেশীয় গোগের” আক্রমণ।
১৪. অতীতে যিহোবার সাক্ষিরা কোন সুরক্ষা উপভোগ করেছে এবং সবসময়ই কি এইরকম হবে?
১৪ স্বর্গ থেকে শয়তানকে উচ্ছেদের পর ঈশ্বরের লোকেরা কখনও কখনও নির্দিষ্ট কিছু রাজনৈতিক দলের প্রচেষ্টার মাধ্যমে তার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়েছে, যে-সম্বন্ধে প্রকাশিত বাক্য ১২:১৫, ১৬ পদে প্রতীক ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে। বিপরীতে, বাইবেল ইঙ্গিত দেয় যে, শয়তানের চূড়ান্ত আক্রমণের সময় কোনো মনুষ্য প্রতিনিধি সেই সমস্ত ব্যক্তিদের রক্ষা করবে না, যারা যিহোবার ওপর নির্ভর করে। এই কারণে কি খ্রিস্টানদের ভীত বা আতঙ্কিত হওয়া উচিত? কখনোই না!
১৫, ১৬. (ক) যিহোশাফটের দিনে যিহোবার লোকেদের প্রতি তাঁর আশ্বাসমূলক বাক্য আজকের দিনের খ্রিস্টানদের জন্য আশাবাদী হওয়ার কোন কারণ জোগায়? (খ) আজকের দিনের ঈশ্বরের দাসদের জন্য যিহোশাফট এবং লোকেরা কোন আদর্শ স্থাপন করেছে?
১৫ যিহোবা তাঁর লোকেদের সমর্থন করবেন, ঠিক যতটা নিশ্চিতভাবে তিনি রাজা যিহোশাফটের দিনে তাঁর বিশেষ জাতিকে সমর্থন করেছিলেন। আমরা পড়ি: “হে সমগ্র যিহূদা, হে যিরূশালেম-নিবাসী লোক সকল, আর হে মহারাজ যিহোশাফট, শ্রবণ কর; সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] তোমাদিগকে এই কথা কহেন, তোমরা ঐ বৃহৎ লোকসমারোহ হইতে ভীত কি নিরাশ [“আতঙ্কিত,” NW] হইও না, কেননা এই যুদ্ধ তোমাদের নয়, কিন্তু ঈশ্বরের। . . . এবার তোমাদিগকে যুদ্ধ করিতে হইবে না; হে যিহূদা ও যিরূশালেম, তোমরা শ্রেণীবদ্ধ হও, দাঁড়াইয়া থাক, আর তোমাদের সহবর্ত্তী সদাপ্রভু [“যিহোবা,” NW] যে নিস্তার করিবেন, তাহা দেখ; ভীত কি আতঙ্কিত হইও না; কল্য তাহাদের বিরুদ্ধে যাত্রা কর; কেননা যিহোবা তোমাদের সহবর্ত্তী।”—২ বংশাবলি ২০:১৫-১৭.
১৬ যিহূদার লোকেদের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল যে, তাদের যুদ্ধ করার দরকার হবে না। একইভাবে, ঈশ্বরের লোকেদের যখন মাগোগ দেশীয় গোগ আক্রমণ করবে, তখন আত্মরক্ষার জন্য তারা অস্ত্র তুলে নেবে না। এর পরিবর্তে তারা ‘দাঁড়াইয়া থাকিবে, আর তাহাদের সহবর্ত্তী যিহোবা যে নিস্তার করিবেন, তাহা দেখিবে।’ অবশ্য, দাঁড়িয়ে থাকার অর্থ এই নয় যে, সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়া এমনকি যিহোশাফটের দিনেও ঈশ্বরের লোকেরা পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় ছিল না। আমরা পড়ি: “তখন যিহোশাফট ভূমিতে অধোমুখ হইয়া প্রণাম করিলেন, এবং সমস্ত যিহূদা ও যিরূশালেম-নিবাসিগণ সদাপ্রভুর কাছে প্রণিপাত করিতে সদাপ্রভুর সম্মুখে ভূমিষ্ঠ হইল। . . . আর [যিহোশাফট] লোকদের সহিত পরামর্শ করিয়া লোক নিযুক্ত করিলেন, [যেন তাহারা] সৈন্যশ্রেণীর অগ্রে অগ্রে গিয়া সদাপ্রভুর উদ্দেশে সঙ্গীত ও পবিত্র শোভায় প্রশংসা করে, এবং এই কথা বলে,—“সদাপ্রভুর স্তবগান কর, কেননা তাঁহার দয়া অনন্তকালস্থায়ী।” (২ বংশাবলি ২০:১৮-২১) হ্যাঁ, এমনকি শত্রুদের আক্রমণের মুখে লোকেরা সক্রিয়ভাবে যিহোবার প্রশংসা করে চলেছিল। এটা যিহোবার সাক্ষিদের জন্য অনুসরণ করার মতো আদর্শ স্থাপন করে, যখন গোগ তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ নিয়ে আসবে।
১৭, ১৮. (ক) গোগের আক্রমণ সম্বন্ধে আজকে যিহোবার সাক্ষিদের কোন ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে? (খ) খ্রিস্টান যুবক-যুবতীদের সম্প্রতি কোন অনুস্মারক দেওয়া হয়েছে?
