কেন আমাদের অবিরত প্রার্থনা করা উচিত?
কেন আমাদের অবিরত প্রার্থনা করা উচিত?
“অবিরত প্রার্থনা কর; সর্ব্ববিষয়ে ধন্যবাদ কর।”—১ থিষলনীকীয় ৫:১৭, ১৮.
১, ২. কীভাবে দানিয়েল দেখিয়েছিলেন যে, প্রার্থনা করার বিশেষ সুযোগকে তিনি মূল্যবান মনে করতেন আর এটা ঈশ্বরের সঙ্গে তার সম্পর্কের ওপর কেমন প্রভাব ফেলেছিল?
ভাববাদী দানিয়েলের, দিনে তিন বার ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার অভ্যাস ছিল। তিনি তার কুঠুরির জানালার কাছে, যেটা যিরূশালেম শহরের দিকে মুখ করে ছিল, হাঁটু গেড়ে তার আবেদনগুলো জানাতেন। (১ রাজাবলি ৮:৪৬-৪৯; দানিয়েল ৬:১০) এমনকি একটি রাজকীয় আদেশ যখন কেবল মাদীয় রাজা দারিয়াবস ছাড়া আর কারও কাছে কোনো আবেদন জানাতে নিষেধ করেছিল, তখন দানিয়েল এক মুহূর্তের জন্যও বিচলিত হননি। সেটা তার জীবনকে বিপদে ফেলুক বা না ফেলুক, এই ব্যক্তি যিহোবার কাছে অবিরত অনুরোধ জানিয়েছিলেন, যার প্রার্থনা করার অভ্যাস ছিল।
২ যিহোবা দানিয়েলকে কোন দৃষ্টিতে দেখেছিলেন? যখন স্বর্গদূত গাব্রিয়েল, দানিয়েলের প্রার্থনাগুলোর একটার উত্তর দিতে এসেছিলেন, তখন তিনি ভাববাদীকে “অতিশয় প্রীতি-পাত্র” বলে বর্ণনা করেছিলেন। (দানিয়েল ৯:২০-২৩) যিহিষ্কেলের ভবিষ্যদ্বাণীতে যিহোবা দানিয়েলকে একজন ধার্মিক ব্যক্তি বলে উল্লেখ করেছিলেন। (যিহিষ্কেল ১৪:১৪, ২০) তার জীবনকালে দানিয়েলের প্রার্থনাগুলো স্পষ্টতই তার ঈশ্বরের সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে আরও বৃদ্ধি করেছিল, যে-বিষয়টা এমনকি দারিয়াবসও স্বীকার করেছিলেন।—দানিয়েল ৬:১৬.
৩. একজন মিশনারির অভিজ্ঞতায় যেমন দেখানো হয়েছে, কীভাবে প্রার্থনা আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?
৩ এ ছাড়া, নিয়মিত প্রার্থনা আমাদের চরম পরীক্ষাগুলোর মুখোমুখি হতেও সাহায্য করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, চিনের একজন মিশনারি হ্যারল্ড কিং এর কথা বিবেচনা করুন, যাকে শাস্তি হিসেবে পাঁচ বছরের জন্য নিঃসঙ্গ অবরোধে রাখা হয়েছিল। ভাই কিং তার অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে বলেছিলেন: “আমি হয়তো আমার সহমানবদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারি কিন্তু কেউ আমাকে ঈশ্বরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে না। . . . তাই, কারাগারে আমার কক্ষের পাশ দিয়ে যেকেউই যেত তাদের সামনেই আমি দিনে তিন বার হাঁটু গেড়ে জোরে জোরে প্রার্থনা করতাম, সবসময় বাইবেলে বলা দানিয়েলের কথা মনে রাখতাম। . . . এই ধরনের পরিস্থিতিগুলোতে মনে হতো যেন ঈশ্বরের আত্মা আমার মনকে সবচেয়ে উপকারজনক বিষয়গুলো সম্বন্ধে চিন্তা করতে পরিচালনা দিত এবং আমাকে এক শান্ত অনুভূতি এনে দিত। প্রার্থনা আমাকে কতই না আধ্যাত্মিক শক্তি ও সান্ত্বনা এনে দিয়েছিল!”
