সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

সত্যের ঈশ্বরকে অনুকরণ করা

সত্যের ঈশ্বরকে অনুকরণ করা

সত্যের ঈশ্বরকে অনুকরণ করা

“প্রিয় বৎসদের ন্যায় তোমরা ঈশ্বরের অনুকারী হও।”—ইফিষীয় ৫:১.

১. সত্য সম্বন্ধে কেউ কেউ কী বিশ্বাস করে এবং তাদের যুক্তি কেন ভুল?

 “সত্য কি?” (যোহন ১৮:৩৮) সেই প্রশ্নটি প্রায় ২০০০ বছর আগে পন্তীয় পীলাত উদাসীনভাবে জিজ্ঞেস করেছিলেন, যা ইঙ্গিত করে যে, সত্য এতটাই দুষ্প্রাপ্য যে তা ধরাছোঁয়ার বাইরে। আজকে অনেকে এটার সঙ্গে একমত হবে। সত্যের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আক্রমণের মুখে। আপনি হয়তো বলতে শুনেছেন যে, প্রত্যেকে তার নিজের সত্য নির্ধারণ করে থাকে অথবা সত্য হল আপেক্ষিক বা সত্য সবসময় বদলায়। কিন্তু এই ধরনের যুক্তি ভুল। গবেষণা ও শিক্ষার লক্ষ্যই হল, আমরা যে-জগতে বাস করি সেই সম্বন্ধে প্রকৃত ঘটনা বা সত্য জানা। সত্য ব্যক্তিগত মতামতের কোনো বিষয় নয়। উদাহরণস্বরূপ, হয় মানুষের মৃত্যুর পর তার দেহের মধ্যে কিছু বেঁচে থাকে নতুবা থাকে না। হয় শয়তানের অস্তিত্ব আছে নতুবা নেই। হয় জীবনের কোনো উদ্দেশ্য আছে নতুবা নেই। প্রতিটা ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একটা সঠিক উত্তর থাকতে পারে। একটা সত্য এবং অন্যটা মিথ্যা; দুটো কখনও সত্য হতে পারে না।

২. কোন কোন উপায়ে যিহোবা সত্যের ঈশ্বর এবং কোন প্রশ্নগুলো এখন আলোচনা করা হবে?

আগের প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করেছি যে, যিহোবা হলেন সত্যের ঈশ্বর। তিনি সমস্ত বিষয়ে সত্য জানেন। প্রতারণাপূর্ণ শত্রু শয়তান দিয়াবলের সম্পূর্ণ বিপরীতে, যিহোবা সবসময় সত্যবাদী। এর চেয়েও বড় কথা, যিহোবা অন্যদের কাছে উদারভাবে সত্য প্রকাশ করেন। প্রেরিত পৌল সহ খ্রিস্টানদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “প্রিয় বৎসদের ন্যায় তোমরা ঈশ্বরের অনুকারী হও।” (ইফিষীয় ৫:১) যিহোবার সাক্ষি হিসেবে কীভাবে আমরা সত্য বলার এবং সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করার ক্ষেত্রে তাঁকে অনুকরণ করতে পারি? কেন তা করা এত গুরুত্বপূর্ণ? আর কোন আশ্বাস আমাদের রয়েছে যে, যারা সত্যের পথ অনুধাবন করে তাদের যিহোবা অনুমোদন করেন? আসুন আমরা তা দেখি।

৩, ৪. কীভাবে প্রেরিত পৌল ও পিতর “শেষ কালে” যা ঘটবে, সেই সম্বন্ধে বর্ণনা করেছিল?

আমরা এমন এক যুগে বাস করি, যেখান ধর্মীয় অসত্য ছেয়ে রয়েছে। ঐশিক অনুপ্রেরণায় প্রেরিত পৌল যেমন ভাববাণী করেছিলেন যে, এই “শেষ কালে” অনেক লোক ঈশ্বরীয় ভক্তির অবয়বধারী কিন্তু এর শক্তিকে মিথ্যা প্রমাণিত করে। কারও কারও “নষ্টবিবেক” থাকায় তারা সত্যকে প্রতিরোধ করে। এ ছাড়া, ‘দুষ্ট লোকেরা ও বঞ্চকেরা, পরের ভ্রান্তি জন্মাইয়া ও আপনারা ভ্রান্ত হইয়া, উত্তর উত্তর কুপথে অগ্রসর হয়।’ যদিও এই ধরনের লোকেরা সবসময় শিখে চলেছে, তবুও তারা কখনও “সত্যের তত্ত্বজ্ঞান পর্য্যন্ত” পৌঁছাতে পারে না।—২ তীমথিয় ৩:১, ৫, ৭, ৮, ১৩.

