সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবার দাসদের প্রকৃত আশা রয়েছে

যিহোবার দাসদের প্রকৃত আশা রয়েছে

যিহোবার দাসদের প্রকৃত আশা রয়েছে

“অনেক জাতির মধ্যে যাকোবের অবশিষ্টাংশ সদাপ্রভুর নিকট হইতে আগত শিশিরের ন্যায়, . . . যাহা মনুষ্যের জন্য বিলম্ব করে না।”—মীখা ৫:৭.

১. কীভাবে আত্মিক ইস্রায়েল সতেজতার এক উৎস?

 যিহোবা হলেন বৃষ্টি এবং শিশিরের মহান নির্মাতা। শিশির অথবা বৃষ্টি, যেকোনোটির জন্যই মানুষের ওপর আশা করা নিষ্ফল। ভাববাদী মীখা লিখেছিলেন: “অনেক জাতির মধ্যে যাকোবের অবশিষ্টাংশ সদাপ্রভুর নিকট হইতে আগত শিশিরের ন্যায়, তৃণের উপরে পতিত বৃষ্টির ন্যায় হইবে, যাহা মনুষ্যের জন্য বিলম্ব করে না ও মনুষ্য-সন্তানদের অপেক্ষা করে না।” (মীখা ৫:৭) বর্তমান দিনে “যাকোবের অবশিষ্টাংশ” কারা? তারা হল আত্মিক ইস্রায়েলীয়রা, “ঈশ্বরের ‘ইস্রায়েলের’” অবশিষ্টাংশ। (গালাতীয় ৬:১৬) পৃথিবীর “অনেক জাতির” কাছে তারা “সদাপ্রভুর নিকট হইতে আগত” সতেজতাদায়ক ‘শিশির’ এবং “তৃণের উপরে পতিত বৃষ্টির” মতো। হ্যাঁ, অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা আজকে লোকেদের জন্য ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা সতেজতার এক উৎস। যিহোবা তাদেরকে রাজ্য ঘোষণাকারী হিসেবে ব্যবহার করছেন, যাতে তারা লোকেদেরকে তাঁর প্রকৃত আশার বার্তা জানাতে পারে।

২. সমস্যাপূর্ণ এই জগতে বাস করা সত্ত্বেও, কেন আমাদের প্রকৃত আশা রয়েছে?

এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, এই জগতে প্রকৃত আশার অভাব রয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, নৈতিক অবক্ষয়, অপরাধ, অর্থনৈতিক সংকট, সন্ত্রাস, যুদ্ধ—শয়তান দিয়াবলের কর্তৃত্বাধীন এক জগতে এই বিষয়গুলো আমরা আশা করি। (১ যোহন ৫:১৯) অনেকেই ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভয় পায়। কিন্তু, যিহোবার উপাসক হিসেবে আমরা ভয় পাই না কারণ ভবিষ্যতের জন্য আমাদের এক নিশ্চিত আশা রয়েছে। এটা এক প্রকৃত আশা কারণ এটা ঈশ্বরের বাক্যের ওপর ভিত্তি করে। যিহোবাতে ও তাঁর বাক্যে আমাদের বিশ্বাস আছে কারণ তিনি যা বলেন, তা সবসময় সত্য হয়।

৩. (ক) যিহোবা কেন ইস্রায়েল এবং যিহূদার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে চলেছেন? (খ) মীখার কথাগুলো কেন আজকের দিনে প্রযোজ্য?

ঐশিকভাবে অনুপ্রাণিত মীখার ভবিষ্যদ্বাণী আমাদেরকে যিহোবার নামে চলতে শক্তিশালী করে এবং প্রকৃত আশার এক ভিত্তি জোগায়। সা.কা.পূ. অষ্টম শতাব্দীতে মীখা যখন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তখন ঈশ্বরের চুক্তির লোকেরা ইস্রায়েল ও যিহূদা, এই দুটো জাতিতে বিভক্ত ছিল আর উভয়ই ঈশ্বরের চুক্তিকে অবজ্ঞা করেছিল। এর ফল হয়েছিল নৈতিক অবক্ষয়, ধর্মভ্রষ্টতা ও চরম বস্তুবাদিতা। তাই, যিহোবা সর্তক করে দিয়েছিলেন যে, তিনি তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবেন। অবশ্য, ঈশ্বরের এই সতর্কবাণী মীখার সমসাময়িক লোকেদের প্রতি ছিল। কিন্তু, বর্তমান দিনের অবস্থা অনেকটা মীখার দিনের মতো আর তাই তার কথাগুলো এখনকার জন্যও প্রযোজ্য। এই বিষয়টা মীখার বইয়ের সাতটি অধ্যায়ের কিছু মুখ্য বিষয় আলোচনা করার সময় স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

