যিহোবার দিন যতই এগিয়ে আসছে, লোকেদেরকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?
যিহোবার দিন যতই এগিয়ে আসছে, লোকেদেরকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?
“প্রভু [“যিহোবা,” NW] নিজ প্রতিজ্ঞা বিষয়ে দীর্ঘসূত্রী নহেন . . . কিন্তু তোমাদের পক্ষে তিনি দীর্ঘসহিষ্ণু; কতকগুলি লোক যে বিনষ্ট হয়, এমন বাসনা তাঁহার নাই; বরং সকলে যেন মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পায়, এই তাঁহার বাসনা।”—২ পিতর ৩:৯.
১, ২. (ক) আজকে যিহোবা লোকেদের কোন দৃষ্টিতে দেখেন? (খ) নিজেদেরকে আমরা কোন প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করতে পারি?
যিহোবার দাসদের ‘সমুদয় জাতিকে শিষ্য করিবার’ এক কার্যভার রয়েছে। (মথি ২৮:১৯) এই দায়িত্ব পরিপূর্ণ করার এবং ‘সদাপ্রভুর [“যিহোবার,” NW] মহাদিনের’ জন্য অপেক্ষা করার সময়, লোকেদেরকে আমাদের তাঁর মতো করে দেখা উচিত। (সফনিয় ১:১৪) সেটা কীরকম? প্রেরিত পিতর বলেন: “যিহোবা নিজ প্রতিজ্ঞা বিষয়ে দীর্ঘসূত্রী নহেন—যেমন কেহ কেহ দীর্ঘসূত্রিতা জ্ঞান করে—কিন্তু তোমাদের পক্ষে তিনি দীর্ঘসহিষ্ণু; কতকগুলি লোক যে বিনষ্ট হয়, এমন বাসনা তাঁহার নাই; বরং সকলে যেন মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পায়, এই তাঁহার বাসনা।” (২ পিতর ৩:৯) ঈশ্বর মানুষদের আলাদা আলাদাভাবে দেখেন, যাদের মন পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁর “ইচ্ছা এই, যেন সমুদয় মনুষ্য পরিত্রাণ পায়, ও সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পারে।” (১ তীমথিয় ২:৪) যিহোবা এমনকি তখনও আনন্দিত হন, যখন “দুষ্ট লোক . . . আপন পথ হইতে ফিরিয়া বাঁচে”!—যিহিষ্কেল ৩৩:১১.
২ ব্যক্তিগতভাবে আমরা কি যিহোবার মতো করে লোকেদের দেখি? তাঁর মতো আমরাও কি সমস্ত বংশ এবং জাতির লোকেদের “তাঁহার চরাণির” সম্ভাব্য “মেষ” হিসেবে বিবেচনা করি? (গীতসংহিতা ১০০:৩; প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫) আসুন আমরা দুটো উদাহরণ বিবেচনা করি, যেগুলো ঈশ্বরের মতো দৃষ্টিভঙ্গি রাখার গুরুত্ব সম্বন্ধে দেখায়। উভয় ক্ষেত্রেই, ধ্বংস আসন্ন ছিল আর সেই বিষয়ে যিহোবার দাসদের আগে থেকেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এই উদাহরণগুলো বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ যেহেতু আমরা যিহোবার মহাদিনের জন্য অপেক্ষা করছি।
অব্রাহামের যিহোবার মতো দৃষ্টিভঙ্গি ছিল
৩. সদোম এবং ঘমোরার অধিবাসীদের প্রতি যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি কেমন ছিল?
