সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

যিহোবা সবসময় আমাদের জন্য চিন্তা করেন

যিহোবা সবসময় আমাদের জন্য চিন্তা করেন

জীবন কাহিনী

যিহোবা সবসময় আমাদের জন্য চিন্তা করেন

বলেছেন এনেলেসি জাঙ্গা

সময়টা ছিল ১৯৭২ সাল। মালাউইর ইয়ুথ লিগের দশ জন যুবক সদস্য জোরপূর্বক আমাদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে ও আমাকে আঁকড়ে ধরে টেনেহিঁচড়ে পাশের এক আখক্ষেতে নিয়ে যায়। সেখানে তারা আমাকে মারধর করে আর আমি মরে গেছি মনে করে ফেলে রেখে চলে যায়।

মালাউইতে যিহোবার অসংখ্য সাক্ষি এই ধরনের হিংস্র আক্রমণের শিকার হয়। কেন তারা তাড়িত হয়েছিল? কী তাদের ধৈর্য ধরতে সাহায্য করেছিল? দয়া করে আমাকে আমার পরিবারের কাহিনী সম্বন্ধে আপনাদের বলতে দিন।

আমি এক ধর্মীয় পরিবারে, ১৯২১ সালের ৩১শে ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করি। আমার বাবা মধ্য আফ্রিকার প্রেসবিটারিয়ান গির্জার একজন পাদরি ছিলেন। আমি মালাউইর রাজধানী লিলংওয়ের কাছাকাছি এক ছোট্ট শহর এঙ্কোমাতে বড় হয়ে উঠেছিলাম। আমার বয়স যখন ১৫ বছর, তখন আমি এম্যাস জাঙ্গার স্ত্রী হয়েছিলাম।

একদিন আমার বাবার এক বন্ধু আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন, তিনিও একজন পাদরি ছিলেন। তিনি লক্ষ করেছিলেন যে, যিহোবার সাক্ষিরা আমাদের বাড়ির পাশেই থাকে আর তাই আমাদের তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ না হওয়ার বিষয়ে তিনি সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তিনি আমাদের বলেছিলেন যে সাক্ষিরা ভূতগ্রস্ত আর আমরা যদি সতর্ক না থাকি, তা হলে আমরাও ভূতগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারি। সেই সতর্কবাণী আমাদের মধ্যে এতটাই ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছিল যে, আমরা অন্য আরেকটা গ্রামে চলে গিয়েছিলাম যেখানে এম্যাস দোকানদার হিসেবে একটা চাকরি পেয়েছিল। তবে আমরা শীঘ্রই জানতে পেরেছিলাম যে আমাদের নতুন বাড়িটাও যিহোবার সাক্ষিদের বাড়ির পাশে অবস্থিত!

কিন্তু, বাইবেলের প্রতি এম্যাসের গভীর প্রেম তাকে শীঘ্রই সাক্ষিদের একজনের সঙ্গে কথা বলতে পরিচালিত করেছিল। তার বহু প্রশ্নের দৃঢ়নিশ্চিত উত্তর পাওয়ার পর এম্যাস তার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করার ব্যাপারে সাক্ষিদের প্রস্তাবকে গ্রহণ করেছিল। প্রথমে বাইবেল অধ্যয়নটি সেই দোকানে করা হতো যেখানে সে কাজ করত কিন্তু পরে সাপ্তাহিক অধ্যয়নটি আমাদের বাড়িতে হতো। প্রত্যেকবার যিহোবার সাক্ষিরা যখন আমাদের বাড়িতে আসত, আমি তাদের ভয়ে সেখান থেকে চলে যেতাম। কিন্তু, এম্যাস বাইবেল অধ্যয়ন চালিয়ে গিয়েছিল। তার অধ্যয়ন শুরু করার ছয় মাস পরে, ১৯৫১ সালের এপ্রিল মাসে সে বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। কিন্তু সে আমাকে তা বলেনি এই ভয়ে যে, এই খবর পেয়ে আমি তাকে ছেড়ে দেব।

কষ্টকর সপ্তাহগুলো

কিন্তু একদিন আমার বান্ধবী এলেন কাডজালেরো আমাকে বলেছিল যে, আমার স্বামী বাপ্তিস্ম নিয়ে যিহোবার সাক্ষিদের একজন হয়েছে। আমি রেগে ফেটে পড়েছিলাম! সেই দিন থেকে আমি তার সঙ্গে কথা বলিনি ও তার জন্য কোনো খাবার রান্না করিনি। এ ছাড়া, আমি তার স্নানের জন্য জল আনিনি ও গরমও করিনি—যে-কাজটাকে আমাদের সংস্কৃতি অনুযায়ী একজন স্ত্রীর দায়িত্ব বলে বিবেচনা করা হয়।

