সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

“ঈশ্বর প্রেম”

“ঈশ্বর প্রেম”

“ঈশ্বর প্রেম”

“যে প্রেম করে না, সে ঈশ্বরকে জানে না, কারণ ঈশ্বর প্রেম।”—১ যোহন ৪:৮.

১-৩. (ক) যিহোবার প্রেম গুণটি সম্বন্ধে বাইবেল কী বলে এবং কোন দিক দিয়ে এই উক্তি অদ্বিতীয়? (খ) বাইবেল কেন বলে যে, “ঈশ্বর প্রেম”?

 যিহোবার সমস্ত গুণই অনুপম, নিখুঁত এবং হৃদয়গ্রাহী। কিন্তু, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রীতিকর হল প্রেম। তাঁর প্রেমের মতো আর কোনো কিছুই আমাদের এতটা প্রবলভাবে যিহোবার নিকটবর্তী করে না। আনন্দের বিষয় হল যে, প্রেম তাঁর প্রধান গুণও। কীভাবে আমরা তা জানি?

বাইবেল প্রেম সম্বন্ধে এমন কিছু বলে, যা যিহোবার অন্য মুখ্য গুণগুলো সম্বন্ধে কখনোই বলে না। শাস্ত্র বলে না যে, ঈশ্বর হলেন শক্তি বা ঈশ্বর হলেন ন্যায়বিচার অথবা এমনকি ঈশ্বর হলেন প্রজ্ঞা। তিনি এই গুণগুলোর অধিকারী এবং এই তিনটে গুণের চূড়ান্ত উৎস। তবে, প্রেম সম্বন্ধে ১ যোহন ৪:৮ পদে আরও গভীর কিছু বলা হয়েছে: “ঈশ্বর প্রেম।” হ্যাঁ, প্রেম যিহোবার খুবই গভীরে ব্যাপ্ত। এটা তাঁর সত্তা বা স্বভাব। সাধারণভাবে বলতে গেলে আমরা হয়তো এটাকে এভাবে চিন্তা করতে পারি: যিহোবার শক্তি তাঁকে কাজ করতে সমর্থ করে। তাঁর ন্যায়বিচার ও তাঁর প্রজ্ঞা তিনি যেভাবে কাজ করেন, তাতে পরিচালনা দেয়। কিন্তু, যিহোবার প্রেম তাঁকে কাজ করতে প্রেরণা দেয়। আর তাঁর প্রেম তিনি তাঁর অন্য গুণগুলোকে যেভাবে ব্যবহার করেন, তাতে সবসময় প্রতিফলিত হয়।

এটা প্রায়ই বলা হয়ে থাকে যে, যিহোবা হলেন প্রেমের মূর্ত প্রতীক। তাই, আমরা যদি প্রেম সম্বন্ধে জানতে চাই, তা হলে আমাদের যিহোবা সম্বন্ধে জানতে হবে। তা হলে আসুন, আমরা যিহোবার অনুপম প্রেমের কিছু দিক পরীক্ষা করি।

প্রেমের সবচেয়ে মহৎ কাজ

৪, ৫. (ক) সমগ্র ইতিহাসে প্রেমের সবচেয়ে মহৎ কাজটি কী? (খ) কেন আমরা বলতে পারি যে, যিহোবা এবং তাঁর পুত্র প্রেমের সবচেয়ে দৃঢ় বন্ধনে একতাবদ্ধ ছিল?

যিহোবা বিভিন্ন উপায়ে প্রেম দেখিয়েছেন কিন্তু একটা উপায় অন্যান্য সমস্ত কিছুর ঊর্ধ্বে। সেটা কী? সেটা হল আমাদের জন্য কষ্টভোগ ও মৃত্যুবরণ করতে তাঁর পুত্রকে পাঠানো। আমরা নির্ভুলভাবে বলতে পারি যে, সমগ্র ইতিহাসে এটাই হল প্রেমের সবচেয়ে মহৎ কাজ। কেন আমরা তা বলতে পারি?

