সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আমাদের পক্ষপাতহীন ঈশ্বর, যিহোবাকে অনুকরণ করুন

আমাদের পক্ষপাতহীন ঈশ্বর, যিহোবাকে অনুকরণ করুন

আমাদের পক্ষপাতহীন ঈশ্বর, যিহোবাকে অনুকরণ করুন

“ঈশ্বরের কাছে মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাতিত্ব,” NW] নাই।”—রোমীয় ২:১১.

১, ২. (ক) সমস্ত কনানীয়দের বিষয়ে যিহোবার উদ্দেশ্য কী ছিল? (খ) যিহোবা কী করেছিলেন এবং তা কোন প্রশ্নগুলো উত্থাপন করে?

 সাধারণ কাল পূর্ব ১৪৭৩ সালে, মোয়াব তলভূমির শিবিরে অবস্থিত ইস্রায়েলীয়রা মন দিয়ে মোশির কথা শুনেছিল। জর্দন নদীর ওপারে এক কঠিন পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। মোশি যিহোবার এই উদ্দেশ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করেন যে, ইস্রায়েল প্রতিজ্ঞাত দেশে সাতটি বলবান কনানীয় জাতিকে পরাজিত করবে। মোশির কথাগুলো কতই না আশ্বাসজনক ছিল: “তোমার ঈশ্বর সদাপ্রভু . . . তোমার সম্মুখে তাহাদিগকে সমর্পণ করিবেন, এবং তুমি তাহাদিগকে আঘাত করিবে”! ইস্রায়েলকে বলা হয়েছিল, তারা যাতে তাদের সঙ্গে কোনো চুক্তি না করে এবং তাদের প্রতি কোনো দয়া না দেখায়।—দ্বিতীয় বিবরণ ১:১; ৭:১, ২.

কিন্তু, ইস্রায়েলীয়রা প্রথম যে-নগর আক্রমণ করেছিল, সেখানকার একটি পরিবারকে যিহোবা আঘাত করেননি। এ ছাড়া, আরও চারটে নগরের লোকেরা ঈশ্বরের সুরক্ষা লাভ করেছিল। কেন এইরকম হয়েছিল? এই কনানীয়দের রক্ষা পাওয়ার সঙ্গে যুক্ত উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো যিহোবা সম্বন্ধে আমাদের কী শেখায়? আর আমরা কীভাবে তাঁকে অনুকরণ করতে পারি?

যিহোবার খ্যাতির প্রতি প্রতিক্রিয়াগুলো

৩, ৪. ইস্রায়েলীয়দের বিজয়ের সংবাদগুলো কনানের অধিবাসীদের ওপর কোন প্রভাব ফেলেছিল?

প্রতিজ্ঞাত দেশে ঢোকার আগে প্রান্তরে ইস্রায়েলের ৪০ বছর কাটানোর সময়ে যিহোবা তাঁর লোকেদের রক্ষা করেছিলেন এবং তাদের হয়ে যুদ্ধ করেছিলেন। ইস্রায়েল প্রতিজ্ঞাত দেশের দক্ষিণে কনানীয় অরাদের রাজার মুখোমুখি হয়েছিল। যিহোবার সাহায্যে ইস্রায়েলীয়রা হর্মাতে তাকে এবং তার লোকেদের পরাজিত করেছিল। (গণনাপুস্তক ২১:১-৩) পরে, ইস্রায়েল ইদোম দেশের প্রান্ত ঘেঁষে যায় এবং উত্তর দিকে যাত্রা করে মৃত সাগরের উত্তরপূর্ব দিকে যায়। এই অঞ্চলে, যেখানে আগে মোয়াবীয়রা বসবাস করত, সেখানে এখন ইমোরীয়রা বাস করে। ইমোরীয় রাজা সীহোন তার এলাকা দিয়ে ইস্রায়েলীয়দের যেতে দেয়নি। স্পষ্টতই অর্ণোন উপত্যকার উত্তরে যহসে যুদ্ধ হয়, যেখানে সীহোনকে হত্যা করা হয়েছিল। (গণনাপুস্তক ২১:২৩, ২৪; দ্বিতীয় বিবরণ ২:৩০-৩৩) আরও উত্তরে বাশনে অগ ইমোরীয়দের ওপর শাসন করছিলেন। যদিও অগ দৈত্যাকৃতি ছিলেন কিন্তু তিনি যিহোবার সমকক্ষ হতে পারেননি। অগকে ইদ্রিয়ীতে হত্যা করা হয়। (গণনাপুস্তক ২১:৩৩-৩৫; দ্বিতীয় বিবরণ ৩:১-৩, ১১) এই বিজয়গুলো ও সেইসঙ্গে মিশর থেকে ইস্রায়েলের যাত্রার বিবরণ কনানে বসবাসরত ব্যক্তিবিশেষের ওপর এক জোরালো প্রভাব ফেলেছিল। *