তিন সপ্তাহ ধরে এই ধরনের ব্যবহার সহ্য করার পর এম্যাস সদয়ভাবে আমাকে তার সঙ্গে বসতে বলেছিল এবং আমাকে জানিয়েছিল যে, কেন সে একজন সাক্ষি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে বেশ কয়েকটা শাস্ত্রপদ যেমন ১ করিন্থীয় ৯:১৬ পদ পড়েছিল ও তা ব্যাখ্যা করেছিল। আমি গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিলাম এবং অনুভব করেছিলাম যে আমারও সুসমাচার প্রচার কাজে অংশ নেওয়ার প্রয়োজন আছে। তাই আমি যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। সেই দিন সন্ধ্যাবেলাই আমার প্রেমময় স্বামীকে খুশি করতে আমি তার জন্য সুস্বাদু খাবার রান্না করেছিলাম।

পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের কাছে সত্য বলা

আমাদের বাবামারা যখন শুনেছিল যে, আমরা যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে মেলামেশা করছি, তখন তারা আমাদের প্রতি কঠোর বিরোধিতা করেছিল। আমার পরিবার আমাদের একটা চিঠি লিখেছিল যে আমরা যেন আর কখনও তাদের সঙ্গে দেখা করতে না যাই। তাদের প্রতিক্রিয়া আমাদের দুঃখ দিয়েছিল কিন্তু আমরা যিশুর প্রতিজ্ঞার ওপর নির্ভর করেছিলাম যে, আমরা অনেক আধ্যাত্মিক ভাইবোন ও বাবামাদের পাব।—মথি ১৯:২৯.

আমি আমার বাইবেল অধ্যয়নে দ্রুত উন্নতি করেছিলাম এবং ১৯৫১ সালের আগস্ট মাসে, আমার স্বামীর বাপ্তিস্মের ঠিক সাড়ে তিন মাস পর বাপ্তিস্ম নিয়েছিলাম। আমি আমার বন্ধু এলেনের কাছে সত্য বলতে বাধ্যবাধকতা অনুভব করেছিলাম। আনন্দের বিষয় যে, বাইবেল অধ্যয়ন করার ব্যাপারে আমার প্রস্তাবকে সে গ্রহণ করেছিল। ১৯৫২ সালের মে মাসে এলেন বাপ্তিস্ম নিয়েছিল ও আমার আধ্যাত্মিক বোন হয়েছিল, যেটা আমাদের বন্ধুত্বের বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করেছিল। আজও আমরা ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

এম্যাস ১৯৫৪ সালে বিভিন্ন মণ্ডলী পরিদর্শন করার জন্য একজন সীমা অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিল। সেই সময়ে আমাদের ইতিমধ্যেই ছটা ছেলেমেয়ে হয়ে গিয়েছিল। তখনকার দিনে, পরিবার রয়েছে এমন একজন ভ্রমণ অধ্যক্ষ এক সপ্তাহ একটা মণ্ডলী পরিদর্শন করতেন এবং পরের সপ্তাহে তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বাড়িতে থাকতেন। কিন্তু এম্যাস যখন ভ্রমণ করছিল তখন সে সবসময় এই বিষয়টা নিশ্চিত করত যে, আমি যেন আমাদের পারিবারিক অধ্যয়ন পরিচালনা করি। আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে অধ্যয়নটি আনন্দজনক রাখার চেষ্টা করতাম। এ ছাড়া, আমরা যিহোবা ও তাঁর বাক্যে পাওয়া সত্যের প্রতি আমাদের ভালবাসা সম্বন্ধে হৃদয় থেকে দৃঢ়প্রত্যয়ের সঙ্গে কথা বলতাম এবং পরিবারগতভাবে আমরা প্রচার কাজে অংশ নিতাম। এই আধ্যাত্মিক শিক্ষা কার্যক্রম আমাদের ছেলেমেয়েদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছিল এবং শীঘ্রই আমরা যে-তাড়নার মুখোমুখি হতে যাচ্ছিলাম, সেগুলো মোকাবিলা করার জন্য তাদের প্রস্তুত করেছিল।