বাইবেল যিশুকে “সমুদয় সৃষ্টির প্রথমজাত” বলে। (কলসীয় ১:১৫) ভেবে দেখুন—যিহোবার পুত্র ভৌত নিখিলবিশ্বের পূর্বে অস্তিত্বে ছিলেন। তা হলে, পিতা ও পুত্র কতদিন একসঙ্গে ছিলেন? কিছু বিজ্ঞানী অনুমান করে যে, এই নিখিলবিশ্ব ১৩শ কোটি বছরের পুরনো। এমনকি এই অনুমান যদি সঠিকও হয়, তবুও যিহোবার প্রথমজাত পুত্রের আয়ুকে তুলে ধরার মতো তা যথেষ্ট দীর্ঘ নয়! সেই যুগ যুগ ধরে তিনি কোন কাজ করেছিলেন? পুত্র আনন্দের সঙ্গে তাঁর পিতার “[“প্রধান,” NW] কার্য্যকারী” হিসেবে কাজ করেছিলেন। (হিতোপদেশ ৮:৩০; যোহন ১:৩) যিহোবা ও তাঁর পুত্র সমস্ত কিছুকে অস্তিত্বে আনার জন্য একসঙ্গে কাজ করছিল। তাদের কতই না রোমাঞ্চকর, আনন্দপূর্ণ সময় কেটেছিল! তা হলে, আমাদের মধ্যে কে এত দীর্ঘ সময় ধরে অস্তিত্বে থাকা বন্ধনের ক্ষমতা উপলব্ধি করতে পারে? এটা স্পষ্ট যে, যিহোবা ঈশ্বর ও তাঁর পুত্র প্রেমের সবচেয়ে দৃঢ় বন্ধনে একতাবদ্ধ ছিল।

৬. যিশু যখন বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন, তখন যিহোবা কীভাবে তাঁর পুত্র সম্বন্ধে তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করেছিলেন?

তাসত্ত্বেও, যিহোবা তাঁর পুত্রকে এক মানব শিশু হিসেবে জন্ম নেওয়ার জন্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। তা করার মানে ছিল যে, যিহোবাকে কয়েক দশকের জন্য স্বর্গে তাঁর প্রিয় পুত্রের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ত্যাগ করতে হবে। গভীর আগ্রহ নিয়ে, তিনি স্বর্গ থেকে যিশুকে এক সিদ্ধ মানুষ হিসেবে বড় হতে দেখেছিলেন। প্রায় ৩০ বছর বয়সে, যিশু বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। সেই সময়, পিতা স্বর্গ থেকে নিজে বলেছিলেন: “ইনিই আমার প্রিয় পুত্ত্র, ইঁহাতেই আমি প্রীত।” (মথি ৩:১৭) তাঁর সম্বন্ধে যা যা ভবিষ্যদ্বাণী করা ছিল, তাঁর কাছ থেকে যা কিছু চাওয়া হয়েছিল, সেগুলোর সমস্তই যিশু বিশ্বস্তভাবে করেছিলেন আর তা দেখে তাঁর পিতা নিশ্চয়ই অনেক খুশি হয়েছিলেন!—যোহন ৫:৩৬; ১৭:৪.

৭, ৮. (ক) সাধারণ কাল ৩৩ সালের ১৪ই নিশান যিশু কী ভোগ করেছিলেন এবং তাঁর স্বর্গীয় পিতা কীভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন? (খ) যিহোবা কেন তাঁর পুত্রকে কষ্টভোগ ও মৃত্যুবরণ করতে দিয়েছিলেন?

কিন্তু, সা.কা. ৩৩ সালের ১৪ই নিশান যিহোবা কীরকম বোধ করেছিলেন, যখন যিশুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছিল এবং পরে এক দল লোক তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল? তাঁকে যখন ঠাট্টা করা হয়েছিল, থুথু দেওয়া হয়েছিল ও ঘুসি মারা হয়েছিল? তাঁকে চাবুক মারা হয়েছিল পরে তাঁর পিঠ যখন চিরে গিয়েছিল? তাঁকে যখন একটা কাঠের দণ্ডের ওপর হাতে ও পায়ে পেরেক বিদ্ধ করা হয়েছিল এবং ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল আর লোকেরা তাঁকে গালিগালাজ করছিল? তাঁর প্রিয় পুত্র যখন মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর হয়ে তাঁর কাছে চিৎকার করেছিলেন, তখন পিতার কেমন লেগেছিল? যিশু যখন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন এবং সমস্ত সৃষ্টির শুরু থেকে প্রথমবারের মতো তাঁর প্রিয় পুত্র যখন অস্তিত্বহীন হয়ে গিয়েছিলেন, তখন যিহোবার কেমন লেগেছিল?—মথি ২৬:১৪-১৬, ৪৬, ৪৭, ৫৬, ৫৯, ৬৭; ২৭:২৬, ৩৮-৪৪, ৪৬; যোহন ১৯:১.