প্রেরিত পিতরও শেষ কাল সম্বন্ধে লিখতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তিনি যেমন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, লোকেরা শুধু সত্যকে প্রত্যাখ্যানই করে না কিন্তু সেইসঙ্গে ঈশ্বরের বাক্যকে ও যারা এর সত্যকে ঘোষণা করে, তাদের উপহাস করে। এই উপহাসকেরা নোহের দিনের জগৎ যে জলে আপ্লাবিত হয়ে নষ্ট হয়েছিল আর এটা যে ভবিষ্যৎ বিচার দিনের জন্য এক নমুনা স্থাপন করে, তা “ইচ্ছাপূর্বক” অস্বীকার করে। যখন অধার্মিক লোকেদের ধ্বংস করার জন্য ঈশ্বরের সময় আসবে, তখন তাদের নিজ নিজ ইচ্ছানুযায়ী চিন্তা করার অর্থ হবে তাদের জন্য বিপর্যয়।—২ পিতর ৩:৩-৭.

যিহোবার দাসেরা সত্য জানে

৫. ভাববাদী দানিয়েলের কথা অনুসারে, ‘শেষকালে’ কী হবে এবং এই ভবিষ্যদ্বাণী কীভাবে পূর্ণ হয়েছে?

‘শেষকালের’ এক বর্ণনায় ভাববাদী দানিয়েল ঈশ্বরের লোকেদের মধ্যে সম্পূর্ণ আলাদা এক অবস্থার বিষয় ভাববাণী করেছিলেন—ধর্মীয় সত্যের পুনঃপ্রবর্তন। তিনি লিখেছিলেন: “অনেকে ইতস্ততঃ ধাবমান হইবে, এবং [“সত্য,” NW] জ্ঞানের বৃদ্ধি হইবে।” (দানিয়েল ১২:৪) যিহোবার লোকেরা সেই প্রধান প্রতারকের দ্বারা বিভ্রান্ত বা অন্ধ নয়। বাইবেলের পাতায় পাতায় ইতস্ততঃ ধাবমান হয়ে তারা সত্য জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছে। প্রথম শতাব্দীতে যিশু তাঁর শিষ্যদের জ্ঞানালোকিত করেছিলেন। তিনি “তাঁহাদের বুদ্ধিদ্বার খুলিয়া দিলেন, যেন তাঁহারা শাস্ত্র বুঝিতে পারেন।” (লূক ২৪:৪৫) আমাদের দিনেও যিহোবা একইভাবে কাজ করেছেন। তাঁর বাক্য, তাঁর আত্মা এবং তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে তিনি সারা পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিকে সেই বিষয়টি বুঝতে সমর্থ করেছেন, যা তিনি ইতিমধ্যেই জানেন আর তা হল সত্য।

৬. আজকে ঈশ্বরের লোকেরা বাইবেলের কোন সত্যগুলো বুঝতে পেরেছে?

ঈশ্বরের লোক হিসেবে, আমরা অনেক বিষয় বুঝতে পারি, যেগুলো আমরা অন্য কোনোভাবে কখনও জানতে পারতাম না। আমরা সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানি, যেগুলো জানার জন্য জগতের বিজ্ঞ ব্যক্তিরা হাজার হাজার বছর ধরে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। উদাহরণস্বরূপ, আমরা জানি যে কেন দুঃখকষ্ট রয়েছে, কেন লোকেরা মারা যায় এবং কেন মানুষেরা পৃথিবীব্যাপী শান্তি ও একতা অর্জন করতে পারে না। এ ছাড়া, আমাদেরকে এমন এক দর্শন দিয়ে আশীর্বাদ করা হয়েছে যা ভবিষ্যতে আসবে—ঈশ্বরের রাজ্য, এক পরমদেশ পৃথিবী এবং সিদ্ধ অবস্থায় অনন্তকালীন জীবন। আমরা সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি যিহোবাকে জেনেছি। আমরা তাঁর আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব ও সেইসঙ্গে তাঁর আশীর্বাদ উপভোগ করার জন্য আমাদের যা করতে হবে, সেই সম্বন্ধে জেনেছি। সত্য জানা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, কোনটি সত্য নয়। সত্যকে কাজে লাগানো আমাদেরকে নিষ্ফল বিষয়ের পিছনে ছোটা থেকে রক্ষা করে, জীবন থেকে সর্বোত্তম বিষয় লাভ করতে সমর্থ করে এবং ভবিষ্যতের জন্য এক চমৎকার আশা দেয়।

৭. কারা বাইবেলের সত্যগুলো পেতে পারে এবং কারা নয়?