১৭ সেই সময় পর্যন্ত—আর এমনকি গোগের আক্রমণ শুরু হওয়ার পরও—যিহোবার সাক্ষিরা ঈশ্বরের রাজ্যকে সমর্থন করে চলবে। সারা পৃথিবীতে ৯৪,৬০০-রও বেশি মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা করে তারা ক্রমাগত শক্তি এবং সুরক্ষা খুঁজে চলবে। (যিশাইয় ২৬:২০) যিহোবাকে সাহসের সঙ্গে প্রশংসা করার কত উপযুক্ত এক সময়! নিশ্চিতভাবে, গোগের আসন্ন আক্রমণের অপেক্ষায় থাকা তাদেরকে ভয়ে সরে পড়তে দেয় না। বরং, এটা তাদের পক্ষে যতটা সম্ভব, ততটা প্রশংসা-বলি বাড়ানোর জন্য তাদের উদ্দীপিত করে।—গীতসংহিতা ১৪৬:২.
১৮ এই ইতিবাচক মনোভাব সারা পৃথিবীর হাজার হাজার যুবক-যুবতী, যারা পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা শুরু করেছে, তাদের মাধ্যমে চমৎকারভাবে প্রকাশ পেয়েছে। এই ধরনের এক জীবন বেছে নেওয়ার উৎকৃষ্টতাকে তুলে ধরার জন্য যুবক-যুবতীরা —তোমাদের জীবনকে তোমরা কীভাবে কাজে লাগাবে? ট্র্যাক্টটি ২০০২ সালের জেলা সম্মেলনগুলোতে প্রকাশ করা হয়েছিল। যুবক ও বৃদ্ধ সমস্ত খ্রিস্টান এই ধরনের সময়োপযোগী অনুস্মারকগুলোর জন্য কৃতজ্ঞ।—গীতসংহিতা ১১৯:১৪, ২৪, ৯৯, ১১৯, ১২৯, ১৪৬.
১৯, ২০. (ক) কেন খ্রিস্টানদের ভয় পাওয়ার বা আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই? (খ) পরের অধ্যয়ন প্রবন্ধটি কী করবে?
১৯ জগতের পরস্থিতিগুলো সত্ত্বেও, খ্রিস্টানদের ভয় পাওয়ার বা আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তারা জানে যে, যিহোবার রাজ্য খুব শীঘ্রই চিরকালের জন্য সমস্ত ধরনের দৌরাত্ম্য দূর করে দেবে। তারা এটা জেনেও সান্ত্বনা পায় যে, দৌরাত্ম্যের কারণে যারা তাদের জীবন হারিয়েছে, তারা পুনরুত্থানের মাধ্যমে জীবন ফিরে পাবে। পুনরুত্থান তাদের কিছুজনকে প্রথমবারের মতো যিহোবা সম্বন্ধে জানার সুযোগ করে দিলেও তা অন্যদের তাঁর প্রতি তাদের উৎসর্গীকৃত সেবা চালিয়ে যেতে সাহায্য করবে।—প্রেরিত ২৪:১৫.
২০ সত্য খ্রিস্টান হিসেবে আমরা খ্রিস্টীয় নিরপেক্ষতা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে বুঝি আর তা বজায় রাখতে আমরা দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। আমরা ‘দাঁড়াইয়া থাকিয়া যিহোবা যে নিস্তার করিবেন, তাহা দেখিবার’ অপূর্ব আশা ধরে রাখতে চাই। বর্তমান দিনের ঘটনাগুলো, যা ধীরে ধীরে বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতার বিষয়ে আরও অন্তর্দৃষ্টি দেয়, পরের প্রবন্ধটি সেই সম্বন্ধে সচেতন করার মাধ্যমে আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করবে।
[পাদটীকা]
^ যিহোবার সাক্ষি হওয়ার জন্য যারা তাদের দৌরাত্ম্যপূর্ণ জীবন ত্যাগ করেছে, এমন ব্যক্তিবিশেষের উদাহরণের জন্য সচেতন থাক! পত্রিকার ১৯৯০ সালের ২২শে মার্চের (ইংরেজি) ২১ পৃষ্ঠা; ১৯৯১ সালের ৮ই আগস্টের (ইংরেজি) ১৮ পৃষ্ঠা এবং প্রহরীদুর্গ পত্রিকার ১৯৯৬ সালের ১লা জানুয়ারির ৫ পৃষ্ঠা; ১৯৯৮ সালের ১লা আগস্টের ৫ পৃষ্ঠা দেখুন।
আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?
• কেন আজকে অনেক লোক নিরাশাবাদী?
• ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে যিহোবার সাক্ষিরা কেন আশাবাদী?
• সমস্ত দৌরাত্ম্যের কারণের বিষয়ে যিহোবা ইতিমধ্যেই কী করেছেন?
• কেন আমাদের গোগের আক্রমণকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিশু, খ্রিস্টীয় নিরপেক্ষতার সঠিক উদাহরণ স্থাপন করেছেন
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
হাজার হাজার যুবক-যুবতী সাক্ষি আনন্দের সঙ্গে পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা শুরু করেছে
[১২ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
UN PHOTO ১৮৬২২৬/M. Grafman