সামগ্রিক পর্যালোচনা যা প্রকাশ করে

৪. মীখা ১ থেকে ৩ অধ্যায় কোন তথ্য জানায়?

আসুন আমরা মীখার বইয়ে কী কী রয়েছে, তা সংক্ষেপে দেখি। ১ অধ্যায়ে, যিহোবা ইস্রায়েল ও যিহূদার অধর্ম প্রকাশ করেন। তাদের কর্তব্য অবহেলার কারণে ইস্রায়েল ধ্বংস হয়ে যাবে এবং যিহূদার শাস্তি এমনকি যিরূশালেমের দ্বার পর্যন্ত পৌঁছাবে। ২ অধ্যায় প্রকাশ করে যে, ধনী ও ক্ষমতাবান লোকেরা দুর্বল ও অসহায়দের অত্যাচার করছে। তবে, সেখানে ঐশিক একটা প্রতিজ্ঞাও রয়েছে। ঈশ্বরের লোকেদের একতাবদ্ধভাবে সমবেত করা হবে। ৩ অধ্যায় জাতীয় নেতা এবং কর্তব্য অবহেলাকারী ভাববাদীদের বিরুদ্ধে যিহোবার রায়গুলো সম্বন্ধে জানায়। নেতারা ন্যায়বিচারকে বিকৃত করছে আর ভাববাদীরা মিথ্যা বলছে। তা সত্ত্বেও, মীখা যিহোবার আসন্ন বিচার সম্বন্ধে ঘোষণা করার জন্য পবিত্র আত্মা দ্বারা শক্তি লাভ করেন।

৫. মীখা ৪ এবং অধ্যায়ের মূল বক্তব্য কী?

চার অধ্যায় ভবিষ্যদ্বাণী করে যে, শেষকালে সমস্ত জাতি যিহোবার গৃহের উচ্চীকৃত পর্বতে তাঁর কাছ থেকে শিক্ষা পাওয়ার জন্য আসবে। এর আগে যিহূদা বাবিলে নির্বাসিত হবে, তবে যিহোবা তাকে উদ্ধার করবেন। ৫ অধ্যায় প্রকাশ করে যে, মশীহ যিহূদার বৈৎলেহমে জন্মগ্রহণ করবেন। তিনি তাঁর লোকেদের পরিচালনা করবেন এবং অত্যাচারী জাতিগুলোর হাত থেকে তাদের উদ্ধার করবেন।

৬, ৭. মীখার ভবিষ্যদ্বাণীর ৬ ও ৭ অধ্যায়ে কোন বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে?

মীখা ৬ অধ্যায় যিহোবার লোকেদের বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগগুলোকে একটা মামলার আকারে লিপিবদ্ধ করে। যিহোবা এমন কী করেছেন, যা তাঁর লোকেদের বিদ্রোহ করতে পরিচালিত করেছে? কিছুই না। আসলে, তিনি যা চান সেগুলো খুবই যুক্তিসংগত। তিনি চান যে, তাঁর উপাসকরা তাঁর সঙ্গে গমনাগমন করার সময় যেন ন্যায়বিচার অনুশীলন করে, দয়ালু ও বিনয়ী হয়। তা না করে, ইস্রায়েল ও যিহূদা অধর্মের পথ অনুসরণ করেছে আর তাই তাদের পরিণতিগুলো ভোগ করতে হবে।