আপনি কি বাইবেলের সত্য বোঝেন? যদি বোঝেন, তা হলে আপনাকে প্রচুররূপে আশীর্বাদ করা হয়েছে। একজন লেখক বা লেখিকা যখন একটি বই লেখেন, তখন তিনি সাধারণত এক নির্দিষ্ট শ্রেণীর লোকেদের আকৃষ্ট করার জন্য তা লেখেন। কিছু বই উচ্চশিক্ষিত লোকেদের জন্য, কিছু বাচ্চাদের জন্য, আবার কিছু কিছু সেই লোকেদের জন্য লেখা হয়ে থাকে, যারা বিশেষজ্ঞ হওয়ার ক্ষেত্রগুলোতে পড়াশুনা করছে। যদিও বাইবেল সহজেই সকলে পেতে পারে কিন্তু এটি এক নির্দিষ্ট দলের লোকেদের বোঝার ও উপলব্ধির জন্য দেওয়া হয়েছে। যিহোবা এটিকে পৃথিবীর নম্র, মৃদুশীল ব্যক্তিদের জন্য তৈরি করেছেন। এই ধরনের লোকেরা বাইবেলের প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি করতে পারে, তা তাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, পদমর্যাদা বা জাতি যা-ই হোক না কেন। (১ তীমথিয় ২:৩, ৪) অন্যদিকে, বাইবেলের সত্যের বোধগম্যতা সেই ব্যক্তিদেরকে প্রদান করা হয় না, যারা সঠিক প্রবণতাসম্পন্ন নয়, তা তারা যত বুদ্ধিমান বা শিক্ষিতই হোক না কেন। উদ্ধত, গর্বিত ব্যক্তিরা ঈশ্বরের বাক্যের মূল্যবান সত্যগুলোকে উপলব্ধি করতে পারে না। (মথি ১৩:১১-১৫; লূক ১০:২১; প্রেরিত ১৩:৪৮, NW) একমাত্র ঈশ্বরই এই ধরনের একটি বই তৈরি করতে পারেন।

যিহোবার দাসেরা সত্যবাদী

৮. কেন যিশু ছিলেন সত্যের মূর্ত প্রতীক?

যিহোবার মতো তাঁর বিশ্বস্ত সাক্ষিরাও সত্যবাদী। যিহোবার সর্বোৎকৃষ্ট সাক্ষি, যিশু খ্রিস্ট যা শিখিয়েছিলেন ও যেভাবে জীবনযাপন করেছিলেন এবং যেভাবে মারা গিয়েছিলেন, সেটার মাধ্যমে সত্যকে দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেছিলেন। তিনি যিহোবার বাক্য ও প্রতিজ্ঞাগুলোর সত্যতাকে সমর্থন করেছিলেন। এই কারণেই যিশু ছিলেন সত্যের মূর্ত প্রতীক, যেমনটা তিনি নিজেই বলেছিলেন।—যোহন ১৪:৬; প্রকাশিত বাক্য ৩:১৪; ১৯:১০.

৯. সত্য বলার বিষয়ে শাস্ত্র কী বলে?

যিশু ছিলেন “অনুগ্রহে ও সত্যে পূর্ণ” এবং “তাঁহার মুখে ছল ছিল না।” (যোহন ১:১৪; যিশাইয় ৫৩:৯) অন্যদের প্রতি সত্যবাদী হওয়ার ক্ষেত্রে যিশু যে-নমুনা স্থাপন করেছেন, সত্য খ্রিস্টানরা তা অনুসরণ করে। পৌল সহ বিশ্বাসীদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “প্রত্যেকে আপন আপন প্রতিবাসীর সহিত সত্য আলাপ করিও; কারণ আমরা পরস্পর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ।” (ইফিষীয় ৪:২৫) আগে ভাববাদী সখরিয় লিখেছিলেন: “আপন আপন প্রতিবাসীর কাছে সত্য বলিও।” (সখরিয় ৮:১৬) খ্রিস্টানরা সত্যবাদী কারণ তারা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করতে চায়। যিহোবা হলেন সত্যবাদী এবং মিথ্যাচারের কারণে যে-ক্ষতিগুলো হয়, তা তিনি জানেন। তাই, তিনি সঠিকভাবেই আশা করেন যে, তাঁর দাসেরা সত্য বলবে।

১০. লোকেরা কেন মিথ্যা বলে এবং এর কোন নেতিবাচক ফলগুলো রয়েছে?