৩ প্রথম উদাহরণটি বিশ্বস্ত কুলপতি অব্রাহাম এবং সদোম ও ঘমোরার দুষ্ট নগরগুলোর সঙ্গে যুক্ত। “সদোমের ও ঘমোরার ক্রন্দন” শোনার সঙ্গে সঙ্গেই যিহোবা সেই নগরগুলো ও এগুলোর অধিবাসীদের ধ্বংস করে দেননি। তিনি প্রথমে অনুসন্ধান করেছিলেন। (আদিপুস্তক ১৮:২০, ২১) দুজন দূতকে সদোমে পাঠানো হয়েছিল, যেখানে তারা ধার্মিক ব্যক্তি লোটের ঘরে থেকেছিল। যে-রাতে দূতেরা এসেছিল, সেই রাতে দূতেদের সঙ্গে সমকামিতা করার জন্য “ঐ নগরের পুরুষেরা, . . . আবাল বৃদ্ধ সমস্ত লোক চতুর্দ্দিক্ হইতে আসিয়া তাঁহার বাটী ঘেরিল।” স্পষ্টতই, নগরের অধিবাসীদের অধঃপতিত অবস্থা প্রমাণ দিয়েছিল যে, নগরটি ধ্বংসের যোগ্য। কিন্তু, দূতেরা লোটকে বলেছিল: “এই স্থানে তোমার আর কে কে আছে? তোমার জামাতা ও পুত্ত্র কন্যা যত জন এই নগরে আছে, সে সকলকে এই স্থান হইতে লইয়া যাও।” যিহোবা সেই নগরের কিছু লোকের রক্ষার পথ করে দিয়েছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত শুধু লোট ও তার দুই মেয়ে ধ্বংস থেকে রক্ষা পেয়েছিল।—আদিপুস্তক ১৯:৪, ৫, ১২, ১৬, ২৩-২৬.
৪, ৫. অব্রাহাম কেন সদোমের অধিবাসীদের জন্য মিনতি করেছিলেন এবং লোকেদের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গির কি যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মিল ছিল?
৪ এখন, আসুন আমরা সেই সময়ে ফিরে যাই যখন যিহোবা সদোম ও ঘমোরার নগরগুলো পরীক্ষা করার বিষয়ে তাঁর ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। সেই সময়ই অব্রাহাম মিনতি করে বলেছিলেন: “সেই নগরের মধ্যে যদি পঞ্চাশ জন ধার্ম্মিক পাওয়া যায়, তবে আপনি কি তথাকার পঞ্চাশ জন ধার্ম্মিকের অনুরোধে সেই স্থানের প্রতি দয়া না করিয়া তাহা বিনষ্ট করিবেন? দুষ্টের সহিত ধার্ম্মিকের বিনাশ করা, এই প্রকার কর্ম্ম আপনা হইতে দূরে থাকুক; ধার্ম্মিককে দুষ্টের সমান করা আপনা হইতে দূরে থাকুক। সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা কি ন্যায়বিচার করিবেন না?” “আপনা হইতে দূরে থাকুক,” এই অভিব্যক্তিটি অব্রাহাম দুবার ব্যবহার করেছিলেন। তার অভিজ্ঞতা থেকে অব্রাহাম জানতেন যে, যিহোবা দুষ্টদের সঙ্গে সঙ্গে ধার্মিকদেরও ধ্বংস করবেন না। যিহোবা যখন বলেছিলেন, যদি “সদোমের মধ্যে পঞ্চাশ জন ধার্ম্মিক” থাকে, তা হলে নগরটিকে তিনি ধ্বংস করবেন না, তখন অব্রাহাম ধীরে ধীরে সেই সংখ্যা কমাতে থাকেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না তা দশে গিয়ে পৌঁছায়।—আদিপুস্তক ১৮:২২-৩৩.
৫ যিহোবার নিজ দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অব্রাহামের মিনতির যদি মিল না থাকত, তা হলে তিনি কি অব্রাহামের মিনতি শুনতেন? স্পষ্টতই না। “ঈশ্বরের বন্ধু” হিসেবে অব্রাহাম স্পষ্টতই তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি জানতেন এবং সেভাবেই কথা বলতেন। (যাকোব ২:২৩) যিহোবা যখন সদোম এবং ঘমোরার প্রতি মনোযোগ দিয়েছিলেন, তখন তিনি অব্রাহামের মিনতি বিবেচনা করার জন্য ইচ্ছুক ছিলেন। কেন? কারণ আমাদের স্বর্গীয় পিতার “কতকগুলি লোক যে বিনষ্ট হয়, এমন বাসনা . . . নাই; বরং সকলে যেন মনপরিবর্ত্তন পর্য্যন্ত পঁহুছিতে পায়, এই তাঁহার বাসনা।”
লোকেদের প্রতি যোনার দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ বিপরীত ছিল
৬. নীনবীর লোকেরা যোনার ঘোষণার প্রতি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?