জর্দন নদী পার হওয়ার পর ইস্রায়েল যখন প্রথম কনানে প্রবেশ করে, তখন তারা গিল্‌গলে শিবির স্থাপন করেছিল। (যিহোশূয়ের পুস্তক ৪:৯-১৯) প্রাচীরবেষ্টিত যিরীহো নগর খুব বেশি দূরে অবস্থিত নয়। যিহোবার কাজগুলো সম্বন্ধে কনানীয় রাহব যা কিছু শুনেছিলেন, সেগুলো তাকে বিশ্বাস অনুযায়ী কাজ করতে উদ্দীপিত করেছিল। এর ফলে, যিহোবা যখন যিরীহোর ওপর ধ্বংস নিয়ে এসেছিলেন, তখন তিনি তাকে এবং তার পরিবারের লোকেদের ওপর আঘাত আনেননি।—যিহোশূয়ের পুস্তক ২:১-১৩; ৬:১৭, ১৮; যাকোব ২:২৫.

৫. কোন বিষয়টা গিবিয়োনীয়দের চতুরতার সঙ্গে কাজ করতে উদ্দীপিত করেছিল?

এরপর, ইস্রায়েল নদীর নিকটবর্তী নিম্নভূমি থেকে সেই অঞ্চলের মধ্যবর্তী পাহাড়গুলোতে ওঠে। যিহোবার নির্দেশনায়, যিহোশূয় অয় নগরের ওপর অতর্কিত আক্রমণ করার কৌশল ব্যবহার করেন। (যিহোশূয়ের পুস্তক ৮ অধ্যায়) পর পর পরাজিত হওয়ার ঘটনাগুলো অনেক কনানীয় রাজাদের যুদ্ধের জন্য একত্রিত হতে উদ্বুদ্ধ করে। (যিহোশূয়ের পুস্তক ৯:১, ২) পার্শ্ববর্তী গিবিয়োনের হিব্বীয় নগরের অধিবাসীরা অন্যরকম প্রতিক্রিয়া দেখায়। যিহোশূয়ের পুস্তক ৯:৪ পদ বলে, “তাহারাও চতুরতার সহিত কার্য্য করিল।” রাহবের মতো তারাও যিহোবা যে তাঁর লোকেদের যাত্রার সময় এবং সীহোন ও অগকে পরাজিত করার সময় উদ্ধার করেছেন, সেই বিষয়ে শুনেছিল। (যিহোশূয়ের পুস্তক ৯:৬-১০) গিবিয়োনীয়রা প্রতিরোধ করার নিষ্ফলতা সম্বন্ধে উপলব্ধি করতে পেরেছিল। তাই, গিবিয়োন এবং নিকটবর্তী তিনটে নগর যেমন, কফরী, বেরোৎ এবং কিরিয়ৎ-যিয়ারীমের পক্ষ থেকে তারা গিল্‌গলে যিহোশূয়ের কাছে বহু দূর দেশ থেকে এসেছে এমন ছদ্মবেশধারী প্রতিনিধিদের পাঠায়। সেই কৌশল সফল হয়েছিল। যিহোশূয় তাদের সঙ্গে এক চুক্তি করেছিলেন, যা তাদের রক্ষার বিষয়টাকে নিশ্চিত করেছিল। তিন দিন পরে যিহোশূয় এবং ইস্রায়েলীয়রা জানতে পেরেছিল যে, তাদের সঙ্গে ছলনা করা হয়েছে। কিন্তু তারা চুক্তি রাখবে বলে যিহোবার নামে দিব্য করেছিল আর তাই তারা তা রক্ষা করেছিল। (যিহোশূয়ের পুস্তক ৯:১৬-১৯) যিহোবা কি অনুমোদন করেছিলেন?