মীখা তার ভবিষ্যদ্বাণীর শেষ অধ্যায়ে, তার দিনের লোকেদের দুষ্টতা প্রকাশ করে দেন। কিন্তু, তিনি নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন না কারণ তিনি যিহোবার জন্য ‘অপেক্ষা করার মনোভাব দেখাতে’ দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। (মীখা ৭:৭, NW) বইটি এই দৃঢ় আস্থা দিয়ে শেষ হয় যে, যিহোবা তাঁর লোকেদের প্রতি করুণা দেখাবেন। ইতিহাস প্রমাণ করে যে, এই আশা বাস্তবে পরিণত হয়েছিল। সা.কা.পূ. ৫৩৭ সালে যিহোবার যখন তাঁর লোকেদের শাস্তি দেওয়া শেষ হয়, তখন তিনি করুণার সঙ্গে এক অবশিষ্টাংশকে তাদের নিজেদের দেশে পুনর্স্থাপন করেন।

৮. মীখার বইয়ের বিষয়বস্তুকে আপনি কীভাবে সংক্ষেপে বলবেন?

মীখার মাধ্যমে যিহোবা কতই না চমৎকার তথ্য প্রকাশ করেন! এই অনুপ্রাণিত বই, যারা ঈশ্বরকে সেবা করে বলে দাবি করে কিন্তু আসলে অবিশ্বস্ত, তাদের সঙ্গে তিনি কীরকম আচরণ করেন, সেই বিষয়ে সর্তকতামূলক উদাহরণগুলো জোগায়। এটা বিভিন্ন ঘটনা সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করে, যা আজকে ঘটে চলছে। আর এই কঠিন সময়ে আমাদের কীরকম আচরণ করা উচিত, সেই বিষয়ে এটি ঐশিক পরামর্শ দেয়, যাতে করে আমাদের আশাকে দৃঢ় করা যায়।

সার্বভৌম প্রভু যিহোবা বলেন

৯. মীখা ১:২ পদ অনুসারে যিহোবা কী করতে যাচ্ছিলেন?

এখন আসুন আমরা মীখার বইটি আরও বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা করে দেখি। মীখা ১:২ পদে আমরা পড়ি: “হে জাতিগণ, তোমরা সকলেই শুন; হে পৃথিবী ও তাহার সমস্ত বস্তু, অবধান কর; আর প্রভু সদাপ্রভু [“সার্বভৌম প্রভু যিহোবা,” NW] তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষী হউন, প্রভু [“যিহোবা,” NW] আপন পবিত্র মন্দির হইতে সাক্ষী হউন।” আপনি যদি মীখার সময়ে বেঁচে থাকতেন, তা হলে ওই বাক্যগুলো যে আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করত, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বস্তুত, এগুলো আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করে কারণ যিহোবা তাঁর পবিত্র মন্দির থেকে কথা বলছেন আর তা শুধু ইস্রায়েল ও যিহূদার উদ্দেশে নয় বরং সব জায়গার লোকেদের উদ্দেশে। মীখার দিনে, লোকেরা দীর্ঘদিন ধরে সার্বভৌম প্রভু যিহোবাকে অবজ্ঞা করছিল। কিন্তু শীঘ্রই তা বদলে যাবে। যিহোবা চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেবেন বলেই স্থির করেছেন।

১০. মীখা ১:২ পদের কথাগুলো কেন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ?

১০ আমাদের দিনেও একই বিষয় সত্য। প্রকাশিত বাক্য ১৪:১৮-২০ পদ দেখায় যে, যিহোবা আবার তাঁর পবিত্র মন্দির থেকে কথা বলছেন। শীঘ্রই, তিনি চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেবেন আর তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাগুলো আবার মানবজাতিকে আন্দোলিত করবে। এবার, শয়তানের বিধিব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য “পৃথিবীর” দুষ্ট ‘দ্রাক্ষা-গুচ্ছকে’ যিহোবার ক্রোধের মহাকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হবে।

১১. মীখা ১:৩, ৪ পদের কথাগুলোর দ্বারা কী বোঝা যায়?