১০ অনেকের কাছে মিথ্যা বলা হয়তো নির্দিষ্ট কোনো সুযোগসুবিধা অর্জনের জন্য এক সুবিধাজনক হাতিয়ার বলে মনে হতে পারে। লোকেরা শাস্তি থেকে রেহাই পেতে, কোনোভাবে মুনাফা অর্জন করতে অথবা অন্যদের কাছ থেকে প্রশংসা পেতে মিথ্যা বলে থাকে। তা সত্ত্বেও, মিথ্যা বলা চালিয়ে যাওয়া এক বদভ্যাস। এর চেয়েও বড় কথা, একজন মিথ্যাবাদী ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করতে পারে না। (প্রকাশিত বাক্য ২১:৮, ২৭; ২২:১৫) যখন আমরা সত্যবাদী হিসেবে পরিচিতি লাভ করি, তখন আমরা যা বলি অন্যেরা তা-ই বিশ্বাস করে; তারা আমাদের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু, আমরা যদি এমনকি একটি মিথ্যা কথা বলেও ধরা পড়ি, তা হলে অন্যেরা হয়তো ভবিষ্যতে আমরা যা-ই বলি না কেন, সেটার সত্যতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করতে শুরু করবে। আফ্রিকার একটা প্রবাদ বলে: “একটা মিথ্যা হাজারটা সত্যকে নষ্ট করে।” আরেকটা প্রবাদ বলে: “একজন মিথ্যাবাদী এমনকি সত্য বললেও, কেউ তাকে বিশ্বাস করে না।”

১১. কোন দিক দিয়ে সত্যবাদিতা কেবল সত্য কথা বলার চেয়েও আরও বেশি কিছু?

১১ সত্যবাদিতার অর্থ কেবল সত্য কথা বলার চেয়েও আরও বেশি কিছু। এটা জীবনের এক পথ। এটা বর্ণনা করে যে আমরা কে। আমরা অন্যদের কাছে সত্য জানাই, শুধুমাত্র আমরা যা বলি সেটার দ্বারাই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে আমাদের কাজের দ্বারাও। “তুমি যে পরকে শিক্ষা দিতেছ, তুমি কি আপনাকে শিক্ষা দেও না?” প্রেরিত পৌল জিজ্ঞেস করেছিলেন। “তুমি যে চুরি করিতে নাই বলিয়া প্রচার করিতেছ, তুমি কি চুরি করিতেছ? তুমি যে ব্যভিচার করিতে নাই বলিতেছ, তুমি কি ব্যভিচার করিতেছ?” (রোমীয় ২:২১, ২২) আমরা যদি অন্যদের সত্য জানাতে চাই, তা হলে আমাদের অবশ্যই সমস্ত ক্ষেত্রে সত্যবাদী হতে হবে। সত্যবাদী ও সৎ হিসেবে আমাদের সুনাম, আমরা যা শিক্ষা দিই সেটার প্রতি লোকেরা কীভাবে সাড়া দেয়, এর ওপর এক জোরালো প্রভাব ফেলবে।

১২, ১৩. সত্যবাদিতার বিষয়ে একজন অল্পবয়সী মেয়ে কী লিখেছিল এবং তার উচ্চ নৈতিক মানের মূল কারণটি কী ছিল?