৬. গিবিয়োনীয়দের সঙ্গে যিহোশূয় যে-চুক্তি করেছিলেন, সেই বিষয়ে যিহোবা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন?

গিবিয়োনীয়দেরকে ইস্রায়েলীয়দের জন্য কুঠার এবং জলবাহক হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, এমনকি তা সমাগম-তাম্বুতে “সদাপ্রভুর যজ্ঞবেদির নিমিত্ত” করতে দেওয়া হয়েছিল। (যিহোশূয়ের পুস্তক ৯:২১-২৭) এ ছাড়া, যখন ইমোরীয় পাঁচ রাজা এবং তাদের সেনাবাহিনী গিবিয়োনীয়দের হুমকি দিয়েছিল, তখন যিহোবা অলৌকিকভাবে হস্তক্ষেপ করেছিলেন। যিহোশূয়ের সৈন্যদলের চেয়ে শিলাখণ্ড আরও বেশি শত্রুদের হত্যা করেছিল। যিহোবা এমনকি শত্রুদের পুরোপুরি পরাজিত করার জন্য সূর্য এবং চাঁদকে স্থির রাখার বিষয়ে যিহোশূয়ের বিনতির উত্তর দিয়েছিলেন। যিহোশূয় বলেছিলেন, “তাহার পূর্ব্বে কি পরে সদাপ্রভু যে মনুষ্যের রবে এইরূপ কর্ণপাত করিলেন, এমন আর কোন দিন হয় নাই; কেননা সদাপ্রভু ইস্রায়েলের পক্ষে যুদ্ধ করিতেছিলেন।”—যিহোশূয়ের পুস্তক ১০:১-১৪.

৭. পিতর কোন সত্যটি স্বীকার করেছিলেন, যা কিছু কনানীয়দের বেলায় দেখানো হয়েছিল?

কনানীয় রাহব এবং তার পরিবার ও সেইসঙ্গে গিবিয়োনীয়রা যিহোবাকে ভয় করেছিল এবং সেই অনুযায়ী কাজ করেছিল। তাদের প্রতি যা ঘটেছিল, তা স্পষ্টভাবে একটা সত্যকে তুলে ধরে, যা খ্রিস্টান প্রেরিত পিতর পরবর্তী সময়ে বলেছিলেন: “ঈশ্বর মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাতিত্ব,” NW] করেন না; কিন্তু প্রত্যেক জাতির মধ্যে যে কেহ তাঁহাকে ভয় করে ও ধর্ম্মাচরণ করে, সে তাঁহার গ্রাহ্য হয়।”—প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫.

অব্রাহাম এবং ইস্রায়েলের সঙ্গে আচরণ

৮, ৯. অব্রাহাম এবং ইস্রায়েল জাতির সঙ্গে যিহোবার আচরণে কীভাবে তাঁর পক্ষপাতহীন মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে?

অব্রাহাম এবং তার বংশধরের সঙ্গে আচরণের সময় ঈশ্বর যে-অযাচিত দয়া দেখিয়েছেন, শিষ্য যাকোব সেটার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়েছেন। জাতিগত কোনো উৎস নয় কিন্তু অব্রাহামের বিশ্বাসই তাকে “ঈশ্বরের বন্ধু” করে তুলেছিল। (যাকোব ২:২৩) অব্রাহামের বিশ্বাস এবং যিহোবার প্রতি তার ভালবাসা তার বংশধরদের জন্য আশীর্বাদ নিয়ে এসেছিল। (২ বংশাবলি ২০:৭) অব্রাহামের কাছে যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন: “আমি অবশ্য তোমাকে আশীর্ব্বাদ করিব, এবং আকাশের তারাগণের ও সমুদ্রতীরস্থ বালুকার ন্যায় তোমার অতিশয় বংশবৃদ্ধি করিব।” কিন্তু পরের পদে বলা প্রতিজ্ঞাটি লক্ষ করুন: “তোমার বংশে পৃথিবীর সকল জাতি আশীর্ব্বাদ প্রাপ্ত হইবে।”—আদিপুস্তক ২২:১৭, ১৮; রোমীয় ৪:১-৮.