৪. প্রার্থনা সম্বন্ধে কোন প্রশ্নগুলো আমরা এই প্রবন্ধে বিবেচনা করব?
৪ বাইবেল বলে: “অবিরত প্রার্থনা কর; সর্ব্ববিষয়ে ধন্যবাদ কর।” (১ থিষলনীকীয় ৫:১৭, ১৮) এই পরামর্শের পরিপ্রেক্ষিতে, আসুন আমরা এই প্রশ্নগুলো বিবেচনা করি: কেন আমাদের প্রার্থনাগুলোর প্রতি আমাদের মনোযোগ দিতে হবে? সবসময় যিহোবার নিকটবর্তী হওয়ার কোন কারণগুলো আমাদের রয়েছে? আর আমাদের ভুলত্রুটির জন্য আমরা যদি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে অযোগ্য মনে করি, তা হলে আমাদের কী করা উচিত?
প্রার্থনার মাধ্যমে বন্ধুত্ব গড়ে তুলুন
৫. প্রার্থনা আমাদের কোন অদ্বিতীয় বন্ধুত্ব উপভোগ করতে সাহায্য করে?
৫ আপনি কি চান যাতে যিহোবা আপনাকে তাঁর একজন বন্ধু বলে মনে করেন? কুলপতি অব্রাহামের সম্বন্ধে তিনি এভাবেই বলেছিলেন। (যিশাইয় ৪১:৮; যাকোব ২:২৩) যিহোবা চান যেন আমরা তাঁর সঙ্গে সেইরকম সম্পর্ক বৃদ্ধি করি। প্রকৃতপক্ষে তিনি আমাদের তাঁর নিকটবর্তী হতে আমন্ত্রণ জানান। (যাকোব ৪:৮) সেই আমন্ত্রণ কি প্রার্থনার অদ্বিতীয় ব্যবস্থার বিষয়ে আমাদের গভীরভাবে চিন্তা করতে পরিচালিত করে না? একজন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাওয়াই কত কঠিন আর তার বন্ধু হওয়া তো দূরের কথা! অথচ, নিখিলবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা প্রার্থনায় নির্দ্বিধায় তাঁর নিকটবর্তী হতে আমাদের উৎসাহ দেন, যখনই আমরা তা করতে চাই বা করার দরকার পড়ে। (গীতসংহিতা ৩৭:৫) আমাদের অবিরত করা প্রার্থনাগুলো যিহোবার সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব বজায় রাখতে আমাদের সাহায্য করে।
৬. ‘ক্রমাগতভাবে প্রার্থনা করে চলার’ প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে যিশুর উদাহরণ আমাদের কী শিক্ষা দেয়?
৬ কিন্তু, আমরা কত সহজেই প্রার্থনাকে অবহেলা করতে পারি! রোজকার জীবনের চাপগুলো মোকাবিলা করাই আমাদের মনোযোগকে এতখানি কেড়ে নিতে পারে যে, আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলার কোনো প্রচেষ্টাই করি না। যিশু তাঁর শিষ্যদের উৎসাহ দিয়েছিলেন, “প্রার্থনা কর [“ক্রমাগতভাবে প্রার্থনা করে চল,” NW]” এবং তিনি নিজে তা করেছিলেন। (মথি ২৬:৪১) যদিও তিনি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সবসময় ব্যস্ত থাকতেন তবুও, তিনি তাঁর স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে কথা বলার জন্য সময় আলাদা করে রেখেছিলেন। কখনও কখনও, যিশু প্রার্থনা করার জন্য “অতি প্রত্যূষে, রাত্রি পোহাইবার অনেকক্ষণ পূর্ব্বে” উঠতেন। (মার্ক ১:৩৫) অন্যান্য সময়ে তিনি যিহোবার সঙ্গে কথা বলার জন্য দিনের শেষে নির্জন জায়গায় চলে যেতেন। (মথি ১৪:২৩) যিশু প্রার্থনা করার জন্য সর্বদা সময় করে নিতেন আর আমাদেরও তা করা উচিত।—১ পিতর ২:২১.