১১ যিহোবা কী করতে চলেছেন তা শুনুন। মীখা ১:৩, ৪ পদ বলে: “দেখ, সদাপ্রভু আপন স্থান হইতে বাহির হইয়া আসিতেছেন, তিনি নামিয়া পৃথিবীর উচ্চস্থলী সকলের উপর দিয়া গমন করিবেন। তাঁহার নীচে পর্ব্বতগণ গলিয়া যাইবে, তলভূমি সকল বিদীর্ণ হইবে, যেমন অগ্নির উত্তাপে মোম গলিয়া যায়, যেমন গড়ান স্থানে জল ঝরিয়া পড়ে।” যিহোবা কি তাঁর স্বর্গীয় আবাস ছেড়ে আসবেন এবং আক্ষরিকভাবে প্রতিজ্ঞাত দেশের পর্বত ও সমভূমিগুলোকে পদদলিত করবেন? না। তাঁর সেইরকম করার কোনো দরকার নেই। তাঁর ইচ্ছা সম্পাদন করার জন্য তিনি পৃথিবীর দিকে কেবল তাঁর মনোযোগ ফেরাবেন। এ ছাড়া, এটা আক্ষরিক ভূমি নয় বরং যা বর্ণনা করা হয়েছে, তা অধিবাসীরা ভোগ করবে। যিহোবা যখন পদক্ষেপ নেবেন, তখন অবিশ্বস্ত লোকেদের জন্য সেটার ফল হবে ধ্বংসাত্মক—যেন পর্বতগুলো মোমের ন্যায় গলে গিয়েছে আর সমভূমিগুলো ভূমিকম্পের দ্বারা বিদীর্ণ হয়েছে।

১২, ১৩. দ্বিতীয় পিতর ৩:১০-১২ পদের সঙ্গে মিল রেখে, কী আমাদের আশাকে নিশ্চিত করে?

১২ মীখা ১:৩, ৪ পদের ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বাক্যগুলো হয়তো আপনাকে আরেকটা অনুপ্রাণিত ভবিষ্যদ্বাণীর কথা মনে করিয়ে দিতে পারে, যা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক ঘটনাগুলো সম্বন্ধে বলে। ২ পিতর ৩:১০ পদে যেমন লিপিবদ্ধ করা আছে, প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “প্রভুর [“যিহোবার,” NW] দিন চোরের ন্যায় আসিবে; তখন আকাশমণ্ডল হূহূ শব্দ করিয়া উড়িয়া যাইবে, এবং মূলবস্তু সকল পুড়িয়া গিয়া বিলীন হইবে, এবং পৃথিবী ও তাহার মধ্যবর্ত্তী কার্য্য সকল পুড়িয়া যাইবে।” মীখার ভবিষ্যদ্বাণীর মতো, পিতরের বাক্যগুলোও আক্ষরিক আকাশ ও পৃথিবীর জন্য প্রযোজ্য নয়। সেগুলো এক মহাক্লেশ সম্বন্ধে উল্লেখ করে, যা এই অধার্মিক বিধিব্যবস্থার ওপর আসতে চলেছে।

১৩ সেই আসন্ন দুর্দশা সত্ত্বেও, খ্রিস্টানরা ভবিষ্যতের বিষয়ে আস্থা রাখতে পারে, যেমন মীখা রেখেছিলেন। কীভাবে? পিতরের চিঠির পরের পদগুলোতে পাওয়া পরামর্শ অনুসরণ করে। প্রেরিত জোরালোভাবে ঘোষণা করেন: “পবিত্র আচার ব্যবহার ও ভক্তিতে [“ঈশ্বরীয় ভক্তির কাজগুলোর বিষয়ে,” NW] কিরূপ লোক হওয়া তোমাদের উচিত! ঈশ্বরের সেই দিনের আগমনের অপেক্ষা ও আকাঙ্ক্ষা করিতে করিতে সেইরূপ হওয়া চাই।” (২ পিতর ৩:১১, ১২) ভবিষ্যতের বিষয়ে আমাদের আশা নিশ্চিত হবে, যদি আমরা এক বাধ্য হৃদয় গড়ে তুলি এবং নিশ্চিত করি যে আমাদের আচারব্যবহার পবিত্র ও আমাদের জীবন ঈশ্বরীয় ভক্তির কাজগুলোর দ্বারা পূর্ণ। আমাদের আশা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের এও মনে রাখতে হবে যে, যিহোবার দিন আসবেই আসবে।

১৪. ইস্রায়েল এবং যিহূদা কেন শাস্তি পাওয়ার যোগ্য ছিল?