পক্ষপাতিত্ব দেখানোর একেবারে বিপরীতে, যিহোবা ইস্রায়েলের সঙ্গে তাঁর আচরণের মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন যে, যারা তাঁর বাধ্য থাকে তাদের জন্য তিনি কী করতে পারেন। যিহোবা কীভাবে তাঁর বিশ্বস্ত দাসদের প্রতি অনুগত প্রেম দেখান, সেই বিষয়ে এই ধরনের আচরণ হল একটা উদাহরণ। যদিও ইস্রায়েল যিহোবার “নিজস্ব জাতি” ছিল কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, অন্যান্য লোক ঈশ্বরের কাছ থেকে উপকার লাভ করতে পারবে না। (যাত্রাপুস্তক ১৯:৫; দ্বিতীয় বিবরণ ৭:৬-৮) এটা ঠিক যে, যিহোবা ইস্রায়েলকে মিশরের দাসত্ব থেকে পুনরায় ক্রয় করেছিলেন এবং এর পর ঘোষণা করেছিলেন: “আমি পৃথিবীস্থ সমস্ত গোষ্ঠীর মধ্যে তোমাদেরই পরিচয় লইয়াছি।” কিন্তু, ভাববাদী আমোষ এবং অন্যদের মাধ্যমে যিহোবা “সমস্ত জাতির” (NW) জন্য এক অপূর্ব প্রত্যাশা সম্বন্ধেও প্রতিজ্ঞা করেছিলেন।—আমোষ ৩:২; ৯:১১, ১২; যিশাইয় ২:২-৪.

যিশু, পক্ষপাতহীন শিক্ষক

১০. পক্ষপাতহীন মনোভাব দেখানোর ক্ষেত্রে যিশু কীভাবে তাঁর পিতাকে অনুকরণ করেছিলেন?

১০ যিশু, যিনি তাঁর পিতার মুদ্রাঙ্ক, তিনি তাঁর পার্থিব পরিচর্যার সময় যিহোবার পক্ষপাতহীন মনোভাবকে অনুকরণ করেছিলেন। (ইব্রীয় ১:৩) সেই সময় তাঁর প্রধান চিন্তার বিষয় ছিল, “ইস্রায়েল-কুলের হারান মেষ” খোঁজা। কিন্তু, একটা কুয়োর ধারে একজন শমরীয় মহিলার কাছে সাক্ষ্য দেওয়া থেকে তিনি বিরত থাকেননি। (মথি ১৫:২৪; যোহন ৪:৭-৩০) এ ছাড়া, স্পষ্টতই একজন ন-যিহুদি সেনাপতির অনুরোধে তিনি এক অলৌকিক কাজ করেছিলেন। (লূক ৭:১-১০) সেটা ছিল তাঁর কাজের মাধ্যমে ঈশ্বরের লোকেদের প্রতি প্রেম প্রকাশ করা থেকে আরও বেশি কিছু। যিশুর শিষ্যরাও দূরদূরান্তে প্রচার করেছিল। এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, যিহোবার আশীর্বাদ লাভ করার মাপকাঠি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে নয় কিন্তু মনোভাবের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। নম্র, সৎহৃদয়ের লোকেরা, যারা সত্যের জন্য ক্ষুধার্ত ছিল তারা রাজ্যের সুসমাচারে সাড়া দিয়েছিল। বিপরীতে, গর্বিত ও উদ্ধত মনের ব্যক্তিরা যিশু এবং তাঁর বার্তাকে অবজ্ঞা করেছিল। যিশু ঘোষণা করেছিলেন, “হে পিতঃ, স্বর্গের ও পৃথিবীর প্রভু, আমি তোমার ধন্যবাদ করিতেছি, কেননা তুমি বিজ্ঞ ও বুদ্ধিমানদের হইতে এই সকল বিষয় গুপ্ত রাখিয়া শিশুদের নিকটে এই সকল প্রকাশ করিয়াছ। হাঁ, পিতঃ, কেননা ইহা তোমার দৃষ্টিতে প্রীতিজনক হইল।” (লূক ১০:২১) আমরা যখন প্রেম ও বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে অন্যদের সঙ্গে আচরণ করি, তখন আমরা পক্ষপাতহীনভাবে কাজ করি, এটা জেনে যে এই ধরনের আচরণকেই যিহোবা অনুমোদন করেন।

১১. প্রাথমিক খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে কীভাবে পক্ষপাতহীন মনোভাব দেখানো হয়েছিল?