৬ এখন, দ্বিতীয় উদাহরণটি বিবেচনা করুন, যেটা হল যোনার উদাহরণ। এই উদাহরণে যে-নগরটি ধ্বংসের জন্য নিরূপিত হয়েছিল, সেটা হল নীনবী। ভাববাদী যোনাকে ঘোষণা করতে বলা হয়েছিল যে, সেই নগরের দুষ্টতা ‘সদাপ্রভুর সম্মুখে উঠিয়াছে।’ (যোনা ১:২) শহরতলী সহ নীনবী ছিল বড় একটি নগর, যেখানে “যাতায়াত করিতে তিন দিন লাগিত।” অবশেষে যোনা যখন বাধ্য হয়েছিলেন এবং নীনবীতে গিয়েছিলেন, তখন তিনি ঘোষণা করেছিলেন: “আর চল্লিশ দিন গত হইলে নীনবী উৎপাটিত হইবে।” এর ফলে, “নীনবীয় লোকেরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করিল; তাহারা উপবাস ঘোষণা করিল, এবং মহান্ হইতে ক্ষুদ্র পর্য্যন্ত সকলে চট পরিধান করিল।” এমনকি নীনবীর রাজাও মন পরিবর্তন করেছিলেন।—যোনা ৩:১-৬.
৭. নীনবীর লোকেদের অনুতপ্ত আচরণকে যিহোবা কীভাবে দেখেছিলেন?
৭ সদোমের লোকেদের প্রতিক্রিয়া থেকে সেটা পুরোপুরি বিপরীত ছিল! নীনবীর অনুতপ্ত লোকদেরকে যিহোবা কোন দৃষ্টিতে দেখেছিলেন? যোনা ৩:১০ পদ বলে: “ঈশ্বর . . . তাহাদের যে অমঙ্গল করিবেন বলিয়াছিলেন, তদ্বিষয়ে অনুশোচনা করিলেন; তাহা করিলেন না।” যিহোবা এই অর্থে “অনুশোচনা” করেছিলেন যে, তিনি নীনবীর লোকেদের সঙ্গে তাঁর আচরণে পরিবর্তন এনেছিলেন কারণ তারা তাদের পথ পরিবর্তন করেছিল। ঐশিক মানগুলো পরিবর্তন হয়নি কিন্তু যিহোবা যখন নীনবীর লোকেদের অনুতপ্ত হতে দেখেছিলেন, তখন তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছিলেন।—মালাখি ৩:৬.
৮. কেন যোনা রুষ্ট হয়েছিলেন?
৮ যোনা যখন বুঝতে পেরেছিলেন যে, নীনবীকে ধ্বংস করা হবে না, তখন তিনি কি বিষয়গুলো যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখেছিলেন? না, কারণ আমাদের বলা হয়েছে: “কিন্তু ইহাতে যোনা মহা বিরক্ত ও ক্রুদ্ধ হইলেন।” যোনা আরও কী করেছিলেন? বিবরণ বলে: “তিনি সদাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করিয়া কহিলেন, হে সদাপ্রভু, বিনতি করি, আমি স্বদেশে থাকিতে কি ইহাই বলি নাই? সেই জন্য ত্বরা করিয়া তর্শীশে পলাইতে গিয়াছিলাম; কেননা আমি জানিতাম, তুমি কৃপাময় ও স্নেহশীল ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর ও দয়াতে মহান্, এবং অমঙ্গলের বিষয়ে অনুশোচনাকারী।” (যোনা ৪:১, ২) যোনা যিহোবার গুণগুলো সম্বন্ধে জানতেন। কিন্তু, সেই সময় ভাববাদী রুষ্ট হয়েছিলেন এবং নীনবীর অনুতপ্ত অধিবাসীদের যিহোবার মতো করে দেখেননি।
৯, ১০. (ক) যোনাকে যিহোবা কোন বিষয়টা শিক্ষা দিয়েছিলেন? (খ) কেন আমরা ধরে নিতে পারি যে, পরিশেষে যোনা নীনবীয় লোকেদের প্রতি যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গিকে গ্রহণ করেছিলেন?