১৪ যিহোবা জানান যে, কেন তাঁর লোকেরা শাস্তি পাওয়ার যোগ্য। মীখা ১:৫ পদ বলে: “যাকোবের অধর্ম্ম প্রযুক্ত ও ইস্রায়েল-কুলের বিবিধ পাপ প্রযুক্ত, এই সকল হইতেছে, যাকোবের অধর্ম্ম কি? শমরিয়া কি নয়? যিহূদার উচ্চস্থলী-সমূহই বা কি? যিরূশালেম কি নয়?” ইস্রায়েল ও যিহূদা তাদের অস্তিত্বের জন্য যিহোবার কাছে ঋণী। তবুও, তারা তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে আর তাদের বিদ্রোহ সরাসরি তাদের নিজ নিজ রাজধানী শমরিয়া ও যিরূশালেমে প্রসারিত হয়।

মন্দ অভ্যাসগুলোর দ্বারা পরিপূর্ণ

১৫, ১৬. মীখার সমসাময়িক লোকেরা কোন মন্দ কাজগুলোর জন্য দোষী ছিল?

১৫ মীখার সমসাময়িক লোকেদের দুষ্টতার একটা উদাহরণ মীখা ২:১, ২ পদে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা আছে: “ধিক্‌ তাহাদিগকে, যাহারা আপন আপন শয্যায় অধর্ম্ম কল্পনা করে ও কুকর্ম্ম স্থির করে! তাহারা রাত্রি প্রভাত হইবামাত্র তাহা সাধন করে, কেননা তাহা তাহাদের হস্তের ক্ষমতাধীন। তাহারা ক্ষেত্রের প্রতি লোভ করিয়া সবলে তাহা গ্রহণ করে, এবং ঘরের প্রতিও লোভ করিয়া তাহা হরণ করে; এইরূপে তাহারা পুরুষের ও তাহার ঘরের প্রতি, মনুষ্যের ও তাহার পৈতৃক অধিকারের প্রতি দৌরাত্ম্য করে।”

১৬ লোভী ব্যক্তিরা রাতে শুয়ে শুয়ে কুপরিকল্পনা করে যে, কীভাবে তাদের প্রতিবেশীদের জমি ও বাড়ি দখল করবে। সকাল হওয়া মাত্র তারা তাদের কুপরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত করে। তারা যদি যিহোবার চুক্তির বিষয় স্মরণে রাখত, তা হলে এইরকম মন্দ কাজগুলো করত না। মোশির ব্যবস্থায় দরিদ্রদের রক্ষার বিষয়ে বিভিন্ন বিধান রয়েছে। এর অধীনে কোনো পরিবার তাদের উত্তরাধিকার চিরদিনের জন্য হারাবে না। কিন্তু, তা ওই লোভী লোকেদের চিন্তিত করে না। তারা লেবীয় পুস্তক ১৯:১৮ পদের বাক্যগুলো অবজ্ঞা করে, যা বলে: “তুমি . . . আপন প্রতিবাসীকে আপনার মত প্রেম করিবে।”

১৭. কী ঘটতে পারে, যখন যারা ঈশ্বরকে সেবা করে বলে দাবি করে অথচ বস্তুগত বিষয়গুলোকে তাদের জীবনে প্রথমে রাখে?

১৭ এটা দেখায়, যখন লোকেরা ঈশ্বরের সেবা করে বলে দাবি করে অথচ আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলোকে উপেক্ষা করে ও প্রথমে বস্তুগত বিষয়গুলোর চেষ্টা করে, তখন কী ঘটতে পারে। পৌল তার দিনের খ্রিস্টানদের সর্তক করেছিলেন: “যাহারা ধনী হইতে বাসনা করে, তাহারা পরীক্ষাতে ও ফাঁদে এবং নানাবিধ মূঢ় ও হানিকর অভিলাষে পতিত হয়, সে সকল মনুষ্যদিগকে সংহারে ও বিনাশে মগ্ন করে।” (১ তীমথিয় ৬:৯) বস্তুত, একজন ব্যক্তি যখন টাকাপয়সা অর্জনকে তার জীবনের প্রধান লক্ষ্য করেন, তখন আসলে তিনি এক মিথ্যা দেবতা বা ধনদৌলতের উপাসনা করছেন। সেই মিথ্যা দেবতা ভবিষ্যতের জন্য কোনো নিশ্চিত আশা দেয় না।—মথি ৬:২৪.