ধর্মীয় তাড়না শুরু হয়

মালাউই ১৯৬৪ সালে এক স্বাধীন দেশ হয়ে গিয়েছিল। শাসক দলের কর্মকর্তারা যখন রাজনীতির ব্যাপারে আমাদের নিরপেক্ষ অবস্থান সম্বন্ধে জানতে পেরেছিল, তখন তারা দলের সদস্যপদের কার্ডগুলো * কিনতে আমাদের জোর করার চেষ্টা করেছিল। এম্যাস ও আমি যেহেতু তা কিনতে অস্বীকার করেছিলাম, তাই ইয়ুথ লিগের সদস্যরা আমাদের ভুট্টার ক্ষেত নষ্ট করে দিয়েছিল, যা পরের বছরের জন্য আমাদের প্রধান খাদ্য সামগ্রী ছিল। ভুট্টার গাছগুলোকে কেটে ফেলার সময় ইয়ুথ লিগের সদস্যরা এই গানটি গেয়েছিল: “যেকেউ কামুজুর [রাষ্ট্রপতি বাণ্ডার] কার্ড কিনতে অস্বীকার করে, উই পোকা তাদের কচি ভুট্টা খেয়ে ফেলবে এবং এই লোকেরা সেগুলোর জন্য রোদন করবে।” কিন্তু খাদ্যের এই ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও, আমরা ভেঙে পড়িনি। যিহোবা যে চিন্তা করেন, তা আমরা অনুভব করেছিলাম। তিনি প্রেমের সঙ্গে আমাদের শক্তিশালী করেছিলেন।—ফিলিপীয় ৪:১২, ১৩.

১৯৬৪ সালের আগস্ট মাসের এক মাঝরাতে আমি ছেলেমেয়েদের সঙ্গে একাই বাড়িতে ছিলাম। আমরা সবাই ঘুমাচ্ছিলাম কিন্তু ঠিক তখনই দূর থেকে আসা গানের আওয়াজ শুনে আমি জেগে উঠেছিলাম। তারা ছিল গুলেওয়্যামকুলু, উপজাতি গোষ্ঠীর নর্তকদের এক ভয়াবহ গুপ্ত সমাজ, যারা লোকেদের আক্রমণ করে এবং মৃত পূর্বপুরুষদের আত্মা হিসেবে ভান করে। ইয়ুথ লিগ আমাদের আক্রমণ করার জন্য এই গুলেওয়্যামকুলুদের পাঠিয়েছিল। আমি তাড়াতাড়ি ছেলেমেয়েদের ডেকে তুলেছিলাম এবং আক্রমণকারীরা আমাদের বাড়িতে পৌঁছানোর আগেই আমরা ঝোপের মধ্যে পালিয়ে গিয়েছিলাম।

লুকানোর সেই জায়গা থেকে আমরা এক উজ্জ্বল আলো দেখতে পেয়েছিলাম। গুলেওয়্যামকুলুরা আমাদের খড়ের চাল দেওয়া বাড়িটাতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। আমাদের সমস্ত জিনিসপত্র সহ বাড়িটা একেবারে পুড়ে গিয়েছিল। আমাদের বাড়ির পুড়ে যাওয়া ধ্বংসাবশেষ থেকে আক্রমণকারীরা চলে যাওয়ার সময় আমরা তাদের এই বলতে শুনেছিলাম, “আমরা সেই সাক্ষির জন্য আগুন তৈরি করেছি, যাতে সে নিজেকে উষ্ণ করতে পারে।” আমরা যিহোবার প্রতি কতই না কৃতজ্ঞ ছিলাম যে, সেখান থেকে আমরা সুরক্ষিতভাবে পালিয়ে বেঁচেছিলাম! এটা সত্যি যে, তারা আমাদের সমস্ত সম্পদ নষ্ট করেছিল কিন্তু মানুষের নয় বরং, যিহোবার ওপর নির্ভর করার আমাদের দৃঢ়সংকল্পকে তারা নষ্ট করতে পারেনি।—গীতসংহিতা ১১৮:৮.

আমরা জেনেছিলাম যে গুলেওয়্যামকুলুরা আমাদের এলাকায় আরও পাঁচটি যিহোবার সাক্ষিদের পরিবারের প্রতি একইরকম জঘন্য কাজ করেছিল। আমরা কতই না আনন্দিত ও কৃতজ্ঞ হয়েছিলাম, যখন প্রতিবেশী মণ্ডলীগুলোর ভাইবোনেরা আমাদের উদ্ধারের জন্য এসেছিল! তারা আবারও আমাদের বাড়িগুলো নির্মাণ করে দিয়েছিল এবং বেশ অনেক সপ্তাহ ধরে আমাদের খাবার জুগিয়েছিল।

তাড়না তীব্রতর হয়ে উঠে

১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, দেশজুড়ে সমস্ত যিহোবার সাক্ষিকে একত্রিত করার এক অভিযান চালানো হয়েছিল। আমাদের খুঁজে বের করার জন্য নিষ্ঠুর ও অত্যন্ত আগ্রাসী যুবকরা—বড় বড় ছুরি দ্বারা সজ্জিত ইয়ুথ লিগ ও মালাউই ইয়াং পাইয়োনিয়ারসের সদস্যরা—প্রত্যেকটা বাড়িতে বাড়িতে সাক্ষিদের অন্বেষণ করেছিল। তারা যখন তাদের পেয়েছিল, তখন সেই ব্যক্তিরা তাদের কাছে রাজনৈতিক দলের কার্ডগুলো বিক্রি করার প্রস্তাব দিয়েছিল।