৯ যোনা নীনবীর বাইরে যান, একটি কুটীর তৈরি করেন এবং সেটার ছায়ায় বসে “নগরের কি দশা হয় দেখিবার অপেক্ষা করিতে লাগিলেন।” যিহোবা তখন একটি এরণ্ড গাছকে বৃদ্ধি পেতে দেন, যাতে সেটা যোনার উপরে ছায়া দেয়। কিন্তু, দ্বিতীয় দিন গাছটি শুকিয়ে যায়। এই কারণে যোনা যখন রেগে গিয়েছিলেন, তখন যিহোবা বলেছিলেন: “তুমি এই এরণ্ড গাছের . . . প্রতি দয়ার্দ্র হইয়াছ। তবে আমি কি নীনবীর প্রতি, ঐ মহানগরের প্রতি, দয়ার্দ্র হইব না? তথায় এমন এক লক্ষ বিংশতি সহস্রের অধিক মনুষ্য আছে, যাহারা দক্ষিণ হস্ত হইতে বাম হস্তের প্রভেদ জানে না; আর অনেক পশুও আছে।” (যোনা ৪:৫-১১) লোকেদের প্রতি যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে যোনার জন্য কী এক শিক্ষা!
১০ নীনবীর লোকেদের জন্য দুঃখবোধ করার বিষয়ে ঈশ্বরের কথাগুলোর প্রতি যোনা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন, সেই বিষয়টা লিপিবদ্ধ করা হয়নি। কিন্তু, এটা স্পষ্ট যে, ভাববাদী অনুতপ্ত নীনবীয়দের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গিকে রদবদল করেছিলেন। অনুপ্রাণিত বিবরণ লিপিবদ্ধ করার জন্য যিহোবা যে তাকে ব্যবহার করেছিলেন, সেই বিষয়টা থেকে আমরা এই উপসংহারে পৌঁছাই।
আপনার কোন মনোভাব রয়েছে?
১১. আজকে বসবাসরত লোকেদের অব্রাহাম হয়তো কোন দৃষ্টিতে দেখতেন?
১১ আজকে আমরা আরেকটি ধ্বংসের মুখোমুখি হচ্ছি আর সেটা হল যিহোবার মহাদিনে বর্তমান দুষ্ট বিধিব্যবস্থার ধ্বংস। (লূক ১৭:২৬-৩০; গালাতীয় ১:৪; ২ পিতর ৩:১০) অব্রাহাম এই জগতে বসবাসরত লোকেদের কোন দৃষ্টিতে দেখতেন, যে-জগৎ খুব শীঘ্রই ধ্বংস হয়ে যাবে? খুব সম্ভবত তিনি হয়তো সেই সমস্ত ব্যক্তিদের কথা চিন্তা করতেন, যারা এখনও “রাজ্যের . . . সুসমাচার” শোনেনি। (মথি ২৪:১৪) সদোমে সম্ভাব্য ধার্মিক ব্যক্তিদের সম্বন্ধে অব্রাহাম বার বার ঈশ্বরের কাছে মিনতি করেছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে আমরা কি সেই সমস্ত লোকেদের বিষয়ে চিন্তিত, যারা শয়তানের অধীনের এই জগতের পথগুলো পরিত্যাগ করবে যদি তাদেরকে অনুতপ্ত হওয়ার এবং ঈশ্বরকে সেবা করার সুযোগ দেওয়া হয়?—১ যোহন ৫:১৯; প্রকাশিত বাক্য ১৮:২-৪.
১২. পরিচর্যায় যে-লোকেদের সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ হয়, তাদের প্রতি যোনার মতো মনোভাব গড়ে তোলা কেন সহজ এবং এই বিষয়ে আমরা কী করতে পারি?
১২ দুষ্টতার শেষের জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষা করা উপযুক্ত। (হবক্কূক ১:২, ৩) কিন্তু, যে-লোকেরা অনুতপ্ত হতে পারে, তাদের মঙ্গলের বিষয়ে চিন্তা না করে যোনার মতো মনোভাব গড়ে তোলা খুব সহজ। এই বিষয়টা বিশেষ করে তখন সত্য হয়, যখন রাজ্যের বার্তা নিয়ে আমরা কোনো উদাসীন, শত্রুভাবাপন্ন অথবা এমনকি ঝগড়াটে ব্যক্তিদের বাড়িতে সাক্ষাৎ করে চলি। আমরা হয়তো তাদের প্রতি অমনোযোগী হয়ে পড়তে পারি, যাদেরকে যিহোবা এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার মধ্যে থেকে এখনও একত্রিত করেননি। (রোমীয় ২:৪) গম্ভীর আত্মপরীক্ষা যদি দেখায় যে, নীনবীয়দের প্রতি আগে যোনার যে-মনোভাব ছিল সেটা একটু হলেও আমাদের আছে, তা হলে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি যাতে যিহোবার মতো হয়, সেটার জন্য সাহায্য চেয়ে আমরা প্রার্থনা করতে পারি।
১৩. কেন আমরা বলতে পারি যে, যিহোবা বর্তমানকালীন লোকেদের জন্য চিন্তা করেন?
১৩ যারা এখনও যিহোবাকে সেবা করছে না, তাদের জন্য তিনি চিন্তা করেন এবং তিনি তাঁর উৎসর্গীকৃত লোকেদের যাচ্ঞা শোনেন। (মথি ১০:১১) উদাহরণস্বরূপ, তাদের প্রার্থনার উত্তরে “তিনি . . . অন্যায়ের প্রতীকার করিবেন।” (লূক ১৮:৭, ৮) সর্বোপরি, যিহোবা নিজ সময়মতো তাঁর সমস্ত প্রতিজ্ঞা এবং উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করবেন। (হবক্কূক ২:৩) এর অন্তর্ভুক্ত হবে, পৃথিবীকে সমস্ত দুষ্টতা থেকে মুক্ত করা, ঠিক যেমন নীনবীর অধিবাসীরা পুনরায় দুষ্টতায় নিমজ্জিত হওয়ার পরে তিনি তা ধ্বংস করে দিয়েছিলেন।—নহূম ৩:৫-৭.
১৪. যিহোবার মহাদিনের অপেক্ষা করার সময় আমাদের কী করে চলতে হবে?
১৪ যিহোবার মহাদিনে এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থা দূর করার আগে পর্যন্ত আমরা কি ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করব, তাঁর ইচ্ছা পালন করায় ব্যস্ত থাকব? যিহোবার দিন আসার আগে পর্যন্ত প্রচার কাজ কতটা সম্পন্ন হবে, সেই সম্বন্ধে বিস্তারিত আমরা জানি না কিন্তু আমরা এটা জানি যে শেষ আসার আগে ঈশ্বরের সন্তোষ অনুযায়ী রাজ্যের সুসমাচার পৃথিবীর সমস্ত লোকের কাছে প্রচারিত হবে। আর যিহোবা যেহেতু তাঁর গৃহ প্রতাপে পরিপূর্ণ করে চলছেন, তাই নিশ্চিতভাবেই আমাদের সেই ‘মনোরঞ্জন বস্তু সকলের’ বিষয়ে চিন্তা করতে হবে যাদেরকে এখনও নিয়ে আসা হয়নি।—হগয় ২:৭.
আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের কাজগুলোর মাধ্যমে প্রকাশ পায়
১৫. কোন বিষয়টা প্রচার কাজের প্রতি আমাদের উপলব্ধিকে আরও বাড়াতে পারে?
১৫ হতে পারে আমরা এমন একটা সমাজে বাস করছি, যেখানে সুসমাচারের প্রতি কোনো সাড়া পাওয়া যায় না এবং আমাদের এমন কোনো জায়গায় যাওয়ার মতোও পরিস্থিতি নেই, যেখানে রাজ্য ঘোষণাকারীদের যাওয়া অনেক প্রয়োজন। ধরুন, শেষ আসার আগে আমাদের এলাকায় দশ জন ব্যক্তিকে পাওয়া যেতে পারে। আমরা কী এইরকম মনে করি যে, সেই দশ জন ব্যক্তিকে অন্বেষণ করা উপযুক্ত? যিশু বিস্তর লোকের প্রতি “করুণাবিষ্ট” হয়েছিলেন “কেননা তাহারা ব্যাকুল ও ছিন্নভিন্ন ছিল, যেন পালকবিহীন মেষপাল।” (মথি ৯:৩৬) বাইবেল অধ্যয়ন করে এবং মনোযোগ সহকারে প্রহরীদুর্গ ও সচেতন থাক! পত্রিকা পড়ে আমরা জগতের অবস্থা সম্বন্ধে আরও অর্ন্তদৃষ্টি লাভ করতে পারি। এর ফলে, এটা প্রচার করার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে আমাদের উপলব্ধিকে আরও বাড়াবে। সর্বোপরি, ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসের’ দ্বারা জোগানো বাইবেল-ভিত্তিক বিষয়বস্তুগুলো কৃতজ্ঞতার সঙ্গে ব্যবহার করলে, সেটা আমাদের অনেকবার কাজ করা হয়েছে এমন এলাকাগুলোতে আরও প্রত্যয়ী করে তুলবে।—মথি ২৪:৪৫-৪৭; ২ তীমথিয় ৩:১৪-১৭.
১৬. আমরা কীভাবে আমাদের পরিচর্যার কার্যকারিতাকে বাড়াতে পারি?
১৬ জীবন রক্ষাকারী বাইবেলের বার্তায় যারা হয়তো এখনও সাড়া দিতে পারে, তাদের জন্য আমাদের চিন্তা পরিচর্যায় বিভিন্ন সময়ে এবং বিভিন্ন উপায়ে গৃহকর্তাদের কাছে যেতে প্রেরণা দেয়। আমরা কি দেখতে পাচ্ছি যে, আমরা যখন সাক্ষাৎ করতে যাই, সেই সময় অনেকে ঘরে থাকে না? যদি তা-ই হয়, তা হলে আমাদের সাক্ষ্য দেওয়ার কাজের সময় এবং স্থানগুলো পরিবর্তন করে আমরা হয়তো আমাদের পরিচর্যার কার্যকারিতাকে বাড়াতে সর্মথ হতে পারি। জেলেরা তখনই মাছ ধরতে যায়, যখন তারা মাছ পাবে বলে জানে। আমাদের আধ্যাত্মিক মাছ ধরার কাজে আমরা কি একইরকম কিছু করতে পারি? (মার্ক ১:১৬-১৮) বিকেলে এবং যেখানে আইনসম্মত সেখানে টেলিফোনে সাক্ষ্য দেওয়ার চেষ্টা করুন না কেন? কেউ কেউ দেখেছে যে, কার পার্কিংয়ের জায়গাগুলো, বাস ডিপোগুলো এবং দোকানগুলো ফলপ্রসূ ‘মৎস ধরার স্থান।’ লোকেদের প্রতি আমাদের অব্রাহামের মতো মনোভাব থাকা সেই সময়ও প্রকাশ পায়, যখন আমরা রীতিবহির্ভূতভাবে সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগগুলো কাজে লাগাই।
১৭. কোন কোন উপায়ে আমরা মিশনারিদের এবং বিদেশে কাজ করছে এমন ব্যক্তিদের উৎসাহ দিতে পারি?
১৭ লক্ষ লক্ষ লোক এখনও রাজ্যের বার্তা শোনেনি। প্রচার করা ছাড়াও আমরা কি ঘরে থেকেও এই ধরনের লোকেদের প্রতি চিন্তা দেখাতে পারি? আমরা কি মিশনারি অথবা পূর্ণ-সময়ের পরিচারকদের জানি, যারা বিদেশে গিয়ে সেবা করছে? যদি জেনে থাকি, তা হলে আমরা তাদেরকে চিঠি লিখতে পারি, যা তাদের কাজের প্রতি আমাদের উপলব্ধিকে প্রকাশ করে। সেটা কীভাবে সাধারণ লোকেদের প্রতি আমাদের চিন্তা প্রকাশ করে? আমাদের উৎসাহমূলক চিঠি এবং প্রশংসা মিশনারিদের তাদের দায়িত্ব চালিয়ে যেতে প্রেরণা দিতে পারে আর এভাবে তা অনেক অনেক লোককে সত্যের জ্ঞান পেতে সাহায্য করবে। (বিচারকর্ত্তৃগণের বিবরণ ১১:৪০) এ ছাড়া, আমরা মিশনারিদের জন্য এবং অন্যান্য দেশে যারা সত্যের জন্য ক্ষুধার্ত, তাদের জন্য প্রার্থনা করতে পারি। (ইফিষীয় ৬:১৮-২০) চিন্তা দেখানোর আরেকটা উপায় হল, যিহোবার সাক্ষিদের শিক্ষামূলক কাজের জন্য আর্থিক সাহায্য দান করা।—২ করিন্থীয় ৮:১৩, ১৪; ৯:৬, ৭.
আপনি কি অন্য জায়গায় যেতে সমর্থ?
১৮. রাজ্যের কাজগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কিছু খ্রিস্টান নিজেদের দেশে কী করেছে?
১৮ যেখানে রাজ্য ঘোষণাকারীদের অনেক প্রয়োজন, সেখানে যারা গিয়েছে, তারা তাদের আত্মত্যাগী প্রচেষ্টাগুলোর জন্য আশীর্বাদ পেয়েছে। কিন্তু, নিজেদের দেশে থেকেও অন্যান্য যিহোবার সাক্ষিরা অন্য আরেকটা ভাষা শিখেছে, যাতে অভিবাসীদের আধ্যাত্মিক সাহায্য দেওয়া যেতে পারে। এই ধরনের প্রচেষ্টাগুলো সত্যিই পুরস্কৃত হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস শহরের যে-সাত জন সাক্ষি চাইনিজ ভাষী লোকেদের সাহায্য করছে, তারা ২০০১ সালে প্রভুর সান্ধ্যভোজ উদ্যাপনে ১১৪ জনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। যারা এই ধরনের দলগুলোকে সাহায্য করছে, তারা দেখেছে যে শস্য ছেদনের জন্য তাদের এলাকাগুলো তৈরি আছে।—মথি ৯:৩৭, ৩৮.
১৯. আপনি যদি বিদেশে গিয়ে ওই এলাকার রাজ্যের প্রচার কাজকে আরও বাড়ানোর কথা মনস্থ করেন, তা হলে কী করা যুক্তিযুক্ত?
১৯ আপনি এবং আপনার পরিবার হয়তো মনে করছেন যে, যেখানে রাজ্য ঘোষণাকারীদের অনেক প্রয়োজন, আপনারা সেখানে যাওয়ার মতো অবস্থানে রয়েছেন। অবশ্য, প্রথমেই “বসিয়া ব্যয় হিসাব করিয়া” দেখা বিজ্ঞের কাজ। (লূক ১৪:২৮) বিশেষ করে এটা তখন সত্য, যখন কোনো ব্যক্তি বিদেশে গিয়ে থেকে যাওয়ার বিষয়টি মনস্থ করেন। যেকেউ এই ধরনের সম্ভাবনা নিয়ে চিন্তা করছে, তারা নিজেদের এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করলে ভাল করবে: ‘আমি কি আমার পরিবারকে সাহায্য করতে পারব? আমি কি সঠিক ভিসা পেতে পারি? আমি কি ইতিমধ্যেই সেই দেশের ভাষায় কথা বলতে পারি বা আমি কি সেটা শিখতে আগ্রহী? আমি কি জলবায়ু এবং সংস্কৃতি নিয়ে চিন্তা করেছি? আমি কি সত্যিই সেই দেশের সহ বিশ্বাসীদের কাছে বোঝাস্বরূপ না হয়ে বরং “সান্ত্বনাজনক [“শক্তিবর্ধক,” NW]” হতে পারব? (কলসীয় ৪:১০, ১১) আপনি যে-দেশে যেতে চাইছেন, সেখানে কতটা প্রয়োজন তা বোঝার জন্য সবসময় যিহোবার সাক্ষিদের সেই শাখা দপ্তরকে লেখা উপযুক্ত, যেটি ওই এলাকার প্রচার কাজ দেখাশোনা করে। *
২০. বিদেশে সহ বিশ্বাসীদের এবং অন্যান্য লোকেদের উপকারের জন্য একজন যুবক খ্রিস্টান কীভাবে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন?
