“জ্ঞানবানের ব্যবস্থা” জীবনের উৎস
“জ্ঞানবানের ব্যবস্থা” জীবনের উৎস
“আহা! ঈশ্বরের ধনাঢ্যতা ও প্রজ্ঞা ও জ্ঞান কেমন অগাধ! তাঁহার বিচার সকল কেমন বোধাতীত! তাঁহার পথ সকল কেমন অননুসন্ধেয়!” প্রেরিত পৌল বিস্মিত হয়ে বলেছিলেন। (রোমীয় ১১:৩৩) আর বিশ্বস্ত কুলপতি ইয়োব বলেছিলেন: “[যিহোবা ঈশ্বর] চিত্তে জ্ঞানবান।” (ইয়োব ৯:৪) হ্যাঁ, স্বর্গ ও পৃথিবীর স্রষ্টার প্রজ্ঞা হল অতুলনীয়। এই ধরনের এক সৃষ্টিকর্তার ব্যবস্থা বা লিখিত বাক্য সম্বন্ধে কী বলা যায়?
গীতরচক গেয়েছিলেন: “সদাপ্রভুর ব্যবস্থা সিদ্ধ, প্রাণের স্বাস্থ্যজনক; সদাপ্রভুর সাক্ষ্য বিশ্বসনীয়, অল্পবুদ্ধির জ্ঞানদায়ক। সদাপ্রভুর বিধি সকল যথার্থ, চিত্তের আনন্দবর্দ্ধক; সদাপ্রভুর আজ্ঞা নির্ম্মল, চক্ষুর দীপ্তিজনক।” (গীতসংহিতা ১৯:৭, ৮) প্রাচীন ইস্রায়েলের রাজা শলোমন এই কথাগুলোর সত্যতাকে কতই না উপলব্ধি করেছিলেন! তিনি বলেছিলেন: “জ্ঞানবানের শিক্ষা [“ব্যবস্থা,” NW] জীবনের উৎস, তাহা মৃত্যুর ফাঁদ হইতে দূরে যাইবার পথ।” (হিতোপদেশ ১৩:১৪) হিতোপদেশ ১৩ অধ্যায়ের শুরুর ১৩টা পদে শলোমন দেখিয়েছেন যে, ঈশ্বরের বাক্যে পাওয়া পরামর্শ কীভাবে আমাদের জীবনের মানকে উন্নত করতে এবং জীবনকে বিপদের মধ্যে ফেলা এড়িয়ে চলতে সাহায্য করতে পারে।
শিখতে ইচ্ছুক হোন
“জ্ঞানবান পুত্ত্র পিতার শাসন মানে, কিন্তু নিন্দক [“উপহাসকারী,” NW] ভর্ৎসনা শুনে না,” হিতোপদেশ ১৩:১ পদ বলে। একজন পিতার শাসন কোমল বা কড়া হতে পারে। এটা প্রথমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আসতে পারে এবং সেটা যদি প্রত্যাখ্যান করা হয়, তা হলে শেষে তা শাস্তির রূপ নিতে পারে। একজন পুত্র যখন তার পিতার শাসন মান্য করে তখন সে জ্ঞানবান।
বাইবেল বলে যে, “প্রভু [“যিহোবা,” NW] যাহাকে প্রেম করেন, তাহাকেই শাসন করেন, যে কোন পুত্ত্রকে গ্রহণ করেন, তাহাকেই প্রহার করেন।” (ইব্রীয় ১২:৬) যে-একটা উপায়ে আমাদের স্বর্গীয় পিতা আমাদের শাসন করেন তা হল তাঁর লিখিত বাক্য, বাইবেল। আমরা যখন শ্রদ্ধার সঙ্গে বাইবেল পড়ি এবং সেখান থেকে যা শিখি তা কাজে লাগাই, তখন আসলে তাঁর বাক্য আমাদের শাসন করে। এটা আমাদের লাভের জন্য কারণ যিহোবা যা কিছু বলেন সমস্তই আমাদের উপকারের জন্য।—যিশাইয় ৪৮:১৭.
এ ছাড়া, একজন সহবিশ্বাসী যিনি আমাদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের জন্য আগ্রহী, তার কাছ থেকে আসা সংশোধনের মাধ্যমেও আমরা শাসন পেতে পারি। ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে মিল রয়েছে এমন কোনো সাহায্যকারী পরামর্শকে সেই ব্যক্তির পরামর্শ মনে না করে বরং, সত্যের মহান উৎস থেকে আসা বলে দেখা যেতে পারে। আমরা এটাকে যিহোবার কাছ থেকে আসা পরামর্শ হিসেবে গ্রহণ করে জ্ঞানবান হবো। আমরা যখন তা করি এবং সেটাকে আমাদের চিন্তাধারাকে প্রভাবিত করার, শাস্ত্রের বোধগম্যতায় উন্নতি করার এবং আমাদের পথকে সংশোধন করার সুযোগ দিই, তখন আমরা সেই শাসন থেকে উপকৃত হচ্ছি। খ্রিস্টীয় সভাগুলো ও বাইবেল ভিত্তিক প্রকাশনাদি থেকে যে-পরামর্শ আমরা পাই সেই ক্ষেত্রেও একই বিষয় সত্য। এইরকম লিখিত বা কথিত বাক্যগুলো থেকে আমরা যা শিখি, সেগুলোর প্রতি সাড়া দেওয়া হল এক উত্তম ধরনের আত্মশাসন।
অন্যদিকে উপহাসকারী শাসনের প্রতি সাড়া দেন না। একটি তথ্যগ্রন্থ বলে, “যেহেতু তিনি মনে করেন যে, তিনিই সর্বোত্তম বিষয়টা জানেন,” তাই তিনি “শিখতে ইচ্ছুক হন না।” তিনি এমনকি ভর্ৎসনা অর্থাৎ এক কড়া ধরনের শাসনের প্রতিও সাড়া দেন না। কিন্তু তিনি কি কখনও পিতার শাসনকে ভুল প্রমাণ করতে পারবেন? যিহোবা কখনও ভুল প্রমাণিত হননি আর কখনও হবেনও না। শাসন অগ্রাহ্য করে উপহাসকারী শুধু নিজেকেই উপহাসের পাত্র করে। মনোযোগের সঙ্গে বেছে নেওয়া কিছু শব্দের মাধ্যমে কত সুন্দরভাবেই না শিখতে ইচ্ছুক হওয়ার মূল্যটি শলোমন দেখান!
আপনার জিহ্বাকে বশে রাখুন!
আমাদের কথাবার্তা ঈশ্বরের বাক্য দ্বারা পরিচালিত হওয়ার গুরুত্বকে দেখানোর জন্য ইস্রায়েলের রাজা মুখকে এক ফলবতী গাছের সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেন: “মনুষ্য নিজ মুখের ফল দ্বারা মঙ্গল ভোগ করে; কিন্তু বিশ্বাসঘাতকদের প্রাণ দৌরাত্ম্য ভোগ করে।” (হিতোপদেশ ১৩:২) মুখের ফল হল কথিত বাক্য। আর একজন ব্যক্তি তার কথাগুলোর দ্বারা যা বপন করেছেন তাই কাটেন। একজন পণ্ডিত ব্যক্তি বলেন, ‘যদি তার কথাগুলো দয়াপ্রবণ হয় ও তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করার উদ্দেশে বলা হয়, তা হলে তিনি মঙ্গল ভোগ, এক সুখী ও শান্তিপূর্ণ জীবন উপভোগ করবেন।’ কিন্তু বিশ্বাসঘাতকের জন্য ব্যাপারটা একেবারে ভিন্ন হবে। তিনি দৌরাত্ম্য ও অন্যদের ক্ষতি করতে চান। তিনি দৌরাত্ম্যের ষড়যন্ত্র করেন আর দৌরাত্ম্যের ফলগুলো ভোগ করেন। মৃত্যুর ফাঁদ তার দুয়ারে অপেক্ষা করে।