আমাদের বাড়িতে আসার পর তারা জিজ্ঞেস করেছিল যে, আমাদের কাছে দলের কোনো কার্ড আছে কি না। আমি বলেছিলাম: “না, আমি এখনও পর্যন্ত কিনিনি। আর আমি এখন বা ভবিষ্যতেও সেটা কিনব না।” তখন তারা আমার স্বামী ও আমাকে আঁকড়ে ধরে স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে নিয়ে গিয়েছিল আর সঙ্গে করে কিছু নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের একটু সময় পর্যন্তও দেয়নি। আমাদের ছোট্ট ছেলেমেয়েরা যখন স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে এসেছিল, তখন তারা আমাদের দেখতে না পেয়ে খুব চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ভাল যে, আমাদের বড় ছেলে ড্যানিয়েল কিছু সময় পরই বাড়ি চলে এসেছিল এবং একজন প্রতিবেশীর কাছ থেকে জেনেছিল যে কী ঘটেছে। সঙ্গে সঙ্গে, সে তার ছোট ভাইবোনদের নিয়ে পুলিশ স্টেশনের দিকে রওনা হয়েছিল। তারা ঠিক সেই মুহূর্তে পৌঁছেছিল যখন পুলিশ আমাদের লিলংওয়েতে নিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রাকগুলোতে চড়াচ্ছিল। ছেলেমেয়েরাও আমাদের সঙ্গে চলে এসেছিল।

লিলংওয়েতে পুলিশের প্রধান কার্যালয়ে এক কৃত্রিম বিচার অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কর্মকর্তারা আমাদের জিজ্ঞেস করেছিল, “তোমরা কি যিহোবার সাক্ষিই থাকবে?” আমরা উত্তর দিয়েছিলাম “হ্যাঁ!” যদিও এই উত্তরের মানে ছিল সাত বছরের কারাদণ্ড। যারা সংগঠনকে “পরিচালনা করত” তাদের জন্য ছিল ১৪ বছরের কারাদণ্ড।

এক রাত না খেয়ে ও বিশ্রাম ছাড়াই কাটানোর পর পুলিশ আমাদের ম্যাওল কারাগারে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে কারাগারের কামরাগুলো বন্দিদের দ্বারা এত ঠাসাঠাসি ছিল যে, আমরা এমনকি মেঝেতেও শোয়ার জন্যও জায়গা খুঁজে পাইনি! শৌচাগার ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত ছিল মানুষভরতি প্রত্যেকটা কামরায় মাত্র একটা করে বালতি। খাবারের পরিমাণ ছিল খুবই অল্প এবং সেটাও ভালভাবে তৈরি করা ছিল না। দুই সপ্তাহ পরে জেলের অধ্যক্ষরা বুঝতে পেরেছিল যে, আমরা হলাম শান্তিপূর্ণ লোক আর তাই আমাদের কারাগারের বহিঃস্থ শরীর চর্চা প্রাঙ্গনটি ব্যবহার করার জন্য অনুমতি দিয়েছিল। আমরা অনেকে একসঙ্গে ছিলাম বলে প্রতিদিন একে অন্যকে উৎসাহ দেওয়ার এবং অন্যান্য বন্দিদের কাছে এক উত্তম সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ আমাদের হতো। আশ্চর্যের বিষয় হল যে, প্রায় তিন মাস কারাদণ্ড ভোগ করার পর আমাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল কারণ মালাউই সরকারের ওপর আন্তর্জাতিকভাবে চাপ এসেছিল।

পুলিশ কর্মকর্তারা আমাদের বাড়ি ফিরে যেতে বলেছিল কিন্তু তারা এও বলেছিল যে, মালাউইতে যিহোবার সাক্ষিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা ১৯৬৭ সালের ২০শে অক্টোবর থেকে ১৯৯৩ সালের ১২ই আগস্ট—প্রায় ২৬ বছর—পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। সেই বছরগুলো ছিল কষ্টকর, তবুও যিহোবার সাহায্যে আমরা আমাদের কঠোর নিরপেক্ষতাকে বজায় রাখতে পেরেছিলাম।

শিকারের পশুগুলোর মতো করে খোঁজা

সরকারের এক আদেশে ১৯৭২ সালের অক্টোবর মাসে প্রচণ্ড তাড়নার এক নতুন ঢেউ বয়ে গিয়েছিল। সেই আদেশ সমস্ত যিহোবার সাক্ষিকে তাদের চাকরি থেকে বরখাস্ত করার এবং বিভিন্ন গ্রামে বসবাসরত সমস্ত সাক্ষিকে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিল। সাক্ষিদের শিকারের পশুগুলোর মতো করে খোঁজা হয়েছিল।