যিহোবার যেহেতু অনুভূতি রয়েছে, তাই তিনি তাঁর পুত্রের মৃত্যুতে যে-কষ্ট পেয়েছিলেন, তা ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা আমাদের নেই। যা প্রকাশ করা যেতে পারে, তা হল এটা ঘটতে দেওয়ার পিছনে যিহোবার কারণ। কেন পিতা নিজেকে এই ব্যথা পেতে দিয়েছিলেন? যোহন ৩:১৬ পদে যিহোবা আমাদের জন্য চমৎকার কিছু প্রকাশ করেন—এই শাস্ত্রপদটা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, এটাকে ক্ষুদ্রাকার সুসমাচার বলা হয়। এটা বলে: “ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” অতএব ঈশ্বরের কারণটা ছিল প্রেম। এইরকম মহৎ প্রেম আর কখনও দেখানো হয়নি।

যিহোবা তাঁর প্রেম সম্বন্ধে যেভাবে আমাদের আশ্বাস দেন

৯. আমাদের সম্বন্ধে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে শয়তান আমাদের দিয়ে কী বিশ্বাস করাতে চায় কিন্তু যিহোবা আমাদের কোন আশ্বাস দেন?

কিন্তু, একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ওঠে: ঈশ্বর কি আমাদের ব্যক্তিগতভাবে ভালবাসেন? কেউ কেউ হয়তো মেনে নেয় যে, ঈশ্বর সমস্ত মানবজাতিকে ভালবাসেন, যেমন যোহন ৩:১৬ পদ বলে। কিন্তু, বস্তুত তারা মনে করে, ‘ঈশ্বর আমাকে ব্যক্তিগতভাবে কখনোই ভালবাসেন না।’ বিষয়টা হল, শয়তান দিয়াবল আমাদের বিশ্বাস করাতে চায় যে, যিহোবা আমাদের ভালবাসেন না বা আমাদের মূল্যও দেন না। অন্যদিকে, আমরা নিজেদের যত তুচ্ছ বা মূল্যহীনই মনে করি না কেন, যিহোবা আমাদের আশ্বাস দেন যে তাঁর প্রত্যেক দাসই তাঁর কাছে মূল্যবান।

১০, ১১. চড়ুই পাখি সম্বন্ধে যিশুর দৃষ্টান্ত কীভাবে দেখায় যে, যিহোবার চোখে আমাদের মূল্য আছে?

১০ উদাহরণ হিসেবে, মথি ১০:২৯-৩১ পদে লিপিবদ্ধ যিশুর কথাগুলো বিবেচনা করুন। যিশু তাঁর শিষ্যদের মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেছিলেন: “দুইটী চড়াই পাখী কি এক পয়সায় বিক্রয় হয় না? আর তোমাদের পিতার অনুমতি বিনা তাহাদের একটীও ভূমিতে পড়ে না। কিন্তু তোমাদের মস্তকের কেশগুলিও সমস্ত গণিত আছে। অতএব ভয় করিও না, তোমরা অনেক চড়াই পাখী হইতে শ্রেষ্ঠ।” যিশুর প্রথম শতাব্দীর শ্রোতাদের কাছে এই কথাগুলোর মানে কী ছিল, তা বিবেচনা করুন।

১১ যিশুর দিনে, যে-পাখিগুলো খাদ্য হিসেবে বিক্রি হতো তার মধ্যে চড়ুই ছিল সবচেয়ে সস্তা। কম মূল্যের একটা মুদ্রা দিয়ে একজন ক্রেতা দুটো চড়ুই কিনতে পারত। কিন্তু লূক ১২:৬, ৭ পদ অনুসারে, যিশু পরে বলেছিলেন যে একজন ব্যক্তি যদি দুটো মুদ্রা ব্যয় করতে পারত, তা হলে তিনি চারটে নয় কিন্তু পাঁচটা চড়ুই পেতেন। বাড়তি পাখিটা দিয়ে দেওয়া হতো যেন এর কোনো মূল্যই নেই। লোকেদের চোখে হয়তো এই পাখিগুলো মূল্যহীন ছিল কিন্তু সৃষ্টিকর্তা এগুলোকে কীভাবে দেখতেন? যিশু বলেছিলেন: “তাহাদের মধ্যে একটীও [এমনকি অতিরিক্তটাও] ঈশ্বরের দৃষ্টিগোচরে গুপ্ত নয়।” এখন আমরা হয়তো যিশুর যুক্তিটা বুঝতে শুরু করেছি। যিহোবা যেহেতু একটা চড়ুই পাখিকে এইরকম মূল্য দেন, তা হলে একজন মানুষ আরও কত বেশি মূল্যবান! যিশু যেমন বলেছিলেন, যিহোবা আমাদের সম্বন্ধে খুঁটিনাটি সমস্ত কিছু জানেন। এমনকি আমাদের মাথার চুলগুলোও গণিত আছে!