৭. কোন পরিস্থিতিগুলো প্রতিদিন আমাদের স্বর্গীয় পিতার সঙ্গে কথা বলতে পরিচালিত করবে?
৭ প্রতিদিন আমরা যখন বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হই, প্রলোভনে পড়ি এবং বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিই, তখন ব্যক্তিগতভাবে প্রার্থনা করার উপযুক্ত সুযোগগুলো উপস্থিত হয়। (ইফিষীয় ৬:১৮) জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে যখন আমরা ঈশ্বরের নির্দেশনা খুঁজি, তখন নিশ্চিতভাবেই তাঁর সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব বৃদ্ধি পায়। দুজন বন্ধু যদি একসঙ্গে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হয়, তা হলে তাদের মধ্যে থাকা সেই বন্ধুত্বের বন্ধন কি আরও শক্তিশালী হবে না? (হিতোপদেশ ১৭:১৭) একই বিষয় সত্য, যখন আমরা যিহোবার ওপর নির্ভর করি ও তাঁর সাহায্য লাভ করি।—২ বংশাবলি ১৪:১১.
৮. নহিমিয়, যিশু ও হান্নার উদাহরণ থেকে আমাদের ব্যক্তিগত প্রার্থনার দৈর্ঘ্য সম্বন্ধে আমরা কী শিখতে পারি?
৮ আমরা কতই না আনন্দিত হতে পারি যে, ঈশ্বর এই ব্যাপারে কোনো সীমা আরোপ করে দেননি যে, কতক্ষণ বা কত বার আমরা প্রার্থনায় তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারি! নহিমিয় পারস্য রাজের কাছে অনুরোধ জানানোর আগে তাড়াতাড়ি করে নীরব প্রার্থনা করেছিলেন। (নহিমিয় ২:৪, ৫) যিশুও এক সংক্ষিপ্ত প্রার্থনা করেছিলেন, যখন তিনি অনুরোধ করেছিলেন যে, যিহোবা যেন লাসারকে পুনরুত্থিত করার জন্য তাঁকে শক্তি দেন। (যোহন ১১:৪১, ৪২) অন্যদিকে, হান্না যখন যিহোবার কাছে তার হৃদয় উজাড় করে দিয়েছিলেন, তখন তিনি “সদাপ্রভুর সাক্ষাতে দীর্ঘ প্রার্থনা করিলেন।” (১ শমূয়েল ১:১২, ১৫, ১৬) আমাদের প্রয়োজন ও পরিস্থিতি অনুসারে আমাদের ব্যক্তিগত প্রার্থনাগুলো সংক্ষিপ্ত বা দীর্ঘ হতে পারে।
৯. যিহোবা আমাদের জন্য যা কিছু করেন, সেগুলোর জন্য কেন আমাদের প্রার্থনায় প্রশংসা এবং ধন্যবাদ অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত?
