সকলের মধ্যে ভাল কিছু খোঁজার চেষ্টা করুন
সকলের মধ্যে ভাল কিছু খোঁজার চেষ্টা করুন
“হে আমার ঈশ্বর, মঙ্গলার্থে আমাকে স্মরণ কর।”—নহিমিয় ১৩:৩১.
১. যিহোবা কীভাবে সকলের প্রতি মঙ্গলভাব দেখিয়ে কাজ করেন?
মেঘাচ্ছন্ন এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন কয়েক দিনের পর, সূর্যালোক এক আনন্দদায়ক পরিবর্তন নিয়ে আসে। লোকেরা খোশমেজাজে থাকে এবং আনন্দিত হয়। একইভাবে, দীর্ঘদিন ধরে কাঠ-ফাটা রোদ এবং শুষ্ক আবহাওয়ার পরে, এক পশলা বৃষ্টি—এমনকি আকস্মিক প্রবল ঝড়বৃষ্টি—সতেজতা এবং স্বস্তি নিয়ে আসে। আমাদের প্রেমময় সৃষ্টিকর্তা, যিহোবা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্যে আবহাওয়ার এই অপূর্ব দান দিয়েছেন। ঈশ্বরের উদারতার প্রতি যিশু মনোযোগ আকর্ষণ করিয়েছিলেন, যখন তিনি শিখিয়েছিলেন: “তোমরা আপন আপন শত্রুদিগকে প্রেম করিও, এবং যাহারা তোমাদিগকে তাড়না করে তাহাদের জন্য প্রার্থনা করিও; যেন তোমরা আপনাদের স্বর্গস্থ পিতার সন্তান হও, কারণ তিনি ভাল মন্দ লোকদের উপরে আপনার সূর্য্য উদিত করেন, এবং ধার্ম্মিক অধার্ম্মিকগণের উপরে জল বর্ষান।” (মথি ৫:৪৩-৪৫) হ্যাঁ, যিহোবা সকলের প্রতি মঙ্গলভাব দেখিয়ে কাজ করেন। তাঁর দাসদের অন্যদের মধ্যে মঙ্গলজনক বা ভাল কিছু খোঁজার চেষ্টা করে তাঁকে অনুকরণ করা উচিত।
২. (ক) কীসের ভিত্তিতে যিহোবা মঙ্গলভাব দেখিয়ে কাজ করেন? (খ) তাঁর মঙ্গলভাবের প্রতি আমরা যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাই, সেই বিষয়ে যিহোবা কী লক্ষ করেন?
২ কীসের ভিত্তিতে যিহোবা মঙ্গলভাব দেখিয়ে কাজ করেন? আদম পাপে পতিত হওয়ার পর থেকে যিহোবা মানুষের মধ্যে ভাল কিছু খোঁজার চেষ্টা করেছেন। (গীতসংহিতা ১৩০:৩, ৪) তাঁর উদ্দেশ্য হল, বাধ্য মানবজাতিকে পরমদেশে জীবন ফিরিয়ে দেওয়া। (ইফিষীয় ১:৯, ১০) তাঁর অযাচিত দয়া আমাদের প্রতিজ্ঞাত বংশের মাধ্যমে পাপ এবং অসিদ্ধতা থেকে মুক্তির প্রত্যাশা দিয়েছে। (আদিপুস্তক ৩:১৫; রোমীয় ৫:১২, ১৫) মুক্তির মূল্যের ব্যবস্থা মেনে নেওয়া পরিশেষে সিদ্ধতায় ফিরে যাওয়াকে সম্ভবপর করে তোলে। যিহোবা এখন অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে তাঁর উদারতার প্রতি আমাদের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য আমাদের প্রত্যেককে লক্ষ করছেন। (১ যোহন ৩:১৬) তাঁর মঙ্গলভাবের প্রতি উপলব্ধি দেখাতে আমরা যা কিছুই করি না কেন, তিনি সেগুলো লক্ষ করেন। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন, “ঈশ্বর অন্যায়কারী নহেন; তোমাদের কার্য্য, এবং . . . তাঁহার নামের প্রতি প্রদর্শিত তোমাদের প্রেম, এই সকল তিনি ভুলিয়া যাইবেন না।”—ইব্রীয় ৬:১০.