১২. আমরা কেন নিশ্চিত হতে পারি যে, যিশু যখন আমাদের মাথার চুল গণিত আছে বলেছিলেন, তখন তিনি বাস্তববাদী ছিলেন?

১২ কেউ কেউ হয়তো মনে করতে পারে যে, এখানে যিশু একটু বাড়িয়ে বলেছিলেন। কিন্তু, শুধু পুনরুত্থানের কথা ভেবে দেখুন। পুনরায় সৃষ্টি করার জন্য যিহোবা আমাদেরকে কত ঘনিষ্ঠভাবেই না জানেন! তিনি আমাদের এত বেশি মূল্য দেন যে আমাদের খুঁটিনাটি সমস্ত কিছু তিনি জানেন, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে আমাদের বংশানুসংকেত ও আমাদের সারা জীবনের স্মৃতি ও অভিজ্ঞতাগুলো। সেই তুলনায় চুল গণনা করা এক সাধারণ কাজ কারণ বেশির ভাগ লোকেদের মাথায় গড়ে প্রায় ১,০০,০০০টা চুল গজায়। যিশুর কথাগুলো কত চমৎকারভাবেই না আমাদের আশ্বাস দেয় যে, যিহোবা আলাদা আলাদাভাবে আমাদের প্রত্যেকের জন্য চিন্তা করেন!

১৩. রাজা যিহোশাফটের ঘটনা কীভাবে দেখায় যে, যিহোবা আমাদের মধ্যে ভাল কিছু খোঁজার চেষ্টা করেন, এমনকি যদিও আমরা অসিদ্ধ?

১৩ বাইবেল আরও কিছু জানায়, যা আমাদের যিহোবার প্রেমের আশ্বাস দেয়। তিনি আমাদের মধ্যে ভাল কিছু খোঁজেন এবং সেগুলোকে মূল্য দেন। উদাহরণ হিসেবে ভাল রাজা যিহোশাফটের কথা বিবেচনা করুন। রাজা যখন বোকার মতো একটা কাজ করেছিলেন, তখন যিহোবার ভাববাদী তাঁকে বলেছিলেন: “এ জন্য সদাপ্রভু হইতে আপনার উপরে ক্রোধ বর্ত্তিল।” কী এক গুরুতর কথা! কিন্তু যিহোবার বার্তা সেখানেই শেষ হয়ে যায়নি। এটা বলে চলেছিল: “যাহা হউক, আপনার মধ্যে কোন কোন সাধু ভাব পাওয়া গিয়াছে।” (২ বংশাবলি ১৯:১-৩) অতএব যিহোবার ন্যায্য ক্রোধ তাঁকে যিহোশাফটের মধ্যে “সাধু ভাব” দেখতে বাধা দেয়নি। এটা জানা কি আশ্বাসজনক নয় যে, আমাদের ঈশ্বর আমাদের মধ্যে ভাল কিছু খোঁজার চেষ্টা করেন, এমনকি যদিও আমরা অসিদ্ধ?

একজন “ক্ষমাবান্‌” ঈশ্বর

১৪. আমরা যখন পাপ করি, তখন আমরা হয়তো কোন চাপগুলো অনুভব করি কিন্তু যিহোবার ক্ষমা থেকে আমরা কীভাবে উপকার পেতে পারি?

১৪ আমরা যখন পাপ করি, তখন হতাশা, লজ্জা ও অপরাধবোধের কারণে আমরা হয়তো মনে করতে পারি যে, আমরা আর কখনও যিহোবাকে সেবা করার যোগ্য হতে পারব না। কিন্তু মনে রাখবেন যে, যিহোবা “ক্ষমাবান্‌।” (গীতসংহিতা ৮৬:৫) হ্যাঁ, আমরা যদি আমাদের পাপের জন্য অনুতপ্ত হই এবং সেগুলো আবারও না করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করি, তা হলে আমরা যিহোবার ক্ষমা থেকে উপকার পেতে পারি। বাইবেল যিহোবার প্রেমের এই চমৎকার বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে কীভাবে বর্ণনা করে, তা বিবেচনা করুন।

১৫. যিহোবা আমাদের পাপগুলো আমাদের কাছ থেকে কতটা দূরে সরিয়ে নেন?