৯ বাইবেলে বর্ণিত অনেক প্রার্থনায় যিহোবার সর্বোচ্চ অবস্থান ও তাঁর চমৎকার কাজগুলোর জন্য অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে। (যাত্রাপুস্তক ১৫:১-১৯; ১ বংশাবলি ১৬:৭-৩৬; গীতসংহিতা ১৪৫) একটা দর্শনে প্রেরিত যোহন ২৪ জন প্রাচীনকে, স্বর্গীয় অবস্থানে অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের পূর্ণ সংখ্যা দেখেন, যারা এই বলে যিহোবার প্রশংসা করছে: “হে আমাদের প্রভু [“যিহোবা,” NW] ও আমাদের ঈশ্বর, তুমিই প্রতাপ ও সমাদর ও পরাক্রম গ্রহণের যোগ্য; কেননা তুমিই সকলের সৃষ্টি করিয়াছ, এবং তোমার ইচ্ছাহেতু সকলই অস্তিত্বপ্রাপ্ত ও সৃষ্ট হইয়াছে।” (প্রকাশিত বাক্য ৪:১০, ১১) আমাদেরও নিয়মিত সৃষ্টিকর্তার প্রশংসা করার কারণ রয়েছে। বাবামায়েরা কতই না আনন্দিত হয়, যখন তারা তাদের সন্তানের জন্য কিছু করেছে বলে সে অন্তর থেকে তাদের ধন্যবাদ দেয়! যিহোবার দয়া সম্বন্ধে উপলব্ধি সহকারে চিন্তা করা ও সেগুলোর জন্য অন্তর থেকে আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, আমাদের প্রার্থনার গুণগত মান উন্নত করার এক উত্তম উপায়।
“অবিরত প্রার্থনা কর”—কেন?
১০. আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে প্রার্থনা কোন ভূমিকা পালন করে?
১০ আমাদের বিশ্বাসের জন্য নিয়মিত প্রার্থনা করা অপরিহার্য। “সর্ব্বদাই প্রার্থনা করা উচিত, নিরুৎসাহ হওয়া উচিত নয়,” এই প্রয়োজন সম্বন্ধে দৃষ্টান্ত বলার পর, যিশু জিজ্ঞেস করেছিলেন: “মনুষ্যপুত্ত্র যখন আসিবেন, তখন কি পৃথিবীতে বিশ্বাস পাইবেন?” (লূক ১৮:১-৮) অর্থপূর্ণ, অন্তর থেকে করা প্রার্থনা বিশ্বাস গড়ে তোলে। কুলপতি অব্রাহাম যখন বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছিলেন ও সেই সময়েও কোনো বংশধরের জন্ম দেননি, তখন তিনি সেই সম্বন্ধে ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। উত্তরে যিহোবা প্রথমে তাকে আকাশের দিকে তাকাতে ও যদি তিনি পারেন, তা হলে তারা গণনা করতে বলেছিলেন। এরপর ঈশ্বর অব্রাহামকে পুনরায় আশ্বাস দিয়েছিলেন: “এইরূপ তোমার বংশ হইবে।” এর ফল কী হয়েছিল? অব্রাহাম “সদাপ্রভুতে বিশ্বাস করিলেন, আর সদাপ্রভু তাঁহার পক্ষে তাহা ধার্ম্মিকতা বলিয়া গণনা করিলেন।” (আদিপুস্তক ১৫:৫, ৬) আমরা যদি প্রার্থনায় যিহোবার কাছে আমাদের হৃদয়ের কথা খুলে বলি, বাইবেল থেকে তাঁর আশ্বাসগুলো গ্রহণ করি এবং তাঁর বাধ্য হই, তা হলে তিনি আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করবেন।
১১. কীভাবে প্রার্থনা সমস্যাগুলোর মোকাবিলা করতে আমাদের সাহায্য করতে পারে?