৩. কোন প্রশ্ন আমাদের বিবেচনা করতে হবে?
৩ তা হলে, অন্যদের মধ্যে ভাল কিছু খোঁজার বিষয়ে আমরা কীভাবে যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারি? আসুন আমরা জীবনের চারটে ক্ষেত্রে এই প্রশ্নের উত্তরগুলো বিবেচনা করি: (১) খ্রিস্টীয় পরিচর্যা, (২) পরিবার, (৩) মণ্ডলী এবং (৪) অন্যদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক।
প্রচার এবং শিষ্য তৈরির সময়
৪. খ্রিস্টীয় পরিচর্যায় অংশগ্রহণ করা কীভাবে অন্যদের মধ্যে ভাল কিছু খোঁজার চেষ্টা করার এক প্রকাশ?
৪ গোম এবং শ্যামাঘাসের নীতিগল্পের অর্থ সম্বন্ধে তাঁর শিষ্যদের প্রশ্নের উত্তরে যিশু ব্যাখ্যা করেছিলেন, “ক্ষেত্র জগৎ।” খ্রিস্টের আধুনিক দিনের শিষ্য হিসেবে আমরা এই সত্য স্বীকার করি, যখন আমরা ক্ষেত্রের পরিচর্যায় রত থাকি। (মথি ১৩:৩৬-৩৮; ২৮:১৯, ২০) আমাদের ক্ষেত্রের পরিচর্যার সঙ্গে জনসাধারণ্যে আমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে ঘোষণা করা জড়িত। যিহোবার সাক্ষিরা যে এখন ঘরে-ঘরে এবং রাস্তায়-রাস্তায় পরিচর্যার জন্য সুপরিচিত, সেই বিষয়টা রাজ্যের বার্তার জন্য যোগ্য এমন সমস্ত ব্যক্তিকে খোঁজার ক্ষেত্রে আমাদের অধ্যবসায়ের প্রমাণ দেয়। বস্তুত, যিশু আদেশ দিয়েছিলেন: “তোমরা যে নগরে কি গ্রামে প্রবেশ করিবে, তথাকার কোন্ ব্যক্তি যোগ্য, তাহা অনুসন্ধান করিও।”—মথি ১০:১১; প্রেরিত ১৭:১৭; ২০:২০.
৫, ৬. কেন আমরা লোকেদের ঘরে বার বার সাক্ষাৎ করা চালিয়ে যাব?
৫ লোকেদের সঙ্গে অপ্রত্যাশিত সাক্ষাৎ করার সময় আমরা আমাদের বার্তার প্রতি তাদের প্রতিক্রিয়া লক্ষ করি। কখনও কখনও আমরা দেখি যে, কোনো একটা পরিবারে একজন সদস্য আমাদের কথা শোনে কিন্তু সেই একই ঘরের অন্য ব্যক্তি বলে যে, “আমরা আগ্রহী নই” আর সেখানেই সাক্ষাৎ শেষ হয়ে যায়। একজন ব্যক্তির সেই বিরোধিতা বা অনাগ্রহ আরেকজন ব্যক্তির সাড়া দেওয়াতে প্রভাব ফেলায় আমরা কতই না দুঃখ পাই! সেই সময়, সকলের মধ্যে ভাল কিছু খোঁজার ক্ষেত্রে অধ্যবসায়ী হতে আমরা কী করতে পারি?