১২ যিহোবার দাসদের মধ্যে অল্পবয়সীরাও সত্যবাদী হওয়ার গুরুত্ব বুঝতে পারে। স্কুলের একটা রচনায় জেনি, যার বয়স সেই সময়ে ১৩ বছর ছিল, সে লিখেছিল: “সততা হল এমন কিছু যেটাকে আমি অত্যন্ত মূল্য দিই। দুঃখের বিষয় যে, অনেক লোকই আজকে পুরোপুরি সৎ নয়। আমি প্রতিজ্ঞা করেছি যে, আমি সবসময় আমার জীবনে সততা বজায় রাখব। এ ছাড়া আমি এমনকি তখনও সত্য বলব, যখন তা সঙ্গে সঙ্গে আমাকে বা আমার বন্ধুদের উপকৃত করবে না। আমি এই বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নিই যে, তারাই আমার বন্ধু যারা সত্য কথা বলে ও সৎ লোক।”

১৩ এই রচনার ওপর মন্তব্য করতে গিয়ে জেনির শিক্ষিকা বলেছিলেন: “তুমি অনেক ছোট হওয়া সত্ত্বেও এক জোরালো নৈতিক চরিত্র ও নীতিগত মান গড়ে তুলেছ। আমি জানি তুমি এই মানের সঙ্গে লেগে থাকবে কারণ তোমার নৈতিক মনোবল রয়েছে।” এই স্কুলপড়ুয়া মেয়ের নৈতিক মনোবলের মূল কারণটি কী ছিল? জেনি তার রচনার শুরুতে বলেছিল যে, তার ধর্ম “[তার] জীবনের জন্য মানগুলোকে নির্ধারণ করে।” সেই রচনা লেখার পর সাত বছর কেটে গেছে। তার শিক্ষিকা যেমনটা ধারণা করেছিলেন, জেনি যিহোবার একজন সাক্ষি হিসেবে তার জীবনে এক উচ্চ নৈতিক মান প্রদর্শন করে চলছে।

যিহোবার দাসেরা সত্য প্রকাশ করে

১৪. কেন ঈশ্বরের দাসদের বিশেষভাবে সত্যকে সমর্থন করার এক বিরাট দায়িত্ব রয়েছে?

১৪ অবশ্যই যিহোবার সাক্ষিরা ছাড়া অন্যেরাও সত্য বলে থাকে ও সৎ হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু, যিহোবার দাস হিসেবে আমাদের বিশেষভাবে সত্যকে সমর্থন করার এক বিরাট দায়িত্ব রয়েছে। আমাদের ওপর আস্থা সহকারে বাইবেলের সত্যগুলোর ভার দেওয়া হয়েছে, যে-সত্যগুলো একজনকে অনন্তজীবনের দিকে চালিত করতে পারে। তাই, অন্যদের সঙ্গে সেই জ্ঞান বন্টন করতে আমরা বাধ্য। “যে কোন ব্যক্তিকে অধিক দত্ত হইয়াছে,” যিশু বলেছিলেন, “তাহার নিকটে অধিক দাবি করা যাইবে।” (লূক ১২:৪৮) নিশ্চিতভাবে, সেই লোকেদের কাছ থেকে ‘অধিক দাবি করা যায়,’ যাদেরকে ঈশ্বরবিষয়ক মূল্যবান জ্ঞান দিয়ে আশীর্বাদ করা হয়েছে।

১৫. অন্যদের বাইবেলের সত্য জানিয়ে আপনি কোন সুখ লাভ করেন?

১৫ অন্যদেরকে বাইবেলের সত্য জানানোর মধ্যে সুখ রয়েছে। যিশুর প্রথম শতাব্দীর শিষ্যদের মতো, আমরা সুসমাচার—আশার এক হৃদয়গ্রাহী বার্তা—তাদের কাছে ঘোষণা করি, যারা “ব্যাকুল ও ছিন্নভিন্ন . . . যেন পালকবিহীন মেষপাল” এবং যারা ‘ভূতগণের শিক্ষামালা’ দ্বারা অন্ধ ও বিভ্রান্ত। (মথি ৯:৩৬; ১ তীমথিয় ৪:১) প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “আমার সন্তানগণ সত্যে চলে, ইহা শুনিলে যে আনন্দ হয়, তদপেক্ষা মহত্তর আনন্দ আমার নাই।” (৩ যোহন ৪) যোহনের “সন্তানগণ,” সম্ভবত যাদেরকে তিনি প্রথমে সত্য জানিয়েছিলেন, তাদের বিশ্বস্ততা তাকে প্রচুর আনন্দিত করেছিল। এটা আমাদেরও আনন্দিত করে, যখন আমরা দেখি যে লোকেরা ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি উপলব্ধি দেখিয়ে সাড়া দেয়।

১৬, ১৭. (ক) কেন সকলে সত্যকে গ্রহণ করে না? (খ) আপনি যখন বাইবেলের সত্য ঘোষণা করেন, তখন আপনি কোন আনন্দ লাভ করতে পারেন?