১১ প্রাথমিক খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে যিহুদি এবং ন-যিহুদিরা সমান ছিল। পৌল ব্যাখ্যা করেছিলেন, “সদাচারী প্রত্যেক মনুষ্যের প্রতি, প্রথমে যিহূদীর, পরে গ্রীকেরও প্রতি প্রতাপ, সমাদর ও শান্তি বর্ত্তিবে। কেননা ঈশ্বরের কাছে পক্ষপাতিত্ব নাই।” * (রোমীয় ২:১০, ১১) তারা যিহোবার অযাচিত দয়া থেকে উপকার পাবে কি না, তা তাদের জাতিগত উৎস নয় কিন্তু যিহোবা এবং তাঁর পুত্র, যিশুর মুক্তির মূল্যের মাধ্যমে যে-প্রত্যাশাগুলো দান করা হয়েছে, সেগুলো সম্বন্ধে জানার পর তাদের প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে নির্ধারিত হতো। (যোহন ৩:১৬, ৩৬) পৌল লিখেছিলেন: “বাহিরে যে যিহূদী সে যিহূদী নয়, এবং বাহিরে মাংসে কৃত যে ত্বক্‌ছেদ তাহা ত্বক্‌ছেদ নয়। কিন্তু আন্তরিক যে যিহূদী সেই যিহূদী, এবং হৃদয়ের যে ত্বক্‌ছেদ, যাহা অক্ষরে নয়, আত্মায়, তাহাই ত্বক্‌চ্ছেদ।” এরপর “যিহূদী” (অর্থ “যিহূদার,” যার গুণকীর্তন বা প্রশংসা করা হয়েছিল) কথাটার সঙ্গে জড়িত শব্দগুলো কৌশলে ব্যবহার করে পৌল আরও বলেছিলেন: “তাহার প্রশংসা মনুষ্য হইতে হয় না, কিন্তু ঈশ্বর হইতে হয়।” (রোমীয় ২:২৮, ২৯) যিহোবা পক্ষপাতহীনভাবে প্রশংসা করেন। আমরাও কি তাই করি?

১২. প্রকাশিত বাক্য ৭:৯ পদ কোন প্রত্যাশা দেয় এবং তা কাদের প্রতি?

১২ পরবর্তী সময়ে, একটা দর্শনে প্রেরিত যোহন বিশ্বস্ত অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের দেখেছিলেন, যাদের ১,৪৪,০০০ জনের এক আত্মিক জাতি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যারা “ইস্রায়েল-সন্তানদের সমস্ত বংশের . . . মুদ্রাঙ্কিত” লোক। এরপর যোহন “প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার বিস্তর লোক” দেখেছিলেন “তাহারা সিংহাসনের সম্মুখে ও মেষ শাবকের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছে; তাহারা শুক্লবস্ত্র পরিহিত, ও তাহাদের হস্তে খর্জ্জুর-পত্র।” (প্রকাশিত বাক্য ৭:৪, ৯) এই কারণে, বর্তমানে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে কোনো জাতিগত দল বা ভাষার লোক বাদ পড়েনি। সমস্ত পটভূমি থেকে লোকেদের নতুন জগতে “জীবন-জলের উনুইয়ের” থেকে পান করার জন্য আসন্ন “মহাক্লেশের” মধ্যে থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে।—প্রকাশিত বাক্য ৭:১৪-১৭.

ইতিবাচক ফলাফল

১৩-১৫. (ক) কীভাবে আমরা বর্ণগত এবং সাংস্কৃতিক বৈসাদৃশ্য কাটিয়ে উঠতে পারি? (খ) বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব দেখানো যে বিভিন্ন উপকার নিয়ে আসতে পারে, সেই বিষয়ে উদাহরণগুলো উল্লেখ করুন।