৬ সেই এলাকায় প্রচার করার সময় পরের বার ওই ঘরে যাওয়া সেই ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ করে দিতে পারে, যিনি আগের সাক্ষাৎ সংক্ষিপ্ত করে দিয়েছিলেন। সেই সময় কী হয়েছিল তা মনে রাখা আমাদের প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করতে পারে। বিরোধী ব্যক্তি হয়তো ভাল মনোভাব নিয়েই আচরণ করেছিলেন, মনে করেছিলেন যে যিনি সাড়া দিচ্ছেন তাকে রাজ্যের বার্তা শোনা থেকে থামাতে হবে। আমাদের অভিপ্রায়গুলো সম্বন্ধে ভুল তথ্যের কারণে তার দৃষ্টিভঙ্গি হয়তো এইরকম ছিল। কিন্তু তা আমাদের সেই ঘরে রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করা চালিয়ে যেতে এবং কৌশলতার সঙ্গে ভুল ধারণাগুলো সংশোধন করতে বাধা দেয় না। ঈশ্বর সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান অর্জন করার জন্য সকলকে সাহায্য করতে আমরা আগ্রহী। তখনই হয়তো যিহোবা সেই ব্যক্তিকে তাঁর দিকে আকর্ষণ করবেন।—যোহন ৬:৪৪; ১ তীমথিয় ২:৪.
৭. আমরা যখন লোকেদের কাছে যাই, তখন কোন বিষয়টা আমাদের ইতিবাচক হতে সাহায্য করতে পারে?
৭ যিশুর শিষ্যদের প্রতি তাঁর নির্দেশনার মধ্যে পারিবারিক বিরোধিতাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি কি বলেননি: “আমি পিতার সহিত পুত্ত্রের, মাতার সহিত কন্যার, এবং শাশুড়ীর সহিত বধূর বিচ্ছেদ জন্মাইতে আসিয়াছি”? যিশু আরও বলেছিলেন: “আপন আপন পরিজনই মনুষ্যের শত্রু হইবে।” (মথি ১০:৩৫, ৩৬) তবে, পরিস্থিতি এবং আচরণের পরিবর্তন ঘটে। আকস্মিক অসুস্থতা, মৃত্যুতে কোনো আত্মীয়কে হারানো, দুর্দশা, মানসিক বিপর্যয় এবং অসংখ্য অন্যান্য বিষয় আমাদের প্রচারের প্রতি লোকেদের প্রতিক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। আমাদের যদি এইরকম নেতিবাচক মনোভাব থাকে যে, আমরা যে-লোকেদের কাছে প্রচার করি তারা কখনও সাড়া দেবে না, তা হলে আমরা কি সত্যিই তাদের মধ্যে ভাল কিছু খোঁজার চেষ্টা করি? অন্য কোনো সময়ে আনন্দ সহকারে তাদের ঘরে পুনরায় যান না কেন? আমরা হয়তো ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখতে পারি। কখনও কখনও আমরা যা বলি শুধু তাই নয় কিন্তু আমরা যেভাবে বলি তা বিপরীত প্রতিক্রিয়া নিয়ে আসতে পারে। প্রচার শুরু করার আগে যিহোবার কাছে ঐকান্তিক প্রার্থনা নিশ্চিতভাবেই আমাদের ইতিবাচক হতে এবং সকলের কাছে হৃদয়গ্রাহী করে রাজ্যের বার্তা তুলে ধরতে সাহায্য করে।—কলসীয় ৪:৬; ১ থিষলনীকীয় ৫:১৭.
৮. খ্রিস্টানরা যখন তাদের অবিশ্বাসী আত্মীয়দের মধ্যে ভাল কিছু খোঁজার চেষ্টা করে, তখন এর ফল কী হতে পারে?
৮ কোনো কোনো মণ্ডলীতে একই পরিবারের অনেক সদস্য যিহোবাকে সেবা করে। বেশির ভাগ সময়ই যে-বিষয়টা অল্পবয়স্কদের কাছ থেকে প্রশংসা এবং সম্মান অর্জন করেছে, তা ছিল কোনো বয়স্ক আত্মীয়ের অধ্যবসায়, যার পরিবার এবং বৈবাহিক বন্ধনের মধ্যে উত্তম সম্পর্ক অল্পবয়স্কদের হৃদয় পরিবর্তনের পথ সহজ করে দিয়েছে। প্রেরিত পিতরের পরামর্শে মনোযোগ দেওয়া অনেক খ্রিস্টান স্ত্রীদের তাদের স্বামীকে “বাক্যবিহীনে” লাভ করতে সাহায্য করেছে।—১ পিতর ৩:১, ২.