“যে মুখ সাবধানে রাখে, সে প্রাণ রক্ষা করে” শলোমন বলে চলেন। “যে ওষ্ঠাধর খুলিয়া দেয়, তাহার সর্ব্বনাশ হয়।” (হিতোপদেশ ১৩:৩) বদনাম হওয়া, দুঃখ পাওয়া, মনোমালিন্য ও এমনকি শারীরিক ক্ষতি হল এক অবিবেচক, মূর্খতাপূর্ণ কথাবার্তার সম্ভাব্য ফল। এ ছাড়া, অসংযত কথাবার্তা ঈশ্বরের অননুমোদনও আনতে পারে কারণ প্রত্যেককে নিজ নিজ কথাগুলোর জন্য ঈশ্বরের কাছে নিকাশ দিতে হবে। (মথি ১২:৩৬, ৩৭) বাস্তবিকপক্ষে, আমাদের মুখকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখলে তা আমাদের ধ্বংস থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু, কীভাবে আমরা আমাদের মুখকে বশে রাখতে শিখতে পারি?
এটা করার একটা সহজ উপায় হল অতিরিক্ত কথা না বলা। “বাক্যের বাহুল্যে অধর্ম্মের অভাব নাই,” বাইবেল বলে। (হিতোপদেশ ১০:১৯) আরেকটা উপায় হল ভেবেচিন্তে কথা বলা। অনুপ্রাণিত লেখক ঘোষণা করেন: “কেহ কেহ অবিবেচনার কথা বলে, খড়্গাঘাতের মত।” (হিতোপদেশ ১২:১৮) না ভেবেচিন্তে কথা বলা, বক্তা ও তার শ্রোতাদের উভয়কেই দুঃখ দিতে পারে। তাই, বাইবেল আমাদের এই ব্যবহারিক পরামর্শ দেয়: “ধার্ম্মিকের মন উত্তর করিবার নিমিত্ত চিন্তা করে।”—(বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) হিতোপদেশ ১৫:২৮.
পরিশ্রমী হোন
শলোমন বলেন, “অলসের প্রাণ লালসা করে, কিছুই পায় না; কিন্তু পরিশ্রমীদের প্রাণ পুষ্ট হয়।” (হিতোপদেশ ১৩:৪) একটি তথ্যগ্রন্থ জানায়, “[এই প্রবাদবাক্যের] অর্থ হচ্ছে শুধু লালসা থাকলে কোন লাভ নেই” আর “পরিশ্রমেরই মূল্য রয়েছে।” অলস লোকেরা লালসার শিকার হয় . . . যা তাদের গ্রাস করে আর তাদের লালসাগুলো কোন ফলই উৎপাদন করতে পারে না।” কিন্তু পরিশ্রমী ব্যক্তির প্রাণ বা লালসা পরিতৃপ্ত অর্থাৎ পুষ্ট হয়।
তাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়, যারা দায়িত্ব এড়াতে চায় বলে যিহোবার কাছে নিজেদের উৎসর্গ করা থেকে বিরত থাকে? তারা হয়তো ঈশ্বরের নতুন জগতে বেঁচে থাকার লালসা দেখায় কিন্তু তারা কি, সেটার জন্য কিছু করতে ইচ্ছুক? যারা ‘মহাক্লেশের মধ্য হইতে আইসে’ তাদের জন্য একটা শর্ত হল যে, তারা যিশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানে বিশ্বাস অনুশীলন করেছে, যিহোবার কাছে উৎসর্গীকৃত হয়েছে ও তাদের উৎসর্গীকরণের প্রতীকস্বরূপ জলে বাপ্তিস্ম নিয়েছে।—প্রকাশিত বাক্য ৭:১৪, ১৫.
১ তীমথিয় ৩:১) কিন্তু লালসা করাই যথেষ্ট নয়। একটা পদের যোগ্য হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় গুণ ও দক্ষতাগুলো গড়ে তোলা দরকার। এটার জন্য ব্যক্তিগতভাবে কঠোর প্রচেষ্টা করা দরকার।
এ ছাড়া, মণ্ডলীতে অধ্যক্ষ পদের জন্য যোগ্যতা অর্জনের সঙ্গে কী জড়িত, সেটা-ও বিবেচনা করুন। এই উত্তম কাজের জন্য যোগ্যতা অর্জনের লালসা রাখা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় এবং তা অর্জন করার জন্য শাস্ত্রে উৎসাহ দেওয়া হয়। (ধার্ম্মিকতা—এক সুরক্ষা
একজন ধার্মিক ব্যক্তি ঈশ্বরীয় গুণগুলো গড়ে তোলেন ও সত্য কথা বলেন। তিনি উপলব্ধি করেন যে, মিথ্যা কথা বলা হল যিহোবার আইনবিরুদ্ধ। (হিতোপদেশ ৬:১৬-১৯; কলসীয় ৩:৯) এই বিষয়ে শলোমন বলেন: “ধার্ম্মিক মিথ্যা কথা ঘৃণা করে; কিন্তু দুষ্ট লোক দুর্গন্ধস্বরূপ, [“লজ্জাজনকভাবে কাজ করে,” NW] সে লজ্জা জন্মায়।” (হিতোপদেশ ১৩:৫) একজন ধার্মিক ব্যক্তি শুধু মিথ্যা কথা বলা এড়িয়ে চলেন না; তিনি আসলে সেগুলো ঘৃণা করেন। তিনি জানেন যে, সেগুলো যতই নিষ্পাপ বলে মনে হোক না কেন, মিথ্যা কথা মানুষের ভাল সম্পর্কগুলোর জন্য ধ্বংসাত্মক। এ ছাড়া, যে-ব্যক্তি মিথ্যার সাহায্য নেয় তার ওপর নির্ভর করা যায় না। দুষ্ট লোক হয় মিথ্যা কথা বলেন অথবা অন্যান্য উপায়ে লজ্জাজনকভাবে কাজ করেন আর এভাবে তিনি নিজের জন্য লজ্জা নিয়ে আসেন।
ঈশ্বরের দৃষ্টিতে যেটা সঠিক সেটা করা লাভজনক এটা দেখাতে জ্ঞানী রাজা বলেন: “ধার্ম্মিকতা সিদ্ধাচারীকে রক্ষা করে; কিন্তু দুষ্টতা পাপীকে পাড়িয়া ফেলে।” (হিতোপদেশ ১৩:৬) একটা দুর্গের মতো ধার্মিকতা একজন ব্যক্তিকে রক্ষা করে কিন্তু দুষ্টতা তার সর্ব্বনাশ করে।
ভান করবেন না
মানুষের স্বভাব সম্বন্ধে বোধগম্যতা দেখিয়ে ইস্রায়েলের রাজা বলেন: “কেহ আপনাকে ধনবান দেখায়, কিন্তু তাহার কিছুই নাই; কেহ বা আপনাকে দরিদ্র দেখায়, কিন্তু তাহার মহাধন আছে।” (হিতোপদেশ ১৩:৭) একজন ব্যক্তি নিজেকে যেমন দেখান তিনি তেমন নাও হতে পারেন। কিছু গরিব লোক নিজেদের ধনী দেখানোর ভান করতে পারে—হয়তো লোক-দেখানোর জন্য, সফল হওয়ার ধারণা দিতে অথবা কেবল তার মর্যাদা রক্ষা করতে। আর একজন ধনী ব্যক্তি কেবল তার ধন লুকাতে গরিব হওয়ার ভান করতে পারে।
লোক-দেখানো বা লুকানো কোনোটাই ভাল নয়। আমাদের কাছে যদি ধনসম্পদ কম থাকে, তা হলে শুধুমাত্র ধনী দেখানোর জন্য বিলাসিতার পিছনে টাকাপয়সা খরচ করা, আমাদের ও আমাদের পরিবারকে জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলো অর্জন করা থেকে বঞ্চিত করবে। আর ধন থাকা সত্ত্বেও, গরিব হওয়ার ভান করা একজন ব্যক্তিকে কৃপণ করে তোলে, যর্থাথ সম্মান থেকে এবং উদার হওয়ায় যে সুখ পাওয়া যায়, সেটা প্রেরিত ২০:৩৫, NW) সততার সঙ্গে জীবনযাপন করা এক উত্তম জীবন এনে দেয়।
থেকে তাকে বঞ্চিত করে। (লালসাগুলোকে পরিমিত রাখুন
শলোমন বলেন, “মানুষের ধন তাহার প্রাণের প্রায়শ্চিত্ত; কিন্তু দরিদ্র তর্জ্জন শুনে না।” (হিতোপদেশ ১৩:৮) এই বিজ্ঞ প্রবাদবাক্যের মধ্যে কী শিক্ষা রয়েছে?
ধনী হওয়ায় কিছু সুবিধা রয়েছে কিন্তু ধন থাকা এক পরম আশীর্বাদ নয়। আমরা যে-সংকটময় সময়ে বাস করছি, এই সময়ে ধনী ব্যক্তিরা ও তাদের পরিবারগুলো প্রায়ই অপহৃত হওয়ার ও মুক্তির মূল্য দেওয়ার ঝুঁকির মধ্যে নিজেদের খুঁজে পায়। কখনও কখনও, একজন ধনী ব্যক্তি তার অথবা পরিবারের একজন সদস্যের জীবন ফিরে পেতে মুক্তির মূল্য দিতে পারে। কিন্তু প্রায়ই অপহৃত ব্যক্তিকে মেরে ফেলা হয়। আর এই ধরনের এক হুমকির মধ্যে ধনী ব্যক্তি সবসময়ই থাকে।
দরিদ্র ব্যক্তির এই ধরনের কোনো চিন্তা নেই। তার হয়তো এমন অনেক সুযোগ-সুবিধা ও বস্তুগত জিনিসপত্র না থাকতে পারে যা একজন ধনী ব্যক্তি উপভোগ করেন আর তার অপহরণকারীদের নিশানা হওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে। আমাদের চাহিদাগুলোকে পরিমিত রাখার এবং আমাদের সময় ও শক্তিকে ধন লাভের চেষ্টায় না ব্যয় করার, এটা হল এক উপকার।—২ তীমথিয় ২:৪.
‘দীপ্তিতে’ আনন্দ করুন
শলোমন আরও দেখান যে যিহোবার পথে কাজ করা আমাদের জন্যই সবচেয়ে উপকারী। তিনি বলেন, “ধার্ম্মিকের দীপ্তি আনন্দ করে; কিন্তু দুষ্টদের প্রদীপ নিভিয়া যায়।”—হিতোপদেশ ১৩:৯.
প্রদীপ সেটাকে চিত্রিত করে, যেটার ওপর আমরা আমাদের জীবনের পথকে আলোকিত করার জন্য নির্ভর করি। ‘ঈশ্বরের বাক্য একজন ধার্মিকের চরণের প্রদীপ, তাহার পথের আলোক।’ (গীতসংহিতা ১১৯:১০৫) এটিতে সৃষ্টিকর্তার অশেষ জ্ঞান ও প্রজ্ঞা রয়েছে। ঈশ্বরের ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য সম্বন্ধে আমাদের বোধগম্যতাকে আমরা যত বেশি বাড়াব, আধ্যাত্মিক দীপ্তি যা আমাদের নির্দেশনা দেয় সেটা তত বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। এটা কত আনন্দেরই না এক উৎস! কেন আমরা জাগতিক জ্ঞান বা যেটা “অযথারূপে বিদ্যা নামে আখ্যাত” সেটার দ্বারা বিভ্রান্ত হবো?—১ তীমথিয় ৬:২০; ১ করিন্থীয় ১:২০; কলসীয় ২:৮.
দুষ্ট ব্যক্তির বেলায়, তার প্রদীপ যতই উজ্জ্বলভাবে আলো দিচ্ছে বলে দেখা যাক না কেন এবং তাকে যতই সমৃদ্ধশালী বলে মনে হোক না কেন, তার প্রদীপ নিশ্চয়ই নিভে যাবে। তিনি অন্ধকারে বিলীন হয়ে যাবেন, যেখানে তার পা হোঁচট খাবে। এ ছাড়া, তার “শেষ ফল হইবে না [“ভবিষ্যতের কোনো আশা থাকবে না,” NW]”—হিতোপদেশ ২৪:২০.
কিন্তু এক নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে কীধরনের পদক্ষেপ আমাদের নেওয়া দরকার সেই বিষয়ে যদি আমরা অনিশ্চিত থাকি, তা হলে আমাদের কী করা উচিত? যদি আমরা নিশ্চিত নই যে এই সমস্তকিছু করার অধিকার আমাদের রয়েছে কি না, তা হলেই বা কী? হিতোপদেশ ১৩:১০ পদ সতর্ক করে: “অহঙ্কারে কেবল বিবাদ উৎপন্ন হয়।” না জেনে বা অধিকারের বাইরে কিছু করা হল অহংকার এবং এটা অবশ্যই বিরোধ সৃষ্টি করে। যাদের জ্ঞান ও বিচক্ষণতা রয়েছে তাদের পরামর্শ নেওয়া কি আরও ভাল হবে না? “যাহারা পরামর্শ মানে, প্রজ্ঞা তাহাদের সহবর্ত্তী,” বিজ্ঞ রাজা বলেন।
মিথ্যা প্রত্যাশাগুলো থেকে সাবধান
টাকাপয়সা এক কার্যকারী উদ্দেশ্য সাধন করতে পারে। কঠোর আত্মসংযমী বা দারিদ্রতায় জীবনযাপন করার চেয়ে পর্যাপ্ত টাকাপয়সা থাকা ভাল। (উপদেশক ৭:১১, ১২) কিন্তু, অন্যায়ভাবে অর্জন করা সম্পদের উপকারগুলো সম্বন্ধে আমাদের চিন্তা করা ভ্রান্তিজনক হতে পারে। শলোমন সতর্ক করেন: “অলীকতায় অর্জ্জিত ধন ক্ষয় পায়; কিন্তু যে ব্যক্তি হস্ত দ্বারা সঞ্চয় করে, সে অধিক পায়।”—হিতোপদেশ ১৩:১১.
উদাহরণস্বরূপ জুয়া খেলার প্রলোভন সম্বন্ধে বিবেচনা করুন। একজন জুয়াড়ি অনেক টাকা জেতার আশায় তার কষ্টোর্জিত টাকাপয়সা ব্যয় করতে পারেন। কিন্তু এটা তার পরিবারের মঙ্গলকে উপেক্ষা করে কত বারই না করা হয়! আর জুয়াড়ি যদি জিতে যায়, তা হলেই বা কী হয়? যেহেতু টাকাটা খুব সহজেই পাওয়া গেছে, তাই তিনি হয়তো সেটার মূল্যকে খুব অল্পই উপলব্ধি করবেন। এ ছাড়া, তার সদ্য পাওয়া এই পুরস্কারকে সামলানোর দক্ষতা তার নাও থাকতে পারে। তা হলে তার ধন কি অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে না ঠিক যতটা অল্প সময়ে তিনি তা অর্জন করেছিলেন? অন্যদিকে, পরিশ্রমের সঙ্গে কাজ করে অল্প অল্প করে জমানো ধন ক্রমাগত বাড়তে থাকে ও তার সদ্ব্যবহার করা যায়।
শলোমন বলেন, “আশাসিদ্ধির বিলম্ব হৃদয়ের পীড়াজনক; কিন্তু বাঞ্ছার সিদ্ধি জীবনবৃক্ষ।” (হিতোপদেশ ১৩:১২) অপরিপূর্ণ প্রত্যাশাগুলো হতাশা নিয়ে আসে, যা হৃদয়ের পীড়াজনক। এটা প্রতিদিনকার জীবনে ঘটে থাকে। কিন্তু এটা দৃঢ়ভাবে ঈশ্বরের বাক্যের ওপর ভিত্তি করা প্রত্যাশাগুলোর ক্ষেত্রে হয় না। আমরা পুরো আস্থা রাখতে পারি যে, সেগুলো পরিপূর্ণ হবে। এমনকি বিলম্ব হচ্ছে বলে মনে হলেও হতাশ করবে না।
উদাহরণস্বরূপ, আমরা জানি যে ঈশ্বরের নতুন জগৎ খুব শীঘ্রই আসতে চলেছে। (২ পিতর ৩:১৩) আকুল আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমরা আনন্দের সঙ্গে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর পরিপূর্ণতার অপেক্ষা করছি। আমরা যখন প্রতীক্ষার সময়টিকে “প্রভুর কার্য্যে” ব্যস্ত থাকার, সহবিশ্বাসীদের উৎসাহিত করার ও যিহোবার সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য ব্যবহার করি, তখন কী হয়? ‘হৃদয়ে পীড়িত’ না হয়ে পড়ে আমরা আনন্দে পরিপূর্ণ হই। (১ করিন্থীয় ১৫:৫৮; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫; যাকোব ৪:৮) যখন দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করে থাকা লালসা পূর্ণ হয়, তখন সেটা হল জীবনবৃক্ষ—সত্যিই বলশালী ও সতেজতাদায়ক।
ঈশ্বরের ব্যবস্থা—জীবনের উৎস
ঈশ্বরের বাধ্য হওয়ার গুরুত্বকে দেখিয়ে হিতোপদেশ ১৩:১৩ পদ বলে: “যে বাক্য তুচ্ছ করে, সে আপনার সর্ব্বনাশ ঘটায়; যে ভয়পূর্ব্বক আজ্ঞা মানে, সে পুরস্কার পায়।” আমরা যদি ঈশ্বরের আজ্ঞা সকল মেনে চলতে ব্যর্থ হই, তা হলে আমাদের কিছু হারাতে হবে। কী হারাতে হবে?
“জ্ঞানবানের ব্যবস্থা জীবনের উৎস, তাহা মৃত্যুর ফাঁদ হইতে দূরে যাইবার পথ।” (হিতোপদেশ ১৩:১৪) সর্বজ্ঞানী ঈশ্বর যিহোবার ব্যবস্থা ব্যতিরেকে জীবনযাপন করা সেই নির্দেশনা থেকে বঞ্চিত করবে, যেটা আমাদের আরও উত্তম ও দীর্ঘ জীবনযাপন করতে সাহায্য করতে পারে। সেটা কী এক বিরাট ক্ষতি-ই না হবে! তা হলে, ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি গভীর মনোযোগ দেওয়া এবং আমাদের চিন্তাভাবনা, কথাবার্তা ও কাজকে প্রভাবিত করার জন্য এটাকে সুযোগ দেওয়া হল আমাদের জন্য বিজ্ঞতার পথ।—২ করিন্থীয় ১০:৫; কলসীয় ১:১০.
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
শাস্ত্রীয় পরামর্শের প্রতি সাড়া দেওয়া হল এক উত্তম ধরনের আত্মশাসন
[২৪, ২৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
“ধার্ম্মিকের মন উত্তর করিবার নিমিত্ত চিন্তা করে”
[২৪, ২৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
“প্রভুর কার্য্যে” ব্যস্ত থাকা আমাদের আনন্দে পরিপূর্ণ করে