১৩ যিহোবা আমাদের খুব ভালভাবে জানেন, ঠিক যেমন একজন উত্তম পিতা তার সন্তানদের জানেন। একইভাবে, আমরা যখন অন্যদের সংস্কৃতি এবং পটভূমির প্রতি আগ্রহ দেখিয়ে তাদেরকে বুঝতে পারি, তখন বৈসাদৃশ্য মনোভাবগুলো তুচ্ছ বিষয় হয়ে যায়। জাতিগত বাধাগুলো দূর হয়ে যায় এবং বন্ধুত্ব ও প্রেমের বন্ধন আরও শক্তিশালী হয়। একতা বৃদ্ধি পায়। (১ করিন্থীয় ৯:১৯-২৩) এই বিষয়টা সেই সমস্ত মিশনারিদের কার্যক্রমের মাধ্যমে ভালভাবে প্রকাশিত হয়েছে, যারা বিদেশের কার্যভার গ্রহণ করেছে। তারা সেখানে বসবাসরত লোকেদের প্রতি আগ্রহ দেখায় এবং এর ফলে মিশনারিরা খুব শীঘ্রই দেখেছে যে তারা স্থানীয় মণ্ডলীগুলোর সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে মেলামেশা করতে পেরেছে।—ফিলিপীয় ২:৪.

১৪ পক্ষপাতহীন হওয়ার ইতিবাচক ফলাফল অনেক দেশে প্রকাশ পেয়েছে। আকলিলু, যিনি ইথিওপিয়া থেকে এসেছেন, তিনি ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনে একাকী বাস করতেন। তার একাকিত্ব আরও তীব্র হয়, যখন অন্য দেশগুলো থেকে আসা লোকেদের প্রতি সাধারণ বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবের অভাব আছে বলে তার কাছে মনে হয়েছিল, যে-বিষয়টা আধুনিক ইউরোপের অনেক বড় বড় শহরে দেখা যায়। আকলিলু যখন যিহোবার সাক্ষিদের কিংডম হলের একটা সভাতে যোগ দিয়েছিলেন, তখন তার অভিজ্ঞতা কত ভিন্নই না ছিল! সেখানে উপস্থিত সকলে তাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিল এবং খুব শীঘ্রই তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে শুরু করেছিলেন। সৃষ্টিকর্তার প্রতি তার উপলব্ধিকে আরও গভীর করার ক্ষেত্রে তিনি দ্রুত উন্নতি করতে থাকেন। খুব শীঘ্রই তিনি সেই জেলার অন্যান্য লোকেদের কাছে রাজ্যের সুসমাচার ছড়িয়ে দেওয়ায় কাজে অংশ নেওয়ার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকেন। বস্তুত, একদিন আকলিলুর প্রচারসঙ্গী যখন তাকে জিজ্ঞেস করেন যে, তার জীবনে এখন কোন লক্ষ্য রয়েছে, তখন আকলিলু সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেন যে, কোনো এক দিন তিনি তার নিজের ভাষা অ্যামহারিকে কথা বলে এমন একটা মণ্ডলীর অংশ হওয়ার আশা রাখেন। স্থানীয় ইংরেজি ভাষী মণ্ডলীর প্রাচীনরা যখন এই বিষয়ে জানতে পারেন, তখন তারা আনন্দের সঙ্গে আকলিলুর নিজের ভাষায় জনসাধারণের বাইবেল-ভিত্তিক বক্তৃতা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। ব্রিটেনে প্রথম অ্যামহারিক ভাষায় জনসাধারণের সভাকে সমর্থন করার জন্য উপস্থিত হওয়ার আমন্ত্রণে অনেক বিদেশি এবং স্থানীয় লোকেরা এসেছিল। আজকে, ইথিওপিয়া এবং সেই এলাকার অন্যান্য লোকেরা এক বৃদ্ধিরত মণ্ডলীতে একতাবদ্ধ। সেখানকার অনেকে দেখেছে যে, কোনো কিছু তাদেরকে যিহোবার পক্ষে থাকতে এবং খ্রিস্টীয় বাপ্তিস্মের মাধ্যমে সেটাকে প্রতীকরূপে প্রকাশ করতে বাধা দিতে পারে না।—প্রেরিত ৮:২৬-৩৬.