১১ এ ছাড়া, প্রার্থনা আমাদের সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতেও সাহায্য করতে পারে। আমাদের দৈনন্দিন জীবন কি দুর্বহ এবং আমরা যে-পরিস্থিতিগুলোর মুখোমুখি হই, সেগুলো কি দুঃসহ? বাইবেল আমাদের বলে: “তুমি সদাপ্রভুতে আপনার ভার অর্পণ কর; তিনিই তোমাকে ধরিয়া রাখিবেন, কখনও ধার্ম্মিককে বিচলিত হইতে দিবেন না।” (গীতসংহিতা ৫৫:২২) যখন কঠিন সিদ্ধান্তগুলোর মুখোমুখি হই, তখন আমরা যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি। তিনি তাঁর ১২ জন প্রেরিতকে নিযুক্ত করার আগে সারারাত ব্যক্তিগতভাবে প্রার্থনায় নিবিষ্ট ছিলেন। (লূক ৬:১২-১৬) আর যিশু তাঁর মৃত্যুর আগের রাতে এত ঐকান্তিকভাবে প্রার্থনা করেছিলেন যে, “তাঁহার ঘর্ম্ম যেন রক্তের ঘনীভূত বড় বড় ফোঁটা হইয়া ভূমিতে পড়িতে লাগিল।” (লূক ২২:৪৪) এর ফল কী হয়েছিল? ‘তিনি আপন ভক্তি প্রযুক্ত উত্তর পাইয়াছিলেন।’ (ইব্রীয় ৫:৭) আমাদের ঐকান্তিক ও অবিরত প্রার্থনা আমাদের চাপপূর্ণ পরিস্থিতি ও কঠিন পরীক্ষাগুলোর মোকাবিলা করতে সাহায্য করবে।
১২. কীভাবে প্রার্থনা দেখায় যে, আমাদের প্রতি যিহোবার ব্যক্তিগত আগ্রহ রয়েছে?
১২ প্রার্থনার মাধ্যমে যিহোবার নিকটবর্তী হওয়ার আরেকটা কারণ হল, এর ফলে তিনিও আমাদের নিকটবর্তী হন। (যাকোব ৪:৮) আমরা যখন প্রার্থনায় যিহোবার কাছে আমাদের হৃদয়ের কথা খুলে বলি, তখন আমরা কি উপলব্ধি করি না যে, তিনি আমাদের প্রয়োজনগুলোর প্রতি আগ্রহী ও কোমলভাবে আমাদের জন্য চিন্তা করেন? আমরা একেবারে ব্যক্তিগতভাবে ঈশ্বরের প্রেম অনুভব করি। যিহোবার দাসেরা তাদের স্বর্গীয় পিতা হিসেবে তাঁর কাছে যেসমস্ত প্রার্থনা করে, তা শোনার দায়িত্ব তিনি অন্য কাউকে দেননি। (গীতসংহিতা ৬৬:১৯, ২০; লূক ১১:২) আর তিনি ‘আমাদের সমস্ত ভাবনার ভার তাঁহার উপরে ফেলিয়া দিতে’ আমন্ত্রণ জানান ‘কেননা তিনি আমাদের জন্য চিন্তা করেন।’—১ পিতর ৫:৬, ৭.
১৩, ১৪. অবিরত প্রার্থনা করার কোন কোন কারণ আমাদের রয়েছে?
১৩ প্রার্থনা আমাদের জনসাধারণ্যে পরিচর্যার জন্য আরও উদ্যোগী করতে পারে আর যখন উদাসীনতা বা বিরোধিতা আমাদের পরিত্যাক্ত বোধ করায়, তখন তা আমাদের শক্তিশালী করতে পারে। (প্রেরিত ৪:২৩-৩১) এ ছাড়া, প্রার্থনা আমাদের “দিয়াবলের নানাবিধ চাতুরীর” থেকে সুরক্ষাও জোগাতে পারে। (ইফিষীয় ৬:১১, ১৭, ১৮) রোজকার পরীক্ষাগুলো মোকাবিলা করতে সংগ্রাম করার সময়, আমাদের শক্তিশালী করার জন্য আমরা সবসময় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে পারি। যিশুর আদর্শ প্রার্থনায় এই অনুরোধ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যে, যিহোবা যেন “আমাদিগকে . . . মন্দ হইতে” অর্থাৎ শয়তান দিয়াবল থেকে রক্ষা করেন।—মথি ৬:১৩.