পরিবারে
৯, ১০. যাকোব এবং যোষেফ দুজনেই কীভাবে তাদের পরিবারের মধ্যে ভাল কিছু খোঁজার চেষ্টা করেছিল?
৯ যে-কাছের বন্ধন একটা পরিবারের সদস্যদের সংযুক্ত করে, সেটা হল আরেকটা ক্ষেত্র যেখানে আমরা অন্যদের মধ্যে ভাল কিছু খোঁজার চেষ্টা করতে পারি। যাকোব তার ছেলেদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেছিলেন, সেটা থেকে একটা শিক্ষা বিবেচনা করুন। আদিপুস্তক ৩৭ অধ্যায়ের ৩ এবং ৪ পদে বাইবেল ইঙ্গিত দেয় যে, যাকোব বিশেষ করে যোষেফকে ভালবাসতেন। যোষেফের ভাইয়েরা ঈর্ষান্বিত হয়েছিল, এমনকি তাদের ভাইকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্রও করেছিল। কিন্তু, পরবর্তী সময়ে যাকোব ও যোষেফের প্রতিক্রিয়া লক্ষ করুন। তারা দুজনেই তাদের পরিবারের মধ্যে ভাল কিছু খোঁজার চেষ্টা করেছিল।
১০ মিশরের দুর্ভিক্ষের সময় যোষেফ যখন প্রধান খাদ্য প্রশাসক হিসেবে কাজ করছিলেন, তখন তিনি তার ভাইদের অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। তখনই তার পরিচয় না দিয়ে তিনি কৌশলে বিভিন্ন ঘটনা ঘটান এটা নিশ্চিত করার জন্য যে, তারা ভাল আছে এবং তাদের বৃদ্ধ বাবার কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের খাদ্য আছে। হ্যাঁ, তাদের ঘৃণার শিকার হওয়া সত্ত্বেও, যোষেফ তাদের মঙ্গলের জন্য কাজ করেছিলেন। (আদিপুস্তক ৪১:৫৩–৪২:৮; ৪৫:২৩) একইভাবে, মৃত্যুশয্যায় যাকোব তার সমস্ত ছেলের জন্য ভবিষ্যদ্বাণীমূলক আশীর্বাদগুলোর কথা ঘোষণা করেছিলেন। যদিও মন্দ কাজের জন্য তাদের বিশেষ সুযোগ কিছুটা কমে গিয়েছিল, তবে কেউই দেশের উত্তরাধিকারী হওয়া থেকে বাদ পড়েনি। (আদিপুস্তক ৪৯:৩-২৮) সেখানে যাকোব চির প্রেমের কত অপূর্ব প্রকাশই না দেখিয়েছেন!
১১, ১২. (ক) কোন ভবিষ্যদ্বাণীমূলক উদাহরণ পরিবারের মধ্যে ভাল কিছু খোঁজার চেষ্টা করার গুরুত্ব সম্বন্ধে জোর দেয়? (খ) যিশুর অপব্যয়ী পুত্রের দৃষ্টান্তে বাবার উদাহরণ থেকে আমরা কোন শিক্ষা পাই?