১৫ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং পটভূমি বিভিন্ন রকমের হতে পারে। সেগুলো শ্রেষ্ঠতা বা হীনতার কোনো মাপকাঠি নয়; সেগুলো শুধুই আলাদা বৈশিষ্ট্য। মালটা দ্বীপে নতুন উৎসর্গীকৃত যিহোবার দাসদের বাপ্তিস্ম দেখার সময় স্থানীয় সাক্ষিদের আনন্দিত উচ্ছ্বাস দেখে ব্রিটেন থেকে আসা দর্শনার্থীদের চোখ দিয়ে আনন্দাশ্রু গড়িয়ে পড়েছিল। মালটা দ্বীপের অধিবাসী এবং ব্রিটিশ দুদলই তাদের অনুভূতি ভিন্নভাবে প্রকাশ করেছিল এবং যিহোবার প্রতি তাদের গভীর প্রেম খ্রিস্টীয় সাহচর্যের বন্ধনকে দৃঢ়ভাবে একত্রিত করেছিল।—গীতসংহিতা ১৩৩:১; কলসীয় ৩:১৪.

প্রতিকূল ধারণা কাটিয়ে ওঠা

১৬-১৮. কীভাবে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে প্রতিকূল ধারণা কাটিয়ে ওঠা যেতে পারে, সেই বিষয়ে একটা অভিজ্ঞতা বলুন।

১৬ যিহোবা এবং আমাদের খ্রিস্টান ভাইবোনদের প্রতি আমাদের ভালবাসা যত গভীর হয়, ততই আমরা অন্যদের যেভাবে দেখি, সেই ক্ষেত্রে যিহোবাকে আরও ভালভাবে অনুকরণ করতে পারি। নির্দিষ্ট কোনো জাতি, বর্ণ অথবা সংস্কৃতির প্রতি আগে আমাদের যে-প্রতিকূল ধারণা ছিল, সেগুলো কাটিয়ে ওঠা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, অ্যালবার্টের কথা বিবেচনা করুন যিনি ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন এবং ১৯৪২ সালে সিঙ্গাপুর পরাজিত হওয়ায় জাপানিদের দ্বারা বন্দি হন। এরপর যে-জায়গাটা কোয়ায়ি নদীর ওপর সেতু নামে পরিচিত হয়ে ওঠে, সেটার কাছাকাছি “ডেথ রেলরোড”-এ প্রায় তিন বছর কাজ করেন। যুদ্ধ শেষে মুক্তি পাওয়ার পর তার ওজন ৩২ কেজি হয়ে যায়, চোয়াল ও নাক ভেঙে পড়ে এবং আমাশয়, দাদ ও ম্যালেরিয়ায় ভোগেন। হাজার হাজার সহ বন্দিদের অবস্থা আরও গুরুতর ছিল; অনেকে মারা যায়। অ্যালবার্ট যে-নিষ্ঠুর বর্বরতা দেখেছিলেন এবং সহ্য করেছিলেন, সেই কারণে ১৯৪৫ সালে তিনি এক তিক্ত ব্যক্তি হিসেবে বাড়ি ফিরে যান, যার ঈশ্বর বা ধর্মের প্রতি কোনো আগ্রহই ছিল না।

১৭ অ্যালবার্টের স্ত্রী আইরিন যিহোবার সাক্ষিদের একজন হন। তাকে খুশি করার জন্য অ্যালবার্ট স্থানীয় যিহোবার সাক্ষিদের মণ্ডলীর কয়েকটা সভাতে যোগ দেন। পল নামে পূর্ণ-সময়ের একজন যুবক পরিচারক অ্যালবার্টের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করার জন্য তার সঙ্গে দেখা করেন। খুব শীঘ্রই অ্যালবার্ট বুঝতে পারেন যে, যিহোবা ব্যক্তিবিশেষের হৃদয়ের অবস্থা অনুযায়ী তাদেরকে দেখেন। তিনি যিহোবার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করেন এবং বাপ্তিস্ম নেন।

১৮ পরবর্তী সময়ে পল লন্ডনে চলে যান, জাপানি ভাষা শেখেন এবং জাপানি ভাষী মণ্ডলীর সঙ্গে মেলামেশা শুরু করেন। তিনি যখন তার আগের মণ্ডলী পরিদর্শনের জন্য কিছু অতিথি জাপানি সাক্ষিকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন, তখন সেখানকার ভাইয়েরা সেই পটভূমির লোকেদের সম্বন্ধে অ্যালবার্টের বদ্ধমূল প্রতিকূল ধারণার কথা স্মরণ করেন। অ্যালবার্ট ব্রিটেনে ফিরে আসার পর থেকে যেহেতু জাপান থেকে আগত যেকোনো ব্যক্তির মুখোমুখি হওয়া এড়িয়ে চলতেন, তাই ভাইয়েরা চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন যে, কীভাবে তিনি সেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করবেন। কিন্তু তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না কারণ অ্যালবার্ট নিঃশর্ত ভ্রাতৃপ্রেমের সঙ্গে সেই অতিথিদের গ্রহণ করেছিলেন।—১ পিতর ৩:৮, ৯.