সেই সময়ে একজন যুবক খ্রিস্টান ভাই এম্যাসের জন্য এই জরুরি সংবাদ নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসেছিল ‘ইয়ুথ লিগ আপনার শিরশ্ছেদ করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে, যাতে আপনার মাথাকে একটা দণ্ডে রেখে স্থানীয় প্রধানদের কাছে নিয়ে যেতে পারে।’ এম্যাস তাড়াতাড়ি করে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল কিন্তু এর আগে সে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা যাতে তাকে অনুসরণ করতে পারি সেই ব্যবস্থা করে গিয়েছিল। তাড়াহুড়ো করে আমি ছেলেমেয়েদের পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। এরপর ঠিক আমি যখন বের হতে যাচ্ছিলাম, তখনই ইয়ুথ লিগের দশ জন সদস্য এম্যাসের খোঁজে সেখানে এসেছিল। তারা আমাদের বাড়িতে জোরপূর্বক ঢুকে পড়েছিল কিন্তু জানতে পেয়েছিল যে এম্যাস পালিয়ে গিয়েছে। প্রচণ্ডভাবে রেগে গিয়ে সেই ব্যক্তিরা আমাকে ধরে টেনেহিঁচড়ে পাশের এক আখক্ষেতে নিয়ে গিয়েছিল যেখানে তারা আমাকে লাথি মেরেছিল ও আখ দিয়ে মারধর করেছিল। এরপর আমি মরে গেছি মনে করে তারা আমাকে ফেলে রেখে চলে গিয়েছিল। জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর আমি কোনোরকমে বুকে ভর দিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছিলাম।

সেই দিন এম্যাস রাতের অন্ধকারে তার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাকে দেখতে বাড়িতে ফিরে এসেছিল। যখন সে আমাকে প্রচণ্ডভাবে প্রহৃত অবস্থায় দেখেছিল, তখন এম্যাস ও একজন বন্ধু যার একটা গাড়ি ছিল তারা আমাকে ধীরে ধীরে গাড়িতে উঠিয়েছিল। এরপর আমরা লিলংওয়েতে একজন ভাইয়ের বাড়িতে উঠেছিলাম, যেখানে আমি সেই আঘাত থেকে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠেছিলাম এবং এম্যাস সেই দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা শুরু করেছিল।

শরণার্থী যাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই

আমাদের মেয়ে ডিনেস ও তার স্বামীর পাঁচ টনের একটা ট্রাক ছিল। তারা একজন ড্রাইভারকে চাকরি দিয়েছিল, যিনি এক সময় একজন মালাউই ইয়াং পাইয়োনিয়ার ছিলেন কিন্তু তিনি আমাদের পরিস্থিতির প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েছিলেন। তিনি স্বেচ্ছায় আমাদের ও অন্যান্য সাক্ষিদের সাহায্য করেছিলেন। সেই ড্রাইভার বেশ অনেকদিন ধরে সন্ধ্যায় লুকানোর পূর্বনির্দিষ্ট জায়গাগুলো থেকে সাক্ষিদের গাড়িতে তুলেছিলেন। এরপর তিনি তার মালাউই ইয়াং পাইয়োনিয়ারের ইউনিফর্ম পরেছিলেন এবং বোঝাই করা ট্রাককে রাস্তায় পুলিশের স্থাপিত অবরোধের মধ্যে দিয়ে চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি শত শত সাক্ষিকে সীমান্ত পেরিয়ে জাম্বিয়াতে যাওয়ার জন্য সাহায্য করতে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন।

কয়েক মাস পর, জাম্বিয়ার আধিকারিকরা আমাদের মালাউইতে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিল; তবুও আমরা নিজেদের গ্রামে ফিরে যেতে পারিনি। যেসমস্ত সম্পদ আমরা ছেড়ে এসেছিলাম সেগুলো চুরি হয়ে গিয়েছিল। এমনকি আমাদের বাড়ির ধাতুর তৈরি ছাদটিও খুলে ফেলা হয়েছিল। কোথাও যাওয়া নিরাপদ ছিল না বলে আমরা মোজাম্বিকে পালিয়ে গিয়েছিলাম এবং আড়াই বছর ধরে ম্ল্যাঙ্গেনি শরণার্থী শিবিরে ছিলাম। কিন্তু ১৯৭৫ সালের জুন মাসে মোজাম্বিকে স্থাপিত এক নতুন সরকার শিবিরটি বন্ধ করে দিয়েছিল এবং জোর করে আমাদের মালাউইতে ফিরে যেতে বলেছিল, যেখানে যিহোবার লোকেদের জন্য পরিস্থিতি তখনও পালটায়নি। আমাদের দ্বিতীয় বারের মতো জাম্বিয়াতে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। সেখানে আমরা চিগুমুকিরে শরণার্থী শিবিরে পৌঁছেছিলাম।