১৮. মীখার দিনে বস্তুবাদী ব্যক্তিদের কী হতে যাচ্ছিল?

১৮ মীখার দিনের অনেকে নির্মমভাবে শিখেছিল যে, বস্তুগত বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করা অসার। মীখা ২:৪ পদ অনুযায়ী যিহোবা বলেন: “সেই দিন লোকেরা তোমাদের বিষয়ে এক প্রবাদ গ্রহণ করিবে, এবং আর্ত্তনাদ সহকারে বিলাপ করিবে, বলিবে, আমাদের নিতান্তই সর্ব্বনাশ হইল, তিনি আমার জাতির অধিকার হস্তান্তর করেন; তিনি একেবারে আমা হইতে তাহা দূর করেন! আমাদের ক্ষেত্র ভাগ করিয়া ধর্ম্মত্যাগী [“অবিশ্বস্ত,” NW] লোককে দেন।” হ্যাঁ, বাড়ি ও জমির সেই দখলকারীরা তাদের নিজেদের পারিবারিক উত্তরাধিকার হারাবে। তাদের বিদেশে নিবার্সিত করা হবে এবং তাদের সম্পত্তি “অবিশ্বস্ত” বা পরজাতীয় লোকেরা লুঠ করবে। এক সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যতের সমস্ত আশা চুরমার হয়ে যাবে।

১৯, ২০. যে-যিহুদিরা যিহোবাতে নির্ভর করেছিল, তাদের কী হয়েছিল?

১৯ কিন্তু, যারা যিহোবাতে নির্ভর করে তারা নিরাশ হবে না। অব্রাহাম ও দায়ূদের সঙ্গে করা চুক্তির প্রতি যিহোবা বিশ্বস্ত আর সেই লোকেদের প্রতি তাঁর করুণা রয়েছে, যারা মীখার মতো তাঁকে ভালবাসে এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে তাদের দেশবাসীদের বিচ্ছিন্নতার কারণে দুঃখ করে। এইরকম ন্যায়নিষ্ঠ লোকেদের জন্য ঈশ্বরের নিরূপিত সময়ে পুনর্স্থাপনের ব্যবস্থা থাকবে।

২০ সেটা সা.কা.পূ. ৫৩৭ সালে বাবিলের পতনের পর এবং যিহুদিদের এক অবশিষ্টাংশ যখন তাদের জন্মভূমিতে ফিরে আসে, তখন ঘটে। সেই সময়ে, মীখা ২:১২ পদের কথাগুলোর প্রাথমিক পরিপূর্ণতা হয়েছে। যিহোবা বলেন: “হে যাকোব, আমি নিশ্চয়ই তোমার সমস্ত লোককে সমবেত করিব, আমি নিশ্চয়ই ইস্রায়েলের অবশিষ্টাংশকে সংগ্রহ করিব; তাহাদিগকে বস্রার মেষগণের ন্যায় একত্র করিব; যেমন বাথানের মধ্যস্থিত পাল, তেমনি তাহারা মনুষ্য-বাহুল্যে কোলাহল করিবে।” যিহোবা কত প্রেমময়! তাঁর লোকেদের শাস্তি দেওয়ার পর, তিনি এক অবশিষ্টাংশকে তাদের পূর্বপুরুষদের যে-দেশ দিয়েছিলেন, সেই দেশে ফিরে আসার ও সেখানে তাঁর সেবা করার অনুমতি দেন।

আমাদের দিনে উল্লেখযোগ্য সাদৃশ্য

২১. কীভাবে বর্তমান দিনের অবস্থাকে মীখার দিনের সঙ্গে তুলনা করা যায়?

২১ মীখার প্রথম দুটো অধ্যায় বিবেচনা করার সময়, আজকেও বিষয়গুলো একইরকমের দেখে কি আপনি অবাক হয়েছেন? মীখার দিনের মতো আজকে অনেকেই ঈশ্বরকে সেবা করে বলে দাবি করে। কিন্তু, যিহূদা ও ইস্রায়েলের মতো তারা বিভক্ত আর এমনকি নিজেদের মধ্যে লড়াই করেছে। খ্রিস্টীয়জগতের অনেক ধনী ব্যক্তি দরিদ্রদের অত্যাচার করেছে। দিন দিন ধর্মীয় গুরুরা আরও বেশি করে সেই সমস্ত অভ্যাসগুলোকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, যেগুলোকে বাইবেলে স্পষ্টভাবে নিন্দা করা হয়েছে। তাই অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, শীঘ্রই খ্রিস্টীয়জগৎ ও সেইসঙ্গে “মহতী বাবিল” অর্থাৎ মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্যের বাকি অংশগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে! (প্রকাশিত বাক্য ১৮:১-৫) তবে, মীখার দিনের নমুনা অনুসরণ করে যিহোবা বিশ্বস্ত দাসদের পৃথিবীতে রাখবেন।

২২. কোন দুটো দল ঈশ্বরের রাজ্যের ওপর তাদের আশা রেখেছে?

২২ উনিশশো উনিশ সালে, বিশ্বস্ত অভিষিক্ত খ্রিস্টানরা খ্রিস্টীয়জগতের সঙ্গে চূড়ান্তভাবে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল এবং সমস্ত জাতির কাছে রাজ্যের সুসমাচার ঘোষণা করতে শুরু করেছিল। (মথি ২৪:১৪) শুরুতে, তারা আত্মিক ইস্রায়েলের অবশিষ্টাংশদের খুঁজেছিল। এরপর, ‘আরও মেষকে’ একত্র করা হয়েছিল এবং এই দুই দল “এক পাল, ও এক পালক” হয়েছিল। (যোহন ১০:১৬) যদিও এখন তারা দেশ ও দ্বীপ মিলিয়ে ২৩৪টা জায়গায় ঈশ্বরের সেবা করে, তবুও যিহোবার এই সমস্ত বিশ্বস্ত উপাসকদের প্রকৃতভাবে “একত্র” করা হয়েছে। আর এখন, মেষের খোঁয়াড় নারী ও শিশুরা সহ ‘মনুষ্যবাহুল্যে কোলাহলেপূর্ণ।’ তাদের আশা এই বিধিব্যবস্থার ওপরে নয় কিন্তু ঈশ্বরের রাজ্যের ওপরে, যা শীঘ্রই পার্থিব পরমদেশের দিকে পরিচালিত করবে।

২৩. আপনি কেন দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে পারেন যে, আপনার আশা নিশ্চিত?

২৩ যিহোবার বিশ্বস্ত উপাসকদের সম্বন্ধে মীখা ২ অধ্যায়ের শেষ পদ বলে: “তাহাদের রাজা তাহাদের সম্মুখে চলিয়া গেলেন; আর সদাপ্রভু তাহাদের অগ্রগামী হইলেন।” আপনি কি নিজেকে সেই বিজয়ের শোভাযাত্রায় দেখতে পান, যেখানে আপনি রাজা যিশু খ্রিস্টকে অনুসরণ করছেন আর যার অগ্রভাগে যিহোবা রয়েছেন? যদি তা-ই হয়, আপনি দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে পারেন যে, বিজয় অবশ্যম্ভাবী এবং আপনার আশা নিশ্চিত। মীখার ভবিষ্যদ্বাণী সম্বন্ধে আরও আলোচনা করার মাধ্যমে এটা আরও বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• মীখার দিনে, কেন যিহোবা যিহূদা এবং ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?

• যারা ঈশ্বরকে সেবা করে বলে দাবি করে অথচ বস্তুগত বিষয়গুলোকে জীবনে প্রথমে রাখে, তাদের কী ঘটতে পারে?

মীখা ১ এবং অধ্যায় বিবেচনা করার পর, আপনি কেন দৃঢ়প্রত্যয়ী হন যে, আপনার আশা নিশ্চিত?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[৯ পৃষ্ঠার চিত্র]

মীখার ভবিষ্যদ্বাণী আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে আমাদের শক্তিশালী করতে পারে

[১০ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

সাধারণ কাল পূর্ব ৫৩৭ সালের যিহুদি অবশিষ্টাংশদের মতো, আত্মিক ইস্রায়েল এবং তাদের সহযোগীরা সত্য উপাসনাকে এগিয়ে নিয়ে যায়