১৪ আমরা যদি আমাদের পাপপূর্ণ প্রবণতাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্যের জন্য প্রার্থনা করে চলি, তা হলে আমরা যিহোবার সাহায্য অনুভব করব। আমাদের এই আশ্বাস দেওয়া হয়েছে: “ঈশ্বর বিশ্বাস্য; তিনি তোমাদের প্রতি তোমাদের শক্তির অতিরিক্ত পরীক্ষা ঘটিতে দিবেন না, বরং পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে রক্ষার পথও করিয়া দিবেন, যেন তোমরা সহ্য করিতে পার।” (১ করিন্থীয় ১০:১৩) বিভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রেরিত পৌল স্বয়ং যিহোবার শক্তিশালী যত্ন অনুভব করেছিলেন। “যিনি আমাকে শক্তি দেন, তাঁহাতে আমি সকলই করিতে পারি,” তিনি বলেছিলেন।—ফিলিপীয় ৪:১৩; ২ করিন্থীয় ১১:২৩-২৯.
ভুলত্রুটি সত্ত্বেও প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকুন
১৫. কী হতে পারে যখন আমাদের আচরণ ঈশ্বরের মানগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়?
১৫ আমরা যদি চাই যে আমাদের প্রার্থনা অনুগ্রহ সহকারে শোনা হোক, তা হলে আমাদের কখনোই ঈশ্বরের বাক্যের পরামর্শকে অস্বীকার করা উচিত নয়। “যে কিছু যাচ্ঞা করি, তাহা তাঁহার নিকটে পাই,” প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন, ‘কেননা আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি, এবং তাঁহার দৃষ্টিতে যাহা যাহা প্রীতিজনক, তাহা করি।’ (১ যোহন ৩:২২) কিন্তু, কী হতে পারে যখন আমাদের আচরণ ঈশ্বরের মানগুলো পূরণ করতে ব্যর্থ হয়? এদন উদ্যানে আদম ও হবা পাপ করার পর নিজেদের লুকিয়ে রেখেছিল। আমরাও হয়তো “ঈশ্বরের সম্মুখ হইতে” লুকাতে চাইতে পারি ও প্রার্থনা করা বন্ধ করে দিতে পারি। (আদিপুস্তক ৩:৮) “আমি লক্ষ করেছি যে, যিহোবা ও তাঁর সংগঠন থেকে যারা সরে পড়ে তাদের মধ্যে প্রায় বেশির ভাগই প্রথমে যে-ভুল পদক্ষেপটা নেয় তা হল, তারা প্রার্থনা করা বন্ধ করে দেয়,” ক্লস নামে একজন অভিজ্ঞ ভ্রমণ অধ্যক্ষ বলেন। (ইব্রীয় ২:১) হোসে আংখ্যালের ক্ষেত্রে এমনটা হয়েছিল। তিনি বলেন: “প্রায় আট বছর আমি কদাচিৎ যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছি। আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলতে অযোগ্য বোধ করেছিলাম, যদিও আমি তখনও তাঁকে আমার স্বর্গীয় পিতা হিসেবে মনে করতাম।”
১৬, ১৭. নিয়মিত প্রার্থনা কীভাবে আমাদের আধ্যাত্মিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করতে পারে, সেই বিষয়ে উদাহরণগুলো বলুন।
১৬ আমাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো আধ্যাত্মিক দুর্বলতা বা কোনো অন্যায় করার কারণে প্রার্থনা করার জন্য নিজেদের অযোগ্য মনে করতে পারে। কিন্তু, ঠিক এটাই হল সেই সময় যখন আমাদের প্রার্থনার ব্যবস্থা থেকে পূর্ণ উপকার লাভ করা দরকার। যোনা তার কার্যভার থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ‘যোনা সঙ্কট প্রযুক্ত সদাপ্রভুকে ডাকিলেন, আর তিনি তাহাকে উত্তর দিলেন; যোনা পাতালের উদর হইতে আর্ত্তনাদ করিলেন, সদাপ্রভু তাহার রব শ্রবণ করিলেন।’ (যোনা ২:২) যোনা প্রার্থনা করেছিলেন, যিহোবা তার প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন এবং যোনা আধ্যাত্মিকভাবে আরোগ্য লাভ করেছিলেন।
১৭ হোসে আংখ্যালও সাহায্যের জন্য ঐকান্তিকভাবে প্রার্থনা করেছিলেন। তিনি স্মরণ করে বলেন: “আমি আমার হৃদয় খুলে কথা বলেছিলাম এবং ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলাম। আর সত্যিই তিনি আমাকে সাহায্য করেছিলেন। আমি মনে করি যে, প্রার্থনার সাহায্য ছাড়া আমি কখনোই সত্যে ফিরে আসতে পারতাম না। আমি এখন প্রতিদিন নিয়মিত প্রার্থনা করি এবং এই সময়গুলোর জন্য সানন্দে প্রতীক্ষা করে থাকি।” আমাদের ভুলগুলোর বিষয়ে খোলাখুলিভাবে ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলার জন্য আমাদের সবসময় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করা এবং নম্রভাবে তাঁর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। রাজা দায়ূদ যখন তার পাপ স্বীকার করেছিলেন, তখন যিহোবা তার পাপগুলো ক্ষমা করেছিলেন। (গীতসংহিতা ৩২:৩-৫) যিহোবা আমাদের নিন্দা করতে নয় বরং সাহায্য করতে চান। (১ যোহন ৩:১৯, ২০) আর মণ্ডলীর প্রাচীনবর্গের প্রার্থনা আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে সাহায্য করতে পারে কারণ এই ধরনের আবেদনগুলো “মহাশক্তিযুক্ত”।—যাকোব ৫:১৩-১৬.
১৮. ঈশ্বরের দাসেরা যত দূরেই সরে পড়ুক না কেন, তারা কোন আস্থা রাখতে পারে?
১৮ একজন ছেলে যদি কোনো ভুল করার পর সাহায্যের ও পরামর্শের জন্য নম্রভাবে তার বাবার কাছে যায়, তা হলে কোন বাবা তাকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে? অপব্যয়ী পুত্রের নীতিগল্পটি দেখায় যে, আমরা যত দূরেই সরে পড়ি না কেন, আমরা যখন পুনরায় আমাদের স্বর্গীয় পিতার কাছে ফিরে আসি, তখন তিনি আনন্দিত হন। (লূক ১৫:২১, ২২, ৩২) ভুল করে এমন সকলকে যিহোবা অনুরোধ জানান যেন তারা তাঁকে ডাকে, “কেননা তিনি প্রচুররূপে ক্ষমা করিবেন।” (যিশাইয় ৫৫:৬, ৭) যদিও দায়ূদ বেশ কয়েকটা গুরুতর পাপ করেছিলেন কিন্তু তিনি এই বলে যিহোবাকে ডেকেছিলেন: “হে ঈশ্বর, আমার প্রার্থনায় কর্ণপাত কর, আমার বিনতি হইতে লুকাইও না।” তিনি আরও বলেছিলেন: “সন্ধ্যায়, প্রাতে ও মধ্যাহ্নে আমি বিলাপ করি ও কোঁকাই, আর তিনি আমার রব শুনেন।” (গীতসংহিতা ৫৫:১, ১৭) কতই না আশ্বাসজনক!
১৯. কেন আমাদের এই সিদ্ধান্তে আসা উচিত নয় যে, আপাতদৃষ্টিতে উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না বলে সেই প্রার্থনাগুলো প্রমাণ করে যে, তাতে ঈশ্বরের অনুমোদন নেই?
১৯ কী হবে যদি আমাদের অনুরোধের উত্তর আমরা সঙ্গে সঙ্গে না পাই? তাই, আমাদের নিশ্চিত হতে হবে যে, আমাদের অনুরোধ যেন যিহোবার ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে ও যিশুর নামে উৎসর্গ করা হয়। (যোহন ১৬:২৩; ১ যোহন ৫:১৪) শিষ্য যাকোব কিছু খ্রিস্টানের বিষয়ে বলেছিলেন, যাদের প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয়নি কারণ তারা “মন্দ ভাবে যাচ্ঞা” করেছিল। (যাকোব ৪:৩) অন্যদিকে, আমাদের চট করে এই সিদ্ধান্তে আসা উচিত নয় যে, আপাতদৃষ্টিতে প্রার্থনাগুলোর উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না বলে তা সবসময় প্রমাণ করে যে, তাতে ঈশ্বরের অনুমোদন নেই। যিহোবা হয়তো মাঝে-মধ্যে বিশ্বস্ত উপাসকদের কোনো একটা বিষয়ের জন্য তাঁর উত্তর স্পষ্ট হয়ে ওঠার আগে কিছু সময় ধরে প্রার্থনা করার জন্য সুযোগ দেন। “যাচ্ঞা কর, তোমাদিগকে দেওয়া যাইবে,” যিশু বলেছিলেন। (মথি ৭:৭) তাই, আমাদের “প্রার্থনায় নিবিষ্ট” থাকা দরকার।—রোমীয় ১২:১২.
নিয়মিত প্রার্থনা করুন
২০, ২১. (ক) এই “শেষ কালে” কেন আমাদের অবিরত প্রার্থনা করা দরকার? (খ) প্রতিদিন যিহোবার অনুগ্রহ-সিংহাসনের নিকটে উপস্থিত হলে আমরা কী পাব?
২০ এই “শেষ কালে” চাপ ও সমস্যাগুলো বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে, যা ‘বিষম সময়কে’ চিহ্নিত করে। (২ তীমথিয় ৩:১) আর পরীক্ষাগুলো সহজেই আমাদের মনকে অন্যমনস্ক করতে পারে। কিন্তু, একের পর এক সমস্যা, প্রলোভন ও নিরুৎসাহ সত্ত্বেও আমাদের অবিরত প্রার্থনা আমাদের জীবনকে এক আধ্যাত্মিক পথে কেন্দ্রীভূত রাখতে সাহায্য করে। যিহোবার কাছে করা আমাদের প্রতিদিনের প্রার্থনাগুলো আমাদের অতি প্রয়োজনীয় সমর্থন জোগাতে পারে।
২১ “প্রার্থনা-শ্রবণকারী” যিহোবা কখনোই এত ব্যস্ত নন যে, আমাদের কথা শোনার সময় তাঁর নেই। (গীতসংহিতা ৬৫:২) তাই, আসুন আমরা যেন কখনও এত ব্যস্ত না হয়ে পড়ি যে, তাঁর সঙ্গে কথা বলার সময় পাই না। ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব হল, আমাদের কাছে থাকা সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। আসুন আমরা যেন কখনও এটাকে হালকাভাবে না নিই। “অতএব আইস, আমরা সাহসপূর্ব্বক অনুগ্রহ-সিংহাসনের নিকটে উপস্থিত হই, যেন দয়া লাভ করি, এবং সময়ের উপযোগী উপকারার্থে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হই।”—ইব্রীয় ৪:১৬.
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন
• প্রার্থনার মূল্য সম্বন্ধে ভাববাদী দানিয়েলের কাছ থেকে আমরা কী শিখি?
• কীভাবে আমরা যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বকে শক্তিশালী করতে পারি?
• কেন আমাদের অবিরত প্রার্থনা করা উচিত?
• কেন অযোগ্য মনে করার অনুভূতি যেন আমাদের যিহোবার কাছে প্রার্থনা করা থেকে বিরত না করে?
[অধ্যয়ন প্রশ্নাবলি]
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
রাজার সঙ্গে কথা বলার আগে নহিমিয় এক সংক্ষিপ্ত, নীরব প্রার্থনা করেছিলেন
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
হান্না “সদাপ্রভুর সাক্ষাতে দীর্ঘ প্রার্থনা করিলেন”
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিশু তাঁর ১২ জন প্রেরিতকে নিযুক্ত করার আগে সারারাত প্রার্থনা করেছিলেন
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
সারাদিনই প্রার্থনা করার সুযোগগুলো এসে থাকে