দুই মাস পর অনেক বাস ও সৈন্যবাহিনীর ট্রাকগুলো প্রধান রাস্তার ধারে এসে দাঁড়িয়েছিল এবং অনেক অস্ত্র দ্বারা সজ্জিত জাম্বিয়ার শত শত সৈন্যরা শিবিরটিকে ঘিরে ফেলেছিল। তারা আমাদের বলেছিল যে, আমাদের জন্য সুন্দর ঘর তৈরি করা হয়েছে এবং সেখানে আমাদের গাড়ি করে নিয়ে যেতে তারা সাহায্য করছে। আমরা জানতাম যে সেটা সত্যি ছিল না। সৈন্যরা লোকেদের জোর করে ট্রাক ও বাসগুলোতে ঢুকাতে শুরু করেছিল এবং চারিদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। সৈন্যরা তাদের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রশস্ত্রের দ্বারা শূন্যে বন্দুক চালাতে শুরু করেছিল এবং আমাদের হাজার হাজার ভাইবোনেরা ভয়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়েছিল।

এই বিশৃঙ্খলতায় এম্যাস দুর্ঘটনাবশত ধাক্কা খেয়ে পড়ে গিয়েছিল ও পদদলিত হয়েছিল কিন্তু ভাইদের মধ্যে একজন তাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করেছিলেন। আমরা ভেবেছিলাম যে, এটা মহাক্লেশের শুরু। সমস্ত শরণার্থী আবার মালাউইতে পালিয়ে গিয়েছিল। জাম্বিয়াতে থাকার সময় আমরা একটা নদীর কাছে পৌঁছেছিলাম এবং ভাইবোনেরা সবাইকে নিরাপদে নদী পার হতে সাহায্য করার জন্য একসঙ্গে মিলে হাত ধরাধরি করে চেইনের মতো গঠন করেছিল। কিন্তু, নদীর উলটো তীরে জাম্বিয়ার সৈন্যরা আমাদের ঘিরে ফেলেছিল এবং জোর করে মালাউইতে পাঠিয়ে দিয়েছিল।

আরেকবার মালাউইতে ফিরে আসার পর আমরা জানতাম না যে কোথায় যাব। আমরা জানতে পেরেছিলাম যে, রাজনৈতিক সমাবেশে ও খবরের কাগজে লোকেদেরকে তাদের গ্রামগুলোতে আসা “নতুন লোকেদের” লক্ষ করার জন্য সতর্ক করা হয়েছিল। তাই আমরা রাজধানী শহরে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যেখানে আমরা গ্রামের মতো অতটা নজরে পড়ব না। আমরা একটা ছোট্ট ভাড়া বাড়ি পেতে সফল হয়েছিলাম এবং এম্যাস একজন ভ্রমণ অধ্যক্ষ হিসেবে মণ্ডলীগুলোতে তার গোপন পরিদর্শনগুলো আবার চালু করেছিল।

মণ্ডলীর সভাগুলোতে যোগ দেওয়া

কী আমাদের বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করেছিল? মণ্ডলীর সভাগুলো! মোজাম্বিক ও জাম্বিয়ার শরণার্থী শিবিরগুলোতে থাকার সময় আমরা নির্বিঘ্নে সভাগুলোতে যোগ দিতাম, যেগুলো খড়ের চাল দেওয়া সাধারণ কিংডম হলগুলোতে অনুষ্ঠিত হতো। মালাউইতে সভাগুলোর জন্য একত্রিত হওয়া ছিল বিপদজনক ও কঠিন—তবুও, চেষ্টা সবসময় সার্থক হয়েছিল। দৃষ্টিগোচর হওয়া এড়িয়ে চলতে আমরা সাধারণত দূরবর্তী জায়গাগুলোতে মাঝরাতে সভা করতাম। আমাদের সমাবেশগুলোর প্রতি যাতে মনোযোগ আকৃষ্ট না হয়, তাই আমরা কোনো বক্তার প্রতি আমাদের উপলব্ধি প্রকাশ করতে হাততালি দিতাম না কিন্তু কেবল দুহাত ঘষতাম।