১৬ এটা ঠিক যে, সকলে সত্যকে গ্রহণ করবে না। ঈশ্বর সম্বন্ধে যিশু সত্য জানিয়েছিলেন, এমনকি সেই সময়েও যখন তা করা জনপ্রিয় ছিল না। যিহুদি বিরোধীদের তিনি বলেছিলেন: “তোমরা কেন আমাকে বিশ্বাস কর না? যে কেহ ঈশ্বরের, সে ঈশ্বরের কথা সকল শুনে; এই জন্যই তোমরা শুন না, কারণ তোমরা ঈশ্বরের নহ।”—যোহন ৮:৪৬, ৪৭.

১৭ যিশুর মতো, আমরাও যিহোবা সম্বন্ধে মূল্যবান সত্য জানানোর ক্ষেত্রে বিরত থাকি না। আমরা আশা করি না যে, আমরা যা বলি তা সকলেই শুনবে কারণ যিশু যা বলেছিলেন তা সবাই গ্রহণ করেনি। তা সত্ত্বেও, আমাদের এটা জানার আনন্দ রয়েছে যে আমরা যা করছি তা সঠিক। যিহোবা তাঁর প্রেমপূর্ণ-দয়ার কারণে চান যে, মানবজাতির কাছে সত্য প্রকাশিত হোক। সত্যের বাহক হিসেবে, খ্রিস্টানরা এক অন্ধকার জগতে জ্যোতির্বাহক হয়ে ওঠে। আমাদের কথা ও কাজের দ্বারা সত্যের জ্যোতিকে উজ্জ্বল হতে দিয়ে আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতার গৌরব করার জন্য অন্যদের সাহায্য করতে পারি। (মথি ৫:১৪, ১৬) আমরা জনসাধারণ্যে জানাই যে, আমরা সত্য সম্বন্ধে শয়তানের নকল বর্ণনাকে প্রত্যাখ্যান করি এবং ঈশ্বরের বিশুদ্ধ ও অমিশ্রিত বাক্যকে সমর্থন করি। যে-সত্য আমরা জানি এবং অন্যদের সঙ্গে বন্টন করি, তা সেই ব্যক্তিদের জন্য প্রকৃত স্বাধীনতা এনে দিতে পারে, যারা এটাকে গ্রহণ করে।—যোহন ৮:৩২.

সত্যের পথ অনুধাবন করুন

১৮. কেন এবং কীভাবে যিশু নথনেলকে অনুগ্রহ দেখিয়েছিলেন?

১৮ যিশু সত্য ভালবেসেছিলেন ও তা বলেছিলেন। পৃথিবীতে তাঁর পরিচর্যার সময় তিনি সেই ব্যক্তিদের প্রতি অনুগ্রহ দেখিয়েছিলেন, যারা সত্যবাদী ছিল। নথনেলের সম্বন্ধে যিশু বলেছিলেন: “ঐ দেখ, এক জন প্রকৃত ইস্রায়েলীয়, যাহার অন্তরে ছল নাই।” (যোহন ১:৪৭) পরে, নথনেল যাকে সম্ভবত বর্থলময় বলা হতো, তাকে ১২ জন প্রেরিতের মধ্যে একজন হিসেবে মনোনীত করা হয়েছিল। (মথি ১০:২-৪) কত বড় এক সম্মান!

১৯-২১. কীভাবে পূর্বের এক অন্ধ ব্যক্তি সাহসের সঙ্গে সত্য বলায় আশীর্বাদ পেয়েছিলেন?

১৯ বাইবেলের যোহন বইয়ের একটি পুরো অধ্যায় আরেকজন সৎ ব্যক্তির বিষয় বর্ণনা করে, যিনি যিশুর দ্বারা আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। আমরা তার নাম জানি না। আমরা তার সম্বন্ধে যা জানি তা হল, সেই লোকটি ছিলেন একজন ভিখারি ও জন্মান্ধ। যিশু যখন তার দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, তখন লোকেরা চমৎকৃত হয়েছিল। এই অলৌকিক আরোগ্যের খবর কয়েক জন ফরীশীর কানেও গিয়েছিল, যারা সত্যকে ঘৃণা করত এবং নিজেদের মধ্যে যুক্তি করেছিল যে, যেকেউ যিশুতে বিশ্বাস অনুশীলন করবে তাকে সমাজগৃহ থেকে বের করে দেওয়া হবে। তাদের ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে পূর্বের এই অন্ধ ব্যক্তির ভীরু বাবামা ফরীশীদের কাছে এই মিথ্যা বলে যে, তাদের ছেলে কীভাবে দেখতে পাচ্ছে বা কে তাকে সুস্থ করেছে, তারা তা জানে না।—যোহন ৯:১-২৩.