১৫ গীতরচক দায়ূদ যিহোবার ক্ষমা বর্ণনা করার জন্য এক প্রাণবন্ত অভিব্যক্তি ব্যবহার করেছিলেন: “পশ্চিম দিক্‌ হইতে পূর্ব্ব দিক্‌ যেমন দূরবর্ত্তী, তিনি আমাদের হইতে আমাদের অপরাধ সকল তেমনি দূরবর্ত্তী করিয়াছেন।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (গীতসংহিতা ১০৩:১২) পশ্চিম থেকে পূর্ব দিক কতদূর? এক অর্থে পূর্ব দিক সবসময়ই পশ্চিম দিক থেকে সর্বাধিক দূরবর্তী; এই দুই বিন্দু কখনোই এক হতে পারে না। একজন পণ্ডিত ব্যক্তি উল্লেখ করেছিলেন যে, এই অভিব্যক্তিটার মানে “যতটা সম্ভব দূরে; আমরা যতটা কল্পনা করতে পারি ততটা দূর।” দায়ূদের অনুপ্রাণিত কথাগুলো আমাদের বলে যে যিহোবা যখন ক্ষমা করেন, তখন তিনি আমাদের পাপগুলো আমরা যতটা কল্পনা করতে পারি, ততটা দূরে সরিয়ে নেন।

১৬. যিহোবা যখন আমাদের পাপগুলো ক্ষমা করেন, তখন আমরা কেন নিশ্চিত বোধ করতে পারি যে, এরপর তিনি আমাদের নির্দোষ হিসেবে দেখেন?

১৬ আপনি কি কখনও একটা হালকা রংয়ের কাপড় থেকে দাগ উঠানোর চেষ্টা করেছেন? হয়তো আপনার প্রাণপণ চেষ্টা সত্ত্বেও দাগটা রয়ে যায়। লক্ষ করুন যে, যিহোবা ক্ষমা সম্বন্ধে তাঁর সামর্থ্যের বিষয়ে কীভাবে বর্ণনা করেন: “তোমাদের পাপ সকল সিন্দুরবর্ণ হইলেও হিমের ন্যায় শুক্লবর্ণ হইবে; লাক্ষার ন্যায় রাঙ্গা হইলেও মেষলোমের ন্যায় হইবে।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (যিশাইয় ১:১৮) “সিন্দুরবর্ণ” শব্দটা উজ্জ্বল লাল রংকে নির্দেশ করে। * ‘লাক্ষা’ ছিল রঞ্জক পদার্থের একটা গাঢ় রং। আমরা নিজেরা চেষ্টা করে কখনোই পাপের দাগকে উঠাতে পারি না। কিন্তু যিহোবা সিন্দুরবর্ণ ও লাক্ষার মতো পাপগুলোকে মুছে দিতে এবং সেগুলোকে হিম বা অরঞ্জিত মেষলোমের মতো সাদা করতে পারেন। তাই, যিহোবা যখন আমাদের পাপগুলো ক্ষমা করেন, তখন আমাদের এইরকম মনে করা উচিত নয় যে, এই পাপগুলোর দাগ আমাদের বাকি জীবনে বয়ে বেড়াতে হবে।

১৭. কোন অর্থে যিহোবা আমাদের পাপগুলো তাঁর পশ্চাতে ফেলেন?

১৭ কৃতজ্ঞতার এক মর্মস্পর্শী গান, যা হিষ্কিয় এক মারাত্মক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার পর রচনা করেছিলেন, তাতে তিনি যিহোবাকে বলেছিলেন: “তুমি ত আমার সমস্ত পাপ তোমার পশ্চাতে ফেলিয়াছ।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (যিশাইয় ৩৮:১৭) এখানে যিহোবাকে এমনভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, যিনি একজন অনুতপ্ত অপরাধীর পাপগুলো মুছে ফেলছেন এবং তাঁর পিছনে ফেলে দিচ্ছেন, যেখানে তিনি ফিরে আর সেগুলোকে দেখেন না বা আর মনে রাখেন না। একটা তথ্যগ্রন্থ অনুসারে, যে-ধারণা দেওয়া হয়েছে সেটাকে হয়তো এভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে: “তুমি [আমার পাপগুলোকে] এমন করেছ যেন সেগুলো কখনো করাই হয়নি।” তা কি সান্ত্বনাজনক নয়?