বাপ্তিস্ম মাঝরাতে দেওয়া হতো। আমাদের ছেলে আবিয়ুদি এই ধরনের এক উপলক্ষে বাপ্তিস্ম নিয়েছিল। বাপ্তিস্মের বক্তৃতার পর তাকে ও অন্যান্য বাপ্তিস্ম প্রার্থীকে অন্ধকারের মধ্যে এক জলাভূমিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যেখানে এক অগভীর গর্ত খোঁড়া হয়েছিল। সেখানেই তাদের বাপ্তিস্ম দেওয়া হয়েছিল।

আমাদের ছোট্ট বাড়িটা এক সুরক্ষিত আশ্রয়স্থল

সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি করার শেষ বছরগুলোতে লিলংওয়েতে আমাদের বাড়িটাকে এক সুরক্ষিত বাড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হতো। জাম্বিয়া শাখা দপ্তর থেকে আসা চিঠি ও সাহিত্যগুলো আমাদের বাড়িতে গোপনে আনা হতো। যে-ভাইয়েরা সাইকেলে কুরিয়ার বহন করার কাজ করত, তারা জাম্বিয়া থেকে আসা জিনিসপত্র নিতে আমাদের বাড়িতে আসত এবং চিঠি ও সাহিত্যাদি মালাউইর সমস্ত জায়গায় পাঠিয়ে দিতো। যে-প্রহরীদুর্গ পত্রিকাগুলো বিতরণ করা হতো, সেগুলো বেশ পাতলা ছিল কারণ সেগুলোকে বাইবেল ছাপানোর কাগজে ছাপানো হতো। এটা কুরিয়ার নিয়ে যাওয়া ভাইদের দ্বিগুণ পত্রিকা পাঠানোর সুযোগ করে দিতো, যেগুলো সাধারণ কাগজে ছাপানো হলে সম্ভব হতো না। এ ছাড়া, কুরিয়ার নিয়ে যাওয়া ভাইয়েরা ছোট আকারের প্রহরীদুর্গ পত্রিকাগুলোও বিতরণ করত, যেগুলোতে শুধুমাত্র অধ্যয়ন প্রবন্ধগুলো থাকত। একটি ছোট আকারের পত্রিকা শার্টের পকেটে লুকিয়ে রাখা সহজ ছিল কারণ এতে একটা কাগজের পাতাই থাকত।

কুরিয়ার নিয়ে যাওয়া এই ভাইয়েরা তাদের স্বাধীনতা ও জীবনের ঝুঁকি নিত, যখন তারা ঝোপের মধ্যে দিয়ে, কখনও কখনও রাতের অন্ধকারে নিষিদ্ধ সাহিত্যগুলোর বোঝাই করা বাক্সগুলোকে তাদের সাইকেলে চাপিয়ে নিয়ে যেত। রাস্তায় পুলিশের স্থাপিত অবরোধ ও অন্যান্য বিপদগুলো সত্ত্বেও, তারা সবরকম আবহাওয়ার মধ্যে শত শত কিলোমিটার যাত্রা করত, যাতে তাদের ভাইবোনদের আধ্যাত্মিক খাবার পৌঁছে দিতে পারে। কুরিয়ার নিয়ে যাওয়া সেই প্রিয় ভাইয়েরা কতই না সাহসী ছিল!

যিহোবা বিধবাদের জন্য চিন্তা করেন

১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে একবার সীমা পরিদর্শনকালে একটা বক্তৃতা দেওয়ার সময় এম্যাসের স্ট্রোক হয়েছিল। এরপর সে কথা বলার ক্ষমতা হারিয়েছিল। কিছু সময় পর তার দ্বিতীয় বার স্ট্রোক হয়েছিল, ফলে তার শরীরের একটা দিক অবশ হয়ে গিয়েছিল। তার ভেঙে যাওয়া স্বাস্থ্যের সঙ্গে মোকাবিলা করা যদিও তার জন্য কঠিন ছিল কিন্তু যে-প্রেমময় সাহায্য আমরা আমাদের মণ্ডলী থেকে পেয়েছিলাম, তা আমার হতাশাকে কমিয়ে দিয়েছিল। আমার স্বামী ১৯৯৪ সালের নভেম্বর মাসে ৭৬ বছর বয়সে মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত আমি বাড়িতে তার যত্ন নিতে পেরেছিলাম। আমরা ৫৭ বছর ধরে বিবাহিত এবং এম্যাস তার মৃত্যুর আগে দেখে গিয়েছিলেন যে, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি এখনও আমার বিশ্বস্ত সঙ্গী হারানোর দুঃখ বোধ করি।