২০ সুস্থ ব্যক্তিকে আবারও ফরীশীদের সামনে ডাকা হয়েছিল। যেকোনো পরিণতিকে অগ্রাহ্য করে তিনি সাহসের সঙ্গে সত্য বলেছিলেন। তিনি কীভাবে সুস্থ হয়েছেন এবং যিশুই যে তা করেছেন, সেটা ব্যাখ্যা করেছিলেন। যিশু যে ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছেন সেই বিষয়টি বিশিষ্ট ও শিক্ষিত ব্যক্তিরা বিশ্বাস করেনি বলে অবাক হয়ে, সুস্থ ব্যক্তিটি নির্ভীকভাবে তাদেরকে এই সুস্পষ্ট বিষয়টি মেনে নেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তিনি যদি ঈশ্বর হইতে না আসিতেন, তবে কিছুই করিতে পারিতেন না।” কোনোরকম পালটা তর্কবিতর্ক না করে ফরীশীরা সেই ব্যক্তিকে উদ্ধত হিসেবে অভিযুক্ত করেছিল এবং তাকে বের করে দিয়েছিল।—যোহন ৯:২৪-৩৪.

২১ যিশু যখন এই বিষয়টা জেনেছিলেন, তখন তিনি প্রেমের সঙ্গে সেই ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার জন্য সময় করে নিয়েছিলেন। তা করার পর, তিনি সেই অন্ধ ব্যক্তির বিশ্বাসকে বৃদ্ধি করেছিলেন, যা একসময় ওই ব্যক্তি দেখিয়েছিলেন। যিশু প্রকাশ্যে নিজেকে মশীহ হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। সত্য বলায় সেই ব্যক্তিকে কত আশীর্বাদই না করা হয়েছিল! নিশ্চিতভাবেই, ঐশিক অনুগ্রহ সেই লোকেদের ওপর বর্তায়, যারা সত্য বলে।—যোহন ৯:৩৫-৩৭.

২২. কেন আমাদের সত্যের পথ অনুধাবন করা উচিত?

২২ সত্য বলার অভ্যাস হল এমন এক লক্ষ্য, যেটাকে আমাদের গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া উচিত। লোকেদের ও ঈশ্বরের সঙ্গে এক সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তোলা ও তা বজায় রাখার জন্য এটি এক মূল বিষয়। সত্যবাদী হওয়া মানে খোলাখুলি, আন্তরিক, সহজগম্য ও নির্ভরযোগ্য হওয়া আর এটা যিহোবার অনুমোদন নিয়ে আসে। (গীতসংহিতা ১৫:১, ২) অসত্যবাদী হওয়া মানে প্রতারক, অনির্ভরযোগ্য ও মিথ্যাবাদী আর এটা যিহোবার অসন্তোষ নিয়ে আসে। (হিতোপদেশ ৬:১৬-১৯) তাই, সত্যের পথ অনুধাবন করার সংকল্প নিন। বাস্তবিকপক্ষে, সত্যের ঈশ্বরকে অনুকরণ করার জন্য আমাদের অবশ্যই সত্য জানতে হবে, সত্য বলতে হবে এবং সত্য অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• সত্য জানি বলে কেন আমরা কৃতজ্ঞ হতে পারি?

• সত্যবাদী হওয়ার ক্ষেত্রে কীভাবে আমরা যিহোবাকে অনুকরণ করতে পারি?

• অন্যদেরকে বাইবেলের সত্য জানানোর উপকারগুলো কী?

• সত্যের পথ অনুধাবন করা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

খ্রিস্টানদের ওপর আস্থা সহকারে বাইবেলের সত্যের ভার অর্পণ করায়, তারা উদ্যোগ সহকারে অন্যদের সঙ্গে তা বন্টন করে

[১৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

যিশুর দ্বারা সুস্থ হওয়া অন্ধ ব্যক্তিটি সত্য বলার কারণে প্রচুর আশীর্বাদ পেয়েছিলেন