১১ যিহোবা কীভাবে তাঁর লোকেদের মধ্যে ভাল কিছু খোঁজার চেষ্টা করেন, সেই বিষয়ে অবিশ্বস্ত ইস্রায়েল জাতির সঙ্গে আচরণের সময় তাঁর দীর্ঘসহিষ্ণুতা আরও অন্তর্দৃষ্টি দেয়। ভাববাদী হোশেয়র পারিবারিক পরিস্থিতি ব্যবহার করে যিহোবা তাঁর চির প্রেম দেখিয়েছেন। হোশেয়র স্ত্রী গোমর, একাধিকবার ব্যভিচার করেছিল। তা সত্ত্বেও, যিহোবা হোশেয়কে নির্দেশ দিয়েছিলেন, “তুমি পুনশ্চ যাইয়া কান্তের প্রিয়া অথচ ব্যভিচারিণী এক স্ত্রীকে প্রেম কর; যেমন সদাপ্রভু ইস্রায়েল-সন্তানগণকে প্রেম করেন, যদিও তাহারা অন্য দেবগণের প্রতি ফিরিয়া থাকে, এবং দ্রাক্ষাপূপ ভালবাসে।” (হোশেয় ৩:১) কেন এই ধরনের নির্দেশনা দিয়েছিলেন? যিহোবা জানতেন যে, যে-জাতি তাঁর পথ থেকে সরে গিয়েছে, সেই জাতির মধ্যে থেকে কেউ কেউ তাঁর ধৈর্যের প্রতি সাড়া দেবে। হোশেয় ঘোষণা করেছিলেন: “পরে ইস্রায়েল-সন্তানগণ ফিরিয়া আসিবে, আপনাদের ঈশ্বর সদাপ্রভুর ও আপনাদের রাজা দায়ূদের অন্বেষণ করিবে, এবং উত্তরকালে সভয়ে সদাপ্রভুর ও তাঁহার মঙ্গল-ভাবের আশ্রয় লইবে।” (হোশেয় ৩:৫) নিশ্চিতভাবেই, পারিবারিক সমস্যাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার সময় এটা বিবেচনা করার মতো এক উত্তম উদাহরণ। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে ভাল কিছু খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া অন্ততপক্ষে ধৈর্য ধরার ক্ষেত্রে এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করবে।
১২ আমাদের নিজ পরিবারের সঙ্গে যুক্ত লোকেদের মধ্যে কীভাবে আমরা ভাল কিছু খোঁজার চেষ্টা করতে পারি, সেই বিষয়ে যিশুর অপব্যয়ী পুত্রের নীতিগল্প আরও অন্তর্দৃষ্টি দেয়। ছোট ছেলে তার অপব্যয়ী জীবন ত্যাগ করার পর বাড়ি ফিরে এসেছিল। বাবা তার সঙ্গে করুণাপূর্ণ ব্যবহার করেছিলেন। বড় ছেলে, যে কখনও তার পরিবার ছেড়ে চলে যায়নি, তার অভিযোগের প্রতি বাবা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? তার বড় ছেলেকে উদ্দেশ করে বাবা বলেছিলেন: “বৎস, তুমি সর্ব্বদাই আমার সঙ্গে আছ, আর যাহা যাহা আমার, সকলই তোমার।” এটা কোনো বিরক্তিকর ধমক নয় কিন্তু বাবার স্বাভাবিক প্রেমের নিশ্চয়তা ছিল। “আমাদের আমোদ প্রমোদ ও আনন্দ করা উচিত হইয়াছে,” তিনি বলে চলেন, “কারণ তোমার এই ভাই মরিয়া গিয়াছিল, এখন বাঁচিল; হারাইয়া গিয়াছিল, এখন পাওয়া গেল।” একইভাবে, আমরা অন্যদের মধ্যে ভাল কিছু খোঁজার চেষ্টা করতে পারি।—লূক ১৫:১১-৩২.
খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে
১৩, ১৪. খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মধ্যে প্রেমের রাজকীয় ব্যবস্থা পালন করার একটা উপায় কী?
১৩ খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের লক্ষ্য হল, প্রেমের রাজকীয় ব্যবস্থা পালন করা। (যাকোব ২:১-৯) এটা ঠিক যে, আমরা হয়তো আমাদের মণ্ডলীর এমন সদস্যদের গ্রহণ করতে পারি, যাদের অবস্থা আমাদের নিজেদের বস্তুগত পরিস্থিতি থেকে ভিন্ন। কিন্তু আমাদের মধ্যে কি বর্ণ, সংস্কৃতি বা এমনকি ধর্মীয় পটভূমির জন্য “ভেদাভেদ” আছে? যদি থেকে থাকে, তা হলে কীভাবে আমরা যাকোবের পরামর্শ হৃদয়ে নিতে পারি?
১৪ যারা খ্রিস্টীয় সভাতে যোগ দেয়, তাদের সকলকে অভ্যর্থনা জানানো আমাদের উদার মনোভাবের প্রমাণ দেয়। কিংডম হলে এসেছে এমন নতুন ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলার জন্য আমরা যখন নিজে থেকে পদক্ষেপ নিই, তখন তাদের মধ্যে প্রথম প্রথম যে ঘাবড়ে যাওয়ার এবং বিব্রত মনোভাব থাকে, সেটা দূর হয়ে যায়। বস্তুত, যারা প্রথমবারের মতো খ্রিস্টীয় সভাতে যোগ দিয়েছিল, তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলেছে: “সকলে খুবই বন্ধুত্বপরায়ণ। মনে হয়েছিল যেন সকলেই আমাকে আগে থেকে চেনে। আমি খুবই স্বস্তি বোধ করি।”
১৫. বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রতি আগ্রহ দেখাতে কীভাবে মণ্ডলীর অল্পবয়স্কদের সাহায্য করা যেতে পারে?
১৫ কোনো কোনো মণ্ডলীতে সভার শেষে কিছু অল্পবয়স্ক ছেলেমেয়ে হয়তো কিংডম হলের ভিতরে বা বাইরে একত্রিত হয়, বড়দের সঙ্গে মেলামেশা এড়িয়ে চলে। এই প্রবণতা কাটিয়ে ওঠার জন্য কীভাবে ইতিবাচক কিছু করা যেতে পারে? অবশ্যই প্রথম পদক্ষেপ হল, বাবামারা ঘরে তাদের ছেলেমেয়েদের প্রশিক্ষণ দেবেন, সভাগুলোর জন্য তাদের প্রস্তুত করবেন। (হিতোপদেশ ২২:৬) তাদের হয়তো বিভিন্ন প্রকাশনা প্রস্তুত রাখার দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে, যাতে করে সভাগুলোতে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের সকলের যা দরকার, সেগুলো হাতের কাছে থাকে। এ ছাড়া, কিংডম হলের বয়স্ক এবং দুর্বল ব্যক্তিদের সঙ্গে একটু কথা বলার জন্য ছেলেমেয়েদের উৎসাহ দিতে বাবামারা সবচেয়ে উত্তম অবস্থানে আছে। এই ধরনের ব্যক্তিদেরকে উদ্দেশ্যপূর্ণ কিছু বলা ছেলেমেয়েদের মনে পরিতৃপ্তির মনোভাব এনে দিতে পারে।
১৬, ১৭. প্রাপ্তবয়স্করা কীভাবে মণ্ডলীর অল্পবয়স্কদের মধ্যে ভাল কিছু খোঁজার চেষ্টা করতে পারে?
১৬ বয়স্ক ভাই ও বোনদেরও মণ্ডলীর অল্পবয়স্কদের প্রতি আগ্রহ দেখানো উচিত। (ফিলিপীয় ২:৪) অল্পবয়স্কদের সঙ্গে উৎসাহমূলক উপায়ে কথা বলার জন্য তারা পদক্ষেপ নিতে পারে। সভার সময় সাধারণত কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় তুলে ধরা হয়। অল্পবয়স্কদের হয়তো জিজ্ঞেস করা যেতে পারে যে, তারা সভা উপভোগ করেছে কি না এবং এমন কোনো বিষয় কি আছে, যেগুলো তারা বিশেষভাবে উপলব্ধি করেছে এবং তা কাজে লাগানো যেতে পারে। মণ্ডলীর এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে, অল্পবয়স্কদেরকে তাদের মনোযোগের জন্য স্বীকৃতি দেওয়া এবং সভাতে করা যেকোনো মন্তব্য বা কার্যক্রমের যেকোনো অংশে অংশ নেওয়ার জন্য তাদের প্রশংসা করা উচিত। অল্পবয়স্করা মণ্ডলীতে বয়স্কদের সঙ্গে যেভাবে ব্যবহার করে এবং তারা যেভাবে ঘরে ছোটখাটো কাজগুলোর যত্ন নেয়, তা ইঙ্গিত দেবে যে তারা হয়তো পরবর্তী জীবনে আরও বড় বড় দায়িত্ব ভালভাবে পালন করতে পারবে।—লূক ১৬:১০.
১৭ দায়িত্ব গ্রহণ করার মাধ্যমে কিছু অল্পবয়স্ক এমন উন্নতি করেছে, যেখানে তাদের আধ্যাত্মিক গুণাবলি তাদেরকে আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলো নিতে সমর্থ করেছে। কিছু দায়িত্ব থাকা হয়তো তাদেরকে মূর্খতাপূর্ণ আচরণ এড়াতে সাহায্য করে। (২ তীমথিয় ২:২২) এই ধরনের দায়িত্বগুলো হয়তো সেই সমস্ত ভাইদের জন্য ‘পরীক্ষা’ হতে পারে, যারা পরিচারক দাস হিসেবে সেবা করার আকাঙ্ক্ষা করছে। (১ তীমথিয় ৩:১০) সভাগুলোতে তাদের প্রস্তুতিপূর্ণ অংশগ্রহণ এবং পরিচর্যায় তাদের উদ্যোগ ও সেইসঙ্গে মণ্ডলীর সকলের প্রতি তাদের যত্নশীল মনোভাব, প্রাচীনরা যখন তাদের আরও দায়িত্ব দেওয়ার কথা চিন্তা করেন, তখন তাদের সম্ভাবনা সম্বন্ধে নির্ণয় করতে সাহায্য করে।
সকলের মধ্যে ভাল কিছু খোঁজার চেষ্টা করা
১৮. বিচার করার সময় কোন ফাঁদ এড়িয়ে চলতে হবে এবং কেন?
১৮ হিতোপদেশ ২৪:২৩ পদ ঘোষণা করে, “বিচারে মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাতিত্ব,” NW] করা ভাল নয়।” স্বর্গীয় প্রজ্ঞার চাহিদা অনুসারে মণ্ডলীতে বিচার করার সময় প্রাচীনরা পক্ষপাতিত্ব এড়িয়ে চলে। যাকোব ঘোষণা করেছিলেন: “যে জ্ঞান উপর হইতে আইসে, তাহা প্রথমে শুচি, পরে শান্তিপ্রিয়, ক্ষান্ত, সহজে অনুনীত, দয়া ও উত্তম উত্তম ফলে পরিপূর্ণ, ভেদাভেদবিহীন ও নিষ্কপট।” (যাকোব ৩:১৭) স্পষ্টতই, অন্যদের মধ্যে ভাল কিছু খোঁজার চেষ্টা করার সময় প্রাচীনদের নিশ্চিত হওয়া দরকার যে, তাদের বিচার ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা আবেগের দ্বারা দুর্বল হয়ে যায়নি। “ঈশ্বর ঈশ্বরের মণ্ডলীতে দণ্ডায়মান,” গীতরচক আসফ লিখেছিলেন। “তিনি ঈশ্বরদের [অথবা বিকল্প অর্থে “ঈশ্বরতুল্য ব্যক্তিদের,” মনুষ্য বিচারকদের বোঝায়] মধ্যে বিচার করেন। তোমরা কতকাল অন্যায় বিচার করিবে, ও দুষ্টলোকদের মুখাপেক্ষা [“পক্ষপাতিত্ব,” NW] করিবে?” (গীতসংহিতা ৮২:১, ২) তাই, যেখানে কোনো বন্ধু বা আত্মীয়ের বিষয় জড়িত থাকে, সেখানে খ্রিস্টান প্রাচীনরা যেকোনো পক্ষপাতিত্বের মনোভাব এড়িয়ে চলে। এভাবে তারা মণ্ডলীর একতা রক্ষা করে এবং যিহোবার আত্মাকে নির্বিঘ্নে কাজ করতে দেয়।—১ থিষলনীকীয় ৫:২৩.
১৯. কোন কোন উপায়ে আমরা অন্যদের মধ্যে ভাল কিছু খোঁজার চেষ্টা করতে পারি?
১৯ আমাদের ভাইবোনদের মধ্যে ভাল কিছু খোঁজার চেষ্টা করার ক্ষেত্রে আমরা পৌল থিষলনীকীয় মণ্ডলীর উদ্দেশে বলার সময় যে-মনোভাব দেখিয়েছিলেন, তা প্রতিফলিত করি। তিনি বলেছিলেন: “আর তোমাদের সম্বন্ধে প্রভুতে আমাদের এই দৃঢ় প্রত্যয় আছে যে, আমরা যাহা যাহা আদেশ করি, সেই সকল তোমরা পালন করিতেছ ও করিবে।” (২ থিষলনীকীয় ৩:৪) আমরা যখন অন্যদের মধ্যে ভাল কিছু খোঁজার চেষ্টা করি, তখন আমরা আরও বেশি করে তাদের ভুলগুলোকে এড়িয়ে চলতে পারব। নিশ্চিতভাবেই সমালোচনার মনোভাব এড়িয়ে চলে আমরা এমন ক্ষেত্রগুলো খুঁজব, যেখানে আমরা আমাদের ভাইবোনদের প্রশংসা করতে পারি। পৌল লিখেছিলেন, “ধনাধ্যক্ষের এই গুণ চাই, যেন তাহাকে বিশ্বস্ত দেখিতে পাওয়া যায়।” (১ করিন্থীয় ৪:২) মণ্ডলীতে যাদের ধনাধ্যক্ষ বা তত্ত্বাবধায়কের কাজ রয়েছে শুধু তাদেরই নয় কিন্তু আমাদের সমস্ত খ্রিস্টান ভাই ও বোনদের বিশ্বস্ততা তাদেরকে আমাদের প্রিয় করে তোলে। এভাবে আমরা তাদের আরও কাছে আসি, খ্রিস্টীয় বন্ধুত্বের বন্ধন শক্তিশালী হয়। পৌলের দিনে তিনি ভাইবোনদের প্রতি যে-মনোভাব দেখিয়েছিলেন আমরাও সেইরকম দৃষ্টিভঙ্গি রাখি। তারা “ঈশ্বরের রাজ্যের পক্ষে . . . সহকারী” এবং আমাদের জন্য “সান্ত্বনাজনক [“শক্তিবর্ধক,” NW]।” (কলসীয় ৪:১১) এভাবে আমরা যিহোবার মতো মনোভাব প্রকাশ করি।
২০. যারা সকলের মধ্যে ভাল কিছু খোঁজার চেষ্টা করে, তাদের ওপর কোন আশীর্বাদগুলো আসবে?
২০ নিশ্চিতভাবেই আমরা নহিমিয়ের প্রার্থনায় সুর মেলাই: “হে আমার ঈশ্বর, মঙ্গলার্থে আমাকে স্মরণ কর।” (নহিমিয় ১৩:৩১) আমরা কত আনন্দিত যে, যিহোবা লোকেদের মধ্যে ভাল কিছু খোঁজার চেষ্টা করেন। (১ রাজাবলি ১৪:১৩) অন্যদের সঙ্গে আচরণের সময় আমরাও যেন একই বিষয় করি। তা করা আমাদের পুনরুদ্ধারের এবং খুবই নিকটবর্তী যে নতুন জগৎ, সেখানে অনন্তজীবনের প্রত্যাশা দেয়।—গীতসংহিতা ১৩০:৩-৮.
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• কীসের ভিত্তিতে যিহোবা সকলের প্রতি মঙ্গলভাব দেখিয়ে কাজ করেন?
• কীভাবে আমরা অন্যদের মধ্যে ভাল কিছু খোঁজার চেষ্টা করতে পারি
• আমাদের পরিচর্যায়?
• আমাদের পরিবারে?
• আমাদের মণ্ডলীতে?
• সকলের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
যদিও যোষেফের ভাইয়েরা আগে তার প্রতি ঘৃণা পোষণ করেছিল, তবুও তিনি তাদের মধ্যে ভাল কিছু খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন
[১৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
বিরোধিতা সকলকে সাহায্য করা থেকে আমাদের বিরত করে না
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
যাকোবের কোনো সন্তানই তাদের অতীত সত্ত্বেও, তার আশীর্বাদগুলো থেকে বঞ্চিত হয়নি
[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]
খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে সকলকে অভ্যর্থনা জানান