২০ একজন খ্রিস্টান, যিনি জাপানে কিংডম হল নির্মাণের কাজে যুক্ত আছেন তিনি জানতে পারেন যে, প্যারাগুয়েতে উপাসনার জায়গা নির্মাণের জন্য দক্ষ কর্মীদের প্রয়োজন রয়েছে। অবিবাহিত হওয়ায় এবং তারুণ্যপূর্ণ উদ্যোম থাকাতে তিনি সেই দেশে যান এবং সেই প্রকল্পে পূর্ণ-সময়ের একমাত্র কর্মী হিসেবে আট মাসের জন্য কাজ করেন। সেখানে থাকাকালীন তিনি স্প্যানিশ ভাষা শেখেন এবং বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করেন। তিনি সেই দেশে রাজ্য ঘোষণাকারীদের প্রয়োজন অনুভব করেন। যদিও তিনি জাপানে ফিরে গিয়েছিলেন কিন্তু শীঘ্রই তিনি প্যারাগুয়ে ফিরে আসেন এবং সেই কিংডম হলে লোকেদের একত্রিত করতে সাহায্য করেন।
২১. যিহোবার দিনের জন্য অপেক্ষা করার সময় আমাদের মূল চিন্তার বিষয় এবং দৃষ্টিভঙ্গি কী হওয়া উচিত?
২১ ঈশ্বর লক্ষ রাখবেন যে, তাঁর ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে প্রচার কাজ পুরোপুরিভাবে করা হচ্ছে। বর্তমানে, তিনি চূড়ান্ত আধ্যাত্মিক শস্য ছেদন ত্বরান্বিত করছেন। (যিশাইয় ৬০:২২) তা হলে, যিহোবার দিনের জন্য অপেক্ষা করার সময় আসুন আমরা উদ্যোগের সঙ্গে শস্য ছেদনের কাজে অংশ নিই এবং লোকেদের আমাদের প্রেমময় ঈশ্বরের মতো করে দেখি।
[পাদটীকা]
^ এমন কোনো একটা দেশে যাওয়া আপনার জন্য সবসময় সাহায্যকারী নয়, যেখানে প্রচার কাজ নিষিদ্ধ বা সীমাবদ্ধ। তা করা এমনকি রাজ্য প্রকাশকদের ক্ষতি করতে পারে, যারা এইরকম পরিস্থিতিতে বিচক্ষণতার সঙ্গে কাজ করছে।
আপনি কি মনে করতে পারেন?
• যিহোবার দিনের অপেক্ষা করার সময় লোকেদেরকে আমাদের কোন দৃষ্টিতে দেখা উচিত?
• সদোমে বসবাস করতে পারে, এমন ধার্মিক ব্যক্তিদের সম্বন্ধে অব্রাহামের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন ছিল?
• নীনবীর অনুতপ্ত লোকেদেরকে যোনা কোন দৃষ্টিতে দেখেছিলেন?
• কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, যে-লোকেরা এখনও সুসমাচার শোনেনি, তাদেরকে আমরা যিহোবার মতো করে দেখি?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
অব্রাহাম যিহোবার মতো করে লোকেদের দেখেছিলেন
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
অনুতপ্ত নীনবীয়দের যোনা যিহোবার মতো করে দেখেছিলেন
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
লোকেদের জন্য চিন্তা আমাদের বিভিন্ন সময়ে এবং বিভিন্ন উপায়ে সুসমাচার প্রচার করার বিষয়ে বিবেচনা করতে পরিচালিত করে