১৮. ভাববাদী মীখা কীভাবে দেখান যে, যিহোবা যখন ক্ষমা করেন তখন তিনি আমাদের পাপগুলো স্থায়ীভাবে সরিয়ে নেন?

১৮ পুনর্স্থাপনের এক প্রতিজ্ঞায়, ভাববাদী মীখা তার দৃঢ় বিশ্বাসকে এভাবে প্রকাশ করেছিলেন যে, যিহোবা তাঁর অনুতপ্ত লোকেদের ক্ষমা করবেন: “কে তোমার তুল্য ঈশ্বর? . . . আপন অধিকারের অবশিষ্টাংশের অধর্ম্মের প্রতি উপেক্ষাকারি! . . . হাঁ, তুমি আপন লোকদের সমস্ত পাপ সমুদ্রের অগাধ জলে নিক্ষেপ করিবে।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (মীখা ৭:১৮, ১৯) বাইবেলের সময়ে যারা জীবিত ছিলেন, তাদের জন্য ওই কথাগুলোর অর্থ কী ছিল তা ভেবে দেখুন। কোনো কিছু যখন “সমুদ্রের অগাধ জলে” ফেলে দেওয়া হয়েছিল, তখন সেটা পুনরুদ্ধার করার কি কোনো সম্ভাবনা ছিল? অতএব, মীখার কথাগুলো দেখায় যে যিহোবা যখন ক্ষমা করেন, তখন তিনি আমাদের পাপগুলো স্থায়ীভাবে সরিয়ে নেন।

‘আমাদের ঈশ্বরের কোমল সমবেদনা’

১৯, ২০. (ক) ‘করুণা দেখানো’ বা ‘মমতা বোধ করা’ হিসেবে অনুবাদিত ইব্রীয় ক্রিয়াপদের মানে কী? (খ) যিহোবার সমবেদনা সম্বন্ধে আমাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য বাইবেল কীভাবে শিশুর প্রতি তার মায়ের অনুভূতিকে ব্যবহার করে?

১৯ সমবেদনা হল যিহোবার প্রেমের আরেকটা বৈশিষ্ট্য। সমবেদনা কী? বাইবেলে, সমবেদনা ও করুণার মধ্যে এক নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। বেশ কিছু ইব্রীয় ও গ্রিক শব্দ কোমল সমবেদনার অর্থ প্রদান করে। উদাহরণ হিসেবে, ইব্রীয় ক্রিয়াপদ রেকেম প্রায়ই ‘করুণা দেখানো’ অথবা ‘মমতা বোধ করা’ হিসেবে অনুবাদিত হয়। এই ইব্রীয় শব্দ, যেটাকে যিহোবা নিজের প্রতি প্রয়োগ করেন সেটা “গর্ভ” শব্দটার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত আর এটাকে “মায়ের সমবেদনা” হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে।

২০ বাইবেল আমাদেরকে যিহোবার সমবেদনা সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার জন্য সেই অনুভূতিকে ব্যবহার করে, যা একজন মায়ের তার শিশুর প্রতি রয়েছে। যিশাইয় ৪৯:১৫ পদ বলে: “একজন স্ত্রীলোক কি নিজের স্তন পানকারী শিশুকে ভুলে যেতে পারে যে, সে তার গর্ভজাত পুত্রের প্রতি সমবেদনা [রেকেম] দেখাবে না? হ্যাঁ, তারা হয়তো ভুলে যেতে পারে, তবুও আমি তোমাকে ভুলে যাব না।” (দি এমপ্লিফাইড বাইবেল) একজন মা তার স্তন পানকারী শিশুকে খাওয়াতে ও তার যত্ন নিতে ভুলে যাবে এটা কল্পনা করা খুবই কঠিন। বস্তুত, একটা শিশু অসহায়; একটা শিশুর দিনরাত তার মায়ের মনোযোগ দরকার। কিন্তু, দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় যে, মায়েদের অবহেলার কথা যে শোনা যায় না এমন নয়, বিশেষ করে এই ‘বিষম সময়ে।’ (২ তীমথিয় ৩:১, ৩) “তবুও,” যিহোবা ঘোষণা করেন, “আমি তোমাকে ভুলে যাব না।” তাঁর দাসদের প্রতি যিহোবার যে-কোমল সমবেদনা রয়েছে, তা আমরা যতটা কোমল স্বাভাবিক অনুভূতি সম্বন্ধে কল্পনা করতে পারি—যে-সমবেদনা একজন মা স্বভাবতই তার শিশু সন্তানের প্রতি অনুভব করে—সেটার চেয়েও অপরিমেয়ভাবে প্রগাঢ়।

২১, ২২. প্রাচীন মিশরে ইস্রায়েলীয়রা কী ভোগ করেছিল এবং যিহোবা তাদের কান্নার প্রতি কীভাবে সাড়া দিয়েছিলেন?

২১ একজন প্রেমময় বাবা অথবা মার মতো, যিহোবা কীভাবে সমবেদনা দেখান? প্রাচীন ইস্রায়েল জাতির সঙ্গে যিহোবা যেভাবে আচরণ করেছিলেন, তাতে এই গুণটি স্পষ্ট দেখা গিয়েছে। সা.কা.পূ. ষোড়শ শতাব্দীর শেষের দিকে, লক্ষ লক্ষ ইস্রায়েলীয় মিশরে দাসত্ব করেছিল, যেখানে তাদের ওপর কঠোর অত্যাচার করা হয়েছিল। (যাত্রাপুস্তক ১:১১, ১৪) তাদের দুদর্শার সময়ে ইস্রায়েলীয়রা সাহায্যের জন্য যিহোবার কাছে কেঁদেছিল। সমবেদনার ঈশ্বর কীভাবে সাড়া দিয়েছিলেন?

২২ যিহোবার হৃদয় আবেগাপ্লুত হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন: “আমি মিসরস্থ আপন প্রজাদের কষ্ট দেখিয়াছি, এবং . . . তাহাদের ক্রন্দনও শুনিয়াছি; . . . আমি তাহাদের দুঃখ জানি।” (যাত্রাপুস্তক ৩:৭) নির্লিপ্তভাবে তাঁর লোকেদের দুঃখকষ্ট দেখা বা তাদের কান্না শোনা যিহোবার পক্ষে অসম্ভব ছিল। যিহোবা সহমর্মিতার এক ঈশ্বর। আর সহমর্মিতা—অন্যদের ব্যথা অনুভব করার ক্ষমতা—সমবেদনার সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। কিন্তু যিহোবা তাঁর লোকেদের জন্য শুধু অনুভবই করেননি; তিনি তাদের জন্য কাজ করতে পরিচালিত হয়েছিলেন। যিশাইয় ৬৩:৯ পদ বলে: “তিনি আপন প্রেমে ও আপন স্নেহে [“সমবেদনায়,” NW] তাহাদিগকে মুক্ত করিতেন।” “বলবান্‌ হস্ত” দ্বারা তিনি ইস্রায়েলীয়দের মিশর থেকে মুক্ত করেছিলেন। (দ্বিতীয় বিবরণ ৪:৩৪) এরপর, তিনি তাদের অলৌকিকভাবে খাবার জুগিয়েছিলেন এবং তাদেরকে এক ফলবতী দেশে নিয়ে গিয়েছিলেন।

২৩. (ক) কীভাবে গীতরচকের কথাগুলো আমাদের আশ্বাস দেয় যে, যিহোবা আলাদা আলাদাভাবে আমাদের প্রত্যেকের বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন? (খ) কোন কোন উপায়ে যিহোবা আমাদের সাহায্য করেন?