“প্রশস্ত হও”

১৯. পক্ষপাতিত্বের কোনো প্রবণতা যদি আমাদের মধ্যে থাকে, তা হলে প্রেরিত পৌলের কোন পরামর্শ আমাদের সাহায্য করতে পারে?

১৯ “মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাতিত্ব,” NW] করা ভাল নয়,” জ্ঞানী রাজা শলোমন লিখেছিলেন। (হিতোপদেশ ২৮:২১) আমরা যাদের ভালভাবে জানি, তাদের নিকটবর্তী হওয়া খুবই সহজ। কিন্তু, যাদেরকে আমরা ভাল করে জানি না, কখনও কখনও তাদের প্রতি খুব কম আগ্রহ দেখানোর প্রবণতা আমাদের থাকে। এই ধরনের পক্ষপাতিত্ব দেখানো যিহোবার একজন দাসের জন্য সঠিক নয়। স্পষ্টতই, ‘প্রশস্ত হওয়ার’—হ্যাঁ, ভিন্ন পটভূমি থেকে আসা সহ খ্রিস্টানদের প্রতি প্রেম দেখানোর ক্ষেত্রে প্রশস্ত হওয়ার—বিষয়ে পৌলের স্পষ্ট পরামর্শে আমাদের সকলেরই মনোযোগ দেওয়া উচিত।—২ করিন্থীয় ৬:১৩.

২০. জীবনের কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের পক্ষপাতহীন ঈশ্বর যিহোবাকে অনুকরণ করা উচিত?

২০ আমাদের স্বর্গীয় আহ্বানের বিশেষ সুযোগ অথবা চিরকাল পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আশা যাই থাকুক না কেন, আমাদের পক্ষপাতহীন মনোভাব এক পালে ও এক পালকের অধীনে একতা উপভোগ করতে সমর্থ করে। (ইফিষীয় ৪:৪, ৫, ১৬) আমাদের পক্ষপাতহীন ঈশ্বর যিহোবাকে অনুকরণ করার প্রচেষ্টা আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচর্যায়, আমাদের পরিবারে এবং মণ্ডলীতে, বস্তুত আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। কীভাবে? পরের প্রবন্ধটি এই বিষয়ে জানাবে।

[পাদটীকাগুলো]

^ যিহোবার খ্যাতি পরে পবিত্র গানগুলোর বিষয়বস্তু হয়েছিল।—গীতসংহিতা ১৩৫:৮-১১; ১৩৬:১১-২০.

^ এখানে “গ্রীকেরও” অভিব্যক্তিটি সাধারণত পরজাতীয়দের বোঝায়।—যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত শাস্ত্রের প্রতি অন্তর্দৃষ্টি (ইংরেজি) খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১০০৪.

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

রাহব এবং গিবিয়োনীয়দের প্রতি যিহোবা কীভাবে পক্ষপাতহীন মনোভাব দেখিয়েছিলেন?

যিশু তাঁর শিক্ষায় কীভাবে পক্ষপাতহীন মনোভাব দেখিয়েছিলেন?

যেকোনো সংস্কৃতি এবং বর্ণগত প্রতিকূল ধারণা কাটিয়ে উঠতে কী আমাদের সাহায্য করতে পারে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

ইস্রায়েলের কনান জয়ের শুরু

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

একজন শমরীয় মহিলার কাছে সাক্ষ্য দেওয়া থেকে যিশু বিরত হননি

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

ব্রিটেনে অ্যামহারিক ভাষার একটি জনসাধারণের সভা

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

যিহোবার প্রতি অ্যালবার্টের ভালবাসা তাকে প্রতিকূল ধারণা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল