সরাসরি বিষয়বস্তুতে যান

সরাসরি বিষয়সূচিতে যান

আধ্যাত্মিক বিষয়ে কথাবার্তা বলা গেঁথে তোলে

আধ্যাত্মিক বিষয়ে কথাবার্তা বলা গেঁথে তোলে

আধ্যাত্মিক বিষয়ে কথাবার্তা বলা গেঁথে তোলে

“তোমাদের মুখ হইতে কোন প্রকার কদালাপ বাহির না হউক, কিন্তু প্রয়োজনমতে গাঁথিয়া তুলিবার জন্য সদালাপ বাহির হউক, যেন যাহারা শুনে, তাহাদিগকে অনুগ্রহ দান করা হয়।”—ইফিষীয় ৪:২৯.

১, ২. (ক) মানুষের বাক্‌শক্তি কতটা মূল্যবান? (খ) যিহোবার দাসেরা কীভাবে তাদের জিহ্বাকে ব্যবহার করতে চায়?

 “মানুষের বাক্‌শক্তি হল এক রহস্য; এটা এক ঐশিক দান, এক অলৌকিক বিষয়।” আভিধানিক লুটভিখ্‌ কোলার এই কথাই লিখেছিলেন। ঈশ্বরের এই মূল্যবান দানকে আমরা হয়তো হালকাভাবে নিই। (যাকোব ১:১৭) কিন্তু একটা স্ট্রোক যখন কোনো প্রিয়জনের স্পষ্ট বাক্‌শক্তিকে কেড়ে নেয়, তখন কত মূল্যবান এক সম্পদই না হারিয়ে যায়, তা বিবেচনা করুন। “আমাদের মধ্যে চমৎকার ভাববিনিময় হতো, যা আমাদের একে অন্যকে আরও ঘনিষ্ঠ করেছিল,” জোন ব্যাখ্যা করেন, সম্প্রতি যার স্বামীর স্ট্রোক হয়েছে। “আমি কত প্রচণ্ডভাবে আমাদের কথাবার্তা বলার অভাব বোধ করি!”

কথাবার্তা বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে, ভুলবোঝাবুঝির অবসান ঘটাতে, মনমরা ব্যক্তিদের উৎসাহিত করতে, বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে এবং জীবনকে সমৃদ্ধ করতে পারে—তবে কখনোই তা আপনাআপনি নয়। বিজ্ঞ রাজা শলোমন বলেছিলেন: “কেহ কেহ অবিবেচনার কথা বলে, খড়্গাঘাতের মত, কিন্তু জ্ঞানবানদের জিহ্বা স্বাস্থ্যস্বরূপ [“আরোগ্যকর,” NW]।” (হিতোপদেশ ১২:১৮) যিহোবার দাস হিসেবে, আমরা চাই যেন আমাদের কথাবার্তা অন্যদের আঘাত দেওয়ার বা ছোট করার বদলে আরোগ্য করে ও গেঁথে তোলে। এ ছাড়া, আমরা আমাদের জিহ্বাকে যিহোবার প্রশংসায় ব্যবহার করতে চাই আর সেটা জনসাধারণ্যে পরিচর্যায় ও আমাদের ব্যক্তিগত কথাবার্তা উভয় ক্ষেত্রেই। গীতরচক গেয়েছিলেন: “আমরা সমস্ত দিন ঈশ্বরেরই শ্লাঘা করিয়াছি, আর চিরকাল তোমার নামের স্তব করিব।”—গীতসংহিতা ৪৪:৮.

৩, ৪. (ক) কথাবার্তার ক্ষেত্রে আমরা সকলেই কোন সমস্যার মুখোমুখি হই? (খ) আমাদের কথাবার্তা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

শিষ্য যাকোব সাবধান করেন, “জিহ্বাকে দমন করিতে কোন মনুষ্যের সাধ্য নাই।” তিনি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন: “আমরা সকলে অনেক প্রকারে উছোট খাই। যদি কেহ বাক্যে উছোট না খায়, তবে সে সিদ্ধ পুরুষ, সমস্ত শরীরকেই বল্‌গা দ্বারা বশে রাখিতে সমর্থ।” (যাকোব ৩:২, ৮) আমাদের মধ্যে কেউই সিদ্ধ নয়। তাই, আমাদের সর্বোত্তম ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও, আমাদের কথাবার্তা সবসময় অন্যদের গেঁথে তোলে না বা আমাদের সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা নিয়ে আসে না। তাই, আমরা কী বলি সেই বিষয়ে আমাদের অবশ্যই সর্তক থাকতে শিখতে হবে। এ ছাড়া, যিশু বলেছিলেন: “মনুষ্যেরা যত অনর্থক কথা বলে, বিচার-দিনে সেই সকলের হিসাব দিতে হইবে। কারণ তোমার বাক্য দ্বারা তুমি নির্দ্দোষ বলিয়া গণিত হইবে, আর তোমার বাক্য দ্বারাই তুমি দোষী বলিয়া গণিত হইবে।” (মথি ১২:৩৬, ৩৭) বাস্তবিকই, আমাদের কথাবার্তার জন্য সত্য ঈশ্বরের কাছে আমাদের নিকাশ দিতে হবে।

ক্ষতিকর কথাবার্তা এড়ানোর সর্বোত্তম উপায়গুলোর মধ্যে একটা হল, আধ্যাত্মিক বিষয়ে কথা বলার অভ্যাসকে বৃদ্ধি করা। এই প্রবন্ধ আলোচনা করবে যে, কীভাবে আমরা তা করতে পারি, কোন ধরনের বিষয় নিয়ে আমরা কথা বলতে পারি এবং গঠনমূলক কথাবার্তা থেকে আমরা কোন কোন উপকার পেতে পারি।

হৃদয়ের প্রতি মনোযোগ দিন

৫. কীভাবে গঠনমূলক কথাবার্তা বলার জন্য হৃদয় এক প্রধান ভূমিকা পালন করে?

গঠনমূলক কথাবার্তায় রত হওয়ার অভ্যাস চালিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের প্রথমে স্বীকার করতে হবে যে, আমাদের হৃদয়ে কী রয়েছে তা আমাদের কথাবার্তার দ্বারা প্রতিফলিত হয়। যিশু বলেছিলেন: “হৃদয় হইতে যাহা ছাপিয়া উঠে, মুখ তাহাই বলে।” (মথি ১২:৩৪) সহজ কথায়, আমরা সেই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে চাই, যেগুলো আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, নিজেকে জিজ্ঞেস করা দরকার: ‘আমার কথাবার্তা আমার হৃদয়ের অবস্থা সম্বন্ধে কী প্রকাশ করে? আমি যখন আমার পরিবার বা সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে থাকি, তখন আমার কথাবার্তা কি আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে হয় নাকি খেলাধুলা, জামাকাপড়, চলচ্চিত্র, খাওয়াদাওয়া, সম্প্রতি আমি যা যা কিনেছি সেগুলো বা অন্যান্য তুচ্ছ বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে হয়?’ হয়তো আমাদের অজান্তেই আমাদের জীবন ও চিন্তাধারা গৌণ বিষয়গুলোর ওপর কেন্দ্রীভূত হয়েছে। আমাদের অগ্রাধিকারগুলো রদবদল করলে তা আমাদের কথাবার্তা ও সেইসঙ্গে আমাদের জীবনকেও উন্নত করবে।—ফিলিপীয় ১:১০, NW.

৬. আমাদের কথাবার্তায় ধ্যান কোন ভূমিকা পালন করে?

আমাদের কথাবার্তার গুণগত মানকে উন্নত করার আরেকটা উপায় হল, উদ্দেশ্যপূর্ণ ধ্যান। আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করার জন্য আমরা যদি সজ্ঞানে প্রচেষ্টা করি, তা হলে আমরা দেখব যে আধ্যাত্মিক বিষয়ে কথাবার্তা স্বাভাবিকভাবেই চলে আসছে। রাজা দায়ূদ এই সংযোগটি দেখেছিলেন। তিনি গেয়েছিলেন: “আমার মুখের বাক্য ও আমার চিত্তের ধ্যান তোমার দৃষ্টিতে গ্রাহ্য হউক, হে সদাপ্রভু।” (গীতসংহিতা ১৯:১৪) আর গীতরচক আসফ বলেছিলেন: “আমি তোমার [ঈশ্বরের] সমস্ত কর্ম্ম ধ্যানও করিব, তোমার ক্রিয়া সকল আলোচনা করিব।” (গীতসংহিতা ৭৭:১২) ঈশ্বরের বাক্যের সত্যগুলোর ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তিত এক হৃদয় ও মন স্বাভাবিকভাবেই প্রশংসাযোগ্য কথাবার্তায় উপচে পড়বে। যিরমিয় সেই বিষয়গুলো সম্বন্ধে বলা থেকে বিরত থাকতে পারেননি, যেগুলো যিহোবা তাকে শিক্ষা দিয়েছিলেন। (যিরমিয় ২০:৯) আমাদের ক্ষেত্রেও একই বিষয় হতে পারে, যদি আমরা আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো নিয়ে নিয়মিত চিন্তাভাবনা করি।—১ তীমথিয় ৪:১৫.

৭, ৮. কোন বিষয়গুলো গঠনমূলক কথাবার্তার জন্য ভাল?

আধ্যাত্মিক কাজগুলোর এক উত্তম ধারা আমাদের গঠনমূলক কথাবার্তা বলার জন্য অনেক বিষয়বস্তু জোগায়। (ফিলিপীয় ৩:১৬) অধিবেশন, সম্মেলন, মণ্ডলীর সভা, চলতি প্রকাশনা এবং প্রতিদিনের শাস্ত্রপদ ও ছাপানো মন্তব্যগুলো আমাদের আধ্যাত্মিক রত্ন সরবরাহ করে, যা আমরা অন্যদের সঙ্গে বন্টন করতে পারি। (মথি ১৩:৫২) আর আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচর্যার অভিজ্ঞতাগুলো আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে কতই না উদ্দীপনামূলক হতে পারে!

রাজা শলোমন ইস্রায়েলে বিভিন্ন রকমের গাছ, পশুপাখি এবং মাছ দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। (১ রাজাবলি ৪:৩৩) তিনি ঈশ্বরের সৃজনশীল কাজগুলো নিয়ে কথাবার্তা বলে আনন্দ পেতেন। আমরাও তাই করতে পারি। যিহোবার দাসেরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে ভালবাসে কিন্তু আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো সবসময়ই আধ্যাত্মিক প্রবণতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের কথাবার্তায় আনন্দের বিষয় হয়।—১ করিন্থীয় ২:১৩.

‘সেই সকল আলোচনা করে চল’

৯. ফিলিপীয়দের উদ্দেশে পৌল কোন পরামর্শ দিয়েছিলেন?

বিষয়বস্তু যাইহোক না কেন, আমাদের কথাবার্তা অন্যদের গেঁথে তুলবে, যদি সেগুলো ফিলিপীয় মণ্ডলীর উদ্দেশে দেওয়া প্রেরিত পৌলের পরামর্শের সঙ্গে মিল রেখে হয়। তিনি লিখেছিলেন: “যাহা যাহা সত্য, যাহা যাহা আদরণীয় [“গম্ভীর চিন্তার বিষয়,” NW], যাহা যাহা ন্যায্য, যাহা যাহা বিশুদ্ধ, যাহা যাহা প্রীতিজনক, যাহা যাহা সুখ্যাতিযুক্ত, যে কোন সদ্‌গুণ ও যে কোন কীর্ত্তি হউক, সেই সকল আলোচনা কর [“করে চল,” NW]।” (ফিলিপীয় ৪:৮) পৌল যে-বিষয়গুলোর কথা উল্লেখ করেন, সেগুলো এত গুরুত্বপূর্ণ যে তিনি বলেন, ‘সেই সকল আলোচনা করে চল।’ (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) আমাদের মন ও হৃদয়কে এই বিষয়গুলো দিয়ে পূর্ণ করতে হবে। তাই, আসুন পৌলের উল্লেখিত আটটা বিষয়ের প্রত্যেকটাতে মনোযোগ দেওয়া কীভাবে আমাদের কথাবার্তার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে, তা দেখি।

১০. আমাদের কথাবার্তায় কীভাবে সত্য বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হতে পারে?

১০ যেটা সত্য সেটার অন্তর্ভুক্ত সঠিক এবং নির্ভুল তথ্যের চেয়েও আরও বেশি কিছু। এটা এমন কিছুর ইঙ্গিত করে, যা ন্যায়নিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য, যেমন ঈশ্বরের বাক্যের সত্য। তাই, বাইবেলের যে-সত্যগুলো আমাদের ওপর ছাপ ফেলেছে, যে-জনসাধারণের উদ্দেশে ভাষণ অথবা বক্তৃতাগুলো আমাদের উৎসাহিত করেছে বা যে-শাস্ত্রীয় পরামর্শ আমাদের সাহায্য করেছে, সেগুলো নিয়ে অন্যদের সঙ্গে আমরা যখন কথা বলি, তখন আমরা আসলে সত্য বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করছি। অন্যদিকে, আমরা “অযথারূপে বিদ্যা নামে আখ্যাত” বিষয়গুলো প্রত্যাখ্যান করি, যেগুলো কেবল ওপর ওপর সত্য বলেই মনে হয়। (১ তীমথিয় ৬:২০) আর আমরা গুজব ছড়ানো বা সন্দেহপূর্ণ অভিজ্ঞতা, যেগুলোর সত্যতা প্রমাণ করা যায় না, সেগুলো বলা এড়িয়ে চলি।

১১. গম্ভীর চিন্তার কোন বিষয়গুলো আমাদের কথাবার্তার অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে?

১১ গম্ভীর চিন্তার বিষয়গুলো হল সেই সমস্ত বিষয়, যেগুলো মর্যাদাপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু সামান্য বা তুচ্ছ বিষয় নয়। সেগুলোর অন্তর্ভুক্ত আমাদের খ্রিস্টীয় পরিচর্যা, যে-বিষম সময়ে আমরা বাস করছি এবং আমাদের উত্তম আচরণ বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো। যখন আমরা এই ধরনের গম্ভীর বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করি, তখন আমরা আধ্যাত্মিকভাবে জেগে থাকার, আমাদের নীতিনিষ্ঠাকে বজায় রাখার এবং সুসমাচার প্রচার চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমাদের সংকল্পকে শক্তিশালী করি। বাস্তবিকই, আমাদের পরিচর্যায় আগ্রহজনক অভিজ্ঞতাগুলো ও চলতি ঘটনাগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা শেষকালে বাস করছি আর সেগুলো উদ্দীপনামূলক কথাবার্তা বলার জন্য বিভিন্ন ধরনের বিষয়বস্তু জোগায়।—প্রেরিত ১৪:২৭; ২ তীমথিয় ৩:১-৫.

১২. ন্যায্য ও বিশুদ্ধ বিষয়গুলো আলোচনা করার ব্যাপারে পৌলের পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে, কী এড়িয়ে চলা উচিত?

১২ ন্যায্য শব্দটির অর্থ হল, ঈশ্বরের দৃষ্টিতে সঠিক হওয়া—তাঁর মানগুলো পূরণ করা। বিশুদ্ধ শব্দটি চিন্তা ও আচরণে শুদ্ধ থাকার ধারণা বহন করে। আমাদের কথাবার্তায় মিথ্যা অপবাদ, নোংরা রসিকতা বা যৌন শ্লেষোক্তির কোনো জায়গা নেই। (ইফিষীয় ৫:৩; কলসীয় ৩:৮) কর্মক্ষেত্রে বা স্কুলে কথাবার্তা যখন এইরকম বিষয়ের দিকে মোড় নেয়, তখন খ্রিস্টানরা বিজ্ঞতার সঙ্গে সেখান থেকে সরে পড়ে।

১৩. সেই সমস্ত কথাবার্তার উদাহরণ দিন, যেগুলো প্রীতিজনক ও সুখ্যাতিযুক্ত বিষয়গুলোর ওপর কেন্দ্রীভূত থাকে।

১৩ পৌল যখন প্রীতিজনক বিষয়গুলো আলোচনা করার ব্যাপারে সুপারিশ করেন, তখন তিনি সেই বিষয়গুলোকে উল্লেখ করেছেন যেগুলো ঘৃণা, তিক্ততা বা বিবাদ জাগিয়ে তোলার পরিবর্তে বরং সন্তোষজনক ও মনোরম অথবা যেগুলো ভালবাসাকে উদ্বুদ্ধ করে। সুখ্যাতিযুক্ত বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে বিশ্বস্ত ভাইবোনদের জীবন কাহিনী, যেগুলো নিয়মিতভাবে প্রহরীদুর্গসচেতন থাক! পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত হয়। বিশ্বাস দৃঢ়কারী এই প্রবন্ধগুলো পড়ার পর আপনার অনুভূতির কথা অন্যদের সঙ্গে বন্টন করুন না কেন? আর অন্যদের আধ্যাত্মিক সম্পাদনগুলোর বিষয়ে শোনা কতই না উৎসাহজনক! এই ধরনের কথাবার্তা মণ্ডলীর মধ্যে প্রেম ও একতা স্থাপন করবে।

১৪. (ক) সদ্‌গুণ প্রদর্শন করার জন্য আমাদের কী করা প্রয়োজন? (খ) কীভাবে আমাদের কথাবার্তায় কীর্তনীয় বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হতে পারে?

১৪ পৌল ‘যে কোন সদ্‌গুণের’ বিষয়ে বলেন। সদ্‌গুণ ইঙ্গিত করে মঙ্গলভাব বা নৈতিক উৎকর্ষতাকে। আমাদের সতর্ক হতে হবে যেন আমাদের ওষ্ঠ শাস্ত্রীয় নীতিগুলোর দ্বারা পরিচালিত হয় আর যাতে সেটা ন্যায্য, বিশুদ্ধ ও সদ্‌গুণসম্পন্ন বিষয়গুলো থেকে বিচ্যুত না হয়। কীর্তি মানে হচ্ছে “প্রশংসনীয়” বিষয়। আপনি যদি কোনো ভাল বক্তৃতা শোনেন বা মণ্ডলীতে কোনো বিশ্বস্ত উদাহরণ লক্ষ করেন, তা হলে সেই বিষয়ে বলুন—যে-ব্যক্তি এর সঙ্গে জড়িত তাকে ও অন্যদের। প্রেরিত পৌল প্রায়ই তার সহউপাসকদের উত্তম গুণগুলোর প্রশংসা করেছিলেন। (রোমীয় ১৬:১২; ফিলিপীয় ২:১৯-২২; ফিলীমন ৪-৭) আর আমাদের সৃষ্টিকর্তার কর্মগুলোও সত্যিই কীর্তনীয়। সেগুলো থেকে আমরা গঠনমূলক কথাবার্তার জন্য প্রচুর বিষয়বস্তু পাই।—হিতোপদেশ ৬:৬-৮; ২০:১২; ২৬:২.

গঠনমূলক কথাবার্তায় রত হোন

১৫. কোন শাস্ত্রীয় আদেশ বাবামাদের তাদের সন্তানদের সঙ্গে অর্থপূর্ণ কথাবার্তা বলতে বাধ্য করে?

১৫ দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৬, ৭ পদ বলে: “এই যে সকল কথা আমি অদ্য তোমাকে আজ্ঞা করি, তাহা তোমার হৃদয়ে থাকুক। আর তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সন্তানগণকে এ সকল যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দিবে, এবং গৃহে বসিবার কিম্বা পথে চলিবার সময়ে এবং শয়ন কিম্বা গাত্রোত্থান কালে ঐ সমস্তের কথোপকথন করিবে।” স্পষ্টতই, এই আদেশ পালন করার জন্য বাবামাদের তাদের সন্তানদের সঙ্গে অর্থপূর্ণ, আধ্যাত্মিক বিষয়ে কথাবার্তা বলা প্রয়োজন।

১৬, ১৭. খ্রিস্টান বাবামারা যিহোবা এবং অব্রাহামের উদাহরণ থেকে কী শিখতে পারে?

১৬ আমরা সেই দীর্ঘ আলোচনার বিষয়ে কল্পনা করতে পারি, যা যিশু তাঁর স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে করেছিলেন, যখন তারা তাঁর পার্থিব কার্যভার সম্বন্ধে বিবেচনা করেছিল। যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, “কি কহিব ও কি বলিব, তাহা আমার পিতা, যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তিনিই আমাকে আজ্ঞা করিয়াছেন।” (যোহন ১২:৪৯; দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১৮) কুলপতি অব্রাহাম নিশ্চয়ই তার ছেলে ইস্‌হাকের সঙ্গে অনেক সময় ধরে কথা বলেছিলেন যে, কীভাবে যিহোবা তাদের ও তাদের পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদ করেছিলেন। এই ধরনের কথাবার্তা নিশ্চিতভাবে যিশু ও ইস্‌হাক দুজনকেই নম্রভাবে ঈশ্বরের ইচ্ছার বশীভূত হতে সাহায্য করেছিল।—আদিপুস্তক ২২:৭-৯; মথি ২৬:৩৯.

১৭ আমাদের সন্তানদেরও গঠনমূলক কথাবার্তার দরকার আছে। বাবামাদের অবশ্যই তাদের ব্যস্ত তালিকার মধ্যে থেকে তাদের সন্তানদের সঙ্গে কথা বলার জন্য সময় করে নিতে হবে। সম্ভব হলে, দিনে অন্তত একবার পরিবারগতভাবে খাওয়াদাওয়া করার ব্যবস্থা করুন না কেন? এভাবে খাওয়াদাওয়া করার সময় ও পরে, গঠনমূলক আলোচনা করার সুযোগ থাকবে, যা পরিবারের আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্য অমূল্য প্রমাণিত হতে পারে।

১৮. একটি অভিজ্ঞতা বলুন, যা বাবামা ও সন্তানদের মধ্যে উত্তম ভাববিনিময়ের উপকারগুলো সম্বন্ধে তুলে ধরে।

১৮ আলেখান্দ্রো নামে একজন অগ্রগামী, যার বয়স ২০-র কোঠার প্রথমদিকে, সে ১৪ বছর বয়সে যে-সন্দেহ পোষণ করেছিল, তা স্মরণ করে। সে বলে: “সহপাঠী ও শিক্ষকদের প্রভাবের কারণে আমি ঈশ্বরের অস্তিত্ব ও বাইবেলের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ করতাম। আমার বাবামা আমার সঙ্গে যুক্তি করার জন্য ধৈর্যপূর্বক অনেক সময় ব্যয় করেছিলেন। এই কথাবার্তা আমাকে শুধু এই কঠিন সময়ে আমার সন্দেহগুলো কাটিয়ে উঠতেই সাহায্য করেনি কিন্তু সেইসঙ্গে জীবনে উত্তম সিদ্ধান্তগুলো নিতেও সাহায্য করেছিল।” আর বর্তমান সম্বন্ধে কী বলা যায়? আলেখান্দ্রো আরও বলে: “আমি এখনও ঘরেই থাকি। কিন্তু আমাদের ব্যস্ত তালিকার কারণে আমার বাবা ও আমার নিরিবিলিভাবে কথা বলার সময় হয়ে ওঠে না। তাই আমরা দুজনে সপ্তাহে একবার তার কর্মক্ষেত্রে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করি। এই কথাবার্তাগুলোকে আমি সত্যিই খুব মূল্য দিই।”

১৯. কেন আমাদের সকলের আধ্যাত্মিক বিষয়ে কথাবার্তা বলা দরকার?

১৯ আমরা কি আমাদের সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে আধ্যাত্মিক বিষয়ে পরিতৃপ্তিদায়ক কথাবার্তা বলা উপভোগ করার সুযোগগুলোকে মূল্যবান মনে করি না? এই সুযোগগুলো হতে পারে সভাগুলোতে, ক্ষেত্রের পরিচর্যায় এবং সামাজিক মেলামেশাগুলোতে ও ভ্রমণ করার সময়। পৌল রোমের খ্রিস্টানদের সঙ্গে কথা বলার জন্য সানন্দে প্রতীক্ষা করেছিলেন। “আমি তোমাদিগকে দেখিবার আকাঙ্ক্ষা করিতেছি,” তিনি তাদের লিখেছিলেন, “যাহাতে তোমাদের ও আমার, উভয় পক্ষের, আন্তরিক বিশ্বাস দ্বারা তোমাদিগেতে আমি আপনিও সঙ্গে সঙ্গে আশ্বাস পাই।” (রোমীয় ১:১১, ১২) “সহখ্রিস্টানদের সঙ্গে আধ্যাত্মিক বিষয়ে কথাবার্তা এক অতি গুরুত্বপূর্ণ চাহিদাকে পূরণ করে,” ইয়োহানেস নামে একজন খ্রিস্টান প্রাচীন বলেন। “সেগুলো হৃদয়কে উষ্ণ করে এবং রোজকার বোঝাগুলোকে হালকা করে। আমি প্রায়ই বয়স্ক ব্যক্তিদের তাদের জীবন সম্বন্ধে ও কী তাদের বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করেছে, সেই ব্যাপারে আমাকে বলতে বলি। বছরের পর বছর ধরে, আমি অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি এবং প্রত্যেকে এমন কিছু প্রজ্ঞা বা জ্ঞানালোক প্রদান করেছে, যা আমার জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে।”

২০. আমরা যদি কোনো লাজুক ব্যক্তির মুখোমুখি হই, তা হলে কী করতে পারি?

২০ আপনি যখন আধ্যাত্মিক বিষয়ে কথাবার্তা বলতে শুরু করেন, তখন কাউকে যদি অনাগ্রহী বলে মনে হয়, তা হলে কী? হাল ছেড়ে দেবেন না। সম্ভবত পরে আপনি আরও সুযোগ পেতে পারেন। “উপযুক্ত সময়ে কথিত বাক্য রৌপ্যের ডালিতে সুবর্ণ নাগরঙ্গ ফলের তুল্য,” শলোমন বলেছিলেন। (হিতোপদেশ ২৫:১১) যারা লাজুক তাদের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করুন। “মনুষ্যের হৃদয়ের পরামর্শ গভীর জলের ন্যায়; কিন্তু বুদ্ধিমান তাহা তুলিয়া আনিবে।” * (হিতোপদেশ ২০:৫) সর্বোপরি, অন্যদের মনোভাব যেন কখনোই আপনাকে সেই সমস্ত বিষয়ে কথা বলা থেকে বিরত না করে, যেগুলো আপনার হৃদয়কে স্পর্শ করেছে।

আধ্যাত্মিক বিষয়ে কথাবার্তা পুরস্কারদায়ক

২১, ২২. আধ্যাত্মিক বিষয়ে কথাবার্তা বলে আমরা কোন কোন উপকার পাই?

২১ “তোমাদের মুখ হইতে কোন প্রকার কদালাপ বাহির না হউক,” পৌল পরামর্শ দিয়েছিলেন, “কিন্তু প্রয়োজনমতে গাঁথিয়া তুলিবার জন্য সদালাপ বাহির হউক, যেন যাহারা শুনে, তাহাদিগকে অনুগ্রহ দান করা হয়।” (ইফিষীয় ৪:২৯; রোমীয় ১০:১০) কথাবার্তার মোড় সঠিক দিকে ঘোরানোর জন্য হয়তো প্রচেষ্টার প্রয়োজন হতে পারে কিন্তু এর পুরস্কার অনেক। আধ্যাত্মিক বিষয়ে কথাবার্তা আমাদের বিশ্বাস অন্যদের সঙ্গে বন্টন করতে ও আমাদের ভ্রাতৃসমাজকে গেঁথে তুলতে আমাদের সাহায্য করে।

২২ তাই, আসুন বাক্‌শক্তির দানকে আমরা অন্যকে উৎসাহিত করায় ও ঈশ্বরের প্রশংসায় ব্যবহার করি। এই ধরনের কথাবার্তা আমাদের কাছে পরিতৃপ্তিকর ও অন্যদের কাছে উৎসাহের এক উৎস হবে। সর্বোপরি, সেগুলো যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করবে কারণ তিনি আমাদের কথাবার্তার প্রতি মনোযোগ দেন এবং আনন্দিত হন, যখন আমরা সঠিক উপায়ে আমাদের জিহ্বাকে ব্যবহার করি। (গীতসংহিতা ১৩৯:৪; হিতোপদেশ ২৭:১১) আমাদের কথাবার্তাগুলো যখন আধ্যাত্মিক বিষয়ে হয়, তখন আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা আমাদের ভুলে যাবেন না। আমাদের দিনে যারা যিহোবার সেবা করছে, তাদের সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “তখন, যাহারা সদাপ্রভুকে ভয় করিত, তাহারা পরস্পর আলাপ করিল, এবং সদাপ্রভু কর্ণপাত করিয়া শুনিলেন; আর যাহারা সদাপ্রভুকে ভয় করিত, ও তাঁহার নাম ধ্যান করিত, তাহাদের জন্য তাঁহার সম্মুখে একখানি স্মরণার্থক পুস্তক লেখা হইল।” (মালাখি ৩:১৬; ৪:৫) আমাদের কথাবার্তা আধ্যাত্মিকভাবে গঠনমূলক হওয়া কতই না গুরুত্বপূর্ণ!

[পাদটীকা]

^ ইস্রায়েলের কিছু কুয়ো বেশ গভীর ছিল। গিবিয়োনে, প্রত্নতত্ত্ববিদরা ২৫ মিটার গভীর একটি জলাধার আবিষ্কার করেছে। এর মধ্যে সিঁড়ি রয়েছে, যা লোকেদের একেবারে তলায় নেমে গিয়ে জল তুলে আনতে সাহায্য করত।

আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?

• আমাদের কথাবার্তা আমাদের সম্বন্ধে কী প্রকাশ করে?

• কোন গঠনমূলক বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কথা বলতে পারি?

• কথাবার্তা পারিবারিক বৃত্তে ও খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে কোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে?

• গঠনমূলক কথাবার্তা কোন কোন উপকার নিয়ে আসে?

[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]

[১২ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]

গঠনমূলক কথাবার্তা সেই সমস্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে হয় . . .

“যাহা যাহা সত্য”

“যাহা যাহা গম্ভীর চিন্তার বিষয়”

“যে কোন কীর্ত্তি”

“যাহা যাহা সুখ্যাতিযুক্ত”

[সৌজন্যে]

ভিডিও প্রচ্ছদ, স্টালিন: U.S. Army photo; Creator book cover, Eagle Nebula: J. Hester and P. Scowen (AZ State Univ.), NASA

[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]

খাওয়াদাওয়ার সময়গুলো আধ্যাত্মিক বিষয়ে কথাবার্তা বলার চমৎকার সুযোগগুলো করে দেয়