২৩ যিহোবা তাঁর লোকেদের শুধু দলগতভাবেই সমবেদনা দেখান না। আমাদের প্রেমময় ঈশ্বর আলাদা আলাদাভাবে আমাদের প্রত্যেকের বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন। আমরা যেকোনো দুঃখকষ্টের মধ্যেই থাকি না কেন, সেই সম্বন্ধে তিনি ভালভাবে জানেন। গীতরচক বলেছিলেন: “ধার্ম্মিকগণের প্রতি সদাপ্রভুর দৃষ্টি আছে, তাহাদের আর্ত্তনাদের প্রতি তাঁহার কর্ণ আছে। সদাপ্রভু ভগ্নচিত্তদের নিকটবর্ত্তী, তিনি চূর্ণমনাদের পরিত্রাণ করেন।” (গীতসংহিতা ৩৪:;১৫, ১৮) তা হলে, যিহোবা আলাদা আলাদাভাবে আমাদের প্রত্যেককে কীভাবে সাহায্য করেন? তিনি সাধারণত আমাদের দুঃখকষ্টের কারণ দূর করেন না। কিন্তু যারা তাঁর কাছে সাহায্যের জন্য কাঁদে তাদের জন্য তিনি প্রচুর ব্যবস্থা করেছেন। তাঁর বাক্য ব্যবহারিক পরামর্শ দেয়, যা পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে পারে। মণ্ডলীতে, তিনি আধ্যাত্মিকভাবে যোগ্য অধ্যক্ষদের জোগান, যারা অন্যদের সাহায্য করার সময় তাঁর সমবেদনা প্রতিফলিত করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে। (যাকোব ৫:১৪, ১৫) “প্রার্থনা-শ্রবণকারী” হিসেবে যিহোবা “যাহারা তাঁহার কাছে যাচ্ঞা করে, তাহাদিগকে পবিত্র আত্মা” দেন। (গীতসংহিতা ৬৫:২; লূক ১১:১৩) এই ধরনের সমস্ত ব্যবস্থা হল ‘আমাদের ঈশ্বরের কোমল সমবেদনা।’—লূক ১:৭৮, NW.

২৪. যিহোবার প্রেমের প্রতি আপনি কীভাবে সাড়া দেবেন?

২৪ আমাদের স্বর্গীয় পিতার প্রেম নিয়ে মনোযোগের সঙ্গে বিবেচনা করা কি রোমাঞ্চকর নয়? আগের প্রবন্ধে আমাদের মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, আমাদের উপকারের জন্য যিহোবা তাঁর শক্তি, ন্যায়বিচার এবং প্রজ্ঞা প্রেমময় উপায়ে ব্যবহার করেছেন। আর এই প্রবন্ধে আমরা দেখেছি যে, যিহোবা সরাসরি মানবজাতির জন্য—এবং আলাদা আলাদাভাবে আমাদের প্রত্যেকের জন্য—অসাধারণ উপায়গুলোর মাধ্যমে তাঁর প্রেম দেখিয়েছেন। এখন আমাদের প্রত্যেকের জিজ্ঞেস করা উচিত, ‘যিহোবার প্রেমের প্রতি আমি কীভাবে সাড়া দেব?’ আপনার সমস্ত অন্তঃকরণ, মন, প্রাণ এবং শক্তি দিয়ে তাঁকে প্রেম করার মাধ্যমে আপনি যেন সাড়া দেন। (মার্ক ১২:২৯, ৩০) প্রতিদিন আপনি যেভাবে জীবনযাপন করেন, তাতে যেন যিহোবার আরও নিকটবর্তী হওয়ার জন্য আপনার আন্তরিক ইচ্ছা প্রকাশ পায়। আর প্রেমের ঈশ্বর যিহোবা যেন আপনার আরও নিকটবর্তী হন—অনন্তকাল ধরে!—যাকোব ৪:৮.

[পাদটীকা]

^ একজন পণ্ডিত ব্যক্তি বলেন যে, ওই সিন্দুরবর্ণ “ছিল স্থায়ীভাবে রঞ্জিত বা স্থায়ী রং। শিশির, বৃষ্টি, ধৌতকরণ, দীর্ঘ ব্যবহার কোনো কিছুই এটা উঠাতে পারবে না।”

আপনি কি মনে করতে পারেন?

আমরা কীভাবে জানি যে, প্রেম হল যিহোবার প্রধান গুণ?

কেন বলা যেতে পারে যে, আমাদের জন্য যিহোবা যে তাঁর পুত্রকে কষ্টভোগ এবং মৃত্যুবরণ করতে পাঠিয়েছেন, তা হল প্রেমের সবচেয়ে মহৎ কাজ?

যিহোবা কীভাবে আমাদের আশ্বাস দেন যে, তিনি আলাদা আলাদাভাবে আমাদের প্রত্যেককে প্রেম করেন?

কোন প্রাণবন্ত উপায়গুলোতে বাইবেল যিহোবার ক্ষমা সম্বন্ধে বর্ণনা করে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]

“ঈশ্বর . . . আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিলেন”

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

“তোমরা অনেক চড়াই পাখী হইতে শ্রেষ্ঠ”

[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

© J. Heidecker/VIREO

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

সন্তানের জন্য একজন মায়ের অনুভূতি আমাদেরকে যিহোবার সমবেদনা সম্বন্ধে শেখাতে পারে