আমি বিধবা হয়ে যাওয়ার পর, আমার মেয়ে জামাই শুধু তার স্ত্রী ও পাঁচটি ছেলেমেয়ের ভরণপোষণ জোগানোর দায়িত্বই নেয়নি কিন্তু আমার দায়িত্বও নিয়েছিল। দুঃখের বিষয় যে, অল্প দিন অসুস্থ থাকার পর, সে ২০০০ সালের আগস্ট মাসে মারা গিয়েছিল। কীভাবে আমার মেয়ে আমাদের খাবারের ও থাকার ব্যবস্থা করবে? এই ক্ষেত্রেও আমি দেখেছি যে, যিহোবা আমাদের জন্য চিন্তা করেন এবং তিনি সত্যিই “পিতৃহীনদের পিতা ও বিধবাদের বিচারকর্ত্তা।” (গীতসংহিতা ৬৮:৫) যিহোবা পৃথিবীতে থাকা তাঁর দাসদের মাধ্যমে এক সুন্দর নতুন বাড়ি জুগিয়েছেন। সেটা কীভাবে হয়েছিল? আমাদের মণ্ডলীর ভাইবোনেরা যখন আমাদের দুর্দশা দেখেছিল, তখন তারা মাত্র পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে আমাদের জন্য একটা বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছিল! অন্যান্য মণ্ডলীর ভাইয়েরা যারা রাজমিস্ত্রি ছিল তারা সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছিল। এই সমস্ত সাক্ষির দ্বারা দেখানো ভালবাসা ও দয়া আমাদের মুগ্ধ করে কারণ যে-বাড়িটা তারা আমাদের জন্য নির্মাণ করে দিয়েছে, সেটা তাদের মধ্যে অনেকে যেধরনের বাড়িগুলোতে থাকে সেগুলোর চেয়ে উত্তম। মণ্ডলীর দ্বারা দেখানো এই প্রেমের প্রদর্শন আমাদের প্রতিবেশীদের কাছে এক উত্তম সাক্ষ্য প্রদান করেছে। রাতে আমি যখন ঘুমাতে যাই, তখন আমার মনে হয় যেন পরমদেশে আছি! হ্যাঁ, আমাদের সুন্দর বাড়িটা ইট ও চুন বালি দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ঠিকই কিন্তু যেমন অনেকে মন্তব্য করেছে যে, এটা হল এমন এক বাড়ি যেটা প্রকৃতভাবে প্রেমের দ্বারা নির্মিত।—গালাতীয় ৬:১০.

যিহোবা চিন্তা দেখিয়ে যাচ্ছেন

যদিও আমি মাঝে-মধ্যে একেবারে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম কিন্তু যিহোবা আমাকে সাহায্য করেছেন। আমার নয়টা ছেলেমেয়ের মধ্যে সাতজন এখনও বেঁচে আছে এবং আমার পরিবারের সদস্য সংখ্যা এখন ১২৩ জন। আমি কতই না কৃতজ্ঞ যে, তাদের বেশির ভাগই বিশ্বস্তভাবে যিহোবাকে সেবা করে চলেছে!

আজকে আমি ৮২ বছর বয়সে আনন্দে ভরে উঠি যখন আমি দেখি যে, মালাউইতে ঈশ্বরের আত্মা কী কী সম্পাদন করেছে। গত চার বছরে আমি একাই, কিংডম হলের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে এক থেকে ৬০০-রও বেশি হতে দেখেছি। এ ছাড়া, এখন লিলংওয়েতে আমাদের এক নতুন শাখা দপ্তরও রয়েছে এবং আমরা স্বাধীনভাবে শক্তিশালী আধ্যাত্মিক খাবারের জোগান উপভোগ করছি। আমি সত্যিই অনুভব করি যে, যিশাইয় ৫৪:১৭ পদে পাওয়া ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞার পরিপূর্ণতাকে আমি অভিজ্ঞতা করেছি যেখানে আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে: “যে কোন অস্ত্র তোমার বিপরীতে গঠিত হয়, তাহা সার্থক হইবে না।” ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যিহোবাকে সেবা করার পর আমি দৃঢ়নিশ্চিত যে, যেধরনের পরীক্ষার মুখোমুখিই আমরা হই না কেন, যিহোবা আমাদের জন্য চিন্তা করেন।

[পাদটীকা]

^ মালাউইর যিহোবার সাক্ষিদের ইতিহাস সম্বন্ধে আরও তথ্য পেতে, যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত যিহোবার সাক্ষিদের বর্ষপুস্তক ১৯৯৯ (ইংরেজি) বইয়ের ১৪৯-২২৩ পৃষ্ঠা দেখুন।

[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]

আমার স্বামী এম্যাস ১৯৫১ সালের এপ্রিল মাসে বাপ্তিস্ম নিয়েছিল

[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]

কুরিয়ার নিয়ে যাওয়া এক দল সাহসী ভাই

[২৮ পৃষ্ঠার চিত্র]

প্রেমের দ্বারা নির্মিত এক বাড়ি